এক দশকে সর্বোচ্চ লেনদেনের দিনই যে অস্বস্তি পুঁজিবাজারে দেখা দিয়েছিল, সেটি শঙ্কায় পরিণত হলো পরের দিন। প্রায় আড়াইশ শেয়ারের দরপতনে বড় ধরনের সংশোধন হলো পুঁজিবাজারে।
এপ্রিল থেকে টানা উত্থানে থাকা পুঁজিবাজার ছয় হাজার পয়েন্টের মাইলফলক ছুঁয়ে আসার পর পথ হারানোর দশা। উঠা নামার মধ্যে তিন কার্যদিবস ছয় হাজারের ওপরে থাকার পর আবার সূচক নেমে এল ছয় হাজারের কম।
গত সপ্তাহের শুরুতে ছয় হাজার পয়েন্টে পৌঁছার পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি হয়। সেখানে সূচক স্থিতিশীল না হওয়া, পাশাপাশি সংশোধনের দিন ব্যাপকভাবে লেনদেন বৃদ্ধির কারণে সেই চাপ আরও বাড়ল।
এ কারণে ২০১০ সালের মহাধসের পর রোববারের সর্বোচ্চ লেনদেনেও বিনিযোগকারীরা খুশি হতে পারেনি। তবে সোমবারের লেনদেনের শেষ দিকে সূচক কিছুটা ফিরে পাওয়া, আর পতনের দিন লেনদেন কমে যাওয়ায় তাও কিছুটা হলেও ইতিবাচকতা খুঁজছেন তোরা।
গত জানুয়ারি মাসেও সূচক পাঁচ হাজার ৯০৯ পয়েন্ট উঠার পর একমন অস্থিরতা দেখা দেয়। আর টাকা প্রায় তিন মাসের দর সংশোধনে এক পর্যায়ে তা নেমে আসে পাঁচ হাজার ৮৮ পয়েন্টে।
পরে ৫ এপ্রিল লকডাউনের প্রথম দিন থেকে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজার। ৩০ মে সূচক দাঁড়ায় ছয় হাজার আট পয়েন্টে। কিন্তু পরের দুই দিন সূচক আবার ছয় হাজারের নিচে নেমে আসে।
এরপর তিন কার্যদিবস আবার ছয় হাজার পয়েন্টের ওপরে থাকার পর সোমবার এক দিনে ৬২ পয়েন্ট হারাল সূচক।
৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন শুরু হওয়ার আগে আগে বাজারে লেনদেন স্থগিত হয়ে যাবে, এমন গুজবে গত ৩ এপ্রিল এর চেয়ে বেশি দরপতন দেখেছিল পুঁজিবাজার।
রোববার পুঁজিবাজারে লেনদেন ছিল দুই হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। সেদিন সূচক পড়ে ১৫ পয়েন্ট।
সোমবার লেনদেন শুরুর পর উঠানামা করতে থাকে সূচক। তবে বেলা একটার পর থেকে কেবল পড়েছেই। এক পর্যায়ে তা ৮৪ পয়েন্ট কমে যায়। তবে শেষ বেলায় এসে সূচক ২২ পয়েন্ট ফিরে পায় পুঁজিবাজার।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সূচকের পতন হলেও পুঁজিবাজার স্বাভাবিক আছে। এ সময়ে পুঁজিবাজারে কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে স্পষ্ট করে নির্দেশনা না থাকায় অনেকে এখন আর নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, বিভিন্ন খাতের শেয়ার দল বেঁধে বাড়ছিল। এখন খাতওয়ারি দর সংশোধন হচ্ছে। এর মাধ্যম স্বাভাবিক অবস্থায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছে।
টানা তিন দিন পড়ল ব্যাংকের দর
গত সপ্তাহে কেবল বুধবার ছাড়া ব্যাংকের পতন হয় প্রতিদিন। চলতি রোরবার পতনের মাত্রা ছিল আরও বেশি। পরের দিন মাত্রা কিছুটা কমলেও সেই বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি এই খাত।
একদিন ছাড়া পুরোটাই পুরোটাই শেষ কর্মদিবসে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার ঢালাওভাবে কমে ছিল তালিকাভুক্ত ব্যাংকের শেয়ার দর। সোমবারও কমেছে বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ার দর।
লেনদেনে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। এক দিনে ১০ শতাংশের বেশি কমার সুযোগ না থাকলেও এটি এত কমেছে লভ্যাংশ সমন্বয়ের কারণে। চলতি বছর কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ৫০ পয়সা নগদ আর ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছিল।
রোববার রেকর্ড ডেটে শেয়ার দাম ছিল ১২ টাকা। দিন শেষে দর দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৫ পয়সা।
একই কারণে ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ দর হারিয়েছে এক্সিম ব্যাংকের। সোমবার ব্যাংকটির শেয়ার দর ১২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১১ টাকা ৩০ পয়সা।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক দর হারিয়েছে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। শেয়ার দর ৯ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৮ টাকা ৯০ পয়সা।
এনসিসি ব্যাংকের দর কমেছে ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। লেনদেনে শেয়ার দর ১৫ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৪ টাকা ৬০ পয়সা।
ওয়ান ব্যাংকের দর কমেছে ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ১৩ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৩ টাকা।
ট্রাস্ট ব্যাংকের দর কমেছে ২ দশমিক ৬৬ পয়সা। লেনদেনে শেয়ার দর ৩৩ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৩২ টাকা ৯০ পয়সা।
পূবালী ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ২৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৩ টাকা ৯০ পয়সা।
দর কমেছে প্রিমিয়ার ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংক, স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংকের।
বিমাতেও পতন
দ্বিতীয় দিনের মতো কমেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের শেয়ারের দর। লেনদেনে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে একটির। দর পাল্টায়নি তিনটির। দর কমেছে ৩৬টির।
এদিন সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স; ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। শেয়ার দর ১৯৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৮৪ টাকা ২০ পয়সা।
পদ্মা লাইফের শেয়ার দর কমেছে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ৩৩ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৩২ টাকা।
ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। দাম ৪১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৩৯ টাকা ৫০ পয়সা।
রূপালী ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। শেয়ার দর ৪৯ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৪৭ টাকা ৫০ পয়সা।
নর্দান ইন্স্যুরেন্স দর হারিয়েছে ৪ দশমিক ০৬ শতাংশ। শেয়ার দর ৬৩ টাকা ৯০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৬১ টাকা ৩০ পয়সা।
ডেল্টা লাইফের দর কমেছে ৪ দশমিক ০২ শতাংশ। ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স দর হারিয়েছে ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স দর হারিয়েছে ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ।
আগের দিন উত্থান হওয়া বস্ত্র ও প্রকৌশল খাতও দর ধরে রাখতে পারেনি।
সূচক ও লেনদেন
সোমবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬২ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৭৫ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৯ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৮৯ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ২৭ দশমিক ৪২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৯৫ পয়েন্টে।
লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৮৩ কোটি টাকা যা আগের দিনের চেয়ে ৫৮৬ কোটি টাকা কম।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯৮টির, দর কমেছে ২৪২টির। দর পাল্টায়নি ২৭টির।
চট্টগ্রাস স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১৮৯ দশমিক ৮০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩১৭ পয়েন্টে। হয়েছে মোট ৯০ কোটি টাকা।
এই এক্সচেঞ্জে দাম বেড়েছে ৮৬টির, কমেছে ১৯১টির। পাল্টায়নি ২৩টির।
আরও পড়ুন:নওগাঁর পত্নীতলা সীমান্ত দিয়ে ১৬ বাংলাদেশি নাগরিককে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। শুক্রবার বেলা ১১টায় নওগাঁর পত্নীতলা ১৪ বিজিবির ক্যাম্প থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এর আগে ভোরে উপজেলার শীতলমাঠ বিওপির সীমান্ত পিলার ২৫৪/১-এস এর কাছ দিয়ে তাদের বাংলাদেশে পুশইন করা হলে বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে।
আটককৃতরা হলেন- নাটোর জেলার মোতালেব শেখ (৪৫), শফিকুল ইসলাম (৩৫), মজনু বিশ্বাস (৪৮), নয়ন খাঁ (২৫), মুকুল শেখ (২৫), মৃধুল শেখ (২০), সামির (১১), বিনা খাতুন (২৯), মিম (৮), মরিয়ম খাতুন (১০), রোজিনা খাতুন (১৮), মিরা খাতুন (৮ মাস), এলিনা খাতুন (২৮), জান্নাতুল সরকার (১০), জোছনা বেগম (৫০) এবং পাবনা জেলার মিরাজ শেখ (১৮)।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- ভোরে পত্নীতলা ১৪ বিজিবির শীতলমাঠ বিওপির সীমান্ত পিলার ২৫৪/১-এস এর কাছ দিয়ে তাদের পুশইন করে। পরে বিজিবির টহল দল ঘুরকী গ্রামের পাকা রাস্তা সংলগ্ন চা দোকানের পাশে ঘোরাফেরা করতে দেখে তাদের আটক করে। আটকদের মধ্যে সাতজন পুরুষ, পাঁচ শিশু ও চারজন নারী।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়- আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তারা বেশ কয়েক বছর পূর্বে রাজশাহী সীমান্ত দিয়ে ভারতে গিয়েছিল। আটকের পর তাদেরকে পত্নীতলা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন বলেছেন, ‘বিএনপি যদি মানুষের ভালোবাসার ম্যান্ডেট নিয়ে জনগনের সরকার গঠন করতে পারে, তাহলে এ দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ শিক্ষা অর্জনে সহায়তা করবে। বিশেষ করে দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার শাসনামলে নারী শিক্ষায় অগ্রাধিকার দিয়েছেন। শুক্রবার ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে ব্রজগোপাল টাউনহলে এসএসসি/ দাখিল পরীক্ষায় ১১০ জন কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
যুবদল নেতা নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপ্রতি জিয়াউর রহমান এ দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় আলোয় আলোকিত ও নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য তার জীবদ্দশায় নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় দেশ নায়ক তারেক রহমান রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য যে ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন, তার মধ্যে শিক্ষার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।’
এ সময় চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি কয়ছর আহমেদ কমল, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোফরান মহাজন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মঞ্জুর হোসেন, পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম সোহেল, ভোলা জেলা বিএনপির সদস্য মমিনুল ইসলাম ভুট্টু, চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক আহসান উল্যাহ বাহার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির সিকদার, চরফ্যাশন প্রেসক্লাব সভাপতি জুলফিকার মাহমুদ নিয়াজ, উপজেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক কামাল গোলদার, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম রাসেল, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিক মিলটন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও শিক্ষক প্রতিনিধি ও অবিভিাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন, চরফ্যাশন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সদস্য আরিফুর রহমান জুয়েল। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের হাত থেকে এসএসসি/ দাখিল ২০২৫ জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীরা সম্মননা স্মারক গ্রহণ করেন।
ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে টানা ১২ দিন সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এই সংঘাতে ইরান ও ইসরায়েল উভয় পক্ষই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আদতে ইসরায়েলের পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন সামরিক পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, দেশটি সহায়তা দিতে গিয়ে উন্নত মানের প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র (থাড) হারিয়েছে।
বৃহস্পতিবার মেহের নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের প্রকাশিত নথি থেকে জানা যায়, ইরানের বিরুদ্ধে ১২ দিনের ইসরায়েলি আগ্রাসনের সময় ওয়াশিংটন তেল আবিবকে সহায়তা দিতে গিয়ে প্রায় ৫০ কোটি ডলারের উন্নত মানের প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র হারিয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের বলছে, এ নিয়ে সম্প্রতি পেন্টাগনের বাজেট নথি প্রকাশিত হয়েছে, যা বেশ কয়েকটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে।
ইসরায়েলের একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সদ্য প্রকাশিত পেন্টাগনের বাজেট নথিতে দেখা গেছে, গত জুনে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের ১২ দিনে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে মোট প্রায় ৫০ কোটি ডলার মূল্যের ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়ার জোন’ এবং ‘বিজনেস ইনসাইডার’এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, নথিগুলোর একটিতে ৪৯৮ দশমিক ২৬৫ মিলিয়ন ডলার জরুরি তহবিল চাওয়া হয়েছে, যা দিয়ে থাড ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা প্রতিস্থাপন করা হবে।
নথিতে আরও বলা হয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরাইলকে সমর্থন দিতে ব্যবহার করা হয়েছিল। ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ওই ১২ দিনের আক্রমণে যুক্তরাষ্ট্র ‘১০০ থেকে ১৫০টি থাড ক্ষেপণাস্ত্র’ নিক্ষেপ করেছে।
এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য আরও বাজেট বরাদ্দ করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। মাটির কলস, থালা, বাটি, প্রদীপ, গ্লাস কিংবা নানা ধরনের পুতুল—সবই তৈরি হচ্ছে দিন-রাতের শ্রমে। পূজার সময় ঘনিয়ে আসতেই বেড়েছে অর্ডার, বেড়েছে কর্মব্যস্ততাও।
উপজেলার সন্ধ্যানী এলাকার কুমারপাড়ায় এখনো নয়টি পরিবার জীবিকার তাগিদে টিকে আছে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পের সঙ্গে। একসময় সারাবছর মৃৎশিল্পের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও বর্তমানে প্লাস্টিক সামগ্রীর দাপটে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে মাটির তৈরি জিনিসপত্র।মাটি-জ্বালানির দাম বাড়ায় কষ্টে মৃৎ শিল্পীরা।
সরেজমিনে সদর ইউনিয়নের কুমারপাড়া ঘুরে দেখা যায়, রোদ না থাকায় ঘরের ভেতরে ফ্যান চালিয়ে শুকানো হচ্ছে সদ্য তৈরি মাটির কলস, থালা আর প্রদীপ। পুরুষ ও নারী মৃৎশিল্পীরা কেউ মাটির কাজ করছেন, কেউ পূজাকে কেন্দ্র করে রং তুলির আঁচড়ে সাজাচ্ছেন নানান ধরনের পণ্য।
মৃৎশিল্পী জ্যোতির্ময় পাল বলেন, ‘দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে আমরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। কলস আর থালার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তবে মাটি ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ সামলে লাভ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবুও এই শিল্পকে ধরে রাখতে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
নারী মৃৎশিল্পী বীনা রানী পাল বলেন, ‘আমরা শুধু মাটির জিনিসপত্র বানাচ্ছি না, দেশের ঐতিহ্যকেও বাঁচিয়ে রাখছি। অনেক নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এই কাজে যুক্ত করেছি। তারা সংসারে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারছে। কিন্তু মূলধন ও সরকারি সহযোগিতা ছাড়া এই শিল্প টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, প্লাস্টিকের দাপটে মাটির পণ্যের বাজার অনেকটাই কমে গেছে। তাই টিকে থাকতে তারা এখন দইয়ের বাটি, কাপ, চামচের মতো নতুন নতুন পণ্য বানাচ্ছেন। কিন্তু মূলধনের অভাবে উৎপাদন সীমিত হয়ে পড়ছে। ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
নাগরদোলা থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক শিমুল তরফদার বলেন, ‘গ্রামীণ ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মৃৎশিল্প। কিন্তু মূলধন ও সহযোগিতার অভাবে একে একে অনেক শিল্পী এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। এখনই সরকারি সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও সহজ ঋণের ব্যবস্থা না করলে এই শিল্প বিলীন হয়ে যাবে।’
একসময় গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরে অপরিহার্য ছিল মাটির থালা-বাটি। বিশেষ করে দুর্গাপূজা বা অন্যান্য ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে মাটির কলস, প্রদীপ কিংবা পাত্রের বিকল্প ছিল না। এখনো সেই চাহিদা পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে প্লাস্টিকের ভিড়ে কবে পর্যন্ত টিকে থাকবে এই ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প?
ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবনে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার ফলক উন্মোচন করে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবনে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
ফলক উন্মোচন শেষে নতুন ভবনে আয়োজিত উদ্বোধন উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব মনির হায়দার।
এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব আইএমইডি কামাল উদ্দিন, স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর, খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক মুজিবুর রহমান, মেহেরপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মুনজুর আহমেদ সিদ্দীক, মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা.একেএম আবু সাঈদ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডি সচিব মো. কামাল উদ্দিন, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো. ফিরোজ সরকার, ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মো. রেজাউল হক, খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত (স্বাস্থ্য) পরিচালক ডা. মো. মুজিবুর রহমান। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মেহেরপুর জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা তাজ উদ্দিন খান, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি মাসুদ অরুন, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান, মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবদুল ছালাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনজুর আহমেদ সিদ্দিকী, সিভিল সার্জন ডা. এ. কে. এম. আবু সাঈদ এবং হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শাহরিয়া শায়লা জাহান।
আলোচনা সভায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
দেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত মাদারীপুর জেলা ও এর পৌর শহর। ১৫০ বছর আগে ব্রিটিশ সরকারের আমলে ১৮৭৫ খৃষ্টাব্দে মাদারীপুর পৌরসভাটি গঠিত হয়- যা প্রায় ১১৬ বছর পরে এসে ১৯৯১ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা পায়। সে সময় চেয়ারম্যান ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান খান। ১ম শ্রেণিতে উন্নীত হবার পরে এখানে পরবর্তীতে চেয়ারম্যান পদ বিলুপ্ত করে মেয়র পদ পুনর্বিন্যাস করা হয়। এরপর জেলা আ. লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালিদ হোসেন ইয়াদ পরপর ৩ বার মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ে টানা ১৫ বছর অপ্রতিরোধ্য মেয়র হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার আমলেই সবচেয়ে বেশি পৌরসভার সরকারি খাল-দখল ও নাজুক অবস্থায় চলে যায়। ফলে শহরের ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সংকোচিত হয়ে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েন এ শহরের নাগরিকরা। আর ভোগান্তি থেকে উত্তরণের জন্য যুগের পর যুগ অপেক্ষা করেও অবসান ঘটেনি। আজো উদ্ধার হয়নি দখল হওয়া খালগুলো। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ সরকারি খাল উদ্ধার করা।
এলাকাবাসী বলেন, সাবেক পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদের কাছে পৌর নাগরিকদের সেবার চাইতে তার কাছে মূখ্য হয়ে উঠেছিল আওয়ামী দলীয় ও রাজনীতিকীকরণ। আর এজন্য প্রভাবশালীদের দখলে চলে যেতে থাকে শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট-বড় খালগুলো।
দখলদার প্রভাবশালীদের মধ্যে সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান (বর্তমানে কারা অন্তরীণ) ও তার পরিবারবর্গ প্রথমে তাদের বাসার সম্মুখ দিয়ে বয়ে চলা শকুনী-ইটেরপোল-গোপালপুর খালের অংশ দখল করে পাকা স্থাপনা তৈরি করেন এবং এরপর থেকেই শুরু হয় খাল দখলের মহা-উৎসব। এরমধ্যে আড়িয়ালখাঁ নদী থেকে শুরু করে শহরের মধ্য দিয়ে তৈরী হওয়া ষ্টেডিয়ামের পূর্বপাশ ঘেষে হরিকুমারিয়া-হাজিরহাওলা-রানাদিয়া খাল, শকুনী খাল, ইটেরপোল-ছয়না-গোপালপুর খাল, গৈদী খাল, কলেজ রোড হয়ে আমিরাবাদ খাল, কুলপদ্দি খাল, মহিষেরচর খাল কৌশলে দখল করে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সারাবছরই এসব খালে জোয়ার-ভাটার পানি থাকতো। এসব খালের পানি কৃষকের সেচকার্যে ব্যবহৃত হতো। এসব কারণে কখনোই জলাবদ্ধতা তৈরি হতো না মাদারীপুর শহরে। ওইসব খালে সারাবছরই দেশী মাছ শিকার করত মানুষ। প্রভাবশালীদের দখলের কারণে অস্তিত্ব হারানো এসব খালের মধ্যে দুয়েকটির উপর দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ড্রেন তৈরি হলেও এসব ড্রেনের বেশিরভাগই অকেজো হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী বলছেন, বেশীরভাগ সরকারি খাল আজো উদ্ধার করতে পারেনি পৌরসভা। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব ড্রেনে পানি ও ময়লা-আবর্জনা আটকে যায় এবং জলাবদ্ধতায় সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েন পৌরবাসি।
এদিকে, ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে হত্যা-দুর্নীতির মামলার আসামিসহ অন্যান্য মামলার আসামী হয়ে বাহাউদ্দীন নাসিম দেশের বাইরে পালিয়ে যান ও তার সহোদর সাবেক মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ অজ্ঞাত স্থানে গা-ঢাকা দিয়েছেন। এরপর এখানে মেয়র পদ ও পৌর নাগরিক সেবার শূন্যতা ও বিড়ম্বনার তৈরি হলে পৌর নাগরিকেরা পড়েন বিপাকে। দৈনন্দিন নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হতে থাকে মানুষ। পৌর এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পয়ঃনিষ্কাশন, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার, মশক নিধন, পানি সঞ্চালন, জলাবদ্ধতা ইত্যাদিতে নাজুক অবস্থার তৈরি হয়। এরই প্রেক্ষিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে এখানে পৌর প্রশাসক হিসাবে উক্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হাবিবুল আলমকে পদায়ন করেন। //
পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তার আন্তরিক প্রচেষ্টা, দিনরাত পরিশ্রমের ফলে নাগরিক সেবা বৃদ্ধি পেতে থাকে। সরকারী খাল উদ্ধার, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মশক নিধন, পয়ঃনিষ্কাশন ইত্যাদি প্রসঙ্গে সরাসরি তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, আমরা সরকার সব খালের পাশ থেকে অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি, অনেকে তা সরিয়েও নিয়েছেন, ইটেরপোল-ছয়না-গোপালপুর খালের কিছু অংশে আমরা খনন কাজও চালিয়েছি, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের মশক নিধন টিম প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় ঔষধ ছিটাচ্ছে, যে কারণে মাদারীপুর পৌর এলাকায় এবার ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কম। জলাবদ্ধতা ও ময়লা-আবর্জনা থেকে পৌরবাসিকে রক্ষার জন্য আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা প্রতিদিনই কোনো না কোনো ড্রেণ পরিস্কার করছে, ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে নিচ্ছে। আমরা নিজেরাও রাতদিন তা তদারকি করছি। অপ্রতুল জনবল ও সরকারী অর্থ বরাদ্ধের সীমবদ্ধতা সত্বেও আমরা দিনরাত কাজ করছি। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান আমাদের চলমান রয়েছে এবং এটা আরো গতিশীল করা হবে, যতই প্রভাবশালী হোক না কেনো- দখল হওয়া সরকারী খালগুলো উদ্ধারেও আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে।
আমার ছেলের লাশ ফেরত চাই। আমার বুকের ধনকে আইনা দেন। ওরে ছাড়া আমি কি করে বাঁচব? বুক চাপরে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ইরাক প্রবাসী নিহত আজাদ খান (৪৭) এর অসহায় মা।
নিহত আজাদ খান রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের হোসেন মন্ডল পাড়া গ্রামের ইয়াজ উদ্দিনের ছেলে। মাত্র তিন মাস আগে দালালের মাধ্যমে ইরাক গিয়ে তিনি মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের শিকার হন।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাস আগে আজাদ ধারদেনা করে ইরাক যান। এক সপ্তাহ আগে ইরাকের বাগদাদ শহর থেকে সে নিখোঁজ হয়। এর মধ্যে তার কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে লিটন নামে অপর এক ইরাক প্রবাসী ফোন করে আজাদের পরিবারকে জানান, আজাদকে হত্যা করে ৩ টুকরো করে লাশ বস্তায় ভরে ময়লার ভাগারে ফেলে রাখা হয়। শহরের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ময়লা পরিস্কার করতে এসে লাশের দুর্গন্ধ পায়। এ সময় তারা বস্তার মুখ খুলে দেখে মানুষের লাশ। তখন তারা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ তাদের হেফাজতে নেয়।
আজাদের স্ত্রী ময়না বেগম জানান, স্বামীকে বিদেশ পাঠিয়ে আমাদের পরিবার একদম নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনেক ধারদেনা করে আমার স্বামীকে বাবুলের মাধ্যমে ৩ মাস আগে ইরাকে পাঠাই। তার যে কাজ দেয়ার কথা ছিলো বাবুল তাকে সেই কাজ না দিয়ে অন্য একটি কাজে দেয়। আমার স্বামী বাবুলের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু বাবুল তার কোনো ফোন ধরেনি। বাবুল তার ফোন ধরলে হয়তো আজ আমার স্বামীর এই করুন পরিনতি হতো না। আমি আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই।
এ বিষয়ে ইরাক থেকে মুঠোফোনে বাবু্ল জানান, আমি ওর যেখানে গিয়ে ছিলাম সেখান থেকে কুমিল্লার সোহাগ নামে একটি ছেলে তাকে নিয়ে অন্য জায়গায় একটি দোকানে কাজে দেয়। সেই দোকানের মালিক (কফিল) আজাদকে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কয়েকদিন ধরে বাড়িঘরের ময়লা ও আশপাশ পরিস্কার করায়। এর মধ্যে আমি সোহাগকে ফোন করে আজাদের খবর জানতে চাই। সোহাগ আমাকে জানায়, আজাদ কফিলের বাসায় আছে। আজ শুনতে পাচ্ছি আজাদকে হত্যা করে লাশ তিন টুকরো করে ফেলা হয়েছে। আমরা ইরাকের বাংলাদেশ এম্বাসিতে বিচার দিয়েছি। অ্যাম্বাসির লোকজন সহ আমরা সেখানে যাচ্ছি। আজাদের লাশ বাগদাদের একটি মর্গে রাখা হয়েছে।
নিহত আজাদের শ্যালক জহরুল হক বাপ্পি মুঠোফোনে জানান, আজাদ আমার দুলাভাই (চাচাতো বোন জামাই)। আমি বাংলাদেশ দূতাবাস, ইরাক সচিবের সাথে কথা বলেছি, আজাদ ভাইকে মেরে ফেলে কয়েক টুকরো করা হয়েছে শতভাগ সত্য। মরদেহ ইরাকে মর্গে আছে। আগামী রবিবার আজাদের হত্যাকারী আসামী কফিলকে কাজুমিয়া আদালতে তোলা হবে। তিনি আরও জানান, আজাদ ভাইয়ের লাশ দেশে আনার চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য