কোরবানির পশুর চামড়া মানেই যেন সস্তায় কেনা। মাঠ পর্যায়ের সংগ্রহ দাম কম হবে, আড়তে তা কম আরও।
গত কয়েক বছর ধরে দেশে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ ও ক্রয়-বিক্রয়ে এই অনিয়মটাই রীতিমত নিয়মে পরিণত হয়েছে।
এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যদিও মাঠপর্যায় থেকে ওই চামড়ার সংগ্রহ হয়েছে ভালো। কিন্তু আড়তে বিক্রি করতে গিয়ে মেলেনি ন্যায্য দাম।
মৌসুমী ব্যবসায়ী, মসজিদ-মাদ্রাসা ও এতিমখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, দাম ফেলতে পোস্তা, অমিনবাজার, সাভারের হেমায়েতপুর, নাটোর, দিনাজপুর, খুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় চামড়ার আড়তদারদের এক একজোট হওয়া ছিল চোখে পড়ার মতো। কম দামে চামড়া কেনায় তাদের সমানতালে চলেছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা।
উপায় না দেখে কম দামেই তারা বাধ্য হয়েছে চামড়া ছাড়তে।
আড়তদারদের চামড়া কেনায় অনীহার কারণে সারাদেশে ৫০ শতাংশ খাসির চামড়া নষ্ট হয়েছে। কোথাও কোথাও গরুর চামড়াও বিক্রি করা যায়নি। শেষে ওই চামড়ার ঠিকানা হয়েছে রাস্তায় বা সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিনে।
সরকার জাতীয় সম্পদ কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে গত বছরের চেয়ে বর্গফুট প্রতি দাম গরুতে ৫ টাকা ও খাসিতে ২ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করে দেয়।
‘আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা এই দাম বিবেচনায় রেখে কোরবানির পশুর চামড়া ক্রয়-বিক্রয় করবেন’- মূল্য নির্ধারণের ঘোষণা অনুষ্ঠানে চামড়াসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এভাবেই আকুতি জানিয়েছিলেন।
কিন্তু কথা রাখেনি চামড়া ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর অস্থায়ী হাট ছাড়া বাড়তি দাম মেলেনি দেশের বেশিরভাগ জায়গায়।
বছরে বাংলাদেশে প্রায় ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এই চামড়ার ৬০ ভাগের বেশি সরবরাহ মেলে কোরবানির মৌসুমে। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া।
চট্টগ্রামে গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা থেকে ২৩০ টাকার মধ্যে। সিলেটেও একই অবস্থা। কুমিল্লার বেশ কিছু গ্রামের কোরবানিদাতা এক লাখের বেশি দামে কিনেছিলেন কোরবানির পশু। কিন্তু বুধবার ঈদের দিন ওইসব পশুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়।
নাটোর শহরের বড়হরিশপুর বাইপাস এলাকায় আড়তদাররা গরুর চামড়া দাম দিয়েছেন ২০০ টাকা ও খাসির চামড়ায় ১০ টাকা। খুলনায় গরুর চামড়ার মান ও আকারভেদে বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা।
বরিশালে গরুর চামড়ার সর্বোচ্চ দর মিলেছে ৪০০ টাকা। আর ছাগলের চামড়া তো বিনা মূল্যেও কেউ নিচ্ছে না। গাজীপুরে চামড়ার দাম না পেয়ে অনেকে ফেলেছেন রাস্তায়।
বিক্রি করতে না পারায় দিনাজপুরে রামনগর এলাকায় চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপের অফিসের সামনে রাস্তায় কয়েক হাজার ছাগলের চামড়া ফেলা হয়েছে রাস্তায়।
বৃহস্পতিবার বগুড়ায়ও পড়েছিল ছাগলের ১০ হাজার চামড়া। বিক্রি করতে না পেরে ওই চামড়াও ফেলে রেখে গেছেন রাস্তায়। পরে ওইসব চামড়া সিটি করপোরেশনের লোকজন তুলে নিয়ে যায়।
আড়তদারদের বিরুদ্ধে এবার সারা দেশেই চামড়ার দাম কৌশলে ফেলে দেয়া এবং আড়তে চামড়া নিয়ে আসা সত্ত্বেও না কেনার মতো অসংখ্য অভিযোগ ওঠেছে। এই নিয়ে সারা দেশেই সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, মসজিদ-মাদ্রাসা ও এতিমখানা কর্তৃপক্ষের মধ্যে রয়েছে চাপা অসন্তোষ।
নাটোরের বড় হরিশপুর এলাকার মৌসুমী ব্যবসায়ী ওহায়েদ মোল্লা জানান, সিন্ডিকেটের কারণে চামড়ার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তার মতো অনেকেই।
রাজধানীর শান্তিনগর উম্মে হাবীবা হাফেজিয়া মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ১২০ পিস চামড়া নিয়ে আসে পোস্তা এলাকায়। মাদ্রাসার মুহতামিম আব্দুল আজিজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৭৪টিই ছিল বড় গরুর চামড়া। শুনেছি বড় গরুর চামড়া কোথাও কোথাও ৭০০-৮০০ টাকার ওপরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু পোস্তায় চামড়া এনে আমাদের বিক্রি করতে হয়েছে গড়ে ৬০০ টাকায়। মাঝারি আকৃতির বাকি ৪৬ পিস চামড়া গড়ে বিক্রি করতে ৪০০ টাকা হারে।‘
চামড়া পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ফতেপুর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেপুরী নিউজবাংলাকে জানান, ‘দেশে তো চামড়ার দাম নাই। গত বছরও পাই নাই। এ বছরও না। আমরা মোট ১৩শ’ চামড়া সংগ্রহ করেছি। ওই চামড়াগুলো ঈদের দিন তিন দফায় বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতি পিস ২৩০, ২০০ ও ১৭০ টাকা হারে পেয়েছি।
‘বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনে আরও নতুন সংগ্রহ করা চামড়া বিক্রি করেছি, যেগুলোর দাম দেয়া হয়েছে মাত্র ১০০ টাকা করে।’
চামড়ার দাম নিয়ে তাদের এতটাই বেদনা যে এই নিয়ে তিনি কাউকে বলতেও চান না, দোষারোপও করতে চান না। শুধু বলেন, ‘এতে গরিবের হকই নষ্ট করা হচ্ছে।’
যশোর মনিরামপুর উপজেলার জামিয়ো ইমদাদিয়া বালক-বালিকা মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা রশিদ আহমেদ বলেন, ‘মাঠ পর্যায় থেকে চামড়া সংগ্রহের বিষয়টি এখন মূল্য বিবেচনায় নিয়ম রক্ষার দায়ে পরিণত হয়েছে। না গেলে বলবে মাদ্রাসার কি টাকার দরকার নেই? শিক্ষার্থীদের জীবন-জীবিকা নির্বাহে চামড়া ও এর থেকে পাওয়া টাকা তো দরকারই। না হলে চলবে কী করে?
‘কিন্তু এর থেকে যে দাম পাওয়া যায়, যে পরিবহন খরচ আছে এবং এর সঙ্গে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের পরিশ্রমের মূল্য ধরলে বিনা পয়সার চামড়াতেও লাভ-লোকসানের প্রশ্নটি সামনে চলে আসে। এটা ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকলে মাদ্রাসাগুলো একটা সময় বিনা পয়সার চামড়া নিতেও আর মাঠে নামবে না।’
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রবিউল আলম বলেন, ‘সারা দেশে অন্তত ৫০ শতাংশ ছাগলের চামড়া বিক্রি করা যায়নি। ওই চামড়া নষ্ট হয়েছে। একইভাবে গরুর চামড়ার দামও শোচনীয়। এর জন্য আড়তদার, ট্যানারি মালিক ও চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিকারকদের যৌথ শক্তিশালী সিন্ডিকেটই দায়ী। এদের অপতৎপরতার কারণেই প্রতিবছর কোরবানি এলে চামড়ার দাম নিয়ে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়।’
তবে বলতেই হবে সরকার এবার চামড়ার বর্গফুট প্রতি দাম ৫ টাকা বাড়ানোয় কোথাও কোথাও কিছু চামড়া গতবারের তুলনায় বেশি দাম পেয়েছে। কিন্তু মূল্য নির্ধারণেও শুভঙ্করের ফাঁকি থাকায় বেশিরভাগ জায়গাতেই মিলেনি ন্যায্যদাম।
এর ব্যাখা দিয়ে রবিউল বলেন, ‘লবণজাত চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হলেও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ বা দায়িত্ব নেয়া হয়নি। উচিত ছিল সঙ্গে কাঁচা চামড়ার দরও ঠিক করে দেয়ার। সেটি না হয়নি বলেই এবার দাম বাড়িয়েও কোনো সুফল আসেনি।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আড়তদারদের বৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান নিউজবাংলাকে জানান, ‘সিলেট ও চট্টগ্রামসহ কিছু জায়গায় চামড়ার দরটা কম ছিল। ওইসব জায়গায় দর পরিস্থিতি নিয়ে আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি। বাকি জায়গায় চামড়ার দাম খারাপ হয়নি। বরং গতবারের তুলনায় ১০০-২০০ টাকা বেশি পেয়েছে।’
তবে সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে দেয়ার বিষয়টি তিনি স্বীকার করতে রাজি হননি।
দর পেলে চামড়া কেন বিক্রি হবে না বা আড়তদারদের চামড়া না কেনার কারণ কি এমন প্রশ্নের জবাবে আফতাব খান বলেন, ‘ছাগলের চামড়ার দাম বৈশ্বিকভাবেই কম। দেশেও কম হওয়ায় এর সংগ্রহ, ক্রয় এবং সংরক্ষণ খুবই ব্যয়বহুল। এসব কারণে ছাগলের চামড়ায় কিছু নষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক।
‘আর গরুর চামড়া যেগুলো নষ্ট হয়েছে সেগুলো আনতে আনতেই লাইফটাইম ফুরিয়ে গেছে। এতে ওইসব চামড়া গুণগতমান হারিয়ে যায়। ওই চামড়া কিনে কোনো লাভ হবে না। বরং প্রক্রিয়াজাতে বাড়তি ব্যয় হবে। এর ফলে কিছু গরুর চামড়াও নষ্ট হতে পারে। কিন্তু এর পরিমাণ খুবই সামান্য এবং তা শতাংশে উল্লেখ করার মতো নয়।’
আফতাব খানের সমিতির তথ্যমতে, এবার কোরবানিতে সব মিলিয়ে ৭০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ সম্ভব হবে। এর মধ্যে ৪৪ লাখ পিস গরুর চামড়া। বাকি ২৬ লাখ চামড়ার যোগান মিলবে ছাগল-ভেড়া, খাসি থেকে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানে খেলতে গিয়ে একটি ভবনের ছাদ থেকে পড়ে এক শিশু নিহত হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে পাঁচ তলা ভবনটির ছাদ থেকে পড়ে নিহত হয় সে।
নিহত শিশুর নাম খাদিজা আক্তার (৫)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুটির ফুফা মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া (২০ বছর)।
খাদিজার বাবা মোহাম্মদ ফয়সাল আহমাদ জানান, দুপুরে পাঁচ তলার ছাদে খাদিজা খেলাধুলা করার সময় ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়। এ সময় খাদিজার ফুফা দৌড়ে ধরতে গেলে তিনিও নিচে পড়ে যান।
তিনি জানান, পরে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খাদিজা রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারা যায় এবং ফারিয়ার ফুফাকে ভর্তি রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া থানা এলাকায়। খিলগাঁওয়ের গোড়ান নবাবীর মোড় বতর্মানে১৪৮ /১ রায়হান সাহেবের বাড়ির ভাড়াটিয়া আমরা।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মহম্মদ বাচ্চু মিয়া বলেন, শিশুটির মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত ছাড়া স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে খিলগাঁও থানার সাথে কথা হয়েছে।
তীব্র থেকে অতি তীব্র মাত্রায় পাবনা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। অসহনীয় দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত তিন-চার দিন তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও শুক্রবার চলতি মৌসুমে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
এদিন পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যা জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত রবিবার (২১ এপ্রিল) ঈশ্বরদীতে প্রথমবার ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, জেলার তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অতি তীব্র তাপদাহে পাবনার মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ইটভাটার শ্রমিকসহ দিনমজুরদের জন্য অসহ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও তীব্র গরমে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ।
গাইবান্ধায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন আশরাফ আলী নামের এক রিকশাচালক। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার সুন্দরগঞ্জ-কুপতলা সড়কের ৭৫ নম্বর রেলগেট নামক এলাকায় এ ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ড ঘটে। পরে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সাদেকুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।
৫০ বছর বয়সী রিকশাচালক আশরাফ আলী সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের সাহার ভিটার গ্রামের মৃত ফয়জার রহমানের ছেলে। অন্যদিকে ছিনতাই ও হত্যায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলাম কুপতলা ইউনিয়নের রামপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা।
ওসি জানান, প্রতিদিনের মতোই বৃহস্পতিবার রাতে রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন আশরাফ আলী। তিনি কুপতলা এলাকার ৭৫ নম্বর রেলগেটে পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সাদেকুল ইসলাম তার পথ রোধ করে ছুরি ধরে রিকশা এবং চাবি কেড়ে নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। আশরাফ আলী এতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রথমে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত সাদেকুল আশরাফ আলীর পেটে ছুরিকাঘাত করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে রিকশাটিও উদ্ধার করা হয়। পরে আজ (শুক্রবার) দুপুরে সাদেকুলকে একমাত্র আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরেই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে। এর মধ্যে কোথাও কোথাও বৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এতে বলা হয়, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, বগুড়া, বাগেরহাট, যশোর, কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। আগামী পাঁচ দিনেও আবহাওয়াও প্রায় একই থাকতে পারে।
শুক্রবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়া ২০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও বৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ ও থাই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক থেকে বেরিয়ে ব্যাংককে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি শুক্রবার এ কথা জানান। খবর বাসসের
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং থাই প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এক সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’
দুপুরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে গভর্নমেন্ট হাউজে উভয় নেতার মধ্যে অনুষ্ঠিত একান্ত বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এসব তথ্য জানান। সন্ধ্যায় ঢাকায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়েছে।
ড. হাছান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিনের মধ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমে তারা একান্তে কথা বলেন, এরপর দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বহু বিষয়ে সবিস্তারে আলোচনা করেছেন।
থাইল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের যে ভ্রাতৃপ্রতিম ও বন্ধুপ্রতিম সম্পর্ক, সেটা আরও জোরদার, বহুমাত্রিক ও বিস্তৃত করার ব্যাপারে দুই প্রধানমন্ত্রী গভীর আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন, বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ সময় অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তি, জ্বালানি, পর্যটন ও শুল্ক সংক্রান্ত পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং মুক্ত বণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরুর জন্য একটি লেটার অভ ইন্টেন্ট স্বাক্ষরিত হয়।
দেশের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ব্যাংককে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবদুল হাই এবং থাইল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. প্রাণপ্রী বাহিদ্ধা নুকারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বর্ণনা করার পাশাপাশি বাংলাদেশের ১০০টি ইকোনমিক জোন ও আইটি ভিলেজে থাই বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা চাইলে প্রয়োজনে বাংলাদেশে তাদের জন্য বিশেষ ইকোনমিক জোন করার কথাও বলেছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে আসা প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। তাদের জন্য বাংলাদেশে যেসব সমস্যা উদ্ভূত হচ্ছে বৈঠকে সে বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলেও জানান ড. হাছান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, থাইল্যান্ডেও অনেক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন, এখনো অনেকে আসছেন। থাইল্যান্ডও এই পালিয়ে আসা মানুষদের ভারে জর্জরিত। এই সমস্যা সমাধানে উভয় প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের একসাথে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।
এদিন গভর্নমেন্ট হাউজে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রদত্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অফ অনার প্রদানকালে থাই প্রধানমন্ত্রী সাথে ছিলেন। শেখ হাসিনা তার সৌজন্যে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আয়োজিত রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখেন।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার ব্যাংককে পৌঁছান। তিনি বৃহস্পতিবার ব্যাংককে জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রে জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসকাপ) ৮০তম অধিবেশনে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে দেওয়া ভাষণে সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান জানান।
সফর শেষে প্রধানমন্ত্রীর আগামী ২৯ এপ্রিল দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ ৩ কর্মকর্তাকে আটকের পর কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর। এদিন দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে সাঁথিয়া থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের জিআরও এএসআই মাহবুবুর রহমান জানান, বিকেলে সাঁথিয়া থানা থেকে এনে তাদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় কেউ তাদের জন্য জামিন আবেদন করেননি। ফলে আদালত তাদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটককৃতরা হলেন- অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর এবং ক্যাশিয়ার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট অডিট টিম কাশিনাথপুর শাখায় অডিটে আসে। দিনভর অডিট করে তারা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আর্থিক অনিয়ম পান। এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানায় ওই শাখার ম্যানেজার (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী ও সিনিয়র অফিসার আবু জাফরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দিলে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তিনজনকে আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অডিটে অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের আটক করে সাঁথিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আজ (শুক্রবার) দুপুরে জিডির ভিত্তিতে আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দুদক আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করার পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি দেশ ও জনগণের উন্নয়নে আপনাদেরকে কাজ করতে হবে।
থাইল্যান্ড আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার অবস্থানকালীন আবাসস্থলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। খবর বাসসের
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক মো. নজরুল ইসলাম সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
বঙ্গবন্ধু তার অনুপ্রেরণার উৎস উল্লেখ করে শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, জাতির পিতাকে অসময়ে হত্যা করা হলেও ‘তার আদর্শ আমাদের মধ্যে রয়ে গেছে এবং সে কারণেই আমি তার (বঙ্গবন্ধু) আদর্শ বাস্তবায়ন করতে কাজ করছি। বঙ্গবন্ধু দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন।
গত ১৫ বছরে দেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ও উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতায় থাকায় এ অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, অনেক বাংলাদেশি থাইল্যান্ডের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। তবে তারা দ্বৈত নাগরিকত্ব বজায় রাখতে চান। এই দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে থাই সরকারের সাথে কথা বলবেন।
মন্তব্য