ঠিক ৪ এপ্রিলের মতো ঘটনা। পরের দিন থেকে লকডাউন, এই আতঙ্কে পুঁজিবাজারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে নাই ১৮১ পয়েন্ট।
একই চিত্র সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার। শাটডাউন নামে পরিচিতি পাওয়া কঠোর লকডাউন শুরুর কথা ছিল সোমবার থেকে। পরে তা পিছিয়ে বৃহস্পতিবার করা হয়েছে। আর এই ঘোষণার পর প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচকে হলো বড় পতন। আতঙ্কে কম দামে শেয়ার বিক্রি করেছেন বিনিয়োগকারীরা। আর দিন শেষে নাই ১০০ পয়েন্ট।
সব মিলিয়ে বেড়েছে ৫৪টির, কমেছে ৩০৬টির দাম। আর অপরিবর্তিত ছিল ১২টির দর।
সূচক নামল গত ৭ জুনের পর সর্বনিম্ন অবস্থানে। সেদিন সূচক ছিল ৫ হাজার ৯৭৫ পয়েন্টে।
প্রায় তিন মাস আগে যখন প্রথম বিধিনিষেধ বা লকডাউন শুরু হয়, তার আগে আগে এভাবে আতঙ্কে পতন হলেও পরে বিনিয়োগকারীরা দেখেছেন সুদিন।
বিধিনিষেধের পৌনে তিন মাসে আকর্ষণীয় মুনাফা পেয়েছেন তারা। প্রথমে বিমা, পরে ব্যাংক ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এরপর বস্ত্র ও প্রকৌশল খাতে উত্থান দেখেছেন তারা। বেশিরভাগ কোম্পানির দামই বেড়েছে এই সময়ে।
এই অভিজ্ঞতার পরেও আগামী ১ জুলাই থেকে শাটডাউন নামে পরিচিতি পাওয়া কঠোর লকডাউন শুরু হতে যাওয়ার আগে আগে সেই এপ্রিলের শুরুর মতোই আতঙ্ক পুঁজিবাজারে। কোনো খাত নিয়ে নেতিবাচক তথ্য না থাকার পরেও পুঁজিবাজারে ঢালাও মূল্য পতন হয়েছে প্রায় সব খাতেই। এর পেছনে শাটডাউন আতঙ্ক কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সে সময়ও লকডাউন হলে পুঁজিবাজারে লেনদেন চলবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা ছিল। তেমনি আশ্বাসও ছিল। এবারও তাই। বিনিয়োগকারীদের একাংশের মধ্যে শঙ্কা, লেনদেন বন্ধ হয়ে যাবে, তেমনি ব্যাংক ও পুঁজিবাজার চালু থাকার আশ্বাসও আছে।
এক দিনে বড় পতনে মূল্য সূচক প্রায় এক মাস আগের অবস্থানে নেমে এসেছে। তবে লেনদেন আগের কর্মদিবসের মতোই আছে। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, শাটডাউনে পুঁজিবাজার পড়ে যাবে, এমন আশঙ্কা থেকেই অনেকে শেয়ার বিক্রি করেছেন।
তবে আবার একে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন বহুজন। বিও হিসাবে নগদ টাকা ছিল যাদের, তারা শেয়ার কিনেছেন। আর এ কারণেই আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা।
গত ৫ এপ্রিল প্রথমবারের মতো লকডাউন শুরু হওয়ার ঘোষণায় ৪ এপ্রিল পুঁজিবাজারে ব্যাপক দরপতন হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক পড়ে ১৮১ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে নাই হয়ে যায় হারায় ৫৪২ দশমিক ০৬ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
সেদিন এত দরপতনের কারণ ছিল, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ধারণা জন্মেছিল যে লকডাউনে পুঁজিবাজার বন্ধ থাকবে। তবে সেদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ব্যাংক চালু থাকবে আর এরপর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানায়, লেনদেন চলবে পুঁজিবাজারেও।
পর দিনই বাজার ঘুরে দাঁড়ায়। লকডাউন শুরুর দিন সূচক বাড়ে ৮৯ পয়েন্ট, তার পর কর্মদিবসে বাড়ে আরও ১০৭ পয়েন্ট।
রোববারের আগে শেষ কার্যদিবস ২৪ জুন পর্যন্ত সূচকে যোগ হয় এক হাজার ৪ পয়েন্ট।
এই অভিজ্ঞতার পরেও এবারও কঠোর বিধিনিষেধের আতঙ্কে সেই ৪ এপ্রিলের মতোই লেনদেনের শুরুতেই শেয়ার দর পড়ে যায়। মাঝেমধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও কখনও আগের দিনের সূচক ৬ হাজার ৯২ পয়েন্টের ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেনি। আর শেষ এক ঘণ্টায় বাজার কেবল পড়েছেই।
অথচ লকডাউনের আগের মতোই জানা যাচ্ছে শাটডাউনেও ব্যাংক খোলা থাকবে সীমিত সময়ের জন্য। আর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তার আগের নীতিতেই আছে। অর্থাৎ ব্যাংক খোলা থাকলে লেনদেন চলবে পুঁজিবাজারেও।
ব্যাংক-বিমায় ধস
গত এক বছরে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর বিমা খাত কয়েক দিন ধরেই সংশোধনে ছিল। এর মধ্যে যোগ হলো শাটডাউন আতঙ্ক। দুয়ে মিলে আরও একটি ধস দেখা গেল এই খাতে। সবচেয়ে বেশি দর হারানোর তালিকায় এই খাতের প্রাধান্যই ছিল সবচেয়ে বেশি।
সব মিলিয়ে ৫০টি কোম্পানির মধ্যে ৪৪টির দামই কমেছে। বেড়েছে কেবল ৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল একটির দর।
সবচেয়ে বেশি দর হারানো ১০টি কোম্পানির ৬টি আর ২০টির মধ্যে ১৩টি ছিল বিমা খাতের।
শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি কমেছে রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের দর। কোম্পানিটি ১২.০৭ শতাংশ দাম হারিয়েছে। এক দিনে ১০ শতাংশের বেশি দর না কমার সুযোগ না থাকলেও কোম্পানিটি লভ্যাংশ সংক্রান্ত সমন্বয়ের কারণে এই পরিমাণ কমতে পেরেছে।
এ ছাড়া শেয়ার প্রতি ২ টাকা করে নগদ ও সঙ্গে পাঁচ বছর পর প্রতি ১০টি শেয়ারে একটি বোনাস দেয়ার ঘোষণা দেয়া পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স দর হারিয়েছে ৯.৬ শতাংশ।
সোনার বাংলা ৯.৩২, অগ্রণী ৮.৮, প্রগতি ৮.৫, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স দর হারিয়েছে ৮.২ শতাংশ।
এই খাতে লেনদেন হয়েছে ১৯১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ১৮৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
সবচেয়ে বেশি দর কমার তালিকায় না থাকলেও ব্যাংক খাতেও দেখা গেছে করুণ চিত্র। এই খাতে দাম বেড়েছে কেবল ৩টির, কমেছে ২৫টির। আর অপরিবর্তিত ছিল বাকি ৩টির।
সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে গত তিন মাসে সবচেয়ে বেশি বাড়া এনআরবিসি। আগের দিনের চেয়ে ৬.১৯ শতাংশ দর কমেছে ব্যাংকটির।
এ ছাড়া মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ৪.১৬ শতাংশ, এবি ব্যাংকের ৪.০২ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংকের ৩.০৪ শতাংশ, ইউসিবির ২.৯৭ শতাংশ দাম কমেছে। বাকিগুলোর দাম কমার হার খুব একটি বেশি নয়।
পতনের দিন ব্যাংক খাতে ডাচবাংলা ব্যাংকের ২ টাকা ৬০ পয়সা এবং আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংকের দাম বেড়েছে ১০ পয়সা।
ব্যাংক খাতে হাতবদল হয়েছে ১৪৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল ১৯৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
ধস বিদ্যুৎ, প্রকৌশল, ওষুধ খাতেও
অর্থবছর শেষ হতে চলা এই তিন খাতের মধ্যে বিদ্যুৎ এবং ওষুধ খাতে কেবল একটি করে আর প্রকৌশল খাতে কেবল ৩টি শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিবিধ খাতেও বেড়েছে কেবল একটির দর।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ খাতে ২১টির, ওষুধ খাতে ২৯টি আর প্রকৌশল খাতে ৩৯টি আর বিবিধ খাতে কমেছে ১৩টির দর। ফলে সহজেই অনুমেয় যে, এসব খাতের শেয়ারধারীরাও ব্যাপকভাবে হতাশ।
দাম কমার ক্ষেত্রে যেসব কোম্পানি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ভালো মুনাফা করেছে আর যেসব কোম্পানি ভালো করতে পারেনি, তার মধ্যে কোনো পার্থক্যই দেখা যায়নি।
প্রকৌশল খাতে লেনদেন হয়েছে ১২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা, আগের দিন যা ছিল ১২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
এ ছাড়া ওষুধ ও রসায়ন খাতে হাতবদল হয়েছে ১০৪ কোটি ২০ লাখ টাকা।
প্রায় শতভাগ পতন মিউচ্যুয়াল ফান্ডে
অর্থবছর শেষ হতে যাওয়া মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের ৩৭টি ফান্ডের মধ্যে একটির লেনদেন হয়নি। বাকি ৩৬টির সবগুলো দর হারিয়েছে।
এই ফান্ডগুলোর ৩০টির অর্থবছর শেষ হতে চলেছে আগামী ৩০ জুন। আর এর মধ্যে সিংহভাগ ফান্ডই চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ব্যাপক মুনাফা করার তথ্য প্রকাশ করেছে। আর ১ এপ্রিল থেকে শুরু চতুর্থ প্রান্তিকে এখন পর্যন্ত ৭৫০ পয়েন্টের মতো সূচক বৃদ্ধির সুফলও তারা পাবে।
এই অবস্থায় গত কয়েক দিনে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এক দিনে লেনদেন হওয়া সব কটি ফান্ডের দর বৃদ্ধির চিত্রও দেখা গেছে পুঁজিবাজারে। অথচ উল্টোচিত্র দেখা গেল আতঙ্কের দিন।
শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি কমেছে ফিনিক্স ফিনান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর। আগের দিনের তুলনায় ৭.২৭ শতাংশ কমেছে এর ইউনিট দর।
এসইএমএল আইবিবি শরিয়া ফান্ড ৪.৬৯ শতাংশ, সিএপিএম বিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান ৪.৬৩ শতাংশ, পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৪.৬১ শতাংশ, ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফিনান্স মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান ৪.৪ শতাংশ, এসইএমএল লেকচার ইক্যুয়েটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড ৪.৩৯ শতাংশ, আইএফআইসি ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৪.৩৫ শতাংশ দর হারিয়েছে।
পতনের দিন উজ্জ্বল কেবল বস্ত্রখাত
যে ৫৪টি কোম্পানির দর বেড়েছে তার মধ্যে এই একটি খাতেরই ২৩টির দর বৃদ্ধিই বলে দেয়, এই খাতের শেয়ারধারীদের মধ্যে হতাশার বোধ কম। আর সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে এই খাতেরই প্রাধান্য দেখা গেছে।
সবচেয়ে বেশি দর বাড়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে ৬টি আর ২০টির মধ্যে ১৫টি ছিল বস্ত্র খাতের। ওটিসি থেকে মূল মার্কেটে ফেরা মুন্নু ফেব্রিক্স তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের দাম আবারও বেড়েছে এক দিনে যত বাড়া সম্ভব ততই।
দিনের দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছে মতিন স্পিনিং, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, আরগন ডেনিম, জাহিন স্পিনিং, হাওয়েল টেক্সটাইলের দরও।
দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাছি বেড়েছে ঢাকা ডায়িং, কুইনসাউথ, জাহিন টেক্সটাইল, শাসা ডেনিমের দরও।
এই খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে গত এক মাসে ব্যাপকভাবে দাম বৃদ্ধি পাওয়া সাফকো স্পিনিং দর হারিয়েছে সবচেয়ে বেশি। সবচেয়ে বেশি দর হারানো ১০টি কোম্পানির একটি ছিল এই কোম্পানিটি। এর বাইরে এমএল ডায়িং, পিটিএল, দুলামিয়া কটন, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজও দর হারিয়েছে তিন থেকে চার শতাংশের মাঝামাঝি।
এই খাতে হাতবদল হয়েছে ৪৬১ কোটি ৩ লাখ টাকার। যা আগের দিন ছিল ৪৩৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১০০ দশমিক ১০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৯২ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস সূচক ১৪ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৮৭ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৩০ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৬৮ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ৭৪০ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল এক হাজার ৫৯৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ২৯৭ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩৫৯ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ২১০ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
মন্তব্য