অর্থনীতিতে একটা কথা আছে, ‘আমদানি বাড়া মানে বিনিয়োগ বাড়া, কর্মসংস্থান বাড়া। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হওয়া।’ কিন্তু বাংলাদেশে তার কোনো ইঙ্গিত চোখে পড়ছে না।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে আমদানিতে রেকর্ড হতে চললেও কলকারখানা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনি যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানির চিত্র খুবই হতাশাজনক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিভিন্ন দেশ থেকে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ৩৮০ কোটি ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খুলেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ কম।
এলসি নিষ্পত্তির চিত্র আরও করুণ। ২৯৬ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। কমেছে ২১ দশমিক ২৬ শতাংশ।
গত অর্থবছরের এই ১০ মাসে ৪২০ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। নিষ্পত্তি হয়েছিল ৩৭৬ কোটি ৩৩ লাখ ডলার।
অথচ এই ১০ মাসে সার্বিক এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ১৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। নিষ্পত্তি বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, মহামারির মধ্যে অন্য সব পণ্য আমদানি বেড়েছে। তবে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান উপাদান মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়েনি; উল্টো বেশ কমেছে।
বিনিয়োগ বাড়ার আরেক উপাদান বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধিও তলানিতে নেমে এসেছে। মহামারির সংকট বিবেচনায় নিয়ে মুদ্রানীতিতে এই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এপ্রিল পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে লক্ষ্যের অর্ধেকের মতো, ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মহামারির এই কঠিন সময়ে আমদানি বাড়া ভালো। তবে এই বৃদ্ধি যদি বিনিয়োগে ইতিবাচক প্রভাব না ফেলে, তা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়।
সব পণ্যের সঙ্গে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি যদি বাড়ত, তাহলে দেশে বিনিয়োগ বাড়ত, কর্মসংস্থান বাড়ত, অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হতো। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ নেই। আমদানি বাড়লেও বিনিয়োগে সুখবর নেই।
তথ্য বলছে, করোনাভাইরাস মহামারির বছরেও আমদানিতে রেকর্ড হতে চলেছে। ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সব মিলিয়ে ৫ হাজার ২৪৯ কোটি (৫২ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে।
এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে এবার আমদানি খাতে ব্যয় ৬০ বিলিয়ন (ছয় হাজার কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৯ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল দেশে, যা ছিল এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ।
অর্থবছর শেষ হতে আর ১৫ দিন বাকি। তবে এপ্রিল পর্যন্ত আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতে দেখা যায়, এপ্রিলে ৬২৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ১১৯ শতাংশ বেশি। মহামারির মধ্যেই এ বছরের জানুয়ারিতে ৭২৩ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। এক মাসের হিসাবে এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আমদানি খাতে ব্যয় হয় যথাক্রমে ৫৫৬ কোটি ৪২ লাখ ও ৬১৬ কোটি ১২ লাখ ডলার।
এর আগে বিদায়ি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৪২৩ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল দেশে। আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে আমদানি হয় যথাক্রমে ৩৮১ কোটি, ৪৬৫ কোটি ও ৪৩৭ কোটি ডলারের পণ্য।
নভেম্বর ও ডিসেম্বরে আমদানি হয় যথাক্রমে ৪৮২ কোটি ও ৫৩৭ কোটি ডলারের পণ্য।
গত এপ্রিলে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য ৫০২ কোটি ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে, যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ১৮২ শতাংশ বেশি।
গত বছরের মার্চে দেশে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর এপ্রিল মাসের প্রায় পুরোটা সময় লকডাউনে দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় বন্ধই ছিল। তৈরি পোশাকশিল্প, কলকারখানা ছাড়া অফিস-আদালত-ব্যাংকসহ প্রায় সবকিছুই বন্ধ ছিল। সে কারণে ওই মাসে পণ্য আমদানির জন্য মাত্র ১৭৮ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল।
এই এপ্রিলে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৩৬ কোটি ডলারের। গত বছরের এপ্রিলে এ সংখ্যাটি ছিল ২৪৭ কোটি ডলার। এ হিসাবে এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে ৭৬ দশমিক ১৯ শতাংশ।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অর্থবছরের শেষ দুই মাস অর্থাৎ মে ও জুন মাসে ৪০০ কোটি ডলার করে ৮০০ কোটি ডলারের পণ্যও যদি আমদানি হয়, তাহলেও মোট আমদানি ব্যয় ৬০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
আমাদানি বাড়লেও ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি কমাকে অর্থনীতিবিদেরা মোটেই ভালো লক্ষণ হিসেবে দেখছেন না।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সার্বিক আমদানি বৃদ্ধির সঙ্গে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি যদি বাড়ত, তাহলে খুবই ভালো হতো। কিন্তু সেটা না হওয়ায় উদ্বেগ থেকে যাচ্ছে।
‘এমনিতেই বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের বিনিয়োগে স্থবিরতা চলছে; জিডিপির ৩১-৩২ শতাংশে আটকে আছে। এখন এই ডামাডোলের মধ্যেও ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি কমে যাওয়া মানে ভবিষ্যতে বিনিয়োগের অবস্থা আরও খারাপ হবে।’
তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি পড়ে আমরা জেনেছি, আমদানি বাড়া মানে বিনিয়োগ বাড়া। আর আমদানি কমা মানে বিনিয়োগ কমা। বিনিয়োগ কমা মানে কর্মসংস্থান কমে যাওয়া।
‘কিন্তু এখন আমদানি বাড়ছে। অথচ ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি কমছে। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কম। বিনিয়োগে প্রভাব পড়ছে না। কেমন জানি উল্টো লাগছে।’
২০০৭-০৮ মেয়াদে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক হচ্ছে ক্যাপিটাল মেশিনারি এবং বেসরকারি ঋণ। এই দুটি যদি না বাড়ে, তাহলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে না। আর বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান হবে না। কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে না।
‘আমরা এখন যে উদীয়মান অর্থনীতিতে আছি, তাতে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে জিডিপির কমপক্ষে ৩৬-৩৭ শতাংশ বিনিয়োগ পেতে হবে। বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের বিনিয়োগ একই জায়গায় আটকে আছে ৩১-৩২ শতাংশ। এ থেকে আমাদের বের হয়ে আসতেই হবে। যে করেই হোক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, বিনিয়োগের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এখন দেশে সেই স্থিতিশীলতা আছে। কিন্তু মহামারি সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। এখন বিনিয়োগ বাড়াতে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে সরকার ও উদ্যোক্তাদের কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, সংকটের সময় অনেক সম্ভাবনাও উঁকি দেয়। এখন এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি, নতুন কোন পণ্যের বাজার সৃষ্টি হয়েছে, এসব বিষয় ভালোভাবে দেখেশুনে বিনিয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। দেশি বিনিয়োগ না বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না, এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই সরকার ও উদ্যোক্তাদের একযোগে কাজ করতে হবে।’
ব্যবসায়ী নেতা ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, করোনার ধাক্কায় সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেছে। এখন বিনিয়োগের নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে নামতে হবে। ছোট ও মাঝারি শিল্পের দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার সোয়া লাখ কোটি টাকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল, তার বেশিরভাগ বড় উদ্যোক্তারা পেয়েছে। যারা করোনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই ছোট-মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তারা কিন্তু বঞ্চিত হয়েছে। এখন নতুন করে তাদের সহায়তা দিতে হবে।
শামস বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, ছোট-মাঝারি শিল্পগুলো ঘুরে না দাঁড়ালে বড় বড় শিল্পগুলোও ধাক্কা সামলে উঠতে পারবে না। তাই এখন ছোটরা যাতে ধাক্কা সামলে উঠে দাঁড়াতে পারে, সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই বিনিয়োগ করতে হবে।
‘পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থতির কারণে চায়না ও ভিয়েতনামের তৈরি পোশাকের অর্ডার এখন বাংলাদেশে আসছে। সে সুযোগগুলো ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে আমাদের রপ্তানি আয় আরও বাড়বে। এই দুই দেশ থেকে অন্য কোনো পণ্যের বাজার বাংলাদেশে নিয়ে আসা যায় কি না, সেটাও বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগ পরিকল্পনা সাজাতে হবে।’
আরও পড়ুন:ঢাকার বাতাস আজ ‘অস্বাস্থ্যকর’। ১৬৭ স্কোর নিয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা শহর দুটি ভারতের।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ১০টায় সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান নির্ধারণ সংস্থা আইকিউএয়ার থেকে এ তথ্য নেওয়া হয়েছে।
আইকিউএয়ারের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, দূষিত শহরের তালিকায় প্রথম অস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর, স্কোর ২৬০, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি, বায়ুর মানের স্কোর ২২৪, তৃতীয় স্থানে রয়েছে কলকাতা, স্কোর ১৬৮। ১৬৩ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে কাতারের রাজধানী দোহা। দূষিত বাতাসে শীর্ষ দশে থাকা অপর শহরগুলোর বাতাসের মানের স্কোর ১৫৭ থেকে ১৩৯ এর মধ্যে।
আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে বায়ুর মান ‘ভালো’ বলে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি বা ‘সহনীয়’ ধরা হয় বায়ুর মান। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠী’র (অসুস্থ বা শিশু-বৃদ্ধ) জন্য অস্বাস্থ্যকর ধরা হয়। আর স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত থাকলে সে বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়।
স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বলে বিবেচনা করা হয় এবং ৩০১ এর বেশি হলে তা ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়।
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় আগুনে পুড়ে যাওয়া কেমিক্যাল গোডাউন থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। এ অবস্থায় গোডাউনের পাশের রাইজিং ফ্যাশন নামের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির শ্রমিকদের অনেকে এই কেমিক্যালের প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে শিয়ালবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ওই কেমিক্যাল গোডাউন থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। তবে ফায়ার সার্ভিস বলছে, আগুন নিভে গেছে।
এদিকে, কেমিক্যাল গোডাউনের পাশে অবস্থিত রাইজিং ফ্যাশন নামের একটি গার্মেন্টসের কর্মীরা সকালে কর্মক্ষেত্রে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কথা বলে জানা যায়, দুর্ঘটনার সময় কেমিক্যাল গ্যাসে পুরো গার্মেন্টস ভরে যায়। সকালে গার্মেন্টসে প্রবেশের পর একে একে কর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের অনেককে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
রাইজিং ফ্যাশনের কর্মী মো. আল আমিন বলেন, কেমিক্যাল গোডাউনের বিষাক্ত গ্যাসে গার্মেন্টস ভরে ছিল। আমরা সকালে যখন কাজ করতে আসলাম, তখন কেমিক্যাল রিয়েকশনে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এসময় রাইজিং ফ্যাশন নামের ওই গার্মেন্টসের সামনে কর্মীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। তাদের কাউকে কাউকে বাড়ি ফিরে যেতে দেখা যায়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, আগুন লাগার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মৃত ব্যক্তিরা বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন আহত ও দগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ১২টির বেশি ইউনিট। ভবনটিতে রাসায়নিক থাকায় এবং প্রচণ্ড ধোঁয়ার কারণে ভেতরে প্রবেশ করে উদ্ধার কাজ চালাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের বেশ বেগ পেতে হয়।
দুর্নীতিগ্রস্ত কোনো ব্যক্তিকে নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, প্রতিটি অপরাধ ও দুর্নীতির সঙ্গে রাজনীতির যোগসূত্র থাকে। শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতি রেখে সামগ্রিকভাবে দেশকে ভালো করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সততা আনতে পারলেই দেশের দুর্নীতি দমনে পরিবর্তন আসবে। আমরা জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে সৎ লোককে চাই।
গতকাল মঙ্গলবার দুদকের সম্মেলনকক্ষে রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন (র্যাক) সদস্যদের এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুল মোমেন বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেন কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি মনোনয়ন না পায়, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনে মনোনয়ন বেচাকেনা বন্ধ করতে হবে। এটি যদি বন্ধ না করা যায়, তাহলে দুর্নীতি কখনোই নির্মূল হবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে বহু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে প্রায় সর্বস্বান্ত করে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। এসব দুর্নীতির তদন্ত দুদক ভয়ভীতিহীনভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যসহ পলাতক দুর্নীতিবাজদের দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশসহ বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরানো কঠিন হলেও দুদকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ বিষয়ে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন দুদক সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম, মহাপরিচালক আবদুল্লাহ-আল-জাহিদ এবং আবু হেনা মোস্তফা জামান।
চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি আগামী ২৩ অক্টোবর। এছাড়া ইনুর সঙ্গে তার আইনজীবীর তিন দিন দুই ঘণ্টা করে সাক্ষাতের অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
ইনুর আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। ইনুর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নাজনীন নাহার।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ রয়েছে হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ চারজনকে আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জড়িত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য আসামি চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত ১৪ আগস্ট মামলায় শেখ হাসিনাসহ মোট ২৮৬ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে এই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসামিদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এই আদেশ দেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭৩ জন ও অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা রুজু করে সিআইডি। বিষয়টি সিআইডি থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সিআইডি জানায়, মামলা রুজুর পর সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, সার্ভার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য সংগ্রহ এবং ফরেনসিক বিশ্লেষণ কার্যক্রম শুরু করে সিআইডি। পাশাপাশি সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় সকল সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করে। এভাবে পাঁচ মাসেরও কম সময়ে শেখ হাসিনাসহ মোট ২৮৬ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে সিআইডি।
সিআইডি আরও জানায়, ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর জুমে একটি মিটিং করে ‘জয় বাংলা ব্রিগেড’ নামের একটি অনলাইন প্লাটফর্ম। সেখানে অংশগ্রহণ করেন দেশ ও বিদেশ থেকে অনেকেই। সিআইডি জনাতে পারে, ওই মিটিংয়ে বর্তমান সরকারকে উৎখাতের আহ্বান, গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির পরিকল্পনা এবং পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠার ঘোষণাসহ রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য রয়েছে। এসব তথ্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের কাছে অভিযোগ দায়েরের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত মার্চে সিআইডিকে অনুমতি দেয়।
এসব তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষার জন্য পাঠালে সেখানে শেখ হাসিনা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. রাব্বি আলমসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের এই রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পায়। অন্যান্য মামলায় ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য সিআইডি বিজ্ঞ আদালতকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার মাধ্যমে মোট ৯১ জনের গ্রেপ্তার নিশ্চিত করে। এছাড়া বাকি ১৯৫ জন আসামি পলাতক রয়েছেন।
গতকাল মামলাটির শুনানি ধার্য ছিল। অধিকাংশ আসামি অনুপস্থিত থাকায় আদালত জাতীয় পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারিক আদালতে বিচারকার্য পরিচালিত হওয়ার আদেশ দেন।
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে একটি পোশাক কারখানা ও একটি কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখনো অনেকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনেরা। অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল ও আশপাশের হাসপাতালগুলোতে নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজে ফিরছেন অসংখ্য মানুষ। অনেকে প্রিয়জনের ছবি হাতে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম গণমাধ্যমকে বলেন, রূপনগরে আগুনের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জন হয়েছে। প্রথমে ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, পরে আবার ৭ জনের মরদেহ নতুন করে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গার্মেন্টস ভবনের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে কেমিক্যাল ভবনের আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং উদ্ধারে বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছে। পোশাক কারখানার ভেতরে ঢুকতে পারলেও এখনো রাসায়নিকের গুদামে প্রবেশ করা যায়নি। এই অবস্থায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সকল লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এর আগে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের কাছে আগুনের সংবাদ আসে। সংবাদ পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ১১টা ৫৬ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে শিয়ালবাড়িতে চারতলা ভবনে থাকা ‘আনোয়ার ফ্যাশন’ নামের একটি পোশাক কারখানা এবং তার পাশে থাকা টিনশেড ঘরে রাসায়নিকের গুদামে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন।
এর মধ্যে কারখানা থেকে ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। পরে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জন হওয়ার কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস।
বিকেলে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘তল্লাশি অভিযান এখনো চলমান। পাশের যে কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে, সেখানে এখনো আগুন জ্বলছে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ওখানে কাউকে যেতে দিচ্ছি না। আমরা সর্বোচ্চ প্রযুক্তি দিয়ে, ড্রোন দিয়ে এসব কার্যক্রম করছি।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, আগুনের সূত্রপাত এখনো জানা যায়নি। যারা শুরুতে আগুন নেভাতে এসেছেন, তারা রাসায়নিকের গুদাম ও গার্মেন্টস দুই দিকেই আগুন দেখেন।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, পোশাক কারখানার নিচ তলায় ‘ওয়াশ ইউনিট’ রয়েছে। সেখানে প্রথম আগুন লাগে। সেই আগুন পাশের রাসায়নিকের গুদামে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আগুন চার তলা পোশাক কারখানার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
আগুন লাগার পর কারখানা থেকে শ্রমিকেরা নানাভাবে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই অনেকে আটকা পড়েন।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বলেন, রাসায়নিকের গুদামে ব্লিচিং পাউডার, প্লাস্টিক, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
ঘটনার পর থেকে রাসায়নিকের গুদামের মালিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের জানান ফায়ার ব্রিগেডের পরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, দেখে মনে হচ্ছে, এই রাসায়নিকের গুদামের অনুমোদন নেই। যাচাই-বাছাই করে তদন্ত করে বিস্তারিত পরে জানা যাবে।
এদিকে এ ঘটনায় কেন এত মৃত্যু হলো, প্রাথমিকভাবে তার কয়েকটি কারণ জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তাদের ধারণা, কারখানার পাশে থাকা রাসায়নিকের গুদামে বিস্ফোরণের পর সেখান থেকে বিষাক্ত সাদা ধোঁয়া বা টক্সিক গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে, যা ছিল প্রাণঘাতী।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, ‘আগুন খুব দ্রুত ‘ডেভেলপ স্টেজ’ বা তৃতীয় ধাপে পৌঁছে যায়, ফলে ভুক্তভোগীরা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন।’ এছাড়া যে পোশাক কারখানার ভবন থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়েছে, সেই ভবনের ছাদের দরজায় দুটি তালা লাগানো ছিল। এর ফলে কারখানার শ্রমিকেরা কেউ ওপরে উঠতে পারেননি। এছাড়া পোশাক কারখানার ভবন ও রাসায়নিকের গুদাম কোনোটিরই অগ্নিনিরাপত্তা সনদ ছিল না বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
কারখানা ভবন ও রাসায়নিকের গুদামে আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং কারখানা ভবনে তল্লাশি অভিযান চলার মধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
পোশাক কারখানা ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে জানিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রাসায়নিকের গুদামের আগুন এখনো জ্বলছে। সেখানে এখনো ধোঁয়া ও আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগবে। ওই গুদামে ৬-৭ ধরনের রাসায়নিক ছিল।
ঘটনাস্থল থেকে ১৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, মরদেহগুলো পোশাক কারখানার ভবনের দোতলা ও তিন তলায় বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে। মরদেহগুলোর অবস্থা এমন যে সেগুলো ডিএনএ টেস্ট ছাড়া শনাক্ত করা সম্ভব নয়।
কীভাবে এই আগুনের সূত্রপাত, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। এর আগে বিকেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, যারা শুরুতে আগুন নেভাতে এসেছেন, তারা রাসায়নিকের গুদাম ও পোশাক কারখানার দুই দিকেই আগুন দেখেছেন।
তবে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, রাসায়নিকের গুদামের পাশে একটি ‘ওয়াশ ইউনিট’ রয়েছে। সেখানে প্রথম আগুন লাগে। সেই আগুন পাশের রাসায়নিকের গুদামের ছড়িয়ে পড়লে সেখানে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আগুন পোশাক কারখানার ওই পাঁচ তলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।
ওই কারখানা ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় আরএন ফ্যাশন নামের একটি পোশাক কারখানা রয়েছে। সেখানে গেঞ্জি তৈরি করা হতো। দোতলায় ছিল টি-শার্ট প্রিন্ট ফ্যাক্টরি, নাম স্মার্ট প্রিন্টিং। আর পাঁচ তলায় বিসমিল্লাহ ফ্যাশন নামে আরেকটি প্রিন্ট কারখানা চলছিল। আগুন লাগার পর কারখানা ভবন থেকে শ্রমিকেরা নানাভাবে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই অনেকে আটকা পড়েন।
ঘটনার পর থেকে রাসানিকের গুদামের মালিক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ফায়ার ব্রিগেডের পরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামটির কোনো ফায়ার সেফটি প্ল্যান বা লাইসেন্স ছিল না।’
প্রধান উপদেষ্টার শোক
অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা নিহত ব্যক্তিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এই দুর্ঘটনায় নিরীহ মানুষের মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক। আমরা এই শোকের সময়ে তাদের পরিবারের পাশে আছি।’
প্রধান উপদেষ্টা অগ্নিকাণ্ডে আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দেন।
তারেক রহমানের শোক
মিরপুরে আগুনের ঘটনায় ১৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই শোকবার্তা দেন। শোকবার্তায় তারেক রহমান নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং আহতদের দ্রুত পূর্ণ সুস্থতার দোয়া করেন।
তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার মান নিশ্চিত করার জন্য আমাদের অবশ্যই কাজ করতে হবে। যাতে অবহেলার কারণে আর কোনো প্রাণহানি না ঘটে। সরকারকে স্বচ্ছতার সঙ্গে অগ্নিদুর্ঘটনার তদন্ত করার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান দায়ীদের অবিলম্বে জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রিয়জনদের হারানো অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক। আমরা এই শোকের সময়ে তাদের পরিবারের পাশে আছি।’
শেরপুরের নকলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বসতবাড়ি ও মাঠে চাষযোগ্য জমিতে আগাম শীতকালীন শাক-সবজি আবাদের জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ চত্বরে বীজ ও সার বিতরণের উদ্বোধন করেন নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম।
অনুষ্ঠানে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী বলেন, বীজ ও সার মাঠে আবাদ না করে যদি কোনো কৃষক বিক্রির উদ্দেশ্যে অসদুপায় অবলম্বন করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ২৩০ কৃষকের মাঝে জনপ্রতি ৯ প্যাকেট করে মোট ২ হাজার ৭০ প্যাকেট সবজির বীজ এবং ৪০৫ কৃষকের মাঝে মাঠে চাষযোগ্য ২০ শতাংশ জমির জন্য লাউ, বেগুন, শসা, মিষ্টিকুমড়াসহ যেকোনো সবজির ১ প্যাকেট করে বীজসহ ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার দেওয়া হবে।
মন্তব্য