ঠিক ৪ এপ্রিলের মতো ঘটনা। পরের দিন থেকে লকডাউন, এই আতঙ্কে পুঁজিবাজারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে নাই ১৮১ পয়েন্ট।
একই চিত্র সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার। শাটডাউন নামে পরিচিতি পাওয়া কঠোর লকডাউন শুরুর কথা ছিল সোমবার থেকে। পরে তা পিছিয়ে বৃহস্পতিবার করা হয়েছে। আর এই ঘোষণার পর প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচকে হলো বড় পতন। আতঙ্কে কম দামে শেয়ার বিক্রি করেছেন বিনিয়োগকারীরা। আর দিন শেষে নাই ১০০ পয়েন্ট।
সব মিলিয়ে বেড়েছে ৫৪টির, কমেছে ৩০৬টির দাম। আর অপরিবর্তিত ছিল ১২টির দর।
সূচক নামল গত ৭ জুনের পর সর্বনিম্ন অবস্থানে। সেদিন সূচক ছিল ৫ হাজার ৯৭৫ পয়েন্টে।
প্রায় তিন মাস আগে যখন প্রথম বিধিনিষেধ বা লকডাউন শুরু হয়, তার আগে আগে এভাবে আতঙ্কে পতন হলেও পরে বিনিয়োগকারীরা দেখেছেন সুদিন।
বিধিনিষেধের পৌনে তিন মাসে আকর্ষণীয় মুনাফা পেয়েছেন তারা। প্রথমে বিমা, পরে ব্যাংক ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এরপর বস্ত্র ও প্রকৌশল খাতে উত্থান দেখেছেন তারা। বেশিরভাগ কোম্পানির দামই বেড়েছে এই সময়ে।
এই অভিজ্ঞতার পরেও আগামী ১ জুলাই থেকে শাটডাউন নামে পরিচিতি পাওয়া কঠোর লকডাউন শুরু হতে যাওয়ার আগে আগে সেই এপ্রিলের শুরুর মতোই আতঙ্ক পুঁজিবাজারে। কোনো খাত নিয়ে নেতিবাচক তথ্য না থাকার পরেও পুঁজিবাজারে ঢালাও মূল্য পতন হয়েছে প্রায় সব খাতেই। এর পেছনে শাটডাউন আতঙ্ক কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সে সময়ও লকডাউন হলে পুঁজিবাজারে লেনদেন চলবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা ছিল। তেমনি আশ্বাসও ছিল। এবারও তাই। বিনিয়োগকারীদের একাংশের মধ্যে শঙ্কা, লেনদেন বন্ধ হয়ে যাবে, তেমনি ব্যাংক ও পুঁজিবাজার চালু থাকার আশ্বাসও আছে।
এক দিনে বড় পতনে মূল্য সূচক প্রায় এক মাস আগের অবস্থানে নেমে এসেছে। তবে লেনদেন আগের কর্মদিবসের মতোই আছে। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, শাটডাউনে পুঁজিবাজার পড়ে যাবে, এমন আশঙ্কা থেকেই অনেকে শেয়ার বিক্রি করেছেন।
তবে আবার একে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন বহুজন। বিও হিসাবে নগদ টাকা ছিল যাদের, তারা শেয়ার কিনেছেন। আর এ কারণেই আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা।
গত ৫ এপ্রিল প্রথমবারের মতো লকডাউন শুরু হওয়ার ঘোষণায় ৪ এপ্রিল পুঁজিবাজারে ব্যাপক দরপতন হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক পড়ে ১৮১ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে নাই হয়ে যায় হারায় ৫৪২ দশমিক ০৬ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
সেদিন এত দরপতনের কারণ ছিল, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ধারণা জন্মেছিল যে লকডাউনে পুঁজিবাজার বন্ধ থাকবে। তবে সেদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ব্যাংক চালু থাকবে আর এরপর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানায়, লেনদেন চলবে পুঁজিবাজারেও।
পর দিনই বাজার ঘুরে দাঁড়ায়। লকডাউন শুরুর দিন সূচক বাড়ে ৮৯ পয়েন্ট, তার পর কর্মদিবসে বাড়ে আরও ১০৭ পয়েন্ট।
রোববারের আগে শেষ কার্যদিবস ২৪ জুন পর্যন্ত সূচকে যোগ হয় এক হাজার ৪ পয়েন্ট।
এই অভিজ্ঞতার পরেও এবারও কঠোর বিধিনিষেধের আতঙ্কে সেই ৪ এপ্রিলের মতোই লেনদেনের শুরুতেই শেয়ার দর পড়ে যায়। মাঝেমধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও কখনও আগের দিনের সূচক ৬ হাজার ৯২ পয়েন্টের ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেনি। আর শেষ এক ঘণ্টায় বাজার কেবল পড়েছেই।
অথচ লকডাউনের আগের মতোই জানা যাচ্ছে শাটডাউনেও ব্যাংক খোলা থাকবে সীমিত সময়ের জন্য। আর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তার আগের নীতিতেই আছে। অর্থাৎ ব্যাংক খোলা থাকলে লেনদেন চলবে পুঁজিবাজারেও।
ব্যাংক-বিমায় ধস
গত এক বছরে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর বিমা খাত কয়েক দিন ধরেই সংশোধনে ছিল। এর মধ্যে যোগ হলো শাটডাউন আতঙ্ক। দুয়ে মিলে আরও একটি ধস দেখা গেল এই খাতে। সবচেয়ে বেশি দর হারানোর তালিকায় এই খাতের প্রাধান্যই ছিল সবচেয়ে বেশি।
সব মিলিয়ে ৫০টি কোম্পানির মধ্যে ৪৪টির দামই কমেছে। বেড়েছে কেবল ৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল একটির দর।
সবচেয়ে বেশি দর হারানো ১০টি কোম্পানির ৬টি আর ২০টির মধ্যে ১৩টি ছিল বিমা খাতের।
শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি কমেছে রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের দর। কোম্পানিটি ১২.০৭ শতাংশ দাম হারিয়েছে। এক দিনে ১০ শতাংশের বেশি দর না কমার সুযোগ না থাকলেও কোম্পানিটি লভ্যাংশ সংক্রান্ত সমন্বয়ের কারণে এই পরিমাণ কমতে পেরেছে।
এ ছাড়া শেয়ার প্রতি ২ টাকা করে নগদ ও সঙ্গে পাঁচ বছর পর প্রতি ১০টি শেয়ারে একটি বোনাস দেয়ার ঘোষণা দেয়া পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স দর হারিয়েছে ৯.৬ শতাংশ।
সোনার বাংলা ৯.৩২, অগ্রণী ৮.৮, প্রগতি ৮.৫, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স দর হারিয়েছে ৮.২ শতাংশ।
এই খাতে লেনদেন হয়েছে ১৯১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ১৮৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
সবচেয়ে বেশি দর কমার তালিকায় না থাকলেও ব্যাংক খাতেও দেখা গেছে করুণ চিত্র। এই খাতে দাম বেড়েছে কেবল ৩টির, কমেছে ২৫টির। আর অপরিবর্তিত ছিল বাকি ৩টির।
সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে গত তিন মাসে সবচেয়ে বেশি বাড়া এনআরবিসি। আগের দিনের চেয়ে ৬.১৯ শতাংশ দর কমেছে ব্যাংকটির।
এ ছাড়া মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ৪.১৬ শতাংশ, এবি ব্যাংকের ৪.০২ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংকের ৩.০৪ শতাংশ, ইউসিবির ২.৯৭ শতাংশ দাম কমেছে। বাকিগুলোর দাম কমার হার খুব একটি বেশি নয়।
পতনের দিন ব্যাংক খাতে ডাচবাংলা ব্যাংকের ২ টাকা ৬০ পয়সা এবং আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংকের দাম বেড়েছে ১০ পয়সা।
ব্যাংক খাতে হাতবদল হয়েছে ১৪৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল ১৯৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
ধস বিদ্যুৎ, প্রকৌশল, ওষুধ খাতেও
অর্থবছর শেষ হতে চলা এই তিন খাতের মধ্যে বিদ্যুৎ এবং ওষুধ খাতে কেবল একটি করে আর প্রকৌশল খাতে কেবল ৩টি শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিবিধ খাতেও বেড়েছে কেবল একটির দর।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ খাতে ২১টির, ওষুধ খাতে ২৯টি আর প্রকৌশল খাতে ৩৯টি আর বিবিধ খাতে কমেছে ১৩টির দর। ফলে সহজেই অনুমেয় যে, এসব খাতের শেয়ারধারীরাও ব্যাপকভাবে হতাশ।
দাম কমার ক্ষেত্রে যেসব কোম্পানি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ভালো মুনাফা করেছে আর যেসব কোম্পানি ভালো করতে পারেনি, তার মধ্যে কোনো পার্থক্যই দেখা যায়নি।
প্রকৌশল খাতে লেনদেন হয়েছে ১২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা, আগের দিন যা ছিল ১২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
এ ছাড়া ওষুধ ও রসায়ন খাতে হাতবদল হয়েছে ১০৪ কোটি ২০ লাখ টাকা।
প্রায় শতভাগ পতন মিউচ্যুয়াল ফান্ডে
অর্থবছর শেষ হতে যাওয়া মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের ৩৭টি ফান্ডের মধ্যে একটির লেনদেন হয়নি। বাকি ৩৬টির সবগুলো দর হারিয়েছে।
এই ফান্ডগুলোর ৩০টির অর্থবছর শেষ হতে চলেছে আগামী ৩০ জুন। আর এর মধ্যে সিংহভাগ ফান্ডই চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ব্যাপক মুনাফা করার তথ্য প্রকাশ করেছে। আর ১ এপ্রিল থেকে শুরু চতুর্থ প্রান্তিকে এখন পর্যন্ত ৭৫০ পয়েন্টের মতো সূচক বৃদ্ধির সুফলও তারা পাবে।
এই অবস্থায় গত কয়েক দিনে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এক দিনে লেনদেন হওয়া সব কটি ফান্ডের দর বৃদ্ধির চিত্রও দেখা গেছে পুঁজিবাজারে। অথচ উল্টোচিত্র দেখা গেল আতঙ্কের দিন।
শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি কমেছে ফিনিক্স ফিনান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর। আগের দিনের তুলনায় ৭.২৭ শতাংশ কমেছে এর ইউনিট দর।
এসইএমএল আইবিবি শরিয়া ফান্ড ৪.৬৯ শতাংশ, সিএপিএম বিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান ৪.৬৩ শতাংশ, পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৪.৬১ শতাংশ, ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফিনান্স মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান ৪.৪ শতাংশ, এসইএমএল লেকচার ইক্যুয়েটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড ৪.৩৯ শতাংশ, আইএফআইসি ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৪.৩৫ শতাংশ দর হারিয়েছে।
পতনের দিন উজ্জ্বল কেবল বস্ত্রখাত
যে ৫৪টি কোম্পানির দর বেড়েছে তার মধ্যে এই একটি খাতেরই ২৩টির দর বৃদ্ধিই বলে দেয়, এই খাতের শেয়ারধারীদের মধ্যে হতাশার বোধ কম। আর সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে এই খাতেরই প্রাধান্য দেখা গেছে।
সবচেয়ে বেশি দর বাড়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে ৬টি আর ২০টির মধ্যে ১৫টি ছিল বস্ত্র খাতের। ওটিসি থেকে মূল মার্কেটে ফেরা মুন্নু ফেব্রিক্স তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের দাম আবারও বেড়েছে এক দিনে যত বাড়া সম্ভব ততই।
দিনের দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছে মতিন স্পিনিং, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, আরগন ডেনিম, জাহিন স্পিনিং, হাওয়েল টেক্সটাইলের দরও।
দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাছি বেড়েছে ঢাকা ডায়িং, কুইনসাউথ, জাহিন টেক্সটাইল, শাসা ডেনিমের দরও।
এই খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে গত এক মাসে ব্যাপকভাবে দাম বৃদ্ধি পাওয়া সাফকো স্পিনিং দর হারিয়েছে সবচেয়ে বেশি। সবচেয়ে বেশি দর হারানো ১০টি কোম্পানির একটি ছিল এই কোম্পানিটি। এর বাইরে এমএল ডায়িং, পিটিএল, দুলামিয়া কটন, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজও দর হারিয়েছে তিন থেকে চার শতাংশের মাঝামাঝি।
এই খাতে হাতবদল হয়েছে ৪৬১ কোটি ৩ লাখ টাকার। যা আগের দিন ছিল ৪৩৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১০০ দশমিক ১০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৯২ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস সূচক ১৪ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৮৭ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৩০ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৬৮ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ৭৪০ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল এক হাজার ৫৯৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ২৯৭ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩৫৯ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ২১০ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ঝুঁকি কমে এসেছে। সেই সঙ্গে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করবে—মন খবর বাজারে আসায় তেলের বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। এ পরিস্থিতিতে আজ সোমবার (৩০ জুন) বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রায় ১ শতাংশ কমেছে।
আগস্ট মাসের জন্য ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৬৬ সেন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৬৭ দশমিক ১১ ডলার। সেপ্টেম্বর মাসের জন্য দাম আরও কমেছে। সে ক্ষেত্রে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৩ সেন্ট কমে গিয়ে ৬৫ দশমিক ৯৭ ডলার হয়েছে। সেই সঙ্গে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিও ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯৪ সেন্ট বা ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমে ৬৪ দশমিক ৫৮ ডলারে নেমে এসেছে।
গত সপ্তাহে বড় ধরনের দরপতনের মুখে পড়েছিল তেলের বাজার। সাপ্তাহিক দরপতনের দিক থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাসের পর গত সপ্তাহে দাম কমেছে সবচেয়ে বেশি। তবে সামগ্রিকভাবে জুন মাসে তেলের দাম বেড়েছে। আজ সোমবার (৩০ জুন) শেষ দিনের দামের পূর্বাভাসসহ ধারণা করা হচ্ছে, জুন মাসে তেলের দাম ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর তেলের দাম বাড়তে থাকে। শেষ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার পর তা দ্রুত নেমে আসে ৬৭ ডলারে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইজি মার্কেটসের বিশ্লেষক টনি সাইকামোর বলেন, বাজারে যে আতঙ্কজনিত বাড়তি মূল্য ছিল, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর তা অনেকটাই মুছে গেছে।’
এদিকে ওপেক ও সহযোগী জোটের চারজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তারা আগস্ট মাসে প্রতিদিন ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়াতে যাচ্ছেন। মে, জুন ও জুলাই মাসেও একই পরিমাণে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। আগামী ৬ জুলাই ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর বৈঠকে বসার কথা। এপ্রিল মাসে উৎপাদন হ্রাসের ধারার থেকে বের হওয়ার পর এটি হবে পঞ্চম দফায় উৎপাদন বৃদ্ধি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় তেল খনির সংখ্যা আরও ছয়টি কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩২-এ, অক্টোবর ২০২১ সালের পর যা সর্বনিম্ন। এ তথ্য দিয়েছে খনিজ খাতের প্রতিষ্ঠান বেকার হিউজ।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে অর্থবছরের শেষ দিন আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের সব ব্যাংকের শাখাগুলোতে ব্যাংকিং লেনদেন চলবে।
সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৩০ জুন সকাল ১০টা পর্যন্ত ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২২ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরের চেয়ে এবার বেশি রাজস্ব আদায় হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স খাতে এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে দেশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষ হতে এখনো দুদিন বাকি থাকলেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ ইতোমধ্যে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা ধরে)। এটি দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যা এবার ছাপিয়ে গেছে। ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গতকাল রোববার এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
চলতি জুন মাসের প্রথম ২৮ দিনেই প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২.৫৪ বিলিয়ন ডলার (২৫৪ কোটি), যা প্রায় ৩১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। মাসের বাকি দিনগুলোতেও একই ধারা বজায় থাকলে জুন শেষে মোট রেমিট্যান্স ২.৭০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হুন্ডি প্রতিরোধে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রণোদনা, প্রবাসীদের জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি—এসবই এই রেকর্ড প্রবাহে সহায়ক হয়েছে। চলতি বছর প্রাপ্ত পুরো রেমিট্যান্স এসেছে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে।
মাসভিত্তিক প্রবাহের চিত্র
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জুলাই মাসে এসেছে ১৯১ কোটি ডলার, আগস্টে ২২২ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি, নভেম্বরে ২২০ কোটি এবং ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স। নতুন বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে এসেছে ২১৯ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২৫২ কোটি, মার্চে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি এবং মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মার্চ মাসে ৩৩০ কোটির বেশি ডলার এসেছে, যা দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ বলেন, ‘এটি শুধু সংখ্যাগত সাফল্য নয়, বরং দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রতিফলন। সঠিক নীতিমালা, প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ ব্যাংকিং অবকাঠামো এবং আইনগত পদক্ষেপ একত্রে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়িয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও এই অর্থপ্রবাহ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি দিয়েছে, ডলারের বাজারে চাপ কমিয়েছে এবং আমদানি ব্যয় মেটাতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তবে এই ধারা টিকিয়ে রাখতে হলে বহুমুখী শ্রমবাজার, স্বচ্ছ অভিবাসন প্রক্রিয়া ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই থেকে ২৮ জুন) মধ্যে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৩০.০৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬.৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ২৩.৭৪ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের রেমিট্যান্সবান্ধব নীতিমালা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের আস্থা ও সহযোগিতাই এই সাফল্যের পেছনে মূল চালিকা শক্তি।
২০২৪-২৫ অর্থবছর বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাতে এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। এই গতি ধরে রাখতে হলে হুন্ডি প্রতিরোধ কার্যক্রম আরও জোরদার করা, প্রবাসীদের আস্থার জায়গা সুসংহত রাখা এবং বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিবেশ আরও সহজতর করা অপরিহার্য। রেমিট্যান্স এখন শুধু অর্থপ্রবাহ নয়, বরং অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার অন্যতম কৌশলগত হাতিয়ার।
ঢাকা, ২৯ জুন ২০২৫ – অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বাজারভিত্তিক উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে আইডিই বাংলাদেশ ঢাকার লো মেরিডিয়ান হোটেলে আয়োজিত “Catalyzing Markets: iDE Bangladesh Private Sector Engagement Summit 2025”-এ তাদের প্রাইভেট সেক্টর এনগেজমেন্ট স্ট্র্যাটেজি ২০২৫–২০৩০ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে।
সামিটে সরকারি প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, উন্নয়ন সহযোগী এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি খাতের ২০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, এসিআই, এসএমসি, লাল তীর সিড লিমিটেড, এনআরবিসি ব্যাংক, রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন, রহিম আফরোজ, ইসপাহানি এগ্রো, ব্র্যাক, গ্রামীণ ড্যানন ফুডস লিমিটেড। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংক, এফসিডিও, ইউনিসেফ, জিআইজেড, ইউএনডিপি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইতালীয় ও ডেনিশ দূতাবাস-এর প্রতিনিধিরা।
সামিটে ১৪টি প্রাইভেট সেক্টর প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয় এবং একটি প্রদর্শনী আয়োজন করা হয় যেখানে কৃষি, ওয়াশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পুষ্টি ও ফিনটেক খাতের উদ্ভাবনী সমাধান তুলে ধরা হয়।
প্রধান অতিথি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, নির্বাহী চেয়ারম্যান, পিপিআরসি ও চেয়ারপারসন, ব্র্যাক বলেন, “আইডিইর এই স্ট্র্যাটেজি একটি সময়োপযোগী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন উদ্যোগ, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য একটি কার্যকর কাঠামো তৈরি করবে।”
বিশিষ্ট বক্তাদের মধ্যে ছিলেন:
উজমা চৌধুরী, পরিচালক (ফাইন্যান্স), প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ
মোহাম্মদ মোহিউদ্দিন আহমেদ, অ্যাডিশনাল জেনারেল ম্যানেজার, এসএমসি
কাজি মো. সাফায়েত কবির, সিনিয়র EVP, এনআরবিসি ব্যাংক
ইঞ্জিনিয়ার সাদিদ জামিল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেড
নিতাই পদ সাহা, সিইও, রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন (RSF)
সামীর কার্কি, কান্ট্রি ডিরেক্টর, আইডিই বাংলাদেশ বলেন, “এই স্ট্র্যাটেজি কেবল একটি নীতি-নির্ধারণী দলিল নয়; এটি একটি যৌথ ভিশন—যেখানে ব্যবসা ও উন্নয়ন একসাথে কাজ করে টেকসই সমাধান তৈরি করে যা সকলের জন্য কার্যকর বাজার গড়ে তোলে।”
এই নতুন কৌশলগত রোডম্যাপ আইডিইর চার দশকের অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করে গঠিত, যার লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে বৃহৎ কর্পোরেশন পর্যন্ত সকলের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্ভাবনী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজারব্যবস্থা তৈরি।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনকারী অবকাঠামো পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর ৩ বছরপূর্তি ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। ২০২২ সালের ২৬ জুনের এই দিনে বহু প্রতিক্ষিত পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। এরপর এক মুহুর্তের জন্য সেতুতে যান চলাচল বন্ধ হয়নি। আর এই তিন বছরে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৯২টি যান পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ২ হাজার ৫ শ’ ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৬২ হাজার ৮শ’ টাকা।
পদ্মা সেতু দক্ষিণের মানুষের বিড়ম্বনা লাঘব করে এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক এখন। উত্তাল নদী পারপারের ভোগান্তি থেকে শুধু মুক্তিই দেয়নি এই সেতু পাল্টে দিয়েছে দক্ষিণের আর্থ সামাজিক অবস্থাও। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত, শিল্প কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যেও যুগান্তকারী পরিবর্তন। খুলে গেছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।
সেতুর উপর তলায় সড়ক পথ ও আর নিচ দিয়ে ছুটছে ট্রেন। রাতদিন দ্রত বেগে পদ্মার উপর দিয়ে চলছে ট্রেন ও সড়ক পথের যাত্রা। পদ্মা সেতুর ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন হলেও পরদিন ২৬ জুন এই দিনে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হয়। পরের বছর ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতুর রেলপথ উদ্বোধন হয়। পদ্মা সেতু হয়ে চালু হয় ঢাকা-ভাঙ্গা নতুন রেল নেটওয়ার্ক। আর ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর রেল লিঙ্ক প্রকল্প পুরোপুরি চালু হয়। এদিন রাজধানী থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে ভাঙ্গা হয়ে নতুন পথে নড়াইল ও যশোর অতিক্রম করে খুলনা পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। রাজধানী থেকে মাত্র সাড়ে ৩ ঘন্টায় খুলনা ও বেনাপোল পৌছানো যাচ্ছে। তাই এখন দক্ষিণের মানুষ সড়ক ও ট্রেন পথের সুফল পাচ্ছে।
এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পায়রা ও রামপালের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা খুঁটি ব্যবহার করে। সেতু উপর দিয়ে যাওয়া উচ্চ ক্ষমতার ইন্টারনেট লাইন ব্যবহার হচ্ছে। সেতুতে নির্মাণ করে রাখা গ্যাস লাইন ব্যবহারে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে দক্ষিণের জনপদ, এখন অপেক্ষা এখন। তাই খুশি সবাই।
পদ্মা সেতুর দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ বলেন, কোন হেসেল ছাড়াই টানা দিন বছর সেতুতে নিরবিচ্ছিন্নভাবর যান পারাপার করা হয়। এটি একটি বড় মাইলফলক। পদ্মা সেতুর দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) যুগ্ম সচিব আলতাফ হোসেন সেখ বলেন, দেশের এই অবকাঠামো যেমন মানুষের উপকারে লাগছে, আবার রাজস্ব আয়ও হচ্ছে। সেতু ব্যবহারে টোল আদায় আরও সহজ করা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই চলন্ত অবস্থায়ই টোল পরিশোধ করা যাবে।
স্বপ্নের সেতু চালুর তিন বছরে পারাপার হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৯২টি। এর মধ্যে মাওয়া দিয়ে প্রবেশ করে ৯৬ লাখ ৭১ হাজার ১১২টি যান। আর ৯৮ লাখ ৫৮০টি যান জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতুতে প্রবেশ করে। মাওয়া থেকে ১ লাখ ২৯ হাজার ৪শ’৬৮ বেশি যান জাজিরা প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে।
গত ৫ জুন পদ্মা সেতুতে এক দিনে রেকর্ড পরিমান ৫ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার টাকার টোল আদায় হয়েছে। এই ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ৪৮৭টি যানবাহন পারাপার হয়। পদ্মা সেতুতে একদিনে সর্বোচ্চ টোল আদায় ও যানবাহন পারাপারের নতুন রেকর্ড এটি। এর আগে ২০২২ সালের ২৬ জুন পদ্মা সেতুর যান চলাচলের শুরুর দিনে সর্বোচ্চ ৫১ হাজর ৩১৬টি যানবাহন পারাপারের রেকর্ড ছিল। আর ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল ইদুল ফতরের আগে সর্বোচ্চ টোল আদায়ের রেকর্ড ছিল ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭শ' টাকা।
নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ বলেন, সেতু চালুর প্রথম বছর ৫৬ লাখ ৯৪ হাজার ৮৯৯টি যানবাহন পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ৭৯৮ কোটি ৬০ লাখ ৯৩ হাজার ৭শ’ টাকা। দ্বিতীয় বছর ৬৮ লাখ ১ হাজার ৩৭৪টি যানের বিপরীতে টোল পাওয়া যায় ৮৫০ কোটি ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩শ’ ৫০ টাকা। আর তৃতীয় বছর ২৫ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত ৬৯ লাখ ৯৫ হাজার ২২৯টি যান পারাপারে টোল আদায় হয় ৮৬১ কোটি ২২ লাখ ১৮ হাজার ৮৫৯ টাকা। মূল পদ্মা সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ। তবে অ্যাপ্রোচসহ প্রায় ১০ কিলোমিটার। সেতু নিরাপত্তাসহ ট্রাফিক আইন মেনে পদ্মা সেতুতে যানাবাহানের নির্বিঘ্ন চলাচলে সেতু এবং দুই প্রান্তের সড়ক জুড়ে অত্যাধুনিক ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সেতুতে যানবাহানের গতিও বৃদ্ধি করে দুই পারের এক্সপ্রেসওয়ের মতই ঘন্টায় সর্বোচ্চ গতি করা হয়েছে ৮০ কিলোমিটার।
পুঁজিবাজারে চতুর্থ কার্যদিবসে ঢাকা-চট্টগ্রামের বাজারে সবকটি সূচকের উত্থান হয়েছে, বেড়েছে লেনদেন এবং বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সারাদিনের লেনদেনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৪৯ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচক শরিয়াভিত্তিক ডিএসইএস ১৫ এবং বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ১৮ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ৪০০ কোম্পানির মধ্যে ২৯৫ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৪৬ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৫৯ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এ, বি এবং জেড- তিন ক্যাটাগরিতেই দাম বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির। বিশেষ করে লভ্যাংশ দেওয়া ভালো কোম্পানির এ ক্যাটাগরির ২২০ কোম্পানির মধ্যে ১৫৯ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ২৫ এবং অপরিবর্তিত আছে ৩৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ডিএসই ব্লক মার্কেটে ২৭ কোম্পানির ২৬ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংক সর্বোচ্চ ১৫ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
সারাদিনে ডিএসইতে ৪১৩ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গতদিন ছিল ৩৭২ কোটি টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষে ইন্দো বাংলা ফার্মাসিটিক্যালস এবং ৫ শতাংশ দাম কমে তলানিতে ভ্যানগার্ড এএমএল রুপালি ব্যাংক ব্যালেন্স ফান্ড।
এদিন লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০ প্রতিষ্ঠান হলো- লাভেলো আইসক্রিম, স্কয়ার ফার্মা, ব্রাক ব্যাংক, সী পার্ল, বিচ হ্যাচারি, ইন্দো বাংলা ফার্মা, বিএটিবিসি, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, ফাইন ফুডস ও মিডল্যান্ড ব্যাংক।
চট্টগ্রামেও উত্থান
ঢাকার মতো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের উত্থান হয়েছে, সার্বিক সূচক বেড়েছে ২৫ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ২৩৩ কোম্পানির মধ্যে ১২১ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৭৯ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৩৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে মোট ৪৩ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গত কার্যদিবসে ছিল ২৯ কোটি টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রি এবং ৯ শতাংশের ওপর দর হারিয়ে তলানিতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস।
দেশের বাজারে ১৪ জুন স্বর্ণের দাম প্রতি ভরিতে বেড়েছিল ২ হাজার ১৯২ টাকা। তবে আবার দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। এ দফায় ভরিতে সর্বোচ্চ দাম কমেছে ১ হাজার ৬৬৮ টাকা। তাতে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম কমে দাঁড়াবে ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৬০ টাকা। নতুন এই দাম গতকাল বুধবার থেকে কার্যকর হবে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) গত মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বর্ণের দাম কমানোর কথা জানায়। বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে বিশুদ্ধ সোনার (পিওর গোল্ড) মূল্য হ্রাস পাওয়ায় নতুন করে দাম সমন্বয় করা হয়েছে।
এর আগে সর্বশেষ ১৪ জুন দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছিল। তাতে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে হয়েছিল ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫২৮ টাকা। গতকাল বুধবার রাত পর্যন্ত এ দামেই স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে। এছাড়া গত ২৩ এপ্রিল দেশে স্বর্ণের দাম ভরিতে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৩৪২ টাকা বেড়েছিল। তখন ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে হয়েছিল ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৮ টাকা। দেশের বাজারে সেটিই ছিল এখন পর্যন্ত স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম।
বাজুসের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে গতকাল বুধবার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট মানের স্বর্ণ ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৬০ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৯ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৪১ হাজার ৪২৬ টাকায় বিক্রি হয় এছাড়া সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ২ টাকা।
দেশের বাজারে গত মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত প্রতি ভরি হলমার্ক করা ২২ ক্যারেট স্বর্ণ ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫২৮ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৪২ হাজার ৮০২ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ ১ লাখ ১৮ হাজার ১৬৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাবে ২২ ক্যারেট স্বর্ণ ২ হাজার ১৯২ টাকা, ২১ ক্যারেটে ২ হাজার ১০০ টাকা, ১৮ ক্যারেটে ১ হাজার ৮০৮ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ ১ হাজার ৫২৮ টাকা দাম বেড়েছে। তবে রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মন্তব্য