প্রথম দিন ঢালাও পতন, তবে তৃতীয় দিনেই পাল্টে গেল চিত্র।
নতুন করে যে ৩০ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বা শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য প্রত্যাহার করা হয়েছে, তার মধ্যে পাঁচটির উঠে এল সেই ফ্লোরের ওপরে।
আগের ৬৬টির মতো এই শেয়ারগুলোও দিনে কমতে পারবে সর্বোচ্চ দুই শতাংশ, তবে বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাকি সব শেয়ারের মতোই সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের সীমা থাকবে।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের বঙ্গজের দাম এখন বাতিল করা ফ্লোর প্রাইস ১১৬ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেশি।
যদিও রোববার প্রথম দিন প্রায় ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ কমে হয়েছিল ১১৪ টাকা ৬০ পয়সা। পরের দিন আরও প্রায় দুই শতাংশ কমে হয় ১১২ টাকা ৪০ পয়সা।
মঙ্গলবার এই অবস্থান থেকে দাম আরও দুই শতাংশের মতো কমে হয় ১১০ টাকা ৪০ পয়সা। কিন্তু এর পরেই আবার ক্রয় চাপে সেটি ঘুরে দাঁড়ায়। পরে আগের দিনের তুলনায় দাম ৫ টাকা ২০ পয়সা বেড়ে হয় ১১৭ টাকা ৬০ পয়সা।
লেনদেনও বেড়েছে। গত এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ শেয়ার বিক্রি হয়েছে কোম্পানিটির। হাতবদল হয়ে মোট ১ লাখ ৭০ হাজার ৯৭টি শেয়ার।
ফ্লোর প্রাইস তোলার আদেশ আসার দিন এর লেনদেন ছিল ১ হাজার ৭২৬টি।
গত বছরের ২২ অক্টোবর থেকে এক দিনেই ফ্লোর প্রাইস ১০৬ টাকা ৯০ পয়সার বেশিতে হাতবদল হয়েছিল অ্যাপেক্স ট্যানারির দর। ফ্লোর প্রত্যাহারের পর রোববার প্রথম কার্যদিবসেই সেখান থেকে দাম কমে যায় প্রায় দুই শতাংশ। অথচ দ্বিতীয় দিনই সেখান থেকে দাম বেড়ে বাতিল হওয়া ফ্লোর প্রাইস ছাড়িয়ে যায়। তৃতীয় দিন দাম আরও খানিকটা বেড়ে হয়েছে ১০৯ টাকা।
এই দাম ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ।
ফ্লোর প্রাইসের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ১০০টি শেয়ার হাতবদল হলেও মুক্ত হওয়ার পর রোববার হাতবদল হয় দুই হাজার ২২৯টি। মঙ্গলবার তারও ১০ গুণের বেশি হাতবদল হয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২৪ হাজার ৮৮৯টি।
এটলাসের ফ্লোর প্রাইস ছিল ১০৯ টাকা ৪০ পয়সা। রোববার দাম কমে হয় ১০৮ টাকা ৯০ পয়সা। সোমবার আরও এক দফা কমে গিয়ে দাম দাঁড়ায় ১০৭ টাকা ১০ পয়সা। মঙ্গলবার দিনের শুরুতে দাম আরও কমে দাঁড়ায় ১০৫ টাকা। কিন্তু সেখান থেকে পরে ঘুরে দাম এক পর্যায়ে হয় ১১৩ টাকা ৯০ পয়সা। শেষ পর্যন্ত দাম দাঁড়ায় ১১০ টাকা ২০ পয়সা।
ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের আগে শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার দিন দুটি কোম্পানির শেয়ার হাতবদল হয়েছিল। রোববার লেনদেন হয় তিনটি কোম্পানির শেয়ার। আর ফ্লোরের চেয়ে বেশি দামে মঙ্গলবার হাতবদল হয় ১৯ হাজার ৭১৫টি।
তবে চমক ছিল জেমিনি সি ফুডসের।
গত ১০ জানুয়ারি থেকে ফ্লোর প্রাইস ১৪৪ টাকা ৩০ পয়সার ওপরে উঠতে না পারা শেয়ারটি মুক্ত হওয়ার পর দুই কার্যদিবস আরও কমে দাম দাঁড়ায় ১৩৯ টাকা ১০ পয়সা। অথচ তৃতীয় কার্যদিবসেই অবিশ্বাস্যভাবে শতকরা প্রায় ১০ শতাংশ দাম বেড়ে হয়ে যায় ১৫৩ টাকা। এক দিনে এর চেয়ে বেশি দাম বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব ছিল না।
এই শেয়ারটিও দিনের শুরুতে ১৩৬ টাকা ৬০ পয়সায় নেমে এসেছিল। সেখান থেকেই হয় উত্থান।
কোনো এক দিনে গত এক বছরের মধ্যে শেয়ারটির হাতবদলও হয়েছে সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ দামে শেয়ারটি হাতবদল হয়েছে মোট এক লাখ ৩২ হাজার ৯০৫টি। অথচ ফ্লোর প্রাইসের শেষ দিনে হাতবদল হয়েছিল কেবল ৭১৪টি।
ডেফোডিল কম্পিউটারের দর ফ্লোর প্রাইস ৫৩ টাকা ৪০ পয়সা থেকে রোববার ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ কমে হয় ৫২ টাকা ৪০ পয়সা। মঙ্গলবার ঘুরে দাঁড়িয়ে দর দাঁড়ায় ৫৪ টাকা ৬০ পয়সা।
ফ্লোরে থাকার শেষ দিন বৃহস্পতিবার ২৯ হাজার ৯০টি শেয়ার হাতবদল হলেও রোববার লেনদেন হয় ১৭ হাজার ২১টি। মঙ্গলবার হয়েছে ২২ হাজার ৪৬১টি।
গত বছর করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর প্রতিটি শেয়ারেরই ফ্লোর প্রাইস ঠিক করে দেয়া হয়। সে সময় বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম বেশি থাকায় ফ্লোর প্রাইসও বেশি ছিল। তবে পরে সেই দাম আর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যৌক্তিক মনে হয়নি। এ কারণে শেয়ারগুলো বিক্রি হচ্ছিল না বললেই চলে।
এই পরিস্থিতিতে গত ৭ এপ্রিল প্রথমে ৬৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রত্যাহার করা হয়। শুরুতে আতঙ্কে দাম কমলেও পরে দেখা যায় এর প্রভাব ইতিবাচক।
এই ৬৬ কোম্পানির প্রায় অর্ধেকের দাম এখন প্রত্যাহার করা ফ্লোর প্রাইসের চেয়ে বেশি। একটি বড় অংশের দাম সেই ফ্লোরের আশেপাশে। তবে কিছু কোম্পানির বড় পতন হয়েছে।
কিন্তু যে লাভ হয়েছে, সেটি হলো বিনিয়োগকারীদের আটকে যাওয়া টাকা মুক্ত হয়েছে। প্রতিদিনই এখন বিপুল পরিমাণ শেয়ার লেনদেন হচ্ছে।
সেই ৬৬ কোম্পানির অভিজ্ঞতা থেকেই এবার ৩০টির ফ্লোর প্রত্যাহার করা হয়। এগুলোও ফ্লোরের দামে হাতবদল হচ্ছিল না বললেই চলে। তবে সর্বনিম্ন দাম তুলে দেয়ার পর হাতে গোনা দুই একটি ছাড়া বেশিরভাগের লেনদেনেই বেড়েছে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ
কী বলছেন বিশ্লেষক
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইসের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে সিংহভাগ কোম্পানির লেনদেনে একটা বাধা ছিল, সেটি এখন কাটতে শুরু করেছে। শেয়ার হাতবদল বাড়লে তা ইতিবাচক। আগে যে ৬৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বাতিল করা হয়েছিল সেগুলোর শেয়ার দরও এখন ঊর্ধ্বমুখী। বিনিয়োগকারীরা সেগুলোর শেয়ার লেনদেন করে শেয়ার সমন্বয়সহ ক্রয় বিক্রয় করতে পারছে।’
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে যেভাবে উত্থান হচ্ছে, লেনদেন বাড়ছে তাতে ফ্লোর প্রাইসের প্রয়োজনীয়তা কতদিন থাকবে সেটি বিবেচনা করা উচিত।’
বাকি ২৫ কোম্পানির কী অবস্থা
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের দর ফ্লোর প্রাইস ২১৯ টাকা ৩০ পয়সা থেকে রোববার ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ কমে হয় ২১৫ টাকা। সেখান থেকে কিছুটা ঘুরে মঙ্গলবার দর দাঁড়িয়েছেল ২১৭ টাকা ৮০ পয়সা। বৃহস্পতিবার তিন হাজার ৩৫১টি শেয়ার হাতবদল হলেও রোববার হয়েছিল দুই হাজার ৪৬৭টি। মঙ্গলবার হাতবদল হয়েছে ৭ হাজার ১১৭টি।
রেনউইক যগেশ্বরের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৯০০ টাকা। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর প্রথম লেনদেনে রোববার কোম্পানিটির শেয়ার দর দিনের সর্বোচ্চ ২ শতাংশ কমে হয়েছিল ৮৮২ টাকা। একদিন বাদে তৃতীয় দিনে লেনদেন আরও কমে হয়েছে ৮৪৭ টাকা ২০ পয়সা।
ফ্লোর উঠানোর আগে বৃহস্পতিবার লেনদেন ছিল আটটি। রোববার বেড়ে হয়েছে ২১টি। মঙ্গলবার লেনদেন বেড়ে হয়েছে ৮১৭টির।
মুন্নু অ্যাগ্রোর দর ফ্লোর প্রাইস ৭৯৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে দুই শতাংশ কমে হয় ৭৭৮ টাকা ৯০ পয়সা। মঙ্গলবার লেনদেন আরও কমে হয়েছে ৭৪৮ টাকা ২০ পয়সা।
ফ্লোরে থাকার শেষ দিন কোনো শেয়ার হাতবদল না হলেও রোববার লেনদেন হয়েছিল ৩১টি। মঙ্গলবার লেনদেন বেড়ে হয়েছে ৬০টি।
নর্দার্ন জুট কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস ছিল ৩২৪ টাকা ৯০ পয়সা। রোববার কোম্পানিটি দর হারায় ২ শতাংশ। এদিন ৩০৭টি শেয়ার হাতবদল হয় ৩১৮ দশমিক ৪০ পয়সায়। মঙ্গলবার শেয়ারদর ছিল ৩০৫ টাকা ৯০ পয়সা।
ফ্লোর উঠার দিন লেনদেন ছিল ১৮টি। মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৭৪৮টি।
ইস্টার্ন কেবলের ফ্লোর প্রাইস ছিল ১৪০ টাকা ১০ পয়সা। ২ টাকা ৮০ পয়সা বা ২ শতাংশ কমে রোববার দাম ছিল ১৩৭ টাকা ৩০ পয়সা। মঙ্গলবার লেনদেন হয় ১৩২ টাকায়।
ফ্লোর ওঠার আগের দিন ১১৬টি শেয়ার হাতবদল হলেও রোববার হাতবদল হয় এক হাজার ৫৪৫টি। আর মঙ্গলবার হাতবদল হয়েছে ২ হাজার ৯২১টি।
গত অর্থবছরে বিপুল পরিমাণ লোকসান দেয়া বাটা শুর ফ্লোর প্রাইস ৬৯৩ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছিল না বললেই চলে। ফ্লোর মুক্ত দিনে রোববার কোম্পানিটির ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে দাম হয়েছিল ৬৭৯ দশমিক ৪০ পয়সা। মঙ্গলবার লেনদেন শেষে শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৬৫২ টাকা ৬০ পয়সা।
বৃহস্পতিবার হাতবদল হয়েছেল ৭৯৯টি। রোববার হয়েছে দুই হাজার ১৯৭টি। মঙ্গলবার হাতবদল হয়েছে ৩ হাজার ৭১৯টি।
ওয়াটা ক্যামিকেলের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৩০৬ টাকা ৮০ পয়সা। ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে রোববার দাম হয় ৩০০ টাকা ৭০ পয়সা। মঙ্গলবার লেনদেন শেষে শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ২৮৮ টাকা ৯০ পয়সা।
বৃহস্পতিবার ১১৬টি শেয়ার হাতবদল হলেও রোববার লেনদেন বেড়ে হয়েছিল এক হাজার ৫৪৮টি। মঙ্গলবার হাতবদল হয়েছে ৬ হাজার ৭২টি।
অ্যাপেক্স স্পিনিংয়ের দর ১৩০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে রোববার হয়েছিল ১২৩ টাকা ১০ পয়সা। ফ্লোরের শেষ দিন কোনো লেনদেন না হওয়া কোম্পানিটিরও জট খুলেছে।
রোববার দাম কমার পর হাতবদল হয় ৪০০টি। মঙ্গলবার হাতবদল হয়েছে ৮ হাজার ৭৬টি।
সিভিও পেট্রো কেমিক্যালের দাম ১১৫ টাকা ৪০ পয়সা থেকে রোববার ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে হয়েছিল ১১৩ টাকা ১০ পয়সা। মঙ্গলবার লেনদেন শেষে শেয়ার দর দাঁড়ায় ১০৮ টাকা ৭০ পয়সা।
ফ্লোর প্রাইস ওঠার সিদ্ধান্তের দিন বৃহস্পতিবার মাত্র তিনটি শেয়ার হাতবদল হলেও ফ্লোর থেকে মুক্ত হওয়ার পর রোববার হাতবদল হয় ৪১১টি। মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৪৮৪টি।
সোনালী পেপারের দাম ২৭৩ টাকা থেকে রোববার ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে হয়েছে ২৬৭ টাকা ৬০ পয়সা। মঙ্গলবার লেনদেন শেষে শেয়ার দর হয়েছে ২৫৭ টাকা ১০ পয়সা। বৃ্হস্পতিবার ২০টি শেয়ার হাতবদল হলেও রোববার হয়েছিল দুটি। মঙ্গলবার হাতবদল হয়েছে ২১৪টি।
কে অ্যান্ড কে-এর দর ২০৭ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে রোববার হয়েছিল ২০৩ টাকা ৩০ পয়সা। মঙ্গলবার হয়েছে ১৯৫ টাকা ৪০ পয়সা।
বৃ্হস্পতিবার হাতবদল হয়েছিল ৮৬৯টি। রোববার হয়েছিল একটি। মঙ্গলবার হাতবদল হয়েছে ২৪৩টি।
স্টাইলক্রাফটের দর ১৪৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে রোববার ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে হয়েছিল ১৪৩ টাকা ৩০ পয়সা। মঙ্গলবার লেনদেন হয় ১৩৭ টাকা ৮০ পয়সা।
বৃহস্পতিবার ফ্লোর প্রাইসে ২ হাজার ৯৩টি শেয়ার লেনদেন হলেও রোববার হাতবদল হয় দ্বিগুণ। লেনদেন হয় চার হাজার ২৯২টি। মঙ্গলবার হাতবদল হয় ১৯ হাজার ৯৬৫টি।
বিডিঅটোকারের দর ১৪৭ টাকা ৩০ পয়সা থেকে রোববার ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ কমে হয়ে ১৪৪ টাকা ৪০ পয়সা। মঙ্গলবার লেনদেন হয় ১৩৮ টাকা ৮০ পয়সা। ফ্লোর প্রাইসের শেষ দিন বৃহস্পতিবার তিনটি শেয়ার হাতবদল হলেও মুক্ত হওয়ার পর রোববার হাতবদল হয় ৩৩৫টি। মঙ্গলবার হাতবদল হয়েছে ১ হাজার ৫৫৯টি।
সমতা লেদারের দর ফ্লোর প্রাইস ১০৬ টাকা ৯০ পয়সা থেকে রোববার ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ কমে হয়েছিল ১০৪ টাকা ৮০ পয়সা। মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ১০০ টাকা ৭০ পয়সায়।
বৃহস্পতিবার ফ্লোর প্রাইসে একটি শেয়ার লেনদেন হলেও রোববার হাতবদল হয় ১৭টি। মঙ্গলবার হাতবদল হয়েছে ১০৫টি।
আজিজ পাইপের দর ফ্লোর প্রাইস ৯৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে রোববার ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ কমে হয়েছিল ৯৫ টাকা ৬০ পয়সা। মঙ্গলবার দর আরও কমে হয় ৯১ টাকা ৯০ পয়সা।
ফ্লোরে থাকার শেষ দিন বৃহস্পতিবার ৭১০ শেয়ার হাতবদল হলেও মুক্ত হওয়ার পর রোববার লেনদেন হয় ১ হাজার ৪৯৫টি। মঙ্গলবার হাতবদল হয়েছে ১১ হাজার ৩৫৯টি।
ন্যাশনাল টিউবের দর ১০৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে রোববার ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ কমে হয়েছিল ১০১ টাকা ১০ পয়সা। মঙ্গলবার শেয়ার প্রতি দর আরও এক ধাপ কমে হয়েছে ৯৭ টাকা ২০ পয়সা।
বৃহস্পতিবার ১৪১টি শেয়ার হাতবদল হলেও রোববার লেনদেন হয়েছিল ৭০৮টি। মঙ্গলবার হাতবদল হয়েছে ২ হাজার ৯৯টি।
ওরিয়ন ইনফিউশনের দর ৭২ টাকা ১০ পয়সা থেকে রোববার ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ কমে হয় ৭০ টাকা ৭০ পয়সা। মঙ্গলবার শেয়ার প্রতি দর ছিল ৬৮ টাকা।
ফ্লোরে থাকার শেষ দিন ১০ হাজার শেয়ার হাতবদল হলেও রোববার হাতবদল হয়েছিল দুই হাজার ৩৭৪টি। মঙ্গলবার হাতবদল হয়েছে ২ হাজার ৫০৬টি।
ন্যাশনাল পলিমারের দর ৫৬ টাকা ৬০ পয়সা থেকে রোববার ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ কমে হয়েছিল ৫৫ টাকা ৫০ পয়সা। মঙ্গলবার শেয়ার প্রতি দর ছিল ৫৩ টাকা ৪০ পয়সা।
ফ্লোরে থাকার শেষ দিন বৃহস্পতিবার হাতবদল হয় দুই লাখ ৫৩ হাজার ৩৫১টি। রোববার হাতবদল হয় ৩৮ হাজার ১০৯টি। মঙ্গলবার হাতবদল হয়েছে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৮৩১টি।
এসকে ট্রিমসের দর ৬২ টাকা ২০ পয়সা থেকে রোববার ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ কমে হয়েছে ৬১ টাকা। মঙ্গলবার আরেক দফা শেয়ার দর কমে লেনদেন হয় ৫৮ টাকা ৬০ পয়সায়।
ফ্লোরের শেষ দিন বৃহস্পতিবার একটি শেয়ারও লেনদেন না হওয়া কোম্পানিটির রোববার ১৬টি শেয়ার হাতবদল হয়েছিল। মঙ্গলবার হাতবদল হয় ২২৭টি।
লিগ্যাসি ফুটওয়ারের দর ৬২ টাকা ৯০ পয়সা থেকে রোববার ১ দশমিক ৯১ শতাংশ কমে হয় ৬১ টাকা ৭০ পয়সা। মঙ্গলবার শেয়ার প্রতি দর ছিল ৫৯ টাকা ৩০ পয়সা।
ফ্লোরে থাকার শেষ দিন বৃহস্পতিবার এটিরও কোনো শেয়ার লেনদেন হয়নি। তবে রোববার হাতবদল হয়েছিল ৮ হাজার ১১৯টি। মঙ্গলবার হাতবদল হয়েছে ৫ হাজার ৬৬৫টি।
সি পার্লের দর ফ্লোর প্রাইস ৭৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে রোববার ১ দশমিক ৯০ শতাংশ কমে হয় ৭৭ টাকা ৭০ পয়সা। মঙ্গলবার শেয়ার প্রতি দর ছিল ৭৪ টাকা ৬০ পয়সা।
ফ্লোরে থাকার শেষ দিন বৃহস্পতিবার এটিরও কোনো শেয়ার লেনদেন হয়নি। রোববার হাতবদল হয়েছে ১১টি। মঙ্গলবার হাতবদল হয়েছে ৫টি।
হাক্কানি পাল্পের দর ফ্লোর প্রাইস ৭৪ টাকা থেকে রোববার ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ কমে হয় ৭২ টাকা ৬০ পয়সা। মঙ্গলবার দর ছিল ৬৮ টাকা ৮০ পয়সা।
ফ্লোরে থাকার শেষ দিন বৃহস্পতিবার এক হাজার ১০১টি শেয়ার হাতবদল হলেও রোববার লেনদেন হয়েছিল ২২টি। মঙ্গলবার হাতবদল হয়েছে ১ হাজার ২৭৬টি।
কোহিনুর ক্যামিকেলের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৪৭২ টাকা ৮০ পয়সা। এর দরও রোববার ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে হয় ৪৬৩ টাকা ৪০ পয়সা। মঙ্গলবার দর ছিল ৪৪৫ টাকা ২০ পয়সা।
ফ্লোরে থাকার শেষ দিন কোনো লেনদেন না হওয়া কোম্পানিটির জট খুলেছে। রোববার ৫১৬টি শেয়ার হাতবদল হয়েছিল। মঙ্গলবার হাতবদল হয়েছে ৫২টি।
মুন্নু সিরামিকের দর ১২৬ টাকা ৮০ পয়সা থেকে রোববার ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ কমে হয় ১২৪ টাকা ৩০ পয়সা। মঙ্গলবার লেনদেন হয় ১১৯ টাকা ৫০ পয়সায়।
ফ্লোর প্রাইসের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ৭৪ শেয়ার হাতবদল হলেও মুক্ত হওয়ার পর রোববার হাতবদল হয়েছিল ১ হাজার ২৫১টি। মঙ্গলবার হাতবদল হয় ১ হাজার ১৪৫টি।
স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের দর ৩০৭ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে রোববার হয় ৩০১ টাকা ৮০ পয়সা। মঙ্গলবার লেনদেন শেষে শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ২৮৯ টাকা ৯০ পয়সা।
বৃহস্পতিবার হাতবদল হয়েছিল ১২০টি শেয়ার, রোববার হাতবদল হয়েছে ৯২টি। মঙ্গলবার হাতবদল হয়েছে ১০৭টি।
আরও পড়ুন:বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য অক্ষুণ্ন রেখে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০ বছর মেয়াদি ‘সুন্দরবন ইকোট্যুরিজম মাস্টারপ্ল্যান (২০২৫-২০৪৫)’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি গতানুগতিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মতো নয়, বরং সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশকে অক্ষুন্ন রেখে কীভাবে টেকসই পর্যটন বাস্তবায়ন ও উন্নয়ন করা যায়, তার একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ করা হয়েছে।
মাস্টারপ্ল্যানটি বন বিভাগ অনুমোদন দিলে ইউনেস্কো ঘোষিত এই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইউএসএআইডির আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় বাংলাদেশ বন বিভাগ ও সোলিমার ইন্টারন্যাশনাল এই উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। ইউএসএআইডি ইকোট্যুরিজম অ্যাক্টিভিটি পাইলট প্রকল্পের অধীনে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে তিন বছর মেয়াদে এ মাস্টারপ্ল্যানের বড় একটি অংশ বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।
ডেপুটি চিফ অব পার্টি হিসেবে এ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে নেতৃত্ব দেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. ওয়াসিউল ইসলাম।
তিনি জানান, এই মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে প্রায় দুই বছর সময় লেগেছে। এটি মূলত সুন্দরবনের পরিবেশ ও অর্থনীতির সমন্বয়ে একটি টেকনিক্যাল রোডম্যাপ। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশীয় পর্যটন শিল্পের প্রবৃদ্ধি ঘটবে, স্থানীয়দের অর্থনৈতিক ভিত মজবুত হবে এবং এর মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।’
ড. মো. ওয়াসিউল বলেন, ‘সুন্দরবনে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথও খুলবে, যা জাতীয় অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবনের কোলাহলমুক্ত, শান্ত, সুনিবিড় পরিবেশ এবং রাতের জ্যোৎস্না বিশেষভাবে উপভোগ করে থাকেন। এই চাহিদা কাজে লাগাতে পারলে পর্যটন খাত দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।’
মাস্টারপ্ল্যানটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর কমিউনিটিভিত্তিক ইকোট্যুরিজম মডেল। বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয়, ট্যুরিস্ট পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, জাতীয় ও আঞ্চলিক ট্যুর অপারেটর এবং স্থানীয় বাসিন্দাসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে এটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
ড. ওয়াসিউল বলেন, ‘স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে পরিকল্পনাটি তৈরি হওয়ায় বিরোধের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। স্থানীয়রা সরাসরি ইকোট্যুরিজমে অংশ নেবে এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগতভাবে উপকৃত হবে।’
পরিকল্পনায় বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরতা কমানোর বিষয়টি অগ্রাধিকার পেয়েছে। পর্যটনের মাধ্যমে বিকল্প ও টেকসই জীবিকা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে সুন্দরবনের পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় থাকে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই পদ্ধতি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের ওপর চাপ কমাবে এবং ঘূর্ণিঝড় ও জোয়ার-ভাটার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে এর সহনশীলতা বাড়াবে।’
এই প্রকল্পের অধীনে ২০০ জনের বেশি ইকো-গাইডকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা পর্যটকদের গাইড করবে এবং মানুষ-বন্যপ্রাণীর সংঘাত কমিয়ে আনবে। তাদের তত্ত্বাবধানে নিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিশ্চিত হবে, যা পরিবেশের ক্ষতি কমাবে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষক জানান, দাকোপ এলাকায় যে সকল ইকো-কটেজ স্থাপন করা হয়েছে, সেসব কটেজে কর্মরত স্থানীয় কর্মচারীদেরও গেস্ট ম্যানেজমেন্ট এবং পর্যটক সেবা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে পর্যটকদের সাথে কোনো ধরনের সংঘাত বা ভুল বোঝাবুঝি হওয়ার সুযোগ কম থাকে।
পর্যটকদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য মাস্টারপ্ল্যানে প্রধান তিনটি প্রবেশপথ মোংলা, মুন্সীগঞ্জ ও শরণখোলায় তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলো পর্যটকদের নৌকা ভাড়া করা, ইকো-গাইড নিয়োগ করা এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটন সুবিধা পেতে সাহায্য করবে।
বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বাসসকে জানান, প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ পর্যটক সুন্দরবনে ভ্রমণ করতে আসেন।
তিনি বলেন, ‘এ বিপুল সংখ্যক পর্যটককে নিয়ন্ত্রণ করে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। এই মাস্টারপ্ল্যানটি বনের ক্ষতি না করে দায়িত্বশীল ইকো-ট্যুরিজমকে উৎসাহিত করছে। এটি একটি সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
ইমরান আহমেদ জানান, পরিকল্পনাটি বর্তমানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সুন্দরবনভিত্তিক ইকোট্যুরিজম খুলনাকে জাতীয় রাজস্বের একটি বড় উৎসে পরিণত করবে।’
সুন্দরবনের আশপাশের গ্রামবাসীরাও পরিকল্পনাটি নিয়ে আশাবাদী। তারা জানান, আগে কিছু ব্যক্তিগত কটেজে অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছিল। তবে নতুন পরিকল্পনায় সরকারি তত্ত্বাবধান থাকায় একসঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জনকল্যাণ নিশ্চিত হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ২০ বছর মেয়াদি এই মাস্টারপ্ল্যান সুন্দরবনকে টেকসই পর্যটনের আদর্শ রূপে গড়ে তুলবে, যা বন সংরক্ষণকে উৎসাহিত করবে, স্থানীয়দের শক্তিশালী করবে এবং বিশ্বজুড়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের আকৃষ্ট করবে।
সূত্র: বাসস
বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা ঢাকা ইলেকটিক্স সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ১২৫ কোটি টাকার বেশি লোকসান করেছে। রোববার প্রকাশিত কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি গত অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি ।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ডেসকোর শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩ টাকা ১৫ পয়সা। ডেসকোর মোট শেয়ারের সংখ্যা ৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৬৯ হাজার ৮০৪। সে হিসাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিট লোকসান হয়েছে ১২৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা ৪৪ হাজার ৮৮২ টাকা।
নিরীক্ষিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছর শেষে ডেসকোর শেয়ার প্রতি নিট সম্পত্তি দাঁড়িয়েছে ৩৫ টাকা ৩৩ পয়সা, শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা ৯৩ পয়সা।
কোম্পানির মূল্য-সংবেদনশীল তথ্যের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেহেতু কোম্পানির চলতি বছরে লোকসান হয়েছে এবং অবণ্ঠিত পুঞ্জীভূত মুনাফা ঋণাত্মক, তাই পরিচালনা পর্ষদ এ বছর কোনো লভ্যাংশ সুপারিশ করতে পারেনি।
টানা তিন বছর ধরে লোকসানে রয়েছে ডেসকো। এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ১২ টাকা ৭২ পয়সা। সে হিসেবে নিট লোকসান হয় ৫০৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে কোম্পানি শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ১৩ টাকা ৬১ পয়সা। সে হিসাবে নিট লোকসান হয় ৫৪১ কোটি ২১ লাখ টাকা।
কোম্পানির মূল্য-সংবেদনশীল তথ্যের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত শনিবার ডেসকোর পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত ৩০ জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব বিবরণী অনুমোদিত হয়। সভায় ২০২৬ সালের ১৭ জানুয়ারি সকাল ১০টায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ২৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। এর জন্য রেকর্ড ডেট রাখা হয়েছে আগামী ২০ নভেম্বর।
প্রায় এক মাসের স্থিতিশীলতা ভেঙে আবারও বেড়েছে এশিয়ার স্পট মার্কেটে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম। ইউরোপে আগেভাগে শীত শুরু হওয়া এবং ইউক্রেনের গ্যাস অবকাঠামোয় রাশিয়ার হামলার প্রভাবেই এই জ্বালানি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। খবর: রয়টার্স ও মার্কেট স্ক্রিনার।
শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় নভেম্বরে সরবরাহের জন্য গত সপ্তাহে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির গড় মূল্য ছিল ১১ ডলার, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১০ ডলার ৬০ সেন্ট। ডিসেম্বর সরবরাহের জন্য গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে ১১ ডলার ২০ সেন্ট প্রতি এমএমবিটিইউ।
এফজিইর গ্যাস ও এলএনজি সাপ্লাই অ্যানালিটিকস বিভাগের পরিচালক সিয়ামাক আদিবি বলেন, ‘ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেছে, কারণ অক্টোবরের শুরুতেই ঠাণ্ডা আবহাওয়া দেখা দিয়েছে। ফলে বৈশ্বিক বাজারে এলএনজির দামও ঊর্ধ্বমুখী।’
তিনি আরও জানান, ‘ইউরোপে গ্যাস মজুত বাড়ানোর গতি কমলেও রিগ্যাসিফিকেশন টার্মিনাল থেকে সরবরাহ উচ্চমাত্রায় রয়েছে। তবে এশিয়ার বাজারে চাহিদা এখনো তুলনামূলক কম। মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকার বাজারেও মৌসুমি প্রভাবে চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। ফলে চলতি শীত মৌসুমে এলএনজির দিকনির্দেশনা নির্ভর করবে ইউরোপের ওপর।’
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটস জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে নভেম্বরে সরবরাহের জন্য এলএনজির গড় মূল্য ছিল প্রতি এমএমবিটিইউ ১০ ডলার ৩৩ সেন্ট, যা নেদারল্যান্ডসের টিটিএফ ফিউচার সরবরাহ চুক্তির তুলনায় ৬৩ সেন্ট কম।
অন্যদিকে, আর্গাস এলএনজির মূল্য নির্ধারণ করেছে ১০ ডলার ৩৬ সেন্ট এবং স্পার্ক কমোডিটিস ১০ ডলার ৩০ সেন্ট প্রতি এমএমবিটিইউ।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের আটলান্টিক এলএনজির ব্যবস্থাপক এলি ব্লেকওয়ে জানান, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার সাম্প্রতিক হামলায় প্রায় ৩০ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন ব্যাহত হয়েছে। তা ছাড়া অক্টোবরেই ইউরোপে শীত শুরু হওয়ায় গ্যাস মজুত থেকে উত্তোলন শুরু হয়েছে, যা দামের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত গত বছরের তুলনায় ১১ শতাংশের বেশি কম। ফলে পর্যাপ্ত সরবরাহ বজায় রাখতে শীত মৌসুমে ইউরোপকে তুলনামূলক বেশি দামে এলএনজি আমদানি করতে হতে পারে।’
তবে আইসিআইএসের সিনিয়র এলএনজি বিশ্লেষক অ্যালেক্স ফ্রোলি মনে করেন, সেপ্টেম্বরে চীনের এলএনজি আমদানি হ্রাস এবং মিসরের দুর্বল চাহিদা ইউরোপীয় বাজারের দামের ওপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আনতে পারে।
অন্যদিকে স্পার্ক কমোডিটিসের বিশ্লেষক ম্যাক্স গ্লেন-ডোয়েপেল জানান, ‘বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপে রপ্তানির প্রণোদনা এখনো বেশি, কারণ উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় সরবরাহের তুলনায় ইউরোপীয় বাজারে মূল্য সুবিধা বেশি।’
এদিকে এলএনজির পরিবহন খরচও কিছুটা কমেছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত আটলান্টিক রুটে পরিবহন ব্যয় কমে দৈনিক ২২ হাজার ডলার, আর প্রশান্ত মহাসাগরীয় রুটে তা স্থির হয়েছে ২৪ হাজার ডলারে।
শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে বেসরকারি খাতের পুঁজি, উদ্ভাবন ও সম্পৃক্ততা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে আইসিসি বাংলাদেশের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংলাপে ইউনিসেফের প্রাইভেট ফান্ডরেইজিং ও পার্টনারশিপস বিভাগের পরিচালক কার্লা হাদ্দাদ মারদিনি এ আহ্বান জানান।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশ ও ইউনিসেফের মধ্যে আয়োজিত এ সংলাপে শিশুদের অধিকার রক্ষা, টেকসই উন্নয়ন এবং সামাজিক কল্যাণে বেসরকারি খাতের ভূমিকা নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা হয়। রোববার আইসিসি বাংলাদেশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নে আইসিসি বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধভাবে কাজ করছে। প্যারিসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের বাংলাদেশ অধ্যায় হিসেবে আইসিসি বাংলাদেশ দায়িত্বশীল ব্যবসা পরিচালনা ও নৈতিক কর্পোরেট চর্চা প্রচারে নিরলসভাবে কাজ করছে, যা জাতীয় অগ্রাধিকার ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তিনি আরও জানান, ইউনিসেফের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আইসিসি বাংলাদেশ নিয়মিত সহযোগিতা করে আসছে। ২০২২ সালে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় ইউনিসেফ বাংলাদেশের কার্যক্রমে ১৫ লাখ টাকা অনুদান দেয় সংস্থাটি। পরে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার শিশুদের জন্য চিকিৎসা, খাদ্য ও মানবিক সহায়তায় ইউনিসেফ প্যালেস্টাইনের কার্যক্রমে তিন কোটি টাকা অনুদান প্রদান করে।
সংলাপে ইউনিসেফের পরিচালক কার্লা হাদ্দাদ মারদিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এখনই বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ, উদ্ভাবন ও সহযোগিতাকে কাজে লাগানো জরুরি। ব্যবসায়ী সমাজকে একত্রিত করে যৌথ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমরা আইসিসি বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন আইসিসি বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এ. কে. আজাদ, এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি. রহমান, ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বিজিএমইএ সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার বিদ্যা অমৃত খান, প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেডের এমডি ফজলুল হক, উত্তরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান, সায়হাম কটন মিলসের এমডি প্রকৌশলী সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, আইসিসি বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল আতাউর রহমানসহ ইউনিসেফ ও আইসিসি বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ইউনিসেফ প্রতিনিধি দল বৈঠকে বলেন, বেসরকারি খাত শুধু অর্থনৈতিক সহায়তার মাধ্যমেই নয়, তাদের প্রভাব, প্ল্যাটফর্ম ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে শিশু অধিকার, লিঙ্গ সমতা ও তরুণদের ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সভা শেষে আইসিসি বাংলাদেশ ও ইউনিসেফ ভবিষ্যৎ সহযোগিতার জন্য একটি যৌথ রোডম্যাপ প্রণয়নে সম্মত হয়। এই রোডম্যাপের মূল লক্ষ্য হবে করপোরেট সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, নীতিগত সংলাপ জোরদার এবং শিশু ও তরুণদের কল্যাণে সম্প্রদায়ভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা। এটি ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর স্বাক্ষরিত আইসিসি বাংলাদেশ–ইউনিসেফ সমঝোতা স্মারকের আওতায় পরিচালিত হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি, লালদিয়ার চর এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও টার্মিনাল ডিসেম্বরের মধ্যে বিদেশি অপারেটরের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ।
তিনি বলেন, তিন টার্মিনালের মধ্যে পানগাঁও ছেড়ে দিতে কিছুটা সময় নেওয়া হবে।
এছাড়া নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) অক্টোবরের মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল, সেটারও কিছুটা সময় নেওয়া হচ্ছে।
রোববার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপার্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘সমুদ্রগামী জাহাজশিল্পে বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ বিষয়ক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সচিব এ কথা বলেন।
মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, আলোচনা শুরু হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি অপারেটরদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে স্ট্র্যাটেজিক ইস্যু আছে, ভৌগোলিক ইস্যু আছে। আমরা মনে করি, সেটা বড় কোনো বিষয় হবে না। শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বন্দরে বিদেশি অপারেটর কাজ করছে। সেখানে কোনো সমস্যা না হলে এখানে সমস্যা হবে কেন?
চট্টগ্রাম বন্দরের ক্যাপাসিটি বাড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও যেটা নেই, আমরা তা করছি, বন্দরের মধ্যে কন্টেইনার খুলে পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছি। চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩টি গেট আছে, এর মধ্যে স্ক্যানিং মেশিন আছে মাত্র ৬টি। তার মধ্যে আবার ৩-৪টি নষ্ট থাকে। এভাবে বন্দর চলতে পারে না। এজন্য আমরা বন্দরের ক্যাপাসিটি বাড়াতে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছি। এটা করতে পারলে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে যাবে।
‘ব্যবসায়ীরা বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার বিরোধিতা করছেন, এরপরও বন্দর কি ছেড়ে দেওয়া হবে?’— এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, তারা আগে এমন নানা কথা বলেন, কিন্তু পরে পরিস্থিতি দেখে আর কথা বলেন না।
‘বন্দরের উন্নয়নে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে, এজন্য খরচ বাড়ানো হবে, এটা বহন করতে পারবেন কি না’—এমন এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, সেবার মান বাড়ানো হলে, দ্রুত সেবা দেওয়ার মাধ্যমে বন্দরে অযথা জাহাজ বসিয়ে রাখা হ্রাসের মাধ্যমে ড্যামারেজ কমিয়ে আনতে পারলে বাড়তি খরচ দিতে কোনো সমস্যা হবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমুদ্রগামী জাহাজ মালিক সমিতির সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, জাহাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে একই দেশে দুই ধরনের পতাকার অস্তিত্ব রয়েছে। আইন অনুযায়ী সরকারি টাকায় কেনা পণ্য শুধু দেশের পতাকাবাহী জাহাজ বহন করতে পারবে। সরকার মালিকানাধীন জাহাজ বোঝাতে সরকারি পতাকাবাহী জাহাজের কথা বলা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, তাহলে দেশের বেসরকারি জাহাজ কোন দেশের পতাকা বহন করে?
মূল প্রবন্ধে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জায়দী সাত্তার বলেন, দেশে জাহাজভাঙা শিল্প ও ছোট জাহাজ নির্মাণ খাত বড় জাহাজ নির্মাণের ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। জাহাজ রপ্তানির জন্য প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ আছে। এগুলো ঠিক মতো সরবরাহ করতে পারলে কার্যাদেশ আরও বাড়বে। এজন্য প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে জাহাজ নির্মাণশিল্প উপযোগী ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নির্ভর করে জাহাজ নির্মাণশিল্প। বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য এখন ইতিবাচক রয়েছে। এ সুবিধা কাজে লাগাতে পারলে জাহাজ নির্মাণশিল্প দুই বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত করা সম্ভব।
স্বল্পোন্নত (এলডিসি) থেকে দেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন উন্নয়নশীল দেশের উপযোগী শিল্পের দিকে যেতে হবে। জাহাজ নির্মাণশিল্প সেই শিল্প যা শুধু তৈরি পোশাক নির্ভর শিল্পের বাইরে টেকসই শিল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফের সভাপতি দৌলত আক্তার মালা, পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। অস্বাভাবিক ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রতিবাদে রোববার চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু বে ভিউতে ব্যবসায়ীদের সমন্বয় সভায় বক্তারা এ দাবি করেন। বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলোচনা না করা পর্যন্ত এ ট্যারিফ স্থগিত করার দাবি জানানো হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের ব্যানারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এসএম আবু তৈয়বের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এশিয়ান গ্রুপের প্রধান এমএ সালাম।
এতে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক, বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি সেলিম রহমান, মেট্রোপলিটন চেম্বারের
সহ-সভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী, শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন, সাবেক পরিচালক খায়রুল আলম সুজন, বিজিপিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী, বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরীসহ, বেপজার সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভিরসহ ব্যবসায়ী নেতারা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ২০০৩ সালে বাফার সঙ্গে গার্মেন্টসের যখন সমস্যা হয়েছিলো তখন আমি চেম্বারের সভাপতি ছিলাম। বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ একসঙ্গে প্রতিরোধ করতে পেরেছিলাম। এবার বন্দরের নতুন ট্যারিফ সাধারণ মানুষকে দিতে হবে। বন্দর নিয়ে যে খেলা শুরু হয়েছে তা খেলতে দেওয়া হবে না। বন্দরে চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে একজন প্রতিনিধিকে পরিচালক করতে হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, বন্দরের মাশুল ব্যবসায়ীরা পেমেন্ট করব না। এটা জনগণকে পেমেন্ট করতে হবে। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে স্বাধীন পরিচালক আছে, বন্দরে নেই কেন? আমরা কারও গোলাম না। আমার টাকায় আপনারা চালান। ট্যারিফ বাড়ানো ষড়যন্ত্র। মোংলা, পায়রায় বাড়াননি। আমি ৪০ বছর ব্যবসা করছি। কচি খোকা নই। বন্দর বাঁচাতে হবে। বন্দরকে কস্ট বেইজড ট্যারিফ করতে হবে। আমরা কি গোলাম? কলুর বলদ? অন্তর্বর্তীকালীন কেন ট্যারিফ বাড়াবে? আর কোনো টাকা বন্দরের বাইরে যেতে দেওয়া হবে না। এনসিটির পর একটি পতেঙ্গা টার্মিনাল হয়েছিল, সেটি দিয়ে দিয়েছেন!
বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, আরএমজি ব্যবসায়ীরা বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি দুটোই করে। ভিয়েতনাম, ভারত ও মালয়েশিয়ার চেয়ে আমাদের কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস বেশি। ২৯ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতায় বন্দরকে লস করতে দেখিনি। তাহলে বন্দরে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ কেন বাড়াতে হবে?
মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, আমরা ট্যারিফ বাড়ানোর বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম বন্দর জনগণের টাকায় তৈরি সেবার জন্য। ২০২৩ সালের বন্দর আইনে উপদেষ্টা পরিষদ বাতিল করেছে। স্বাধীনতার সময় বন্দরে কাঁটাতারের বেড়া ছিল। পৃথিবীতে সাড়ে চার হাজার বন্দর আছে। আড়াই হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। বাড়াতে হলে জাতীয় সংসদ বাড়াবে। এ দেশের গার্মেন্টস থেকে বায়ার পোশাক কিনবে না। ভিয়েতনাম, ভারতে চলে যাবে বায়ার। বন্দর আমাদের কাছে নেই। আমাদের চুষে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করছে। আমদানি খরচ বাড়লে রপ্তানি খরচ বাড়বে। সব শিপিং এজেন্টদের সমভাবে নির্ধারণের দায়িত্ব চিটাগাং চেম্বারের।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি এবং পরবর্তীতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে আগ্রহী বাংলাদেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এ আগ্রহের কথা জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার অফিসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যকার বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বৈঠকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন(ইইউ) বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার। ইইউ-এর সাথে বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্ভাবনার সম্ভাব্যতা যাচাই ও বাণিজ্যিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের পর বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি এবং পরবর্তীতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নে অগ্রসর হতে চায়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল মিলার বলেন, সম্পর্কোন্নয়নে বাণিজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমে উভয় পক্ষেরই সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ আছে।
বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান, স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল সিসটিয়াগা, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিয়ান ব্রিক্স মুলার, ফ্রান্স দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ফ্রেডরিক ইনজা, জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন এনজা ক্রিস্টেন, ইতালি দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ফ্রেডরিকো জামপ্রেল্লি, সুইডেন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ইভা স্মেডব্রেগ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ ডেলিগেশনের ট্রেড অ্যাডভাইজার আবু সাইদ বেলাল উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য