ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য চলছে মাটির পেভমেন্টের কাজ। জেটি নির্মাণের কাজও করছেন শ্রমিকরা। শেড নির্মাণও চলছে পুরোদমে। এর মধ্যে ইয়ার্ডের ওপর দিয়ে যান চলাচলের জন্য নির্মিত ওভারপাসটিও চালু হয়ে গেছে।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর তীরে ২৬ একর জায়গাজুড়ে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। সেখানে তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নতুন প্রকল্প পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)।
প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে জেটি নির্মাণ শেষ পর্যায়ে। ডিসেম্বরে পিসিটিতে জাহাজ ভেড়ানোর উপযোগী করতে পুরোদমে চলছে কাজ। কারণ, ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও চলতি বছরের ডিসেম্বরেই পিসিটিতে জাহাজ ভেড়াতে চায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘আমরা ডিসেম্বরে জাহাজ ভেড়াতে চাই। এ জন্য তার আগে জেটি ও ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শেষ করব। তাই দিনরাত কাজ চলছে।’
প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পিসিটি প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সরকার বলেন, ‘প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ। বাকি কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার টার্গেট রয়েছে। আশা করি, ওই সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারব।’
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে অপারেটর নিয়োগের মাধ্যমে পিসিটি অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে সরকার। তাই টেন্ডারের মাধ্যমে অপারেশনের দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানই টার্মিনাল চালানোর ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘টার্মিনাল প্রস্তুত হয়ে গেলে আমরা পিপিপি কর্তৃপক্ষের জন্য বসে থাকব না। টার্মিনাল পরিচালনা শুরু করে দেব। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ইকুইপমেন্ট দিয়ে সেটি পরিচালনা করবে। পরে অপারেটর নিয়োগ হলে তারা টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব নেবে।’
একই কথা জানালেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান।
তিনি বলেন, ‘টার্মিনাল চালানোর জন্য আমাদের কাছে রিচ স্টেকার, স্ট্যাডল ক্যারিয়ারসহ বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট রয়েছে। যেগুলো আমরা অতিরিক্ত হিসেবে বন্দরে রেখেছি। এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে আমরা টার্মিনাল চালু করে দেব। পরে পিপিপির আওতায় পরিচালনাকারী সংস্থা নিয়োগ দেয়া হলে ওই সংস্থা কাজ করবে।’
এ বিষয়ে পিপিপির মহাব্যবস্থাপক আবুল বাশার বলেন, ‘পিসিটি পিপিপির আওতায় হবে। আমরা লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, “প্রকল্পটির জন্য আন্তর্জাতিক মানের বেসরকারি অপারেটর নিয়োগের উদ্দেশ্যে ‘ইকুইপ, অপারেট অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স অফ পিসিটি অন পিপিপি মডেল’ শীর্ষক প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে এর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
“টার্মিনাল অপারেশন পরিচালনা ও বিনিয়োগ প্রস্তাবে এখন পর্যন্ত যেসব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ভারতের আদানি পোর্ট অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড ও সিঙ্গাপুরের পিএসএ। এটি আমরা কাজ করছি।”
তিনি জানান, পণ্যের ওঠানো-নামানোর সক্ষমতা বাড়াতে চায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা হবে বছরে ৪ লাখ ৫০ হাজার একক। চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটি থেকে ভাটির দিকে ড্রাই ডক এবং বোট ক্লাবের মধ্যবর্তী প্রায় ২৬ একর জায়গায় কর্ণফুলী নদীর তীরে নির্মাণ করা হচ্ছে এ কনটেইনার টার্মিনাল।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১৩ জুন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থে বাস্তবায়নাধীন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল শীর্ষক প্রকল্পটি ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অনুমোদিত হয়।
ওই সময় এর বাস্তবায়নে সময়সীমা নির্ধারিত ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষ থেকে প্রাক্কলিত ব্যয় ১ হাজার ৩৯৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করে আরডিপিপি পাঠানো হয়।
প্রাক্-সমীক্ষা অনুযায়ী টার্মিনালটির বার্ষিক পরিচালনা ব্যয় ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। টার্মিনালটি পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে গেলে একসঙ্গে তিনটি জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সুবিধা থাকবে। এ ছাড়া তেলবাহী জাহাজ ভেড়ানোর সুবিধাও থাকবে। সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের অংশের দৈর্ঘ্য) এবং ১৯০ মিটার জাহাজ ভেড়ানো যাবে এই টার্মিনালে। পিসিটি নির্মাণ বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী। শতভাগ কাজ শেষে তারা চট্টগ্রাম বন্দরকে টার্মিনালটি বুঝিয়ে দেবে।
দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশেরও বেশি চট্টগ্রাম বন্দরের আওতায় হয়। যদিও এ বন্দরে বর্তমানে জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি), চট্টগ্রাম কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নামের তিনটি টার্মিনালে মোট ১৯টি জেটি রয়েছে। পাশাপাশি তেল খালাসের জন্য রয়েছে চারটি ডলফিন জেটি।
চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিগুলোর পাশে ইয়ার্ড এলাকার মোট পরিমাণ ৮ লাখ বর্গমিটার। এ বন্দরের মাধ্যমে বর্তমানে বছরে ৩০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে। প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০৩১ সালে ৫৮ লাখ ১৯ হাজার একক ও ২০৪৩ সালে ৭৫ লাখ ৯৭ হাজার একক কনটেইনার হ্যান্ডলিং সামাল দিতে হবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে।
আরও পড়ুন:অবশেষে বহু প্রতীক্ষিত ঐতিহাসিক ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ আজ সই হবে।
সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান উপদেষ্টা এবং চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সনদ সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। এটি আজ শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা একটি জরুরি সভা আহ্বান করেছেন। সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ সারা দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। ৪০ পৃষ্ঠার এই সনদে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে, যেখানে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল, ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বাসস
এই সনদে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭৫ সালে সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
সনদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাবলির পর ১৯৭৮ সালে বহুদলীয় ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে শুরু হওয়া ১৯৭৯ সালের সংসদীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ গণতন্ত্রে ফিরে আসে। তবে, সেই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা স্বল্পস্থায়ী ছিল।’
সনদে আরো তুলে ধরা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্দিষ্ট ব্যক্তি, পরিবার এবং গোষ্ঠীর পক্ষে স্বৈরাচারী অনুশীলনের আধিপত্য ছিল।
এই সনদে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের টানা তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এগুলো নির্বাচন ব্যবস্থাকে দুর্বল করেছে, বিচার বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণ করেছে এবং দুর্নীতিকে সহজতর করেছে।
এই সনদে গত ১৬ বছরের ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতিফলনও দেখা গেছে। যার মধ্যে রয়েছে ২০১৮ সালের সড়ক নিরাপত্তা আন্দোলন, কোটা বিরোধী আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার নেতৃত্বাধীন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানে পরিণতি লাভ করে।
অবশেষে, এই সনদে একটি সাত দফা প্রতিশ্রুতি রয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের এটিতে সই করার এবং গণতান্ত্রিক নীতি এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের বিদ্রোহে প্রকাশিত জনগণের ইচ্ছাকে সমুন্নত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ঢাকা-৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ও তার স্ত্রী রেহেনা চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলাগুলো দায়ের করা হয়। সংস্থাটির উপপরিচালক মো. সাইদুজ্জামান বাদী হয়ে মামলাগুলো দায়ের করেন।
দুদক জানায়, আসামি সাবের হোসেন চৌধুরী ১৯৮৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ে বৈধ আয়ের বাইরে ১২ কোটি ২৫ লাখ ৪৮ হাজার ১৬৯ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। একই সঙ্গে তিনি নিজের নামে ২১টি ব্যাংক হিসাবে মোট ১২৪ কোটি ৬১ লাখ ৫৪ হাজার ২৫২ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।
তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা, এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারার অধীনে মামলা করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে দুদক জানিয়েছে।
এছাড়া, তার স্ত্রী রেহানা হোসেনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে ২৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকার বেশি সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনেছে দুদক। তিনি ১৯৯৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ে ৩টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন বলে দুদক জানিয়েছে। এই মামলায় সাবের হোসেন চৌধুরীকেও সহযোগী আসামি করা হয়েছে।
ঢাকা-৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবের আওয়ামী লীগ সরকারের সবশেষ মন্ত্রিসভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। এর আগে ১৯৯৯ সালে তিনি প্রথমে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন। পরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। সাবের হোসেন ২০২৩ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ পান। একাদশ সংসদে তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন।
সরকার পতনের পর গত অক্টোবরে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে পাঠানোর পরদিনই ছয় মামলায় জামিন পেয়ে এক ঘণ্টার মধ্যেই মুক্তি পান সাবের হোসেন চৌধুরীর।
যাত্রীদের চলাচলের সুবিধায় আগামী রোববার থেকে রাজধানীর মতিঝিল এবং উত্তরা-উত্তর প্রান্ত থেকে মেট্রোরেল চলাচলের সময় বাড়ানো হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) মো. নাসির উদ্দিন তরফদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিএমটিসিএল-এর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্রমাগতভাবে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে এবং সম্মানিত যাত্রীসাধারণের সুবিধার্থে আগামী রোববার হতে উত্তরা উত্তর মেট্রো রেল স্টেশন ও মতিঝিল মেট্রো রেল স্টেশন উভয় প্রান্ত থেকে এক ঘণ্টা বর্ধিত সময়ে মেট্রো ট্রেন চলাচল করবে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উত্তরা-উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশন অভিমুখে প্রথম মেট্রোরেল ছেড়ে যাবে ৬টা ৩০ মিনিটে। যা আগে ছেড়ে যেত সকাল ৭টা ১০ মিনিটে। এখন উত্তরা-উত্তর স্টেশন থেকে সবশেষ মেট্রো রেল ছেড়ে আসে রাত ৯টায়। নতুন সূচিতে ছাড়বে রাত সাড়ে ৯টায়।
এছাড়া মতিঝিল থেকে উত্তরা-উত্তর অভিমুখে দিনের প্রথম মেট্রো রেল ছেড়ে যায় সকাল সাড়ে ৭টায়।
নতুন সময়সূচি অনুযায়ী উত্তরা অভিমুখে মেট্রো রেল চলবে সকাল সোয়া ৭টা থেকে। মতিঝিল থেকে উত্তরা অভিমুখে সর্বশেষ মেট্রোরেল ছেড়ে যেত রাত সাড়ে ৯টায়। এখন রাত ১০টা ১০ মিনিটে তা ছেড়ে যাবে।
এদিকে শুক্রবারে মেট্রো রেল চলাচলের সময়সূচি অপরিবর্তিত রয়েছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল অভিমুখে প্রথম ট্রেন ছাড়ে বিকেল ৩টায়। সবশেষ ট্রেন ছাড়ে রাত ৯টায়। মতিঝিল থেকে উত্তরা অভিমুখে প্রথম ট্রেন ছাড়ে বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে। সবশেষ ট্রেন ছাড়ে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে।
মা-ইলিশ রক্ষায় সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদীতে যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করে ২৫ লাখ বর্গমিটার অবৈধ নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও ১১ জেলেকে আটক এবং ৫ কেজি মা-ইলিশ জব্দ করেছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার সকালে পদ্মা নদীর কলাবাগান ও অন্তার মোড় এলাকায় নৌপুলিশ ফরিদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে উপজেলা মৎস্য বিভাগ, দৌলতদিয়া নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ডের যৌথ অভিযানে
২৫ লাখ বর্গমিটার কারেন্ট জাল, ১১ জন জেলে আটক ও ৫ কেজি মা-ইলিশ জব্দ করা হয়। পরে আটককৃত ১১ জন জেলেকে মৎস্য সুরক্ষা আইন ১৯৫০ খ্রি. সালের ৫ (২) (খ) ধারা মতে মিয়মিত মামলায় জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং কারেন্ট জালগুলো আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস ও মাছগুলো এতিমখানা ও স্থানীয় অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা হয়।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নৌপুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের নির্দেশনা মতে গত ৪ অক্টোবর থেকে অভিযান শুরু হয়েছে আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে, মা-ইলিশ প্রজনন এই মৌসুমে সচেতনামূলক প্রোগ্রাম করা হয়েছে, যেন কোনো জেলেরা নদীতে মা-ইলিশ না ধরে, যেন মা-ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়তে পারে, আমাদের নৌপুলিশের অভিযান নদীতে অব্যাহত রয়েছে। এখানে জেলা মৎস্য অফিসের সাথে আমাদের নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ড, ম্যাজিস্ট্রেট যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ি থেকে চারটি মামলা রুজু হয়েছে, মোবাইল কোর্ট করা হয়েছে, ৬০ জনের মতো আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে, ২ কোটি ১০ লাখ বর্গমিটারের উপরে অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে, ২৬০ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করে গরিব ও এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে। শেষ সময় পর্যন্ত আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অভিযানে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম পাইলট, দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ত্রিনাথ সাহা, এসআই মেহেদী হাসান অপূর্বসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও ফসল রক্ষায় বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা গ্রামের বিবিসি ইটভাটা বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে আঁকবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসাসংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিবিসি (বিসমিল্লাহ ব্রিকস) ইটভাটার কারণে এলাকার অন্তত পাঁচশত একর তিন ফসলি জমি, গাছপালা, জীববৈচিত্র্য, প্রাণিসম্পদ ও গ্রামীণ সড়ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৭ সালে আব্দুল হান্নান মৃধা ফসলি জমির ওপর বিবিসি ইটভাটি স্থাপন করেন। কৃষকরা অভিযোগ করেন, ইটভাটা নির্মাণের পর থেকে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে গেছে, ফলে আগের মতো ফসল উৎপাদন হচ্ছে না। ওই ইটভাটার ৩০০ গজের মধ্যে রায়বালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এতিমখানা ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে। আইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা, কৃষি জমি বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু আইন লঙ্ঘন করে সেখানে ইটভাটা চালু রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় জাহাঙ্গির আলমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নাশির উদ্দিন, কবির গাজী, শাহীন প্যাদা ও খোকন হাওলাদার প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ইটভাটার কারণে জমিতে আগের মতো ফলন হচ্ছে না, গাছে ফল ধরছে না এবং শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। তারা বরগুনা জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছে দ্রুত ইটভাটা বন্ধের দাবি জানান। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, তিন দিক ঘেরা ধান খেতের মধ্যে বিবিসি ইটভাটার কার্যক্রম চালু রয়েছে।
রায়বালা গ্রামের কৃষক কবির গাজী বলেন, ‘ইটভাটার কারণে আমাদের ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আগের মতো ফসল ফলছে না। পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ফরিদপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশের আয়োজনে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেছেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে যিনি ধানের শীষ প্রতীক পাবেন, ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা তাকেই জিতিয়ে নেওয়ার জন্য জানপ্রাণ দিয়ে কাজ করব। এই নির্বাচনে ফরিদপুর সদর আসনে এবার ধানের শীষ প্রতীক হেরে গেলে আমরা শুধু হারবই না, চিরতরে হারিয়ে যাব। তাই আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই ধানের শীষকে সর্বশক্তি দিয়ে বিজয়ী করে আনতে হবে।
গত বুধবার রাতে শহরের হাবেলি গোপালপুরে আফজাল হোসেন খান পলাশের বাসভবন প্রাঙ্গণে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত ও সংস্কারের ৩১ দফা বাস্তবায়ন ও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় রাজপথের অকুতোভয় দুঃসাহসী নেতা হিসেবে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশকে জেলা বিএনপির পরবর্তী সভাপতি দেখতে চান বলেও নেতা-কর্মীরা জোরালো বক্তব্য দেন। তারা বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচিতে আফজাল হোসেন খান পলাশের দৃঢ় ভূমিকা রেখেছেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশ বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের করণীয় কী হবে, আমরা কী করব সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এই সভার আয়োজন। যারা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এখানে এসেছেন, সকলের প্রতিই কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, গত ১৭ বছর ফরিদপুরের রাজপথে কোনো আন্দোলন হয়েছে আর আমি আফজাল হোসেন খান পলাশ ছিলাম না তা কখনোই হয়নি। আমার বিরুদ্ধে ২৫টি মামলা দিয়েছে। তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় জাতীয় পর্যায়ে মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়ন চলছিল, তেমনি ফরিদপুরেও একটা চক্রান্ত হয়েছিল। ঐক্যবদ্ধভাবে সকল চক্রান্ত প্রতিহত করে বিএনপির ধানের শীষকে বিজয়ী করব।
ফরিদপুর জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি শামীম হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে ফরিদপুর মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবি সিদ্দিকী মিতুল, যুগ্ম আহ্বায়ক সামসুল আরেফিন সাগর, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এমএ সালাম লাল, ফরিদপুর সুগার মিলের সাবেক চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান, জেলা যুবদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুদ্দীন বিশ্বাস, জেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সাত্তার জোয়ার্দার, জেলা যুবদলের সহসভাপতি কেএম জাফর, মোহসিনুল কবির রুবেল, টিটু খাঁন, শ্যামসুন্দরপুর নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মুতাওয়াল্লী আলহাজ ফরিদ শেখ, বিএনপির প্রবীণ নেতা আলমগীর মাস্টার, মো. রেজাউল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার খান, শাহীন হক, যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর কবির, আলতাফ হোসেন, হাফিজুর রহমান রাজা, জিন্না মেম্বার, হায়দার হোসেনসহ অনুষ্ঠানে ৪৫ জন বক্তা বক্তব্য রাখেন।
রংপুরে শতকরা ২৭ ভাগ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। এছাড়া প্রতি বছর বাংলাদেশে ৫ থেকে ৮ হাজার নতুন থ্যালাসেমিয়া রোগী শনাক্ত হচ্ছে। বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষাসহ থ্যালাসেমিয়ার জিন বহন করে এমন নারী-পুরুষদের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করা গেলে এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধ যোগ্য। বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ মিলনায়তনে ‘থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা ও বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প’ উপলক্ষে বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এ তথ্য দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি ও হাসপাতালের উদ্যোগে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক ডা. একরামুল হোসেন স্বপন। তথ্য-চিত্র উপস্থাপন করে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি ও বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ খান এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাফরুহা আক্তার। রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, রংপুর গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল আলম আল আমিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, রংপুর গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন সরকার।
সেমিনারে চিকিৎসকরা জানান, থ্যালাসেমিয়ার বাহক আর থ্যালাসেমিয়ার রোগী এক নয়। বাহকের তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না, তেমন কোনো চিকিৎসাও লাগে না। তবে একজন বাহক পরবর্তী প্রজন্মে রোগ বহন করতে সক্ষম। থ্যালাসেমিয়া রোগের বিস্তার বিষয়ে সবাই সচেতন হলে এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। থ্যালাসেমিয়া রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় বেশির ভাগ পরিবার এর চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। তাই এ রোগ প্রতিরোধে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা।
মন্তব্য