রাজধানীর বনশ্রী থেকে রিকশায় প্রাইম ব্যাংকের প্রগতি সরণি শাখায় এসেছেন শফিকুল ইসলাম। জরুরি প্রয়োজনে টাকা তোলা দরকার। কিন্তু ১১টার দিকে এসে দেখেন, ব্যাংকে তালা। ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী জানান, শাটডাউনের কারণে এই শাখার কার্যক্রম বন্ধ।
শাডটাউনের মধ্যে রাজধানীতে মাত্র ৯টি শাখা খোলা রেখেছে প্রাইম ব্যাংক। কিন্তু এই তথ্য জানেন না অধিকাংশ গ্রাহক। ব্যাংকের গেটে তালিকা দেয়া হলেও, খুদেবার্তা বা অন্য কোনো উপায়ে বিষয়টি গ্রাহককে অবহিত করা হয়নি।
গ্রাহক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শাটডাউনে বনশ্রীর মেরাদিয়া থেকে ৭০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে টাকা তুলতে এসে দেখি, নোটিশ দিয়েছে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে এই শাখা। টাকা প্রয়োজন, তাই এখন গুলশান যেতে হবে।’
একই ব্যাংকে চেক জমা দিতে এসেছেন রিপন মিয়া। বলেন, ব্যস্ততম শাখা সত্ত্বেও এই শাখা বন্ধ রাখা ঠিক হয়নি। এখন কারওয়ান বাজার শাখায় গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হবে। তারপরও আজ চেক জমা দেয়া যাবে কি না শঙ্কা আছে।
শুধু প্রাইম ব্যাংকই নয়, সব ব্যাংকেরই সব শাখা খোলা নেই। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ শাখার সামনে গ্রাহকের ভিড় বাড়তে দেখা যায়। অনেকে ব্যাংক বন্ধ পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলছেন, কোন কোন শাখা খোলা আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি। এভাবে ভোগান্তির কোনো মানে হয় না।
ব্যাংক এশিয়ার প্রগতি সরণি শাখা। সেখানেও গ্রাহকের জটলা, কারণ শাখাটি বন্ধ। এই শাখাটির গেটে বন্ধ বা খোলা শাখাগুলোর তালিকাও দেয়া হয়নি। নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে গ্রাহকরা জানতে পারেন, গুলশান শাখা খোলা। তাৎক্ষণিক তারা গুলশানের দিকে যান।
টানা চার দিন বন্ধ থাকার পর, সকাল থেকে আবারও খুলছে ব্যাংক। তবে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের কারণে লেনদেন হচ্ছে সীমিত পরিসরে। অর্থাৎ লেনদেনের সময় কমিয়ে সকাল ১০টা থেকে করা হয়েছে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত।
শাটডাউনের সময়টায় সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারের সঙ্গে রোববার ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ১ জুলাই বৃহস্পতিবার ছিল ব্যাংক হলিডে। ফলে সোমবার প্রতিটি শাখার সামনে ছিল ভিড়।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্যাংকের যেসব শাখা খোলা, সেসব শাখায় গ্রাহকের ভিড়। তবে, স্বাভাবিক দিনের চেয়ে ভিড় ছিল কম।
খোলা শাখায় মানা যাচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি
লেনদেনের সময় সীমিত এবং অল্পসংখ্যক শাখা খোলা থাকায় এক সঙ্গে ব্যাংকগুলোতে ভিড় করছেন গ্রাহক। দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা। সম্ভব হয়নি সামাজিক দূরত্ব মানাও। এ পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন গ্রাহকদের পাশাপাশি ব্যাংককর্মীরাও।
স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের। এ জন্য পরিস্থিতি বিবেচনায় সবার স্বার্থে সীমিত নয়, স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখা উচিত বলছেন গ্রাহক ও ব্যবসায়ীরা।
মতিঝিলের ডাচ বাংলা ব্যাংকের নজরুল ইসলাম নামে একজন গ্রাহক বললেন, ‘রাস্তায় কয়েক দফায় জবাবদিহি করার পর এই ব্যাংকে এসেছি। জরুরি ভিত্তিতে টাকা পাঠানো প্রয়োজন তাই আসা।’
মতিঝিলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর প্রধান শাখাগুলোর লেনদেনও ছিল স্বাভাবিক। এসব শাখায় গ্রাহকের চাপ ছিল। ব্যাংকাররা জানান, অন্য দিনের চেয়ে চাপ কম। তবে, জরুরি প্রয়োজনে গ্রাহকরা আসছেন। টাকা উত্তোলন, জমা এবং বৈদেশিক লেনদেন সারতেও ব্যাংকমুখী হচ্ছেন গ্রাহকেরা।
সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসে দেখা গেছে, প্রতিটি কাউন্টারের সামনে গ্রাহকদের লাইন। ব্যবসায়িক খরচ, বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে নগদ টাকা তোলার প্রবণতা বেড়েছে। লেনদেনের সময় কম থাকার কারণে এই চাপ।
দিলকুশা এলাকায় আইএফআইসি ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা রবিউল ইসলাম জানান, রামপুরা, বাড্ডা এলাকার ব্যাংকের শাখা খোলা নেই। তাই বাধ্য হয়ে দিলকুশা এসেছেন।
রূপালী ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে টাকা তুলতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও ব্যাংকের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ব্যাংকের ভেতর থেকে বলছে লোক কম তাই সময় বেশি লাগছে।’
ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা জানালেন, রোস্টার করে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। আগে ৪০ জন কর্মী কাজ করত। এখন কাজ করছে ২০ জন। গ্রাহকের চাপ বেশি থাকায় সেবা দিতে একটু সময় লাগছে।
বন্ধ শাখার সামনে গ্রাহকের ক্ষোভ
চার দিন বন্ধ থাকার পর সোমবার বাড্ডা, রামপুরা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংকে ভিড় করেন গ্রাহক। কিন্তু বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা বন্ধ পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে।
প্রাইম ব্যাংক প্রগতি সরণি শাখায় আসা ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, সামনে ঈদ। কর্মীদের বেতন-বোনাস দেবেন কিন্তু এই সপ্তাহেও শাখা খোলা হবে না। এখন কী করবেন বুঝতে পারছেন না। সেলারি হিসাব হওয়ায় অন্য ব্যাংকেও যাওয়া যাচ্ছে না।
কোন কোন শাখা খোলা
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, রাষ্ট্র-মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার বিবেচনায় প্রতিটি জেলা সদরে ও উপজেলায় একটি করে শাখা খোলা রাখতে হবে।
অন্য সব ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রতিটি জেলা সদরে একটি শাখা খোলা রাখতে হবে। জেলা সদরের বাইরে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার বিবেচনায় অনধিক দুটি শাখা খোলা রাখা যাবে।
তবে রাজধানী ঢাকা বা চট্টগ্রামের মতো অন্য বড় শহরগুলোতে ব্যাংকের কয়টি শাখা খোলা থাকবে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তিতে খোদ ব্যাংকগুলোও।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেবল বলেছে, যেসব শাখা বন্ধ থাকবে সেসব শাখার গ্রাহকদের সেবা দেবে খোলা অন্য শাখা। আর বন্ধ শাখায় দৃশ্যমান স্থানে বিজ্ঞপ্তি আকারে জানাতে হবে কোন কোন শাখা খোলা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রাহকদের অনলাইন ব্যাংকিংয়ে উৎসাহী করছে। কিন্তু বিশেষ করে প্রবীণরা এই ধরনের ব্যাংকিংয়ে অভ্যস্ত নন। আর প্রযুক্তি জ্ঞান যাদের নেই তারাও ব্যাংকে গিয়েই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
বিশেষ করে সঞ্চয়পত্রের মুনাফাসহ বিভিন্ন ভাতা উত্তোলন, রেমিট্যান্স, বেতনভাতা উত্তোলন, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস বিল পরিশোধ বা ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে এখনও বহু মানুষ ব্যাংকে সশরীরে গিয়েই লেনদেন করেন।
আবার একটি জেলায় যদি বেসরকারি ব্যাংকের সব মিলিয়ে তিনটি শাখা খোলা থাকে, তাহলে কাউকে ব্যাংকে যেতে হলে দূরের উপজেলা থেকে বহু পথ পাড়ি দিতে হতে পারে।
বেসরকারি সিটি ব্যাংক ইতিমধ্যে ওয়েবসাইটে দিয়ে দিয়েছে বিধিনিষেধের সময় তাদের কোন কোন শাখা খোলা খাকবে।
ব্র্যাক ব্যাংক ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, সারা দেশে তাদের ৮০টি শাখা খোলা আছে। কোন কোন শাখা সেটা বিস্তারিত দেয়া আছে।
ট্রাস্ট ব্যাংকের সব শাখা খোলা থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় কোনো ব্যাংক ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে সারা দেশে জোনাল অফিস প্রধানদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে।
যা বলছেন ব্যাংকাররা
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকার কঠোর লকডাউন ৭ জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। গ্রাহকদের স্বার্থে জরুরি সেবার আওতায় সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে। ঈদের আগে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে গ্রাহকদের। তারপরও অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম বুথ এবং মোবাইল ব্যাংকিং স্বাভাবিক রাখতে বলা হয়েছে। যাতে গ্রাহকদের কোনো সমস্যা না হয়।
কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী হোসেন প্রাধানিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সব শাখা অনলাইন সেবা চালু আছে। বিধিনিষেধে মানুষের চলাচলও তেমন থাকবে না। বর্তমানে বেশির ভাগ গ্রাহকই টাকা জমা ও উত্তোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এ কারণে এটিএম বুথগুলোতে পর্যন্ত টাকা সরবরাহ করা হয়েছে। এতে গ্রাহকের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের প্রিন্সিপাল অফিসার এফ এম মাসুম বলেন, ‘আমাদের লোকাল অফিসে সব সময় ভিড় লেগেই থাকে। আর চার দিন বন্ধের পর সোমবার খুলছে। ফের গ্রাহকদের সেবা দিতে হিমশিম অবস্থা। সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকে মানতেও চান না। এতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।’
জনতা ব্যাংক করপোরেট শাখার কর্মকর্তা এস এম সাদেকুর রহমান বলেন, ‘শাখা খোলা রাখার অর্থ ব্যাংকারদের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকও ঝুঁকির মুখে পড়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে কিছু দিনের জন্য হলেও ব্যাংক বন্ধ রাখাই ভালো ছিল।’
আরও পড়ুন:জাতীয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০২৫ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এ বছরও দেশের বৃক্ষ সম্পদ বৃদ্ধি ও পরিবেশের ভারসাম্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে ‘বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০২৫’ গ্রহণ করেছে।
এ উপলক্ষ্যে সোমবার (৩০ জুন) বিমান বাহিনী সদর দফতর প্রাঙ্গনে গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে উক্ত কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, ‘পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি’ জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযানের এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এ বছরের বৃক্ষরোপণ অভিযান কর্মসূচি পালন করছে।
বিমান সদরের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসাররা বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করে ওই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বিমান সদরের পরিচালকরা এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি ও ইউনিট সমূহেও একই ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় বিমান বাহিনী বিভিন্ন ধরনের ফলজ, বনজ ও ওষুধি গুনাগুন সম্পন্ন গাছের চারা রোপণ করবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর ও আন্তরিকভাবে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে চীন। সোমবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘চীন আশা প্রকাশ করেছে যে, তারা বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে আরও বেশি আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে কাজ করবে।’
ফখরুলের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের বিএনপির প্রতিনিধিদলের সাম্প্রতিক চীন সফরের পর বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সফর নিয়ে ফখরুল বলেন, বিএনপি দল চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করেছে। বলেন, ‘আমরা এই প্রকল্প সম্পর্কে আমাদের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেছি এবং তারা ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছে।’
তিনি বলেন, চীনা পক্ষ এখনো তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। ‘ভবিষ্যতে যদি আমাদের সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাই এবং তারা(চীন) যদি এই প্রকল্পের প্রস্তাব দেয়—তাহলে আমরা মনে করি আমরা এটি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করব।’
ফখরুল বলেন, বিএনপি প্রতিনিধিদল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে চীনকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে।
তিনি বলেন, চীনা কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সরকারকে রাজি করানোর জন্য তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার আশ্বাস দিয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, তাদের সফর দুই ‘ভ্রাতৃপ্রতিম’ দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নত ও জোরদার করার জন্য একটি পথ খুলে দিয়েছে—ভবিষ্যতে এই বন্ধন আরও দৃঢ় হবে বলেও তিনি আশা করেন।
এর আগে ২২ জুন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আমন্ত্রণে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের বিএনপির প্রতিনিধিদল পাঁচ দিনের জন্য চীন সফর করে।
বিএনপির প্রতিনিধিদলের অন্য আট সদস্য ছিলেন—বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার।
সফরকালে ফখরুল বলেন, বিএনপির প্রতিনিধিদল সিপিসির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং দ্বিপক্ষীয় বিষয় এবং সিপিসি ও বিএনপির মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে পাট চাষের জন্য জমির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক শূন্য ৫ লাখ হেক্টর। এ পরিমাণ জমিতে চাষাবাদের জন্য পাট বীজ প্রয়োজন ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টন।
সোমবার বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) কৃষি উইং আয়োজিত ‘বার্ষিক অভ্যন্তরীণ গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা।
তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে পাটের মোট উৎপাদন ১৫ লাখ মেট্রিক টন, পাটকাঠির মোট উৎপাদন ৩০ লাখ মেট্রিক টন এবং চারকোলের উৎপাদন ৬ লাখ মেট্রিক টন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘পাট নিয়ে অনেক কিছু করার আছে। পাটের সম্ভাবনা কোনো দিন শেষ হবে না। কাঁচা পাট নিয়ে অন্যান্য দেশ কীভাবে কাজ করছে তার ওপরেও মার্কেট রিসার্চে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘বদ্ধ চিন্তাধারা থেকে বের হয়ে বিজ্ঞানীদের বিশদভাবে কাজ করতে হবে। কারণ পাট নিয়ে অনেক কিছু করার আছে, পাটের সম্ভাবনা কোনো দিন শেষ হবে না। মার্কেট এবং বাস্তবতার নিরিখে গবেষণা করতে হবে। আমাদের সীমাবদ্ধ জমিতে কীভাবে পাটের উৎপাদনকে আরও বাড়ানো যায়, তা নিয়েও কাজ করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে বিজেআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. নার্গীস আক্তার বলেন, ‘পাট কৃষিজাত পণ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় চাষিরা কৃষিঋণের মতো পাটঋণ এবং পণ্য রপ্তানিতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। সরকার থেকে ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা পায় চারকোল রপ্তানিকারকরা। দেশে প্রায় ৫০টি চারকোলের কারখানা রয়েছে। বর্তমানে কিছু কারখানা বন্ধ আছে।’
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা অনুবিভাগ) মো. আবু জুবাইর হোসেন বাবলু, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজেআরআইয়ের প্রজনন বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম মোস্তফা এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজেআরআইয়ের জেনোম গবেষণা কেন্দ্রের সমন্বয়ক ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম মাহবুব আলী।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. বেগম সামিয়া সুলতানা, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল আমিন, কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক মো. মসীহুর রহমান, জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমির মহাপরিচালক মো. সাইফুল আজম খান, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৩৮৪১.৩৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা কমিটির ৭ম (সপ্তম) কর্পোরেশন সভা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৩৮৪১.৩৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিচালনা কমিটির ৭ম (সপ্তম) কর্পোরেশন সভা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এর প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর সংস্থার প্রতিনিধির সমন্বয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা কমিটির ২৫ (পঁচিশ) জন সদস্য আজ সোমবার নগর ভবনে উপর্যুক্ত সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সভার শুরুতে ০৫ মে ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ কর্পোরেশনের সভার কার্য বিবরণী দৃঢ়ীকরণ এবং বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়। পরবর্তীতে সভার আলোচ্য সূচি অনুযায়ী আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (অতি. দা.) জনাব আলী মনসুর। পরবর্তীতে, পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৩৮৪১.৩৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন প্রদান করেন।
বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ ও অনুমোদন প্রদান করায় পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এর প্রশাসক বলেন, “ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বাজেট কেবল গাণিতিক সংখ্যা নয়। এই বাজেট আমাদের কাছে সম্মানীত করদাতাদের আমানত। এই বাজেট সফলভাবে প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উপর নির্ভর করছে আমাদের সবার প্রিয় এই নগরীর ব্যবস্থাপনা এবং আমাদের দৈনন্দিন নাগরিক সমস্যার সমাধান।”
সভায় ১৯৯৮ সাল থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাসকারী নগরবাসীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও মাতৃত্বকালীন বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী ‘আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারী প্রকল্প-২ পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং বিদ্যমান প্রকল্পের আওতায় সেবা প্রদানকারী এনজিওসমূহের মধ্যে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
পরবর্তীতে, অর্থ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োজিত সাময়িক শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৬০০/- (ছয় শত) টাকা হতে ৮০০/- (আট শত) টাকা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, মন্ত্রীপাড়ায় অবস্থিত অস্থায়ী মসজিদটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক একটি তিনতলাবিশিষ্ট নান্দনিক মসজিদে রূপান্তরের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. জিল্লুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সচিব জনাব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামসহ সকল বিভাগীয়গণ উপস্থিত ছিলেন।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমে শেরপুর জেলার শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ঝিনাইগাতী উপজেলার ইউএনও জনাব মো. আশরাফুল আলম রাসেল।
জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের নির্ভুলতা, সময়ানুবর্তিতা ও সার্বিক দাপ্তরিক ব্যবস্থাপনায় অনন্য ভূমিকা রাখায় তাঁকে এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। সম্মাননা স্মারক ও সনদপত্র তুলে দেন শেরপুর এর জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ মাজিস্ট্রেট তরফদার মাহমুদুর রহমান।
পুরস্কার গ্রহণের পর অনুভূতি প্রকাশ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন,"এই স্বীকৃতি শুধু আমার একার নয়, এটি ঝিনাইগাতী উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কর্মী, গ্রাম পুলিশ এবং সহযোগী সব পক্ষের সম্মিলিত চেষ্টার ফল। আমরা চেষ্টা করেছি নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ রাখা, জনসচেতনতা তৈরি ও নিবন্ধন কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে। এই সম্মাননা আমাদের আরও অনুপ্রাণিত করবে জনসেবায় নতুন উদ্যমে কাজ করতে। আমি জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।”
তিনি আরও বলেন, “জন্ম ও মৃত্যুর মতো গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক তথ্যের সঠিক নিবন্ধন ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের অন্যতম ভিত্তি। তাই এই কাজকে আমি শুধু প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়, নাগরিক অধিকারের অংশ হিসেবেও দেখি।”
এছাড়াও একই কার্যক্রমে ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও একজন শ্রেষ্ঠ গ্রাম পুলিশকেও পুরস্কার প্রদান করা হয়। তাদের নিষ্ঠা, দায়িত্বশীলতা ও নিবন্ধন কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) ও গ্রাম পুলিশ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের বায়ুদূষণ রোধে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সোমবার (৩০ জুন) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে চীনের একদল বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা জানান, শীত আসার আগেই রাজধানীর সব কাঁচা ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার সংস্কারকাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ধুলা দূষণ কমাতে রাস্তায় মাটি ঢেকে দেওয়া ও পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ‘জিরো সয়েল’ নীতি কার্যকর, মাটি শক্তকরণ ও পানি ছিটানোর গাড়ি ব্যবহারের পরিকল্পনাও রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘শহুরে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ পুরনো ও উচ্চমাত্রার ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) পুরনো যানবাহন অপসারণ ও নতুন ২৫০টি পরিবেশবান্ধব যানবাহন যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া, নির্গমন মান বজায় রাখতে ১০টি স্বয়ংক্রিয় যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র স্থাপন করবে বিআরটিএ।’
দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের লক্ষ্যে চীনা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, ‘সঠিক তথ্য ও বিশ্লেষণ ছাড়া কার্যকর নীতিমালা তৈরি সম্ভব নয়। এজন্য একটি উন্নত বায়ু নির্গমন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা স্থাপন, বৈশ্বিক মান অনুসারে নির্গমন মান উন্নয়ন, স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও বর্জ্য ইনসিনারেশন প্ল্যান্ট চালু ও রান্নার জন্য এলপিজি ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা গ্রহণে কর প্রণোদনাও বিবেচনায় রয়েছে।’
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্পের আওতায় উচ্চ দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানে অব্যাহত নির্গমন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করবে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং দেশজুড়ে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
এদিকে, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) শহরে সড়কে বেড়া বসানো ও ৫০টি বৈদ্যুতিক যানবাহন চালুর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব পরিবহনব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে।
জাইকা সহায়তাপ্রাপ্ত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আটটি বাস্তবভিত্তিক বায়ু গুণমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, যা প্রমাণভিত্তিক নীতিনির্ধারণে সহায়ক হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি বিইএসটি প্রকল্পও বাস্তবায়িত হবে।
এ সময় চীনা বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা বাংলাদেশের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা প্রকাশ করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সরকারের উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট—পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা।’
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম, অতিরিক্ত সচিব মো: খায়রুল ইসলাম, নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অনুষদের নির্বাহী ডিন অধ্যাপক ইউ ঝাও, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নানজিং-হেলসিঙ্কি ইনস্টিটিউটের উপ-ডিন অধ্যাপক হাইকুন ওয়াং এবং বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক টেংইউ লিউ, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুদূষণ) মো. জিয়াউল হক প্রমুখ।
বৈঠকে জাতীয় নির্গমন ইনভেন্টরি ও রাসায়নিক বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়, যা দেশের বায়ুদূষণের উৎস চিহ্নিত করে বিজ্ঞানভিত্তিক টার্গেটেড হস্তক্ষেপের ভিত্তি তৈরি করবে।
মন্তব্য