বাংলাদেশের সোনালি আঁশ পাটের ‘সোনালি দিন’ ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি নতুন করে জোরালোভাবে আলোচনায় আসায় এই সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে।
বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে; দামও বেশ ভালো। গতবারের চেয়ে মণে প্রায় হাজার টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। কৃষকরা বাড়তি এ দাম পেয়ে খুশি। তবে ভরা মৌসুমে এই দাম থাকবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন তারা।
ইউরোপ-আমেরিকাসহ প্রধান বাজারগুলোতে করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ কমে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে শুরু করায় রপ্তানিকারকরাও এই খাতটি থেকে গত অর্থবছরের চেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আনতে নতুন পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন।
দেশের সব জেলাতেই কম-বেশি পাটের চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি পাটের চাষ হয় ফরিদপুর জেলায়।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হজরত আলী নিউজবাংলাকে বলেন, জেলায় এবার ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে আবাদ হয়েছিল ৮৪ হাজার ৪২৭ হেক্টর জমিতে। তার আগের মৌসুমে আবাদ হয়েছিল ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে।
গত মৌসুমে পাটের ভালো দাম পাওয়ায় এবার কৃষকরা বেশি জমিতে চাষ করেছেন বলে জানান হজরত আলী।
এই মৌসুমে ফরিদপুর জেলায় ১ লাখ ৮৮ হাজার মেট্টিক টন পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার পাট ব্যবসায়ী বাবলু মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে তারা কিনছেন। সপ্তাহখানেক আগে ৩ হাজার ৩০০ টাকায় কিনেছেন।
‘মাত্র নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। ভরা মৌসুমে দাম কেমন থাকবে বোঝা যাচ্ছে না। তবে গতবারের চেয়ে বেশি থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।’
গতবারের চেয়ে দাম বেশি কেন হবে জানতে চাইলে বাবলু বলেন, ‘রপ্তানি বাজার ভালো। গত অর্থবছরে প্রচুর পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এবারও চাহিদা আছে। তাই দাম বেশিই থাকবে বলে মনে হচ্ছে।’
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার পাটচাষি শুক্কুর মোল্লা নিউজবাংলাকে বলেন, এবার পাট উৎপাদনে খরচ বেশি হয়েছে। প্রতি মণ ৩ হাজার টাকার বেশি দরে বিক্রি করতে না পারলে তাদের লোকসান হবে।
গতবার ভরা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতি মণ পাট ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। তবে মৌসুম শেষে ডিসেম্বরের দিকে প্রতি মণ পাটের দাম বেড়ে ৬ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। মে মাস পর্যন্ত ওই বাড়তি দামে বাজারে পাট বিক্রি হয়।
পাট রপ্তানির পালে হাওয়া
গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ১১৬ কোটি ১৪ লাখ (১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। বর্তমান বাজারদরে বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা) এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এই রপ্তানি আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।
এর আগে এক বছরে এ খাত থেকে এত বেশি বিদেশি মুদ্রা কখনোই আসেনি।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাত থেকে ১০২ কোটি (১ দশমিক ০২ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ, যা ছিল এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।
ওই একবারই পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছিল।
গত অর্থবছরে পাটসুতা (জুট ইয়ার্ন) রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৮০ লাখ ডলারের; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪১ দশমিক ৬১ শতাংশ। কাঁচাপাট রপ্তানি হয়েছে ১৩ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার ডলার; আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
পাটের তৈরি বস্তা, চট ও থলে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি ডলারের। আয় বেড়েছে ৩০ দশমিক ১৫ শতাংশ। পাট ও পাটসুতা দিয়ে হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১২ কোটি ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশ।
এ ছাড়া পাটের তৈরি অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ডলারের।
পাট এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত
পাট দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। দেশ-বিদেশে পাটের অনেক চাহিদা রয়েছে। একসময় এই খাত থেকে সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসত। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য ছিল পাট। তা থেকে রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসায় পাটকে বলা হত ‘সোনালি আঁশ’। কিন্তু কালের আবর্তে তা হারিয়ে যেতে থাকে। দিন যত গড়িয়েছে, পাটের গৌরব তত ম্লান হয়েছে।
প্রায় অর্ধ শতক পর করোনাভাইরাস সংকটকালে যখন দেশের রপ্তানি আয় তলানিতে ঠেকেছে, তখন পাটে দেখা দিয়েছে আশা। আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে সেই পাট।
এখন পাটের উৎপাদন বাড়ছে; বাড়ছে রপ্তানি; কৃষক ভালো দাম পাচ্ছে। পাশাপাশি পাটপণ্যের বহুমুখী উৎপাদনও বাড়ছে।
পাট এখন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত। ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে চামড়া খাতকে পেছনে ফেলে রপ্তানি পণ্য তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে পাট।
২০১৯-২০ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়জাত পণ্য রপ্তানি করে ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। আর পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরে চামড়া খাত থেকে এসেছে ৯৪ কোটি ১৭ লাখ ডলার। পাট খাত থেকে এসেছে ১১৬ কোটি ১৫ লাখ ডলার।
গত কয়েক বছর ধরে পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইলসহ আরও কয়েকটি খাত থেকে বেশি-বিদেশি মুদ্রা আসতে থাকায় মোট রপ্তানিতে তৈরি পোশাক খাতের অংশ খানিকটা কমেছে।
তিন বছর আগে মোট রপ্তানির প্রায় ৮৫ শতাংশ আসত পোশাক খাত থেকে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা কমে ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, বর্তমানে দেশে পাটচাষির সংখ্যা ৫০ লাখের মতো। দেশের জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) পাট খাতের অবদান প্রায় ০.৩ শতাংশ। কৃষি জিডিপিতে তা ১.৫ শতাংশ।
গত বছর সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকল বন্ধ করে দেয়ার পরও সোনালি আঁশ পাটের ‘সোনালি দিন’ ফিরে আসার হাতছানি দেখা যাচ্ছে বলে অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকেরা আশার কথা শুনিয়েছেন।
এবার লক্ষ্য ১৪৩ কোটি ডলার
গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতা বজায় থাকার প্রত্যাশায় নতুন অর্থবছরেও পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে বেশি রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরেছে সরকার।
গত ৬ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে, তাতে ২৩ দশমিক ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে পাট ও পাটজাত দ্রব্য থেকে ১৪৩ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
এবার সাড়ে আট লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এবার আট থেকে সাড়ে ৮ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। আর এ থেকে কম বেশি ৯০ লাখ বেল পাটের আঁশ উৎপন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশে উৎপাদিত পাটের আঁশের প্রায় ৫১ শতাংশ পাটকলগুলোয় ব্যবহৃত হয়, ৪৪ শতাংশের মতো কাঁচা পাট বিদেশে রপ্তানি হয় এবং মাত্র ৫ শতাংশের মতো লাগে ঘর-গৃহস্থালি আর কুটিরশিল্পের কাজে।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশকে পাট হতো ১২ লাখ হেক্টর জমিতে। মাঝে তা ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ হেক্টরে নেমে যায়। কিন্তু প্রাকৃতিক আঁশের চাহিদা বাড়ায় ২০১০-১৫ সাল নাগাদ চাষের এলাকা বেড়ে ৭ লাখ হেক্টরে পৌঁছায়। এরপর থেকে তা আরও বাড়ছে।
আগে ১২ লাখ হেক্টর এলাকা থেকে যে পরিমাণ পাট পাওয়া যেত, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে এখন ৭-৮ লাখ হেক্টর জমি থেকেই তার চেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানান।
সরকারি হিসাবে পাটচাষির সংখ্যা ৫০ লাখ হলেও কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ পাট চাষ এবং চাষ পরবর্তী বিভিন্ন প্রক্রিয়া, যেমন প্রক্রিয়াজাতকরণ, আঁশ বাঁধাই, গুদামজাতকরণ, পরিবহন/স্থানান্তর ও বিপণনের মতো কাজে যুক্ত।
আঁশ ছাড়ানোর পর পাওয়া পাটকাঠি গ্রামে জ্বালানির প্রধান উৎস; পাটচাষ কমে গেলে পাটকাঠি না পেয়ে বৃক্ষ নিধনের প্রবণতা বাড়তে পারে, যা পরিবেশের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা।
কৃষিবিদরা বলছেন, পাট চাষ কৃষকদের অন্য পেশায় বা অন্য স্থানে পেশার তাগিদে উপার্জনের জন্য স্থানান্তর কমাতেও ভূমিকা রাখে।
বন্ধ পাটকল চালুর উদ্যোগ নেই
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির এক আদেশে ব্যক্তি মালিকানাধীন, পরিত্যক্ত ও সাবেক ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের ৭৮টি পাটকল নিয়ে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) গঠিত হয়। ১৯৮১ সালে মিলের সংখ্যা বেড়ে হয় ৮২। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের সময় ৩৫টি পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। আটটি পাটকলের পুঁজি প্রত্যাহার করা হয়।
১৯৯০ সালের পর বিশ্বব্যাংকের পাট খাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ১১টি পাটকল বন্ধ, বিক্রি ও একীভূত করা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০২ সালের জুনে বন্ধ হয় দেশের বৃহত্তম আদমজী জুট মিল।
শেষ পর্যন্ত বিজেএমসির আওতায় ২৬টি পাটকলের মধ্যে চালু ছিল ২৫টি। এর মধ্যে ২২টি পাটকল ও তিনটি নন-জুট কারখানা। সেগুলোই গত বছরের জুলাইয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধ করার সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অল্প সময়ের মধ্যে এই কারখানাগুলো আবার চালু করা হবে।
বন্ধ পাটকল দ্রুততম সময়ে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ভাড়া বা ইজারায় চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।
তিনি বলেন, বিজেএমসির বন্ধ পাটকল দ্রুততম সময়ে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ভাড়া বা ইজারায় চালু হবে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পাটকল চালু হলে বন্ধের সময় যেসব শ্রমিক ছিলেন, তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ পাবেন। পর্যায়ক্রমে সব শ্রমিককে পুনর্বাসন করা হবে।
তিনি বলেন, ‘পাট আমাদের গুরুত্বপূর্ণ খাত। বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বের সেরা মানের পাট উৎপাদন করে। সে জন্য পাটের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার।’
লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে ২৫ পাটকলের ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছা অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক) পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে গত বছরের ১ জুলাই পাটকল বন্ধ করে দেয় সরকার।
সামনে সুদিন
বাংলাদেশ পাটপণ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিজেজিইএ) চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসাইন সোহেল নিউজবাংলাকে বলেন, এখন পৃথিবীতে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে সুসময় চলছে।
তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি পরিবেশের ক্ষেত্রে নতুন ভাবনার জন্ম দেওয়ায় এ খাতের সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে নতুন করে।’
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে অন্যান্য পণ্যের চাহিদা কমলেও পাটপণ্যের চাহিদা কমেনি; উল্টো বেড়েছে। সে কারণেই গত অর্থবছরে আমরা বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি করেছি। খাদ্যের জন্য ফসল ফলাতেই হবে। আর সেই ফসল প্যাকেট বা বস্তাবন্দি করতে পাটের থলে লাগবে।
‘মহামারির অভিজ্ঞতা থেকে পরিবেশের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী আরও জোরালোভাবে সামনে আসবে। আর তাতে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়বে।’
সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ‘পরিবেশের ক্ষতি বিবেচনায় এমনিতেই পলিথিন ব্যবহার কমে আসছিল বেশিরভাগ দেশে। কোভিড-১৯ সঙ্কটের মধ্যে লকডাউনে দূষণ কমে আসার বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে।
‘আমার বিশ্বাস, পরিবেশের বিষয়টি আগামীতে আরও জোরালোভাবে সামনে আসবে। আর তাতে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়বে।’
বস্তা বা ব্যাগের পাশাপাশি কার্পেটের জন্যও বাংলাদেশের পাটের চাহিদা বাড়তে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কার্পেট তৈরিতে আমাদের জুট ইয়ার্ন ব্যবহৃত হয়। কোভিড-১৯ আতঙ্কে অনেকেই বাসা বা অফিসের কার্পেট পরিবর্তন করবেন। তখন আমাদের পাটের কদর বাড়বে।’
বাংলাদেশের মতো এত ভালো মানের পাট পৃথিবীর কোনো দেশে উৎপন্ন হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এখন সেসব দেশে পাটপণ্যের চাহিদা অনেক বাড়বে। আমরা সে সুফল পাব বলে আশা করছি।’
সাজ্জাদ হোসাইন জানান, বিশ্ববাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশের মতো বেড়েছে। কাঁচা পাটের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশের মতো। বিশ্বব্যাপী পলিথিনের ব্যবহার কমায় পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদাও বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে চাহিদা আরও বাড়বে। আমরা আমাদের সোনালি আঁশের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারব যদি এ খাতের দিকে একটু নজর দিই। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ছাড়া আর মাত্র একটি-দুটি দেশে পাট উৎপাদন হয়। বিশ্ব যত বদলাবে, পাটপণ্যের চাহিদা তত বাড়বে।’
সেই নজর দেওয়ার অংশ হিসেবে উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া, প্রয়োজনে প্রণোদনা দেওয়া, বিদ্যমান আইন বাস্তবায়নে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন বিজেজিইএ চেয়ারম্যান।
সরকার দেশে পাটের ব্যবহার বাড়াতে ২০১০ সালেই আইন করেছে। সে আইন অনুযায়ী ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ, সরবরাহ ও মোড়কীকরণে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তবে সব ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন সোহেল।
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা লক্ষ্য করছি, শুধু ধান, চাল ও গমে পাটের মোড়ক ব্যবহার হচ্ছে, সেটাও স্বল্প আকারে; রাজধানী ঢাকায়। জেলা-উপজেলায় কেউ মানছে না এই আইন।’
ছয়টি পণ্যে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা গেলে দেশি পাট শিল্প আরও বিকশিত হতো এবং কর্মসংস্থানও বাড়ত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
একই ধরনের মত প্রকাশ করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক কৃষি অর্থনীতিবিদ এম আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘পাট থেকে বেশি অর্থ আসাটা ভালো খবর। তবে এতে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে আগামী দিনগুলোতেও এর ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
‘বিশ্বব্যাপী যেভাবে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে, তাতে পাটের চাহিদা বাড়তেই থাকবে। এ বিষয়টি অনুধাবন করে আমরা যাতে ধারাবাহিকভাবে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বাড়াতে পারি, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
‘নানা সংকটের মধ্যে করোনা যেহেতু একটা ভালো সুযোগ এনে দিয়েছে, সেই সুযোগটা সবাই মিলে কাজে লাগাতে হবে।’
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশের মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশে খুবই আন্তরিক।
এ খাতের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের পাশাপাশি টেকসই শিল্পায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (বিএবি) ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ইতিবাচক ভূমিকা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস-২০২৫’ উদ্যাপন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষ্যে আমি বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (বিএবি) এর সকল অংশীজন এবং সহযোগী সংস্থাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘অ্যাক্রেডিটেশন : ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের ক্ষমতায়ন (এসএমই)’, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি।’
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনের একটি বৃহৎ অংশ এসএমই খাত থেকে আসে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও এ খাতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসএমই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা, ক্রেতা ও ভোক্তার পরিবর্তনশীল চাহিদা এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতার মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রয়োজন সম্মিলিত বৈশ্বিক উদ্যোগ।’
তিনি বলেন, ‘অ্যাক্রেডিটেশন ব্যবস্থা জাতীয় গুণগতমান অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার সরবরাহ ব্যবস্থার সকল পর্যায়ে গুণগতমান নিশ্চিতকরণ, দক্ষ কারিগরি জনবল সৃষ্টি, বাণিজ্যে কারিগরি বাধা অপসারণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করে এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিএবি এ লক্ষ্যে কাজ করে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ল্যাবরেটরি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সনদ প্রদানকারী সংস্থা এবং পরিদর্শন সংস্থাসহ মোট ১৫৫টি সরকারি, বেসরকারি এবং বহুজাতিক সংস্থাকে আন্তর্জাতিক মান অনুসারে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ প্রদান করেছে।’
মাদক মুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ও এক সময়ের জনপ্রিয় খেলা হা-ডু-ডু খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ রোববার (৮ জুন) বিকেলে উপজেলার রাধাকানাই ইউনিয়নের খালইপুড়া দাখিল মাদরাসা মাঠে সূর্য তরুণ যুব সংঘের বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিলুপ্তপ্রায় এ খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়।
খোরশেদ আলম আকন্দ এর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মোমেনশাহী ল কলেজের সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক এড. রেজাউল করিম চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, গ্রামগঞ্জের একসময়কার জনপ্রিয় পুরনো এ খেলাটি গ্রামের কাঁচা রাস্তায়, মাঠ, বাগানে বা খোলা স্থানে জমজমাট ও উৎসবমুখর পরিবেশে হতো। কালের বিবর্তনে এই খেলা এখন আর আগের মতো দেখা যায় না। তাই জনপ্রিয় এ খেলাটি টিকিয়ে রাখা এবং নতুন প্রজন্মকে খেলাধূলায় উজ্জীবিত করায় তিনি সূর্য তরুণ যুব সংঘকে অভিনন্দন জানান।
এ খেলায় ঢাকা একাদশকে হারিয়ে গ্রাম একাদশ বিজয় লাভ করেন। পরে বিজয়ীদলকে পুরস্কার হিসেবে একটি খাসি উপহার দেওয়া হয়। এসময় অন্যান্যদের মাঝে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক সমিতি ফুলবাড়িয়া শাখার সদস্য সচিব মোখলেছুর রহমান বিএসসি, এডভোকেট মো. জসিম উদ্দিন, ডা. রফিকুল ইসলাম, মো. আবুল কালাম প্রমুখ।
নাগরিক জীবনের ব্যস্ততায় হারিয়ে যাওয়া এই ঐতিহ্যবাহী খেলাটি উপভোগ করতে খালইপুড়া দাখিল মাদরাসা মাঠে বিপুলসংখ্যক দর্শক ও ক্রীড়া প্রেমী জড়ো হয়।
ঝিনাইগাতীতে ঈদ-উল-আজহার পরদিন, ৮ জুন রবিবার, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মো: মোখতার আহমদে এর মহতী উদ্যোগে এবং ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জনাব আশরাফুল আলম রাসেলের সরাসরি তত্ত্বাবধানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অসহায় ও দরিদ্র ১৫০টি পরিবারের মাঝে কুরবানির মাংস বিতরণ করা হয়।
এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঝিনাইগাতী উপজেলার হলদীগ্রাম, নয়া রাংটিয়া, ভারুয়া, পূর্ব গজারীকুড়া আশ্রয়ণ ও গুচ্ছগ্রামের ১২০টি পরিবার এবং উপজেলার অন্যান্য এলাকার আরও ৩০টি পরিবার এই সহায়তা পান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল—প্রত্যেকটি পরিবারের দরজায় গিয়ে ইউএনও নিজ হাতে কুরবানির মাংস তুলে দেন এবং প্রত্যেকের সাথে আন্তরিকভাবে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুচ্ছগ্রামের এক মহিলা বলেন, “আমি তো ভাবছিলাম, আমাগো কথা কে ভাবে? কিন্তু স্যার যেইভাবে সামনে আইস্যা ডাক দিল আর মাংসের প্যাকেট হাতে দিয়ে ঈদ মোবারক কইলো, মনডারে বইলা বোঝানো যাইবো না। দোয়া করি, আল্লাহ যেন ইউএনও স্যারকে সব সময় গরিব-দুখির লগে থাকার তৌফিক দান করেন।”
ইউএনও আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, “ঈদের আনন্দ যেন প্রান্তিক ও অসহায় মানুষদের মাঝেও পৌঁছে যায়, সেটাই ছিল আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা চাইনি কেউ এই উৎসব থেকে বাদ পড়ে থাকুক।”
এই ব্যতিক্রমধর্মী ও মানবিক উদ্যোগে কেবল খাবার নয়, পৌঁছে গেছে ভালোবাসা, সম্মান ও রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বকারী একজন কর্মকর্তার সরাসরি উপস্থিতি—যা ওইসব মানুষের জন্য ছিল এক অনন্য অনুভূতি।
স্থানীয় বাসিন্দারা ইউএনও আশরাফুল আলম রাসেল মহোদয়ের এ আন্তরিক প্রচেষ্টাকে অভিনন্দন জানান এবং বলেন, এমন মানবিক প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড মানুষকে রাষ্ট্রের প্রতি আস্থাশীল করে তোলে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ‘ভুল–বোঝাবুঝির’ অবসান করতে চান যুক্তরাজ্যের সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ টিউলিপ সিদ্দিক। তাই অধ্যাপক ইউনূসের আসন্ন যুক্তরাজ্য সফরের সময় তাঁর সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
টিউলিপের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বাংলাদেশে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ এনেছে কর্তৃপক্ষ। গত বছরের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। তিনি পালিয়ে ভারতে চলে যান। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমে টিউলিপের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ নিয়ে শোরগোল হয়েছে। এর মধ্যে টিউলিপ কিংবা তাঁর মায়ের (শেখ রেহানা) বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে ৭ হাজার ২০০ বর্গফুটের প্লট নেওয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযোগ রয়েছে।
টিউলিপ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আর টিউলিপের আইনজীবীরা বলেছেন, এসব অভিযোগ ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। এর কোনো ভিত্তি নেই। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছে না বলেও অভিযোগ টিউলিপের।
কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টি ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা,বাঘুটিয়া,চরকাটারী ইউনিয়নে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি ফলে প্রবল ¯্রােত ভাঙ্গনে করাল গ্রাসে শনিবার ঈদের দিন দুপুরে বাচামারা ইউনিয়নের নিজ ভারাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনতলা পাকা ভবন নদী গর্ভে তলিয়ে যায় । সেই সাখে গত এক সপ্তাহে কয়েক শত ঘরবাড়ি বসতভিটা ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে । স্কুল ভবন নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় ঐ বিদ্যালয়ের কমলমতি ছাত্র/ছাত্রীদের লেখা পড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ।
নদীপাড়ের মানুষ স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করলেও বর্ষার শুরুতেই তাদের ভাঙন আতঙ্ককে প্রহর ঘুনতে হচ্ছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদীপাড়ে ভাঙন শুরু হলে ঘরবাড়ি বসতভিটা, ফসলি জমি হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়েন নদীপাড়ের বাসিন্দারা।স্থানীয় পানি উন্নয়ন অফিস ভাঙনরোধে জরুরি ভিত্তিতে ১৪ হাজার জিও ব্যাগ ফালানোর কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বলে জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে,মানিকগঞ্জের বুক চিরে বয়ে গেছে পদ্মা, যমুনা, কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী, ইছামতী, গাজীখালিসহ ১৪টি নদী।ভাঙন আতঙ্ক নদী পাড়ের মানুষেরে এযেন নিত্য দিনের সঙ্গি। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদীপাড়ে ভাঙন শুরু হলে ঘরবাড়ি বসতভিটা, ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন নদীপাড়ের বাসিন্দারা।
জানা গেছে,দৌলতপুর উপজেলার চর কালিয়াপুর,বাঘুটিয়া, ভারাঙ্গা,রংদারপাড়া,বিষ্ণপুর,রামচন্দ্রপুর,আবুডাঙ্গা পূর্বপাড়া,চরকাটারি বোর্ডঘর বাজার,চরকাটারি সবুজসেনা হাইস্কুল,বাচামারা ইউনিয়নের চরভারাঙ্গা সরকার পাড়া,মজম শেকের পাড়া,বাচামারা পশ্চিম পাড়া,উত্তরখন্ড,সুবুদ্ধি,বাঘুটিয়া ইউনিয়নের পাচুরিয়া , বাঘুটিয়া বাজার,পারুরিয়া বাজার,রাহাতপুর, জিয়নপুর ইউনিয়নের বৈন্যাঘাট,লাউতাড়া,লাউতাড়া আশ্রয়ন কেন্দ্র ,চকবাড়াদিয়া, চকমিরপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গা রামচন্দ্রপুর,রামচন্দ্রপুর নতুন পাড়া, হাতকোড়া খলসী ইউনিয়নের চরমাস্তল,বিষ্ণপুর খাঁপাড়া,পার মাস্তলসহ ২৮ টি এলাকা নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে ।
দৌলতলপুর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো : গোলাম ইয়াছিন জানান,রাহুতপুর এলাকায় বালুমহল ইজারার নাম করে বাঘুটিয়া এলাকায় নদী থেকে বালু উত্তলোন করায় প্রতি বছর ভাঙন দেখা দেয়।এতে আমাদের গ্রামের কয়েকশ পরিবারকে অপূরনীয় ক্ষতির মূখে পড়তে হয়।বালু না কাটলে আমাদের এলাকায় নদী কিছুটা কম ভাঙবে।
বাচামারা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো: ওয়াজেদ আলী সরকার বলেন, নদীতে প্রবল ¯্রােত ২/৩ দিনে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে । চোখের পলকে নিজ ভারাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনতলা পাকা ভবন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে তলিয়ে গেলো । ভাঙনরোধে সরকারের কাছে ব্যাবস্থা নেওয়ার দাবী জানান তিনি।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, নদীপাড়ের ঝুকিপূর্ণ স্থানগুলোর ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে ১৪ হাজার জিও ব্যাগ ফালানোর কার্যক্রম শুরু করা হবে।এছাড়া নদী ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক প্রকল্প গ্রহণের লক্ষ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি চলমান রয়েছে ও কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিয়ান নুরেন জানান, শুক্রবারে নিজভারাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নদী ভাঙ্গনের সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে উপজেলা প্রকৌশলীকে জরুরী ভিত্তিতে স্কুল ভবন নিলাম দেয়া যায় কিনা ব্যবস্থা প্রহনের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল । উপজেলা প্রকৌশলী সরেজমিনে গিয়ে দেখেছেন কিন্তু ভাঙ্গনের ফলে ভবনটি অত্যান্ত ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় কোন কুলকিনারা করতে পারেনি । খ্বর পেয়েছি ঈদের দিন ভবনটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ।
গতকাল শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে বন্ধ থাকার পর আজ রোববার থেকে ফের চালু হয়েছে মেট্রোরেল। তবে মেট্রোতে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না।
রোববার সকাল ৮টা থেকে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা যায়, আজ (রোববার) প্রতি ৩০ মিনিট পরপর ট্রেন চলছে। আগামীকাল সোমবার থেকে মেট্রোরেল সরকারি ছুটির দিনের সময়সূচি অনুযায়ী চলাচল করবে।
গত মঙ্গলবার ডিএমটিসিএলের পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলমের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেট্রোরেলে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না। মেট্রো স্টেশনের প্রতিটি গেটে যাত্রীদের যথাযথভাবে তল্লাশি করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনো যাত্রীর কাছে কাঁচা বা রান্না করা মাংস পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক তার মেট্রো স্টেশনে প্রবেশ আটকে দেওয়া হবে। মেট্রোরেলের নিরাপত্তা কর্মীদের এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতেও বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনেও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় কোরবানির দৃশ্য চোখে পড়েছে।
গতকাল শনিবার ঈদের প্রথম দিন ব্যস্ততা ও চাপ সামলাতে না পেরে কিংবা কসাই সংকটের কারণে যারা কোরবানি করতে পারেননি আজ রোববার ঈদের দ্বিতীয় দিনে তারা পশু কোরবানি করছেন। নগরীর পুরান ঢাকা, লালবাগ, টিকাটুলী, মুগদা এবং বাসাবো এলাকায় সকাল থেকেই কোরবানির পশু জবাই ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের ব্যস্ত দৃশ্য চোখে পড়েছে।
পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকটি বাসার সামনে পলিথিন টানিয়ে পশু কোরবানির প্রস্তুতি চলছে। আবার অনেকেই ইতোমধ্যে পশু কোরবানি সম্পন্ন করেছেন। তার কিছু দূরেই রাস্তার পাশে কয়েকজন তরুণ মাংস কাটছেন, পাশে দাঁড়িয়ে কসাই নির্দেশনা দিচ্ছেন। কিছু দূরে শিশু-কিশোররা দাঁড়িয়ে কোরবানির দৃশ্য দেখছে। লালবাগের বউবাজার, টিকাটুলীর জনবহুল গলি, মুগদা ও বাসাবোর অভ্যন্তরীণ বেশকিছু সড়কেও একই চিত্র দেখা যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গতকাল ঈদের দিন কসাই সংকট এবং সময় ও প্রস্তুতির অভাবে কোরবানি করতে না পেরে অনেকেই আজ করছেন। কারও কারও গরু হাট থেকে বাড়ি পৌঁছেছে ঈদের দিন রাতে। আবার কেউ কেউ ইচ্ছে করেই ভিড় এড়িয়ে আজ কোরবানি করছেন, যাতে সময় নিয়ে কাজ করতে পারেন।
এদিকে আজও পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় সিটি করপোরেশনের তৎপরতা দেখা গেছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, কোরবানির দ্বিতীয় দিনেও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলছে। ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, যেসব এলাকায় আজ কোরবানি হচ্ছে, সেখানে আমরা নির্ধারিত পয়েন্টে কর্মী পাঠিয়ে বর্জ্য অপসারণ করছি। ঈদের তিন দিনই আমরা মাঠে থাকব।
ধর্মীয় দিক থেকে ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ১১ জিলহজও কোরবানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের বর্ণনায় এ দিনটি মর্যাদাপূর্ণ বলে উল্লেখ রয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হলো কোরবানির দিন, এরপরের দিনটি। তাই অনেকেই আজও কোরবানি করছেন। শরিয়ত অনুযায়ী ১০ থেকে ১২ জিলহজ, মোট তিন দিন কোরবানি করার বিধান রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যে কোনো দিন কোরবানি দেওয়া বৈধ, তবে প্রথম দিন কোরবানি করা সবচেয়ে উত্তম। সময়মতো কোরবানি না হলে তার পরিবর্তে সদকা করারও নির্দেশ রয়েছে।
মন্তব্য