করোনা মহামারিতে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের উদ্যোক্তাদের প্রতি নজর দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে একটি ভার্চুয়াল আলোচনায়।
বলা হয়েছে, এই ‘ছোটরাই’ দেশকে সংকট থেকে রক্ষা করেছেন। তাই তাদেরকেই বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
রোববার ইমপ্যাক্ট অব কোভডি-১৯ অন সিএমএসএমইস অ্যান্ড আন্ডারস্ট্যান্ডিং দেয়ার রিকোভারি: অ্যাভিডেন্স ফরম বিএসসিইসি ইন্ডাস্ট্রয়িাল অ্যাস্টেটস’ র্শীষক এক ভার্চুয়াল সেমিনারে যোগ দিয়ে প্যানেলে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক আতিউর রহমান।
ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রিজম প্রকল্পের টেকনিক্যাল অ্যাসিসটেন্স কম্পোনেন্ট যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
দেশে ছোট উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখার তাগিদ দিয়ে আতিউর রহমান বলেন, ‘এই ছোটরাই এক সময় সম্ভাবনাময় হয়ে ওঠবে। এর জন্য বড় শিল্পের সঙ্গে ছোট ও মাঝারি শিল্পের মধ্যে এক সংযোগ-সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। এটা করা গেলে বড়-ছোট উভয়েই লাভবান হবে। যা দেশে টেকসই শিল্পায়ন নিশ্চিত করবে।’
‘ছোটদের’ উৎপাদিত পণ্য সরকারি কেনাকাটায় গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠতে শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য আবারও প্রণোদনা দরকার হবে। চলমান প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার আগেই তা ঘোষণার প্রয়োজন হবে।’
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন প্রিজম টেকনিক্যাল অ্যাসিসটেন্ট প্রকল্পের সিনিয়র এক্সপার্ট ও বিআইডিএস এর গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
আলোচনায় সারাদেশে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) সবকটি শিল্পাঞ্চলকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) আদলে গড়ে তোলার পরামর্শ দেন আতিউর।
সাবেক এই গভর্নর বলেন, সারাদেশে ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে থাকা প্রত্যেকটা বিসিক শিল্পাঞ্চলও হয়ে ওঠতে পারে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (বেজা) মতো। এক্ষেত্রে বেজা যে রকম সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে, একইরকম সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে বিসিক অঞ্চলগুলোকেও অনুরূপভাবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়কেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
আতিউর রহমান বলেন, ‘পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং ব্যবসায়িক ধরন পরিবর্তন করতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না। একই সঙ্গে যুগের সন্ধিক্ষণ হিসেবে ব্যাংকিং কিংবা মার্কেট স্ট্যাট্যাজির স্রোতের সঙ্গেই উদ্যোক্তাদের এগোতে হবে। তবে এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মনীতিও আরও সহজ করা জরুরি।’
ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও হেড অব ডেলিগেশন রেনজি তেরিঙ্ক, বিসিকের চেয়ারম্যান মোশতাক হাসান এনডিসি এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) গোলাম ইয়াহিয়া। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রিজম প্রকল্পের টেকনিক্যল অ্যাসিসটেন্স কম্পোনেন্ট এর টিম লিডর আলী সাবেত।
প্যানেল আলোচক হিসেবে অন্যদের মধ্যে অংশ নেন বিল্ড এর চেয়ারপারসন আবুল কাশেম খান, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি রিজওয়ান রহমান এবং প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী। পুরো অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন ইআরএফ এর সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশেদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে রেনজি তেরিঙ্ক বলেন, করোনার আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ প্রশংসার যোগ্য। তবে করোনা মহামারিতে যারা কর্ম হারিয়েছে, তাদের দ্রুত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সিএমএসএমইখাতের ওপর আরও নজর বাড়াতে হবে। ভবিষ্যতেও ইইউ বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘সরকারের প্রণোদনা বিতরণে নজর থাকতে হবে ছোটদের কেন্দ্র করেই। কারণ এই ছোটরাই পারে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সব রকম সাপোর্ট দিতে।’
তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে উদ্যোক্তার আয়কে ছোট উদ্যোগ দাবি করে বাজেটে এ খাতের ওপর ট্যাক্স আরোপ মোটেও ভালো হয়নি বলে উল্রেখ করেন।
দেশে আবারও বিসিকের জোয়ার আসা দরকার উল্লেখ করে প্রাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘ছোট উদ্যোক্তারাই এক সময় বড় হয়। তাই সরকারকে ছোটদের প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে হবে। সহযোগিতা পেলেই ছোটরা বিকশিত হবে।’
বিল্ডের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান বলেন, ‘জরিপ বলছে, প্রণোদনা, ব্যাংক ঋণ ও বিসিকের সাহায্য ছাড়াই ৮৬ শতাংশ ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান তার ক্ষত পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছে। তাদের এই চেষ্টার সঙ্গে সরকারের সহযোগিতা থাকলে ছোটরা অনেক দূর এগোতে পারবে।
‘তবে এর জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ বিতরণে নিয়োজিত বিভিন্নস্তরের প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষকে আরও তৎপর হওয়া জরুরি। স্বচ্ছতা ও সক্ষমতাও দরকার।’
যারা ঋণ নিয়েছেন তাদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করারও দাবি জানান তিনি। বলেন, ‘নানা কারণে কিছু উদ্যোক্তা ঋণ পরিশোধ ব্যর্থ হতেই পারেন। তাই বলে তাদের যেন কোনো অবস্থাতেই খেলাপি করা না হয়। এটা করা হলে অনেক উদ্যোক্তার সম্ভাবনা ঝরে যাবে।’
বিসিক চেয়ারম্যান মো. মোস্তাক হাসান এনডিসি বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যেও বিসিক শিল্প নগরীগুলো চালু ছিল। এগুলো চালু না থাকলে দেশ একটা বড় সংকটে পড়ে যেত।
‘তবে এটা ঠিক সিএমএসএমই সেক্টর একটা বড় ক্ষতি হয়েছে। তবে এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের যথেষ্ট উদ্যোগ ছিল। এ খাতে প্রণোদনার ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ১৪ হাজার কোটি টাকার ওপরে ইতিমধ্যে ঋণ বিতরণ হয়ে গেছে।’
আলোচকদের এসব বক্তব্য ও পরামর্শের জবাবে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘অর্থনীতিকে শক্তিশালী ও টেকসই উন্নয়নের জন্য কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্প খাতকে সম্প্রসারিত করার বিকল্প নেই। কারণ, বাংলাদেশে সিএমএসএমই শিল্পখাতকেই জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এখাত কর্মসংস্থান, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, নারীর আর্থিক ক্ষমতায়ন ও রপ্তানি আয় বাড়াতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।’
তাই দেশে শিল্পখাতের উন্নয়নে বিশেষ করে ছোট উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিয়ে শিল্প বিপ্লব ঘটাতে রকারের যেখানে যে ধরনের পদক্ষেপ দরকার তারে সব কিছুই করছে সরকার।
মূল প্রবন্ধে ড. মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘করোর প্রকোপে উৎপাদন ও আয় কমে যাওয়ায় ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের (এসএমই) ৪৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করেছে। পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। আংশিক কার্যক্রম চালু রেখেছে ৫১ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ৪৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি কার্যক্রম চালিয়েছে।’
চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ২১৬টি প্রতিষ্ঠানের জরিপ চালিয়ে তিনি এ তথ্য পেয়েছেন। তবে চলতি বছর ডিসেম্বর নাগাদ ক্ষতি কাটিয়ে এদের ৮০ শতাংশই উৎপাদনে ফিরতে পেরেছেন।
আরও পড়ুন:দেশের ক্রমবর্ধমান স্টার্ট-আপ খাতকে অর্থায়ন সুবিধা দিতে ব্র্যাক ব্যাংকের সাথে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই চুক্তির আওতায় স্টার্ট-আপ খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের সৃষ্ট ৫০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল ব্যবহারের সুযোগ পাবে ব্র্যাক ব্যাংক, যা ব্যাংকটির এই খাতে অর্থায়ন সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করবে। এ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো, অর্থায়ন সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে উদীয়মান উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং তাঁদেরকে জাতীয় অর্থনীতিতে আরও বেশি অবদান রাখতে উৎসাহিত করা।
২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড অব এসএমই ব্যাংকিং সৈয়দ আব্দুল মোমেন চুক্তিপত্র হস্তান্তর করেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অংশগ্রহণকারী ২২টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টের সহায়তায় এই উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা হবে।
এই সম্ভাবনাময় খাতের উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক বাংলাদেশের স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই খাতটি ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে এবং বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে টেকসই সম্পর্কও গড়ে তুলছে। ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন সুবিধাটি উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী উদ্যোগ সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন পেতে সহায়তা করবে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
ব্র্যাক ব্যাংকের এমন উদ্যোগ বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় তরুণ উদ্যোগগুলোর বিকাশে ব্যাংকটির ব্যক্ত করা প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। ব্র্যাক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখবে।
ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি.:
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অর্থায়নে অগ্রাধিকার দেয়ার ভিশন নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি. ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করে, যা এখন পর্যন্ত দেশের অন্যতম দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী একটি ব্যাংক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ‘BRACBANK’ প্রতীকে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন হয়। ২৯১টি শাখা ও উপশাখা, ৩৩০টি এটিএম, ৪৪৬টি এসএমই ইউনিট অফিস, ১,১২১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং দশ হাজারেরও বেশি মানুষের বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক কর্পোরেট ও রিটেইল সেগমেন্টেও সার্ভিস দিয়ে আসছে। ব্যাংকটি দৃঢ় ও শক্তিশালী আর্থিক পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে এখন সকল প্রধান প্রধান মাপকাঠিতেই ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষে অবস্থান করছে। বিশ লাখেরও বেশি গ্রাহক নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক বিগত ২৪ বছরেই দেশের সবচেয়ে বৃহৎ জামানতবিহীন এসএমই অর্থায়নকারী ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও নিয়মানুবর্তিতায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।
দেশে বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার খাতে স্মার্ট ও জ্বালানি-সাশ্রয়ী ব্যাটারির ব্যবহার বাড়াতে কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি ও সোলশেয়ার লিমিটেড কৌশলগত অংশীদারিত্বে যুক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিমিয়া সাআদত এবং সোলশেয়ার লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ড. সেবাস্টিয়ান গ্রোহ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটি ব্যাংকের, হেড অব করপোরেট ব্যাংকিং ও হেড অব বিজনেস (ব্রাঞ্চ) ড. মো. আরিফুল ইসলাম; হেড অব এডিসি অ্যান্ড হেড অব এমডি’স কোঅর্ডিনেশন টিম মো. মামুন-উর রহমান; সোলশেয়ার-এর ফাইন্যান্স ডিরেক্টর আনিসা আলী, সিএফএ সহ উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এই অংশীদারিত্বের ফলে দেশের শত শত বৈদ্যুতিক পরিবহনের গ্যারেজ সহজেই স্মার্ট ব্যাটারি প্রযুক্তি গ্রহণে সক্ষম হবে। এখন পর্যন্ত উচ্চ ব্যয়ের কারণে অনেক উদ্যোক্তা ব্যাটারি ব্যবহারে আগ্রহী হলেও অর্থায়নের সীমাবদ্ধতায় তা সম্ভব হচ্ছিল না। কমিউনিটি ব্যাংকের গ্রিন এসএমই ঋণ সুবিধা ও সোলশেয়ার -এর উদ্ভাবনী পে-অ্যাজ-ইউ-গো (পিএওয়াইজি) প্রযুক্তি একত্রে উদ্যোক্তাদের জন্য সাশ্রয়ী, নমনীয় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।
এ উদ্যোগের মাধ্যমে গ্যারেজ মালিকরা টেকসই অর্থায়ন সুবিধা পাবেন, দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে জ্বালানি-সাশ্রয়ী ব্যাটারি ব্যবহার, দেশের বৈদ্যুতিক পরিবহন খাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হবে এবং বাংলাদেশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানির দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
এই উদ্যোগকে দেশের পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও টেকসই পরিবহন ব্যবস্থার জন্য এক মাইলফলক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
যমুনা ব্যাংক পিএলসি. এবং অ্যাপোলো ক্লিনিক লাইসেন্সঃ জেএমআই স্পেশালাইজড হাসপাতাল লিমিটেডের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে রাজধানীর যমুনা ব্যাংক টাওয়ারে এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। যমুনা ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিও নূর মোহাম্মদ এবং অ্যাপোলো জেএমআই স্পেশালাইজড হাসপাতাল লিমিটেডের উপদেষ্টা মসিউর রহমান কামাল উক্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে যমুনা ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিওও মো. আব্দুস সালামসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এই চুক্তির মাধ্যমে যমুনা ব্যাংক তাদের সম্মানিত গ্রাহক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাঁদের পোষ্যদের জন্য বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজলভ্য ও সুফলদায়ক করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করল। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অ্যাপোলো ক্লিনিকের লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জেএমআই স্পেশালাইজড হাসপাতালের সঙ্গে এই অংশীদারিত্ব গ্রাহকদের জন্য বিশেষ সুবিধাসহ উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করবে।
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এর করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত সোমবার কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার হতদরিদ্র কৃষক ও রিকশাচালককে স্ত্রী ও সন্তানের চিকিৎসার জন্য পাঁচ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি।
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির করপোরেট প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ইমতিয়াজ ইউ. আহমেদ হতদরিদ্র কৃষক ও রিকশাচালক মো. মেহেদী হাসানকে ওই অনুদানের চেক প্রদান করেন।
ওই অনুদানের চেক প্রদানকালে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির এসইভিপি ও কোম্পানি সচিব জনাব মো. আবুল বাশার, ব্যাংকের এসএভিপি মো. জাকির হোসেন, ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগ ও ব্যাংক ফাউন্ডেশনের ইনচার্জ কে. এম. হারুনুর রশীদ এবং ব্যাংক ফাউন্ডেশন এর এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. কামাল মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় সীমান্ত ব্যাংকের উদ্যোগে শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) এবং টেকনাফ (কক্সবাজার) উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপনের মাধ্যমে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়। এই কর্মসূচির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা হয় এবং বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করা হয়। শ্যামনগরের ৭টি এবং টেকনাফে ২টি বিদ্যালয়ে গাছের চারা রোপণ করা হয়।
সীমান্ত ব্যাংকের টেকনাফ শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হোসেন এবং শ্যামনগর উপশাখার ব্যবস্থাপক মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম যথাক্রমে টেকনাফ এবং শ্যামনগরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী সমন্বয় করেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এবং শিক্ষার্থীগন স্বতঃস্ফূর্তভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করেন।
বাংলাদেশে প্রতি বছর হাজারো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে যক্ষ্মা (টিবি)। কেবল ২০২৩ সালেই ৪৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে- ফলে প্রতি ১২ মিনিটে একজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন যক্ষ্মায়। এই জাতীয় সংকট মোকাবেলায় সাহসী উদ্যোগ নিয়েছে প্রাইম ব্যাংক পিএলসি। জীবনরক্ষাকারী যক্ষ্মা প্রতিরোধ কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করতে প্রাইম ব্যাংক বিশ্বখ্যাত স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর,বি-এরর সাথে অংশীদারিত্ব করেছে।
আজ (০৯ সেপ্টেম্বর) গুলশানে প্রাইম ব্যাংকের করপোরেট অফিসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এক সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রাইম ব্যাংক এক বছরের জন্য আইসিডিডিআর,বি-এর সিলেট টিবি স্ক্রিনিং অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টার (TBSTC)-এর যক্ষ্মা পরীক্ষার ও চিকিৎসা সেবার ধারাবাহিকতায় আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। প্রাইম ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান ও. রশীদ এবং আইসিডিডিআর,বি-এর নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমীদ আহমেদ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
দেশে যক্ষ্মা প্রতিরোধে দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর,বি ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৫ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে স্ক্রিনিং করেছে। এ সময়ে শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজারের বেশি টিবি রোগী, যার মধ্যে ১৮ হাজার শিশু। পাশাপাশি ৫,৫০০-এরও বেশি ওষুধ-প্রতিরোধী টিবি রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এই সহযোগিতার মাধ্যমে প্রাইম ব্যাংক জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কমিউনিটির কল্যাণে তাদের অঙ্গীকার আরও জোরদার করছে। ব্যাংকটি প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু হ্রাস এবং একটি সুস্থ, সহনশীল বাংলাদেশ গঠনে অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
উপর্যুক্ত বিষয়ের প্রতি সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো।
০২। সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কাস্টমস হাউস/স্টেশনে আমদানিকালে দাখিলকৃত পণ্য ঘোষণায় প্রদত্ত পণ্যের বর্ণনা ও HS Code কায়িক পরীক্ষায় পণ্যের নমুনা কিংবা শুল্কায়ন পরবর্তী সময়ে পণ্যের ঘোষিত বর্ণনা পরিবর্তিত হয়, যা ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স অথবা প্রাপ্যতা শীট বা সংশ্লিষ্ট Utilization Declaration (UD) তে অন্তর্ভূক্ত থাকে না। ফলে শুল্কায়নকালে উহা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে যথাসময়ে কাঁচামাল/পণ্য খালাস না হওয়ায় রপ্তানি আদেশ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য জাহাজীকরণে বিঘ্ন ঘটছে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অবগত হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ও রপ্তানি বাণিজ্যের বৃহত্তর স্বার্থে জরুরি বিবেচনায় নিম্নরূপ নির্দেশনা প্রদান করা হলো:
(ক) বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভূক্ত বর্ণনা ও HS Code অনুযায়ী আমদানিকৃত পণ্যের ঘোষণা দাখিল করার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ভিন্ন HS Code নিরূপণ করলে এবং নিরূপিত HS Code এর প্রথম ৪ ডিজিট বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভূক্ত HS Code এর প্রথম ৪ ডিজিট এর সাথে মিল থাকলে; আমদানিকারক পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে এই নিরূপিত HS Code বন্ড লাইসেন্সে ও ইউডিতে অন্তর্ভূক্ত করবেন মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা সংশ্লিষ্ট কাস্টমস হাউস এর কমিশনার এর নিকট দাখিল করবেন যার বিপরীতে কমিশনার পণ্যচালান খালাসের অনুমতি প্রদান করে সংশ্লিষ্ট বন্ড কমিশনারেটকে অবহিত করবেন।
(খ) বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভূক্ত বর্ণনা ও HS Code অনুযায়ী আমদানিকৃত পণ্যের ঘোষণা দাখিল করার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ভিন্ন বর্ণনা নিরূপণ করলে; আমদানিকারক পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে উক্তরূপ নিরূপিত পণ্যের বর্ণনা বন্ড লাইসেন্সে ও ইউডিতে অন্তর্ভূক্ত করবেন মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা সংশ্লিষ্ট কাস্টমস হাউস এর কমিশনার এর নিকট দাখিল করবেন যার বিপরীতে কমিশনার পণ্যচালান খালাসের অনুমতি প্রদান করে সংশ্লিষ্ট বন্ড কমিশনারেটকে অবহিত করবেন।
গ) বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভূক্ত বর্ণনা ও HS Code অনুযায়ী আমদানিকৃত পণ্যের ঘোষণা দাখিল করার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভিন্ন HS Code নিরূপণ করা হলে এবং বন্ড লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান কাস্টমস বন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে সংশ্লিষ্ট বন্ড কমিশনারেটের মাধ্যমে তার প্রাপ্যতায় উক্ত HS Code অন্তর্ভুক্ত করলে কাস্টমস হাউস এর কমিশনার পণ্যচালান খালাসের অনুমতি প্রদান করবেন এবং পণ্য চালান খালাসের তথ্য সংশ্লিষ্ট বন্ড কমিশনারেটকে অবহিত করবেন।
০৩। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে; এবং বর্তমানে উক্তরূপ কারণে শুল্কায়ন নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষমান পণ্যচালানসমূহের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
মন্তব্য