পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে ভালো করলেও সরকারি মালিকানাধীন ছয়টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নেই। দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সব শেষ হিসাব বলছে, গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে এই ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা।
এই সময়ে বেসরকারি বেশ কিছু ব্যাংক তাদের খেলাপি ঋণ মোট ঋণের তিন শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে পারলেও সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএলের খেলাপি ঋণ মোট ঋণের ২০ শতাংশের বেশি। এর বাইরে আছে অবলোপন করা আরও সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা।
নানা সময় আলোচনা-সমালোচনার পর টাকা উদ্ধারে ব্যাংকগুলো প্রায়ই আদায় সপ্তাহ বা আদায় মাস ঘোষণা করে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। করোনাকালে যখন নিয়মিত ঋণ পরিশোধে নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে, তখন খেলাপি হয়ে যাওয়া অর্থ আদায় আরও কঠিন হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মার্চ শেষে সোনালী, জনতা, রূপালী, অগ্রণী, বেসিক ও বিডিবিএল এ ছয় ব্যাংক মোট ২ লাখ ৭ হাজার ৭৭১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এ ঋণের ৪৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা অনাদায়ী অর্থাৎ খেলাপি। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২০ দশমিক ৯১ শতাংশ।
সুশাসন, বিধিবিধান মেনে চলা হলে পরিস্থিতির যে উন্নতি সম্ভব, সেটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের হিসাবেই স্পষ্ট। এই ৩১টি ব্যাংকে বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ। যেখানে পুঁজিবাজারের বাইরের ব্যাংকগুলোতে এই হার ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ।
ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ছয় ব্যাংক ২ লাখ ২ হাজার ৩৩০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৪২ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। মোট ঋণের ২০ দশমিক ৮৯ শতাংশ ছিল খেলাপি।
মূলধন ঘাটতির শীর্ষেও রয়েছে এসব ব্যাংক। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ২৪ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে ১১টি ব্যাংক। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর ঘাটতিই সবচেয়ে বেশি।
অবলোপন করা ঋণ থেকেও তেমন আদায় করতে পারেনি এসব ব্যাংক।
২০২০ সালে অবলোপনের মাধ্যমে ৬ হাজার ৫৯০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ ব্যাংকের ব্যালান্স শিট বা স্থিতিপত্র থেকে বাদ দেয়া হয়। এর মধ্যে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অবলোপন করে ১ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা বা মোটের ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক অবলোপন করা ঋণ থেকে আদায় কমেছে মাত্র ১২ কোটি ৭৪ লাখ টাকার মতো, যা শতকরা হিসেবে দশমিক ৯৩ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আর্থিক কেলেঙ্কারি, নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে। এই বিশাল অর্থ উদ্ধারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি ব্যাংকগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। ঋণের গুণগত মান, খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি, পরিচালকদের বেপরোয়া ঋণ গ্রহণ এসব সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে। এসব ব্যাংকের তদারকি কার্যক্রম বাড়ানো প্রয়োজন। তবে শুধু তদারকি বাড়ালে হবে না, অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যাংকার, গ্রাহক ও প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারের উচিত রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর দক্ষতা বাড়ানো ও খেলাপি ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা করা। একই সঙ্গে যারা ব্যর্থ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া।’
শীর্ষে জনতা
ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণে শীর্ষ অবস্থানে এটি।
মার্চ শেষে ব্যাংকটির ৫৭ হাজার ৮২ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি ১৩ হাজার ৫৭০ কোটি ৮১ লাখ টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ১২ হাজার ৮৮৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। তিন মাসে ব্যাংকটির আরও ৬৮৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
মার্চে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি দাঁড়ায় ৪১৭ কোটি টাকা, যা তিন মাস আগে ছিল ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণে শীর্ষ অবস্থানে জনতা ব্যাংক লিমিটেড। ফাইল ছবি
ঋণের অর্ধেকের বেশি আদায় করতে পারছে না বেসিক
আবদুল হাই বাচ্চু চেয়ারম্যান থাকার আগে পর্যন্ত সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে ছিল এই কোম্পানিটি। তবে ঋণ কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত ব্যাংকটি এতটাই বিপাকে পড়েছে যে কর্মীদের বেতন কমিয়ে খরচ কমাতে চাইছে।
সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে শতকরা হিসাবে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে এই ব্যাংকটি। মার্চ শেষে এদের ঋণ বিতরণ ১৪ হাজার ৬০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৮ হাজার ৮০ কোটি ৭২ লাখ, যা বিতরণকৃত ঋণের ৫৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৭ হাজার ৫০২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। তিন মাসে ব্যাংকটির ৫১৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ১ হাজার ৭২ কোটি টাকা। তবে এই দিক থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আগের প্রান্তিকের চেয়ে এটি ২৮ দশমিক ১৫ শতাংশ কম।
বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুর রহমান জানান, ‘আমরা খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছি। মূলধন ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে এটি।’
২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের বড় অংশ এখনও আদায় করা সম্ভব হয়নি। এর প্রায় ৯০ শতাংশই আদায়যোগ্য নয়।
এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকটি থেকে অন্তত ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুসহ ব্যাংকটির আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও বোর্ড সদস্য এতে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে।
এক-তৃতীয়াংশ ঋণ ফিরে পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় বিডিবিএল
মার্চ শেষে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৬৫৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। যা বিতরণকৃত ঋণের ৩৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৫৯৫ কোটি ৬ লাখ টাকা। তিন মাসে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬৩ কোটি ৮ লাখ টাকা।
বিডিবিএলের কাছে জমা আছে গ্রাহকদের ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার আমানত।
খেলাপি আকাশচুক্তি, মূলধন ঘাটতি সবচেয়ে বেশি সোনালীর
ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি সবচেয়ে বেশি আমানতের এই ব্যাংকটির। সবশেষ হিসাব অনুযায়ী ব্যাংকটির ঘাটতি ৩ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ডিসেম্বর শেষে ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৬৩ কোটি টাকা।
তবে খেলাপি ঋণের দিক দিয়ে কিছুটা উন্নতি করতে পেরেছে ব্যাংকটি। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকটি খেলাপি ঋণ থেকে আদায় করেছে ৩২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
বর্তমানে ব্যাংকটির খেলাপি ১০ হাজার ৬৮৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ।
ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ১০ হাজার ৭২১ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। মার্চ শেষে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ ৫৩ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা।
খেলাপি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে অগ্রণীতে
ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৫৫৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। তিন মাসে খেলাপি বেড়েছে ১ হাজার ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ অগ্রণী ব্যাংক। মার্চ শেষে মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ২ হাজার ৯২১ কোটি ৯২ লাখ টাকা ।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী এ ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ১ লাখ ৯০৩ কোটি টাকা। মার্চ শেষে অগ্রণীর ঋণ বিতরণ ৪৭ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৬ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রূপালী ব্যাংকের কী অবস্থা
ব্যাংকটির মোট ঋণ ৩২ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। মার্চ শেষে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৮৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
তবে ডিসেম্বরের চেয়ে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তখন ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ ছিল ৩ হাজার ৯৭২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ ছিল খেলাপি। তিন মাসে আদায় ৮৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
রূপালীর মূলধন ঘাটতি ৭৬১ কোটি ৯১ লাখ টাকা ।
আরও পড়ুন:২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্ক ১৩,৫০০ কোটি টাকার নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫ সময়কালে এই ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি আমানত সংগ্রহে ব্যাংকটির টেকসইতার প্রতিফলন।
বিগত কয়েক বছর ধরে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের এই লক্ষণীয় ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ব্যাংকটির ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্কের এমন মাইলফলক ব্যাংকিং খাতে আমানত সংগ্রহে নতুন বেঞ্চমার্ক তৈরি করে চলেছে।
এই সাফল্য উদ্যাপনের লক্ষ্যে ব্যাংকটি ১৩ অক্টোবর ২০২৫ ঢাকায় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আয়োজনে ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্কের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগ দেন ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও তারেক রেফাত উল্লাহ খান এবং ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড অব ব্রাঞ্চ ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক শেখ মোহাম্মদ আশফাক। এ সময় ব্র্যাংকটির ব্রাঞ্চ ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের রিজিওনাল হেড, ক্লাস্টার হেড এবং ব্রাঞ্চ ম্যানেজারসহ উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র জোনাল হেড (নর্থ) এ. কে. এম. তারেক এবং সিনিয়র জোনাল হেড (সাউথ) তাহের হাসান আল মামুন।
ব্যাংকের এমন সাফল্যে গ্রাহক আস্থা এবং গ্রাহকদের সাথে সুসম্পর্কের বিষয়টির ওপর জোর দিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও তারেক রেফাত উল্লাহ খান বলেন, “গ্রাহকের সাথে আস্থার সম্পর্ককে আমরা আমানত সংগ্রহে সবচেয়ে বড় দক্ষতা হিসেবে দেখি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ২০২৫ সালের বাকি সময়ে এবং সামনের বছরগুলোতেও ডিপোজিট প্রবৃদ্ধিতে আমাদের এমন সাফল্য অব্যাহত থাকবে।”
ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি.:
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অর্থায়নে অগ্রাধিকার দেয়ার ভিশন নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি. ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করে, যা এখন পর্যন্ত দেশের অন্যতম দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী একটি ব্যাংক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ‘BRACBANK’ প্রতীকে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন হয়। ২৯৮টি শাখা ও উপশাখা, ৩৩০টি এটিএম, ৪৪৬টি এসএমই ইউনিট অফিস, ১,১১৯টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং দশ হাজারেরও বেশি মানুষের বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক কর্পোরেট ও রিটেইল সেগমেন্টেও সার্ভিস দিয়ে আসছে। ব্যাংকটি দৃঢ় ও শক্তিশালী আর্থিক পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে এখন সকল প্রধান প্রধান মাপকাঠিতেই ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষে অবস্থান করছে। বিশ লাখেরও বেশি গ্রাহক নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক বিগত ২৪ বছরেই দেশের সবচেয়ে বৃহৎ জামানতবিহীন এসএমই অর্থায়নকারী ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও নিয়মানুবর্তিতায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সুইসকন্টাক্ট-এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। যার লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশকে আরো শক্তিশালী করা এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা।
গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিডা সম্মেলন কক্ষে ওই সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে বলা হয়, চুক্তির আওতায় তিনটি মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- প্রমাণনির্ভর বিনিয়োগ পরিবেশ বিশ্লেষণ ও সমন্বয় জোরদার, বিডাকে একটি বিশ্বমানের বিনিয়োগ প্রচার সংস্থা হিসেবে শক্তিশালী করা ও খাতভিত্তিক বিনিয়োগ সম্প্রসারণ ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ উন্নয়ন।
অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়, বিডা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগ নীতিমালা সংস্কার, সেবার ডিজিটালাইজেশন এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় জোরদারে কাজ করছে। সুইসকন্টাক্ট ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি প্রকল্পের আওতায় বিডার সহযোগিতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন পৌরসভায় ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করেছে।
বিডার জনসংযোগ দপ্তর জানায়, আগের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিডা ও সুইসকন্টাক্ট এখন নতুন একটি উদ্যোগ গ্রহণে সম্মত হয়েছে, যা বিডার ‘হিট ম্যাপ’ অনুযায়ী বিভিন্ন খাতভিত্তিক বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক হবে।
বিডা চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী) চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গঠনে সরকার নানামুখী সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সুইসকন্টাক্টের সঙ্গে এই অংশীদারিত্ব আমাদের ‘ইনভেস্টর-ফার্স্ট’ মডেল বাস্তবায়নের পথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমাদের লক্ষ্য হলো বিনিয়োগকারীরা যেন বাংলাদেশকে দক্ষ, সেবাবান্ধব ও সম্ভাবনাময় গন্তব্য হিসেবে অনুভব করেন।
বিডা জানায়, সুইসকন্টাক্ট দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের টেকসই উন্নয়ন, বাণিজ্য প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা শক্তিশালীকরণে কাজ করে আসছে। সংস্থাটি বিশ্বাস করে, এই সহযোগিতা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, বিশেষ করে তরুণ ও নারীদের জন্য।
বিডা ও সুইসকন্টাক্ট উভয় প্রতিষ্ঠানই আশা প্রকাশ করেছে, এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ আরও উন্নত হবে, মানসম্পন্ন বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং টেকসই শিল্পায়নের মাধ্যমে অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।
বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) ১৮তম নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দিয়েছেন মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন।
তিনি প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন এবং মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমানের স্থলাভিষিক্ত হন।
বেপজায় যোগদানের আগে মোয়াজ্জেম হোসেন সপ্তম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) এবং বরিশালে এরিয়া কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
গতকাল বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তিনি ১৯৯২ সালের ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরে কমিশন লাভ করেন। তার দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন কমান্ড, স্টাফ এবং নির্দেশনামূলক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ব্যতিক্রমধর্মী নেতৃত্ব ও পেশাদারিত্ব প্রদর্শন করেছেন।
মোয়াজ্জেম হোসেন দুইটি আর্টিলারি ব্রিগেড ও দুইটি আর্টিলারি রেজিমেন্টের কমান্ড করেছেন। তিনি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) প্লাটুন কমান্ডার, সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরে একটি ডিভিশনের কর্নেল স্টাফ এবং পরিচালক (বাজেট) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি রাজধানীর মিরপুরের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) থেকে স্নাতক এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি) থেকে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স (এনডিসি) ও আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স (এএফডব্লিউসি) সম্পন্ন করেছেন।
এছাড়া তিনি বিদেশে উন্নত সামরিক প্রশিক্ষণ ও মহড়ায় অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে চীনের নানজিং আর্টিলারি একাডেমি ও পাকিস্তানের স্কুল অব আর্টিলারি রয়েছে।
তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) থেকে এমফিল সম্পন্ন করেছেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে পিএইচডি করছেন।
বাংলাদেশ টেকসই পোশাক উৎপাদনে বৈশ্বিক নেতৃত্ব আরও সুদৃঢ় করেছে, কারণ নতুন করে পাঁচটি কারখানা লিড (লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন) সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে।
সর্বশেষ এই সংযোজনের ফলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সর্বাধিক ২৬৮টি লিড-সার্টিফায়েড কারখানার অধিকারী। এর মধ্যে ১১৪টি পেয়েছে প্লাটিনাম ও ১৩৫টি পেয়েছে গোল্ড সার্টিফিকেশন।
এই পাঁচটি নতুন কারখানাসহ বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি সর্বোচ্চ রেটপ্রাপ্ত লিড সার্টিফায়েড কারখানার মধ্যে ৬৮টি বাংলাদেশে অবস্থিত, যা দেশের পোশাক শিল্পের পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ও জ্বালানি দক্ষতার ধারাবাহিক অঙ্গীকারের প্রতিফলন।
নতুন সার্টিফিকেশন পাওয়া পাঁচটি কারখানা হলো- পাকিজা নিট কম্পোজিট লিমিটেড, সাভার, ঢাকা ঙ+গ: এক্সিস্টিং বিল্ডিং ৪.১ ক্যাটাগরিতে ৮৭ পয়েন্ট পেয়ে লিড প্লাটিনাম সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে; ফ্যাশন পালস লিমিটেড, বিসিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট, ঢাকা বিডি+সি: নিউ কন্সট্রাকশন ভি৮ ক্যাটাগরিতে ৮৭ পয়েন্ট পেয়ে লিড প্লাটিনাম সার্টিফিকেশন পেয়েছে; গাভা প্রাইভেট লিমিটেড, প্লট ১১৪১২০, ঢাকা ইউ+ঈ: নিউ কন্সট্রাকশন ভি৪ ক্যাটাগরিতে ৮৭ পয়েন্টে লিড প্লাটিনাম সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে; ভিজুয়াল নিটওয়্যারস লিমিটেড, চট্টগ্রাম ঙ+গ: এক্সিস্টিং বিল্ডিং ভি৪.১ ক্যাটাগরিতে ৭৬ পয়েন্ট পেয়ে লিড গোল্ড সার্টিফিকেশন পেয়েছে; এবং ট্যালিসম্যান পারফরম্যান্স লিমিটেড, সিইপিজেড, চট্টগ্রাম ইউ+ঈ: নিউ কন্সট্রাকশন ভি৪ ক্যাটাগরিতে ৬২ পয়েন্ট পেয়ে লিড গোল্ড সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে।
এই নতুন সংযোজনগুলো বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের টেকসই উৎপাদন এবং বৈশ্বিক সবুজ রূপান্তরের ধারাবাহিক অগ্রগতিকে আরো জোরালোভাবে তুলে ধরেছে। গত এক দশকে দেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পরিবেশবান্ধব মানদণ্ড গ্রহণের মাধ্যমে এক ধরনের সবুজ বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছে।
লিড-সার্টিফায়েড কারখানাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইইউজিবিসি)-এর কঠোর টেকসই মানদণ্ড অনুসরণ করে, যেখানে জ্বালানি ও পানির দক্ষ ব্যবহার, কার্বন নির্গমন হ্রাস, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
শিল্প বিশেষজ্ঞরা এই সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর ভূমিকা এবং সবুজ শিল্পায়নে সরকারের সহায়ক নীতিমালাকে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সবুজ কারখানার সংখ্যা শুধু দেশকে একটি দায়িত্বশীল উৎপাদন গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে না, বরং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিল্প ভবিষ্যতের লক্ষ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বস্ত্র ও পাট, বাণিজ্য এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, প্রায় ১০০ কোটি টাকার ফান্ড দিয়ে জেডিপিসির মাধ্যমে প্রায় ১০০৬ জন উদ্যোক্তার অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে চেষ্টা করছি বাজারে পাটের একটা সাংস্কৃতিক পরিবর্তন যাতে আনতে পারি।
অতীতের মতো আমরা কী করে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে পারি। পাটের স্কোয়ার মিটার, মাইলেজ, এর পরিধি বাড়াতে গবেষণার দরকার। র্যাপিং (মোড়ক) উপকরণ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পাটের বিশাল বাজার আছে।
বুধবার রাজধানীর বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের উদ্যোগে টেকসই উন্নয়নে পাটের ভূমিকাবিষয়ক সেমিনার ‘হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও ফাতেমা আহমেদ ট্রাস্ট লেকচার-২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেছেন।
উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ‘ফিউচার ক্যাপ্টেন’ উল্লেখ করে বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, আপনারা অনেক জায়গায় রিফাইন্ড ক্যারেক্টার দেখিয়েছেন। বলেছেন মানি না। পাটব্যাগের জন্য কালচারাল চেঞ্জ (সাংস্কৃতিক পরিবর্তন) দরকার আমাদের, কাউকে বাধ্য করে নয়। পাটপণ্য ইনোভেশন ও খরচ কমিয়ে এর বাণিজ্যিক সফলতা তৈরি করতে সক্ষমতা বাড়াতে হবে যা প্লাস্টিককে হারাতে পারে। এজন্য নীতি, পদক্ষেপ ও প্রচেষ্টার সমন্বিত উদ্যোগ রাখতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর মাধ্যমে শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ে। আপনারা যেখানে কাজ করবেন সে প্রতিষ্ঠানকে শ্রেষ্ঠ করতে কাজ করতে হবে। শ্রেষ্ঠত্ব তৈরি করতে হবে।
বক্তব্য শেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের (বুটেক্স) উপাচার্য প্রফেসর ড. ইঞ্জি. মো. জুলহাস উদ্দিন প্রধান অতিথি উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন-এর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম দেশের অর্থনীতিকে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব করতে পাট চাষ ও এর রপ্তানি এবং এর ভবিষ্যতের নানা দিক উপস্থাপন করেন। সেইসাথে আগামী বাণিজ্য মেলায় একমাত্র পাটব্যাগ প্রচলনের দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক রাশিদা আখতার খানম, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর মহাপরিচালক ড. নারগিস আখতার, আইইবির ভাইস-প্রেসিডেন্ট ইঞ্জি. খান মঞ্জুর মোরশেদ, আইটিইটির আহ্বায়ক ইঞ্জি. আহসানুল করিম কায়সার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, সরকার ভিসা ফি প্রদানের প্রক্রিয়াকে ডিজিটালাইজড এবং সামগ্রিক ভিসা নীতিমালা সংশোধনে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ভিসা ফি প্রদানের প্রক্রিয়াকে ডিজিটাল করার কাজ চলছে। পরিকল্পিত এই সংস্কারের ফলে আবেদনকারীরা ঘরে বসেই অনলাইনে ফি পরিশোধ করতে পারবেন। ফলে ফি প্রদানের জন্য শারীরিকভাবে উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন হবে না।’
বুধবার রাজধানীতে বিডার মাল্টিপারপাস মিলনায়তনে ‘ওয়ার্ক পারমিট ও সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স প্রসেস’ বিষয়ক এক কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, ‘সরকার সামগ্রিক ভিসা নীতিমালার ক্ষেত্রেও বড় পরিসরে সংস্কারের কাজ করছে।
এই বিস্তৃত নীতি সংস্কারের লক্ষ্য হলো বর্তমান ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের বিদ্যমান নানা সমস্যার সমাধান করা।’
তিনি বলেন, ‘অনলাইন সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে। আগে যেখানে ৩৪টি নথি জমা দিতে হতো, সেখানে এখন তা কমিয়ে ১১টিতে আনা হয়েছে। এটি একটি বড় অর্জন, কারণ অতীতে বিভিন্ন দিকনির্দেশনার কারণে নানা দপ্তর থেকে একাধিক নথি চাওয়া হতো।’
বিডা চেয়ারম্যান জোর দিয়ে বলেন, ‘বিডাসহ সরকারের সব কার্যক্রমে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে কোনো আপসের সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন কিছু করতে চাই না যা জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বা আপসের সম্ভাবনা তৈরি করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা বিডা- সকলের লক্ষ্য এক এবং আমরা একই উদ্দেশে কাজ করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য একটাই- সব সংস্থা যেন সমন্বিতভাবে কাজ করে সমস্যা সমাধান করে এবং জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়।’
কর্মশালায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিডা তাদের নিজ নিজ উপস্থাপনা তুলে ধরেছে।
এতে অন্যান্যের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. দেলোয়ার হোসেন ও বিডা মহাপরিচালক মো. আরিফুল হক বক্তৃতা দেন।
আরিফুল হক জানান, কর্মশালায় এসবি, এনএসআই, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সংস্থাগুলোর নির্দিষ্ট তথ্য ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
তিনি বলেন, ‘সব সংস্থা একই পরিবারের সদস্য হিসেবে একই উদ্দেশে কাজ করছে।’
আরিফুল হক মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন তাদের অভিজ্ঞতা ও সমস্যা নিয়মিতভাবে জানান। কারণ এসব তথ্যই পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া সহজ করবে।
শরীয়াহ্ ভিত্তিক ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি. আমদানি, রপ্তানী ও রেমিটেন্স বৃদ্ধিকল্পে গ্রাহকদেরকে সকল প্রকার সহযোগিতা করছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন হয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ব্যাংকের ১৭৪ টি শাখা ও উপ-শাখায় এ সেবা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছে।
মন্তব্য