বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য সুসংবাদ। মোটামুটি ভালো খবর দিয়ে শুরু হলো ২০২১-২২ অর্থবছর। দীর্ঘ আট বছর পর বাংলাদেশ থেকে আবারও তৈরি পোশাক কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ব্র্যান্ড ওয়াল্ট ডিজনি।
এর ফলে মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেও ইতিবাচক ধারায় থাকা বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে আরও ১০০ কোটি বা ১ বিলিয়ন ডলার যোগ হবে বলে আশা করছেন পোশাকশিল্পের মালিকরা।
পোশাকশিল্পের মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আট বছর আগেই ওয়াল্ট ডিজনি বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৫০ কোটি ডলারের পোশাক নিত। এই দীর্ঘ সময়ে তাদের চাহিদা অনেক বেড়েছে। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলোতে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ভালোর দিকে। সেসব বাজারে পোশাকের চাহিদা বেড়েছে।
‘সব মিলিয়ে নতুন এই পরিস্থিতিতে ওয়াল্ট ডিজনি আমাদের কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক কিনবে বলে প্রত্যাশা করছি।’
এ বিষয়টি বাংলাদেশের পোশাক খাতের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল করবে বলেও আশা করেন বিজিএমইএর নেতা। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এটি বিশ্বের ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল করবে। বিশ্বের অন্য বড় বড় ক্রেতাও এখন পণ্য কিনবে। আমাদের পোশাকের দাম বাড়ানো নিয়ে যে দেনদরবার করছি, সেখানেও আমরা আরও জোর দিতে পারব।’
১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়াল্ট ডিজনির বিক্রয়কেন্দ্র বর্তমানে তিন শতাধিক। প্রতিষ্ঠানটি নারী-পুরুষের পাশাপাশি বাচ্চাদের পোশাক বিক্রি করে। এ ছাড়া বাচ্চাদের খেলনাসহ নানা ধরনের পণ্যসামগ্রী বিক্রির জন্য জনপ্রিয় ডিজনি।
তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন এবং রাসা প্লাজা ধসের ঘটনার পর ২০১৩ সালে ওয়াল্ট ডিজনি বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনা বন্ধ করে দেয়।
বাংলাদেশ থেকে আবারও পোশাক কেনার বিষয়টি ওয়াল্ট ডিজনি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে না বললেও নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান।
শনিবার তিনি বলেন, ‘ওয়াল্ট ডিজনির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আন্তর্জাতিক শ্রমমান নিরীক্ষা বিবেচনায় নিয়ে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানটি তার অনুমোদিত সোর্সিং দেশের তালিকায় আবার বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘ওয়াল্ট ডিজনির ফিরে আসাটা আমাদের পোশাকশিল্পের জন্য সুখবর। কারণ, সম্প্রতি ভারত থেকে প্রচুর পোশাক আমদানি করত তারা। মিয়ানমারের সঙ্গেও ব্যবসা শুরু করেছিল। ফলে আশা করছি, আমাদের উদ্যোক্তারাও ওয়াল্ট ডিজনি থেকে শিগগিরই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্রয়াদেশ পাবেন।’
বিজিএমইএর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক শ্রমমান নিরীক্ষা বিবেচনায় নিয়ে ওয়াল্ট ডিজনি তাদের অনুমোদিত সোর্সিং দেশগুলোর তালিকায় আবারও বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করেছে বলে ‘বিশ্বস্ত সূত্রে’ জানতে পেরেছে সংগঠনটি।
তবে ওয়াল্ট ডিজনির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনও আসেনি, সে কথাও বিজিএমইএ জানিয়েছে।
ফারুক হাসান বলেন, ‘গত কয়েক বছরে আমাদের পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা তাদের কারখানার মান উন্নয়নে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করেছেন। সে সব কারণেই বাংলাদেশে পোশাকশিল্পের যে সার্বিক অগ্রগতি ও রূপান্তর ঘটেছে, বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রের সুরক্ষা, সামাজিক মান এবং পরিবেশগতভাবে টেকসই ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে, তার স্বীকৃতি এল ওয়াল্ট ডিজনির এই পদক্ষেপে।’
‘এই করোনা মহামারির মধ্যেও আমরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎপাদন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে ক্রেতাদের কাছে পোশাক তুলে দিচ্ছি। এতে আমাদের সুনাম আরও বেড়েছে।’
ওয়াল্ট ডিজনি বাংলাদেশ থেকে কেনাকাটা শুরু করলে পোশাক খাতের সংস্কারের আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ‘আরএমজি সাসটেইনেবলিটি কাউন্সিল’ বা আরএসসি এবং আইএলওর ‘বেটার ওয়ার্ড বাংলাদেশ’ প্রকল্পে যুক্ত কারখানাগুলো অগ্রাধিকার পাবে বলে জানান তিনি।
২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড এবং ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ নিয়ে ক্রেতা দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়। বিদেশি অনেক সংগঠন বাংলাদেশি পোশাক বর্জনের ডাক দেয়।
তার পরিপ্রেক্ষিতে কারখানা পরিদর্শনে ইউরোপীয় ২২৮টি ক্রেতার সমন্বয়ে গঠিত হয় অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ, যা সংক্ষেপে অ্যাকর্ড নামে পরিচিতি পায়। আর একই লক্ষ্যে গঠিত আমেরিকার ক্রেতাদের জোট পরিচিতি পায় অ্যালায়েন্স নামে। পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় রিমেডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল (আরসিসি) গঠন করে সরকার।
এরপর বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে ব্যাপকভিত্তিক সংস্কার কাজ শুরু হয়। কারখানার অবকাঠামো উন্নয়ন, আগুন থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা, শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে বাস্তবায়ন করা হয় বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা। এর বাইরে বিভিন্ন দাতা সংস্থার উদ্যোগে শ্রমিকদের কর্মদক্ষতার উন্নয়নে প্রশিক্ষণ শুরু হয়।
এ ছাড়া মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর উদ্যোগে উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদন, পোশাকপণ্যের ভ্যালু সংযোজন ও পণ্যের বহুমুখীকরণেও বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যাতে বিনিয়োগ হয়েছে বিপুল অঙ্কের টাকা।
ফলে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে কারখানার নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশের সুনাম বেড়েছে। হংকংভিত্তিক সাপ্লাই চেইন কমপ্লায়েন্স সল্যুশনস প্রোভাইডার, ‘কিউআইএমএ’ তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ‘ইথিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং’ দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে।
এই রেটিংয়ে স্বাস্থ্যবিধি, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, শিশু ও তরুণ শ্রমিক, বাধ্যতামূলক শ্রমসহ শ্রমবিষয়ক চর্চাগুলো, শ্রমিক প্রতিনিধিত্ব, শৃঙ্খলাবদ্ধ অনুশীলন এবং বৈষম্য, কর্মঘণ্টা ও মজুরি এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো মাপকাঠি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
বিজিএমইএ বলছে, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব কারখানার অবস্থান বাংলাদেশেই। বাংলাদেশের ১৪৪টি কারখানা ইউএসজিবিসির লিড গ্রিন সনদ পেয়েছে, যার মধ্যে ৪১টি প্লাটিনাম স্তরের।
মহামারির মধ্যেও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। সদ্য শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) ৩ হাজার ৫১৮ কোটি (৩৫.১৮ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি।
ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরা যতটুকু খবর পেয়েছি, অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আমরা আশা করছি, অর্থবছর শেষে ১৫ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হবে।
‘মহামারির এই কঠিন সময়ে এটা একটা বড় সাফল্য বলে আমি মনে করি। সরকারের প্রণোদনা আমাদের এ ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে।’
মহামারি শুরুর আগেও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। সে সময় বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪০০ কোটি বা ৩৪ বিলিয়ন ডলারের মতো, যা বিশ্বের মোট পোশাক রপ্তানির ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
আরও পড়ুন:ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা। ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের সঙ্গে এটাই বিএনপির নেতাদের প্রথম বৈঠক।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাইকমিশনারের বারিধারার বাসায় যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ দলের তিন নেতা। এ সময় হাইকমিশনের রাজনৈতিক শাখার দুজন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।
হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) বৈঠকের কারণ উল্লেখ করে ব্রিটিশ হাইকমিশন লিখেছে, হাইকমিশনার সারাহ কুক আজ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) রাজনৈতিক কৌশল বুঝতে দলটির নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
ওই লেখায় বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের সঙ্গে হাইকমিশনার সারাহ কুকের একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে।
নওগাঁর ধামইরহাটে রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল নামে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা পরিচয় দিলেও তিনি আসলে তা নন, প্রতারণার স্বার্থে ভুয়া পরিচয় ধারণ করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার রুপনারায়নপুর গ্রাম থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন।
২৫ বছর বয়সী রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী ম্যানুয়েল তপন জানান, ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে তিনি (পিয়াল) তার কাছ থেকে ২৯ হাজার ৫৩৮ টাকা গ্রহণ করেন এবং আরও টাকা দাবি করলে স্থানীয় জনতা তাকে চ্যালেঞ্জ করে। এরপর সংশ্লিষ্ট থানায় খবর দেয়া হয়। পরে থানা পুলিশ গিয়ে প্রতারক পিয়ালকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
তপন বলেন, ‘বেশকিছু দিন ধরে আমার মতো এলাকার অন্য লোকজনের কাছেও বিভিন্ন ফন্দি এঁটে প্রতারণা করে আসছে এই প্রতারক।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে ধামইরহাট থানার ওসি মো. বাহাউদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘প্রতারক রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় নিজেকে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতেন। ইতোমধ্যে একজনের কাছে থেকে ২৯ হাজার টাকা নিয়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাও নিতেন তিনি।
‘এদিনও প্রতারণা করতে গেলে জনগণ তাকে আটক করে রাখে। এরপর পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে আসে। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ মামলা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।’
আরও পড়ুন:নোয়াখালীর হাতিয়ায় ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মো. সুলতান নামে এক রোহিঙ্গা নাগরিকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাৎক্ষণিক এই হত্যাকাণ্ডের কারণ জানাতে পারেনি পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১১৬ নম্বর ক্লাস্টার থেকে পুলিশ সুলতানের মরদেহ উদ্ধার করে। তিনি ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭৮ নম্বর ক্লাস্টারের বাসিন্দা ছিলেন।
ভাসানচর থানার ওসি কাওসার আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়দের বরাতে ওসি বলেন, সুলতান ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭৮ নম্বর ক্লাস্টারে বসবাস করতেন। ১১৬ নম্বর ক্লাস্টারের খালি জায়গায় তিনি সবজি চাষ করতেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ছেলে তার জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে বাবাকে দেখতে না পেয়ে তার ছেলে ওই ক্লাস্টারে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি শুরু করেন। একপর্যায়ে তার বাবার গলা কাটা মরতেজ পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দেন। এ সময় অন্য ক্লাস্টারের লোকজন এগিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
ওসি কাওসার আহমেদ জানান, পেছনের দিক থেকে গলা কেটে এই রোহিঙ্গা নাগরিককে হত্যা করা হয়। শুক্রবার সকালে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে। পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটনে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ তাদের নৌকা নিজেরাই ডুবিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
বিএনপির সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক হৃদরোগে আক্তান্ত ডা. পারভেজ রেজা কাকনের শারীরিক খোঁজ-খবর নিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজারে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় তিনি অসুস্থ কাকনের শারীরিক ও পারিবারিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা বলেন, বাংলাদেশে অতীতে কখনোই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তা দলীয় প্রতীকে শুরু করেছে।
‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে বর্জনের পর তারা বুঝতে পেরেছে যে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা হলে দেশের সামাজিক কাঠামোটা ভেঙে যাবে। তারা নিজেদের নৌকা নিজেরাই ডুবিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ছাড়া এবং এই সরকার ও তাদের সাজানো নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাবো না। তবে গ্রাম-গঞ্জে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কে যাবে কে যাবে না সেটা তো বিএনপি দলীয়ভাবে দেখতে পারে না।’
মঈন খান বলেন, বিরোধী দলকে দমনের জন্য সরকার হামলা-মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে এসব করে ৭ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনেও তারা দেশের মানুষকে ভোট কেন্দ্রে নিতে পারেনি।
‘ভয় দেখিয়ে মানুষকে দমিয়ে রাখতে চায়। দেশের জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ করেছে। তারা ভোট কেন্দ্রে যায়নি। কারণ এই ভোটের ওপর তাদের আস্থা নেই।’
মঈন খান বলেন, ‘দল গোছানো ও সংগঠন পুনর্গঠন করা চলমান প্রক্রিয়া। রাজনীতি কোনো কাপড় নয় যে, সাজিয়ে গুছিয়ে আলনা বা আলমারিতে রাখা যায়। সরকারকে বলবো- প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করে আদর্শের রাজনীতিতে ফিরে আসুন। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবো, ইনশাআল্লাহ।’
আরও পড়ুন:আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে কড়া নির্দেশনা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার দলটির এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের মাধ্যমে তা বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জানিয়ে দেয়া হয়।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা নেতাদের একজন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিকভাবে চান উপজেলা নির্বাচন প্রভাবমুক্ত হোক। সে কারণে দল চায় যে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের নিজ পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা যেন এই নির্বাচনে অংশ না নেন।’
‘আজ (বৃহস্পতিবার) দলের একটি বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক আমাদেরকে বিষয়টি জানান। আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং জেলা-উপজেলায় তা জানাতে শুরু করেছি।’
এবার স্বতন্ত্র মডেলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে নিজ নিজ এলাকায় রাজনৈতিক বলয় নিজেদের কব্জায় রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের কিছু মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য। দলের হাইকমান্ড এই নির্বাচনে কাউকে সমর্থন না দেয়ার নির্দেশনা দিলেও এসবে কান দিচ্ছেন না তারা।
কোনো কোনো সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা তাদের স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন। নিজ দলের প্রভাবশালীদের এমন হস্তক্ষেপে ইতোমধ্যে তৃণমূলে নানামুখী বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো নিজেদের পরিবারের দখলে রাখার চেষ্টার পাশাপাশি উপজেলায় একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারা। ভোটের মাঠে স্বজনদের জিতিয়ে আনতে নানামুখী কৌশল অবলম্বন শুরু হয়েছে। এতে তৃণমূলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। এ নিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ।
দলীয় সূত্র জানায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতারা ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এবং একজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সন্তান বা নিকটাত্মীয়দের প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার থেকে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকেরা নিজ নিজ বিভাগের মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের দলের এই নির্দেশ জানাতে শুরু করেছেন।
ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক দলীয় ও দলীয় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দলের হাইকমান্ডের কাছে জমা পড়েছে। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। কেউ কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করলে তাদেরকে শো-কজ, সতর্কতা, তলবসহ বর্তমান দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে দলের হাইকমান্ডের।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর করার স্বার্থে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদেরকে নিজ পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’
বিএনপি ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বর্জন করায় ওই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তখন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিরোধ তৈরি হয়।
জাতীয় নির্বাচনের মাস তিনেকের মাথায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের পছন্দের ব্যক্তিদের প্রার্থী করা নিয়ে দলীয় বিরোধ আরও বেড়ে যাচ্ছে। এর রেশ ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় পড়তে শুরু করেছে।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে নিজের ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়ন কাজ না করার হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। নাটোরে প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিবের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। বৈঠকে ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরকে সারা দেশে মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের মধ্যে যাদের স্বজন ও পরিবারের সদস্য নির্বাচন করছেন, সেই তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, এবার চার পর্বে দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ১৫২টি ও দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৬১টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপর ২১ মে হবে দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে টিউবওয়েল বসানোর জন্য স্থাপন করা পাইপে পানির পরিবর্তে উঠে আসছে এক ধরনের তরল। অনেকটা ডিজেলের মতো গন্ধযুক্ত এই তরল নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহল।
উপজেলার ভোলামোড় এলাকায় এক বাড়িতে ঘটেছে এই ঘটনা। বাড়ির মালিক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘পানীয় জলের জন্য তিন বছর আগে এখানে মোটর বসানো হয়। এটি উপজেলা পরিষদ থেকেই বসানো হয়েছিল। কয়েক মাস থেকে মোটরটি দিয়ে পানি উঠছে না। কারণ জানার জন্য বুধবার সকালে মিস্ত্রি ডেকে আনা হয়।
‘মিস্ত্রি কাজ করার সময় মোটরের সঙ্গে যুক্ত পাইপ দিয়ে মাটির নিচ থেকে পানির পরিবর্তে তেলের মতো এক ধরনের তরল উঠে আসে। তা দেখে মনে হয়েছে ডিজেলের মতো। বিষয়টি আমরা উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি, যাতে তারা এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করেন।’
স্থানীয় সংবাদকর্মী মনিরুল ইসলাম জানান, ফেসবুকে ঘটনাটি দেখার পর তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। এ সময় পাইপ দিয়ে উঠে আসা তরলে তিনি কাগজ চুবিয়ে আগুন ধরানোর চেষ্টা করলে তাতে আগুন ধরে যায়। তার প্রশ্ন- পানি হলে তো ভেজা কাগজে আগুন ধরতো না। তাহলে এই তরল কি খনিজ তেল?
এ বিষয়ে নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা সরকার জানান, তিনিও বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছেন। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর করবেন বলে জানান তিনি।
মন্তব্য