পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেছেন, তাদের কাজ সুশাসন নিশ্চিত করা। আর সেটি করার চেষ্টাই করে যাচ্ছেন।
সুশাসন নিশ্চিত হলে মানুষ তাদের সঞ্চয় নিয়ে পুঁজিবাজারে ছুটে আসবে বলে আশা করছেন তিনি। তার মতে, তখন আর পেছনে তাকাতে হবে না।
পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক প্রবণতা নিয়ে শিবলী বলেছেন, এখন আর কোনো একক খাতের দাম বাড়ছে না। এভাবে পুঁজিবাজারে একটি সুস্থ প্রবণতা তৈরি হয়েছে।
নিউজবাংলাকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
আপনি যখন পুঁজিবাজারের দায়িত্ব নিয়েছেন তখন একটি টালমাটাল অবস্থা ছিল। এমন একটি অবস্থায় যখন আপনাকে প্রস্তাব দেয়া হলো তখন কী ভেবে দায়িত্ব দিতে আগ্রহী হলেন? তখন কী কী পরিকল্পনা ছিল আপনার।
কোনো পরিকল্পনা ছিল না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন আমাদের কাছে কিছু ডিজায়ার করেন, আমরা তার নেতৃত্বের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল এবং উনাকে মানা করার মতো ক্ষমতা আমাদের নাই। আমাদের কিছু বললে, সেটা যত কঠিন কাজই হোক, সেটা আমরা মেনে নিই। এখন আমি যদি খুবই সহজ, আরামের একটি কাজ উনার কাছ থেকে চেয়ে নিই, তাতে তো উনার কোনো লাভ হবে না; বরং কিছু চ্যালেঞ্জের কিছু থাকলে সেটি যদি আমরা কোনোভাবে ভালো করতে পারি সেটাই উনাকে সাহায্য করার হবে। সেটাই ছিল আমার চিন্তাভাবনা।
পুঁজিবাজার একটি টেকনিক্যাল জায়গা। এটি লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর প্রত্যাশার জায়গা। এ বিষয়গুলোকে কীভাবে আয়ত্তে নিয়েছেন। আপনার কী আগে থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ছিল, যা সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হয়েছে?
আমার স্ত্রী এটিকে খুব মজা করে বলেন। আমি ফাইন্যান্সেরই ছাত্র; শিক্ষক ছিলাম। কিন্তু নিজে কখনো বিনিয়োগ করতাম না এবং আমার বাবার মৃত্যুর পর আমি উনার কাছ থেকে কিছু শেয়ার, আইসিবির সার্টিফিকেট উত্তরাধিকার সূত্রে পাই। ওটাই ছিল আমার অ্যাকাউন্টে। আমি নিজে কখনোই ডে ট্রেডিং বা কোনো রকম কেনাবেচায় যুক্ত ছিলাম না। জাস্ট সাধারণ, খুব অল্প বিনিয়োগ। এটাই ছিল। এটা নিয়েই স্ত্রী এখন আমাকে বলেন যে, তুমি যে জিনিসটি কখনো করোনি, এখনও ওটাই তোমাকে ভালোভাবে দেখতে হচ্ছে।
যেকোনো কিছুকে এগিয়ে নিতে আমরা জানি কিছু না কিছু পরিকল্পনা থাকা উচিত। দীর্ঘ, মধ্য ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা থাকা উচিত। আপনি আসলে কোন ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন?
পরিকল্পনা তো অবশ্যই ছিল। আমার আগে যারা দায়িত্বে ছিল তারা খুবই ভালো একটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও নিয়মনীতি তৈরি করে গেছেন। এখানে তার আাগে কিন্তু তেমন কোনো নিয়ম-নীতিও ছিল না; নীতিমালা ছিল না। আমি ধন্যবাদ দেবো আমার আগের কমিশনকে, যারা সুন্দরভাবে এটি করে দিয়ে গেছেন। আমরা এখন ওটাইকে একটু আপগ্রেড করে গভর্ন্যান্সটাকে (সুশাসন) এনশিউর (নিশ্চিত) করার চেষ্টা করছি।
আশা করব যে, গর্ভন্যান্স এনশিউর হলেই মানুষ তার সঞ্চয় নিয়ে এই খাতের দিকে এগিয়ে আসবে। তখন আর পেছনে তাকাতে হবে না। আর যেহেতু আমাদের সেক্টর এখন সবচেয়ে বেশি রিটার্ন দিচ্ছে এবং এখানে বিনিয়োগ করলে ভালো রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে, তো এখানে দিনে দিনে বিনিয়োগের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বর্তমান কমিশন বন্ড মার্কেট নিয়ে অনেক কাজ করছে। এসব বন্ডে কী সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে পারবে নাকি আলাদা কোনো পরিকল্পনা আছে?
বন্ডে বিনিয়োগকারীরা সরাসরি বিনিয়োগ করতে পারবে। সব বন্ডেই করা যাবে। তবে আমরা এগুলোকে আরও সহজ করার জন্য এগুলোকে লিস্টিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ব্যাংকের পারপিচুয়াল বন্ডের থেকে সব ব্যাংকেই এখন গ্র্যাজুয়ালি লিস্টিং হবে। লিস্টিং হলে সব বিনিয়োগকারী এগুলো কেনাবেচা করতে পারবে।
এটা কেইস টু কেইস বেসিসে ডিফারেন্ট হবে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের, এমন না। এটা হয়তো কোনো কোম্পানির মিনিমাম স্কিপ থাকবে এক লাখ টাকা। কারও হয়তো ১০ হাজার টাকার; কারও হয়তো ৫০ হাজার টাকার। ওই সাইজের ট্রেড করতে হবে।
এতে আমাদের ট্রানজেকশনও বাড়বে অনেক। এতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে। এর ফলে পুঁজিবাজারের সব পক্ষের উইন উইন অবস্থা তৈরি হবে। এতে ইস্যুয়ার এবং ভেনিফিশারি সবাই লাভবান হবে।
বিমা সেক্টর নিয়ে পুঁজিবাজারে গুজব আছে। এর আগে ২০১০ সালে ব্যাংক সেক্টরের এমনভাবে শেয়ারের দর বেড়েছিল। এখনও সেদিকে যাচ্ছে?
আমি যখন প্রথম দায়িত্বে আসি তখন এখানে টার্নওভার ছিল ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা। তখন বড় ক্যাপের ক্যাপিটাল মার্কেটে যেসব প্রোডাক্ট আছে সেগুলোতে বিনিয়োগ হতো। কিন্ত এর রিফ্লেকশনটা বড় স্কেলে দেখা যেত না। ইন্স্যুরেন্সের মার্কেট ক্যাপগুলো ছোট ছোট। তো এগুলো কেউ যদি একটু ভালো করে ট্রেড করে তাহলেই এটি ভিজিবল হয়ে যায়।
ব্যাংকের যেহেতু মার্কেট ক্যাপ বড়, সেহেতু বিমার টাকার ডাবল করেও সেভাবে দেখা যায় না। এখন ট্রেড ভলিউম সাউজ সব বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার মানে আমাদের এখানে যত বেশি লিকুইডিটি ইনভেস্টমেন্ট আসবে ততই এখন বিভিন্ন সেক্টরের গ্রোথ দেখা যাবে।
এখন কিন্ত শুরু ব্যাংক ইন্স্যুরেন্স না, ফার্মাসিউটিক্যাল, সিরামিকস, টেক্সটাইল, একেক দিন একেকটা বাড়ে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডও বাড়ে, কমে। এখন আর কেউ বলতে পারবে না, কোনো নির্দিষ্ট সেক্টর বাড়ছে।
এখন তো লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। এটা তো কোনো একটি সেক্টর দিয়ে হওয়া সম্ভব না। ফলে বোঝাই যাচ্ছে সব কোম্পানিই মুভিং।
সম্প্রতি মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব এসেছিল, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি ইউনিটপ্রতি দর যখন কম যায়, তখন তারা মার্কেট থেকে নিজেদের ইউনিট বাইব্যাক করতে চায়। এ ক্ষেত্রে আপনাদের কোনো প্রস্তাব আছে কি না?
যাদের মিউচ্যুয়াল ফান্ড তারাই যদি বাইব্যাক করতে চায়, তাহলে সেটি আইনের সঙ্গে অনেকটাই সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। আমাদের এখানে এখনও এমন কোনো আবেদন দেখিনি।
কেপিসিএল তাদের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। ওরিয়নেরও এমন কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে, সেগুলোরও মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র বোনাস শেয়ার ইস্যু করছে। এসব কোম্পানির ভবিষ্যৎ কী? বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ রাখার জন্য আপনার কোনো উদ্যোগ আছে?
সরকারের সাথে একটু নেগোসিয়েশন পর্যায়ে আছি। ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ এ রকম একটা ব্যবস্থাপনায়। এটা হলে লিস্টেড কোম্পানিগুলো কিছুটা বেনিফিট পাবে। তাদের যতটুকু বিদ্যুৎ সরকার কিনবে ততটুকুর জন্য পেমেন্ট পাবে।
আর নতুন যারা আসছে তাদের অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করেছি, অ্যাসোসিয়েশনকে আমরা বলেছি যে, আপনারা ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিলে এখন মানুষের এখন আর ইক্যুইটিই ফেরত আসে না। উনাদের সঙ্গে আমাদের যে কথা হয়েছে, তারা মিনিমাম ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেবে এখন থেকে। সেটা দিলে ১০ বছরের একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট চললে তার লাভসহ ফেরত আসবে। আপাতত তাই করব।
আর ভবিষ্যতে পাওয়ার প্লান্ট দেয়ার আগে খুব ভালোভাবে অঙ্ক করে নেব, যাতে বিনিয়োগকারীদের কোনো ক্ষতি না হয়।
বহুজাতিক কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার জন্য আপনারা কাজ করছেন। এর ভবিষ্যৎ কী?
এটা নিয়ে কাজ চলছে। আমাদের কনসার্নড বিভাগ কাজ করছে। এখন কাজ শুরু হয়েছে, আগামী বছর এর ফলাফল পাওয়া যাবে।
ওয়ালটনের মতো বড় কোম্পানি পুঁজিবাজারে ১ শতাংশ শেয়ার নিয়ে প্রতিনিধিত্ব করছে। এতে পুঁজিবাজারে ওয়ালটনের শেয়ার নিয়ে কাসরাজি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে কারসাজি হতে পারে। আমাদের আসার আগে হয়ে গেছে সবকিছু। এর শেষ পর্যায়ে এসে আমরা পেয়েছি। ওয়ালটনের সচিব কিছুদিন আগে এসেছিলেন। এ ছাড়া ওয়ালটনের অন্যান্য যারা ওনার্স, তাদেরও বলেছি। পর্যায়ক্রমে তারা শেয়ার অফলোড করে ১০ শতাংশে নিয়ে যায়। তারা একমত হয়েছেন। আস্তে আস্তে তারা করে দেবেন।
বন্ধ কোম্পানি চালু করার ক্ষেত্রে আপনি অনেক উদ্যোগ নিচ্ছেন। যেসব কোম্পানির ইতোমধ্যে বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে, সেগুলোর বর্তমানে কী অবস্থা?
রিং সাইন প্রোডাকশনের চলে আসছে। আরও একটি প্রোডাকশনে চলে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাকিগুলোরও হচ্ছে। আমাদের আসলে ম্যানপাওয়ার কম তো। আমরা এখানে ৮০ জন লোক কাজ করি। এর ফলে এতগুলো কাজ একসঙ্গে করা মুশকিল হয়ে যায়। আমরা একটি করে ধরছি, করছি। নতুন বোর্ড করে দিচ্ছি। তারা প্রোগেস করছে। এখন পর্যন্ত আমরা যে বোর্ড গঠন করে দিয়েছি, তার প্রোগ্রেস রিপোর্ট শিগগিরই চলে আসবে। তখন সব বোঝতে পারব কোথায়, কী হচ্ছে।
ইউনাইটেড এয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আছে। কিন্ত কোম্পানিটির বোর্ড গঠন করা হলেও সেটি লেনদেন হচ্ছে ওটিসি মার্কেটে। এ থেকে উত্তরণের পথ কী?
ওটিসিতে দেয়ার কারণ ছিল, কোনা অ্যাসেট নাই, লায়াবিলিটিতে ভরা। এই কোম্পানি ট্রেড করে যদি শেয়ারের প্রাইস বেড়ে যায় তাহলে পবরর্তীতে একটি নতুন ঝামেলা তৈরি হবে। তো আমরা এখানে ঢুকে দেখলাম, এখানে মহাসমস্যা। তারপরও আমরা আমাদের বোর্ড বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজি খুঁজে বের করছি। কীভাবে এটাকে আকাশে উড়ানো যায়।
আমাদের সিভিল এভিয়েশন যদি একটু সহযোগিতা করে, আমাদের মিনিস্ট্রি যদি একটু সহযোগিতা করেন তাহলেই আমরা পারব।
ওটিসি মার্কেট নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না? এখানে লেনদেন প্রক্রিয়া কঠিন হওয়ায় ভোগান্তিতে থাকে বিনিয়োগকারীরা। ওটিসি মার্কেটের উন্নয়নে আপনার পরিকল্পনা কী?
ওটিসি মার্কেটে এরই মধ্যে চারটি চলে গেছে মেইন বোর্ডে। ১৫টি চলে যাচ্ছে এসএমই প্ল্যাটফর্মে। ৩০টি যাচ্ছে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) প্ল্যাটফর্মে। ১৩টি কোম্পানি তালিকাচ্যুতির আবেদন করেছে। এর মধ্যে চারটির তালিকাচ্যুতির কাজ এগিয়ে চলছে। কোর্টে একটির অর্ডার পেন্ডিং আছে। আর দুটিকে আমরা ডেকে দেখছি কী করা যায়।
ওটিসি বলে কিছু রাখা যাবে না। এটা হলে কোম্পানির গভর্ন্যান্স থাকে না। ইচ্ছামতো চালায়, বিক্রি করে দেয়; জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এক্সপ্লোজার লিমিটেড, ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা সংশোধনের প্রস্তাব ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। কিন্ত সেটি এখনও বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। আপনাদের কোনো উদ্যোগ আছে কী?
ওটা নিয়ে আমরা কথা বলেছি। টায়ার ওয়ানকে আমরা বলেছি এই লিমিটেডের বাইরে রাখতে। তারা বলেছে সেটি করে দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংক খুব সহযোগিতা করছেন।
অবণ্টিত লভ্যাংশ নিয়ে তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এখন সেটি কী অবস্থায় আছে? এ ছাড়া বোনাস লভ্যাংশ লভ্যাংশগুলো কীভাবে বণ্টন করা হবে?
এটা নিয়ে আমাদের নির্ধারিত বিভাগ কাজ করছে। তবে এর অগ্রগতি হচ্ছে, গেজেট প্রকাশের জন্য ইতোমধ্যে বিজি প্রেসে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে এক হাজার কেজি হাড়িভাঙ্গা আম পাঠাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। দুই প্রতিবেশী দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সোমবার (১৫ জুলাই) এই আমের চালানটি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছাবে।
নয়াদিল্লি পৌঁছানোর পর আমগুলো ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, কূটনীতিক এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যেও বিতরণ করা হবে— মৈত্রীর অংশ হিসেবে।
এছাড়া, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আম পাঠাচ্ছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীসহ সেখানকার বিশিষ্টজনদের জন্য ৩০০ কেজি হাড়িভাঙ্গা আম উপহার পাঠানো হয়। আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে ৬০টি কার্টনে এসব আম পাঠানো হয়।
প্রতিবছর বাংলাদেশ সরকার মৌসুমি উপহার হিসেবে ত্রিপুরা রাজ্য সরকার ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য আমসহ বিভিন্ন ফল পাঠিয়ে থাকে। এর জবাবে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারও উপহার হিসেবে বাংলাদেশের জন্য পাঠায় বিখ্যাত রসালো ‘কুইন’ জাতের আনারস।
চলতি বছরের আম উপহার পাঠানোর কার্যক্রমটি পরিচালনা করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এটি রপ্তানিকারকের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন, আগরতলার কর্মকর্তাদের কাছে উপহারের চালানটি হস্তান্তর করা হয়।
এই উদ্যোগকে ‘আম কূটনীতি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়, যা আগের প্রশাসনের সময়েও চলমান ছিল। এখনো এটি সৌহার্দ্য ও পারস্পরিক শুভেচ্ছার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বিষয়ে ঐক্য গড়ে এবং রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ে একমত হয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ তৈরির লক্ষ্যে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজ আলোচনায় বসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে আজ সকাল সাড়ে ১১টায় দ্বিতীয় দফার দ্বাদশ দিনের মত আনুষ্ঠানিকভাবে এ আলোচনা শুরু হয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আজকের আলোচনার সূচিতে প্রাধান্য পাচ্ছে- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা, প্রধান বিচারপতি নিয়োগবিধি ও জরুরি অবস্থা ঘোষণা।
এর আগে, উল্লেখ্য তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। পূর্বের অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আজ অধিকতর আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
বরাবরের মতো আজকেও আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
এছাড়া, কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন- বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
সংলাপ শুরু হওয়ার আগে সূচনা বক্তব্যে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে বলেন, যেহেতু আপনারা রাজনৈতিক দল করেন, সেহেতু সব বিষয়ে আপনাদের একটি নির্দিষ্ট অবস্থান থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে আপনাদের প্রতি অনুরোধ, একটি মাঝামাঝি স্থানে এসে আমাদের দাঁড়াতে হবে।
পরবর্তীতে যদি জনগণের কাছ থেকে আপনারা প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারেন, তাহলে সেটি পরিবর্তন করতে পারেন এবং সেটি জনগণের রায়ের ওপর নির্ভরশীল থাকবে।
কিন্তু কমিশন মনে করছে, একটি পর্যায়ে আসা ভালো।
তিনি আরো বলেন, আমরা আপনাদের বক্তব্যকে গুরুত্বহীন মনে করছি না, বরং আমরা চাচ্ছি সকলে একটি ঐক্যমতে পৌঁছাক। চাইলেই এ আলোচনা বাদ দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু তাতে বিদ্যমান পরিস্থিতিই থেকে যাবে। আমাদের একটি জায়গায় আসতে হবে- এই বিবেচনাটা যদি আপনারা করেন, তাহলে আমাদের পক্ষে ঐকমত্য গঠন করা সম্ভব।
তিনি সকলের প্রতি কিছুটা ছাড় দিয়ে ও কিছুটা অবস্থান পরিবর্তন করে একটি জায়গায় আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা অবস্থার পরিবর্তন করে হলেও এগিয়ে আসুন। না হলে আমরা যেখানে আছি, সেখানেই থেকে যাব। গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে এইটুকু বিবেচনা করুন যে, এটা সম্ভব কি-না।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় অংশগ্রহণ করছে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
এর আগে, দফায় দফায় বৈঠকে কমিশন প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ও সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণকল্পে স্বতন্ত্র কমিটি গঠন করাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে।
কমিশন সূত্রে জানা যায়, আলোচনা শেষে ব্রিফ করবেন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ত্রাস খ্যাত শাহীনুর রহমান ওরফে শাহীন ডাকাতকে কক্সবাজার আদালতের হাজতে মুঠোফোন সুবিধা দেয়ার ঘটনায় দুই টিএসআই সহ ৫ জনকে দায়িত্ব অবহেলার দায়ে পুলিশ লাইন্স এ সংযুক্ত করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এছাড়া কোর্ট হাজতে আসামিদের সাথে সাক্ষাৎতের বিষয়ে আরও সর্তক হওয়ার কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ক্লোজড হওয়াদের দুই টিএসআই, তিনজন কনস্টেবল। তারা হলেন টিএসআই সুরেন দত্ত, আবদুল ওয়াহেদ, কনস্টেবল নাজম হায়দার, গোলাম।মোস্তফা ও ইয়াছিন নূর।
এর আগে এই ঘটনা নিয়ে শুক্রবার কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যোর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত বুধবার (৯ জুন) আদালতে হাজিরা দিতে কোর্ট পুলিশের হেফাজতে হাজতখানা থেকে বের করে আনা হয় শাহীনকে। ঠিক তখনই তার পকেটে থাকা মোবাইল ফোন নজরে আসে কক্সবাজারের গণমাধ্যমকর্মী দের চোখে। এনিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে গঠিত হয় তদন্ত কমিুট।
জানা গেছে, গত ৫ জুন সকালে কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য শাকের আহমদের বাড়ি থেকে সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় শাহীন ডাকাতকে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, অস্ত্র, মাদকসহ অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে।
কক্সবাজার আদালতের কোর্ট পরিদর্শক মো. গোলাম জিলানী ক্লোজড'র বিষয়টি স্বীকার করেন।
‘মন মোর মেঘেরও সঙ্গী’ এই স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে নওগাঁয় উদযাপিত হলো বর্ষা উৎসব-১৪৩২।
শনবিার (১২ জুলাই) রাত ৮টায় শহরের প্যারিমোহন লাইব্রেরী গ্রন্থাগারে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই বর্ষা উৎসব। শুরুতে দলীয় গান পরিবেশনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় উৎসব। পরে একে একে গান, নাচ, আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিল্পীরা।
এছাড়াও বর্ষাকথনসহ অন্যান্য আয়োজনের মাধমে রাত ১০টায় শেষ হয় এই বর্ষা বরণ উৎসবটি। বর্ষা বরণ উৎসবের আয়োজন করেন ‘নওগাঁ সাংস্কৃতিক ঐক্য’ নামে একটি সংগঠন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন সংগঠনটির সভাপতি মনোয়ার লিটন ও সাধারন সম্পাদক মাগফুরুল হাসান বিদ্যুৎ।
অনুষ্ঠানে নাচ, গান আর কবিতা আবৃত্তি ও বর্ষাকথনে ক্ষণে ক্ষণে ভেসে আসে গ্রাম বাংলার প্রকৃতিতে বর্ষার আবেদনের কথা। শিল্পীদের এমন পরিবেশনায় বর্ষা বন্দনায় মেতে ওঠে স্থানীয় শিল্পী এবং সংস্কৃতি কর্মীরা।
আয়োজকরা জানান, বর্ষা উৎসব উদযাপন করার মাধ্যমে প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ পায়। এছাড়াও প্রজন্মের সাথে প্রজন্মের মিল বন্ধন, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও শহরের যান্ত্রিক জীবনে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যর ধারনা দিতে এমন উৎসবের আয়োজন।
নওগাঁ সাংস্কৃতিক ঐক্য সংগঠনটির সভাপতি মনোয়ার লিটন বলেন, বর্ষা আবহমান বাংলার শিল্প, সাহিত্য সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। বর্ষার সাথে বাংলার মানুষের সম্পর্ক বহু প্রাচীন। বর্ষায় প্রকৃতির রূপ-বৈচিত্র্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। প্রচন্ড খরতাপের পর বর্ষা এলে প্রাণ ফিরে পায় প্রকৃতি। সাহিত্যের পরতে পরতে বর্ষা যেমন উদ্ভাসিত তেমই যাপিত জীবনেও বর্ষা এনে দেয় নিজেকে খুজে পাওয়ার মূহুর্ত। গ্রীষ্মের ধূলোমলিনতা ধুয়ে প্রকৃতি সবুজের সমারোহে সাজে। জীর্ণতা ধুয়ে মুছে, নব-যৌবন আর শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিক এবারের বর্ষা এমনি প্রত্যাশার কথা বলেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে নবীনগর-কোম্পানিগঞ্জ রোড়ের পৌর এলাকার আলীয়াবাদ বাজারে সড়কের পাশে মাটির চাপে ড্রেইন ভেঙে গিয়ে মরণ ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। যে কোন সময় ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা।
জানা যায়- জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে টানা বৃষ্টিতে নবীনগর- কোম্পানিগঞ্জ সড়কের আলীয়াবাদ বাজারে সড়কের পাশের ড্রেইটি ভেঙে যাওয়ার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে সড়কটি। ঝুঁকি নিয়েই এ সড়কে প্রতিনিয়ত চলাচল করে নবীগর, কুমিল্লা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের যানবহন। তাই চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এ সড়ক যাতায়াতকারী যাত্রীদের। আলীয়াবাদ বাজারে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জনদুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ- পৌরসভার এ ড্রেইনটি দিয়ে আলীয়াবাদ গ্রামের পানি নিষ্কাশন হয়ে থাকে। ফলে ওই এলাকায় তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। অবিলম্বে ড্রেইনটি নির্মাণ করে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল ও ফাটল ধরে যাওয়া সড়কের কাজ দ্রুত করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান- প্রতিদিন পৌর এলাকারসহ আশপাশের গ্রামের হাজারো মানুষ আসে এ বাজারে। এ ড্রেইনটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। পরিবহণ শ্রমিকরা জানান- ঝুঁকি নিয়ে আমাদেরকে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। এ স্থানে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এ ড্রেনটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে প্রতি দিনই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিষয়ে নবীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নবীনগর পৌরসভার প্রশাসক রাজীব চৌধুরী বলেন-"সড়কের মালিক সওজ, তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে, তারা জানিয়েছেন দ্রুত সময়ে কাজ শুরু হবে"।
চাঁদপুরে ‘রাসূল (সা.) বার্তা বাহক’ এমন বক্তব্যকে কেন্দ্র করে মসজিদের ভেতরে খতিবের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত আসামি বিল্লাল হোসেনকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন আদালত।
শনিবার (১২ জুলাই) তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন চাঁদপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাতুল হাসান আল মুরাদ।
আদালত সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকালে তাকে আদালতে হাজির করে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ। পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আসামি। এরপর আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে, শুক্রবার (১১ জুলাই) এই ঘটনায় আহত খতিব মাওলানা আ ন ম নুরুর রহমান মাদানীর ছেলে আফনান তাকি বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।
এসব তথ্য ইউএনবিকে নিশ্চিত করেছেন সরকার পক্ষের আইনজীবী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের এপিপি আব্দুল কাদের খান ও জেলা জজ আদালতের এপিপি ইয়াসিন আরাফাত ইকরাম।
চাঁদপুর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক শহীদুল্লাহ ইউএনবিকে জানান, শনিবার বিকাল ৩টার দিকে আসামিকে আদালতে আনা হয়। এরপর আসামি বিচারকের কাছে জবানবন্দী দেন। জবানবন্দী শেষে বিকালে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন— চাঁদপুর সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হোসেন।
এদিকে, শনিবার দুপুর থেকে একটি চক্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ায়, খতিব নুরুর রহমান মাদানী মারা গেছেন।
তবে মামলার বাদী আহত খাতিবের ছেলে আফনান তাকী জানান, তারা বাবা প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর ঢাকা হলি কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং শঙ্কামুক্ত আছেন।
গুরুতর আহত খতিব মাওলানা নূরুর রহমান মাদানী শহরের গুনরাজদী এলাকার বাসিন্দা। তিনি মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে প্রায় শুক্রবার খুতবা দেন।
অভিযুক্ত বিল্লাল হোসেন সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের মনোহর খাদি গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে। শহরের বকুলতলায় বসবাস করেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বাদ জুমা মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদে হামলার শিকার হন মাওলানা নূরুর রহমান মাদানী। আগেই জুম্মার নামাজে আলোচনা ও খুতবা নিয়ে ক্ষিপ্ত ছিলেন ওই এলাকার ভ্রাম্যমাণ সবজি ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন। ঘটনার দিন নামাজ শেষে তিনি মসজিদের ভেতরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্র (চাপাতি) দিয়ে খতিবের ওপর হামলা চালান। এতে খতিবের কানে ও মাথায় মারাত্মক জখম হয়। পরবর্তীতে মুসল্লিরা তাকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।
এ সময় হামলাকারী বিল্লাল হোসেনকে আটক করে পুলিশ সোপর্দ করেন মুসল্লিরা।
এদিকে, এই ঘটনায় শহরে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বিকাল ৩টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব।
এ ছাড়া, বিকাল ৫টায় শহরের রেলওয়ে বায়তুল আমিন জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী চাঁদপুর শহর শাখা।
গোলাকান্দাইলের হাটে এসেছেন শামীম মিয়া। তিনি বলেন, সারা বছর চাষের মাছ খেতে আর ভাল লাগে না। বর্ষাকালে আশেপাশের এলাকা থেকে প্রচুর দেশি মাছ রূপগঞ্জের হাট বাজারে পাওয়া যায়, তা কিনতেই হাটে আসা। আবুল হোসেন নামে আরেকজন বলেন, নতুন পানির টাটকা মাছ খাওয়ার মজাই আলাদা। তবে দাম একটু বেশি। এখন বর্ষাকাল। নতুন পানি এসেছে নদী-নালা, খাল-বিল, খেত, হাওর-বাঁওড়ে। মুক্ত জলাশয়ে এখন পাওয়া যাচ্ছে দারকিনা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, চান্দা, খলসে, গজার, বোয়াল, চিতল, বাগাড়, আইড়সহ নানা প্রজাতির মাছ। গ্রামগঞ্জ হয়ে এসব মাছ যাচ্ছে রাজধানীসহ বড় বড় শহরে।
কায়েতপাড়া বাজারে শনিবার দেখা যায়, নীলাস্বরের দোকানে পুঁটি, বোয়াল, ট্যাংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। পুঁটিগুলো টাটকা, আকারে বেশ বড়। তিনি প্রতি কেজি পুঁটি এক হাজার টাকা দর হাঁকাচ্ছিলেন। তাঁর দোকান থেকে আধা কেজি পুঁটি দর-কষাকষি করে ৪০০ টাকায় কেনেন ব্যবসায়ী আলো মিয়া। ৬০০ টাকায় আধা কেজি ট্যাংরা, ১ হাজার টাকায় এক কেজি ওজনের একটি বোয়াল কেনেন তিনি।
বর্ষার এই মৌসুমে দেশি মাছের প্রতি মানুষের আগ্রহও বেশি। গাউছিয়ার তাতবাজার এলকার কাঁচাবাজার থেকে বড় আকারে এক কেজি বেলে মাছ ১ হাজার ৩০০ টাকায় কেনেন বেসরকারি চাকরিজীবী মিঠু। এ ছাড়া এক হাজার টাকা কেজির চিংড়ি মাছ এবং ২ হাজার ৩০০ টাকা দরের ইলিশও কিনেছেন তিনি। মিঠু বলেন, দেশি মাছের দাম অনেক বেশি। বাসার লোকজন বাইল্যা মাছ খেতে চাচ্ছিল, দাম বেশি সত্ত্বেও এক কেজি কিনলেন।
বাজারে নানা প্রজাতির ছোট মাছের পাশাপাশি বড় মাছও লক্ষণীয়। ভুলতা বাজারের বাচ্চু মিয়ার দোকানে অনেক মাছের মধ্যে একটি রুই মাছ পাওয়া গেল ১২ কেজি ওজনের। প্রতি কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকা হিসেবে এই মাছটি ১৯ হাজার ২০০ টাকা হাঁকাচ্ছিলেন তিনি। তাঁর দোকানে চার কেজি ওজনের চিতলও ছিল। প্রতি কেজি এক হাজার টাকা করে চার হাজার টাকা দাম চান একটি চিতল মাছের। তাঁর কাছে ছয় কেজি ওজনের আইড় মাছও দেখা গেল। বাচ্চু মিয়া বলেন, নদীর মাছ এগুলো। সব সময় এমন মাছ পাওয়া যায় না। তাই দাম বেশি।
তাঁর পাশেই মাছ নিয়ে বসে ছিলেন মতিন। সাত কেজি ওজনের একটি বাগাড় মাছের দাম চাইছিলেন তিনি সাত হাজার টাকা। মতিনের মতে, যাদের বড় পরিবার তারা বড় আকারের মাছ কেনে। নদ-নদীর এসব বড় মাছ খুব সুস্বাদু।
মুক্ত জলাশয়ের মাছের দাম বেশ চড়া। বাজারভেদে ও আকারভেদে দেশীয় এসব দামের পার্থক্য হয়ে থাকে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পুঁটি ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, প্রতি কেজি ট্যাংরা ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বেলে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৩০০, বাইন ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০, চিংড়ি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০, মলা ৬০০ টাকা, পিয়ালি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, গুলশা ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বাতাসি ১ হাজার ২০০, কাচকি ৮০০, শোল ১ হাজার টাকা, মাগুর ৫০০ থেকে ৬০০, শিং ৪০০ থেকে ৫০০, পাবদা ৪০০, বাগাড় ১ হাজার টাকা, আইড় ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০, বোয়াল ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, চিতল ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা, বড় রুই ১ হাজার ৬০০ টাকা প্রতি কেজি।
মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে উৎপাদিত মোট মাছের ৫৯ শতাংশ চাষের। নদী, খাল, বিল, হাওরের মতো মুক্ত জলাশয়ের মাছ মোট উৎপাদনের মাত্র ১৫-১৭ শতাংশের মতো। অর্থাৎ মুক্ত জলাশয়ের মাছের উৎপাদন কম। তা ছাড়া মুক্ত জলাশয়ের মাছের স্বাদ বেশি। সরবরাহ কম এবং চাহিদা বেশি থাকায় মুক্ত জলাশয়ের মাছের দাম বেশি।
বর্ষার নতুন পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে খেতে, বিলে, হাওরে, নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দেখা মেলে। মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, মিঠাপানির মাছ প্রায় ২৬১ প্রজাতির। এর মধ্যে বর্ষায় ৩০-৩৫ প্রজাতির ছোট মাছ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দেখা যায়।
মুড়াপাড়া কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক খোরশেদ আলম বলেন, বর্ষা শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দারকিনা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, টাকি, শোল, গজার, শিং, মাগুরহ অসংখ্য ছোট প্রজাতির মাছ দেখা যায়। শুষ্ক মৌসুমে অল্প পানিতে কিছু মাছ থাকে। অনেক মাছ বৃষ্টি আসার সঙ্গে সঙ্গে ডিম ছাড়ে। ডিম থেকে পোনা খুব দ্রুত বড় হয়। বৃষ্টির কারণে বিল, খাল ও নদীর সংযোগ হওয়ায় মাছ ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। মাছের প্রাচুর্য বাড়ে।
মৎস্য অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন, মুক্ত জলাশয়ের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে অধিদপ্তর কাজ করছে। রূপগঞ্জে মাছের অভয়াশ্রম নেই বললেই চলে। এর আওতায় নদী বা খাল-বিলের গভীর অংশে মাছ ধরা নিষেধ থাকে সারা বছর। সেখানে মাছ তৈরি হবে এবং বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায়। প্রকল্প নিয়ে এ ধরনের অভয়াশ্রমের সংখ্যা বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে।
মন্তব্য