সরকারঘোষিত লকডাউন বা শাটডাউনে আবারও কাজহীন হয়ে পড়ায় জীবিকার অনিশ্চয়তায় পড়তে যাচ্ছেন দেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রায় সাড়ে ৫ কোটি মানুষ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আংশিক ও তার পর সর্বাত্মক শাটডাউন দেয়া হচ্ছে দেশে। এ সময়ে বন্ধ থাকবে শপিং মল, মার্কেট, পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, বিনোদনকেন্দ্রসহ প্রায় সবকিছুই।
স্বাভাবিক কারণেই এসব খাতের মানুষ থাকবেন কাজহীন। এতে তাদের আয়-রোজগারের খাতাও থাকবে শূন্য।
আবার শুধু খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ চালু থাকলেও তাতেও থাকছে সময়ের সীমাবদ্ধতা। লোকজন ঘর থেকে বের হতে না পারলে কিংবা মানুষের আয়ের চাকা বন্ধ থাকলে এসব খাবারের দোকান চলবে কীভাবে, সেটা নিয়েও আছে সংশয়।
অন্যদিকে করোনার প্রকোপে দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম ও সার্বিক জীবনযাত্রার ব্যয়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এই সময় বিভিন্ন পণ্য ও সেবা-সার্ভিসের মূল্য বেড়েছে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। ফলে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় ও ব্যয় বৃদ্ধিজনিত বাড়তি খরচের চাপে এসব মানুষ জীবিকার প্রশ্নে চোখে শুধুই অনিশ্চয়তাই দেখছেন।
বাংলাদেশ দোকানমালিক সমিতির তথ্য বলছে, দেশে দোকান বা ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৫৪ লাখ (৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬টি)। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ২ কোটি ১৪ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী।
ঘোষিত শাটডাউনে এ পরিমাণ দোকান-কর্মচারী আয়হীন হয়ে পড়বেন। আবার খাত হিসাবে এক দিন বন্ধ থাকলে তাদের ক্ষতি গড়ে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে হতাশা ব্যক্ত করে বাংলাদেশ দোকানমালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোথাও লকডাউন, কোথাও নেই। কখনো শিথিল, আবার কঠিন। কারা এর মধ্যে পড়বে এইগুলোর সংজ্ঞা আমরা এখন আর বুঝি না।
‘এখন আমাদের আর কিছু করার নাই। রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত মেনেই চলতে হবে। যদিও তাতে মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। মানুষ একসময় অসহিষ্ণু হয়ে পড়বে। এটাই সত্য।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমরা খুব খারাপ সময় অতিক্রম করছি। দরকার সবাই মিলে এটা মোকাবিলা করার। কিন্তু কেউ মোকাবিলা করবেন, কেউ করবেন না, এটা হতে পারে না।’
তিনি বড় ও রপ্তানিমুখী শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকার বিষয়ে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘সবচেয়ে ছোট ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দরিদ্র ব্যবসায়ীদের সব সময় সবকিছুতে কেন সবার আগে স্যাক্রিফাইস করতে হয়। এটা কতটুকু যৌক্তিক আমি জানি না।’
হতাশ হেলাল উদ্দিন লকডাউন-শাটডাউনে বিরক্তি প্রকাশ করে খাতসংশ্লিষ্টদের জন্য প্রণোদনা চাইবেন বলেও জানান।
তিনি দাবি করেন, এই প্রণোদনা চেয়েও কোনো লাভ হবে না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির তথ্য বলছে, পরিবহন খাতে কাজ করেন অন্তত ৪০ লাখ শ্রমিক। দেশে এক দিন পরিবহন বন্ধ থাকলে এই খাতের দৈনিক ক্ষতি হয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৬৬ দিনে পরিবহন খাতের ক্ষতি হয় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এই শাটডাউন যতদিন চলবে খাতসংশ্লিষ্টরা অনুরূপ ক্ষতির মুখে পড়বেন।
বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পসংশ্লিষ্ট সংগঠন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (টোয়াব) বলছে, পর্যটন খাতে কাজ করেন ৪০ লাখ মানুষ। পর্যটক না থাকলে তাদের ব্যবসাও থাকে না। ফলে খাতসংশ্লিষ্ট মালিক-কর্মচারী ও গাইডরা এই সময়ে মানবেতর জীবনযাপন করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর করোনায় পর্যটকশূন্যতায় তাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
এ ছাড়া কমিউনিটি সেন্টার, ডেকোরেটর, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টসহ অন্যান্য খাতেও সরাসরি কাজ করেন প্রায় ৫ লাখ মানুষ। এর বাইরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ফটোগ্রাফি, সাজসজ্জা, লজিস্টিক সেবা, ফুল সরবরাহ, বোর্ড মিস্ত্রি, ডেকোরেশন ও ক্লিনিং কাজসহ বিভিন্ন কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ২০ লাখ মানুষ।
শাটডাউনে সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ফলে আয়হীন হয়ে পড়বেন বিপুলসংখ্যক মানুষ।
বাংলাদেশ কমিউনিটি সেন্টার কনভেনশন হল ও ক্যাটারিং অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে এই সেবা প্রদানকারী শুধু তাদের সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই চার হাজার। এক দিন বন্ধ থাকলে তাদের ক্ষতি হয় প্রায় শত কোটি টাকা।
এদিকে দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৮ লাখ ১৩ হাজারের বেশি। এদের শতকরা ৯৯ ভাগের বেশি হচ্ছে কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি বা সিএমএসএমই খাতের। সেখানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে ২ কোটি মানুষের।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কর্মীদের আনা-নেয়া করবে। কিন্তু এই খাতের ৯০ ভাগ উদ্যোক্তারই নেই সে সক্ষমতা। আবার কেউ প্রতিষ্ঠান চালু রাখলেও তার পণ্যের সঠিক সরবরাহ ও মূল্য পাওয়ার অনিশ্চয়তা তো আছেই।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬-১৭ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশে মোট শ্রমশক্তি ৬ কোটি ৮ লাখ। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে (শ্রম আইনের সুবিধা পান এমন) কর্মরত জনশক্তি মাত্র ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। আর সবচেয়ে বড় অংশ ৮৫ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত।
এসব শ্রমিকের হিসাব করলে দেখা যায়, প্রায় সাড়ে ৫ কোটি মানুষ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে দিনমজুরের মতো কাজ করেন। যাদের শ্রম আইন-২০০৬ প্রদত্ত নিয়োগপত্র, কর্মঘণ্টা, ঝুঁকিভাতা, চিকিৎসাভাতা, বাড়িভাড়াসহ বেশির ভাগ অধিকারই নিশ্চিত নয়।
তারা দৈনিক কাজের ভিত্তিতেই সাধারণত মজুরি পান। ফলে এই শাটডাউনে বন্ধ থাকা সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান এসব কর্মজীবীকে মজুরি দেবে না বলেই আশঙ্কা শ্রমিক-কর্মচারীদের।
অর্থনীতিবিদ ও শ্রম খাতসংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা ও তৃতীয় দফার দেশব্যাপী এই শাটডাউনে কাজহীন থাকা এসব মানুষের জীবিকার বিষয়টি চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। এতে দেশের ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যের হার আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার প্রকোপ ও দফায় দফায় লকডাউনের প্রভাবে মানুষের হাতে এখন সঞ্চয় কম। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ সঞ্চয়শূন্য।
‘তাই এই দফার লকডাউনে সরকারকে অনেক বেশিসংখ্যক মানুষকে সাহায্য করতে হবে। প্রায় ৫ কোটি দরিদ্র মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেসব খাত বা যারা শাটডাউন পরিস্থিতিতে যাবে, তাদের জন্য সরকারকে প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
‘বিশেষ করে দিন আনে দিন খায়সহ স্বল্প আয়ের মানুষদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় এনে আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম জোরদারের মাধ্যমে জীবিকা সচল রাখতে হবে।’
আরও পড়ুন:সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করে গর্ভকালীন মাতৃ মৃত্যুহার, অপুষ্টি জনিত শিশু মৃত্যুর হার কমানোসহ সংক্রামক রোগের সংক্রমন প্রতিরোধে ঝিনাইদহে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকালে হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলনায়তনে এ কর্মশালার আয়োজন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ)। এতে হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.আলমগীর হোসেন, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাছরীনসহ এসডিএফ'র জেলা ব্যবস্থাপক মাহমুদ হাসান, জেলা স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মকর্তা ডা. অনুদীপা রানী, আইটি এন্ড এসআইএস মো. সাদ আহম্মেদ, ক্লাস্টার অফিসার বাণী বৈরাগীসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য বিভাগের সরকারি প্রতিনিধি ও এসডিএফ-এর কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এ কর্মশালায় পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হয়। কর্মশালায় এসডিএফ-এর পক্ষ থেকে খাদ্য ও পুষ্টি, অপুষ্টিজনিত সমস্যার প্রতিকার, কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টির গুরুত্ব, ইপিআই কর্মসূচির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস এবং বসতভিটায় পুষ্টিবাগান স্থাপনের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হয়। কর্মশালাটি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতন করার পাশাপাশি বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করার জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
দীর্ঘ ৮ বছর পর আগামী ৮ই সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা বিএনপির দ্বি-বাষিক সম্মেলন। এই সম্মেলন ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছাস, উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
সর্বশেষ ২০১৭ সালে বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন বাঁধার মুখে আর হতে পাড়েনি কোন সম্মেলন। এবারে অভ্যুত্থানে পরে অনেকটাই আন্দন ও উৎসাহ নিয়েই প্রস্তুতী চলছে এই সম্মেলনের। ইতিমধ্যে মঞ্চ তৈরীর কাজ চলছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে টাঙ্গানো হয়েছে ব্যানার ফেস্টুন। তবে প্রার্থী,কাউন্সিলর ও বিএনপির বিভিন্ন স্থরের নেতারা বলছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
সম্মেলনের নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য মতে, সম্মেলনে ১১ জন প্রার্থী মনোনয়ন নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৬ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহারও করেছেন। সবশেষ সভাপতি পদে রয়েছেন ১জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন ৪জন প্রার্থী। এছাড়া সম্মেলনে কাউন্সিলর রয়েছেন ৮০৮জন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়া সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান দুদু। এছাড়াও রংপুর বিএনপির তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদক সহ বিভিন্ন স্থরের নেতাকর্মীরা থাকবেন।
সম্মেলনের প্রার্থীরা বলছেন বিএনপির এই সম্মেলন আগামী জাতীয় নির্বাচনে জোড়ালো ভূমিকা রাখবে। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে যেই আসুক না কেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের নির্দেশেই এগিয়ে যাবে দলটি।
এদিকে সম্মেলনের কাউন্সিলর ও বিএনপির বিভিন্ন স্থরের নেতা-কর্মীরা বলছেন,এই সম্মেলনের মাধ্যমেই জেলায় আরো বেশি শক্তিশালী হবে বিএনপি। আমরা প্রত্যাশা করছি কর্মীবান্ধব নেতৃত্বই আসবে এই সম্মেলন থেকে। তবে মহাসবিচ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যা বলছেন তাই মাথা পেতে নেবে সকলে। তঢাগীদের দলে পদ পদবিতে জায়গা হবে এটাই প্রত্যাশা দলের নেতাকর্মীদের।
সম্মেলনের নির্বাচন কমিশন অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান চৌধুরী বলেন,সম্মেলন নিয়ে সকল প্রস্তুতী সম্পূর্ণ রয়েছে বলে জানালেন নির্বাচন কমিশনার। আমরা আশা করছি একটি সুষ্ঠু সুন্দর সম্মেলন উপহার দিতে পাড়বো।
ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, সম্মেলন ঘিরে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন স্থরের নেয়া হয়েছে ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও থাকবে আমাদের সাথে।
ঢাকা কেরানীগঞ্জে ঘটে গলো এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভোরের কোনো এক সময়ে মাত্র দুই বছর বয়সী শিশু আব্দুর রহমানকে প্রাণ হারাতে হয়েছে তার নিজের মায়ের হাতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাত আনুমানিক ৪:০০ ঘটিকা থেকে সকাল ৭:০০ ঘটিকার মধ্যে আব্দুর রহমানকে তার মা মোছাম্মৎ আতিয়া শারমিন নিজের বাসায় প্রাণঘাতী আঘাত করেন এবং টুকরো করে খাটের নিচে রেখে দেন। পরে স্থানীয়রা শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশকে খবর দেয়।
খবর পেয়ে কেরানীগঞ্জ কলাতিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ নিরু মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে, এবং লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড হাসপাতালে) প্রেরণ করে।
এব্যাপারে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল হক ডাবলু বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, শিশুটির মা মানসিক অসুস্থ ছিলেন। আমরা মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে।
স্থানীয়রা জানান, শিশুটির মা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছিলেন। ঘটনায় এলাকায় শোক ও ক্ষোভের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকেই বলছেন, সন্তানের নিরাপদ আশ্রয় মায়ের কোলে হলেও এ ঘটনা মানবিকতার সীমা ছাপিয়ে গেছে।
নিহত শিশুর বাবা টুটুল সাংবাদিকদের বলেন, আমি কখনো ভাবিনি এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে। আমার ছেলে আর ফিরে পাব না। আশা করি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং ভবিষ্যতে কেউ এভাবে সন্তানকে হারাবে না।
ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের ফেনীর লেমুয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন শ্যামলী পরিবহন বাস এর সুপারভাইজার ও হেলপার এবং ড্রাইভার গুরুতর আহত হয়েছেন।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভোর বেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের ফেনীর লেমুয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভোর পাঁচটার দিকে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস ফেনীর দিকে আসছিল। ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের ফেনীর লেমুয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার সামনে দ্রুতগতির শ্যামলী পরিবহনের বাসটি দাড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের পিছনে ধাক্কা দেয়। এতে শ্যামলী পরিবহনের সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায় । ঘটনাস্থলে বাসের হেলপার নিহত হন এবং দুইজন আহত হন। হতাহতদের ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাসের সুপারভাইজারকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত বাসের সুপারভাইজার পাবনা সাথীয়া উপজেলার রঘুনাথপুর এলাকার ওয়াজেদ আলীর ছেলে রবিউল ইসলাম বাবু (৩৮)। অপর নিহত হেলপার সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানার গরিয়াপুরের শেখ মোঃ শাহাদাতের ছেলে মো: ইয়াহিয়া রাফি (১৮) ।
গুরুতর আহত হন বাসের ড্রাইভার । তিনি যশোর জেলার ঝিকরগাছা চাসরা মোবারকপুর গ্রামের মৃত: আবদুল আলী মোল্লার ছেলে মো: রফিক (৬০)। গুরুতর আহত হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ফেনী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো: আবদুল মজিদ বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে গাড়ি থেকে আহত ও নিহতদের উদ্ধার করে ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ফেনী মহিপাল হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হারুন অর রশিদ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে গাড়ি দুটি সরিয়ে আহত ও নিহতদের উদ্ধার করে ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। গাড়ি দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে
রাজশাহী মহানগরীতে ধর্ষণ মামলার মূলহোতাসহ তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৫।
আজ রোববার সকাল পৌনে ৬টার দিকে আরএমপির চন্দ্রিমা থানাধীন উজিরপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, চন্দ্রিমা থানাধীন সাজ্জাদ আলীর ছেলে আরিয়ান শাফী ওরফে আরিফ (২৬), ভদ্রা জামালপুর এলাকার আলমের ছেলে শান্ত (২৫), বোয়ালিয়া থানাধীন কাদিরগঞ্জ গ্রেটাররোড এলাকার আসিফ হাসান সোহেলের ছেলে পিয়াম (২৫)।
পরে র্যাব-৫ এর মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, ২২ বছর বয়সী এক নারীর সঙ্গে মূলহোতা আরিয়ান শাফীর ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কের জেরে গত ৩০ আগস্ট বিকেলে আরিয়ান শাফী দেখা করার কথা বলে ওই নারীকে মতিহার থনাধীন ভদ্রা ব্রিজের উপর ডাকে। ভুক্তভোগী দেখা করতে গেলে আরিয়ান বন্ধুর বৌয়ের জন্মদিনের কেক কাটার কথা বলে তাকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। এ সুযোগে আরিয়ান তাকে রিকশা করে কুমারপাড়া আলুপট্টি মোড়ে পদ্মা মন্দিরের সামনে এজাহারভুক্ত ৪ নম্বর আসামি আজোয়াদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করে। সেখানে পূর্ব থেকে অবস্থান করা আসামি শান্ত ও পিয়ামও ওই নারীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে। এ ঘটনা কাউকে না জানাতে আসামিরা ভুক্তভোগীকে হুমকি দেয়।
গত ৩ সেপ্টেম্বর আরিয়ান ওই নারীকে আবার দেখা করার কথা বলে। দেখা না করলে তার ভিডিও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী নারী বোয়ালিয়া মডেল থানায় ধর্ষণের মামলা করেন। এরপর পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় অভিযান চালিয়ে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। আসামিদের বোয়ালিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
আবাহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা নৌকাবাইচ। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বাংলার অনেক অতীত হারিয়ে গেলেও বর্ণিল নৌকাবাইচ এখনও টিকে আছে। শনিবার শরীয়তপুরের দাদপুর ভাষানচরের কীর্তিনাশা নদীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা।
দুপুরে শুরু হওয়া এ প্রতিযোগিতা ঘিরে নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীসহ নানান বয়সের মানুষ নদীর দুই পাড়ে ভিড় করে।
নৌকাবাইচ শুরুর তিন ঘণ্টা আগে থেকেই নদীর তীর মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ইঞ্জিন চালিত ট্রলার, বড় নৌকা, গাছ ও ভবনে উঠে মানুষ নৌকাবাইচ উপভোগ করেন।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেন শরীয়তপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলার অসংখ্য মাঝিদল। বিশাল নৌকায় বৈঠা হাতে তরুণ ও অভিজ্ঞ মাঝিরা সমানতালে ছন্দ মিলিয়ে বৈঠা চালান। এ সময় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বৈঠার মন মাতানো শব্দের সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়েন দর্শনার্থীরা। তারা নেচে-গেয়ে আনন্দ উল্লাস করে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ উপভোগ করেন।
নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে নদীর দুই পাড়ে বসে অস্থায়ী মেলা। স্থানীয় পিঠা-পুলি, ঝালমুড়ি, ফুচকা ও বিভিন্ন খাবারের দোকানে জমে ওঠে মেলা। শিশু-কিশোরদের জন্য খেলনা ও বেলুন নিয়ে বিক্রেতারাও ভিড় করেন মেলায়।
আয়োজকদের পক্ষে উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, নৌকা বাইচ শুধু বিনোদনের জন্য আয়োজন করা হয়নি, এটি গ্রামীণ ঐতিহ্য, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং ঐক্যের প্রতীক। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতিবছরই এ আয়োজন করা হয়। আগামী বছরগুলোতে আরও বড় পরিসরে এই ঐতিহ্য ধরে রাখা হবে।
দিনভর প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
লেখক, গবেষক ও বাম ধারার বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর ইন্তেকাল করেছেন। বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে ১০টা দিকে তিনি মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম।
তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় আক্রান্ত বদরুদ্দীন উমর। রোববার সকালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেছিলেন বদরুদ্দীন উমর। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এ ছাড়াও বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী ছিলেন এই বামধারার বুদ্ধিজীবী।
এক সময় পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন বদরুদ্দীন উমর। ২০০৩ সালে তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নামে একটি সংগঠন গড়ে সভাপতির দায়িত্ব নেন।
২০২৫ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন, কিন্তু তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।
মন্তব্য