২০০৯ সালে ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি থেকে ফেরার পর ইউসিবিএল টানা ছিল ধরা ছোঁয়ার বাইরে। শেয়ার দর এক পর্যায়ে ছাড়ায় সাড়ে তিন হাজার টাকা।
সে সময় শেয়ারের ফেসভ্যালু ছিল ১০০ টাকা। এখন ১০ টাকা। এই হিসাবেও দাম ছাড়ায় ৩৫০ টাকা।
তখন ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ছিল কম, শেয়ার সংখ্যা ছিল সীমিত। পরে বোনাস শেয়ার নিয়ে শেয়ার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
তবে সেই হিসাব ধরলেও এখন শেয়ার দর ৮ ভাগের এক ভাগ মাত্র।
বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির শেয়ার দর ছিল ১৬ টাকা ৮০ পয়সা। ২০০৯ সালের পর থেকে বোনাস শেয়ার বিবেচনায় আনলে দাম হয় ৪৫ টাকা মাত্র।
এই এক দশকে ব্যাংকের শেয়ার দরে ধস নেমেছে-এটা ঠিক। তবে অন্য যেসব কোম্পানি ওটিসি থেকে মূল মার্কেটে এসেছে, তার সবগুলোর দশাই কম বেশি একই রকম।
মূল মার্কেটে আসার পর ধাই ধাই করে বাড়তে থাকে দাম। পরে দাম কমে যায়। আর উচ্চমূল্যে যারা শেয়ার কেনেন তারা কেউ লোকসান না দিয়ে হতে পারেন না।
সম্প্রতি চারটি কোম্পানি ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে আসার পর একই ঘটনা ঘটছে।
গত ১৩ জুন মুন্নু ফেব্রিক্স, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, মনস্পুল পেপার ও পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের শেয়ার দর প্রতিদিনই লাফাচ্ছে। প্রতিদিনই দাম আগের দিনের তুলনায় ১০ শতাংশ বা কাছাকাছি বেড়েছে। কিন্তু একটি ছাড়া বাকি কোম্পানিগুলোর শেয়ারধারীরা পর পর ১০ কার্যদিবস এভাবে সর্বোচ্চ দাম বাড়ার পরও বিক্রি করতে রাজি হচ্ছেন না।
এরই মধ্যে শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য ও শেয়ার প্রতি আয়ের বিবেচনায় এসব কোম্পানির শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে গত বছর মূল মার্কেটে ফেরা সোনালী পেপার, এর আগে ফেরা ওয়াটা ক্যামিকেল, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারও এভাবে লাফাতে লাফাতে বেড়েছে। পরে শেয়ার দর কমে হতাশায় ফেলেছে বিনিয়োগকারীদের।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা বিনিয়োগকারীদের পুরনো অভ্যাস। তারা মনে করে নতুন শেয়ার কিনলেই লাভ হবে। কিন্ত বাস্তবে তা ঠিক নয়।’
তিনি বলেন, ‘ওটিসি থেকে যে কোম্পানিগুলো এসেছে সেগুলোর আয় কত তা দেখা উচিত। এর আগেও আগেও যেসব দুর্বল কোম্পানি ওটিসি থেকে মূল মার্কেটে এসেছে বিনিয়োগকারীরা সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে।’
দেবব্রত বলেন, ‘কোম্পানিগুলো দুর্বল বলেই এতদিন ওটিসিতে ছিল। এখন মূল মার্কেটে আসলেই যে সেটি একদিনে ভালো হয়ে যাবে তা ভাবাও ঠিক না।’
আগের অভিজ্ঞতা
ওয়াটা কেমিক্যালস
২০১৪ সালে ওটিসি থেকে মূল বাজারে আসা ওয়াটা কেমিক্যালস লিমিটেড।
মূল মার্কেটে আসার আগে শেয়ার মূল্য ছিল ৫০ টাকার আশেপাশে। মার্কেটে আসার পর ১২ কর্মদিবসে লেনদেন হয় কেবল দুই দিন। পরে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ মে কোনো মূল্যসীমা না থাকার সুযোগে সেদিন দাম বেড়ে হয় ৪৮৫ টাকা। এক দিনেই বাড়ে ৭৩৫ শতাংশ। আগের দিন দাম ছিল ৫৯ টাকা।
সেখানেই থেমে থাকেনি। এক পর্যায়ে তা এক হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়।
এর পরের বছর ২৫ শতাংশ, পরের বছর ১০ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৫ শতাংশ, পরের বছর ৩০ শতাংশ, ২০১৯ সালে ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়া কোম্পানিটির শেয়ার দর এখন ২৮২ টাকা। সব বোনাস শেয়ার হিসেবে নিলেও এখন দাম ৮২৫ টাকা দাঁড়ায়। অর্থাৎ সাত বছর রেখেও কোনো মুনাফা পাননি বিনিয়োগকারীরা।
কোম্পানিটি গত ৩১ জানুয়ারি তাদের দ্বিতীয় প্রান্তিক প্রকাশ করেছে। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৩ টাকা ৩১ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪ টাকা ১১ পয়সা।
গত দুই বছরের মধ্যে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দর ওঠে ২০১৯ সালে ১০ অক্টোবর ৬৯১ টাকা ৬০ পয়সা। এরপর এই সময়ে আর কখনও এই দরে লেনদেন হয়নি।
আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ
২০১৮ সালে ওটিসি থেকে মূল মার্কেটে আসার পরই আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার দর ১৩০ টাকায় শুরু হয়ে ১৪৩ টাকায় লেনদেন হয়। এরপর আরও বেড়ে ১৮০ টাকাও ছাড়িয়ে যায়।
কোম্পানিটির বর্তমান শেয়ার দর ৩৯ টাকা ৫০ পয়সা। তাও কিছুটা ভদ্রস্ত দেখাচ্ছে। এক মাসে সর্বনিম্ন দাম ছিল ২২ টাকা ৯০ পয়সা।
গত দুই বছরে কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বোচ্চ দর ওঠেছে ৬৩ টাকা ২০ পয়সা।
মূল মার্কেটে ফেরার পর এক বার ১০ শতাংশ এবং একবার ৭ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছে আলিফ। অর্থাৎ বোনাস শেয়ার পেয়েও বিনিয়োগকারীরা তাদের লোকসান কাটাকে পারেননি।
সোনালী পেপার
সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিল ২০১৯ সালের ২ জুলাই থেকে মূল মার্কেটে লেনদেন হচ্ছে। মূল বাজারে ফিরিয়ে আনতে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ধরা হয় ২৭৩ টাকা। পরে বাড়তে বাড়তে দাম দাঁড়ায় ৩৫০ টাকায়।
এক বছরের মধ্যে দাম কমে হয়েছে ২০৬ টাকা ২০ পয়সা। আর মূল মার্কেটে আসার পর দুই বারে ১০ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার দিয়েছে তারা।
অর্থাৎ বোনাস শেয়ার নিয়েও বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের লোকসানে আছেন।
গত ২৫ এপ্রিল কোম্পানিটি চলতি অর্থবছরে তৃতীয় প্রান্তিকের যে হিসাব প্রকাশ করেছে, তাতে শেয়ার দর যে অতিমূল্যায়িত, তা বোঝাই যায়।
বছরের প্রথম নয় মাসে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ২৯ পয়সা।
এই হারে আয় করলে কোম্পানিটির বর্তমান মূল্য তুলতে সময় লাগবে ৬৮ বছর।
অবশ্য এটাও ঠিক যে, এর শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য অনেক। সব শেষ নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী ১০ টাকার শেয়ারে সম্পদ মূল্য আছে ৩০৭ টাকা ৮৮ পয়সা।
কোম্পানিটি তাদের নতুন প্রোডাকশন লাইন চালুর ঘোষণা দিয়েছে। জানানো হয়েছে, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার বক্স তৈরির এই নতুন লাইনের উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি দিন এক লাখ পিস। এবং তারা এও জানিয়েছে যে, নতুন উৎপাদন লাইনের যে উৎপাদন ক্ষমতা তার পুরোটাই ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
তবে এই খবরেও শেয়ার দাম বাড়াতে পারেনি। সম্পদমূল্যের চেয়ে ১০০ টাকা কমে লেনদেন হচ্ছে বর্তমানে।
চার কোম্পানির শেয়ার দর থামার নাম নেই
গত ১৩ জুন ওটিসি থেকে ফেরা চার কোম্পানির প্রতিদিনই দাম ১০ শতাংশ বা শতকরা হিসেবে সামান্য কিছু কম বাড়বে, এটা যেন নিয়ম হয়ে গেছে।
চারটি কোম্পানিই জেড ক্যাটাগরিতে লেনদেন শুরু করেছে।
মুন্নু ফেব্রিক্সের লেনদেন শুরু হয়েছিল ১০ টাকায়, ক্রমাগত বেড়ে পৌঁছেছে ২৫ টাকা ৬০ পয়সায়। আর বৃহস্পতিবার এই দামে হাতবদল হয়েছে ১৭ লাখ ৬৭ হাজার ১১৭টি।
চারটি কোম্পানির মধ্যে এই একটি কোম্পানির শেয়ারই লেনদেন হয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।
কোম্পানিটির সর্বোচ্চ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩ জুন ২৬ লাখ ১৪ হাজার ৫২১টি। সেদিন দাম ছিল ২৩ টাকা ৩০ পয়সা।
তার আগের দিন ২১ লাখ ৪৮ হাজার ২৩১টি শেয়ার হাতবদল হয় ২১ টাকা ২০ পয়সায়।
তারও আগের দিন ১৩ লাখ ৫৬ হাজার ২৩৫টি শেয়ার লেনদেন হয় ১৯ টাকা ৩০ পয়সা।
এর আগে একটি থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ২০৮টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
চলতি বছর ৯ মাসে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে মাত্র ৪ পয়সা। এই হারে আয় করতে থাকলে বর্তমান শেয়ার মূল্য ফিরে পেতে সময় লাগবে ৪৮০ বছর।
কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য ২৭ টাকা ৩০ পয়সা।
ওটিসি মার্কেটে মনোস্পুলের শেয়ারের মূল্য ছিল ৫০ টাকা। প্রতিদিন এই কোম্পানির দামও বেড়েছে ১০ শতাংশ বা আশেপাশে। বিপুল সংখ্যক শেয়ারের ক্রয়াদেশ থাকলেও বিক্রেতা এখন পর্যন্ত নেই, যদিও দাম বেড়ে হয়েছে ১২৯ টাকা ২০ পয়সা।
এই ১০ দিনে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ সংখ্যক শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৪ হাজার ৩৮টি। ২০ জুন এই লেনদেনের দিন দাম ছিল ৮৮ টাকা ৪০ পয়সা। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার ১৩০ টাকার আশেপাশে শেয়ার বিক্রি হয়েছে মাত্র দুই হাজার ৮০৯টি।
চলতি বছর প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় মাত্র ২৯ পয়সা। আয় বাড়াতে না পারলে বর্তমান শেয়ার মূল্য তুলতে সময় লাগবে ৩৪৬ বছর।
কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য অবশ্য ভালো, ১২৫ টাকা ৬১ পয়সা।
একই অবস্থা তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের। মার্কেটে ফেরার দিন শেয়ারের মূল্য ছিল ১২ টাকা। সেটি বাড়তে বাড়তে এখন দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকা ৬০ পয়সায়।
এক সঙ্গে ফেরা চার কোম্পানির মধ্যে এটির আয়ই সবচেয়ে বেশি। চলতি বছর প্রথম ৯ মাসে তাদের ইপিএস হয়েছে ৯৮ পয়সা।
দাম বেড়ে প্রায় আড়াইগুণ হয়ে গেছেও কোম্পানিটির শেয়ারের বিক্রেতা নেই। বৃহস্পতিবার ৩০ টাকা ৬০ পয়সায় হাতবদল হয়েছে সর্বোচ্চ ৬০০টি শেয়ার। বাকি দিন কোনোদিন একটি, কোনোদিন দুইটি শেয়ার বিক্রি হয়েছে ১০ শতাংশ বেশি দামে।
এই কোম্পানিটিরও শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য বেশ আকর্ষণীয়; ৮০ টাকা। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে শেয়ার সম্পদমূল্যের দিক দিয়ে এরা এগিয়ে।
আরেক কোম্পানি পেপার প্রসেসিংয়ের শেয়ার ১৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪০ টাকা ৯০ পয়সা।
তবে ১০ দিনেও বলার মতো বিক্রেতা নেই। সর্বোচ্চ ৯২১টি শেয়ার বিক্রি হয়েছে বৃহস্পতিবার। অর্থাৎ শেয়ারধারীরা দাম আরও বাড়বে, এই আশায় অপেক্ষা করে আছেন। এর আগে কোনোদিন একটি কোনোদিন দুটি, একদিন ১০১টি এবং একদিন ৬৬টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
চলতি বছর প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৪৪ পয়সা। এই হারে কায় করতে থাকলে বর্তমান শেয়ার মূল্য উঠতে সময় লাগবে ৬৯ বছর।
এই কোম্পানিরও শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য আকর্ষণীয়; ৮৩ টাকা ৯৫ পয়সা। বস্ত্র খাতে আর কোনো কোম্পানির শেয়ার প্রতি এত সম্পদ নেই।
আরও পড়ুন:শেষ কার্যদিবসে ঢাকার পুঁজিবাজারে লেনদেন চলছে উত্থানে, বেড়েছে প্রধান সূচক। অন্যদিকে বিগত দিনের মতো এখনো পতন থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রামের বাজার।
লেনদেনের প্রথম দুই ঘন্টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৮ পয়েন্ট।
এর বাইরে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) শরীয়াভিত্তিক সূচক ডিএসএসের উত্থান দশমিকের ঘরে থাকলেও ব্লু-চিপ শেয়ারের সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ২ পয়েন্ট।
সূচক কিছুটা বাড়লেও বিগত কয়েকদিনের টানা পতনে লেনদেন অনেকটাই কমে এসেছে। এতদিন প্রথমার্ধে লেনদেন ২০০ কোটি ছাড়িয়ে গেলেও, এদিন লেনদেন হয়েছে ১৫০ কোটিরও কম।
দাম বেড়েছে লেনদেন অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ১৬১ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১৩২ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৯৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এদিকে এখনো পতন থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রামের বাজার। লেনদেনের প্রথমার্ধে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক হারিয়েছে ৭৩ পয়েন্ট।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ৩৩ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৬৬ কোম্পানির হয়েছে দরপতন, অপরিবর্তিত আছে ২৪ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
পুঁজিবাজারের প্রথম দুই ঘন্টায় সিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজারে চলতি সপ্তাহ মোটেই ভালো কাটছে না বিনিয়োগকারীদের। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সূচকের পতনের পর নববর্ষের ছুটি শেষে দ্বিতীয় কার্যদিবসেও বড় পতনের মুখে পড়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম—দেশের উভয় পুঁজিবাজার। এদিন কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৩৭ পয়েন্ট। মন্দাবস্থা চলছে বাকি দুই সূচকেও। শরীয়াভিত্তিক সূচক ডিএসইএস ১০ এবং বাছাইকৃত শেয়ারের ব্লু-চিপ সূচক কমেছে ১৮ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৭টি কোম্পানির মধ্যে সিংহভাগের দরপতন হয়েছে। আজ ৯৮টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২৫৫টি কোম্পানি এবং অপরিবর্তিত ছিল ৪৪টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ক্যাটাগরির হিসেবে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘জেড’—তিন ক্যাটাগরিতেই প্রধান্য পেয়েছে দর কমা কোম্পানির সংখ্যা। বিশেষ করে ‘বি’ ক্যাটাগরির ৮৩টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ১১টির এবং কমেছে ৬৭টির; আর লেনদেন অপরিবর্তিত ছিল ৫টি কোম্পানির।
লেনদেন হওয়া ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে বেশিরভাগেরই দাম ছিল নিম্নমুখী। মাত্র ৭টি কোম্পানির ইউনিটের দাম বৃদ্ধি হয়েছে, কমেছে ২৪টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৫টির।
ডিএসইর ব্লক মার্কেটে আজ ২৬টি কোম্পানির মোট ৪৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে মারিকো বাংলাদেশ।
ডিএসইতে সূচক কমলেও গতদিনের তুলনায় বেড়েছে লেনদেন। সারা দিনে মোট ৪৪৬ কোটি টাকার ওপর শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, গতদিন যার পরিমাণ ছিল ৪১৪ কোটি টাকা।
৯.৯৪ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষ শেয়ারের তালিকায় আছে রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড। ১৪২.৯০ টাকায় লেনদেন শুরু হয়ে দিন শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫৭.১০ টাকা।
অন্যদিকে, ৯.৯৬ শতাংশ দর হারিয়ে আজ একেবারে তলানিতে ঠাঁই হয়েছে খান ব্রাদার্সের। প্রতিটি শেয়ার ১৩৪.৫০ টাকা দরে লেনদেন শুরু হলেও দিন শেষে দাম কমে ১২১.১০ টাকায় ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।
চট্টগ্রামেও বড় পতন
.ঢাকার মতো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সূচকের বড় পতন হয়েছে। সারা দিনের লেনদেনে সিএসইতে সার্বিক সূচক কমেছে ১০০ পয়েন্ট।
লেনদেন অংশ নেওয়া ২১১টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৫৪টির, বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৫টির এবং ২২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল অপরিবর্তিত।
সূচকের পাশাপাশি সিএসইতি আজ লেনদেনও কমেছে। গত কার্যদিবসে ১৫ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হলেও মঙ্গলবার তা কমে ৭ কোটি টাকায় নেমেছে।
এদিন ৯.৯৫ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে আর্থিক মূল্যে শীর্ষ শেয়ার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ইস্টার্ন ক্যাবলস লিমিটেড। অপরদিকে ৯.৭৭ শতাংশ দর হারিয়ে তলানিতে নেমেছে দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেড।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে আবারও সূচকের পতন ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে। দুই পুঁজিবাজারে সবকটি সূচক কমলেও বেড়েছে সামগ্রিক লেনদেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরীয়া ভিত্তিক ডিএসএস ১ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ কমেছে আধা পয়েন্টের বেশি।
সূচক কমলেও গতদিনের তুলনায় বেড়েছে লেনদেন। ডিএসইতে মোট ৪৮২ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগেরদিন ছিল ৪৫১ কোটি টাকা।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের। ৩৯৫ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫০, বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৬ কোম্পানির। সারাদিনের লেনদনে দাম অপরিবর্তিত ছিল ৫৯ কোম্পানির শেয়ারের।
ক্যাটাগরির হিসাবে এ এবং জেড ক্যাটাগরির বেশিরভাগ শেয়ারেরই দাম ছিল নিম্নমুখী। বি ক্যাটাগরিতে দাম বেড়েছে অধিকাংশ শেয়ারের। মধ্যম মানের শেয়ারের এই ক্যাটাগরিতে লেনদেন হওয়া ৮২ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৯, কমেছে ৩৩ এবং অপরিবর্তিত আছে ১০ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে তালিকাভুক্ত ৩৬ কোম্পানির ২৪টিরই দাম ছিল উর্ধ্বমুখী। দাম কমেছে ৪ এবং অপরিবর্তিত আছে ৮ কোম্পানির।
ব্লক মার্কেটে লেনদেন হওয়া ২৬ কোম্পানির ২৬ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। এরমধ্যে ব্যাংক এশিয়া সর্বোচ্চ ১০ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার ব্লক মার্কেটে বিক্রি করেছে।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে ১০ শতাংশ দাম বেড়ে শীর্ষে আছে প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। অন্যদিকে ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ দাম হারিয়ে তলানিতে তাল্লু স্পিনিং মিলস।
চট্টগ্রামেও পতন
ঢাকার মতো পতন হয়েছে চট্টগ্রামের সূচকেও। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১ পয়েন্টের বেশি।
তবে সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে সিএসই'র বাজারে। সারাদিনে সিএসইতে মোট ৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গতদিন ছিল ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
লেনদেনে অংশ নেয়া ১৯৩ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৮৬, কমেছে ৭৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ২৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষে আছে পদ্মা ইসলামি লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড এবং ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ দাম কমে তলানিতে বিচ হ্যাচারি লিমিটেড।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ঢাকার পুঁজিবাজারে প্রধান সূচকের উত্থান হলেও সার্বিক সূচক কমেছে চট্টগ্রামে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শুরুতেই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৫ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক সূচক ডিএসইএস ১ ও বাছাইকৃত শেয়ার ব্লু-চিপের সূচক কমেছে ১১ পয়েন্ট।
লেনদেনে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২৩১, কমেছে ৬৮ এবং অপরিবর্তিত আছে ৭৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
শুরুর প্রথম ঘণ্টায় ডিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ১৩০ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১৩ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ৭০ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৪০, কমেছে ১৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ১১ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথম ঘণ্টায় মোট লেনদেন ৭৩ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
আরও পড়ুন:টানা দুই দিন উত্থানের পর তৃতীয় দিন মঙ্গলবারও ঢাকার পুঁজিবাজারে বইছে সুবাতাস।
সূচক বৃদ্ধির পাশাপাশি লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় শেয়ার ও ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় ছাড়িয়েছে ৩০০ কোটি টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৪৭ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচক ডিএসইএস এবং ব্লু-চিপ কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ১০ পয়েন্ট করে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির বেশির ভাগেরই দাম বেড়েছে। ১০৯ কোম্পানির দরপতন এবং ৫৩ কোম্পানির দাম অপরিবর্তিত থাকার বিপরীতে দাম বেড়েছে ২৩০ কোম্পানির।
ঢাকার মতো চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারেও বইছে চনমনে হাওয়া। লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১০২ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৫৭ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৮৭, কমেছে ৫১ এবং অপরিবর্তিত আছে ১৯ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেনের প্রথমার্ধে সিএসইতে ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রবিবারের লেনদেনে সূচকের উত্থান হয়েছে ঢাকার পুঁজিবাজারে; বেড়েছে সবকটি সূচক।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে পতন দিয়ে শুরু হয়েছে লেনদেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৩ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরিয়াহভিত্তিক ডিএসইএসের উত্থান দশমিকের নিচে এবং বাছাইকৃত শেয়ার ব্লু-চিপ সূচকের উত্থান হয়েছে ৫ পয়েন্ট।
লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় দাম বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের। দরবৃদ্ধির ২৪৫ কোম্পানির বিপরীতে দর কমেছে ৮৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৫৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ডিএসইতে দিনের শুরুতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ১৯০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ৫ পয়েন্ট। সূচক কমলেও বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেন হওয়া ১০২ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৫৫, কমেছে ২৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ১৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথম দুই ঘণ্টায় লেনদেন ছাড়িয়েছে ২ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:গত সপ্তাহের উত্থানের ধারা ধরে রেখে এ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার ঢাকা ও চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে প্রথম ঘণ্টার লেনদেন হয়েছে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শুরুতেই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৫ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক সূচক ডিএসইএসের উত্থান দশমিকের নিচে থাকলেও বাছাইকৃত শেয়ার ব্লু-চিপের সূচক বেড়েছে ৩ পয়েন্ট।
লেনদেনে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৬৯, কমেছে ৮৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৮৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
শুরুর ৩০ মিনিটে ডিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ৫০ কোটি টাকা। ঢাকার মতোই চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক বেড়েছে ১০ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২২, কমেছে ৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথম আধা ঘণ্টায় মোট লেনদেন ৩০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য