বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য বলতেই সবার আগে চলে আসে তৈরি পোশাক শিল্প। কখনো কখনো পাট, হিমায়িত চিংড়ি, চামড়া রপ্তানি নিয়েও আলোচনা হয়। সরকারের কাছ থেকে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেতে দেন-দরবারও করেন এসব খাতের উদ্যোক্তারা।
কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির মহাসংকটের সময় ১০ হাজার কোটি টাকার বিদেশি মুদ্রা এনেছে যে খাত, সেটি থেকে গেছে অগোচরে। সেই খাতটি হচ্ছে হোম টেক্সটাইল। বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির তালিকায় তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে খাতটি।
করোনাকালে চীন ও ভারতের বাজার বাংলাদেশে চলে আসায় এই ‘নীরব বিপ্লব’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ হোম টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন-অর-রশিদ।
পোশাক খাতের মতো সরকারের সুনজর পেলে এই খাত থেকে বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে আশার কথা শুনিয়েছেন তিনি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তা ঘেঁটে দেখা যায়, হোম টেক্সটাইল রপ্তানি করে এই অর্থবছরে ১১৩ কোটি ২০ লাখ ৩০ হাজার (১.১৩ বিলিলয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা আগের বছরের চেয়ে ৪৯ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি। এর আগে কখনোই এ খাতের রপ্তানিতে এত বেশি প্রবৃদ্ধি হয়নি।
বর্তমান বাজারদরে টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা) এই অর্থের পরিমাণ ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, বিদায়ি অর্থবছরে ১১৬ কোটি ১৫ লাখ ডলার রপ্তানি আয় করে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাট ও পাটজাত পণ্য। বরাবরের মতোই ৩১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে প্রথম স্থানে রয়েছে তৈরি পোশাক খাত।
এতদিন পাট, চামড়া ও হিমায়িত মাছ রপ্তানি দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকত। এবার হোম টেক্সটাইল পাট খাতের প্রায় সমান ডলার দেশে এনে তৃতীয় স্থান দখল করেছে।
করোনায় কম-বেশি প্রায় সব খাতের অবস্থা নাজুক। রপ্তানি ছাড়াও স্থানীয় বাজারে চাহিদা কমেছে। এর মধ্যে ব্যতিক্রম হোম টেক্সটাইল। অনেকটা অগোচরে থেকে দেখাচ্ছে আশার আলো।
বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বছরে ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের বেশি আয়ের আরেকটি খাত যোগ হলো।
দীর্ঘদিন শীর্ষ ১০ রপ্তানি খাতের তালিকায় আছে এ খাত। বিশ্বজুড়ে করোনার কারণে বাণিজ্য প্রায় নাস্তানাবুদ। এমন পরিস্থিতিতেও হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ।
রপ্তানি তালিকার সব পণ্যের মধ্যে এ হার সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি দেশের চাহিদার প্রায় পুরোটা জোগান দিচ্ছে এ খাত।
উদ্যোক্তারা বলছেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদার শতভাগ স্থানীয়ভাবে জোগান দেওয়া সম্ভব। তারা সরকারের নীতি-সমর্থনের অভাব এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ট্রেন্ড বা ফ্যাশনপ্রবাহ না বোঝা কিংবা কম বোঝাকে দায়ী করছেন।
এসব সমস্যার সমাধানে সরকারের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের আরও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। বাজার গবেষণা বাড়ানোর কথাও বলেছেন তারা।
দেশে হোম টেক্সটাইল উৎপাদন করে এ রকম উল্লেখযোগ্য বড় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে অ্যাপেক্স উইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস, নোমান গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিকস, সাদ গ্রুপ, অলটেক্স, এসিএস টেক্সটাইল, জে কে গ্রুপ, ক্লাসিক্যাল হোম, ইউনিলাইন ইত্যাদি।
হোম টেক্সটাইল আসলে কী
হোম টেক্সটাইল বলতে বোঝায় ঘরের অন্দরের শোভাবর্ধক হিসেবে ব্যবহার করা বস্ত্রপণ্য। এ কারণে এ ধরনের পণ্যকে হোমটেক্স বা ঘরোয়া টেক্সটাইলও বলা হয়ে থাকে।
বিছানার চাদর, বালিশ, বালিশের কাভার, টেবিল ক্লথ, পর্দা, ফ্লোর ম্যাট, কার্পেট, জিকজাক গালিচা, ফার্নিচারে ব্যবহার করা ফ্যাব্রিকস, তোশক, পাপস, খাবার টেবিলের রানার, কৃত্রিম ফুল, নকশিকাঁথা, খেলনা, কম্বলের বিকল্প কমফোর্টার, বাথরুম টাওয়েল, রান্নাঘর ও গৃহসজ্জায় ব্যবহার হয় এমন সব ধরনের পণ্য এ খাতের আওতাভুক্ত।
এ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল তুলা, পাট, শন, রেশম, ভেড়া-ছাগলের পশম, অন্যান্য পশম। এ ছাড়া সম্প্রতি কৃত্রিম তন্তুর ব্যবহারেরও হোম টেক্সটাইল উৎপাদন হচ্ছে দেশে।
চীন ও ভারতের বাজার যেভাবে দখল করছে বাংলাদেশ
তৈরি পোশাকের মতো হোম টেক্সটাইলেরও প্রধান গন্তব্য ইউরোপ-আমেরিকা। রপ্তানিকারকরা বলছেন, এই দুই বাজারে এতদিন একচেটিয়া ব্যবসা করত ইসরায়েল, চীন ও ভারত।
ইসরায়েল মূলত খুব দামি পণ্য রপ্তানি করে। চীন ও ভারত দামি-মাঝারি দুই ধরনের পণ্যই রপ্তানি করে। আর বাংলাদেশ করে মাঝারি ও কম দামি পণ্য রপ্তানি।
অ্যাপেক্স উইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোম টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন-অর-রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চীন ও ভারতের কম ও মাঝারি দামি পণ্যের বাজারের কিছু অংশই আসলে আমাদের এখানে এসেছে। সে কারণে হঠাৎ করে রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
‘ইউরোপ-আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় ওই সব দেশে বিছানার চাদর, বালিশ, বালিশের কাভার, টেবিল ক্লথ, পর্দাসহ অন্যান্য পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে। তারা তো এসব পণ্য একবারের বেশি ব্যবহার করে না। সে কারণেই একটু ভালো হয়েছে আমাদের জন্য।
‘করোনার পর চীন আর এখন মাঝারি দামের পণ্য তৈরি করছে না। দীর্ঘদিন লকডাউনের কারণে ভারতেও উৎপাদন বন্ধ ছিল। সেই বাজারটাই আমরা এখন পাচ্ছি।’
বাংলাদেশের পণ্য ও অন্য দেশের পণ্যের দামের পার্থক্য কেমন জানতে চাইলে হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘ধরেন, ইসরায়েল একটি ৪০০ ডলারের বিছানার চাদর রপ্তানি করে; চীন-ভারত করে ১০০-১২৫ ডলারের। আর আমরা করি ২৫-৩০ ডলারের।’
তিনি বলেন, হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয় বছরজুড়ে। এ ছাড়া করোনাকালে গৃহবন্দি মানুষ হোম টেক্সটাইলের পণ্য তুলনামূলক বেশি ব্যবহার করেছেন। এতে চাহিদা বেড়েছে।
বাড়ছে অভ্যন্তরীণ বাজারও
রপ্তানি বাজারের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারও বাড়ছে। বিশেষ করে আবাসন ব্যবসার উন্নয়নের সঙ্গে হোম টেক্সটাইল খাতেও নতুন করে চাহিদা তৈরি হয়েছে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। একটি ফ্ল্যাটে দরজা-জানালার পর্দা, একাধিক বিছানার চাদর, কিচেন আইটেম, ডাইনিং আইটেমসহ বিভিন্ন রকমের হোম টেক্সটাইল পণ্যের চাহিদা তৈরি হয়েছে। এতে হোম টেক্সটাইলের অভ্যন্তরীণ বাজার অনেক বড় আকার নিয়েছে।
হোম টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, এ বাজার আনুমানিক ১৫ হাজার কোটি টাকার। দেশের ২৪-২৫টি প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য উৎপাদন করে থাকে।
প্রধান বাজার বড় ব্র্যান্ড
বৈশ্বিক হোম টেক্সটাইলের প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকা। মোটের ৬০ শতাংশ ব্যবহার হয় দুই মহাদেশের দেশগুলোতে।
বাংলাদেশের হোম টেক্সটাইলের ৮০ শতাংশ যায় এ দুই বাজারে। বিশ্বখ্যাত ক্যারফোর, ওয়ালমার্ট, আইকিয়া, আলদি, এইচঅ্যান্ডএম, মরিস ফিলিপস, হ্যামার মতো বড় ব্র্যান্ড এখন বাংলাদেশের হোম টেক্সের বড় ক্রেতা। অন্যান্য খুচরা ক্রেতার সংখ্যাও কম নয় বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা।
রপ্তানি খাতের অন্যান্য পণ্যের মতো যুক্তরাষ্ট্র বাদে সব বাজারে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পাচ্ছে হোম টেক্সটাইল।
বাজার গবেষণা ও অ্যাডভাইজরি ফার্ম মরডর ইন্টেলিজেন্সের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি মুনাফা হয় হোম টেক্সটাইল ব্যবসায়। মোট বিশ্ববাজার এখন ১৩১ বিলিয়ন ডলারের। আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ এর পরিমাণ ১৮০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানের এ প্রতিবেদনে।
প্রধান সমস্যা তুলা
হোম টেক্সটাইল খাতের বড় সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রধান কাঁচামাল তুলার সংকট এখনও বড় প্রতিবন্ধকতা। দেশে তুলা উৎপাদন বলতে গেলে হয় না। প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। বেশির ভাগই ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। এ ছাড়া ডাইং কেমিক্যালসহ অন্যান্য রাসায়নিক কাঁচামালের পুরোটা আমদানিনির্ভর।
‘এতে সময় ও ব্যয় দুটোই বাড়ছে। অথচ প্রতিযোগী প্রায় সব দেশের নিজস্ব তুলা আছে। তারপরও আমরা একেবারেই নিজেদের উদ্যোগে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে অবদান রেখে চলেছি’, বলেন হারুন-অর-রশিদ।
সবাই ব্যস্ত পোশাক খাত নিয়ে
দুঃখ করে হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘আমাদের প্রতি কারও নজর নেই। না সরকার, না মিডিয়া। সবাই ব্যস্ত পোশাক খাত নিয়ে। সবকিছু ওদের জন্য।
‘আমরা যেন কেউ নই; কিছুই করছি না দেশের জন্য। অথচ সরকার যদি আমাদের দিকে একটু তাকাত, তাহলে বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে এসে দিতে পারতাম আমরা।’
একই সঙ্গে অবকাঠামো, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারের সমস্যাগুলো কাটানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
১০ বছরের রপ্তানির চিত্র
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে হোম টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে ৭৫ কোটি ৮৯ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আয়ের অঙ্ক ছিল একটিু বেশি ৮৫ কোটি ১৭ লাখ ডলার।
২০১৭-১৯, ২০১৬-১৭ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এসেছিল যথাক্রমে ৮৭ কোটি ৮৬ লাখ, ৭৯ কোটি ৯১ লাখ ও ৭৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
আগের তিন বছর ২০১২-১৩, ২০১১-১২ এবং ২০১০-১১ অর্থবছরে এই খাত থেকে বাংলাদেশ ৭৯ কোটি ১৫ লাখ, ৯০ কোটি ৬০ লাখ এবং ৭৮ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এনেছিল।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ধরা আগুন প্রায় এক ঘণ্টা পর নিভিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
বাহিনীর মিডিয়া সেল জানায়, শুক্রবার বেলা দুইটা ৩৯ মিনিটে আগুন নেভানো হয়।
এর আগে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মকর্তা লিমা খানম নিউজবাংলাকে জানান, বেলা একটা ৪৭ মিনিটে হাসপাতালের শিশু হৃদরোগ কেন্দ্রে আগুন ধরার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাহিনীর পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করে।
আগুনে হতাহতের কোনো কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, আগুন ধরার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয় তদন্তের পর বলা যাবে।
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বার্তায় জানায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় নৌবাহিনী।
আরও পড়ুন:রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগে শুক্রবার আগুন ধরেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম দুপুরে নিউজবাংলাকে জানান, বেলা একটা ৪৭ মিনিটে আগুন ধরার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাহিনীর পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করছে।
আগুনে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, আগুন ধরার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয় তদন্তের পর বলা যাবে।
ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে সংঘবদ্ধ পিটুনিতে দুই নির্মাণশ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ সময় আরো পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার দুইজন শ্রমিক নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
প্রাণ হারানো দুজন হলেন মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল (২১) ও তার ভাই আশাদুল (১৫)।
পঞ্চপল্লী গ্রামে একটি কালী মন্দিরে আগুন দেয়ার খবরে ঘটনার সূত্রপাত। গ্রামবাসীর সন্দেহ এখানে একটি নির্মাণাধীন প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণশ্রমিকরা আগুন দিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নির্মাণশ্রমিকদের গণপিটুনি দেয় এলাকাবাসী। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাদের নির্মাণাধীন একটি স্কুল ভবনের কক্ষে হাত-পা বেঁধে মেঝেতে ফেলে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে সন্ধ্যার পর প্রথমে মধুখালী থানার ইউএনও এবং ওসির নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপরেও হামলা করা হয়।
এ সময় ফরিদপুর ও রাজবাড়ী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে হামলাকারীরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এ সময় এলাকাবাসী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পুলিশ।
খবর পেয়ে ফরিদপুর থেকে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
তিনি জানান, প্রায় ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় অবরুদ্ধ থাকার পর আহতদের উদ্ধার করে মুমূর্ষু অবস্থায় ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকার অতিরিক্ত র্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অতিরিক্ত নিরাপত্তার স্বার্থে ঘটনাস্থলে ৪ প্লাটুন বিজিবি পাঠাতে বলা হয়েছে।
ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন সমকালকে জানান, পাঁচ গ্রাম নিয়ে সেখানে পঞ্চপল্লী অবস্থিত। এলাকাটি হিন্দু বসতি অধ্যুষিত। এর মাঝে কৃষ্ণনগর নামে এক গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজের জন্য সেখানে কয়েকজন নির্মাণশ্রমিক কাজ করছিলেন। পঞ্চপল্লীর একদল মানুষ ওই নির্মাণশ্রমিকদের পিটিয়ে আহত করে নির্মাণাধীন স্কুল ঘরে আটকে রাখে। স্কুল ভবনের দরজা, জানালা, গ্রিল ভেঙে ফেলেন তারা। এ সময় বাইরে থেকে কেউ ওই গ্রামে যেতে পারেনি। সেখানে একটি কালী মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
তপতি মন্ডল নামে ওই গ্রামের এক নারী বলেন, ‘আমি বাড়ি গিয়েছিলাম ঘোষি নিতে। তখন ওরা (শ্রমিকরা) রড ওঠানামা করছিল আর নিজেরাই বকাবাজি করছিল। তারপর আমি চিৎকার শুনতে পাই। এগিয়ে গিয়ে দেখি, মা একদম পুড়ে গেছে। তারপর লোকজন জড়ো হয়ে গেল, এই যা। তারপর কী হলো, তা দেখিনি।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফরিদপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রাজবাড়ী জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ আনা হয়েছে পরিস্থিতি মোকাবিলায়। পাশাপাশি ফরিদপুর থেকে র্যাব সেখানে পৌঁছেছে। থেমে থেমে সেখানে ফাঁকা গুলির আওয়াজ শোনা গেছে।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, ‘এখানে কয়েকজন নির্মাণশ্রমিক কাজ করছিলেন। উত্তেজিত জনতা ভেতরে ঢুকে তাদের লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে গুরুতর আহত করে। খবর পেয়ে মধুখালী থানার ওসি ফোর্সসহ এখানে আসে। তাদের সঙ্গে মধুখালী উপজেলার ইউএনও ছিলেন।
‘তারা এখানে এসে উত্তেজিত জনতার হাতে আটকে পড়েন। খবর পেয়ে আমরা ফরিদপুর থেকে অতিরিক্ত ফোর্সসহ এসে তাদেরসহ আহতদের উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে ফরিদপুরে হাসপাতালে পাঠাই।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘এ ঘটনায় অনেক পুলিশ আহত হয়েছেন। তাদের দিকে ইটপাটকেল মারা হয়েছে। আমরা সারা রাতই পাহারা দিয়েছি। বিষয়টি ঢাকা থেকে আইজি স্যার নিজেও সবসময় খবরা-খবর রাখছেন।’
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার জানান, পঞ্চপল্লী গ্রামে একটি কালী মন্দিরে আগুন দেয়ার খবরে ঘটনার সূত্রপাত। গ্রামবাসীর সন্দেহ এখানে একটি নির্মাণাধীন প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণশ্রমিকরা আগুন দিয়েছেন। তারা এই শ্রমিকদের বেদম পিটিয়ে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে গুরুতর আহত করে।
রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পঞ্চপল্লী গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, সকাল থেকে এখানে বিজিবি মোতায়েনের জন্য চার প্লাটুন বিজিবি চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:নাটোরের হাঁড়িভাঙ্গা বিলে তিন ফসলি জমিতে চলছে পুকুর খনন। গুরুদাসপুরের ভূমি অফিসের নৈশপ্রহরী মিন্টু হোসেন ১০ বিঘা পুকুর খননের জন্য দাবি করেছেন ছয় লাখ টাকা।
নৈশপ্রহরী মিন্টু হোসেনের ভাষ্য এ টাকার ভাগ ইউএনও, এসিল্যান্ড ও পুলিশকে দিতে হয়। দাবিকৃত ছয় লাখ টাকা তিন কিস্তিতে দেয়া যাবে।
সম্প্রতি এক পুকুর খননকারী সঙ্গে মিন্টুর রফাদফার এমন একটি ভিডিও গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে এসেছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে মিন্টু বলেন, ‘আগে পুকুর খননের রফাদফা করলেও এখন গুরুদাসপুর ইউএনওর গাড়িচালক জয়নাল হোসেন বিষয়টি তদারকি করছেন।’
স্থানীয়রা জানান, শুধু গুরুদাসপুর নয়, প্রশাসনের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজশে এমন অবৈধ কর্মযজ্ঞ চলছে পুরো জেলাজুড়ে। নাটোরে তিন ফসলি জমিতে নির্বিচারে চলছে পুকুর খনন। নাটোর সদর, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়াসহ সাতটি উপজেলায় পুকুর খননের মহোৎসব চললেও তা কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না।
অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রত্যক্ষ যোগসাজশে চলছে এমন অপকর্ম। যার প্রমাণ মিলেছে অনুসন্ধানে। আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে পুকুর খনন করায় কমে যাচ্ছে আবাদি জমি। এতে কৃষি জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতাসহ চাষাবাদের স্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভাষ্য, পুকুর খননের ফলে গত ১০ বছরে নাটোরে আবাদি জমি কমেছে ৫ হাজার হেক্টর। তবে বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা দ্বিগুণ।
গুরুদাসপুর উপজেলার হাঁড়িভাঙ্গা বিলে গিয়ে দেখা যায়, তিন ফসলি জমিতে অবাধে চলছে পুকুর খনন। জলাশয় খননকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়দের বেশিরভাগ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চান না।
একই দৃশ্য পাশের বড়াইগ্রাম উপজেলার বাজিতপুর এলাকায়। ফসলি জমি ধ্বংস করে রাত দিন চলছে মাটি কাটা। শুধু এই দুই উপজেলাতেই নয়, সাত উপজেলায় একই চিত্র। তিন ফসলি জমিতে পুকুর খননে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সে আইনের তোয়াক্কা করছেন না কেউই।
গুরুদাসপুরের হাঁড়িভাঙ্গা গ্রামের কৃষক মকলেছুর রহমান জানান, তিন ফসলি জমিতে পুকুর খননের ফলে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়াসহ খননকৃত পুকুরের পাশে শত শত বিঘা জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মশিন্দা চড়পাড়া গ্রামের শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘জমির পাশে কেউ কেউ পুকুর খনন করায় এবং সেই পুকুরের পাড়গুলো উঁচু হওয়ায় বর্ষায় বিলে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে পুকুরের পাশে অন্য কৃষকরা বছর জুড়েই চাষাবাদের ক্ষেতে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।’
চড়পাড়া বিলে জমির মালিক আফছার আলী বলেন, ‘আমি আমার ১০ বিঘা জমিতে পুকুর খননের জন্য অন্যের সহযোগিতা নিয়েছি। সেই ব্যক্তি লাইনঘাট ঠিক করে পুকুর খনন করছেন। অনুমতি ছাড়া পুকুর খনন করা যায় না। জোর করে এসব হয় না।’
তার কথার সত্যতা মিলে গুরুদাসপুর ভূমি অফিসের নৈশ প্রহরী মিন্টু হোসেনের কথায়। গণমাধ্যমের হাতে আসা একটি ভিডিওতে দেখা যায় ১০ বিঘা জমিতে পুকুর খননের জন্য মিন্টু দাবি করেন ছয় লাখ টাকা।
তিনি আরও বলেন, ‘এ টাকা ইউএনও, এসিল্যান্ড ও পুলিশকে দিতে হয়। দাবিকৃত ছয় লাখ টাকা তিন কিস্তিতে দেয়া যাবে।’
এ বিষয়ে মিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রথমে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে ভিডিওর কথা উল্লেখ করলে তিনি জানান, আগে পুকুর খননে অর্থ আদায়ের দায়িত্ব তিনি পালন করলেও এখন তা গুরুদাসপুর ইউএনওর গাড়ি চালক জয়নাল হোসেন সেই দায়িত্ব পালন করছে।
পরে জয়নালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরে তিনি অনুরোধ করে জানান, মানুষ হিসাবে তার কোনো ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে তা যেন ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘ওই এলাকার অবৈধ মাটি ব্যবসায়ীদের থামাতে পারছি না। প্রয়োজনে মাটি খনন কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হবে।’
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘আমার আসনে তিন ফসলি জমি রক্ষায় আমি কঠোর অবস্থান নেব। যে কোনো মূল্য আমি মাটি খেকোদের রুখে দেব।’
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার বলেন, ‘পুকুর খননে প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। যখন অবৈধ পুকুর খননের সংবাদ পাই, তখন অভিযান পরিচালনা করা হয়। তার আওতাধীন কেউ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা জানান, পরিবেশ রক্ষার জন্য তারা কঠোর অবস্থানে আছেন। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি, আইনশৃঙ্খলা কমিটিসহ অভ্যন্তরীণ যে কমিটিগুলো আছে, সেই কমিটিগুলোর মাধ্যমে তারা সবাইকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। যে কার্যক্রম পরিবেশকে ক্ষতি করে তা কোনোভাবেই করা যাবে না।
জনগণকে তথ্য দেবার আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, ‘তথ্য পেলে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন লঙ্ঘনকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:যশোরের ছুটি শেষে ভারত থেকে ফিরতে শুরু করেছেন পাসপোর্টধারী পর্যটকরা। তাই বেনাপোল বন্দরে বেড়েছে যাত্রীর চাপ।
ঈদের পর বেনাপোল বন্দরে ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যা ছয়টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময়ে সাড়ে ১৫ হাজার ৪২২ জন পর্যটক দেশে ফিরেছেন।
এর মধ্যে ১৬ এপ্রিল ৪ হাজার ৯১০ জন, ১৭ এপ্রিল ৫ হাজার ৩৬৩ জন এবং ১৮ এপ্রিল ৫ হাজার ১৪৯ জন পর্যটক দেশে আসে। চিকিৎসা, ব্যবসা, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে তারা ভারতে গিয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, এবার ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ১০ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সরকার। টানা পাঁচ দিন বন্ধ ছিল দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে করে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও সরকারি ছুটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বন্ধ রেখেছিল।
এতে লম্বা ছুটি পেয়ে চিকিৎসা,ব্যবসা,দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে অনেকে গিয়েছিলেন ভারতে। আবার অনেকে ভারত থেকে ফিরে আসছেন। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে এখন। পর্যটকদের নিরাপত্তায় বন্দরে কাজ করছে বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরের নিরাপত্তা কর্মীরা।
ভারত থেকে ফিরে আসা সুভাষ মাস্টার বলেন, ‘আমি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। ঈদের ছুটিতে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলাম। ভারতের পেট্রাপোলে লম্বা লাইনে যে ভিড় তাতে ইমিগ্রেশন সারতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে পর্যাপ্ত ডেস্ক থাকলেও অফিসার কম থাকায় আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।’
ভারত ফেরত মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ‘এবার টানা পাঁচ দিনের ছুটি পেয়ে বেড়ানোর জন্য পরিবারের সঙ্গে ভারত গিয়েছিলাম। ছুটি শেষ হওয়ায় আমাকে দেশে ফিরতে হয়েছে। তবে আজ ফিরে আসার সময় বেনাপোলের বিপরীতে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে সীমাহীন দুর্ভোগ শিকার হতে হয়েছে। ডেস্কের পরিমাণ বেশি থাকলে ও অফিসার বসেন মাত্র তিনজন, কাজ করেন ধীরগতিতে।’
এদিকে ভারত ফেরত এক পর্যটক অভিযোগ করে বলেন, ‘দূরপাল্লার বাসে সিট সংকটের কথা বলে ভাড়া বেশি আদায় করছে পরিবহণ কাউন্টারগুলো। সাধারণ সময় ঢাকার ভাড়া পরিবহণ ভেদে জনপ্রতি ননএসি ৫৫০-৭৫০ টাকা ও এসি ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা হলেও কিছু কিছু পরিবহণ এখন চাইছে নন এসি ৮০০ টাকা ও এসি ১৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা। ফেরার পথে পকেটে টাকা কম থাকায় অসুবিধা হচ্ছে।’
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় প্রতি বছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ পাসপোর্টধারী যাতায়াত করেন। ভ্রমণ কর বাবদ বাংলাদেশ সরকারের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ও ভিসা ফি বাবদ ভারত সরকারের ১৪০ কোটি টাকা আয় হয়। সে হিসাবে সেবার মান একেবারে বাড়েনি।’
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক (ট্র্যাফিক) রেজাউল করিম বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে গত এক সপ্তাহে হাজার হাজার বাংলাদেশি পর্যটক ভারতে যান। ছুটি শেষ হওয়ায় ভারত ফেরত পর্যটকদের চাপ বেড়েছে। পাসপোর্টধারী পর্যটকদের পাসপোর্টের কার্যক্রম যেন শেষ করতে পারেন সেজন্য বন্দরের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।’
বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের ওসি কামরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, ‘গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে ১৫ হাজার ৪২২ জন পাসপোর্টধারী পর্যটক দেশে ফিরেছেন। ঈদ ও নববর্ষ উপলক্ষে দীর্ঘ ছুটি থাকায় মানুষ ঘুরতে ও চিকিৎসার জন্য ভারত যান। পর্যটকদের নির্বিঘ্নে দ্রুত পাসপোর্টের কার্যক্রম শেষ করতে ডেস্ক অফিসারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জের ধরে প্রতিবেশী দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির আরও ১৩ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
তারা বৃহস্পতিবার টেকনাফের নাফ নদীতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে বলে জানান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবির) জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম।
তিনি জানান, পরবর্তীতে কোস্টগার্ড উক্ত বিজিপি সদস্যদেরকে বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়নের (১১ বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করে। বর্তমানে বিজিপির মোট ২৭৪ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে বুধবার একজন ও আগের দিন আসা ৪৬ জন রয়েছে।
অভ্যন্তরীণ সংঘাতের মুখে বুধবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তপথে বিজিপির এক সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। মঙ্গলবার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এপারে চলে আসেন আরও ৪৬ জন বিজিপি সদস্য। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি তাদের সবাইকে হেফাজতে নিয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানায়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান বিদ্রোহীদের গোলাযোগ চলছে৷ মঙ্গলবার রাতেও সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। সংঘাতে আরাকান বিদ্রোহীদের সঙ্গে টিকতে না পেরে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নিচ্ছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা।
মন্তব্য