বাজেট প্রণয়নে সংসদ সদস্যদের কোনো ভূমিকা নেই বলে মন্তব্য করেছেন সরকারি দলের সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী।
শনিবার প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর এক সংলাপে তিনি বলেন, ‘সরকারি দলের সংসদ সদস্যদেরও এখন জাতীয় বাজেট কিংবা সরকারের অন্যান্য নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোনও ভূমিকা রাখার সুযোগ দেয়া হয় না। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সময় অন্তত বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির প্রধানদের নিয়ে বৈঠক হতো। কিন্তু এখন সেটিও হয় না।’
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘তাহলে আমরা কি সংসদে আছি শুধু ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলার জন্য?’
‘সংসদ তো মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরার জন্য। সেসব কথা না বলে সদস্যরা যদি সরকার যা দেবে, তা-ই পাস করে দেয়, তাহলে তো বাজেট অধিবেশনের দরকার নেই। এটা বাজেট প্রক্রিয়ায় একটা ঘাটতি তৈরি করে’- বলেন সাবের চৌধুরী।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ‘বাজেট ডায়লগ-২০২১’ শীর্ষক বাজেট-পরবর্তী ভার্চুয়াল আলোচনা সভার গেস্ট অব অনারের বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিএনপি নেতা সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি যুক্ত হননি। তবে বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা উপস্থিত ছিলেন।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনায় অন্যদের মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসীম উদ্দিন, এমসিসিআইয়ের সভাপতি নিহাদ কবির, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ এবং বেসিসের সভাপতি আলমাস কবির বক্তব্য রাখেন।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের শুধু তথ্যে ঘাটতি নয়, তথ্যের অসংগতি রয়েছে। বাজেট উপস্থাপনায় যে তথ্য পাই, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা চিত্র আসে।’
করোনাকালে নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়া মানুষদের বিষয়ে সরকারের হাতে কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে দুটি এনজিও কেবল বস্তিবাসীর ছয় হাজার লোকের ফোনে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে দাবি করেছে, দেশে ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমায় নেমে গেছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অবশ্য এই জরিপের ফলাফল স্বীকার করেন না। তিনি মনে করেন, এই জরিপে ভুল আছে।
সরকারের হাতে নতুন দরিদ্রদের হিসাব না থাকায় সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীতে তাদের ঘিরে কোনো পরিকল্পনা নেয়া হয়নি।
সাবের চৌধুরী বলেন, ‘করোনায় নতুন দরিদ্র আছে কি নাই তার জন্য তো এভিডেন্স লাগবে। কিন্তু বিবিএসের তথ্য যদি ২০১৬ সালের হয়, তা দিয়ে তো ২০২১ সালের বাস্তবতা বুঝব না। তাহলে সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা কিসের ভিত্তিতে নিচ্ছে?’
স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা নিয়েও কথা বলেন সাবের চৌধুরী। বলেন, ‘দেশে পাবলিক হেলথ খুবই উপেক্ষিত। কিন্তু সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। কিন্তু তার পরও এ খাতে অগ্রাধিকার আমরা পাচ্ছি না। গত বছর অর্থমন্ত্রী বাজেটে বক্তৃতায় বলেছিলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলার অভিজ্ঞতা আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার কিছু দুর্বলতা চিহ্নিত করেছে। কিন্তু কী দুর্বলতা এবং কীভাবে দুর্বলতা দূর করা যায়, তার নির্দেশনা দুই বাজেটেই নেই।’
করোনার সময় জিডিপির প্রবৃদ্ধি কত হলো, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয় বলেও মনে করেন সাবের চৌধুরী। বলেন, ‘মানুষ কীভাবে বাঁচল, কীভাবে মানুষের জীবিকা ঠিক রাখা যায়, কর্মসংস্থান ঠিক রাখা যায় তা দেখা উচিত।’
‘রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে ৮০ হাজার কোটি টাকা’
সংলাপে মূল প্রবন্ধে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, এপ্রিল পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের যে গতি, তাতে এ বছর ঘাটতি দাঁড়াতে পারে ৮০ হাজার কোটি টাকা। তবু আগামী বছর বড় লক্ষ্য ধরা হয়েছে। সরকারি ব্যয়েও দুর্বলতা রয়েছে।
উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের হার কম জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এডিপির বাস্তবায়নও বেশ খারাপ, ৪৯ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় মাত্র ২৫ শতাংশ। এ বছর স্বাস্থ্য, উন্নয়ন, কর্মসংস্থানে বেশি ব্যয় হাওয়ার কথা, উল্টো কমেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশে কর্মসংস্থান কমছে, নতুন দরিদ্র বেড়েছে, মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে, ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগের গতিও মন্থর। নতুন বাজেটে ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির অর্জনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখনো গত বছরের জিডিপি চূড়ান্ত হিসাবই পাওয়া যায়নি। বিদায়ী অর্থবছরের প্রাক্কলনও হয়নি। চলতি বছর তেমন ভালো অবস্থায় না থাকলেও ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ ২৫ শতাংশ এবং ব্যক্তি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশের যে কথা বলা হয়েছে, তা কঠিন হবে।’
দারিদ্র্য বেড়েছে, দ্বিমত সংখ্যায়
করোনায় দারিদ্র্য বেড়েছে- এতে দ্বিমত করছেন না পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বলেন, ‘নতুন দরিদ্রের সংখ্যা বেড়েছে, এটা ঠিক। তবে সংখ্যা নিয়ে একটু দ্বিমত রয়েছে। আমার ধারণা, এটা শিফটিং ফিগার, সংখ্যা বাড়ে-কমে। তবে আমি বিআইডিএস ও বিবিএসকে কাজে লাগাব।’
বাজেটে বিদেশি উৎস নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিদেশের চেয়ে দেশে অর্থায়নের উৎসেই ভরসা করি। এখানে (বিদেশ অর্থ) কিছু কিছু দাঁত (বিষয়) আছে, ব্যাপার আছে, যেগুলো গত কয়েক বছর কাজ করে যেগুলো দেখেছি, যা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়।’
তিনি বলেন, ‘তথ্যদানকারী সংস্থা (বিবিএস) আমার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে পড়ে। আমি চাই তারা নিজেরাই, নিজেদের তথ্যগুলোকে ইনটেলেকচুয়েলি জেনারেট করে। শুধু অর্ডার পেয়ে নয়। কারণ অর্ডারের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকতে পারে। তাদের নিজেদের যেন শক্তি থাকে। যাতে পিওর, কারেক্ট, রিলায়েবল এবং কন্টিনিউয়াসলি ডিফেন্ডেবল তথ্য পেতে পারি। বিবিএসকে শক্তিশালী করা হচ্ছে।’
কর নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সবাই কর কমাতে বলছে। আমরা টাকা স্বল্পতায় আছি। সবই ছেড়ে দিলে খাব কী? ভ্যাটে একটা অফুরন্ত সম্ভাবনা ছিল। তবে আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে খাবার একটা স্কোপ ছিল, কিন্তু আমরা ফেল করেছি। আমরা এটি প্রোপারলি হ্যান্ডেল করতে পারিনি।’
অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশি খরচ প্রসঙ্গে মান্নান বলেন, ‘বছরের শুরুতে কাজ কম হয়। কিন্তু বছরের শেষ দিকে বেশি ব্যয় ও কাজের মান নিয়ে বলেন, এটার সত্যতা আছে। এর মধ্যে দুর্নীতি বসে আছে।’
সংসদের আলোচনা কি ভালো হচ্ছে?
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও সাবের হোসেন চৌধুরীর উদ্দেশে সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, ‘আগের বাজেট বাস্তবায়ন কেমন হয়েছে তা জানা কি সংসদ সদস্যদের উচিত না? কিন্তু সংসদ সদস্যরা সংসদে দাঁড়িয়ে সরকারের প্রশংসায় মেতে ওঠে। এখন সংসদে যে ধরনের আলোচনা হচ্ছে তা কি ভালো হচ্ছে?’
সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাজেটে অর্থমন্ত্রী সবকিছু একটু একটু করতে চেয়েছেন। কিন্তু কোনো প্রায়োরিটি নেই। করোনায় মনোযোগ দরকার ছিল পিছিয়ে পড়া মানুষ ও ব্যবসার ক্ষেত্রে। তবে পিছিয়ে পড়া মানুষের দিকে মনোযোগ নেই। সরকারি ব্যয়ের সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল তাদের জন্য। প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দারিদ্র্য দূর করার সমতা থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাজেট সংস্কারের কথাও কিছুই নেই। ব্যাংকিং খাত ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণের কথাও বলা হয়নি। নতুন দরিদ্রদের জন্যও কিছু নেই।’
সামাজিক সুরক্ষা দিতে হবে
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কঠিন এই পরিস্থিতিতে সবাইকে সামাজিক সুরক্ষা দিতে হবে। ইউনিভার্সেল পেনশন স্কিম করতে হবে। সবার কাজের নিশ্চয়তা দিতে হবে। এ জন্য টাকা লাগবে। তাই সরকারি ব্যয় আরও বাড়াতে হবে। সংস্কারে জায়গায় হাত দিতে হবে।
‘আইএমইডিসহ সরকারি ব্যয় নজরদারি করে এমন সংস্থায় বিনিয়োগ করতে হবে। কারণ, এসব সংস্থায় এক টাকা বিনিয়োগ করলে ১০০ টাকার সুফল দেয়।’
প্রণোদনায় ছোটদের নজর দিন
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, প্রথম প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ বা ঋণ ছোটদের কাছে এখনও পৌঁছেনি। চাকরি হারিয়ে যারা কৃষিতে চলে গেছে, তাদের এবং প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যবসায়ীদরে জন্য এককালীন সহায়তা দিতে হবে।
সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘এখন প্রায় সাত কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু সিপিডি, সানেম বা পিপিআরসিসহ অন্য কোনো জরিপ মানেন না অর্থমন্ত্রী। তাহলে নিজেদের সংস্থা বিবিএস বা বিআইডিএস দিয়ে অতিদ্রুত জরিপ করান।’
এমসিসিআইয়ের সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, ‘বাজেটে যা-ই বরাদ্দ দেয়া হোক না কেন, বাস্তবায়ন সক্ষমতা ও মানসম্মত ব্যয় না হওয়ায় তার বেনিফিট আমরা যথাযথ পাই না। গত এক দেড় বছরে স্বাস্থ্য খাতের দিকে তাকালেই তা চোখে পড়ে।’
বেসিসের সভাপতি আলমাস কবির বলেন, ‘মেট্রোরেল, নিউকিল্লয়ার প্ল্যান্ট বড় বড় প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকার আইটি পণ্য এবং সফটওয়্যারের প্রয়োজন হচ্ছে। কিন্তু স্থনীয় ইন্ডাস্ট্রি এর কিছুই জানে না। এ কাজ ও টাকা যদি বিদেশে চলে যায়, তাহলে তা দেশি আইটিশিল্পের জন্য খারাপ।’
আরও পড়ুন:যদি কোনো ব্যক্তি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা ও তথ্য গোপন করে বিভ্রান্তিকর কাগজপত্র দিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য বা আহত জুলাই যোদ্ধা দাবি ও সুবিধা গ্রহণ করেন তা অপরাধ বলে গণ্য হবে।
নতুন জারি করা অধ্যাদেশে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্যে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড, দুই লাখ টাকা জরিমানা বা আর্থিক সহায়তার দ্বিগুণ অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
'জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫' গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে জারি করেছে সরকার।
এই অধ্যাদেশের দ্বিতীয় অধ্যায়ে অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা, কার্যাবলী, কর্মচারী,ইত্যাদি বিষয় রয়েছে। 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর' প্রতিষ্ঠায় বিস্তারিত এখানে উল্লেখ রয়েছে। চতুর্থ অধ্যায়ে অপরাধ ও বিচার বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। এখানে বলা হয়, কোনও ব্যক্তি ‘শহীদ’ পরিবারের সদস্য বা যেকোনও শ্রেণির আহত না হওয়া সত্ত্বেও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে মিথ্যা, বিকৃত তথ্য প্রদান, তথ্য গোপন ও বিভ্রান্তিকর কাগজ দাখিল করে নিজেকে ‘শহীদ’ পরিবারের সদস্য বা আহত দাবি করে চিকিৎসা, আর্থিক, পুনর্বাসন সুবিধা দাবি অথবা গ্রহণ করেন তাহলে তিনি এই অধ্যাদেশের অধীন অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে।।এতে আরও বলা হয়, কোনও ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত অপরাধ করলে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড এবং অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত সুবিধা বা আর্থিক সহায়তার দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই আইনের অধীন অপরাধ অ-আমলযোগ্য ও জামিনযোগ্য হবে। এই অধ্যাদেশের অধীন সংঘটিত অপরাধের অভিযোগ দায়ের, অনুসন্ধান, তদন্ত, বিচার, আপিল এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮ (অ্যাক্ট নং ভি অব ১৮৯৮) এর বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে।
এছাড়া, অধ্যাদেশে নিহত-আহতদের দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। ‘গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ’ এবং আহত ব্যক্তিদের যথাক্রমে ‘জুলাই শহীদ’ এবং ‘জুলাই যোদ্ধা’র স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে তিনটি শ্রেণি রয়েছে। তা হলো, অতি গুরুতর আহত, গুরুতর আহত ও আহত।
অধ্যাদেশে জুলাই ‘শহীদ’ পরিবার এবং আহতদের কল্যাণে নেয়া সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের আইনি ভিত্তি দেয়া হয়েছে।
জামালপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক করোনা সনাক্ত হয়েছেন। তিনি অর্থ সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে জামালপুর মেডিকেল কলেজে কর্মরত।
বুধবার (১৮ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জামালপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, ডাঃ আবু হাসনাত মোস্তফা জামান গত ১৬ জুন জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে নমুনা পরিক্ষা করান। পরিক্ষায় তার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। এ পর্যন্ত ১২ জনের নমুনা পরিক্ষায় এই প্রথম একজন চিকিৎসকের করোনা সনাক্ত হলো। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে করোনা পরিক্ষার সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। ইতিমধ্যেই ১০ শয্যা বিশিষ্ট করোনা ইউনিট প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিল করা না হলে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সচিবালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। তাছাড়া, অধ্যাদেশটি বাতিল না হওয়ার পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানান তিনি।
বুধবার (১৮ জুন) সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের নিচে মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবনের নিচে আন্দোলনকালে এসব কথা জানান তিনি।
নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আট বিভাগে সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গেছে। আলোচনার নামে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আস্থা ভঙ্গ করেছেন, বিশ্বাস নষ্ট করেছেন। আমরা চাই আমাদের ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হোক। এ ছাড়া যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলা রয়েছেন, তাদের তাড়াতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারি কর্মচারী, আমরা নিয়ম-শৃঙ্খলায় বিশ্বাসী। অধ্যাদেশ বাতিল না হলে রবিবার (২২ জুন) আরও বৃহত্তর আন্দোলন আসবে।’
এর আগে, চাকরি অধ্যাদেশ পুরোপুরি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর।
গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের খসড়া বাতিলের দাবিতে গত ২৪ মে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা।
কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে রাতে এই অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে।
সরকারি কর্মচারীরা অধ্যাদেশটিকে নিবর্তনমূলক ও কালো আইন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এটি বাতিল করার জন্য সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল, কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি ছাড়াও আজ (বুধবার) সমাজকল্যাণ উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
১৮ জুন ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিংস ২০২৫-এর ফলাফলে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) বাংলাদেশের মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করেছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের শীর্ষ ২০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় জায়গা করে নিয়ে একটি গৌরবময় অবস্থান নিশ্চিত করেছে। বিশ্বব্যাপী ২,৩১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ডিআইইউ ১০১ থেকে ২০০-এর মধ্যে অবস্থান করেছে। বাংলাদেশ থেকে তালিকাভুক্ত ১৯টি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ডিআইইউ-ই একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যা এই মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।
টাইমস হায়ার এডুকেশন ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিং মূলত জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-এর ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবদান মূল্যায়ন করে থাকে। ২০২৫ সালের র্যাঙ্কিংয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অনন্য সাফল্য অর্জন করেছে। বিশেষভাবে, বিশ্ববিদ্যালয়টি মানসম্মত শিক্ষা (এসডিজি-৪) এবং লক্ষ্যের জন্য অংশীদারিত্ব (এসডিজি-১৭) এই দুই ক্যাটেগরিতে বিশ্বব্যাপী ১৯তম স্থান অর্জন করেছে। এছাড়া শালীন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (এসডিজি-৮) ক্ষেত্রে ৩৩তম, শূন্য দারিদ্র্য (এসডিজি-১) ক্ষেত্রে ৩৬তম, জিরো হাঙ্গার (এসডিজি-২) ক্ষেত্রে ৫৩তম এবং বৈষম্য হ্রাস (এসডিজি-১০) ক্ষেত্রে ৬০তম স্থান অর্জন করেছে।
এই কৃতিত্ব ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টেকসইতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও বৈশ্বিক প্রভাব সৃষ্টির প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকারের পরিচায়ক। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সাফল্যে তাদের সম্মানিত অনুষদ সদস্য, নিবেদিতপ্রাণ কর্মী, প্রতিভাবান শিক্ষার্থী, গর্বিত প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং মূল্যবান অংশীদারদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন, যারা এই যাত্রার অংশ হয়ে ডিআইইউ-কে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অর্জন বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প, সারাবছর আয়োজিত একাডেমিক ও সামাজিক কার্যক্রম এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রচেষ্টারই স্বীকৃতি। এই সাফল্য একাধারে সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা শিক্ষা ব্যবস্থার এবং তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর জ্ঞানচর্চার ধারাবাহিক উন্নয়নের প্রতিফলন।
কুষ্টিয়া বিজিবির পৃথক যৌথ টাস্কফোর্স এর অভিযানে ২৮৮০ কেজি বেহুন্দী জাল, ৪৭০ কেজি কারেন্ট জাল ও ১৫টি তেলের ড্রাম জব্দ এবং ৮টি নৌকার মালিককে ৩২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাত সাড়ে ১১ টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন কুষ্টিয়া বিজিবি-৪৭ ব্যাটালিয়ন।
বিজিবি জানায়, ১৬ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জেলার দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মানিকের চর এলাকায় একটি যৌথ টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় দৌলতপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, মৎস্য অফিসার, এবং বিজিবির ভারপ্রাপ্ত কোয়ার্টার মাস্টার সহকারী পরিচালক মোঃ জাকিরুল ইসলাম এর নেতৃত্বে বিজিবি ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালিত হয়।
পরিচালিত অভিযানে এ বিপুল পরিমাণ অবৈধ ২৮৮০ কেজি বেহুন্দী জাল, ১৫টি তেলের ড্রাম জব্দ সহ মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ১৯৫০-এর ৪(ক) ধারা লঙ্ঘনের দায়ে ৬টি নৌকার মালিককে ৫ হাজার টাকা করে মোট ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দকৃত জাল ও তেলের ড্রামের আনুমানিক মূল্য ৭২,৭৫,০০০ হাজার টাকা।
জব্দকৃত জাল ও তলের ড্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল হাই সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।
এছাড়াও মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে জেলার মিরপুর উপজেলার গরুর হাট সংলগ্ন এলাকায় আরেকটি যৌথ টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালিত হয়।
এ সময় ৪৭০ কেজি ভারতীয় অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। জব্দকৃত অবৈধ কারেন্ট জাল মিরপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয় এবং একই ধারায় অভিযুক্ত ২জনকে ১ হাজার টাকা করে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দকৃত কারেন্ট জালের আনুমানিক মূল্য ৭,০৫,০০০ টাকা।
বিজিবি আরো জানান, সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, মাদক ও চোরাচালানসহ সকল অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে সর্বদা কঠোর অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড। এই অভিযান মাদক ও চোরাচালানবিরোধী জিরো টলারেন্স নীতির একটি সফল বাস্তবায়ন। ভবিষ্যতেও এই ধরনের অপরাধ দমনে কঠোর এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রাখবে বিজিবি ৪৭ ব্যাটালিয়ন।
কক্সবাজারের আলোচিত সাবেক এমপি জাফর আলম কে আদালতে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখাতে চকরিয়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে তোলা হয়েছে আজ।
জাফর আলম সর্বশেষ কক্সবাজার-১ আসনের এমপি এবং চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন।
বুধবার সকাল ৯টার পর পরই জেলা পুলিশের একটু প্রিজন ভ্যানে করে যৌথ বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় তাকে আদালতে আনা হয়।
তাকে আজ আদালতে তোলার খবরে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট আদালত চত্বর ও আশপাশের অন্তত অর্ধ কিলোমিটার এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে।
আদালত সূত্র জানায়- বিগত ৫ আগষ্ট পরবর্তী চকরিয়া ও পেকুয়া থানায় দায়ের করা একাধিক হত্যাসহ বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় তাকে শ্যােন অ্যারেস্ট দেখানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। সেসব মামলার শুনানি করা হয় আজ। এ সময় আদালতের বিচারক মো. আনোয়ারুল কবির শুনানী শেষে ৭ মামলায় সর্বমোট ১৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তন্মধ্যে পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব মামলায় সর্বোচ্চ চারদিন ও সর্বনিম্ন ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলাগুলোর মধ্যে চকরিয়া থানার ৫টি ও পেকুয়া থানার ২টি মামলা রয়েছে।
আরও জানান- আদালতের শুনানী চলাকালে জাফর আলমের পক্ষে শুনানী করেন অসংখ্য আইনজীবী। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে তথা জাফর আলমের বিপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট মো. মঈন উদ্দিন। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন এপিপি মঈন উদ্দিন-ই।
আদালতের শুনানী শেষে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীরা জাফর আলমের মুক্তির দাবিতে সাড়ে দশটার দিকে একটি ঝটিকা মিছিল বের করেন।
এর আধাঘন্টা পর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা জাফর আলমের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে পাল্টা মিছিল করে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে গিয়ে শেষ করেন।
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫' এর অধীনে 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর' প্রতিষ্ঠিত হবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ মঙ্গলবার দিবাগত রাতে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনসহ গণ-অভ্যুত্থানের মর্ম ও আদর্শকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করা এবং ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে এ অধ্যাদেশ। অধ্যাদেশটি জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে প্রকাশ করা হয়।
এই অধ্যাদেশের দ্বিতীয় অধ্যায়ে অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা ও এর কার্যাবলীসহ নানাবিধ বিষয় অর্ন্তভূক্ত রয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর' প্রতিষ্ঠিত হবে।
অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থাকবে ঢাকায়। সরকার প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অধিদপ্তরের শাখা কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
অধিদপ্তরের কার্যাবলী হচ্ছে- সরকারি গেজেটে প্রকাশিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা ও ডাটাবেজ সংরক্ষণ, প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন এবং হালনাগাদ আকারে সরকারি গেজেটে প্রকাশের জন্য সুপারিশ।
এছাড়া রয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত এককালীন ও মাসিক আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ।
আরো রয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন।
কার্যাবলীতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দেশি-বিদেশী সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয়সাধনের কথা রয়েছে।
অধিদপ্তরের একজন মহাপরিচালক থাকবেন এবং তিনি অধিদপ্তরের প্রধান নির্বাহী হবেন।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, এটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনসহ গণ-অভ্যুত্থানের মর্ম ও আদর্শকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করা এবং ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে।
অধ্যাদেশ আরো বলা হয়েছে, তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের বর্ণবাদী, নিপীড়নমূলক ও বৈষম্যমূলক নীতি এবং বাংলাদেশের জনগণকে নির্বিচারে হত্যার কারণে মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, জনগণের অব্যাহত সংগ্রাম ও ত্যাগ তিতিক্ষা সত্ত্বেও স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরও সুবিচার, মর্যাদাপূর্ণ গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। জানুয়ারি ২০০৯ সাল থেকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দলীয়করণ, দুর্নীতি ও পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ফলে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান অকার্যকর হয়। অন্যায়ভাবে শক্তি প্রয়োগ করে বিরোধীমত দমন, গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যা সংঘটিত হয়। দেশের অর্থ পাচার ও লুটপাট নীতির ফলে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি, নারী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী কাঠামোগত সহিংসতার শিকার হয়। জনগণের বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার হরণ করে জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার সৃষ্ট প্রেক্ষাপট জনগণকে শঙ্কিত করে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, জুলাই ২০২৪ এ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে দল-মত-ধর্ম-বর্ণ-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আপামর জনতার দীর্ঘ পনেরো বৎসরের ফ্যাসিবাদ ও বিচারহীনতার ফলে পুঞ্জীভূত ক্ষোভে এক গণআন্দোলন হতে ক্রমান্বয়ে গণঅভ্যুত্থানে রূপ লাভ করে ৫ আগস্ট, ২০২৪ এ ফ্যাসিবাদী শাসককে জনগণের কাছে পরাজিত হয়ে দেশ ছেড়ে পলায়নে বাধ্য করে। এ গণঅভ্যুত্থানে ব্যাপক সংখ্যক নারী ও পুরুষ অংশগ্রহণ করেছেন এবং দেশব্যাপী সহস্রাধিক নিরস্ত্র দেশপ্রেমিক ছাত্রজনতা শহীদ হয়েছেন।
এছাড়া অসংখ্য মানুষ আহত, কেউ কেউ গুরুতর আহত হয়েছেন। অধিকাংশই আঘাত ও নৃশংসতার বিভীষিকায় পর্যুদস্ত এবং তাদের এই আত্মত্যাগকে যথার্থ সম্মান প্রদর্শন অপরিহার্য।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, জুলাই আন্দোলনে ত্যাগের দৃষ্টান্ত জাতির গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও রাষ্ট্র পুনর্গঠনের একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসাবে সমুন্নত রাখা কর্তব্য।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের যথোপযুক্ত স্বীকৃতি, সম্মান, কল্যাণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়। এই অধ্যাদেশ 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫' নামে অভিহিত হবে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও গেজেটে বলা হয়েছে।
মন্তব্য