শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি অর্থ প্রদান, শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা বা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি- ভিজিএফ এর মতো জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক কার্যক্রম এখন মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমেই পরিচালিত হচ্ছে।
রাষ্ট্রের এ ধরনের জনকল্যাণমুখী আর্থিক সেবা (এমএফএস) কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আসায় একদিকে সরকারের ব্যয় সাশ্রয় হচ্ছে, অন্যদিকে সার্বিক কার্যক্রমে লেগেছে স্বচ্ছতার ছোঁয়া। যা আগে ভাবাও যেতো না।
‘ভাতা বিতরণে ডিজিটাল প্রযুক্তি: স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নিশ্চয়তা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারের মূল প্রবন্ধ এই দাবি করা হয়েছে।
শনিবার টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, সরকারের ধরনের অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক কর্মকাণ্ডে এখন যুক্ত হয়েছে ডাক বিভাগের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস এমএফএস অপারেটর ‘নগদ’। এই সার্ভিসের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের মায়ের মোবাইলে উপবৃত্তির টাকা পাঠানো হয়েছে। এতে প্রাথমিকের ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর মাঝে উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা বিতরণ করা হয়েছে নগদের মাধ্যমে।
এ প্রক্রিয়ায় মাত্র তিন মাসে চার প্রান্তিকের উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা ‘নগদ’এর মাধ্যমে বিতরণ সম্ভব হয়েছে। এছাড়া ৩০০ কারিগরি ও মাদ্রাসা এবং আট হাজার শিক্ষক-কর্মচারী-ছাত্রকে সাড়ে ৫ কোটি টাকার সরকারি সহায়তাও দেয়া হয়েছে ‘নগদ’ এর মাধ্যমে।
মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪০ লাখ শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বিতরণ করছে বেসরকারি এমএফএস অপারেটর বিকাশ।
নগদ আসার আগে এ ধরনের উপবৃত্তির টাকা পাঠাতে সরকারের খরচ হতো প্রতি হাজারে ২২ টাকা, এখন সেখানে খরচ হচ্ছে মাত্র ৭ টাকা।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি- ভিজিএফ বিতরণের পরীক্ষামূলক কার্যক্রমেও যুক্ত হয়েও সরকারকে সফলতার মুখ দেখিয়েছে ‘নগদ’।
উদাহরণ টেনে বলা হয়, গত বছর প্রধানমন্ত্রী ৫০ লাখ পরিবারকে ঈদ উপহার পাঠাতে চাইলেও এই উপকারভোগী পরিবারের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৪ লাখ। এক্ষেত্রে উপহার না পাওয়া অবশিষ্ট ১৬ লাখ মানুষের নাম-ঠিকানার হিসাব পাওয়া গেছে ভুয়া। এতে সরকারের সাশ্রয় হয়েছে ৩৮৫ কোটি টাকা।
সরকারের সেবা কার্যক্রমে ডিজিটালাইজেশনের কারণেই এই ভুয়া হিসাব শনাক্ত এবং সরকারের অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে।
টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ‘নগদ’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর, বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম, প্রাথমিক শিক্ষার উপবৃত্তি প্রকল্প পরিচালক মো. ইউসুফ আলী, অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) সাবেক মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবীর।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল দেশ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। এটা সহজ হয়েছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবা (এমএফএস) পৌঁছে দিতে পারার কারণে।
‘এমনকি যারা হতদরিদ্র ও ডিজিটাল শব্দও বুঝে না এমএফএস সেবাদাতারা তাদের কাছেও সেবা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছে। বিশ্বের অনেক দেশই এই সার্ভিসটিকে এতটা জনপ্রিয় করতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সফল, এখন আমাদের লক্ষ্য হলো পুরো আর্থিক সিস্টেমটাকে ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে নিয়ে যাওয়া।
‘মানুষের জীবনকে আরও সহজলভ্য করতে প্রকৃত এমএফএসদের আরও এগিয়ে আসতে হবে। তাদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করতে হবে। এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতাও দরকার হবে।’
মন্ত্রী উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘এমএফএসসহ সেবা সহ সার্বিক আর্থিক কার্যক্রমে ডিজিটালাইজেশন আনতে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবার দরকার হবে। দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন চলতি বছরের মধ্যেই এই উচ্চগতির ইন্টারনেটের আওতায় আসবে।’
সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল দেশ হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে খ্যাতি পেয়েছে বাংলাদেশ। ফলে এই করোনার মধ্যেও ডিজিটালাইজেশনের সুফল পাচ্ছে দেশ।
‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বয়ষ্কভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী উপবৃত্তি প্রদানসহ ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রায় এক কোটি ভাতাভোগীকে ভাতা প্রদানে সক্ষম হয়েছে।’
স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভাতা দেয়া হয়েছে জানিয়ে ‘নগদ’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, ‘এমএফএসে ভাতা দেয়ার মাধ্যমে সঠিক ব্যক্তির কাছে ভাতা দেয়া সম্ভব হয়েছে। এর ফলে সরকারের অনেক টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে।’
তিনি জানান, গত এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অপারেটর ‘নগদ’ সরকারের হয়ে আড়াই কোটিরও বেশি মানুষকে ৭ কোটিবার বিভিন্ন ভাতা ও সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে।
এক্ষেত্রে যাদের ভুয়া ঠিকানা ছিল বা এনআইডি ম্যাচ করেনি তারা পায়নি। নগদ প্রতিটি মানুষের ডেটা যাচাই করে সঠিক মানুষকে টাকা পৌঁছে দিয়েছে। এতে প্রকৃত লোক যেমন ভাতা পেয়েছে, একইভাবে এতে সরকারেরও সাশ্রয় হয়েছে বিরাট অঙ্কের টাকা।
বিশ্বের অনেক দেশই ক্যাশলেস সোসাইটিতে পরিণত হয়েছে জানিয়ে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, ‘আমরাও তেমনটিই হতে চাই। এর জন্য দরকার ইন্টার-অপারেবিলিটি নিশ্চিত করা। এটা করা গেলে বাংলাদেশকেও ডিজিটাল ক্যাশলেস সোসাইটিতে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’
আরও পড়ুন:ময়মনসিংহের পাগলায় ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকাডুবির ২২ ঘন্টা পর নিখোঁজ দুই শিশু মরদেহ উদ্ধার করেছে নিহতের স্বজনেরা। বুধবার (০২ জুলাই) পাগলা থানার টাংগাব ইউনিয়নের বাঁশিয়া এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে তাদের মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত শিশুরা হলো, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরআলগী এলাকার বাসিন্দা হাবিব মিয়ার ছেলে আবির (৬) এবং মুমতাজ উদ্দিনের ছেলে জুবায়েদ (৬)। তারা দুজনই বিরুই নদীর পাড় দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (০১ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯ টার কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরআলগী এলাকা থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে মাদ্রাসায় যেতে ছোট একটি নৌকায় উঠেন ৯ শিক্ষার্থী। ময়মনসিংহের পাগলা থানার দত্তের বাজার সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছানোর পূর্বেই ডুবে যায় নৌকাটি। এর মধ্যে ৬ জন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও ডুবে যায় তিন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে শাপলা আক্তারের (১৫) মরদেহটি ঘটনাস্থলের খানিকটা দুর থেকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ভোরে নিহতের স্বজনরা নৌকা নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে নিখোঁজ আবির ও জুবায়েদকে খোঁজতে বের হয়। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে টাংগাব ইউনিয়নের বাঁশিয়া এলাকায় ব্রক্ষ্মপুত্র নদে দুজনের মরদেহ ভাসতে দেখে। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূর থেকে তাদের মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয় বলেও জানান এই জনপ্রতিনিধি।
চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। বুধবার (০২ জুলাই) দুপুরে দামুড়হুদা উপজেলার ঝাঁঝাডাঙ্গা সীমান্তে ওই ঘটনা ঘটে। নিহত ইব্রাহিম বাবু (৩২) ঝাঁঝাডাঙ্গা গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে। ওই ঘটনায় পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে বিজিবি।
নিহতের পিতা নুর ইসলাম জানান, দুপুরে আমার ছেলেসহ ৪-৫ জন গরুর ঘাস কাটার জন্য সীমান্তের গালার মাঠে যায়। এ সময় অসাবধনতাবশত সীমান্তের ৭৯ নম্বর মেন পিলার পার হয়ে ভারতে ঢুকে পড়লে সেখানকার ৩২ বিএসএফ হালদারপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা ২ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এতে বিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় বাবু।
চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল নাজমুল হাসান গুলিবর্ষণের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, কয়েকজন স্বর্ণ চোরাকারবারির ওপর বিএসএফ গুলিবর্ষণ করেছে বলে জানা গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার সলিমগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার (০১ জুলাই) বিকালে শ্রীঘর বাজারের নজরুল ইসলামের দোকানের সন্মুখ থেকে ১৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে। এ সময় আক্কাছ মিয়া (৩২) ও ছিদ্দিকুর রহমান (২১) নামের দুই মাদক ব্যবসায়িকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা যায়- সলিমগঞ্জ ফাঁড়ির পুলিশ শ্রীঘর বাজারের চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন কালে সন্দেহ জনক একটি সিএনজিকে থামিয়ে তল্লাশি করে। আক্কাছ মিয়া কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাঙ্গরা বাজার এলাকার মৃত শহীদ মিয়ার ছেলে। ছিদ্দিকুর রহমান নবীনগর উপজেলার বড়াইল গ্রামের আতিকুর রহমানের ছেলে।
নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিনুর ইসলাম জানান- এ ঘটনায় নবীনগর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ফেনীর পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া সীমান্ত এলাকা থেকে কয়েকটি গরুসহ কোটি টাকার ভারতীয় মালপত্র জব্দ করেছে বিজিবি। বুধবার (০২ জুলাই) উপজেলাদ্বয়ের ভারত সীমান্ত এলাকায় এসব মালপত্র জব্দ করা হয়। বিজিবি জানায়, ছাগলনাইয়া ও পরশুরাম সীমান্ত এলাকায় টহল দিচ্ছিল বিজিবি। টহল দলকে দেখে চোরাকারবারিরা বিপুল পরিমাণ ভারতীয় মোবাইল ডিসপ্লে ভর্তি কার্টন ও কয়েকটি গরু রেখে পালিয়ে যায়। বিজিবি সদস্যরা মালপত্র ও গরুগুলো জব্দ করে। এসবের আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। জব্দকৃত মালপত্র স্থানীয় কাস্টমসে জমা দেওয়া হয়েছে ।
ফেনীর ৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোশারফ হোসেন জানান, সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধসহ অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবির অভিযানিক কর্মকাণ্ড ও গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
ঝিনাইদহে সাপ নিয়ে খেলা করতে গিয়ে সাপের কামড়ে প্রাণ গেল মাহাফুজুর রহমান (১৬) নামের এক কিশোরের। মঙ্গলবার (০১ জুলাই) রাতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের বিষয়খালীর কেশবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত কিশোর মাহাফুজুর রহমান ওই গ্রামের মত. মতিয়ার রহমান মতির একমাত্র ছেলে।
স্বজন ও বন্ধু সোহান জানায়, গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাছের একটি তালগাছ থেকে সোমবার (৩০ জুন) বিকালে মাহাফুজুর রহমান একটি সাপ ধরে টিফিন বাটিতে করে আটকে রাখে। যা পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে ওই তালগাছের কাছে গিয়ে সাপ নিয়ে খেলা করতে গিয়ে মঙ্গলবার (০১ জুলাই) তার হাতে ছোবল দিলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে ঝিনাইদহ হাসপাতালে ভর্তিরপর অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
জুয়া খেলারত অবস্থায় শিবপুর মডেল থানা পুলিশ ৭ জুয়ারিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। বুধবার (০২ জুলাই) সকালে শিবপুর উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের লাখপুর বাজারের পাশে বাবুল নাজিরের কলাবাগানের ভেতর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- দৌলত হোসেন (৩৮) সাং-চরআলিনগর, খোরশেদ আলম (২৪) সাং-চরসিন্দুর, ফারুক (৪৫) সাং-হরিনারায়নপুর, আলামিন (৩৮) সাং-মানিকদী, মুকসিন (৪৪) সাং-শিমুলিয়া, সেলিম (৩৫) সাং-লাখপুর ও সুরুজ (৫২) সাং-লাখপুর। পুলিশ তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও জুয়া খেলার সরঞ্জামাদী উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে শিবপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ধৃত: জুয়ারীদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
জেলার সীতাকুণ্ডে সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মূল্যবান বনায়ন কেটে গড়ে ওঠা বিতর্কিত সেই জাহাজভাঙা কারখানাটিতে দ্বিতীয় দফায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। বুধবার (০২ জুলাই) সকালে জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ যৌথভাবে এ অভিযান শুরু করে। এর আগে গত ২৫ জুন প্রথম দফায় উচ্ছেদ করে কারখানাটির স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। কারখানা এলাকায় গড়ে ওঠা আরও কিছু স্থাপনা এবং ভবনের অবশিষ্টাংশে বুধবার (০২ জুলাই) জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়েছে।
উচ্ছেদের পাশাপাশি সীতাকুণ্ডের ছলিমপুর এলাকার তুলাতলী মৌজার জায়গাটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃক্ষরোপণ শুরু করেছে বন বিভাগ। বিভিন্ন প্রজাতির দুই হাজার গাছ লাগানো হবে ওই স্থানটিতে। প্রথম দফায় সেখানে দুই হাজার বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করা হবে। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।
সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, অবৈধ জাহাজভাঙা কারখানাটি উচ্ছেদের পাশাপাশি সেখানে আমরা বৃক্ষরোপণ শুরু করেছি। এ জন্য চারা এনেছে বন বিভাগ। এ ছাড়া কারখানার অবশিষ্ট অংশটিতে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়।’ এই উচ্ছেদ অভিযানে সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল মামুন ও উপকূলীয় বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক আবুল কালাম আজাদ, রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রাশেদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। রেঞ্জ কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ঝাউ, করঞ্জা ও হিজল- এই তিন প্রজাতির দুই হাজার গাছের চারা এনেছি। এখানে লাগানো হচ্ছে। এর আগে এখানে প্রায় পাঁচ হাজার গাছ ধ্বংস করেন জাহাজভাঙা কারখানার লোকজন।’
জেলা প্রশাসনই বনের জায়গাটিতে জাহাজভাঙা কারখানা স্থাপনের জন্য দুবার ইজারার অনুমতি দিয়েছিল। আপত্তির পর আবার ইজারা বাতিল করা হয়। কোহিনূর স্টিল নামে এই কারখানা স্থাপন করেছিলেন আবুল কাসেম নামের এক ব্যক্তি। তিনি ‘রাজা কাসেম’ নামে পরিচিত।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, তুলাতলী মৌজায় বন বিভাগের ২০ ধারায় নোটিফিকেশনকৃত বনাঞ্চল রয়েছে। ইজারা চুক্তিতে কাগজে-কলমে সলিমপুর মৌজা দেখানো হলেও মূলত তুলাতলী মৌজায় বিতর্কিত এই ইয়ার্ড গড়ে ওঠে। বন বিভাগ বারবার এ ইজারায় আপত্তি জানিয়ে আসছিল। আপত্তি উপেক্ষা করে তখনকার জেলা প্রশাসকেরা একই ভূমি দুবার রাজা কাসেমকে ইজারা দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে প্রথম ৭ দশমিক ১০ একর ভূমি শিপইয়ার্ডের জন্য ইজারা পায় কাসেমের বিবিসি স্টিল। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আইনি পদক্ষেপ নেয় এই ইজারার বিরুদ্ধে; কিন্তু তুলাতলী মৌজাটি বনাঞ্চল হওয়ায় উচ্চ আদালত ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি ইজারা চুক্তি অবৈধ ঘোষণা করেন। পরে আর ইজারা চুক্তি নবায়ন করেনি জেলা প্রশাসন।
বিবিসির নামে ইজারা বাতিল হওয়ার পর কাসেম তার স্ত্রী কোহিনূর আকতার নতুন করে একই জায়গায় জমি ইজারার আবেদন করেন। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয় কোহিনূর স্টিল। এরপর ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কোহিনূর স্টিলের নামে সীতাকুণ্ডের উত্তর সলিমপুর মৌজা দেখিয়ে পাঁচ একর বনভূমি ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন।
এ নিয়ে ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘কৌশলে’ বন ইজারার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আবার ২০২৩ সালের ৮ জুন ‘চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদারতায় ইয়ার্ডের পেটে ৫ হাজার গাছ’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে ২০২৩ সালে জেলা প্রশাসন সীতাকুণ্ডের কোহিনূর স্টিল নামের ওই জাহাজভাঙা কারখানার ইজারা বাতিল করেছিল। উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করে হাইকোর্টে প্রতিবেদনও দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এরপর বিভাগীয় কমিশনার বরাবর ইজারা চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করেন কোহিনূর স্টিলের মালিক আবুল কাসেম। ইজারা ফিরে পেয়ে কারখানাটিতে ফের জোরেশোরে কাজ শুরু করা হয়। সীতাকুণ্ডের সলিমপুর এলাকার তুলাতলী মৌজায় কোহিনূর স্টিল নামের ইয়ার্ডটির অবস্থান। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় বাতিল হওয়া ইজারা ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেয় ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে। এরপর কাসেম আবার ওই জায়গায় কাজ শুরু করেছিলেন। পরে আদালতের নির্দেশে তা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন।
মন্তব্য