দুই দিনের নানা সংশয় কাটিয়ে বিমা খাত হারানো দাম ফিরে পেল। এই খাতে অবিশ্বাস্য উত্থান অব্যাহত থাকার পাশাপাশি ব্যাংক খাতেও দর সংশোধন অবসানের আভাস মিলল। সেই সঙ্গে চাঙ্গাভাব বস্ত্রখাতেও।
তিনে মিলে সাড়ে ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেনের দিন রোববার থেকে পুঁজিবাজারে যে মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি হয়েছিল, সেটি কাটিয়ে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেখা গেছে উত্থান।
সোমবার সূচক যতটা হারিয়েছিল, ততটা ফিরে না পেলেও প্রায় ৫০ পয়েন্ট সূচক বৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের মনের চাপ অনেকটাই কাটিয়ে দিল।
২০১০ সালের মহাধসের পর থেকে পুঁজিবাজার কখনও কখনও ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিলেও তা স্থায়ী হতে পারছিল না। গত বছর করোনা সংক্রমণের পর ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি কাটিয়ে জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত টানা বেড়েছে বাজার।
এরপর তিন মাসের সংশোধনে আট শ পয়েন্টের বেশি সূচক পড়ে যাওয়া নিয়ে যে আতঙ্ক তৈরি হয়, সেটি ধীরে ধীরে কেটে যেতে থাকে ৫ এপ্রিল লকডাউনের শুরু থেকে। আর টানা দুই মাসের উত্থানে সূচক প্রথমবারের মতো ছয় হাজার পয়েন্টের ঘরও অতিক্রম করে গত সপ্তাহে।
তবে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ২০১০ সালের মহাধসের সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় গত রোববার। তবে সেদিন সূচক পড়ে যাওয়া, ব্যাংক-বিমা খাতের দরপতন ভাবিয়ে তোলে বিনিয়োগকারীদের। কারণ, দর সংশোধনের দিন পতন সব সময় ভালো ইঙ্গিত বহন করে না পুঁজিবাজারে।
বিনিয়োগকারীদের মনের চাপ আরও বেড়ে যায় সোমবার। সেদিনও ব্যাংক-বিমার পতনে এক পর্যায়ে সূচক পড়ে যায় ৮২ পয়েন্ট। তবে লেনদেন কমে যাওয়া আর শেষ বেলায় ২০ পয়েন্টের মতো সূচক ফিরে পাওয়া কিছুটা হলেও স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসে।
সেদিন সূচক আবার ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে চলে আসে।
মঙ্গলবার দিনের শুরুতে সূচক আবার ছয় হাজার পয়েন্টের ওপরে উঠলেও পরে তা পাঁচ হাজার ৯৩৭ পয়েন্টে নেমে আসে। ততক্ষণে টানা তিন দিনের মতো ব্যাংক খাতে বড় দরপতনের চিত্র দেখা দেয়।
তবে দিনের শুরু থেকেই বিমা খাত ছিল চাঙা। দুই দিনের পতনে কোম্পানিগুলো যে টাকা দর হারিয়েছিল, তা ছাড়িয়ে যায় বেশির ভাগ কোম্পানিই। দিন শেষেও তা অব্যাহত থাকে।
আবার শেষ বেলায় ব্যাংক খাতও পতনের লাল রং মুছে গিয়ে দর বৃদ্ধির সবুজ রঙে ফিরে আসে।
দিন শেষে সূচক বাড়ে ৪৭ পয়েন্ট। সংশোধনের আশঙ্কায় থাকা বাজারে লেনদেন আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও তা দুই হাজার কোটি টাকার বেশিই হয়েছে।
এ নিয়ে টানা পাঁচ দিন দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেন হলো পুঁজিবাজারে, যেটি গত ১০ বছরের ইতিহাসে বিরলই বলা যায়।
বিমায় দুই দিনে যত কমল, একদিনেই বাড়ল তার চেয়ে বেশি
সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবসে দর হারানোর আগে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের দর ছিল ৮৬ টাকা ৪০ পয়সা। এক দিনের উত্থানে সেই পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব ছিল না কোম্পানিটির পক্ষে। তবে যতটা বাড়া সম্ভব, ততটাই বেড়ে হয়েছে ৮৫ টাকা ২০ পয়সা।
তবে সংশোধনের আগে ৫০ টাকা ৩০ পয়সা ছাড়িয়ে গেছে রূপালী ইন্স্যুরেন্সের দর।
৪৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে চার টাকা ২০ পয়সা বেড়ে দাম দাঁড়িয়েছে ৫১ টাকা ৭০ পয়সা।
১১১ টাকা থেকে কমে ৯৮ টাকায় নেমে আসা এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের দর ৯ টাকা ৮০ পয়সা বেড়ে হয়েছে ১০৭ টাকা ৯০ পয়সা।
আর সংশোধনেও দর না হারানো তিন কোম্পানি ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স আর প্রগতি লাইফ দিয়েছে আরও লাফ।
ঢাকার দাম প্রায় ১০ শতাংশ বা ১০ টাকা ২০ পয়সা বেড়ে হয়েছে ১১২ টাকা ৫০ পয়সা।
পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের দাম ১৪ টাকা ২০ পয়সা বা ৮.৫৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৮০ টাকা ৪০ পয়সা।
প্রগতি লাইফের দাম ১১ টাকা ৪০ পয়সা বা ৯.৬১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৩০ টাকা।
সব মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি দর বাড়া ২০টি কোম্পানির মধ্যে ১১টিই বিমা খাতের দেখা গেছে।
এই খাতের ৫০টি কোম্পানির মধ্যে কেবল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স ৮০ পয়সা দর হারিয়েছে। বাকি সবগুলোরই বেড়েছে। এর মধ্যে নয়টির দাম বেড়েছে একদিনে যত বাড়া সম্ভব ততই।
চাপ কাটল ব্যাংক খাত
২০১৭ সালের পর ঘুমিয়ে থাকা ব্যাংক খাত এবার লভ্যাংশ দিয়েছে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। বোনাস শেয়ারের পাশাপাশি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সঞ্চয়ের সুদহারের চেয়ে বেশি হারে নগদ লভ্যাংশ পেয়ে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হয়েছেন।
অথচ করোনাকালে ব্যাংকের লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি আদেশ ছাড়িয়েছিল আশঙ্কা।
কেবল ভালো লভ্যাংশ নয়, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক ঘোষণা করেছে যেসব কোম্পানির তার মধ্যে বেশির ভাগেরই আয় বেড়েছে গত বছরের চেয়ে বেশি। কোনো কোনোটির হয়েছে দেড় গুণ, কোনোটির দ্বিগুণ, কোনোটির তিন গুণ।
এই অবস্থায় গত মাসে এই খাতেও দেখা দেয় চাঙাভাব। একটি ব্যাংকের শেয়ার দাম তিন গুণ হওয়ার পাশাপাশি ৫০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি বাড়ে আরও বেশ কিছু ব্যাংকের শেয়ার দর।
তবে গত সপ্তাহ থেকেএই এই খাত যায় সংশোধনে। টানা তিন দিন পতনের পর গত ২ জুন এই খাত ঘুরে দাঁড়ালেও এর পর আবার তিন দিন পড়েছে একটানা। এর মধ্যে রোববার এক দিনে সব কটি ব্যাংক এক দিনে দর হারানোর পর দিনও দুই একটি ছাড়া সবগুলোর পতন এই খাত নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করে।
আরও দিনভর সিংহভাগ ব্যাংক দর হারিয়ে ফেলে। তবে বেলা দুইটার পর থেকে দাম বাড়তে থাকে ব্যাংকের শেয়ারেরও।
এক পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধির তালিকায় উঠে আসে ডাচ বাংলা ব্যাংকের শেয়ার। আগের দিনের চেয়ে ১০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই দাম বেড়েছে এই কোম্পানিটির। আগের দিনের চেয়ে ৭ টাকা বেড়ে দাম দাঁড়িয়েছে ৮৫ টাকা ৭০ পয়সা।
ব্যাংক খাতে দর বৃদ্ধি যে কোম্পানিকে দিয়ে শুরু হয়েছিল, সেই এনআরবিসির দরও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। আগের দিনের চেয়ে তিন টাকা ২০ পয়সা বা ৯.০৯ শতাংশ বেড়েছে। ৩৫ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে দাম হয়েছে ৩৮ টাকা ৪০ পয়সা।
সব মিলিয়ে এই খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২১টির। কমেছে চারটির, বাকি ছয়টির দাম ছিল অপরিবর্তিত।
অন্যান্য খাতের কী অবস্থা
ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটির দামই আজ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ইসলামিক ফিন্যান্স ও ন্যাশনাল হাউজিং ফিন্যান্সের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশ।
সব মিলিয়ে এই খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪টির। একটির লেনদেন স্থগিত। বাকি আটটির মধ্যে দর হারিয়েছে ছয়টি, দুটির দর ছিল অপরিবর্তিত।
বাজেটে করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করার পর থেকে বস্ত্র ও প্রকৌশল খাতে যে চাঙাভাব দেখা দিয়েছে, সেটি টানা তৃতীয় দিনের মতো অব্যাহত আছে।
তিনটি কোম্পানি দিনে দাম বৃদ্ধির প্রান্তসীমা ছুঁয়েছে। এর মধ্যে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং এর ৯.৯৭ শতাংশ, রানার অটোর ৯.৯৬ শতাংশ আর কপারটেকের দাম বেড়েছে ৯.৮৭ শতাংশ। এক দিনে কোম্পানি দুটির দাম এর চেয়ে বেশি বাড়া সম্ভব ছিল না।
সব মিলিয়ে এই খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২১টির। কমেছে ১৯টির, আর দুটির দর ছিল অপরিবর্তিত।
বস্ত্র খাতের ৫৬ কোম্পানির মধ্যে দিনে দাম বৃদ্ধির প্রান্তসীমা ছুঁয়েছে তিনটি কোম্পানির। এগুলো হলো তসরিফা, সাফকো আর বন্ধ থাকা রিংসাইন টেক্সটাইল, যেটি পর্ষদ পুনর্গঠনের পর উৎপাদন শুরুর অপেক্ষায় আছে।
সব মিলিয়ে এই খাতে দাম বেড়েছে ৩০টি কোম্পানির। কমেছে ১৭টির দাম আর অপরিবর্তিত ছিল বাকি নয়টির।
সবচেয়ে বেশি লেনদেন বেক্সিমকোরই
গত কয়েক মাস ধরেই এই বিষয়টি দেখা যাচ্ছে। হাতে গোনা এক দুই দিন ছাড়া এই কোম্পানিটিই সবচেয়ে হাতবদল হয়ে আসছে প্রতি দিন।
দুই দিন আগে কোম্পানিটির তিন শ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদল হলেও সে তুলনায় অবশ্য সোমবার আগ্রহ কম ছিল। এদিন বিক্রি হয়েছে ১৫৪ কোটি ৫১ লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৭৬ কোটি ২২ লাখ ৬৪ হাজার টাকার।
তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে ছিল যথাক্রমে ফরচুন সুজ, লংকাবাংলা ফিন্যান্স ও ন্যাশনাল হাউজিং ফিন্যান্স।
সূচক ও লেনদেন
দিন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক বা ডিএসইএক্স এর অবস্থান দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ২৩ পয়েন্ট।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানিগুলোর সূচক এক পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৯০ পয়েন্টে।
বাছাই করা ৩০টি কোম্পানির সূচক ০.৮৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ১৯৫ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেড়েছে ১৮১টির দর, কমেছে ১৪৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৪৩টির দর।
লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৬৫ কোটি ৭৫ লাখ ৬২ হাজার টাকার। এটি আগের দিনের চেয়ে সামান্য কম। সোমবার হাতবদল হয়েছিল দুই হাজার ৮৩ কোটি টাকার কিছু বেশি।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ১১৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪৩১ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৮টির, কমেছে ১১১টির। দর পাল্টায়নি ৪১টির।
আরও পড়ুন:রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুকের আমন্ত্রণে ভুটান সফরে গেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। শুক্রবার ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তিনি।
বাংলাদেশ সফর শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে সড়কপথে দেশে ফেরেন ভুটানের রাজা। রাজার আমন্ত্রণে তার সফরসঙ্গী হয়ে ভারত হয়ে ভুটানে যান তথ্য প্রতিমন্ত্রী। সূত্র: বাসস
এদিন ভুটানের দক্ষিণাঞ্চলীয় গেলেফু সিটিতে অবস্থান করেন ভুটানের রাজা ও বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী। সেখানে অবস্থানকালে ভুটানের রাজা বেশকিছু সময় ধরে তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে গেলেফু সিটি ঘুরে দেখেন এবং সেখানে শান্তিপূর্ণ, পরিবেশবান্ধব, পরিচ্ছন্ন ও সৌন্দর্যমণ্ডিত আইকনিক সিটি গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানান।
গেলেফু সিটি থেকে ভুটানের রাজার সঙ্গে বিমানযোগে পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তথ্য প্রতিমন্ত্রী। বিমানবন্দরে ভুটানের রাজা ও মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে স্বাগত জানান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে ও ভুটানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শিবনাথ রায়। পরে পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে যান রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক এবং প্রতিমন্ত্রী আলী আরাফাত।
ভুটান সফর শেষে রোববার দুপুরে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় একটি বহুজাতিক কোম্পানির জুতার কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিটের প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে কারখানাটিতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট। অবশেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ফায়ার স্টেশনকর্মী শিবলি সাদিক বলেন, ‘কারখানা ভবনটি ছয় তলাবিশিষ্ট৷ এই ভবনের দ্বিতীয় তলায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। পরে ভবনের বিভিন্ন তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
‘খবর পেয়ে বায়েজিদ ও আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের সাতটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কেউ হতাহত হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আগুন লাগার কারণ বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কেও কিছু জানা যায়নি।’
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, ‘বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় টেক্সটাইল মোড়ের রংদা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি কারখানায় জুতার সোল তৈরি করা হয়। এটি চীনের একটি বহুজাতিক কোম্পানির মালিকানাধীন।
‘ছুটির দিন হওয়ায় কারখানায় কোনো কর্মী ছিলেন না। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কাজ শুরু করে।’
আরও পড়ুন:সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থাকা খাবার কমে আসছে। এ কারণে জলদস্যুরা বাইরে থেকে জাহাজে খাবার নিয়ে আসা শুরু করেছে। ফলে খাবার নিয়ে তেমন সমস্যা না হলেও বিশুদ্ধ পানির সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কেএসআরএম সূত্র জানিয়েছে, দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়টিও এগিয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ২৩ নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে করণীয় সবকিছুই করা হচ্ছে বলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাধারণত জাহাজে দুই ধরনের খাবার থাকে। এগুলো হচ্ছে, হিমায়িত খাবার ও শুকনো খাবার। যাত্রাপথের সময় অনুযায়ী জাহাজে খাবার মজুত রাখা হয়। তবে শুকনো খাবার অনেক দিনের জন্য মজুত থাকে।’
তিনি বলেন, ‘জাহাজ জিম্মি করলে জলদস্যুরা সাধারণত খাবার সরবরাহ করে। তবে সুপেয় পানি নিয়ে সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে রেশনিং করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়।’
তিনি আরও জানান, জলদস্যুরা সম্প্রতি জাহাজের বাইরে থেকে খাবার আনছে- এরকম খবর তারা পেয়েছেন।
জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘খাবার এখনও শেষ হয়নি, তবে কমে আসছে। জলদস্যুরা তাদের নিজেদের জন্য বাইরে থেকে খাবার এনেছে বলে আমরা জেনেছি।’
তিনি বলেন, ‘আটক জাহাজ এবং জিম্মি ২৩ নাবিককে দ্রুত উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
‘এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করার সময় জাহাজটিতে নাবিকদের জন্য ২৫ দিনের খাবার ও ২০০ টন বিশুদ্ধ পানি ছিল। এই পানি দিয়ে এক মাস পর্যন্ত চালানো যাবে বলে তখন নাবিকরা জানিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, তবে রেশনিং করলে অনেক দিন চালানো যাবে। পানি বাঁচাতে এখন শুধু রান্না ও খাবারের জন্য বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করছেন তারা।’
১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করে সোমালি দস্যুরা। পরে তারা জাহাজটিকে সোমালিয়া উপকূলের কাছে নিয়ে যায়। চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজটি বর্তমানে সোমালিয়ার গদভজিরান জেলার জিফল উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে আছে।
প্রায় ১৩ বছর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর এমভি জাহান মণি নামের একই গ্রুপের মালিকানাধীন একটি জাহাজ জিম্মি করেছিল সোমালি জলদস্যুরা। জাহাজটি ১০০ দিন পর সব নাবিকসহ উদ্ধার করা হয়েছিল।
অপরদিকে, জলদস্যুদের কবল থেকে জিম্মি ২৩ নাবিককে উদ্ধার ও জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যোগাযোগের মধ্যে আছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো, নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা। একইসঙ্গে জিম্মি জাহাজটি উদ্ধার করাও আমাদের উদ্দেশ্য। শুধু এতটুকু বলতে চাই, আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।’
জাহাজে খাবার সংকটের বিষয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘অতীতে যখন জাহাজ অপহরণ হয়েছে, কখনও খাবারের সংকট হয়নি। তিন বছর ছিল, তখনও হয়নি; ১০০ দিন ছিল, তখনও হয়নি। আশা করি, এক্ষেত্রেও হবে না।’
আরও পড়ুন:নীলফামারীতে জমির জন্য বাবার মরদেহ দাফন করতে বাধা দিয়েছেন ছেলে। বাবার কবরে শুয়ে কবর দিতে বাধা প্রদান করেন তিনি। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে দাফনকার্য সম্পন্ন হয়।
শুক্রবার নীলফামারী সদর উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের যাদুরহাট বাটুলটারিতে এ ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার রাতে মারা যান ওই এলাকার বাসিন্দা মজিবুর রহমান। জমি রেজিস্ট্রির করার আগে বাবার মৃত্যু হওয়ায় ছেলে নওশাদ আলী মরদেহ দাফনে বাধা দেন ছেলে নওশাদ আলী।
স্থানীয়রা জানান, সদ্য প্রয়াত মুজিবুর রহমানের দুই স্ত্রী রয়েছেন। মৃত্যুর আগে দ্বিতীয় স্ত্রীকে ২ শতাংশ ও ছোট ছেলেকে ৫ শতাংশ জমি লিখে দেন তিনি। প্রথম স্ত্রীর তিন ছেলের মধ্যে ওয়াজেদ আলী, খয়রাত আলী ও নওশাদ আলীকে মৌখিকভাবে ৩ শতাংশ জমি প্রদান করেন বাবা মজিবুর রহমান। কিন্তু মৃত্যুর আগে প্রথম পক্ষের তিন ছেলেকে দেয়া জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবার মরদেহ দাফনে বাধা দেন নওশাদ। এক পর্যায়ে কবরে শুয়ে পড়েন তিনি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চাপড়া ইউনিয়নের পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মাহাবুল ইসলাম বলেন, ‘জমি লিখে না দেয়ায় বাবাকে কবর দিতে বাধা প্রদানের ঘটনাটি আসলেই দুঃখজনক। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।’
রাঙামাটির সাজেক উপত্যকায় পণ্য পরিবহনের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের খাদে পড়ে এক মাহেন্দ্র চালক নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার দুপুরে সাজেকের কংলাক পাহাড়ে যাওয়ার সময় প্রাণ কোম্পানির পণ্যবাহী মাহেন্দ্রটি খাদে পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ৩৫ বছর বয়সী চাঁন মিয়া দীঘিনালা উপজেলার উত্তর রশিক নগর এলাকার তৈয়ব আলীর ছেলে।
জানা যায়, গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারালে প্রাণ কোম্পানির ২ প্রতিনিধি লাফ দিয়ে নেমে গেলেও রক্ষা হয়নি চালকের। অন্তত ১৫০ ফুট পাহাড়ের নিচে পড়ে গাছের সঙ্গে আটকে যায় গাড়িটি। এতে মাথা ফেটে মগজ বের হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন চাঁন মিয়া।
সাজেক থানার ওসি আবুল হাসান খান দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হাজার হাজার মৃত জেলিফিশের পর এবার ভেসে এলো দুটি মৃত কচ্ছপ। এদের একটির ওজন প্রায় ৪০ কেজি, অন্যটির ৩৫ কেজি।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টের পশ্চিম দিকে কচ্ছপ দুটিকে দেখতে পান কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির সদস্য কেএম বাচ্চু। পরবর্তীতে সেগুলোকে মাটিচাপা দেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
বাচ্চুর ধারণা, ডিম ছাড়তে কচ্ছপগুলো উপকুলে এসেছিল। তবে শক্ত কোনো কিছুর সঙ্গে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এগুলো মারা গিয়েছে।
কচ্ছপ দুটির মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানান কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির এ সদস্য।
এ বিষয়ে ইকোফিশ-২ বাংলাদেশ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, ‘মূলত কদিন ধরে সমুদ্রে জেলিফিশের আধিক্য বেড়ে যাওয়ার কারণে কচ্ছপ দুটি তীরে আসতে পারে। কারণ এই কচ্ছপগুলো জেলিফিশ খেতে পছন্দ করে।’
তিনি জানান, যে দুটি কচ্ছপ এসেছে, এদের বৈজ্ঞানিক নাম লেপিডোসেলিস ওলিভেসিয়া (Lepidochelys Olivacea)। এরা সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বেঁচে থাকে।
কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির সদস্য আবুল হোসেন রাজু বলেন, ‘একটি কচ্ছপের লেজে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। সম্ভবত, কোনো কিছুর সঙ্গে আটকে তাদের মৃত্যু হয়েছে।’
তিনি জানান, এর আগে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি বেশকিছু কচ্ছপের দেখা মিলছিল এই সৈকতে। তবে ২০২৪ সালে এই প্রথম মৃত কচ্ছপ এসেছে কুয়াকাটায়। এসব সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু সমুদ্রের পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে জানান রাজু।
কলাপাড়া উপজেলার বনবিভাগ মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ নিউজবাংলাকে বলেন, খবর পেয়ে ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত চলে আসি। মৃত কচ্ছপ থেকে দূর্গন্ধ ছড়ানোর কারণে তাৎক্ষণিক সেগুলোকে মাটিচাপা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।’
প্রসঙ্গত, গত প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কুয়াকাটা সৈকতজুড়ে হাজার হাজার মৃত জেলিফিশের কারণে পর্যটকসহ জেলেদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত এক যুগের তুলনায় এ বছর অস্বাভাবিক হারে মৃত জেলিফিশ সৈকতে ভেসে আসছে।
কেন প্রতি বছর ঠিক এই সময়টাতেই সৈকতে মৃত জেলিফিশের আবির্ভাব ঘটে, সেটি নিয়ে বিভিন্ন দপ্তর গবেষণা করলেও আজ অবধি এর সদুত্তর মেলেনি।
আরও পড়ুন:ইতালি নেয়ার কথা বলে লিবিয়ায় আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির আলোচিত ঘটনায় ৭ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর বাবা। মামলার পর মানবপাচার দলের প্রধান মুকুল ঠাকুরের মেয়ে-জামাতা ফরিদপুরের সালথা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এসএম শাকিল হোসাইনকে গ্রেপ্তার করেছে সালথা থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া এসএম শাকিল হোসাইন উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের বিভাগদী গ্রামের মৃত নওফেল মাতুব্বরের ছেলে। বর্তমানে তিনি সালথা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। কয়েক মাস আগে তিনি বিয়ে করেন পার্শ্ববর্তী রামকান্তপুর ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামের মুকুল ঠাকুর নামক এক ব্যক্তির মেয়েকে।
শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সালথা থানার ওসি মোহাম্মাদ ফায়েজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিপণের দাবিতে লিবিয়ায় ভিকটিম শাকিলকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। এ ঘটনায় শাকিলের বাবা টিটুল মিয়া প্রথমে মামলা করতে চাননি। অবশেষে বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে মানবপাচার দমন আইনে ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।’
ওসি বলেন, ‘মামলার পর শুক্রবার সকালে আসামি শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি মামলার প্রধান আসামি মুকুল ঠাকুরের মেয়ে-জামাতা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাকিল অনেক তথ্য দিয়েছেন।’
ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল নগরকান্দা) মো. আছাদুজ্জামান বলেন, ‘লিবিয়ায় শাকিলের ওপর নির্মম নির্যাতন ও মুক্তিপণের বিষয়টি প্রথম থেকেই আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছি। এ ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি ভিকটিমকে উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
প্রসঙ্গত, অভাবের সংসারে পরিবারের মুখে একটু হাসি ফোটাতে লেখাপড়া বাদ দিয়ে চার মাস আগে প্রতিবেশী মুকুল ঠাকুর নামের এক দালালের মাধ্যমে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালির উদ্দেশ্য রওয়ানা হন শাকিল মিয়া। কিন্তু দালালরা তাকে ইতালির বদলে লিবিয়ায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তাকে আটকে রেখে দালালরা আরও ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। একইসঙ্গে শাকিলের ওপর চলতে থাকে নির্মম নির্যাতন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য