২০২০ সালে চামড়ার ঋণ হিসেবে যত টাকা বরাদ্দ ছিল, বিতরণ হয়েছে তার ১০ ভাগের এক ভাগ মাত্র। আবার ব্যাংক যে টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছির, তার প্রায় এক তৃতীয়াংশ হয়ে গেছে খেলাপি।
এবার চামড়া কিনতে কাগজে কলমে বরাদ্দ দেয়া আছে প্রায় ছয়শ কোটি টাকা। কিন্তু এই অর্থ ঋণ হিসেবে আদৌ বিতরণ হবে, এটা মনে করছেন না ব্যাংকাররাই।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত বছর থেকে বিনিয়োগ মন্দার মধ্যেও ব্যাংকের এই হাত গুটিয়ে বটে থাকার কারণ, ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা।
ব্যাংকাররা বলছেন, টাকা নিয়ে ট্যানারিগুলোর তা পরিশোধ না করার প্রবণতা রয়েছে। তবে এবার ৩ শতাংশ জমা দিয়ে পুরনো ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দেয়া হয়েছে। তবে ব্যাংকাররা তবু অনেকটাই রক্ষণশীল অবস্থানে আছেন। কারণ, পুনঃতফসিল করেই যে পুরনো ঋণ সবাই ফেরত দেয়, এমন নয়।
প্রতিবছর চামড়া খাতে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় রাষ্ট্রীয় মালিকানার ও বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক। কিন্তু বিতরণের হার ৯০ কোটি টাকার নিচে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, ‘৫৮৫ কোটি টাকা কোরবানি ঈদের জন্য বরাদ্দ করেছে কয়েকটি ব্যাংক। কিন্তু এটা শুভঙ্করের ফাঁকি। গত বছর ৬৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখলেও বণ্টন হয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। কারণ, যেসব ট্যানারির সক্ষমতা ছিল তারা শুধু তাদেরকেই পুনরায় ঋণ দেয়া হয়েছে। যারা পরিশোধ করতে পারেনি বা অক্ষম তাদেরকে রিসিডিউল করে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ তারা টাকা পায়নি।’
তিনি বলেন, ‘এই খাতে আগের যে টাকা বকেয়া আছে সেটা ব্লকে নিয়ে নতুন করে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা অর্থায়ন করা প্রয়োজন। তা না হলে এই খাতের সংকট কাটিয়ে উঠা কঠিন হবে।’
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস্ উল ইসলাম বলেন, ‘কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে চামড়া ব্যবসায়ীদের স্বার্থে নতুন নীতিমালার আলোকে ঋণ দেয়া হয়। গত বছর কোরবানির ঈদে ঋণ নিয়ে যারা পরিশোধ করেছে তারা ঋণ পাবে। যদি তারা অর্ধেক ঋণ পরিশোধ করেন তাহলে ঋণও অর্ধেক পাবেন। কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাবি ঋণ পরিশোধ না হলেও ওই পরিমাণ ঋণ তাদের দিতে হবে। কারণ গত বছর করোনার কারণে তারা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বয় করে একটা সিদ্ধান্ত দেবে।’
তিনি বলেন, ‘চামড়া ব্যবসায়ীদের কিছু প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। প্রকৃত ব্যবসায়ী আবেদন করলে অবশ্যই ঋণ পাবে। ছয়টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে আমরা ঋণ দিয়েছি। এ বছর এটা হয়ত আরও বাড়তে পারে বা কমতেও পারে’।
কত আবেদন পড়েছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে ঋণ শোধ করে এ বছরের জন্য আবেদন করেছেন। চামড়া শিল্প যাতে প্রকৃত দাম পায়, এ খাতে অর্থায়ন যেন সমস্যা না হয় এজন্য রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো সর্বদা সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ঋণের টাকা যেন দ্রুত ছাড় করা যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংক তো ঋণ ছাড় করবে কিন্তু ঋণ পাওয়ার যে যোগ্যতা ব্যবসায়ীরা যদি সেটা অর্জন না করে সেটার দায়িত্ব তো ব্যাংক নেবে না। ঋণ পাওয়ার যোগ্যতার ক্ষেত্রে যদি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ছাড় দিলে ব্যাংকগুলো অবশ্যই ঋণ দেবে।’
চামড়া খাতে এবার বরাদ্দ
ট্যানারি শিল্পের কাঁচামালের মূল যোগান আসে কোরবানির ঈদে। চাহিদার ৭০ ভাগই সংগ্রহ করা হয় এ সময়ে। যার ওপরে ভর করেই সারা বছর সচল থাকে এ শিল্প। চামড়া সংগ্রহে পর্যাপ্ত নগদ অর্থের দরকার হয় ব্যবসায়ীদের। যা পূরণ করে থাকে সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এ বছর ৯ ব্যাংক মিলে ৫৮৩ কোটি টাকা ঋণ দেবে।
বরাদ্দের এই টাকা গত বছরের তুলনায় ৬১ কোটি ৫০ লাখ টাকা কম।
গত বছর এই খাতের জন্য ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। তবে বিতরণ হয়েছিল মাত্র ৬৫ কোটি এক লাখ টাকা। এ ঋণের ৪৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।
বিশেষ ঋণ সুবিধা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা
অগ্রিম জমা ছাড়াই চামড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে বিশেষ ঋণ সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
১৩ জলাই জারিকৃত সার্কুলারে বলা হচ্ছে,আগের বছরের অপরিশোধিত ঋণের ৩ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৩ বছর মেয়াদে পুনঃতফসিল করার সুযোগ পাবে চামড়া ব্যবসায়ীরা। এছাড়া অগ্রিম জমা অর্থাৎ কোনো ধরনের কম্প্রোমাইজড অ্যামাউন্ট ছাড়াই এবার ঋণ নিতে পারবেন। এ সুবিধা চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত পাবেন কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীরা।
নিয়ম অনুযায়ী যারা আগের বছরের ঋণ পুরোপুরি শোধ করে শুধু তারাই এ ঋণ পায়। এছাড়াও ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের বিবেচনায় অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণ দিয়ে থাকে। তবে করোনা মহামারিতে কাঁচামাল সংরক্ষণ ও ন্যায্য মূল্য এ খাতে ঋণ বিতরণে অগ্রাধিকার দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে চামড়া ক্রয়ের সুবিধার্থে বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
কোন ব্যাংক কত ঋণ দিবে
চলতি বছর সরকারি সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও কৃষি ব্যাংক ৫১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ বিতরণে বরাদ্দ রেখেছে। গত বছর ব্যাংকগুলো ৫০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল।
সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রেখেছে রূপালী ব্যাংক ২২৭ কোটি টাকা। এরপর জনতা ব্যাংক ১৪০ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ১২০ কোটি টাকা এবং সোনালী ব্যাংক ২৫ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংক দেবে ২ কোটি ৫ লাখ টাকা।
বেসরকারি ব্যাংকগুলো চামড়া খাতে ৭১ কোটি চার লাখ টাকা ঋণ বিতরণের জন্য বরাদ্দ রেখেছে, যা গত বছর ছিল ১৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
বেশি বরাদ্দ রেখেছে ইসলামী ব্যাংক ৬৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
এছাড়া আল-আরাফাহ ইসলামী ১ কোটি ৯ লাখ, এনসিসি ব্যাংক ৫০ লাখ ও দি সিটি ব্যাংক ২৫ লাখ টাকা ঋণ দেবে।
গত বছর কত বিতরণ হয়
গত বছর অগ্রণী ব্যাংক সবচেয়ে বেশি ১৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। বিপরীতে ব্যাংকটি ঋণ বিতরণ করা হয় ২০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
রূপালী ব্যাংক গত বছর চামড়া খাতে ঋণ দেয়ার জন্য ১৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। বিতরণ করা হয় ১১ কোটি টাকা।
জনতা ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে কোনো ঋণই বিতরণ করেনি।
রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের সবচেয়ে বড় সোনালী ব্যাংক গত বছর ৭১ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ঋণ বিতরণ কর ২০ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
বেসিক ব্যাংক তিন কোটি টাকা বরাদ্দ রাখলেও কোনো ঋণ বিতরণ করেনি। এবারও ব্যাংকটি চামড়া কিনতে কোনো অর্থই বরাদ্দ রাখেনি।
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক গত বছর ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ১২ কোটি ২১ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে।
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক গত বছর ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ঋণ দিয়েছে এক কোটি টাকা।
আর ঢাকা ব্যাংক ৫০ কোটি টাকা, প্রাইম ব্যাংক ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখলে কোনো ঋণ বিতরণ করেনি।
আরও পড়ুন:অনুমোদিত কর প্রতিনিধিগণের (Authorized Representative) মাধ্যমে সম্মানিত করদাতাগণের অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল সহজ ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর কর্মকর্তাগণ এবং আইটি প্রোগ্রামারগণ Tax Representative Management System (TRMS) নামক একটি সফটওয়্যার প্রস্তুত করেছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ TRMS (https://trms.nbr.gov.bd/) সিস্টেমটি আজ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাল্টিপারপাস হলে উদ্বোধন করেন।
একটি আধুনিক, স্বচ্ছ এবং করদাতা-বান্ধব রাজস্ব প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে TRMS একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। করদাতার প্রতিনিধিত্ব প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করার মাধ্যমে TRMS প্ল্যাটফর্মটি কর ব্যবস্থাপনায় অধিকতর দক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।
আয়কর আইনে অনুমোদিত কর প্রতিনিধিগণ যেসকল সম্মানিত করদাতাগণের রিটার্ন দাখিল করার জন্য করদাতা কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত (authorized) তাঁদের সকলের আয়কর রিটার্ন TRMS সফটওয়্যারটিতে নিবন্ধনের মাধ্যমে অনলাইনে দাখিল করতে পারবেন। যেকোন করদাতা কর প্রতিনিধি নিয়োগের জন্য তাঁর নিজ নামে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত মোবাইল ফোনে প্রাপ্ত OTP কর প্রতিনিধিকে প্রদানের মাধ্যমে অনলাইনে তাঁর রিটার্ন দাখিলের জন্য ক্ষমতা প্রদান (authorize) করতে পারবেন।
একজন আয়কর প্রতিনিধি যতজন করদাতার আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিল করবেন তার সবগুলো রিটার্ন সংশ্লিষ্ট কর প্রতিনিধির নামের বিপরিতে TRMS সিস্টেমে সংরক্ষিত থাকবে। কর প্রতিনিধিগন রিটার্নের তথ্যাদি যেকোন সময় সিস্টেম থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।
TRMS এর মূল বৈশিষ্ট্য:
• আয়কর আইন অনুযায়ী অনুমোদিত সকল কর প্রতিনিধিদের (Authorized Representative) ডিজিটাল নিবন্ধন;
• করদাতা কর্তৃক তাঁর কর প্রতিনিধিকে অনলাইন সিস্টেমে ক্ষমতা (authority) অর্পণ;
• প্রত্যেক কর প্রতিনিধি কর্তৃক দাখিলকৃত সকল আয়কর রিটার্নের তথ্য আলাদাভাবে TRMS সিস্টেমে সংরক্ষণ;
• কর প্রতিনিধিগণ কর্তৃক করাদাতাগণের পক্ষে ই-রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ;
• এটি করদাতা এবং কর প্রতিনিধি উভয়ের জন্যই ব্যবহারকারী-বান্ধব সহজ ইন্টারফেস;
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব মো: আবদুর রহমান খান এফসিএমএ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়্যারস এসোসিয়েশনের (BTLA) সভাপতি এডভোকেট রমিজ উদ্দিন আহমেদ, ইন্সটিটিউট অব কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (ICMAB) এর প্রেসিডেন্ট জনাব মাহতাব উদ্দিন এফসিএমএ, ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (ICAB) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব মোঃ রোকনুজ্জামান এফসিএ এবং ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (ICSB) এর প্রেসিডেন্ট জনাব এম নাসিমূল হাই এফসিএস বক্তব্য রাখেন। তাঁরা এরকম জনমূখী উদ্যোগ নেওয়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে সফটওয়্যারটি উদ্বোধন করা হলো তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে এটি একটি মাইলস্টোন। তিনি আশা প্রকাশ করেন TRMS সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে, হোক তা ব্যক্তি; কোম্পানি বা কর্মকর্তা পর্যায়ে।
এনবিআর চেয়ারম্যান, তাঁর টিম মেম্বার এবং যারা কঠিন পরিশ্রম করে এটি তৈরী করেছেন তাদেরকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
সভাপতির বক্তৃতায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো: আবদুর রহমান খান এফসিএমএ সারাদেশ থেকে আগত কর আইনজীবী নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান।
TRMS সিস্টেমটি করদাতা এবং তাদের প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি মসৃণ সেতুবন্ধন তৈরি করবে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করে।
-জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সূচক বাড়ার মধ্য দিয়ে লেনদেন চলছে।
ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
রবিবার লেনদেন শুরুর আধা ঘণ্টা পর অর্থাৎ সকাল সাড়ে ১০টায় ডিএসইর সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৫৩৭ পয়েন্টে অবস্থান করে। ডিএসই শরীয়াহ্ সূচক ৫ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে যথাক্রমে ১২০১ ও ২১৫৬ পয়েন্টে রয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে লেনদেন হয়েছে ১১১ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট।
রবিবার এ সময়ে লেনদেন হওয়া কম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ২০৩টির, কমেছে ৭৪টির এবং অপরির্বতিত রয়েছে ৯৩টি কম্পানির শেয়ার।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০ কম্পানি হলো-খান ব্রাদার্স, শাইনপুকুর সিরামিক, সালাম স্টিল, রবি, ডোমেনেজ, আইপিডিসি, লাভেলো আইসক্রিম, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট, রূপালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ও ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক।
এর আগে আজ লেনদেন শুরুর প্রথম ৫ মিনিটে ডিএসইএক্স সূচক বাড়ে ৮ পয়েন্ট।
সকাল ১০টা ১০ মিনিটে সূচক আগের অবস্থান থেকে আরো ১২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপর সূচকের গতি ঊর্ধ্বমুখী দেখা যায়। লেনদেন শুরুর ২০ মিনিট পর অর্থাৎ সকাল ১০টা ২০ মিনিটে সূচক আগের দিনের চেয়ে ২৮ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৫৫১ পয়েন্টে অবস্থান করে।
অপরদিকে লেনদেন শুরুর আধা ঘণ্টা পর অর্থাৎ সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সিএএসপিআই সূচক ২৭ পয়েন্ট বেড়ে ১৫ হাজার ৫৪৬ পয়েন্টে অবস্থান করে।
এরপর সূচকের গতি ঊর্ধ্বমুখী দেখা যায়।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এসময়ের ২০টি কম্পানির দাম বেড়েছে, কমেছে ৮টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২টি কম্পানি শেয়ারের দর।
নওগাঁ জেলার মহাদেবপুরের মোমিনপুর বাজারে রয়েছে জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি কাঁচা মরিচের হাট। সেই হাটে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। যা দুই দিন আগে দাম ছিল ১৩০-১৫০ টাকা। হঠাৎ করে দাম কমে যাওয়ায় হতাশায় কৃষকরা। তারা বলছেন, এ রকম দাম থাকলে অনেক লোকসান হবে তাদের। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি হওয়ায় হঠাৎ এ অবস্থা।
গত শুক্রবার মহাদেবপুরের মোমিনপুর কাঁচা মরিচের হাটের দৃশ্য এটি। সপ্তাহের প্রতিদিন বসে এখানে কাঁচা মরিচের হাট। বছরে ৬ থেকে ৭ মাস চলে এ হাট। এখানে প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার কাঁচা মরিচ কেনাবেচা হয়ে থাকে। এখানকার মরিচ ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, চট্রগ্রাম, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
মহাদেবপুরের কুঞ্জবন এলাকা থেকে আসা কৃষক সোলেমান আলী ও গুলবর রহমান বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কাঁচা মরিচের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু হাটে দাম কমে যাওয়ায় কৃষকদের উৎপাদন খরচই উঠবে না। মরিচ চাষে খরচ হয়েছে অনেক। এখন পর্যন্ত তারা যে পরিমান বিক্রি করেছেন তা দিয়ে শ্রমিকের মজুরি, কীটনাশক খরচ মিটিয়ে কিছুই থাকবে না। প্রথমে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হয়েছিল ১৩০-১৫০ টাকায় আর এখন তা ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বগুড়া থেকে আসা কাঁচা মরিচের ব্যবসায়ী সুজন মিয়া বলেন, এই হাটের মরিচ ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। তবে ভারত থেকে মরিচ আমদানি হওয়ায় হঠাৎ করে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
মোমনিপুর হাট কমিটির সদস্য মামুনুর রশিদ বলেন, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় কাঁচা মরিচের হাট এটি। বছরে ৬ থেকে ৭ মাস চলে এ হাট। আর প্রতি মাসে কাঁচা মরিচের বেচাকেনা হয় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা। তবে এখন যেভাবে দাম কমে গেছে কৃষকদের লোকসান হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আবহাওয়া ভালো হওয়ায় কাঁচা মরিচের ফলন ভালো হয়েছে। প্রথমে বাজার ভালো দাম ছিল কিন্তু এখন কিছুটা কম হলে কৃষকরা বেশ লাভবান হবেন। তাই আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শসহ সকল ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। চলতি বছর নওগাঁ জেলায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের চাষ হয়েছে।
নির্মাণাধীন মহেশখালী-মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের উন্নত অবকাঠামো ও লজিস্টিক সুবিধা দেশের মৎস্য ও সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানি খাতে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। শিল্পসংশ্লিষ্টরা এ তথ্য জানান।
মহেশখালী-মাতারবাড়ি ইন্টিগ্রেটেড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট উদ্যোগের অংশ সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণে সহায়তা দিচ্ছে জাপান। এটি চট্টগ্রাম বন্দরের জট কমাতে এবং বড় জাহাজ সরাসরি পরিচলানার সুবিধা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মৎস্য খাতে যা সরাসরি প্রভাব ফেলবে। কারণ কোল্ড চেইন রক্ষা করে দ্রুত পরিবহন এই খাতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মহেশখালীর মাছ ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, নতুন বন্দরটি হিমায়িত মাছ ও সামুদ্রিক খাদ্যের মতো দ্রুত পচনশীল পণ্যের পরিবহন সময় ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনবে। ফলে সতেজতার মান বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা বিশ্ব বাজারেও আমাদের পণ্য পৌঁছানো সহজ হবে।
মাতারবাড়ির জেলে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে আমাদের ধরা মাছ খুব কম সময়ের মধ্যে রপ্তানি হবে। এতে আমরা ন্যায্যমূল্য পাব, যা আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তা করবে।
সামুদ্রিক মাছ ধরা ও এর প্রক্রিয়াজাতকরণ বৈশ্বিক বাজারে বহু বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসা হলেও বাংলাদেশে এখনো তেমনভাবে বিকশিত হয়নি।
মহেশখালী-মাতারবাড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (মিডা) প্রতিষ্ঠার ফলে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর সুযোগ আগের চেয়ে বেড়েছে।
বিশ্বের মোট মাছের প্রায় ৭ শতাংশ আসে বঙ্গোপসাগর থেকে। এছাড়া বিশ্বের প্রায় ৪৫ কোটিরও বেশি মানুষ বঙ্গোপসাগরের ‘ব্লু ইকোনমি’ এর ওপর নির্ভরশীল।
বাংলাদেশ ‘ইন্ডিয়ান ওশান টুনা কমিশন’ (আইওটিসির)’ সদস্য। যে কারণে যা ভারত মহাসাগরের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় মাছ ধরার অনুমতি রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ নির্দিষ্ট দুই প্রজাতির টুনা মাছের জন্য কোটা পায়। আর অন্য দুই প্রজাতির টুনা ইচ্ছেমতো ধরতে পারে। তবে প্রতি বছরই কোটা অপূর্ণ থেকে যায়।
এই সমস্যার সমাধান ও গভীর সমুদ্রে মাছ ধরাকে উৎসাহিত করতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ২৮টি লংলাইনার ফিশিং ভেসেল (গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জাহাজ) তৈরি বা আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
মাতারবাড়ি বন্দর চাঁকড়িয়া চিংড়ি শিল্পের মতো বিদ্যমান ও নতুন উদ্যোক্তাদের ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মতো দেশে দ্রুত পণ্য পাঠাতে সহায়তা করবে।
মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর রপ্তানি প্রক্রিয়ার সময় ও ব্যয় কমাবে। ফিলে, স্মোকড মাছ, রেডি-টু-ইট সামুদ্রিক খাদ্য ইত্যাদির মতো মান সংযোজিত পণ্যের রপ্তানির পথ প্রশস্ত করবে।
উদাহরণস্বরূপ, স্ক্যালপ (এক প্রজাতির শামুক) প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানি থেকে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি মিডার শক্তিশালী লজিস্টিক সুবিধা দেশে নতুন বিনিয়োগের ঢেউ আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি প্রতিষ্ঠানটির ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেছে। গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ও কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি’র চেয়ারম্যান জনাব বাহারুল আলম বিপিএম। বক্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক ও কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি’র চেয়ারম্যান জনাব বাহারুল আলম, বিপিএম বলেন: “প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি মানুষের ব্যাংক হিসেবে সেবা দিয়ে আসছে। ট্রাস্ট, সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রোগ্রেস -এই মূলনীতির আলোকে আমরা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, সম্মানিত গ্রাহকবৃন্দ, বিশিষ্ট অতিথিবর্গ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর ব্যাংকের সাম্প্রতিক উদ্ভাবন ও অর্জন তুলে ধরে একাধিক অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন, মোশন গ্রাফিক্স ও বিশেষ প্রদর্শনী উপস্থাপিত হয়।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) জনাব কিমিয়া সাআদত তাঁর মূল বক্তব্যে ব্যাংকের ভিশন, মিশন ও ভবিষ্যৎ রোডম্যাপ তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, কমিউনিটি ব্যাংক দেশের এসএমই ও স্টার্টআপ খাতের বিকাশে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ব্যাংক সম্প্রতি চালু করেছে “এসএমই ৩৬০”, একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবসায়িক সমাধান, এবং প্রতিষ্ঠা করেছে দেশের প্রথম ব্যাংক-নেতৃত্বাধীন স্টার্টআপ অ্যাক্সিলারেটর “স্টার্টআপ নেস্ট”। এছাড়াও স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহায়তায় ব্যাংক চালু করেছে এআই-চালিত স্মল ক্রেডিট স্কোরিং মডেল এবং গ্রাহক সেবায় নতুন সুবিধা হিসেবে কিউআর-ভিত্তিক নগদ উত্তোলন ও কমিউনিটি অ্যাক্সেস নামের ওয়েব-ভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পরিচালনা পর্ষদের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, যার মধ্যে ছিলেন: জনাব এস. এম. সাজ্জাত আলী, এনডিসি, কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ; জনাব এ কে এম শহিদুর রহমান, বিপিএম, পিপিএম, এনডিসি, মহাপরিচালক, র্যাব; জনাব মো. গোলাম রসুল, অ্যাডিশনাল আইজি, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, বাংলাদেশ পুলিশ; জনাব কাজী মো. ফজলুল করিম, বিপিএম (সেবা), ডিআইজি (অ্যাডমিন), পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, বাংলাদেশ পুলিশ; জনাব আহম্মদ মুঈদ, বিপিএম (সেবা), অ্যাডিশনাল ডিআইজি, বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ পুলিশ এবং জনাব কামরুল হাসান তালুকদার, ইন্সপেক্টর, বাংলাদেশ পুলিশ ও সভাপতি, বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে নারী উদ্যোক্তা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাঝে বিশেষ রিফাইন্যান্সিং চেক বিতরণ করা হয়। এছাড়া প্রিয়শপ এবং ইনজেনি সিঙ্গাপুর -এর সহযোগিতায় তৈরি এআই-চালিত ক্রেডিট স্কোরিং মডেলের আওতায় প্রথম চেকটি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই এবং স্পেশাল প্রোগ্রাম বিভাগের পরিচালক জনাব নওশাদ মোস্তফা।
অনুষ্ঠানের শেষাংশে কেক কাটা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করা হয়। জাঁকজমকপূর্ণ গালা ডিনার ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ৬ বছরের প্রবৃদ্ধি, উদ্ভাবন এবং সেবার উৎকর্ষতা উদযাপন শেষ হয়।
বিদায়ী সপ্তাহে (৭ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর) সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন শেষ হয়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসই ও সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন কমেছে।
গত সপ্তাহে ৫ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ডিএসইতে ৫ হাজার ৭৪৮ কোটি ৩১ লাখ এবং সিএস্টতে ৯২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। শনিবার ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ডিএসইর বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫২৩ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৩১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯৩৯ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩৩ পয়েন্ট বা ২.৭৪ শতাংশ কমে ১ হাজার ১৯৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৭৪৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৬ হাজার ৪৯১ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৭৪৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১০২টির, দর কমেছে ২৫০টির ও দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টি কোম্পানির। গত সপ্তাহে লেনদেন হয়নি ১৬টি কোম্পানির।
এদিকে অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৮৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৫১৯ পয়েন্টে।
বিদায়ী সপ্তাহের সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৯২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১০০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা সুস্বাদু ও বৃহৎ আকৃতির পানের জন্য প্রসিদ্ধ। কিন্তু পানের দাম কম হওয়ায় পানচাষিদের বেহাল দশা পরিলক্ষিত হচ্ছে। দাম অত্যন্ত কম ও খরচ অত্যাধিক বেশি হওয়ায় দিন দিন পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক। ভেঙে ফেলছেন পানের বরজ।
জানা যায়, ভেড়ামারা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে প্রায় ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। যেখানে প্রতি বছরে ৭ হাজার মেট্রিক টন পান উৎপাদন হয়। তা ছাড়াও ব্রিটিশ আমল থেকে এই অঞ্চল পান চাষের জন্য প্রসিদ্ধ।
সরেজমিনে গিয়েও উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন জুনিয়াদহ, ধরমপুর ও বাহাদুরপুরের প্রান্তিক পানচাষিদের দুর্ভোগের চিত্র ফুটে ওঠে। প্রতি বিঘা নতুন পান বরজে খরচ হয় ৩-৪ লাখ টাকা। যেখানে পান বিক্রি করে আসছে ১ লাখেরও কম। পান বরজের সরঞ্জামের দামও পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি। পূর্বে যে শ্রমিকের দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, বর্তমানে তা হয়েছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। সে কারণে অনেকেই পান ররজ মেরামত করছেন না। তা ছাড়া দাম কম হওয়ায় অনেকেই বরজের পান ভাঙছেন না। ঋণের দায়ে জর্জরিত কেউ কেউ বরজ ভেঙে অন্য চাষাবাদের চেষ্টা করছেন। পান বরজের ওপর ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকে হয়েছেন ভিটে ছাড়া।
পান হাট জগশ্বরে দেখা যায়, ৫০-২০০ টাকা বিড়ার পান বিক্রি হচ্ছে ৫-৩০ টাকায়। খুব ভালো মানের পান বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা বিড়া।
পান বিক্রি করতে আসা পান চাষি মো. রফিক জানান, প্রতি বিড়া পান ৭ টাকায় বিক্রি করলাম। যা গত বছর ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি করেছি। যাতে করে পান ভাঙা আর যাতায়াত খরচই উঠল না। এই ব্যবসা আর করা হবে না। পানচাষি তুষার জানান, আমার জীবনে পানের দাম এত কম দেখিনি। আমার ৯০ পিলি পান বরজ ছিল কিন্তু দাম না পেয়ে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বাহাদুরপুরের পানচাষি ৭০ বছর বয়ষি বৃদ্ধা জমেলা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘৪০ বছরের পুরোনো পান বরজ আমার। না পারছি ভাঙতে, না পারছি রাখতে। পান বাজারে নিলে খরচের টাকাও ফিরে পাচ্ছি না।’
জগশ্বর পানহাটের সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন জানান, উৎপাদন বেশি ও রপ্তানি না থাকায় এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় পানের দাম অনেক কম। কিন্তু শ্রমিক ও পান বরজের সরঞ্জামের দাম পূর্বের থেকে ২-৩ গুণ বেশি। সরকারি কোনো প্রণোদনা না থাকায় প্রান্তিক পানচাষিদের মধ্যে হাহাকার লক্ষ্য করছি। ঋণের ভারে জর্জরিত চাষিরা এই আবাদ ছেড়ে দিচ্ছেন। অর্থকরী এই খাতটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সাহায্য চাই।
ভেড়ামারা উপজেলার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আশফাকুর রহমান দৈনিক বাংলাকে জানান, দাম কম হওয়ায় পানচাষিদের বেহাল দশার বিষয়টি আমরা শুনেছি।
মন্তব্য