সরকারঘোষিত লকডাউন বা শাটডাউনে আবারও কাজহীন হয়ে পড়ায় জীবিকার অনিশ্চয়তায় পড়তে যাচ্ছেন দেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রায় সাড়ে ৫ কোটি মানুষ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আংশিক ও তার পর সর্বাত্মক শাটডাউন দেয়া হচ্ছে দেশে। এ সময়ে বন্ধ থাকবে শপিং মল, মার্কেট, পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, বিনোদনকেন্দ্রসহ প্রায় সবকিছুই।
স্বাভাবিক কারণেই এসব খাতের মানুষ থাকবেন কাজহীন। এতে তাদের আয়-রোজগারের খাতাও থাকবে শূন্য।
আবার শুধু খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ চালু থাকলেও তাতেও থাকছে সময়ের সীমাবদ্ধতা। লোকজন ঘর থেকে বের হতে না পারলে কিংবা মানুষের আয়ের চাকা বন্ধ থাকলে এসব খাবারের দোকান চলবে কীভাবে, সেটা নিয়েও আছে সংশয়।
অন্যদিকে করোনার প্রকোপে দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম ও সার্বিক জীবনযাত্রার ব্যয়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এই সময় বিভিন্ন পণ্য ও সেবা-সার্ভিসের মূল্য বেড়েছে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। ফলে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় ও ব্যয় বৃদ্ধিজনিত বাড়তি খরচের চাপে এসব মানুষ জীবিকার প্রশ্নে চোখে শুধুই অনিশ্চয়তাই দেখছেন।
বাংলাদেশ দোকানমালিক সমিতির তথ্য বলছে, দেশে দোকান বা ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৫৪ লাখ (৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬টি)। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ২ কোটি ১৪ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী।
ঘোষিত শাটডাউনে এ পরিমাণ দোকান-কর্মচারী আয়হীন হয়ে পড়বেন। আবার খাত হিসাবে এক দিন বন্ধ থাকলে তাদের ক্ষতি গড়ে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে হতাশা ব্যক্ত করে বাংলাদেশ দোকানমালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোথাও লকডাউন, কোথাও নেই। কখনো শিথিল, আবার কঠিন। কারা এর মধ্যে পড়বে এইগুলোর সংজ্ঞা আমরা এখন আর বুঝি না।
‘এখন আমাদের আর কিছু করার নাই। রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত মেনেই চলতে হবে। যদিও তাতে মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। মানুষ একসময় অসহিষ্ণু হয়ে পড়বে। এটাই সত্য।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমরা খুব খারাপ সময় অতিক্রম করছি। দরকার সবাই মিলে এটা মোকাবিলা করার। কিন্তু কেউ মোকাবিলা করবেন, কেউ করবেন না, এটা হতে পারে না।’
তিনি বড় ও রপ্তানিমুখী শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকার বিষয়ে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘সবচেয়ে ছোট ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দরিদ্র ব্যবসায়ীদের সব সময় সবকিছুতে কেন সবার আগে স্যাক্রিফাইস করতে হয়। এটা কতটুকু যৌক্তিক আমি জানি না।’
হতাশ হেলাল উদ্দিন লকডাউন-শাটডাউনে বিরক্তি প্রকাশ করে খাতসংশ্লিষ্টদের জন্য প্রণোদনা চাইবেন বলেও জানান।
তিনি দাবি করেন, এই প্রণোদনা চেয়েও কোনো লাভ হবে না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির তথ্য বলছে, পরিবহন খাতে কাজ করেন অন্তত ৪০ লাখ শ্রমিক। দেশে এক দিন পরিবহন বন্ধ থাকলে এই খাতের দৈনিক ক্ষতি হয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৬৬ দিনে পরিবহন খাতের ক্ষতি হয় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এই শাটডাউন যতদিন চলবে খাতসংশ্লিষ্টরা অনুরূপ ক্ষতির মুখে পড়বেন।
বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পসংশ্লিষ্ট সংগঠন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (টোয়াব) বলছে, পর্যটন খাতে কাজ করেন ৪০ লাখ মানুষ। পর্যটক না থাকলে তাদের ব্যবসাও থাকে না। ফলে খাতসংশ্লিষ্ট মালিক-কর্মচারী ও গাইডরা এই সময়ে মানবেতর জীবনযাপন করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর করোনায় পর্যটকশূন্যতায় তাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
এ ছাড়া কমিউনিটি সেন্টার, ডেকোরেটর, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টসহ অন্যান্য খাতেও সরাসরি কাজ করেন প্রায় ৫ লাখ মানুষ। এর বাইরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ফটোগ্রাফি, সাজসজ্জা, লজিস্টিক সেবা, ফুল সরবরাহ, বোর্ড মিস্ত্রি, ডেকোরেশন ও ক্লিনিং কাজসহ বিভিন্ন কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ২০ লাখ মানুষ।
শাটডাউনে সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ফলে আয়হীন হয়ে পড়বেন বিপুলসংখ্যক মানুষ।
বাংলাদেশ কমিউনিটি সেন্টার কনভেনশন হল ও ক্যাটারিং অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে এই সেবা প্রদানকারী শুধু তাদের সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই চার হাজার। এক দিন বন্ধ থাকলে তাদের ক্ষতি হয় প্রায় শত কোটি টাকা।
এদিকে দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৮ লাখ ১৩ হাজারের বেশি। এদের শতকরা ৯৯ ভাগের বেশি হচ্ছে কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি বা সিএমএসএমই খাতের। সেখানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে ২ কোটি মানুষের।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কর্মীদের আনা-নেয়া করবে। কিন্তু এই খাতের ৯০ ভাগ উদ্যোক্তারই নেই সে সক্ষমতা। আবার কেউ প্রতিষ্ঠান চালু রাখলেও তার পণ্যের সঠিক সরবরাহ ও মূল্য পাওয়ার অনিশ্চয়তা তো আছেই।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬-১৭ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশে মোট শ্রমশক্তি ৬ কোটি ৮ লাখ। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে (শ্রম আইনের সুবিধা পান এমন) কর্মরত জনশক্তি মাত্র ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। আর সবচেয়ে বড় অংশ ৮৫ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত।
এসব শ্রমিকের হিসাব করলে দেখা যায়, প্রায় সাড়ে ৫ কোটি মানুষ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে দিনমজুরের মতো কাজ করেন। যাদের শ্রম আইন-২০০৬ প্রদত্ত নিয়োগপত্র, কর্মঘণ্টা, ঝুঁকিভাতা, চিকিৎসাভাতা, বাড়িভাড়াসহ বেশির ভাগ অধিকারই নিশ্চিত নয়।
তারা দৈনিক কাজের ভিত্তিতেই সাধারণত মজুরি পান। ফলে এই শাটডাউনে বন্ধ থাকা সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান এসব কর্মজীবীকে মজুরি দেবে না বলেই আশঙ্কা শ্রমিক-কর্মচারীদের।
অর্থনীতিবিদ ও শ্রম খাতসংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা ও তৃতীয় দফার দেশব্যাপী এই শাটডাউনে কাজহীন থাকা এসব মানুষের জীবিকার বিষয়টি চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। এতে দেশের ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যের হার আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার প্রকোপ ও দফায় দফায় লকডাউনের প্রভাবে মানুষের হাতে এখন সঞ্চয় কম। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ সঞ্চয়শূন্য।
‘তাই এই দফার লকডাউনে সরকারকে অনেক বেশিসংখ্যক মানুষকে সাহায্য করতে হবে। প্রায় ৫ কোটি দরিদ্র মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেসব খাত বা যারা শাটডাউন পরিস্থিতিতে যাবে, তাদের জন্য সরকারকে প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
‘বিশেষ করে দিন আনে দিন খায়সহ স্বল্প আয়ের মানুষদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় এনে আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম জোরদারের মাধ্যমে জীবিকা সচল রাখতে হবে।’
আরও পড়ুন:আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে আজ দুপুরে বাসস’কে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেস উইং জানিয়েছে, পবিত্র ঈদ উল আযহা উপলক্ষ্যে আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে এই ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
চট্টগ্রামের কালুরঘাট রেলসেতুতে ট্রেনের ধাক্কায় সংঘটিত দুর্ঘটনায় শিশুসহ ৩ জন নিহতের ঘটনায় তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া, এ ঘটনায় ৪ জন রেল কর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার (৬ জুন) এ তথ্য নিশ্চিত করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকী।
বরখাস্ত হওয়া চার রেলকর্মী হলেন— পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের দায়িত্ব পালনকারী গার্ড সোহেল রানা (হেড কোয়ার্টার, চট্টগ্রাম), লোকো মাস্টার গোলাম রসুল, সহকারী লোকো মাস্টার আমিন উল্লাহ, এবং অস্থায়ী গেট কিপার (টিএলআর) মাহবুব।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাতে ওই দুর্ঘটনার তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের পরিবহন কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত এই তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—চট্টগ্রাম বিভাগের ডিভিশনাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (লোকো), ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার-১ ও পাহাড়তলী, চট্টগ্রামের ডিভিশনাল মেডিকেল অফিসার।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুতে ঢাকা অভিমুখী একটি ট্রেন সিএনজি চালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দিলে একটি শিশুসহ তিনজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি সেতুতে প্রবেশ করামাত্র অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। এ ছাড়াও মোটরসাইকেলস আরও কয়েকটি ছিল যানবাহনে ধাক্কা দেয় ট্রেনটি।
আসন্ন ঈদুল আজহায় ঢাকায় নেওয়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে শতভাগ নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাজধানীজুড়ে ৫০০টি টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ঈদের নামাজ স্বাভাবিক নিয়মে অনুষ্ঠিত হবে এবং সারাদেশে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
তিনি জানান, জাতীয় ঈদগাহে যারা নামাজ আদায় করবেন, তাদের নিজস্ব জায়নামাজ আনতে হবে না, কারণ সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছুটির মধ্যেও সারাদেশে দায়িত্বে রয়েছে।’
ঈদের ছুটিতে প্রায় ফাঁকা রাজধানীর নিরাপত্তা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘ঢাকা শহরের অলিগলিতে ৫০০টি টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে ছোটখাটো ঘটনা ঘটে—আমরা এমন ঘটনাও রোধে কাজ করছি।’
থানায় মামলা করতে না পারার অভিযোগ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন,‘যদি কোনো কর্মকর্তা মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রী হয়রানির সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এক সাংবাদিকের উপর হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে, আমরা এটির তদন্ত করছি।’
অপরাধী গ্রেপ্তার করার কয়েকদিন পরে বের হয়ে আরও বেশি অপরাধে জড়িয়ে যায়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেনন, ‘এটা তো আর পুলিশের হাতে না। এটা আদালতের বিষয়। কিছুদিন আগে আপনারা দেখেছেন, দুজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ছাড়া পাওয়ার পর আবারও অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ায় তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এমন যদি কেউ অবৈধকাজে জড়িয়ে যায় তাহলে তাকেও ছাড়া হবে না, পুঁটিমাছ কিংবা রুই কাতলা হোক কাউকে ছাড় নেই। আইন সবার জন্য সমান।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার নিরাপত্তা নিয়ে আমি ১০০ ভাগ কনফিডেন্ট আছি।
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রামের কৃষক সোহাগ মৃধার উপহারের কোরবানির গরু ‘কালো মানিক’ গ্রহণ করেননি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সোহাগকে এলাকায় ফিরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোরবানি ঈদ উদযাপনের অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ রাতে বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে ‘কালো মানিক’ নামের আদরের ষাঁড়টি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন সোহাগ মৃধা। রাজধানীতে পৌঁছানোর পর বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে গরুটি উপহার দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও বেগম খালেদা জিয়া তা গ্রহণ না করে সোহাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পরে তার পরিবারের জন্য ঈদের বিশেষ উপহারও পাঠান।
ডা. জাহিদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোরবানির পশু উপহার দেওয়ার জন্য সোহাগ মৃধা ও তাঁর পরিবারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। দলীয় চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে তাকে ঈদের উপহারও পাঠানো হয়েছে।
সোহাগ মৃধার পরিবারের সদস্যরা জানান, কালো মানিক নামের ষাঁড়টির ওজন প্রায় ৩৫ মণ, দৈর্ঘ্য ১০ ফুট এবং উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। কুচকুচে কালো রঙের হওয়ায় স্থানীয়রা আদর করে নাম রেখেছেন ‘কালো মানিক’। ষাঁড়টির জন্য ১০ লাখ টাকা দাম উঠলেও সোহাগ তা বিক্রি করেননি।
সোহাগ মৃধা জানান, তিনি গণতন্ত্রের মাকে (বেগম খালেদা জিয়া) এই গরুটি উপহার দিতে চেয়েছিলেন। ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেখ হাসিনাকে এক কৃষকের গরু উপহার দেন। ওই ঘটনা দেখে তিনি অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। তখনই তাঁর মনে ইচ্ছা জাগে, সুযোগ পেলে প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তিনিও একটি গরু উপহার দেবেন।
২০১৮ সালের শেষ দিকে স্থানীয় চৈতা বাজার থেকে মাত্র ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় একটি ফ্রিজিয়ান গাভি কেনেন সোহাগ। সপ্তাহ না যেতেই গাভিটি একটি বাছুর প্রসব করে। পরে গাভিটি বিক্রি করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাছুরটি পরিবারের সবাই মিলে ছয় বছর ধরে দেশীয় খাবার আর যত্ন দিয়ে লালন-পালন করেন। এই বাছুরই আজকের বিশালদেহী ‘কালো মানিক’।
বিএনপির আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন শাখার সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সোহাগ মৃধা একজন নিবেদিতপ্রাণ বিএনপি কর্মী। পরিবারের সহায়তায় ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি তিনি দীর্ঘদিন ধরে লালন-পালন করেছেন।
সোহাগের মা হাজেরা বেগম বলেন, ‘ওর মন চাইছে, তাই ও উপহার দিতে চায়। আমরা খুশি। ওর বাবা নেই। সামান্য জমি চাষ করেই সংসার চালায়। ছোটবেলা থেকেই ও বিএনপিকে ভালোবাসে।’
সোহাগের স্ত্রী সুলতানা আক্তার পলি বলেন, ‘কালো মানিক আমার ছোট ছেলের বয়সী। দুজনকেই সমানভাবে স্নেহ-ভালোবাসায় লালন-পালন করেছি। ছেলের বাবার ইচ্ছা ছিল প্রিয় নেত্রীকে এটি উপহার দেবে, তাতে আমরাও খুশি।’
পদ্মা সেতু দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২ হাজার ৪৮৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ৫ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ পরিমাণ টোল আদায়ের রেকর্ড।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) গত বছরের একদিনে সর্বোচ্চ প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ টাকার টোল আদায়ের রেকর্ড ভেঙে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা টোল আদায় করা হয়।
ঈদুল আজহার ১০ দিনের লম্বা ছুটির প্রথম দিনেই এই রেকর্ড হয়েছে। তবে ছুটি ছাড়াই আগের দিন বুধবার (৪ জুন) পদ্মা সেতুতে একদিনে ৪ কোটি ৯ লাখ টাকারও বেশি টোল আদায় করা হয়েছে। এদিন ৩৭ হাজার ৪৬৫ গাড়ি পারাপার হয়েছে সেতুটি দিয়ে।
বৃহস্পতিবার মাওয়া প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে ৩৫ হাজার ৯৮৫টি যান। এতে মাওয়ায় টোল প্লাজায় টোল আদায় হয় ৩ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ৮০০ টাকা।
আর জাজিরা প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে ১৬ হাজার ৫০২টি যান। এসব যানবাহন থেকে ২ কোটি ২৬ লাখ ৮৪ হাজার ২০০ টাকা টোল আদায় হয়েছে বলে জানান আলতাফ।
এর আগে, ২০২২ সালের ২৬ জুন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী দিনে সর্বোচ্চ ৫১ হাজার ৩১৬টি যানবাহন পারাপারের রেকর্ড ছিল। আর ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল সর্বোচ্চ টোল আদায়ের রেকর্ড ছিল ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭০০ টাকা।
পদ্মা সেতুর দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) আলতাফ হোসেন সেখ বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরার ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’
আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু তিন বছর পূর্তি। এ পর্যন্ত টোল আদায় হয়েছে ২ হাজার ৪৫২ কোটি ৮২ লাখ টাকার বেশি । এই সময়ে ১ কোটি ৮৯ লাখ ৬৪ হাজার ২১৮ যান পারাপার হয়েছে।
কুষ্টিয়া দৌলতপুর সীমান্তে ঈদ-উল আযহাকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। সীমান্তের সার্বিক নিরাপত্তায় পুশ-ইন, গবাদি পশু চোরাচালান ও পশুর চামড়া পাচার রোধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সর্বোচ্চ সতর্ক ও কঠোর অবস্থানে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় উপজেলার প্রাগপুর বিজিবি ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন, ৪৭ বিজিবি ব্যাটায়িলনের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মাহবুব মুর্শেদ রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেন, দেশীয় খামারিদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে বিজিবি ইতোমধ্যে সীমান্ত এলাকায় গরু চোরাচালান রোধে অতিরিক্ত টহল, অস্থায়ী চেকপোস্ট, গোয়েন্দা নজরদারি ও বিশেষ অপারেশন ব্যবস্থা চালু করেছে।
একইভাবে, ঈদের পর কোরবানির চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে বিশেষ নজরদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রয়োজনীয় স্থানে ভ্রাম্যমাণ চেকপোস্ট ও মোবাইল টিম মোতায়েন করে চামড়ার পাচার রোধে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে যৌথ অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়েছে।
এছাড়াও সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ বা পুশ-ইন প্রতিরোধেও বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অনুপ্রবেশ বা পুশ-ইন প্রতিরোধের বিষয়ে প্রতিপক্ষ বিএসএফ’র সাথে পতাকা বৈঠক, লিখিত ও মৌখিক প্রতিবাদ এবং পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে ।
কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি) দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ দেশের জনগণকে একটি নিরাপদ ও স্বস্থিদায়ক ঈদ উদযাপনের পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং মাদক পাচারসহ সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে থাকার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১০ শতাংশেরও বেশি।
উপদেষ্টা তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে জানান, ‘মে মাসে বাংলাদেশ থেকে ৪৭৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি।’
আসিফ মাহমুদ আরো বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে রপ্তানি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন বা সাড়ে চার হাজার কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ছিলো চার হাজার ৮৫ কোটি ডলার। সে হিসাবে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বাড়ার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনও তুলে ধরেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
মন্তব্য