‘কত জাগায় গেলাম। তেল পাই নে। বাজারে খুব বেশি দাম, তেল কিনতি গিলি আর কিছু কিনতি পারি নে। তেল থাকতিও কয় তেল নাই। গরীব মানুষের মরন ছাড়া উপায় নেই।’
আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বললেন মধ্যবয়সী মঞ্জুরানী সরকার। প্রখর রোদের মধ্যে সকাল থেকে দুপুর টিসিবির ট্রাকের জন্য এখান থেকে সেখানে পইপই করে ঘুরেছেন। কিন্তু কোথাও মেলেনি না তেল।
নিউজবাংলাকে মঞ্জুরানী জানান, সকাল ১০টার দিকে হাজীপাড়ার বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে রামপুরা স্পটে গিয়ে দেখেন আসেনি টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর সেখান থেকে পায়ে হেটে রওনা হন মালিবাগের দিকে। সেখানে আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও সুখবর মেলনি। ওই স্পটেও যায়নি টিসিবির ট্রাক।
তারপরে মৌচাক মোড়ে গিয়ে মঞ্জুরানী টিসিবির গাড়ি পেয়েছেন বটে, কিন্তু তেল পাননি। তার অভিযোগ, তেলের কার্টন ট্রাকে রেখেও বলা হচ্ছে তেল নেই।
এরপর রামপুরা যান মঞ্জুরানী। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন পণ্যের জন্য দীর্ঘ লাইন। অন্তত ৫০ জনের পেছনে তার অবস্থান। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে জানতে পারেন তেল নেই। সচিবালয়ের সামনে আব্দুল গনি রোডের স্পটেও যান মঞ্জুরানি। সেখানেও তেল পাননি তিনি।
টিসিবির প্রত্যেকটি বিক্রয় কেন্দ্রেই দেখা গেছে, ভোজ্য তেলের জন্য হাহাকার। ট্রাক এসে দাঁড়ানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে সব পণ্য। সবার আগে শেষ হচ্ছে ভোজ্যতেল।
চলমান শাটডাউনে ভোক্তাদের কম দামে পণ্য সরবরাহ করতে সারা দেশে আবারও ‘ট্রাক সেল’ চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি)।
মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, পণ্য কিনতে ছিল ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন। মূলত খোলা ট্রাকে বিক্রি করা এসব খাদ্যপণ্য। স্বল্পমূল্যে খাদ্যপণ্য পেতে ভিড় করেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। ক্রেতার চাহিদা বেশি থাকায় অনেক স্থানে দ্রুত বিক্রি শেষ হয়েছে।
স্পট রামপুরা
সকাল ১১টার পর পণ্য নিয়ে রামপুরা মোড়ে দাঁড়ায় টিসিবির ট্রাক। তবে, আগ থেকেই সেখানে অপেক্ষামান ছিল শতাধিক নারী পুরুষ। একটু কম টাকায় তেল, চিনি এবং মশুর ডালের জন্যই এই অপেক্ষা।
অপেক্ষমান খাদিজা বেগম বলছিলেন, ‘সকাল ৯টা থেকে দাঁড়িয়ে থেকে এখন ১২টা বাজে। এখনও কিছু নিতে পারি নাই। আরও ৬-৭ জনের পর আমি পাব। সোমবারও ১০টা থেকে ১ টা পর্যন্ত লাইন দিয়ে তেল কিনতে পারিনি। ডাল আর চিনি নিয়ে ফিরে গেছি। এজন্য আজ আবার তেল কেনার জন্য লাইনে দাঁড়ায়ছি।’
করিম শেখ জানান, জীবনে কোনো দিন এভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে এভাবে পণ্য কেনননি তিনি। করোনায় আয়ের পথ বন্ধ, তাই একটু কম টাকায় পণ্য কেনার জন্য তাকে টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে।
রিকশাচালক জসিম জানান, রিকশা চালানো বাদ দিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করছি। এই সময় ভাড়া মারলেও কিছু টাকা আসতো। কিন্তু বাজারে তেলের যে দাম, তাতে কেনা মুশকিল। তাই এখান থেকেই কিনতে হবে।
রামপুরা মোড়ে প্রতিদিন সকালে দাঁড়ায় টিসিবির ট্রাক। টিসিবির গুদাম থেকে পণ্য নেবার ক্ষেত্রে লম্বা সিরিয়াল থাকায় দেরি হয় বলে জানান তিনি।
স্পট হাতিরঝিল
হাতিলঝিল মোড়ে টিসিবির পণ্যের ট্রাকেও দেখা যায় দীর্ঘ লাইন। করোনা সংক্রমণে মানুষের চলাচল কম থাকলেও টিসিবির পণ্য কিনতে দেখা যায় নিম্নবিত্তদের লম্বা লাইন।
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা রুকসানা জানান, এক লিটার তেল এইখান থেকে কিনলে ১০০ টাকা। কিন্তু বাজার থেকে নিলে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। বলেন, নিম্নবিত্তদের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে নেয়া ছাড়া উপায় নেই।
প্রখর রোদ মাথায় করে দুই ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন বৃদ্ধ রহিম শেখ। বলেন, ‘আয় নাই। কবে আবার আয় করতে পারব জানি না। তাই সীমিত টাকার মধ্যে টিসিবি থেকে পণ্য কেনার বিকল্প নেই।’
লাইনে মধ্যবিত্ত শ্রেণিও
শুধু যে নিম্নবিত্ত শ্রেণিই টিসিবির পণ্যের লাইনে তা নয়। মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকেই এখন দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে কিনছেন পণ্য। এমনটা আগে খুব বেশি দেখা যায়নি।
রামপুরা মোড়ে লাইনে দাঁড়ানো তসলিম খান বলেন, ‘কখনও এমনভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে হবে চিন্তায় ছিল না। করোনায় ব্যবসা শেষ, অনেক টাকা লোকসান দিয়ে এখন নিঃস্ব বলা যায়। তাই কীভাবে কম টাকায় বাঁচা যায় সেই চেষ্টা করছি।’
অনেকেই লাইনে না দাঁড়িয়ে পাঠিয়েছেন বাসার কাজের বুয়াকে। অনেকেই আবার অফিসের পিয়ন অথবা নিম্নস্তরের কর্মচারীকে পাঠিয়ে কিনছে পণ্য। লজ্জায় লাইনে দাঁড়াতে পারছেন না, আবার সংসার চালানোর মতো অবস্থাও নেই। এমন অবস্থায় লোক মারফত কেনা ছাড়া বিকল্প নেই।
টিসিবির ডিলার রফিকুল ইসলাম জানান, টিসিবির পণ্যের চাহিদা এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। নতুন নতুন মুখ দেখা যাচ্ছে, যারা কখনো লাইনে দাঁড়ায়নি।
তিনি বলেন, তেলের চাহিদা বেশি। দুই থেকে আড়াই ঘণ্টাতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে সব পণ্য।
নেই স্বাস্থ্যবিধি
লকডাউনের সময় ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে যেসব এলাকায় টিসিবির ট্রাক এসেছে সেখানেই ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। ক্রেতার চাহিদা বেশি থাকায় এসব পণ্য কেনার সময় করোনা সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব মানেননি অনেকে। বেশির ভাগই পরেননি মাস্ক। সামাজিক দূরত্ব তো দূরের কথা।
রামপুরার ডিআইটি রোডে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই পণ্যের জন্য সবাই গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়ান। কেউ কেউ সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানতে চাইলেও ভিড়ের কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।
একই এলাকার হাতিরঝিলের মোড়েও দেখা গেছে লম্বা লাইন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে কেউ কেউ রাস্তার ধারে বসে পড়েছেন। এখানেও অনেকের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।
স্পটে ট্রাক আসতে দেরি কেন
বেশির ভাগ স্পটেই টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে টিসিবির মুখপাত্র মো. হুমায়ুন কবির জানালেন, একদিন আগে ডিলারদের টাকা জমা দিতে হয়। কিন্তু গত রোববার ব্যাংক খোলা না থাকায় রাজধানীতে ৮০টি ট্রাকের পরিবর্তে ৬০টি ট্রাক বের করা হয়। সেজন্য রাজধানীর কিছু এলাকা বাদ পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাড়তি চাহিদা বিবেচনা করে আগের চেয়ে বেশি পণ্য দেয়া হয়েছে। ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ আমাদের লক্ষ্য। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে বিপণন করা যায় সে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’
একাধিক ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিসিবির গুদাম থেকে পণ্য নেয়ার জন্য লম্বা সিরিয়াল থাকে। এজন্য পণ্য ছাড় করে স্পটে যেতে দেরি হয়।
ট্রাক ও পণ্য বরাদ্দ বাড়িয়েছে টিসিবি
৫ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম। দেশব্যাপী ৫০টি ট্রাক বাড়িয়ে ৪৫০ জন ডিলারের মাধ্যমে মহানগরী, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের ভোক্তারা পাচ্ছে টিসিবির পণ্য।
টিসিবির বিক্রি করা পণ্যের তালিকায় রয়েছে ভোজ্যতেল, চিনি এবং মশুর ডাল। ১০০ টাকা লিটারে সয়াবিন, ৫৫ টাকা কেজি দরে চিনি এবং মশুর ডাল বিক্রি করছে টিসিবি। দেখা যাচ্ছে, বাজার মূল্যের চেয়ে পণ্যভেদে দামের পার্থক্য ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
ট্রাকপ্রতি চিনি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫০০ থেকে ৮০০ কেজি, মশুর ডাল ৩০০ থেকে ৬০০ কেজি এবং সয়াবিন তেল দেয়া হচ্ছে ৮০০ থেকে ১২০০ লিটার পর্যন্ত।
একজন ক্রেতা একবারে দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লিটার তেল, দুই কেজি চিনি ও দুই থেকে চার কেজি চিনি কিনতে পারবেন।
ক্রেতার সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে ভোজ্যতেল। কারণ খোলা বাজারের চেয়ে টিসিবির দামের পার্থক্য অন্তত ৫০ টাকা।
টিসিবির পণ্যের এই বিক্রি কার্যক্রম চলবে আগামী ২৯ জুলাই পর্যন্ত।
আরও পড়ুন:নেত্রকোনা জেলা সদরের মোক্তারপাড়া মাঠে আয়োজিত এক বিশাল গনসমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমীর (শায়েখে চরমোনাই) মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম প্রধান অতিথির হিসাবে উপস্থিত ছিলেন । প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশব্যাপী চাাঁদাবাজি, লুটপাট, দখলবাজি, জুলুম, অত্যাচার-নিপীড়নের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এই বাংলাদেশ দেখার জন্য আমরা রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়িনাই। এমন কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান নাই, যা দখল করা হয়নি। বিচারালয়গুলোকেও দখল করা হয়েছে। এই বাংলাদেশ দেখার জন্য মুগ্ধ জীবন দেয় নাই, আবু সাঈদ তার বুক পেতে দেয় নাই। বাংলাদেশে আমরা আর চাাঁদাবাজ, জুলমবাজ ও দখলবাজ দেখতে চাই না। যদি শেখ হাসিনার বুলেটের সামনে, ট্যাঙ্কের সামনে বুক পেতে দিতে পারি, তাহলে আজকেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেনো বুক পেতে দিতে পারবো না? যদি শেখ হাসিনার জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারি, তাহলে আজকেও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কেনো কথা বলবো না? তিনি আরও বলেন, মুসলিম লীগ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসন দেখেছেন। তাদের শাসনে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এর মূল কারণ খুঁজতে হবে। দেশ, দল ও নেতা পরিবর্তন করে শান্তি আসবে না, শান্তি তখনই আসবে, যখন আমরা নীতি আদর্শের পরিবর্তন আনতে পারবো। প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার, গণহত্যার বিচার, সারা দেশে খুন, লুণ্ঠন ও চাঁদাবাজি বন্ধ এবং পিআর পদ্ধতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ইসলাম বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর জেলা কমিটি এ সমাবেশের আয়োজন করে। মুফতি নুরুল ইসলাম হাকিমীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা ওয়ালীউল্লাহ্ এবং মুফতি ওমর ফারুক ওফার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন: জতীয় শিক্ষক ফোরামের জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা জসিম উদ্দিন পাঠান, ইসলামী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট এনামূল হক মুর্শেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবু সায়েম, সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাসুম মোস্তফা,জামায়েতে ইসলামীর জেলা সেক্রেটারী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা মামুনুর রশিদ রব্বানী, মুফতি তাজুল ইসলাম কাশেমী, মুফতি ওয়ালী উল্লাহ প্রমুখ। সমাবেশে শায়েখে চরমনোই সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম নেত্রকোনার পাঁচটি আসনের জন্য দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত প্রার্থীরা হলেন: নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) আসনে মাওলানা মামুনুর রশিদ রব্বানী, নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনে হযরত মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম, নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনে জাকির হোসেন সুলতান, নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) আসনে হাফেজ মাওলানা মুখলেছুর রহমান ও নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনে মুফতি নূরুল ইসলাম হাকিমী।
বাজিতপুর থেকে নিখোঁজের পাঁচ দিন পর ভৈরবে মেঘনা নদী থেকে রাকিব (২৭) নামের এক যুবকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ থানা পুলিশ।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) ভৈরবের লুন্দিয়া এলাকায় নদীতে মরদেহটি ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে ভৈরব নৌ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহতের স্বজনরা জানান, গত ১০ আগস্ট বিকেলে রাকিব বাড়ি থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে একই উপজেলার কুকরাই গ্রামের বন্ধু শাওনের বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হন। এরপর থেকে তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও না পাওয়ায় নিহতের ভাই রিয়াজ মিয়া বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বাজিতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরবর্তীতে ভৈরবের মেঘনায় লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে তাকে সনাক্ত করি।
এ বিষয়ে ভৈরব নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, লুন্দিয়া এলাকা থেকে রাকিবের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা নদীতে ফেলে দিয়েছে। মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে হত্যাসহ ডাকাতি মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী গোলাম হোসেন মিয়া (৩৭) কে গ্রেপ্তার করেছে সিপিসি-২, র্যাব-১৪, ভৈরব ক্যাম্প।
সে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার কালিপুর মধ্যপাড়ার আব্দুর রহিমের ছেলে।
শুক্রবার দুপুরের দিকে শহরের কালিপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জানা যায়, সিপিসি-২, র্যাব-১৪, ভৈরব ক্যাম্প এর আভিযানিক দল নরসিংদী জেলার বেলাবো থানা এলাকায় সিএনজি ডাকাতির পর সিএনজি ড্রাইভারকে হত্যা করে লাশ গুমের ঘটনায় নরসিংদীর বেলাবো থানার মামলা নং-০১(০১)১৫, ধারা-৩৯৬/২০১ এর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী গোলাম হোসেন মিয়াকে শুক্রবার শহরের কালিপুর মধ্যপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ভৈরব র্যাব ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মুহিত কবির জানান, হত্যাসহ ডাকাতি মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী গোলাম হোসেন মিয়াকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামে ১৬টি নদ-নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেলেও শুক্রবার থেকে কমতে শুরু করেছে পানি। ফলে কিছুটা স্বস্থিতে রয়েছে নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা। শুক্রবার হঠাৎ করে দুধকুমার নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কমতে শুরু করেছে তিস্তা, ব্রহ্মপূত্রনদসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি।
এদিকে পানি কমলেও তিস্তা নদী অববাহিকায় ৪টি ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে পরেছে। জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন এবং উলিপুর উপজেলার থেতরাই ও বজরা ইউনিয়নে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বজরা ইউনিয়নের কালপানি বজরা ও সাধুয়াদামারহাট গ্রামে তীব্র ভাঙন শুরু হওয়ায় লোকজন বাড়ি সড়াতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকেও জরুরী ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।
বজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাইয়ুম সর্দার জানান, ভাঙন প্রতিরোধে বজরা ইউনিয়নে ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় কাজ শুরু না করায় চলতি সপ্তাহে ৬টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। হুমকীতে রয়েছে ১০টি বাড়িসহ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।এরমধ্যে কালপানি বজরা ও সাধুয়াদামারহাট গ্রামের শাহজাদি, আশরাফুল, হান্নান, মুকুল, মজিদা ও রোসনার বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে।
ওই এলাকার সাতালষ্কার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ারা জানান, কাল যে রাস্তা দিয়ে স্কুলে গেছি, আজ সেই জায়গা নদীগর্ভে চলে গেছে। যে কোন সময় দুটি স্কুল নদীগর্ভে চলে যেতে পারে।
সাধুয়াদামারহাট গ্রামের ফুলবাবু জানান, নদী আমার ২ বিঘা জমি খেয়ে গেছে। আমার মতো মোফাজ্জল ও আশরাফুলের বসতবাড়ি নদীতে চলে গেছে। সরকারিভাবে আমরা নদী ভাঙন রোধে কাজ চাই।
এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার সাহা জানান, আমি ভাঙন কবলিত বজরা ও থেতরাই ইউনিয়ন পরিদর্শন করেছি। জনপ্রতিনিধিদের তালিকা তৈরির জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমাদের কাছে ৩২০টি শুকনা খাবার প্যাকেট রয়েছে। এছাড়াও জিআর’র চাহিদা প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে দুধকুমার নদীতে পানিবৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করা শুরু করেছে। তবে শুক্রবার থেকে কমতে শুরু করেছে পানি। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত দুধকুমার নদীর পানি বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও শুক্রবার পানি ১৬ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে পানি কমলেও জলাবদ্ধতার কারণে নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের কাস ইউনিয়নের ফান্দের চরে ৪ থেকে ৫টি নীচু বাড়িতে পানি উঠেছে বলে স্থানীয়রা জনিয়েছে। একইভাবে ওই উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের কুটি বামনডাঙ্গা চরে নীচু এলাকায় অবস্থিত দুটি বাড়িতে পানি উঠছে বলে স্থানীয় যুবক আশরাফুল ও কাদের জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিব্বির আহমেদ জানান, আমরা বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ খবর নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত বাড়ি তলিয়ে যাওয়ার কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে কিছু নিচু বাড়ি জলবন্দী রয়েছে বলে জেনেছি। তিনি আরও জানান, যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।
সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ও নদী ভাঙন বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল মতিন সরকার জানান, প্রস্তুতি হিসেবে আমাদের কাছে ২ হাজার ৫শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৪৪০ মে.টন জিআর চাল মজুদ রয়েছে। নগদ টাকা রয়েছে ১৪লাখ। তালিকা পেলেই আমরা সাথে সাথে উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ দিয়ে দিবো। তারপরও প্রতি উপজেলায় ৩২০ প্যাকেট করে শুকনো খাবার সরবরাহ করা আছে।
প্রথম থেকে চতুর্থ সাইকেল পর্যন্ত "সামগ্রিক দক্ষতা" মূল্যায়নে সারা দেশের ৬৪টি টিটিসির মধ্যে ঝালকাঠি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) শতকরা ৮৭ শতাংশ দক্ষতা অর্জন করে সারাদেশে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে।
বাংলাদেশ কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় কারিগরি শিক্ষা বিষয়ক এসেট (ASSET) প্রকল্পের ৫ম সাইকেল সমাপনী ও ৬ষ্ঠ সাইকেল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান গত ১৪ আগষ্ট অধিদপ্তরের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সচিবসহ বিএমইটি'র (BMET) সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঝালকাঠি টিটিসির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শামীম হোসাইন বলেন, 'এই প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অর্জনের জন্য এখানে কর্মরত সকল ট্রেড ইনচার্জ, প্রশিক্ষক, অতিথি প্রশিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আগামীতে আরও ভালো ফলাফল অর্জনের লক্ষ্যে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই।'
উল্লেথ্য, 'ঝালকাঠির সরকারী টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) এই জেলার একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এটি মূলত দক্ষ জনশক্তি তৈরীর জন্য বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। এখানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, সেলাই প্রশিক্ষণ, ওয়েল্ডিং সহ বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং নারীরাও বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। ঝালকাঠি টিটিসি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখছে।
কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে এলাকাবাসী।
শুক্রবার বেলা ১২ টার দিকে উপজেলার দামিহা ইউনিয়নের সিংগোয়ারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে গ্রামের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার শত শত মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, তাড়াইল উপজেলার কাজলা গ্রামটিতে কিছুদিন আগেও মাদক সেবনকারী বা মাদক ব্যবসায়ী ছিল না। কিন্তুু বর্তমানে হাত বাড়ালেই খুব সহজে মিলছে মাদকদ্রব্য। মাদক সরবরাহকারী একটি চক্র এই এলাকায় শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মাদকে ছেয়ে গেছে এখানকার বিভিন্ন অলিগলি। এসব মাদকদ্রব্যের বেশির ভাগ ক্রেতাই হচ্ছে বেকার যুবক। এতে এলাকায় বাড়ছে চুরি ও ছিনতাই। অনেকে প্রকাশ্যেই মাদক গ্রহণ করছে এবং বিক্রি করছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের যুবসমাজ ধ্বংস হতে বেশি সময় লাগবে না। মাদকের এত ছড়াছড়ি থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
দামিহা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রুহুল আমিন বলেন, কিছুদিন আগেও কাজলা গ্রামটিতে মাদকসেবী বা ব্যবসায়ী কেউ ছিল না। কিন্তুু বর্তমানে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। যেমন বেড়েছে মাদকসেবী, তেমনি বেড়েছে ব্যবসায়ীর সংখ্যাও। তিনি বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
মানবন্ধনে তাসলিমা-হাসেম ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান ও সমাজকর্মী অ্যাডভোকেট মাহফুজুল হক বলেন, শুধু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একক প্রচেষ্টায় মাদক নির্মূল করা যাবে না। পরিবার থেকে সচেতনতা শুরু করতে হবে, সন্তানদের পারিবারিক বন্ধন বাড়াতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে তরুণ সমাজ রক্ষা করতে হবে। অন্ধকার গহীন অরণ্যে হারিয়ে যাবে আগামীর ভবিষ্যৎ। মাদকসেবী একটি মারাত্মক সমস্যা তবে সম্মিলিত প্রয়াসে সমাধান সম্ভব।
মানববন্ধনে শিক্ষক হাসিবুর রহমান, ব্যাংক কর্মকর্তা সোহেল রানা, সাবেক সেনা সদস্য ইসহাক মিয়া, ইউপি সদস্য রুহুল আমিন ও সাবেক ইউপি সদস্য খোকন মিয়া, ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষ্যে দেয়া বাণীতে বলেছেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রীতির এই বন্ধনকে অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, সমাজে বিদ্যমান শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে কেউ যেন নষ্ট করতে না পারে সেজন্য সকলকে সজাগ থাকতে হবে।
শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে আজ শুক্রবার এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা এ সব কথা বলেছেন। তিনি এ সময় ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষ্যে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ধর্মাবতার শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। সমাজে সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে শ্রীকৃষ্ণ আজীবন ন্যায়, মানবপ্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখেছেন, সেখানেই অপশক্তির হাত থেকে শুভশক্তিকে রক্ষার জন্য আবির্ভূত হয়েছেন।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের সংস্কৃতির অনন্য বৈশিষ্ট্য। আবহমানকাল থেকে এ দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করবে বলে উল্লেখ করে তিনি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে ভরপুর বৈষম্যমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান।
মন্তব্য