২০১০ সালের মহাধসের পর সাড়ে ১০ বছরে সর্বোচ্চ লেনদেনে পরপর দুই দিনে রেকর্ড হলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে।
২০১০ সালে মহাধসের আগে ৫ জানুয়ারি লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।
এর সাড়ে ১০ বছর পর গত রোববার লেনদেন হয় ২ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা।
বুধবার ইতিহাসের সর্বোচ্চ সেই লেনদেন ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা তৈরি হলেও শেষ ঘণ্টায় গতি কিছুটা কমে হয় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। যা সর্বকালের সর্বোচ্চ লেনদেনের চেয়ে মাত্র ১০ কোটি টাকা কম।
এদিন দাম বেড়েছে ২০৮টি কোম্পানির, কমেছে ১২৪টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ৩৭টির। বেশির ভাগ শেয়ারের দাম বৃদ্ধির দিন সূচকও বেড়েছে ৩১ পয়েন্ট, যদিও দিনের শুরুতে এর চেয়ে বেশি বৃদ্ধির ইঙ্গিত ছিল।
সকালে লেনদেনের শুরুতেই উত্থান ঘটা পুঁজিবাজারে একপর্যায়ে সূচক ৭৩ পয়েন্ট বেড়েছিল। তবে শেষ দেড় ঘণ্টায় ৩১ পয়েন্ট ও শেষ আধা ঘণ্টায় ১৮ পয়েন্ট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত সূচক দাঁড়ায় ৬০৫৫ পয়েন্টে।
২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির পর সূচকের এটি সর্বোচ্চ অবস্থান। সেদিন সূচক ছিল ৬ হাজার ৫০ পয়েন্ট।
গত রোববারের মতোই লেনদেন সাড়ে ১০ বছরের মধ্যে নতুন উচ্চতায় পৌঁছার দিন পুঁজিবাজারে উচ্ছ্বাস আর হতাশার মিশ্র অনুভূতি দেখা গেছে।
টানা দ্বিতীয় সপ্তাহের মতো ব্যাংক খাত দর হারাচ্ছে। দুই সপ্তাহে দুই দিন ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েও পরের দিন আবার দর হারিয়েছে বাজার।
রোববার সূচক পড়ে যাওয়ায় দেখা দেয় উৎকণ্ঠা। কারণ, বাজার সংশোধনের দিন বিক্রয় চাপ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নেতিবাচকতার ইঙ্গিত বলে ধারণা করা হয়।
পরের দুই দিনে বাজারে বড় ধরনের পতন হয়। সেই সঙ্গে কমে আসে লেনদেন। তবে সূচক পড়ার দিন লেনদেন কমা আবার ইতিবাচকতার ইঙ্গিত বহন করে বাজারে। এটা বোঝা যায় যে, শেয়ারধারীরা এই দামে শেয়ার বিক্রি করতে রাজি না।
সোমবার ১৫ পয়েন্ট আর পরদিন সূচক পড়ে ৬২ পয়েন্ট। তবে লেনদেন থাকে ২ হাজার কোটি টাকার ওপরেই।
তবে তৃতীয় দিন মঙ্গলবারে এসে ঘুড়ে দাঁড়ায় পুঁজিবাজার। সেদিন উত্থান ঘটে ৪৭ পয়েন্ট। আর লেনদেন আরও কিছুটা কমে। তবে সেদিনও তা থাকে ২ হাজার কোটির ঘরে।
বুধবার সকাল থেকেই লেনদেনে রেকর্ডের ইঙ্গিত ছিল। প্রথম এক ঘণ্টা ১০ মিনিটেই লেনদেন ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। পরের সোয়া এক ঘণ্টায় লেনদেনের গতি কিছুটা কমলেও ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় চার ঘণ্টাতেই। শেষ বেলাতে টান টান উত্তেজনাতেও একটুর জন্য রেকর্ডের আগেই থেমে যায় পুঁজিবাজার।
শুরু থেকেই বাজারে ছিল ঊর্ধ্বগতি। ব্যাংক, বিমা, বস্ত্র, প্রকৌশল, খাদ্যসহ প্রধান খাতগুলোর শেয়ার মূল্য বাড়তে থাকে। তবে শেষ আধা ঘণ্টায় আবার এসব শেয়ারের কিছুটা দরপতন ঘটে। বিশেষ করে ব্যাংকের শেয়ার আবার দর হারানোর পরিপ্রেক্ষিতে সূচকের উত্থান অনেকটাই কমে যায়।
ব্যাংকের দর পতনের দিন অবশ্য শেয়ারের দাম বেড়েছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতে। এই খাতেরও একটি কোম্পানি দর বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে।
বিমা খাতে দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা। কিছু কোম্পানির শেয়ার মূল্য বেশ ভালো পরিমাণে বাড়লেও কিছু কোম্পানির আবার দর পতন হয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।
তবে গত টানা দুই সপ্তাহের মতো লেনদেনের রাজা থাকে এই খাতই।
এদিন বাজারে ব্যাপকভাবে দর বেড়েছে বস্ত্র খাতের। এই খাতের পাঁচটি কোম্পানির দাম বেড়েছে এক দিনে যত বাড়া সম্ভব ততই।
দীর্ঘদিন ধরে ঘুমিয়ে থাকা প্রকৌশল খাতও অনেকটাই জেগে উঠেছে। এই খাতেরও দুটি কোম্পানির দর বেড়েছে এক দিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততটাই। আরও দুটি কোম্পানি দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাছি লেনদেন হয়।
উত্থান হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে। খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ওষুধ ও রসায়ন খাতও আড়মোড়া ভাঙার ইঙ্গিত দিয়েছে।
ব্যাংক খাত পতনেই
এই খাতে লেনদেন হয়েছে ২০২ কোটি টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে নয়টির। দর কমেছে ১৭টির। পাল্টায়নি পাঁচটির।
সবচেয়ে বেশি দর কমছে লভ্যাংশ ঘোষণা করা ইউসিবিএলের দর। ব্যাংকটি ২০২০ সালের জন্য শেয়ারধারীদের ৫০ পয়সা নগদ ও প্রতি ২০টি শেয়ারে একটি বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার পর শেয়ারের দাম কমেছে ৭০ পয়সা বা ৪.০৫ শতাংশ।
শেয়ার দর ১৭ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৬ টাকা ৬০ পয়সা।
এবি ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। শেয়ার দর ১৪ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৪ টাকা ১০ পয়সা।
প্রাইম ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ৩ দশমিক ০৭ শতাংশ। শেয়ার দর ২২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২২ টাকা ১০ পয়সা।
ওয়ান ব্যাংকের দর ১৩ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে হয়েছে ১৩ টাকা।
ঢাকা ব্যাংকের দর কমেছে ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়ার কমেছে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
যমুনা ব্যাংকের দর কমেছে ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত ৩০ মে ব্যাংকটির শেয়ারের এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ দর ওঠে ২৩ টাকা ৪০ পয়সা। এরপর পাঁচ কার্যদিবস টানা পতনে নেমে আসে ২০ টাকা ৮০ পয়সায়।
বস্ত্র খাতে আগ্রহ
বুধবার বস্ত্র খাতের বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। এর আগে ঈদের ছুটির আগের দুদিন ও ঈদের ছুটির পর প্রথম এক দিন লেনদেনে বস্ত্র খাতের ঢালাও উত্থান দেখছিল পুঁজিবাজার। তারপরও অনেকটাই নেতিয়ে ছিল এ খাত।
বুধবার সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আবারও জানান দিল বস্ত্র খাত। এদিন বস্ত্র খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ৩২৩ কোটি টাকা।
বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর অর্থবছর শেষ হচ্ছে জুনে। ফলে আগামী দুই থেকে তিন মাস পর কোম্পানিগুলো তাদের ২০২১ সালের জন্য শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ ঘোষণা করবে।
এই খাতের ভিএফএস থ্রেড ডাইংয়ের শেয়ার দর বেড়েছে ১০ শতাংশ। লেনদেনে ২৬ টাকা শেয়ার দিন শেষে হয়েছে ২৮ টাকা ৬০ পয়সা।
এসকোয়ার টিট কোম্পানির দর ৯.৮২ শতাংশ বেড়ে ২৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে হয়েছে ৩১ টাকা ৩০ পয়সা।
রিং শাইনের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ; ৯ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০ টাকা ১০ পয়সা।
আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের দরও বেড়েছে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ২৫ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৮ টাকা ৩০ পয়সা।
নুরানী ডায়িংয়ের দরও ৭ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮ টাকা ১০ পয়সা। এর চেয়ে বেশি এক দিনে বাড়া সম্ভব ছিল না। শতকরা হিসেবে দর বেড়েছে ৯.৪৫ শতাংশ।
বিমা খাতে দুই চিত্রই আছে
বুধবার একক খাত হিসেবে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে এই খাতেই। হাতবদল হয়েছে ৬৩৬ কোটি টাকার শেয়ার।
এই খাতের মোট ৫০টি কোম্পানির মধ্যে ২১টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। একটির দর পাল্টায়নি। বাকি ২৮টির দর কমেছে।
তবে দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া কয়েকটি কোম্পানি ছিল বিমা খাতের। তবে বেশির ভাগ কোম্পানি ছিল দর পতনের তালিকায়।
বুধবার এ খাতের সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানি ছিল পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৯.৯৭ শতাংশ। তারপরেই ছিল রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ারের দরও বেড়েছে একই হারে। পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৫৯ শতাংশ।
সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৮.৭৫ শতাংশ। লেনদেনে ১১২ টাকার শেয়ার বেড়ে হয়েছে ১২১ টাকা ৮০ পয়সা। মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৮.৪৩ শতাংশ।
দিনের সর্বোচ্চ দরপতন হওয়া কোম্পানি তালিকায়ও ছিল বিমা।
ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দর কমেছে ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। লেনদেনে ৪৮ টাকা ৭০ পয়সার শেয়ার কমে হয়েছে ৪৫ টাকা ১০ পয়সা।
ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে ৪.৯৪ শতাংশ, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের ৪.৭০ শতাংশ, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, জনতা ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে ৪ শতাংশ পর্যন্ত।
সবচেয়ে বেড়েছে তথ্যপ্রযুক্তি
এই খাতে ১১টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১০টির। গত কয়েক মাসে এমন চিত্র দেখা যায়নি। সবচেয়ে বেশি দর বাড়া ১০টি কোম্পানির দুটি এই খাতের।
এর মধ্যে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার পর পতনমুখী ডেফোডিলস কম্পিউটারের দাম ৯.৯৪৫ শতাংশ আর জেনেক্সিলের দাম বেড়েছে ৯.৯৪১ শতাংশ।
এই খাতে লেনদেন হয়েছে মোট ৬৩ কোটি ২০ লাখ টাকা।
প্রকৌশল খাতে আগ্রহ বৃদ্ধি
বাজেটে করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করার পর থেকে এই খাতের শেয়ারেও বেড়েছে আগ্রহ।
তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩১১ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে এই খাতে।
সবচেয়ে বেশি দাম বাড়া ২০টি কোম্পানির মধ্যে এই খাতের আছে দুটি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার পর পতনমুখী ন্যাশনাল পলিমার। ৯.৯২ শতাংশ বেড়ে ৫৮ টাকা ৭০ পয়সা দাঁড়িয়েছে দাম।
গোল্ডেনসনের দাম ৯.২৫ শতাংশ বেড়ে ১৭ টাকা ৭০ পয়সা দাঁড়িয়েছে। আগের দিন জেড ক্যাটাগরির শেয়ারটির দাম ছিল ১৬ টাকা ২০ পয়সা।
এর বাইরে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ২০টি কোম্পানির মধ্যে ১৩টি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২২টি কোম্পানির মধ্যে ১৪টি, আর্থিক খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে ১৫টির, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩১টির মধ্যে ১৬টির দাম বেড়েছে।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩১ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৫ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৫ দশমিক ৭০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৯৬ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০২ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে বুধবার দর বেড়েছে ২০৮টির, কমেছে ১২৪টির। দর পাল্টায়নি ৩৭টির।
লেনদনে হয়েছে মোট ২ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। এক দিনের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৬৪০ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের চেয়ে ৮৪ দশমিক ৩৬ পয়ন্টে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৫১৫ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ৭৬ কোটি টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৮২ টির, কমেছে ৯৬টির। দর পাল্টায়নি ৩১টির।
আরও পড়ুন:গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় মায়ের সাথে অভিমান করে গলায় ফাঁস দিয়ে জোনায়েদ শেখ নামের ১৪ বছর বয়সী মাদ্রাসাপড়ুয় এক শিশু আত্মহত্যা করেছে।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার তারাশী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত জোনায়েদ তারাশী গ্রামের মৃদুল শেখের ছেলে ও পিনজুরী কওমী মাদ্রাসার তৃতীয় জামাতের ছাত্র।
শুক্রবার বিকেল ফাঁকা ঘরে দরজা বন্ধ করে ঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস দেয় জোনায়েদ। বিকেল ৫ টার দিকে জোনায়েদের মা আছিয়া বেগম ঘরের বন্ধ দেখে ও কারো সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীদের নিয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে গিয়ে আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় জোনায়েদ কে দেখতে পান। দ্রুত তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করেন।
নিহত জোনায়েদের চাচা রাসেল শেখ বলেন, কয়েকদিন আগে জোনায়েদ মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে আসে। এরপর আর মাদ্রাসায় যেতে চাচ্ছিল না। এ নিয়ে মায়ের সাথে তার মনোমালিন্য ছিল। ধারণা করা হচ্ছে মায়ের উপর অভিমান করে হয়তো এই ঘটনা ঘটেছে।
কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ খন্দকার হাফিজুর রহমান জানান, পরিবার ও এলাকাবাসীর কোন অভিযোগ না থাকায় উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
শনিবার সকালে তারাশী কবরস্থানে শিশু জোনায়েদের দাফন সম্পন্ন হয়।
গাজাগামী ত্রাণবহর ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়ায় বাংলাদেশের খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলমের সাহসী পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘গাজাগামী ফ্লোটিলায় শহিদুল আলমের পদক্ষেপ কেবল সংহতি প্রকাশ নয়, এটি বিবেকের গর্জন। বাংলাদেশের পতাকা বহন করে তিনি বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে এদেশের মানুষ কখনও নিপীড়ন ও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না।’
তিনি আরও লিখেছেন, বিএনপি সবসময় শহিদুল আলম ও ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
দেশের প্রবীণ এই আলোকচিত্রীকে বহনকারী জাহাজটি ইসরাইলি বাহিনী আটকে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ফেসবুকে এই পোস্ট দেন তারেক রহমান। সেখানে তিনি শহিদুল আলমের প্রতি বিএনপির সমর্থন জানান।
গাজায় তথ্য ও সংবাদ অবরোধ ভাঙার উদ্যোগে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে শহিদুল আলম ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি)’র মিডিয়া ফ্লোটিলায় যোগ দিয়েছেন।
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে সাগর নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর সোর্স পরিচয়ে বেপরোয়া চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাগর রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে ও রামগতি বাজারের ইলেকট্রনিক ব্যাবসায়ী।
ভুক্তভোগী বড়খেরী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি মোঃ মেহেরাজ অভিযোগ করে বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে সাগর নিজেকে কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কখনো সেনাবাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে এলাকাতে বিভিন্নভাবে চাঁদা দাবি করে যাচ্ছে। তিনি নিজেই একজন ভুক্তভোগী। সাধারণ মানুষকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। তার ভয়ে রামগতি মাছঘাটের সাধারণ মাছ ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সবসময় আতঙ্ক থাকেন।
আরেক ভুক্তভোগী আব্দুর রহিম মাছ ব্যাপারী বলেন, সাগরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মানুষ। সাগর কিছুদিন আগে তার কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন। তার চাহিদা মাফিক চাঁদা না দেওয়ায় তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে হেনস্তা করেন। বিশেষ করে মাছঘাটের ব্যবসায়ীরা তার যন্ত্রণায় তটস্থ। সে নিজেকে সেনাবাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে বেড়ায়। মুলত ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করাই সাগরের মুল উদ্দেশ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে জানান, ৫ আগস্টের পর বড়খেরী ও চরগাজী ইউনিয়নের রামগতি বাজার, রামগতি মাছঘাট এলাকার সাধারণ জেলে ও মাছ ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত সাগর। সাগরের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অনেকটা অসহায় তারা। এমন অবস্থায় সাগরের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন সাধারণ মানুষ।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সাগর বলেন, অভিযোগকারী কাউকে আমি চিনিনা। তারা কেন এসব মিথ্যা অভিযোগ করলো? তাছাড়া আমি তো এলাকায় থাকিনা। এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করতে এ প্রতিবেদককে বিশেষ অনুরোধ জানান তিনি।
রামগতি সেনাক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, সেনাবাহিনীর কোন সোর্স নেই। এগুলো এক প্রকার প্রতারণা। ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ কবির হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে এই ধরনের অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সীমান্তবর্তী তেঁতুলিয়া প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ঘেরা এ উপজেলা এখন দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। আকাশ পরিষ্কার থাকলেই এখান থেকেই দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার অপূর্ব সৌন্দর্য। সমতলের চা বাগান, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, মহানন্দা নদীর তীর, জেলা পরিষদ ডাক বাংলো ও তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নারসহ নানা দর্শনীয় স্থান দেখতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে।
কিন্তু এসবের বাইরে সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে একটি গাছ। তেঁতুলিয়ার প্রাণকেন্দ্র চৌরাস্তা বাজারে দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষী ঐতিহাসিক তেঁতুল গাছ এখন সেজেছে একেবারে নতুন সাজে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে।
স্থানীয়রা বলছেন,বহু বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এই তেঁতুল গাছ স্থানীয়দের কাছে যেমন ঐতিহ্য, ছায়া ও বিশ্রামের প্রতীক ছিল, পর্যটকদের কাছেও এটি এক ধরনের ঐতিহাসিক কৌতূহল। কিন্তু দীর্ঘদিন তেমন গাছটি অবহেলিত থাকায় গাছটির প্রতি তেমন কোনো নজর দেয়া হয়নি।
সম্প্রতি তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গাছটির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। পাশাপাশি নেওয়া হয় ব্যতিক্রমী আলোকসজ্জার উদ্যোগ। এখন প্রতিদিন সন্ধ্যা নামতেই গাছটি ভরে ওঠে নানা রঙের ঝলমলে আলোয়। দূর থেকে মনে হয়, যেন কোনো শিল্পকর্ম সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
এই দৃশ্য পর্যটকদের নজর কেড়েছে দারুণভাবে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে আলোকিত তেঁতুল গাছের ছবি।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা আব্দুর রহমান নামে এক পর্যটক বলেন,আগেও তেঁতুলিয়ায় এসেছিলাম, তখন এই তেঁতুল গাছ অবহেলিত অবস্থায় ছিল,তেমন কোন উদ্যােগ চোখে পড়েনি। এবার এসে দেখি একেবারে অন্যরকম রূপ। রাতে আলো জ্বললে মনে হয় না এটি সেই পুরোনো গাছ। বরং যেন নতুন এক সৃষ্টি। খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।
রংপুর থেকে আসা পর্যটক মালিয়া খানম জানান,তেঁতুলিয়ায় এসে প্রথমেই চোখে পড়েছে ঐতিহাসিক তেঁতুল গাছটি। দিনের বেলায় সাধারণ মনে হলেও রাতে আলোকসজ্জার কারণে একেবারে অন্যরকম লাগে। অনেক ছবি তুলেছি।
স্থানীয়রা মনে করেন, এই উদ্যোগ শুধু একটি গাছকে আলোকিত করেনি, বরং তেঁতুলিয়ার পর্যটন খাতেও এনেছে নতুন মাত্রা।
পর্যটন নিয়ে কাজ করা তেঁতুলিয়ার নর্থবাংলা ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজমের পরিচালক আহসান হাবিব বলেন,এই ঐতিহাসিক গাছটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিল। উপজেলা প্রশাসন সেটিকে নতুন সাজে সাজিয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। আমরা চাই, এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে তেঁতুলিয়ার পর্যটন শিল্প আরও সমৃদ্ধ হোক।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু বলেন,ঐতিহাসিক তেঁতুল গাছটি এই অঞ্চলের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও স্মৃতি বহন করে। দিনে মানুষ গাছের ছায়ায় বসে, আর রাতে আলোকসজ্জার কারণে উপভোগ করে ভিন্ন এক সৌন্দর্য। আমরা গাছটির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছি এবং আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করেছি। পর্যটকরা এতে দারুণ আনন্দ পাচ্ছেন।”
তিনি আরও জানান, তেঁতুলিয়ার পর্যটনকে নতুন রূপ দিতে শুধু তেঁতুল গাছ নয়, পাশাপাশি আরও নানা প্রকল্প নেয়া হয়েছে।আমরা ইতোমধ্যে তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার ও মহানন্দা পার্ক ঢেলে সাজাচ্ছি। মহানন্দা নদীর ধারে নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াকওয়ে। শিশুদের জন্য নির্মিত হচ্ছে আলাদা পার্ক। আমরা চাই, তেঁতুলিয়া পর্যটকদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ গন্তব্য হয়ে উঠুক।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শেষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুক্রবার (৩ অক্টোবর) দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, সেভাবেই আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। গণতন্ত্র উত্তরণের এই প্রক্রিয়ায় গোটা পৃথিবীর সমর্থন রয়েছে, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক বিশ্বের পূর্ণ সমর্থন আমাদের সঙ্গে আছে।’
যুক্তরাষ্ট্র সফর সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে এটি বিরল ঘটনা যে, সরকার প্রধান রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। জাতীয় ঐক্য প্রদর্শনের জন্যই সবাইকে নিয়ে এ সফর। জাতিসংঘের অধিবেশনের বাইরেও বিভিন্ন সভা হয়েছে, বিশেষ করে প্রবাসীদের উপস্থিতিতে, যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।
তিনি বলেন, বিদেশ সফরে গিয়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। যারা গিয়েছিলেন তাদের সঙ্গেই আলাপ হয়েছে, এটা তো স্বাভাবিক। আমাদের প্রত্যাশা অনেকটাই পূরণ হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিবের ভাষায়, প্রধান উপদেষ্টা কয়েকটি দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এতে জাতীয় ঐক্যের একটি দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘের অধিবেশনের বাইরেও বিভিন্ন সভা হয়েছে, বিশেষ করে প্রবাসীদের উপস্থিতিতে, যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।’
তিনি উল্লেখ করেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে এসব আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সফর চলাকালে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও তা বড় করে দেখার কিছু নেই।
এর আগে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। এ সময় তার সফরসঙ্গী হিসেবে সেখানে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও এনসিপির সদস্য সচিবসহ ৩টি রাজনৈতিক দলের ৬ নেতা।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টায় তারা দেশে ফেরেন।
দেশের ৮ অঞ্চলের ওপর দিয়ে দুপুরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬০ কিমি বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শনিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিমি বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুরের অধিকাংশ এলাকায় এবং রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণের শঙ্কা রয়েছে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামে রোগাক্রান্ত গরু জবাই করার পর একই গ্রামের অন্তত ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তাদের মধ্যে সাত জন গাইবান্ধা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আক্রান্তরা গাইবান্ধা রাবেয়া ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোম ও রাবেয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা নেন। গুরুতর আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন- মোজা মিয়া, মোজাফফর মিয়া, শফিকুল ইসলাম ও মাহবুর রহমান।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. মঞ্জুরুল করিম প্রিন্স আক্রান্তদের চিকিৎসা দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অধ্যাপক ডা. মো. মঞ্জুরুল করিম প্রিন্স জানান, সাত জন রোগীর শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ পাওয়া গেছে। তাদের হাতে, মুখে, চোখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোসকা ও পচন ধরেছে। জ্বর, ব্যথা, ঘা ও চুলকানিতে ভুগছেন তারা। প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে আক্রান্তদের বাড়ি পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত বা রোগাক্রান্ত পশু থেকেই এ রোগ ছড়ায়। আক্রান্তরা একটি অসুস্থ গরু জবাই ও মাংস কাটার কাজে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। ওই সময় তাদের শরীরে রোগ ছড়িয়ে পড়ে। তবে এটি কোনও ছোঁয়াচে রোগ নয়। আক্রান্তরা এর আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জনকেও জানানো হয়েছে। নিয়মিত চিকিৎসা নিলে রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠবেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
কিশামত সদর গ্রামে বাসিন্দা বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) মো. হাফিজার রহমান জানান, গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) গ্রামের মাহবুর রহমানের একটি অসুস্থ গরু জবাই করে গ্রামের অন্তত ১২০ জনের মধ্যে ভাগ করা হয়। জবাই ও মাংস কাটাকাটির কাজে ১০–১৫ জন সরাসরি যুক্ত ছিলেন। চার দিন পর থেকেই তাদের শরীরে ফোসকা ও ঘা দেখা দেয়। এর মধ্যে আক্রান্ত কয়েকজন স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও শহরের ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দিবাকর বসাক জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে ৪-৫ জন অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গাইবান্ধা ও রংপুর মেডিক্যালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। হাত, পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে তাদের উপসর্গ দেখা গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি অ্যানথ্রাক্স।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. মোজাম্মেল হক জানান, পাশের পীরগাছা উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সের প্রকোপ ছিল, এখন সুন্দরগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ঘাঘট ও তিস্তা নদীবেষ্টিত বামনডাঙ্গা, সর্বানন্দ, তারাপুর, বেলকা ও পৌরসভা এলাকায় এ রোগ শনাক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব এলাকায় টিকা প্রদান চলছে।
তার ভাষায়, ‘আক্রান্ত পশু পরিচর্যা বা জবাই করলে মানুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্স ছড়াতে পারে। তবে মাংস খেলে এ রোগ ছড়ায় না। তাই কোনও অবস্থাতেই রোগাক্রান্ত পশু জবাই করা যাবে না।’
এদিকে, অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানোর কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজ কুমার বিশ্বাস। তিনি জানান, প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করে এলাকায় লিফলেট বিতরণ, মাইকিংসহ সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি আক্রান্ত পশু জবাই না করার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য