অর্থনীতিতে একটা কথা আছে, ‘আমদানি বাড়া মানে বিনিয়োগ বাড়া, কর্মসংস্থান বাড়া। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হওয়া।’ কিন্তু বাংলাদেশে তার কোনো ইঙ্গিত চোখে পড়ছে না।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে আমদানিতে রেকর্ড হতে চললেও কলকারখানা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনি যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানির চিত্র খুবই হতাশাজনক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিভিন্ন দেশ থেকে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ৩৮০ কোটি ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খুলেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ কম।
এলসি নিষ্পত্তির চিত্র আরও করুণ। ২৯৬ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। কমেছে ২১ দশমিক ২৬ শতাংশ।
গত অর্থবছরের এই ১০ মাসে ৪২০ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। নিষ্পত্তি হয়েছিল ৩৭৬ কোটি ৩৩ লাখ ডলার।
অথচ এই ১০ মাসে সার্বিক এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ১৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। নিষ্পত্তি বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, মহামারির মধ্যে অন্য সব পণ্য আমদানি বেড়েছে। তবে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান উপাদান মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়েনি; উল্টো বেশ কমেছে।
বিনিয়োগ বাড়ার আরেক উপাদান বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধিও তলানিতে নেমে এসেছে। মহামারির সংকট বিবেচনায় নিয়ে মুদ্রানীতিতে এই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এপ্রিল পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে লক্ষ্যের অর্ধেকের মতো, ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মহামারির এই কঠিন সময়ে আমদানি বাড়া ভালো। তবে এই বৃদ্ধি যদি বিনিয়োগে ইতিবাচক প্রভাব না ফেলে, তা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়।
সব পণ্যের সঙ্গে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি যদি বাড়ত, তাহলে দেশে বিনিয়োগ বাড়ত, কর্মসংস্থান বাড়ত, অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হতো। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ নেই। আমদানি বাড়লেও বিনিয়োগে সুখবর নেই।
তথ্য বলছে, করোনাভাইরাস মহামারির বছরেও আমদানিতে রেকর্ড হতে চলেছে। ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সব মিলিয়ে ৫ হাজার ২৪৯ কোটি (৫২ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে।
এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে এবার আমদানি খাতে ব্যয় ৬০ বিলিয়ন (ছয় হাজার কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৯ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল দেশে, যা ছিল এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ।
অর্থবছর শেষ হতে আর ১৫ দিন বাকি। তবে এপ্রিল পর্যন্ত আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতে দেখা যায়, এপ্রিলে ৬২৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ১১৯ শতাংশ বেশি। মহামারির মধ্যেই এ বছরের জানুয়ারিতে ৭২৩ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। এক মাসের হিসাবে এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আমদানি খাতে ব্যয় হয় যথাক্রমে ৫৫৬ কোটি ৪২ লাখ ও ৬১৬ কোটি ১২ লাখ ডলার।
এর আগে বিদায়ি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৪২৩ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল দেশে। আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে আমদানি হয় যথাক্রমে ৩৮১ কোটি, ৪৬৫ কোটি ও ৪৩৭ কোটি ডলারের পণ্য।
নভেম্বর ও ডিসেম্বরে আমদানি হয় যথাক্রমে ৪৮২ কোটি ও ৫৩৭ কোটি ডলারের পণ্য।
গত এপ্রিলে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য ৫০২ কোটি ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে, যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ১৮২ শতাংশ বেশি।
গত বছরের মার্চে দেশে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর এপ্রিল মাসের প্রায় পুরোটা সময় লকডাউনে দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় বন্ধই ছিল। তৈরি পোশাকশিল্প, কলকারখানা ছাড়া অফিস-আদালত-ব্যাংকসহ প্রায় সবকিছুই বন্ধ ছিল। সে কারণে ওই মাসে পণ্য আমদানির জন্য মাত্র ১৭৮ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল।
এই এপ্রিলে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৩৬ কোটি ডলারের। গত বছরের এপ্রিলে এ সংখ্যাটি ছিল ২৪৭ কোটি ডলার। এ হিসাবে এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে ৭৬ দশমিক ১৯ শতাংশ।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অর্থবছরের শেষ দুই মাস অর্থাৎ মে ও জুন মাসে ৪০০ কোটি ডলার করে ৮০০ কোটি ডলারের পণ্যও যদি আমদানি হয়, তাহলেও মোট আমদানি ব্যয় ৬০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
আমাদানি বাড়লেও ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি কমাকে অর্থনীতিবিদেরা মোটেই ভালো লক্ষণ হিসেবে দেখছেন না।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সার্বিক আমদানি বৃদ্ধির সঙ্গে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি যদি বাড়ত, তাহলে খুবই ভালো হতো। কিন্তু সেটা না হওয়ায় উদ্বেগ থেকে যাচ্ছে।
‘এমনিতেই বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের বিনিয়োগে স্থবিরতা চলছে; জিডিপির ৩১-৩২ শতাংশে আটকে আছে। এখন এই ডামাডোলের মধ্যেও ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি কমে যাওয়া মানে ভবিষ্যতে বিনিয়োগের অবস্থা আরও খারাপ হবে।’
তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি পড়ে আমরা জেনেছি, আমদানি বাড়া মানে বিনিয়োগ বাড়া। আর আমদানি কমা মানে বিনিয়োগ কমা। বিনিয়োগ কমা মানে কর্মসংস্থান কমে যাওয়া।
‘কিন্তু এখন আমদানি বাড়ছে। অথচ ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি কমছে। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কম। বিনিয়োগে প্রভাব পড়ছে না। কেমন জানি উল্টো লাগছে।’
২০০৭-০৮ মেয়াদে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক হচ্ছে ক্যাপিটাল মেশিনারি এবং বেসরকারি ঋণ। এই দুটি যদি না বাড়ে, তাহলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে না। আর বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান হবে না। কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে না।
‘আমরা এখন যে উদীয়মান অর্থনীতিতে আছি, তাতে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে জিডিপির কমপক্ষে ৩৬-৩৭ শতাংশ বিনিয়োগ পেতে হবে। বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের বিনিয়োগ একই জায়গায় আটকে আছে ৩১-৩২ শতাংশ। এ থেকে আমাদের বের হয়ে আসতেই হবে। যে করেই হোক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, বিনিয়োগের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এখন দেশে সেই স্থিতিশীলতা আছে। কিন্তু মহামারি সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। এখন বিনিয়োগ বাড়াতে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে সরকার ও উদ্যোক্তাদের কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, সংকটের সময় অনেক সম্ভাবনাও উঁকি দেয়। এখন এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি, নতুন কোন পণ্যের বাজার সৃষ্টি হয়েছে, এসব বিষয় ভালোভাবে দেখেশুনে বিনিয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। দেশি বিনিয়োগ না বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না, এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই সরকার ও উদ্যোক্তাদের একযোগে কাজ করতে হবে।’
ব্যবসায়ী নেতা ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, করোনার ধাক্কায় সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেছে। এখন বিনিয়োগের নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে নামতে হবে। ছোট ও মাঝারি শিল্পের দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার সোয়া লাখ কোটি টাকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল, তার বেশিরভাগ বড় উদ্যোক্তারা পেয়েছে। যারা করোনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই ছোট-মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তারা কিন্তু বঞ্চিত হয়েছে। এখন নতুন করে তাদের সহায়তা দিতে হবে।
শামস বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, ছোট-মাঝারি শিল্পগুলো ঘুরে না দাঁড়ালে বড় বড় শিল্পগুলোও ধাক্কা সামলে উঠতে পারবে না। তাই এখন ছোটরা যাতে ধাক্কা সামলে উঠে দাঁড়াতে পারে, সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই বিনিয়োগ করতে হবে।
‘পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থতির কারণে চায়না ও ভিয়েতনামের তৈরি পোশাকের অর্ডার এখন বাংলাদেশে আসছে। সে সুযোগগুলো ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে আমাদের রপ্তানি আয় আরও বাড়বে। এই দুই দেশ থেকে অন্য কোনো পণ্যের বাজার বাংলাদেশে নিয়ে আসা যায় কি না, সেটাও বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগ পরিকল্পনা সাজাতে হবে।’
আরও পড়ুন:হারিয়ে যাওয়া বা লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে তথ্যদাতাকে নগদ অর্থ পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আজ সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে এক ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ কথা জানান ।
তিনি আরো জানান, পিস্তল ও শটগান উদ্ধারে তথ্য দিলে ৫০ হাজার টাকা, চায়না রাইফেল উদ্ধার করলে ১ লাখ, এসএমজি দেড় লাখ, এলএমজি ৫ লাখ ও প্রতি গুলির ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। এক্ষেত্রে তথ্যদাতাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি নির্ভর করছে জনগণ এবং রাজনৈতিক দলের ওপর। তারা যখন নির্বাচনমুখী হয়ে যাবে তখন সমস্যা কমে যাবে। সবার সহযোগিতায় আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারবো । এখন দেখা যাচ্ছে আপনারা(সাংবাদিক), জনগণ ও রাজনৈতিক পার্টি নির্বাচনমুখী। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন একটি উৎসবমুখর পরিবেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা সেইভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে নিয়োগ বাণিজ্য সম্পূর্ণভাবে বন্ধ এবং এ ব্যাপারে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কোথাও অনিয়ম দেখলে জানাবেন। আশা করছি সবসময় সত্য রিপোর্টিং করবেন, তবে ভুল রিপোর্টিং করবেন না। তবে আমরা দেখেছি আপনারা (সাংবাদিক) সব সময় সত্য রিপোর্টিং করছেন। বিদেশি কোন বিষয়েও আপনারা প্রকৃত সত্য তুলে ধরেছেন। সত্য প্রকাশ করেছেন।
গাজীপুরের পুলিশ কমিশনারের আসা যাওয়ার সময় রাস্তা বন্ধ করে রাখার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং আইজিপি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বিষয়ে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
সরকারি কর্মচারীদের জনসেবার মানসিকতা ধারণ করার আহ্বান জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি বলেন, “জনসেবার জন্যই আমাদের নিয়োগ হয়েছে। তাই সবার মধ্যে সর্বদা সেবা দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।
আজ রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালাটি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং এটুআই-এর যৌথ উদ্যোগে ন্যাশনাল ড্যাশবোর্ড বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ হিসেবে আয়োজিত হয়।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, আমাদের অ্যাডভান্টেজ তৈরি করতে হলে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার জানতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স ভবনকে আধুনিকায়ন করে একটি তথ্য হাব গড়ে তুলতে চাই, যেখানে দেশ-বিদেশের যেকোনো ব্যক্তি পার্বত্য অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্যের তথ্য পেতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্গানিক ফল যেমন পাহাড়ি আম, আনারস, কলা ও ড্রাগন ফল এখন আগের চেয়ে বেশি উৎপাদিত হচ্ছে এবং এগুলো দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কেমিক্যাল মুক্ত ফল ফলাদি আন্তর্জাতিক বাজারে পরিচিত করতে চাই বললেন উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চিন্তা ও চেতনায় পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীরাও সম-অংশীদার হতে চায়। আমাদের ঐতিহ্য, সম্পদ ও সম্ভাবনা জাতীয় উন্নয়নের অংশ হতে পারে।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আব্দুল খালেক বলেন, সবকিছুই হাতের মুঠোয় থাকতে হবে। ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে আমরা আমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে সর্বদা আপডেট থাকতে পারবো। তিনি সরকারি চাকরির বিধি-বিধান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব মোঃ মনিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কঙ্কন চাকমা, যুগ্মসচিব অতুল সরকার, যুগ্মসচিব মো. মমিনুর রহমান, যুগ্মসচিব কাজী তোফায়েল আহমেদ। প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন এটুআই-এর রেজাল্ট ম্যানেজমেন্ট এনালিস্ট মোঃ আনোয়ারুল আরিফ খান, ডাটা কো-অর্ডিনেশন অফিসার মোঃ আশরাফুল ইসলাম, রিফাত-ই-জাহান সিদ্দিকী, অনিক কুমার পাল, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারী প্রোগ্রামার ওয়াহিদ পলাশ, সহকারী রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী হাবিবুল্লাহ নাহিদ ও পল্টু চন্দ্র দাস। দিনব্যাপী এ কর্মশালায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও পার্বত্য চট্টগ্রাম শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স ও চিফ অ্যাকাউন্টস এন্ড ফিনান্স অফিসারের কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ অংশ নেন।
বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে আরেকটি মাইলফলক ছুঁলো পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (PPP) কর্তৃপক্ষ। রবিবার গাজীপুরে ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ের ১৮ কিলোমিটার অংশের উদ্বোধন করা হয়েছে যা PPP মডেলের অধীনে বাস্তবায়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।
সড়ক পরিবহন ও সেতু বিষয়ক উপদেষ্টা ফওজুল কবির খান আনুষ্ঠানিকভাবে এই অংশের উদ্বোধন করেন। নতুন সড়কটি ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ককে সংযুক্ত করবে ফলে যাতায়াত সময় কমবে এবং যান চলাচলের সুবিধা বাড়বে।
PPP কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক এ কে এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ঢাকা বাইপাস প্রকল্প বাংলাদেশের PPP কাঠামোর সাফল্যের প্রমাণ। সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগে আমরা আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ করছি যা নাগরিকদের উপকারে আসবে এবং দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।”
সম্পূর্ণ উদ্বোধনের পর ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে রাজধানীর যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ করিডর হিসেবে কাজ করবে এবং শিল্পাঞ্চল ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সংযোগ আরও মজবুত করবে।
এই প্রকল্প PPP কর্তৃপক্ষের সেই ভিশনকে আরও শক্তিশালী করেছে যার মাধ্যমে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ PPP বিনিয়োগ গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এক বছরে দেশ নির্বাচন আয়োজন করার মতো যথেষ্ট প্রস্তুত ও স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে।
তিনি বলেন, আমরা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছি। অন্তর্বর্তী সরকারের জায়গায় নির্বাচিত একটি সরকার দায়িত্ব নেবে।
সোমবার (২৫ আগস্ট) কক্সবাজারে আয়োজিত ‘স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগে’ যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, আমি এখানে এসেছি আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে। এক বছর আগে আমরা দেশকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করতে ছাত্রদের নেতৃত্বে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এক হত্যাযজ্ঞের ভেতর দিয়ে গিয়েছি। এখন আমরা আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে আরেকটি রূপান্তরের জন্য প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, আমরা নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছি। ঠিক এক বছর আগে আমাদের অভ্যুত্থান হয়েছিল, আর দেশ এখন যথেষ্ট স্থিতিশীল এবং নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত।
এ সময় সরকারের প্রতিনিধি, জাতিসংঘ সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও মিয়ানমারে। সবাইকে এই সংকট নিরসনে কোনো বিলম্ব ছাড়াই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আপনাদের সোচ্চার হওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার আশা জাগাতে পারে।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান শুধু বাংলাদেশের একার দায়িত্ব নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এখানে এগিয়ে আসতে হবে। সংকটের সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে ভাবা এবং তা বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখা সবার যৌথ দায়িত্ব।
যত দিন পর্যন্ত রোহিঙ্গারা নিজেদের আবাসভূমিতে ফিরে যেতে না পারেন, তত দিন পর্যন্ত তাদের বিষয়টি ও এর টেকসই সমাধানকে বৈশ্বিক এজেন্ডায় রাখার ওপর জোর দেন অধ্যাপক ইউনূস।
এর আগে, সোমবার সকালে এই সংলাপে যোগ দিতে কক্সবাজার পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা। এদিন বেলা ১১টার দিকে তিন দিনের এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়। এতে মিয়ানমার ও আঞ্চলিক স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা, রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন এবং বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যৌথ প্রচেষ্টার আহ্বান জানানো হয়।
রোববার (২৪ আগস্ট) কক্সবাজারে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ: টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শুরু হয়। রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
নিরাপদ সমুদ্র পর্যটনের জন্য জরুরি সতর্কবার্তা জারি করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
সতর্কবার্তা অনুযায়ী লাল পতাকা চিহ্নিত জায়গা বিপজ্জনক। লাল পতাকা চিহ্নিত স্থানে পানিতে নামা যাবে না। জেলা প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ, বিচকর্মী ও লাইফ গার্ড সর্বদা পর্যটকদের সার্বিক সহযোগিতায় নিয়োজিত রয়েছে।
নিরাপদ সমুদ্রসীমার মধ্যে অবস্থান করা এবং লাইফগার্ড সার্ভিস বিদ্যমান রয়েছে এমন স্থান ব্যতীত অন্য কোথাও পানিতে না নামতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাধারণত এই সীমানার বাইরে পানিতে ডুবে গেলে কোনো সহায়তা পাওয়া যায় না।
পানিতে নামার আগে অবশ্যই জোয়ার-ভাটার সময় এবং সাগরের বিপদ সংকেত সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় পানিতে নামা থেকে বিরত থাকতে।
ভাটার টান চলাকালীন বেপরোয়াভাবে সাগরে না নামতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়।
এছাড়া সাঁতার জানা না থাকলে, সমুদ্রে নামা পরিহার করতে হবে। সকল হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজ ও রিসোর্টসমূহ আবশ্যিকভাবে পর্যটককে লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ/ব্যবহার করার সুযোগ প্রদান করতে হবে। লাইফগার্ড হিসেবে টিউব পরিহার করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। লাইফ জ্যাকেট পরিধান ও শিশুদের সব সময় নিজের তত্ত্বাবধানে রাখতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সৈকত এলাকায় অপ্রাপ্তবয়স্ক বাচ্চা কিংবা শিশু নিয়ে আসলে অবশ্যই শিশুর ছবি মোবাইলে সংরক্ষণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া পানির তীব্র স্রোত, ঘূর্ণি স্রোত, উল্টো স্রোত ও নিম্নমুখী প্রবাহ বিপজ্জনক। সমুদ্রতটে বালি সরে গিয়ে ছোট-বড়ো কিছু গর্ত তৈরি হতে পারে, যা বিপজ্জনক; এই ধরনের প্রতিকূল আবহাওয়ায় পানিতে নামা থেকে বিরত থাকতে হবে।
অপ্রশিক্ষিত ব্যক্তি কর্তৃক উদ্ধার কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। কারণ এতে উদ্ধারকারীর জীবনও বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
মেহেরপুরের গাংনী কসাইখানায় অসুস্থ এবং মৃত প্রায় গরু জবাই করে মাংস বিক্রয় কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও প্রাণি সম্পদ বিভাগ।
সোমবার দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অভিযুক্ত কসাই আশরাফ হোসেনের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ১০ হাজার টাকা জরিমানা।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সুত্রে জানা গেছে, অসুস্থ এবং মৃত প্রায় একটি গরু প্রাণি সম্পদ বিভাগ থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই জবাই করে মাংস বিক্রি শুরু করেন কসাই আশরাফ হোসেন। খবর পেয়ে প্রাণি সম্পদ বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালায়। অভিযানে মৃতপ্রায় গরুর মাংস কেরোসিন মিশিয়ে মাটির নিচে পুতে দিয়ে ধ্বংস করা হয়। একইসাথে অভিযুক্ত কসাইকে ভোক্তা অধিকার আইনে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন গাংনী উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল মুত্তালিব ও ভ্যাটেনারী সার্জন আরিফুল ইসলাম।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে খোলা বাজারে বিক্রির জন্য রাখা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর ১ হাজার ২০ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে।
সোমবার (২৫ আগস্ট) সকালে উপজেলার নানুপুরবাজারে মেসার্স কামাল ষ্টোরের গুদামে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে এসব সয়াবিন তেল জব্দ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী। এসময় দোকান মালিক মোঃ ইকবাল (৩৮)কে আটক করা হয়। সে ধর্মপুর ইউনিয়নের রায়দার বাড়ির খায়রুল বশরের পুত্র।
জানা যায়, খোলা বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ টিসিবির সয়াবিন তেল দীর্ঘদিন ধরে মজুদ করে বিক্রি করে আসছিল নানুপুর বাজারের মেসার্স কামাল ষ্টোর। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভোরে দোকানের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে বিক্রির জন্য রাখা ১ হাজার ২০ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে প্রশাসন। এসময় দোকান মালিক ইকবালকে আটক করে পুলিশ হেফাজত দেয়া হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানকালে ফটিকছড়ি থানা পুলিশের একটি টিম ও নানুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ ও বাজার পরিচালনা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, 'ভোরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে আমরা নানুপুর বাজারে অভিযান পরিচালনা করি। এসময় খোলা বাজারে টিসিবির পণ্য বিক্রির দায়ে দোকান মালিককে আটক পুলিশ হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।'
মন্তব্য