উপমহাদেশে প্রধান দেশগুলোর তুলনায় খেলাপি ঋণের দিক দিয়ে বাংলাদেশ খুব একটা খারাপ অবস্থানে নেই। তবে আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি বেশ নিচে।
মন্দ ঋণ নিয়ে বাংলাদেশে বরাবর আলোচনা তুমুল। এ জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রতি বছর সঞ্চিতি হিসেবে সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। এতে সরকারি-বেসরকারি কিংবা বিশেষায়িত প্রতিটি ব্যাংকেরই বড় অংকের বিনিয়োগ আটকে পড়েছে। ব্যাংক খাতে মূলধন ঘাটতি বাড়ছে; কোনো কোনো ব্যাংক পড়েছে লোকসানে।
চলতি বছরের মার্চ শেষে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৮ দশমিক ০৭ ভাগ।
২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
একই সময়ে ব্যাংকগুলো অবলোপন করেছে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা। এগুলো আদায়ও অনেকটাই অনিশ্চিত।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের অনুপাত মোট বিতরণ করা ঋণের ২ শতাংশের মধ্যে রাখতে হয়, যা বাংলাদেশ কখনই অর্জন করতে পারেনি।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাাতিক মানদণ্ড বজায় রেখেছে শুধু নেপাল। দেশটির খেলাপি ঋণ মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলঙ্কায়ও এই হার বেশ কম, ২ দশমিক ৬ শতাংশ।
প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারত খেলাপি ঋণে বাংলাদেশের কাছাকাছি অবস্থান করছে, যা ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
আর দুর্বল অর্থনীতির দেশ পাকিস্তানের খেলাপি ঋণ ৯ দশমিক ৯ শতাংশ, যা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২ দশমিক ২ শতাংশ।
বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি বেশি খারাপ দেখাচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলোর কারণে। ছয়টি রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকে খেলাপির হার বিতরণ করা ঋণের ২০ শতাংশের বেশি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে বিতরণ করা ঋণের পাঁচ শতাংশের আশেপাশে। আর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোতে এই হার ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
৪ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে খেলাপি ঋণ রয়েছে এমন উল্লেখযোগ্য দেশগুলোর মধ্যে, কলম্বিয়া ৫ দশমিক ২ শতাংশ, ইটালি ৫ দশমিক ২ শতাংশ, আজারবাইজান ৫ দশমিক ৯, ক্রোয়েশিয়া ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
৩ শতাংশের নিচে খেলাপি ঋণ রয়েছে এমন উল্লেখযোগ্য দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনামে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ২ দশমিক ৯ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ২ দশমিক ৯ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
চীনে খেলাপি ঋণের হার কমে ১ দশমিক ৭০ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ১ দশমিক ৬ শতাংশ আর ফিলিপাইনে ১ দশমিক ৯ শতাংশের মধ্যে।
খেলাপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ব্যবস্থা
খেলাপি ঋণের অনুপাত আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বা এর কাছাকাছি নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া দেশগুলো মধ্যে মালয়েশিয়ায় ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ গ্রাহকরা দেশ ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি পান না।
থাইল্যান্ড সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি (এএমসি) গঠন করে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে সফলতা পেয়েছে। আইন ও নীতির কঠোর বাস্তবায়ন করে দ্রুত খেলাপি ঋণ কমিয়েছে শ্রীলঙ্কাও।
চীনে খেলাপিদের ওপর উড়োজাহাজ ও উচ্চগতির ট্রেনের টিকিট ক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। করপোরেট সংস্থার নির্বাহী বা প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করতে পারেন না খেলাপিরা। এমনকি খেলাপিরা ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কোনো হোটেল সুবিধা নিতে পারেন না, রিয়েল এস্টেট কিনতে পারেন না।
নেপালে ঋণখেলাপিদের পাসপোর্ট সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ভিয়েতনামের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
ভারতও খেলাপির হার কমিয়ে আনতে ‘ফিউজিটিভ ইকোনমিক অফেন্ডারস বিল’ নামে একটি আইন অনুমোদন করেছে। আইনটির আওতায় কোনো ঋণখেলাপি দেশ ত্যাগ করলে তার সম্পদ জব্দ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির পাসপোর্টও প্রত্যাহার করেছে দেশটি।
ঋণ আদায়ে বিকল্প ব্যবস্থা
স্বাধীনতা-পরবর্তীসময়ে ব্যাংকিং খাতের তেমন কোনো আইন-কানুন না থাকায় ১৯৮৩ সালে ব্যাংকগুলোর ঋণ মন্দঋণে পরিণত হওয়া শুরু হয়।
১৯৯০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু ব্যাংকিং নীতিমালা চালু করে।
তবে ব্যাংকারদের অনভিজ্ঞতা, দীর্ঘমেয়াদি ঋণ, নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার দুর্বলতাসহ নানা কারণেই দেশে খেলাপি ঋণ তৈরি হওয়া শুরু হয়। কিন্তু আইনি কাঠামোর অভাবে ঋণখেলাপিদের কিছু বলাও যেত না।
খেলাপি হওয়া অর্থ আদায়ে ১৯৯৬ সালে কাজ শুরু করে ‘ডেট রিকভারি এজেন্ট’। ২০০৩ সাল থেকে জোরেশোরেই মাঠে নামে অন্তত চারটি প্রতিষ্ঠান। উদ্দেশ্য ছিল, অনাদায়ী মন্দ ও কু ঋণ এবং মামলায় আটকে থাকা খেলাপি ঋণ উত্তোলন।
এমন ব্যবস্থায় আদায়ও হয় বড় অংকের অর্থ। কিন্তু ঋণের অর্থ তুলে দেয়ার পর কোম্পানিকে কমিশন দেয়া নিয়ে নানান জটিলতা তৈরি হয়। পরে ভেস্তে যায় সেই উদ্যোগ।
এরপর ২০১৯ সালে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। যার নামকরণের প্রস্তাব করা হয়েছে, ‘সিকিউরিজেশন অফ নন পারফরমিং লোন’।
এই আইন বলে ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ঋণ খেলাপির প্রতিষ্ঠান দখলে নিতে পারবে। তবে এই উদ্যোগটি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মন্দ ঋণ বেসরকারি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। বেসরকারি কোম্পানিগুলো ব্যাংকের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অর্ধেক বা এর চেয়ে কম মূল্যে কিনে নেয়। এতে ব্যাংকের খাতায় খেলাপি ঋণ কমে যায়।
আর বেসরকারি কোম্পানি ঋণখেলাপির জামানত হিসেবে দেয়া সম্পদ বিক্রি করে অর্থ আদায় করে।
কার্যকর ব্যবস্থার তাগিদ
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায় আমানত সংগ্রহ ও ঋণ দেয়ায় অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে।’
তিনি বলেন, আর্থিক কেলেঙ্কারি, নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপানার কারণে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে। সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। সরকার কঠোর হলে খেলাপি ঋণ দ্রুত কমে আসব।’
ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বেশ দুর্বল বলেও মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর। বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও শক্তিশালী করতে হবে। বিভিন্ন দেশে খেলাপি ঋণ আদায়ে ঋণ খেলাপিদের তালিকা প্রকাশ্যে দেয়। অন্যান্য অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কিন্তু আমাদের দেশে এই বিশাল অর্থ উদ্ধারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংক খাতে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের নিয়ে। এদের বিরুদ্ধে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। এই ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারায় অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছেন। এই খেলাপিদের আইনগতভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মধ্যে যদি আনা যায়, তাহলে খেলাপি সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
আরও পড়ুন:জাতীয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০২৫ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এ বছরও দেশের বৃক্ষ সম্পদ বৃদ্ধি ও পরিবেশের ভারসাম্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে ‘বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০২৫’ গ্রহণ করেছে।
এ উপলক্ষ্যে সোমবার (৩০ জুন) বিমান বাহিনী সদর দফতর প্রাঙ্গনে গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে উক্ত কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, ‘পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি’ জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযানের এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এ বছরের বৃক্ষরোপণ অভিযান কর্মসূচি পালন করছে।
বিমান সদরের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসাররা বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করে ওই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বিমান সদরের পরিচালকরা এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি ও ইউনিট সমূহেও একই ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় বিমান বাহিনী বিভিন্ন ধরনের ফলজ, বনজ ও ওষুধি গুনাগুন সম্পন্ন গাছের চারা রোপণ করবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর ও আন্তরিকভাবে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে চীন। সোমবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘চীন আশা প্রকাশ করেছে যে, তারা বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে আরও বেশি আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে কাজ করবে।’
ফখরুলের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের বিএনপির প্রতিনিধিদলের সাম্প্রতিক চীন সফরের পর বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সফর নিয়ে ফখরুল বলেন, বিএনপি দল চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করেছে। বলেন, ‘আমরা এই প্রকল্প সম্পর্কে আমাদের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেছি এবং তারা ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছে।’
তিনি বলেন, চীনা পক্ষ এখনো তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। ‘ভবিষ্যতে যদি আমাদের সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাই এবং তারা(চীন) যদি এই প্রকল্পের প্রস্তাব দেয়—তাহলে আমরা মনে করি আমরা এটি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করব।’
ফখরুল বলেন, বিএনপি প্রতিনিধিদল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে চীনকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে।
তিনি বলেন, চীনা কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সরকারকে রাজি করানোর জন্য তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার আশ্বাস দিয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, তাদের সফর দুই ‘ভ্রাতৃপ্রতিম’ দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নত ও জোরদার করার জন্য একটি পথ খুলে দিয়েছে—ভবিষ্যতে এই বন্ধন আরও দৃঢ় হবে বলেও তিনি আশা করেন।
এর আগে ২২ জুন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আমন্ত্রণে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের বিএনপির প্রতিনিধিদল পাঁচ দিনের জন্য চীন সফর করে।
বিএনপির প্রতিনিধিদলের অন্য আট সদস্য ছিলেন—বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার।
সফরকালে ফখরুল বলেন, বিএনপির প্রতিনিধিদল সিপিসির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং দ্বিপক্ষীয় বিষয় এবং সিপিসি ও বিএনপির মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে পাট চাষের জন্য জমির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক শূন্য ৫ লাখ হেক্টর। এ পরিমাণ জমিতে চাষাবাদের জন্য পাট বীজ প্রয়োজন ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টন।
সোমবার বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) কৃষি উইং আয়োজিত ‘বার্ষিক অভ্যন্তরীণ গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা।
তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে পাটের মোট উৎপাদন ১৫ লাখ মেট্রিক টন, পাটকাঠির মোট উৎপাদন ৩০ লাখ মেট্রিক টন এবং চারকোলের উৎপাদন ৬ লাখ মেট্রিক টন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘পাট নিয়ে অনেক কিছু করার আছে। পাটের সম্ভাবনা কোনো দিন শেষ হবে না। কাঁচা পাট নিয়ে অন্যান্য দেশ কীভাবে কাজ করছে তার ওপরেও মার্কেট রিসার্চে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘বদ্ধ চিন্তাধারা থেকে বের হয়ে বিজ্ঞানীদের বিশদভাবে কাজ করতে হবে। কারণ পাট নিয়ে অনেক কিছু করার আছে, পাটের সম্ভাবনা কোনো দিন শেষ হবে না। মার্কেট এবং বাস্তবতার নিরিখে গবেষণা করতে হবে। আমাদের সীমাবদ্ধ জমিতে কীভাবে পাটের উৎপাদনকে আরও বাড়ানো যায়, তা নিয়েও কাজ করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে বিজেআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. নার্গীস আক্তার বলেন, ‘পাট কৃষিজাত পণ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় চাষিরা কৃষিঋণের মতো পাটঋণ এবং পণ্য রপ্তানিতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। সরকার থেকে ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা পায় চারকোল রপ্তানিকারকরা। দেশে প্রায় ৫০টি চারকোলের কারখানা রয়েছে। বর্তমানে কিছু কারখানা বন্ধ আছে।’
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা অনুবিভাগ) মো. আবু জুবাইর হোসেন বাবলু, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজেআরআইয়ের প্রজনন বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম মোস্তফা এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজেআরআইয়ের জেনোম গবেষণা কেন্দ্রের সমন্বয়ক ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম মাহবুব আলী।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. বেগম সামিয়া সুলতানা, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল আমিন, কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক মো. মসীহুর রহমান, জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমির মহাপরিচালক মো. সাইফুল আজম খান, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৩৮৪১.৩৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা কমিটির ৭ম (সপ্তম) কর্পোরেশন সভা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৩৮৪১.৩৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিচালনা কমিটির ৭ম (সপ্তম) কর্পোরেশন সভা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এর প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর সংস্থার প্রতিনিধির সমন্বয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা কমিটির ২৫ (পঁচিশ) জন সদস্য আজ সোমবার নগর ভবনে উপর্যুক্ত সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সভার শুরুতে ০৫ মে ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ কর্পোরেশনের সভার কার্য বিবরণী দৃঢ়ীকরণ এবং বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়। পরবর্তীতে সভার আলোচ্য সূচি অনুযায়ী আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (অতি. দা.) জনাব আলী মনসুর। পরবর্তীতে, পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৩৮৪১.৩৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন প্রদান করেন।
বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ ও অনুমোদন প্রদান করায় পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এর প্রশাসক বলেন, “ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বাজেট কেবল গাণিতিক সংখ্যা নয়। এই বাজেট আমাদের কাছে সম্মানীত করদাতাদের আমানত। এই বাজেট সফলভাবে প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উপর নির্ভর করছে আমাদের সবার প্রিয় এই নগরীর ব্যবস্থাপনা এবং আমাদের দৈনন্দিন নাগরিক সমস্যার সমাধান।”
সভায় ১৯৯৮ সাল থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাসকারী নগরবাসীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও মাতৃত্বকালীন বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী ‘আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারী প্রকল্প-২ পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং বিদ্যমান প্রকল্পের আওতায় সেবা প্রদানকারী এনজিওসমূহের মধ্যে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
পরবর্তীতে, অর্থ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োজিত সাময়িক শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৬০০/- (ছয় শত) টাকা হতে ৮০০/- (আট শত) টাকা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, মন্ত্রীপাড়ায় অবস্থিত অস্থায়ী মসজিদটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক একটি তিনতলাবিশিষ্ট নান্দনিক মসজিদে রূপান্তরের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. জিল্লুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সচিব জনাব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামসহ সকল বিভাগীয়গণ উপস্থিত ছিলেন।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমে শেরপুর জেলার শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ঝিনাইগাতী উপজেলার ইউএনও জনাব মো. আশরাফুল আলম রাসেল।
জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের নির্ভুলতা, সময়ানুবর্তিতা ও সার্বিক দাপ্তরিক ব্যবস্থাপনায় অনন্য ভূমিকা রাখায় তাঁকে এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। সম্মাননা স্মারক ও সনদপত্র তুলে দেন শেরপুর এর জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ মাজিস্ট্রেট তরফদার মাহমুদুর রহমান।
পুরস্কার গ্রহণের পর অনুভূতি প্রকাশ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন,"এই স্বীকৃতি শুধু আমার একার নয়, এটি ঝিনাইগাতী উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কর্মী, গ্রাম পুলিশ এবং সহযোগী সব পক্ষের সম্মিলিত চেষ্টার ফল। আমরা চেষ্টা করেছি নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ রাখা, জনসচেতনতা তৈরি ও নিবন্ধন কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে। এই সম্মাননা আমাদের আরও অনুপ্রাণিত করবে জনসেবায় নতুন উদ্যমে কাজ করতে। আমি জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।”
তিনি আরও বলেন, “জন্ম ও মৃত্যুর মতো গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক তথ্যের সঠিক নিবন্ধন ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের অন্যতম ভিত্তি। তাই এই কাজকে আমি শুধু প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়, নাগরিক অধিকারের অংশ হিসেবেও দেখি।”
এছাড়াও একই কার্যক্রমে ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও একজন শ্রেষ্ঠ গ্রাম পুলিশকেও পুরস্কার প্রদান করা হয়। তাদের নিষ্ঠা, দায়িত্বশীলতা ও নিবন্ধন কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) ও গ্রাম পুলিশ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের বায়ুদূষণ রোধে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সোমবার (৩০ জুন) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে চীনের একদল বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা জানান, শীত আসার আগেই রাজধানীর সব কাঁচা ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার সংস্কারকাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ধুলা দূষণ কমাতে রাস্তায় মাটি ঢেকে দেওয়া ও পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ‘জিরো সয়েল’ নীতি কার্যকর, মাটি শক্তকরণ ও পানি ছিটানোর গাড়ি ব্যবহারের পরিকল্পনাও রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘শহুরে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ পুরনো ও উচ্চমাত্রার ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) পুরনো যানবাহন অপসারণ ও নতুন ২৫০টি পরিবেশবান্ধব যানবাহন যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া, নির্গমন মান বজায় রাখতে ১০টি স্বয়ংক্রিয় যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র স্থাপন করবে বিআরটিএ।’
দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের লক্ষ্যে চীনা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, ‘সঠিক তথ্য ও বিশ্লেষণ ছাড়া কার্যকর নীতিমালা তৈরি সম্ভব নয়। এজন্য একটি উন্নত বায়ু নির্গমন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা স্থাপন, বৈশ্বিক মান অনুসারে নির্গমন মান উন্নয়ন, স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও বর্জ্য ইনসিনারেশন প্ল্যান্ট চালু ও রান্নার জন্য এলপিজি ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা গ্রহণে কর প্রণোদনাও বিবেচনায় রয়েছে।’
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্পের আওতায় উচ্চ দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানে অব্যাহত নির্গমন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করবে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং দেশজুড়ে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
এদিকে, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) শহরে সড়কে বেড়া বসানো ও ৫০টি বৈদ্যুতিক যানবাহন চালুর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব পরিবহনব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে।
জাইকা সহায়তাপ্রাপ্ত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আটটি বাস্তবভিত্তিক বায়ু গুণমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, যা প্রমাণভিত্তিক নীতিনির্ধারণে সহায়ক হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি বিইএসটি প্রকল্পও বাস্তবায়িত হবে।
এ সময় চীনা বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা বাংলাদেশের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা প্রকাশ করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সরকারের উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট—পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা।’
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম, অতিরিক্ত সচিব মো: খায়রুল ইসলাম, নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অনুষদের নির্বাহী ডিন অধ্যাপক ইউ ঝাও, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নানজিং-হেলসিঙ্কি ইনস্টিটিউটের উপ-ডিন অধ্যাপক হাইকুন ওয়াং এবং বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক টেংইউ লিউ, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুদূষণ) মো. জিয়াউল হক প্রমুখ।
বৈঠকে জাতীয় নির্গমন ইনভেন্টরি ও রাসায়নিক বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়, যা দেশের বায়ুদূষণের উৎস চিহ্নিত করে বিজ্ঞানভিত্তিক টার্গেটেড হস্তক্ষেপের ভিত্তি তৈরি করবে।
মন্তব্য