উপমহাদেশে প্রধান দেশগুলোর তুলনায় খেলাপি ঋণের দিক দিয়ে বাংলাদেশ খুব একটা খারাপ অবস্থানে নেই। তবে আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি বেশ নিচে।
মন্দ ঋণ নিয়ে বাংলাদেশে বরাবর আলোচনা তুমুল। এ জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রতি বছর সঞ্চিতি হিসেবে সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। এতে সরকারি-বেসরকারি কিংবা বিশেষায়িত প্রতিটি ব্যাংকেরই বড় অংকের বিনিয়োগ আটকে পড়েছে। ব্যাংক খাতে মূলধন ঘাটতি বাড়ছে; কোনো কোনো ব্যাংক পড়েছে লোকসানে।
চলতি বছরের মার্চ শেষে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৮ দশমিক ০৭ ভাগ।
২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
একই সময়ে ব্যাংকগুলো অবলোপন করেছে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা। এগুলো আদায়ও অনেকটাই অনিশ্চিত।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের অনুপাত মোট বিতরণ করা ঋণের ২ শতাংশের মধ্যে রাখতে হয়, যা বাংলাদেশ কখনই অর্জন করতে পারেনি।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাাতিক মানদণ্ড বজায় রেখেছে শুধু নেপাল। দেশটির খেলাপি ঋণ মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলঙ্কায়ও এই হার বেশ কম, ২ দশমিক ৬ শতাংশ।
প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারত খেলাপি ঋণে বাংলাদেশের কাছাকাছি অবস্থান করছে, যা ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
আর দুর্বল অর্থনীতির দেশ পাকিস্তানের খেলাপি ঋণ ৯ দশমিক ৯ শতাংশ, যা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২ দশমিক ২ শতাংশ।
বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি বেশি খারাপ দেখাচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলোর কারণে। ছয়টি রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকে খেলাপির হার বিতরণ করা ঋণের ২০ শতাংশের বেশি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে বিতরণ করা ঋণের পাঁচ শতাংশের আশেপাশে। আর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোতে এই হার ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
৪ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে খেলাপি ঋণ রয়েছে এমন উল্লেখযোগ্য দেশগুলোর মধ্যে, কলম্বিয়া ৫ দশমিক ২ শতাংশ, ইটালি ৫ দশমিক ২ শতাংশ, আজারবাইজান ৫ দশমিক ৯, ক্রোয়েশিয়া ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
৩ শতাংশের নিচে খেলাপি ঋণ রয়েছে এমন উল্লেখযোগ্য দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনামে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ২ দশমিক ৯ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ২ দশমিক ৯ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
চীনে খেলাপি ঋণের হার কমে ১ দশমিক ৭০ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ১ দশমিক ৬ শতাংশ আর ফিলিপাইনে ১ দশমিক ৯ শতাংশের মধ্যে।
খেলাপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ব্যবস্থা
খেলাপি ঋণের অনুপাত আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বা এর কাছাকাছি নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া দেশগুলো মধ্যে মালয়েশিয়ায় ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ গ্রাহকরা দেশ ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি পান না।
থাইল্যান্ড সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি (এএমসি) গঠন করে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে সফলতা পেয়েছে। আইন ও নীতির কঠোর বাস্তবায়ন করে দ্রুত খেলাপি ঋণ কমিয়েছে শ্রীলঙ্কাও।
চীনে খেলাপিদের ওপর উড়োজাহাজ ও উচ্চগতির ট্রেনের টিকিট ক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। করপোরেট সংস্থার নির্বাহী বা প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করতে পারেন না খেলাপিরা। এমনকি খেলাপিরা ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কোনো হোটেল সুবিধা নিতে পারেন না, রিয়েল এস্টেট কিনতে পারেন না।
নেপালে ঋণখেলাপিদের পাসপোর্ট সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ভিয়েতনামের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
ভারতও খেলাপির হার কমিয়ে আনতে ‘ফিউজিটিভ ইকোনমিক অফেন্ডারস বিল’ নামে একটি আইন অনুমোদন করেছে। আইনটির আওতায় কোনো ঋণখেলাপি দেশ ত্যাগ করলে তার সম্পদ জব্দ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির পাসপোর্টও প্রত্যাহার করেছে দেশটি।
ঋণ আদায়ে বিকল্প ব্যবস্থা
স্বাধীনতা-পরবর্তীসময়ে ব্যাংকিং খাতের তেমন কোনো আইন-কানুন না থাকায় ১৯৮৩ সালে ব্যাংকগুলোর ঋণ মন্দঋণে পরিণত হওয়া শুরু হয়।
১৯৯০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু ব্যাংকিং নীতিমালা চালু করে।
তবে ব্যাংকারদের অনভিজ্ঞতা, দীর্ঘমেয়াদি ঋণ, নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার দুর্বলতাসহ নানা কারণেই দেশে খেলাপি ঋণ তৈরি হওয়া শুরু হয়। কিন্তু আইনি কাঠামোর অভাবে ঋণখেলাপিদের কিছু বলাও যেত না।
খেলাপি হওয়া অর্থ আদায়ে ১৯৯৬ সালে কাজ শুরু করে ‘ডেট রিকভারি এজেন্ট’। ২০০৩ সাল থেকে জোরেশোরেই মাঠে নামে অন্তত চারটি প্রতিষ্ঠান। উদ্দেশ্য ছিল, অনাদায়ী মন্দ ও কু ঋণ এবং মামলায় আটকে থাকা খেলাপি ঋণ উত্তোলন।
এমন ব্যবস্থায় আদায়ও হয় বড় অংকের অর্থ। কিন্তু ঋণের অর্থ তুলে দেয়ার পর কোম্পানিকে কমিশন দেয়া নিয়ে নানান জটিলতা তৈরি হয়। পরে ভেস্তে যায় সেই উদ্যোগ।
এরপর ২০১৯ সালে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। যার নামকরণের প্রস্তাব করা হয়েছে, ‘সিকিউরিজেশন অফ নন পারফরমিং লোন’।
এই আইন বলে ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ঋণ খেলাপির প্রতিষ্ঠান দখলে নিতে পারবে। তবে এই উদ্যোগটি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মন্দ ঋণ বেসরকারি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। বেসরকারি কোম্পানিগুলো ব্যাংকের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অর্ধেক বা এর চেয়ে কম মূল্যে কিনে নেয়। এতে ব্যাংকের খাতায় খেলাপি ঋণ কমে যায়।
আর বেসরকারি কোম্পানি ঋণখেলাপির জামানত হিসেবে দেয়া সম্পদ বিক্রি করে অর্থ আদায় করে।
কার্যকর ব্যবস্থার তাগিদ
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায় আমানত সংগ্রহ ও ঋণ দেয়ায় অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে।’
তিনি বলেন, আর্থিক কেলেঙ্কারি, নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপানার কারণে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে। সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। সরকার কঠোর হলে খেলাপি ঋণ দ্রুত কমে আসব।’
ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বেশ দুর্বল বলেও মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর। বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও শক্তিশালী করতে হবে। বিভিন্ন দেশে খেলাপি ঋণ আদায়ে ঋণ খেলাপিদের তালিকা প্রকাশ্যে দেয়। অন্যান্য অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কিন্তু আমাদের দেশে এই বিশাল অর্থ উদ্ধারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংক খাতে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের নিয়ে। এদের বিরুদ্ধে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। এই ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারায় অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছেন। এই খেলাপিদের আইনগতভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মধ্যে যদি আনা যায়, তাহলে খেলাপি সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
আরও পড়ুন:নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব রুবেলকে কারণ দর্শোনোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস স্বাক্ষরিত চিঠিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করা হয়।
নোটিশে বলা হয়, ‘গত ১৫ এপ্রিল নাটোর জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশার মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা প্রদান, মারপিট ও অপহরণের ঘটনা যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হয় এবং উক্ত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি সুমনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আপনার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, যা দলীয় আচরণবিধি পরিপন্থির সামিল।
‘এমতাবস্থায় কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার জবাব আগামী ৩ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
ওই সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
শোকজের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় দলীয় তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তাকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাবের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন সোমবার বিকেলে সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশা অনলাইনে আবেদনের পর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে আসেন। সেখানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে মারধর করে কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে আবারও বেধড়ক মারধর করে বাড়ির সামনে ফেলে যায়। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যরা তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন।
এ ঘটনায় দেলোয়ার হোসেনের পরিবার লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করে আসছে। ইতোমধ্যে তাদের করা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত সুমন নামের এক আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন যে, লুৎফুল হাবীব রুবেলের পক্ষ নিয়েই সুমনসহ অন্য আসামিরা দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণ ও মারধর করেছেন।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় রুবেলকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
লুৎফুল হাবীব রুবেল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে তার। তিনি প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক।
আরও পড়ুন:জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে খাইরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ৪০ বছর বয়সী খাইরুল ইসলাম চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় পশ্চিমপাড়ার মৃত নসিম উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে।
আহতদের মধ্যে কয়েক জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন, ৫০ বছর বয়সী সাজু হুদী, জামাত ফকির ও নুর বেগম, ৫৫ বছর বয়সী মানু প্রামানিক, ৬০ বছর বয়সী মোসলেম উদ্দিন, ৩৫ বছর বয়সী খোকন প্রামাণিক, জিল্লুর, ওলিউর রহমান, মজিদ, ইছাই প্রামানিক ও মো. মিঠুন এবং ৩০ বছর বয়সী নাসিরউদ্দিন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, কয়েকদিন আগে জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই গ্রুপের লোকজনদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এ নিয়ে গত দুই দিনে দুই গ্রুপের মধ্যে ছোটোখাটো মারামারির ঘটনাও ঘটে। এইসব ঘটনার জের ধরে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে তারা ফের সংঘর্ষে জড়ায়।
সংঘর্ষ চলাকালে ঘটনাস্থলেই খাইরুল নিহত হন। আর আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান স্থানীয়রা। তাদদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঈশ্বরদী থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় একজন মারা গেছেন। আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত বলতে পারব।’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় টাকা না পেয়ে আব্দুল কাদের নামে এক বৃদ্ধকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তারই ছেলের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর পলাতক রয়েছে আরিফ হোসেন নামের ওই যুবক।
উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া পাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মো. রাশেদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘টাকার জন্য প্রায়ই বাবাকে চাপ দিত ২০ বছর বয়সী আরিফ। সম্প্রতি বাবার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে মোবাইল কেনে সে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে আবারও ১০ হাজার টাকা চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান আব্দুল কাদের। এতে আরিফ ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করার হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে আব্দুল কাদের পাশে বড় ছেলের বাড়িতে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে পেছন থেকে বাবার পেটে ও পিঠে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় আরিফ। এ সময় স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আরিফ পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা চলছে।’
সরকারি শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের আশায় মালয়েশিয়ায় যাওয়া বাংলাদেশি প্রবাসীদের পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।
শুক্রবার জেনেভা থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কয়েক মাস বা তার বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ও অসম্মানজনক।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা বিশেষজ্ঞরা হলেন- দাসত্বের সমসাময়িক রূপ, কারণ ও পরিণতি বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি টোমোয়া ওবোকাতা, মানবপাচার বিশেষ করে নারী ও শিশুপাচার সম্পর্কিত বিশেষ প্রতিনিধি সিওভান মুল্লালি, প্রবাসীদের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত গেহাদ মাদি ও রবার্ট ম্যাককরকোডেল (চেয়ার-র্যাপোর্টিয়ার), ফার্নান্দা হপেনহাইম (ভাইস-চেয়ার), পিচামন ইয়োফানটং, দামিলোলা ওলাউই, এলজবিয়েতা কারস্কা এবং ব্যবসা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা দল।
জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘প্রবাসীদের ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং তাদের শোষণ, অপরাধীকরণ ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে রক্ষা করার জন্য মালয়েশিয়ার জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার।’
তারা উল্লেখ করেন, অনেক প্রবাসী মালয়েশিয়ায় এসে দেখেন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাকরি নেই এবং অনেক সময় তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও থাকতে বাধ্য করা হয়।
এর ফলে এসব প্রবাসী গ্রেপ্তার, আটক, দুর্ব্যবহার ও বহিষ্কারের ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে প্রবাসী কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে সক্রিয় অপরাধী চক্র। এতে প্রবাসীরা প্রতারিত হচ্ছেন, ঘন ঘন ভুয়া কোম্পানিতে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে এবং অতিরিক্ত নিয়োগ ফি দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। যে কারণে তাদের ঋণের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে।’
তারা বলেন, ‘আমরা রিপোর্ট পেয়েছি যে উভয় সরকারের কিছু উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বা এটি প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এটা অগ্রহণযোগ্য এবং এর অবসান হওয়া দরকার।’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘এই শোষণমূলক নিয়োগের অপরাধীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। এখন পর্যন্ত এই বেসরকারি ব্যবসা এবং প্রতারণামূলক নিয়োগ সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া উভয় দেশের ভূমিকাই অপর্যাপ্ত।’
তারা আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে অনেক অসহায় প্রবাসীদের অপরাধীতে পরিণত করা হয়েছে এবং শোষণের শিকার হওয়ার কথা জানাতে গিয়ে কেউ কেউ তীব্র প্রতিহিংসার মুখোমুখি হয়েছেন।’
বিবৃতিতে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশকে এসব ঘটনার তদন্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা।
ব্যবসা ও মানবাধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের নীতিমালা মেনে চলতে মালয়েশিয়াকে আহ্বান জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘মালয়েশিয়াকে অবশ্যই পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শ্রম অভিবাসনকে আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে হবে।’
মালয়েশিয়ার ব্যবসাক্ষেত্রগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাত থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ষা করতে এবং এই ব্যবসাগুলোতে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করতে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে তাদের পরামর্শ হচ্ছে, নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ, সুরক্ষা ও সহায়তা, মানবপাচারের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনি সুরক্ষা প্রয়োগ এবং দেশের আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা সমুন্নত রাখতে মালয়েশিয়াকে অবশ্যই প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা এর আগে এসব বিষয় নিয়ে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
আরও পড়ুন:রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পঞ্চম তলায় শিশু হৃদরোগ (কার্ডিয়াক) বিভাগের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) লাগা আগুন পুরোপুরি নিভিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
শুক্রবার দুপুর দেড়টার কিছু সময় পর ওই আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট প্রায় এক এক ঘণ্টার চেষ্টার পর ২টা ৪০ মিনিটে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আগুন থেকে বাঁচতে ছোটাছুটি করে যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবেই তাদের সন্তানদের নিয়ে হাসপাতালের বাইরের ফ্লোরে অবস্থান নিয়েছেন। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে এমনিতেই বাইরে অসহনীয় গরম। গরম সহ্য করতে না পেরে শিশুরা কান্নাকাটি করছে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের গণমাধ্যম কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের তিনটি ইউনিট, সিদ্দিক বাজার থেকে একটি ইউনিট, তেজগাঁও থেকে একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ২টা ৪০ মিনিটে আগুন পুরো নিভিয়ে ফেলা হয়।
তবে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে লাগা এই আগুনে রোগীদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, রোগীদের সবাইকে নিচে নামিয়ে আনা হয়েচে। ইউসিইউতে ১৭ জন রোগী ছিলেন আমরা নামিয়ে এনেছি। কারো কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
তিনি বলেন, হাসপাতালের বি ব্লকের ৫ তলার কার্ডিয়াক বিভাগের আইসিইউতে আগুন লেগেছে। আগুনের চেয়ে ধোঁয়া একটু বেশি ছড়িয়েছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।
আগুনের সূত্রপাত কীভাবে করা হলো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনও বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না। তবে আশঙ্কা করছি এসি থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, কার্ডিয়াক বিভাগের আইসিইউতে লাগা আগুনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির পাঁচ সদস্যের মধ্যে কার্ডিয়াক আইসিইউ বিভাগের প্রধানকে আহ্বায়ক করা হয়েছে।
এ ছাড়া কমিটিতে একজন মেইনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ওয়ার্ড মাস্টার, একজন নার্স ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি রয়েছেন। তারা তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
এদিকে বিকেলে দেখা যায়, আগুন লাগার পর হাসপাপতালের ৫ তলা ও ৪ তলার পুরো ধোঁয়ায় ভরে গেছে। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে। আগুন থেকে বাঁচতে ছোটাছুটি করে যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবেই তাদের সন্তানদের নিয়ে হাসপাতালের বাইরের ফ্লোরে অবস্থান নেন।
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে এমনিতেই বাইরে অসহনীয় গরম। গরম সহ্য করতে না পেরে শিশুরা কান্নাকাটি করছে। ওপরে সবকিছু কখন ঠিক হবে তা জানেন না এ রোগী ও স্বজনরা। রোগীর অভিভাবক ও স্বজনরা আশঙ্কা করছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে তাদের বাচ্চারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
প্রচণ্ড জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৭ দিন আগে শিশু হাসপাতাল আইসিইউতে ভর্তি হয় পাঁচ মাসের শিশু রাইয়ান। আগুন লাগার পর শিশুটির মা আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে শিশুটিকে নিয়ে নিচে নামে আসেন। বাচ্চাকে নিয়ে এই অসহনীয় গরমে অবস্থান নিয়েছেন হাসপাতালের বাইরে।
কয়েকজন শিশুর অভিভাবক জানান, পাঁচতলার আইসিইউতে যেসব বাচ্চা ছিল তাদের সমস্যা হচ্ছে। অনেক বাচ্চাকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছিল। তাদের অক্সিজেন ছাড়া নিচে নামানো হয়। তাদের প্রত্যেকের অবস্থা খুবই নাজুক ছিল।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি এলাকায় পৃথক ঘটনায় ট্রেনে কাটা পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার ভোর ৫টা ও বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভাটিয়ারী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনাগুলো ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহদুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়দের বরাতে রেলওয়ে পুলিশ জানায়, এদিন ভোরে ভাটিয়ারি এলাকায় চট্টগ্রাম অভিমুখী তুর্ণা নিশিতা এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়ে মারা যান ভাটিয়ারী ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামের বিপ্লব দাশ নামের ২৩ বছর বয়সী এক যুবক।
পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়েন স্থানীয় ভাটিয়ারী বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমির সিভিল স্টাফ ২৪ বছর বয়সী মো. আসিফ উদ্দিন।
দুটি ঘটনার পরই মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ফৌজদারহাট রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার সকালে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হওয়া বিপ্লব মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।’
বিএনপির নেতাদের বক্তব্য সার্কাসের মতো মনে হয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ-পিআইবির মহাপরিচালক একুশে পদকে ভূষিত সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ গ্রন্থিত ‘ভুবনজোড়া শেখ হাসিনার আসনখানি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি আবার বিদেশি দূতাবাসে ধরনা দিচ্ছে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, যে কোনো কিছুতেই বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয়া বিএনপির সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দুর্বলতা। বাংলাদেশে ক্ষমতার উৎস জনগণের কাছে না গিয়ে বিদেশিদের কাছে গেলে বিদেশিরা তো বিএনপিকে কোলে করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাসী। জনগণই ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। ফলে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য সার্কাসের মতো মনে হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মৃত্যুঞ্জয়ী শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। বারবার মৃত্যু উপত্যকা থেকে ফিরে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বিচলিত হননি, বরং আরো দৃপ্ত পদভারে জনগণের সংগ্রামের কাফেলাকে এগিয়ে নিয়েছেন, দেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদা ও সম্মানের আসনে আসীন করেছেন।
তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব বর্তমান বিশ্বে বিরল। তিনি শুধু দেশেরই নন, তিনি আজ বিশ্বনেতা। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, শেখ হাসিনা শুধু তারই নন, তার সন্তানদেরও প্রেরণা। ভারতের প্রিয়াঙ্কা গান্ধী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে ধরে তাকে নিজের প্রেরণা বলে উল্লেখ করেছেন। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, আরব বিশ্বে একজন শেখ হাসিনা থাকলে হয়তো গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা যেতো।
হাছান বলেন, শুধু তাই নয়, যে কোনো বিশ্বসভায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যোগ দিলে তিনিই মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন।
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ২৮৫ জন সদস্যকে মিয়ানমারের জাহাজে নৌপথে ফেরত যাওয়ার ক্লিয়ারেন্স দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, ২২ এপ্রিল জাহাজে তাদের ফেরত নিতে সম্মত মিয়ানমার। এ ছাড়া মিয়ানমারে আটকে পড়া ১৫০ জন বাংলাদেশিও একই জাহাজে ফেরত আসবে। তবে জাহাজের যাত্রা সমুদ্র ও মিয়ানমারের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পিআইবির কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
মন্তব্য