করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে সংক্রমণ রোধে গত এপ্রিল মাসে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেয় সরকার। পোশাকশিল্পের মালিকদের দাবির মুখে সে সময় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকদের আনা-নেয়ার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষ পরিবহনের ব্যবস্থা করবে– এমন শর্তে কারখানা খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছিল সরকার। কিন্তু সেই শর্ত মানেনি বেশির ভাগ কারখানা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেমের এক গবেষণা জরিপের তথ্য বলছে, মাত্র ৪ শতাংশ শ্রমিক কারখানার পরিবহনব্যবস্থা ব্যবহার করতে পেরেছেন। বাকিরা আগে যেভাবে কর্মস্থলে যেতেন, সেভাবেই গেছেন।
১ হাজার ২৮৫ জন পোশাকশ্রমিকের একটি নির্বাচিত পুল থেকে গত ২৩ এপ্রিল ফোনে এ জরিপ চালানো হয়। এতে অংশগ্রহণকারী তিন-চতুর্থাংশের বেশি উত্তরদাতা নারী শ্রমিক।
রোববার এই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও মাইক্রোফাইন্যান্স অপরচুনিটিজ (এমএফও) যৌথভাবে ধারাবাহিক এই জরিপ পরিচালনা করছে।
জরিপে দেখা যায়, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতে কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর থেকে বাংলাদেশে আরেক দফা লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এই লকডাউনের সময়কাল জাতীয় ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইনের সফলতা ও কোভিডের ভারতীয় ধরনের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে।
দেশব্যাপী লকডাউনের মধ্যেও তৈরি পোশাক খাতের কারখানাগুলোকে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হয়।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, এই সময়ে তাদের বিকল্প ব্যবস্থায় কারখানায় যাতায়াত করতে হয়েছে। মাত্র ৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা কারখানার পরিবহনব্যবস্থা ব্যবহার করেছেন। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, শ্রমিক পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত যানবাহনের ব্যবস্থা করার যথাযথ পদক্ষেপ সব কারখানা নেয়নি।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭৬ শতাংশ শ্রমিক পায়ে হেঁটে, ১০ শতাংশ রিকশায়, ৬ শতাংশ অটোরিকশায়, ২ শতাংশ বাসে এবং ২ শতাংশ সিএনজিতে করে কর্মস্থলে যান বলে জানিয়েছেন।
‘সর্বোপরি ৯২ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন যে তাদের যাতায়াতের মাধ্যমে কোনো পরিবর্তন আসেনি; যা থেকে বোঝা যায় যে, অধিকাংশ শ্রমিক সাধারণত হেঁটে কর্মস্থলে যান।’
কোভিড-১৯ সংকট চলাকালীন বাংলাদেশের পোশাকশ্রমিকদের জীবনে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে, তা ভালোভাবে বোঝার জন্য সানেম ও এমএফও ধারাবাহিক এই জরিপ পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক খাত মহামারি শুরুর পর থেকে নানা ধরনের সংকটের মুখে পড়েছে। এই খাতে কর্মরত শ্রমিকদের জীবনে বিভিন্নভাবে তার প্রভাব পড়েছে।
‘গার্মেন্ট ওয়ার্কার ডায়েরিজ’ নামক প্রকল্পের অধীনে সানেম ও এমএফও ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে বাংলাদেশের মূল পাঁচটি শিল্প এলাকায় (চট্টগ্রাম, ঢাকা শহর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং সাভার) কর্মরত পোশাকশ্রমিকদের কর্মসংস্থান, আয়, খাদ্যনিরাপত্তা, মজুরির আধুনিকীকরণ ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রতি মাসে তথ্য সংগ্রহ করছে।
এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, নিয়মিত ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্যভিত্তিক নীতি গ্রহণ ও বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলোকে শ্রমিকমুখী উদ্যোগ নিতে সহায়তা করা, যা পোশাকশ্রমিকদের জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় এবং তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ওপর কোভিড-১৯-এর প্রভাব আরও ভালোভাবে বুঝতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহায়তার ক্ষেত্রেও এই প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে সানেম জানিয়েছে।
কোভিড-১৯-এর কারণে দেয়া লকডাউন পরিস্থিতি এবং টিকার ব্যাপারে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের সচেতনতা ও মতামতের ওপর জরিপে আলোকপাত করা হয়।
টিকা মাত্র ২ শতাংশের
জরিপে অংশ্রগ্রহণকারী মাত্র ২ শতাংশ শ্রমিক কোভিড-১৯ টিকা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। টিকা প্রদান কর্মসূচির জন্য নির্বাচিত (যোগ্য বা উপযুক্ত) কি না, সেই প্রশ্ন করা হলে ৩৬ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা টিকা কর্মসূচির জন্য নির্বাচিত, অর্থাৎ তারা চাইলে টিকা গ্রহণ করতে পারতেন। ২৮ শতাংশ জানিয়েছেন তারা টিকা কর্মসূচির জন্য নির্বাচিত নন এবং ৩৪ শতাংশ জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তারা কিছু জানেন না।
টিকার জন্য নির্বাচিত এমন ৩৬ শতাংশ উত্তরদাতার মধ্যে ৭৬ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা টিকা নিতে চান। ২৮ শতাংশ উত্তরদাতা টিকা প্রদান কর্মসূচির জন্য জরিপ চলার সময় পর্যন্ত নির্বাচিত ছিলেন না, তাদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ জানিয়েছেন, সুযোগ থাকলে তারা টিকা নেবেন। আর ৩৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা টিকার জন্য নির্বাচিত কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন; তাদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা টিকা নিতে আগ্রহী।
সব মিলিয়ে ৬৯ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, সুযোগ থাকলে তারা টিকা নিতে আগ্রহী এবং ৩১ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা টিকা নিতে চান না।
টিকা নিতে চান না এমন ৩১ শতাংশ উত্তরদাতার মধ্যে ৪৮ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের শরীরে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, অসুস্থ হতে পারেন বা মারা যেতে পারেন, এই আশঙ্কায় তারা ভীত। ২৩ শতাংশ টিকা নেয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা বা উপকারিতা আছে বলে মনে করেন না; ১৭ শতাংশ জানিয়েছেন তারা নিরাপদে থাকার জন্য ধর্মবিশ্বাসের ওপর ভরসা রাখেন; ৩ শতাংশ জানিয়েছেন তারা গর্ভবতী অথবা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা বা অ্যালার্জিতে ভুগছেন; ২ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের স্বামী নিষেধ করেছেন; ১ শতাংশের কিছু কমসংখ্যক উত্তরদাতা জানিয়েছেন তারা বাকি সবার টিকা নেয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন এবং ৭ শতাংশ অন্যান্য কারণে টিকা নিতে চান না বলে জানিয়েছেন।
জরিপের এ তথ্য থেকে বোঝা যায়, কোভিড-১৯-এর টিকাদানের ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য শ্রমিকদের কাছে নেই। টিকা নিতে চান, এমন শ্রমিকদের মধ্যে মাত্র ২২ শতাংশ টিকা নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানেন বলে জানিয়েছেন।
জরিপসংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এই পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক, কারণ কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করা না গেলে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে কর্মরত লাখো শ্রমিকের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে। তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন, রপ্তানি ও সামগ্রিকভাবে পুরো অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কারখানার মালিকপক্ষ, সরকার, নীতিনির্ধারক ও অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলোকে সম্মিলিতভাবে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও জীবনের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’
আরও পড়ুন:অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি অনুমোদন ও গ্রহণ করে ২০১৮ সালের আপিল বিভাগের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে যে আদেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ, সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন সর্ব্বোচ আদালত।
রবিবার (২৯ জুন) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।
এই আদেশের ফলে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে হাইকোর্টে যে রিট শুনানি চলছে, তা নিষ্পত্তি করতে আর কোনো বাধা থাকলো না বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
এর আগে, গত ২৬ জুন নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধির বহুল আলোচিত গেজেট গ্রহণ করে ২০১৮ সালে দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির আপিল বিভাগ যে আদেশ দিয়েছিলেন তার বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদনের রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়।
আদালতে সেদিন রিভিউ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
রিভিউ শুনানির পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, আজ শুনানিকালে বলেছি যে বিচার বিভাগকে ‘অ্যাসল্ট করে’ এই শৃঙ্খলাবিধি গ্রহণ করা হয়েছিল তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে। কারণ, তার আগে নয়জন বিচারপতি এ বিষয়ে ভিন্ন আদেশ দিয়েছিলেন। এটি বিচার বিভাগের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে তৎকালীন সরকার বাধ্য করেছিল নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের গেজেট-সংক্রান্ত আদেশ দিতে। এটি দ্রুত রিভিউ করা প্রয়োজন বলেই আদালতের অনুমতি নিয়ে রিভিউটি করা হয়।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন। ওই রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।
১২ দফা নির্দেশনার মধ্যে ছিল
১. সংবিধানের ১৫২ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় সব বিভাগের কাজ সার্ভিস অব রিপাবলিকের ভেতরে পড়বে। তবে বিচার বিভাগের কাজ ও অবকাঠামোর সঙ্গে প্রজাতন্ত্রের সিভিল সার্ভিসের অনেক ভিন্নতা রয়েছে। বিচার বিভাগকে অন্যান্য সিভিল সার্ভিসের সঙ্গে একত্রিত করা যাবে না।
২. বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করা এবং নির্বাহী বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেটরা বিচারিক কাজ করতে পারবেন না।
৩. সিভিল সার্ভিস অর্ডার ১৯৮০ অনুযায়ী সব ম্যাজিস্ট্রেটকে পিএসসির অধীনে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে একসঙ্গে নিয়োগ দেওয়া হয়। একসঙ্গে নিয়োগ দেওয়া সংবিধান পরিপন্থি।
৪. এই রায় পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন বিধিমালা এবং কমিশন গঠন করতে হবে।
৫. সংবিধানের ১১৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি জুডিশিয়ারির সবার চাকরির বিধিমালা (নিয়োগ, পদায়ন, বদলি পদোন্নতি ও ছুটিসহ অন্যান্য) প্রণয়ন করবেন।
৬. রাষ্ট্রপতি জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-কমিশন বিধিমালা প্রণয়ন করবে।
৭. সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের থাকবে।
৮. বিচার বিভাগ জাতীয় সংসদ বা নির্বাহী বিভাগের অধীনে থাকবে না এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ সব বিচারক স্বাধীনভাবে কাজ করবেন।
৯. জুডিশিয়ারির (নিম্ন আদালত) বার্ষিক বাজেট প্রণয়নের ওপর নির্বাহী বিভাগের কোনো হাত থাকবে না। এই বাজেট সুপ্রিম কোর্ট প্রণয়ন এবং বরাদ্দ করবে।
১০. জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যরা প্রশাসনিক আদালতের আওতাভুক্ত থাকবেন।
১১. এই রায় অনুযায়ী বিচার বিভাগ পৃথককরণের জন্য সংবিধানে কোনো সংশোধন করার প্রয়োজন নেই। তবে পৃথককরণ আরও অর্থবহ করতে যদি সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হয়, তবে তা করা যাবে।
১২. জুডিশিয়াল পে-কমিশন জুডিশিয়ারির সদস্যদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে যতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ না করবে, ততদিন পর্যন্ত বর্তমান অবকাঠামো অনুযায়ী তার সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন।
২০০৫ সালে এই রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
রাজধানীর উত্তরায় ‘মব’ সৃষ্টি করে ‘হোটেল মিলিনা’ নামের একটি আবাসিক হোটেল দখলের চেষ্টা করা হয়। এমন অভিযোগে ৯ জনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১)।
রোববার র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, শনিবার দুপুরে শফিক মোল্লা নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে হোটেল মিলিনিার মালিক আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে পূর্বের ব্যবসায়িক সূত্র ধরে ‘মব’ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। সেসময় ১০টি মোটরসাইকেলে করে কমপক্ষে ২৪ জন জোরপূর্বক হোটেলটি দখল করতে যায়।
এ সময় দূর থেকে ওই ঘটনার কিছু ছবি ধারণ করেন র্যাব-১ এর এক গোয়েন্দা সদস্য। ছবি ধারণের সময় ‘মব’ সৃষ্টিকারীরা র্যাব সদস্যদের ঘেরাও করে এবং ছবি তুলতে বাধা দেয়। এ ঘটনার পর র্যাব-১ এবং উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশের টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ‘মব’ নিয়ন্ত্রণ করে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়া এবং ‘মব’ সৃষ্টির অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে মোট ৯ জনকে আটক করা হয়। তারা হলেন, মো. সাজ্জাদ হোসেন (২৮), মো. শফিক মোল্লা (৩০), মো. আরিফুল ইসলাম (৩০), মো. তন্ময় হোসেন শাওন (২৭), মো. রবিউল ইসলাম (২৫), মো. আনোয়ার হোসেন আশিক (২৭), মো. সাইফুল ইসলাম সাগর (২৭), মো. জালাল খান (৩০) ও মো. আমির (২১)।
আটকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে শিয়ালের কামড়ে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
শনিবার (২৮ জুন) ভোরে হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের ফুলছোঁয়া গ্রামের বেপারীসংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, গ্রামের একটি নির্জন জঙ্গলে মাটির গর্তে ১৫ থেকে ২০টি শিয়ালের একটি বাসা রয়েছে। সেখান থেকে শনিবার ভোরের দিকে দুটি শিয়াল বেরিয়ে এসে পাশের কয়েকটি বাড়িতে ঢুকে কামড়াতে শুরু করে। এতে ১০ জন আহত হন, যাদের মধ্যে দুজনকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
গ্রামবাসীর ধারণা, শিয়াল দুটি ক্ষুধার্ত ছিল বলেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য কালাম বেপারী ও কবির হোসেন মোল্লা ইউএনবিকে জানান, ভোরে লোকজন ঘুম থেকে উঠে বাইরে আসার পর, রাস্তায় থাকা দুটি শিয়াল একত্র হয়ে যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই হঠাৎ করে কামড়ে দিয়েছে। অনেকে হাতে পাওয়া লাঠিসোটা দিয়ে প্রতিহত করে রক্ষা পান।
কালাম বেপারীর দেওয়া তথ্যমতে আহতদের মধ্যে আছেন— বেপারী বাড়ির মৃত গফুর বেপারীর ছেলে বারেক বেপারী (৬০), মহসিনের ছেলে রনি (২০), কালাম বেপারীর ছেলে জসিম বেপারী (৩০), মৃত শাহালমের ছেলে রেহান (২০), রাজ্জাক বেপারীর ছেলে হাছান বেপারী (১৫), পণ্ডিত বাড়ির মিজির ছেলে রুবেল (৪০), মৃত লতিফ বেপারীর ছেলে আবু তাহের (৪০), আবু মিয়ার ছেলে লতিফ, রুহুল আমিনের ছেলে রুবেলসহ আরও কয়েকজন।
আরেক ইউপি সদস্য আবু তাহের বলেন, ‘শিয়ালের কামড়ে বারেক বেপারীর অবস্থা একটু বেশি খারাপ। বন্যপ্রাণী আইন রক্ষা করে কীভাবে শিয়াল প্রতিহত করা যায়, তা নিয়ে আমরা গ্রামবাসী মিলে চিন্তা করছি।’
এ বিষয়ে উপজেলা বন কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘শিয়াল ধরে বনে ছেড়ে দেওয়া আমাদের কাজ। কিন্তু জনবল না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে স্থানীয়রা শিয়াল ধরে দিলে আমরা বনে অবমুক্ত করে দেব।’
হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন জানান, তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে তিনজন মাদকসেবীকে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এ অভিযান পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহ জহুরুল হোসেন। অভিযানে তাকে সহযোগিতা করে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল।
রবিবার (২৯ জুন) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান। তিনি জানান, মাদক সেবনের অপরাধে লস্করপুর এলাকার মাছাদ আহম্মদ (৩০), মাগুরা এলাকার জুলহাস (৩৫) ও জয়পাশা এলাকার শিমুল হোসেন আক্তারকে (৩৫) বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়। পরে মাছাদ ও জুলহাসকে তিনদিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা অর্থদণ্ড এবং শিমুলকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
ফেনীতে ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। সিগন্যাল না মেনে অটোরিকশাটি রেললাইনে উঠে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবার (২৮ জুন) রাতে ফেনী শহরের গোডাউন কোয়ার্টার রেলগেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন— ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের হাফেজুল ইসলাম (৪০) ও তার মা ফাতেমাতুজ্জোহরা (৬৩)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামগামী চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ফেনী রেলস্টেশনের কাছাকাছি পৌঁছালে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা সিগন্যাল অমান্য করে রেললাইনে উঠে পড়ে। এ সময় ট্রেনটি এসে অটোরিকশাটিকে সজোরে ধাক্কা দিলে সেটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে অটোরিকশায় থাকা দুই যাত্রী গুরুতর আহত হন।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রা তাদের ফেনী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাফেজুল ইসলামকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার মাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢামেকে নেওয়ার পথে ফাতেমাতুজ্জোহরাও মারা যান বলে জানান তাদের আত্মীয় মাসুম বিল্লাহ।
প্রত্যক্ষদর্শী দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘অটোরিকশাটি হাসপাতাল থেকে ট্রাংক রোডের দিকে যাচ্ছিল। সিগন্যাল অমান্য করে রেললাইনে উঠলে ট্রেন এসে ধাক্কা দেয়।’
তিনি আরও জানান, অটোরিকশায় চালকসহ পাঁচজন ছিলেন। দুর্ঘটনার মুহূর্তে তিনজন নেমে পড়ায় তারা রক্ষা পান।
ফেনী রেলস্টেশন মাস্টার মো. হারুন জানান, চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ফেনীর প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের আগমুহূর্তে, সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে দুর্ঘটনার পরও রেল চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি।
এ বিষয়ে ফেনী রেলস্টেশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রেলওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন বলেন, ‘নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় লাকসাম জিআরপি থানায় একটি অপমৃত্যু মামলার প্রক্রিয়া চলছে।’
এনবিআর সংস্কার ও চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের 'শাটডাউন' কর্মসূচির কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। গতকালের আন্দোলনে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়ে।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের আহ্বানে কর্মকর্তারা রাজধানীতে 'মার্চ টু এনববিআর' কর্মসূচি পালন করেন। আন্দোলনকারীরা দাবি করেন, বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণ ছাড়া সংস্কার সম্ভব নয়। তবে ১২টি ব্যবসায়ী সংগঠন চেয়ারম্যানের অপসারণের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস ও শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, আগে নিবন্ধন হওয়া জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামা চললেও নতুন জাহাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।
মোংলা, সোনামসজিদ, বেনাপোল ও বাংলাবান্ধা বন্দরেও একই অবস্থা। তবে আখাউড়া বন্দরে কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল বলে জানা গেছে।
কুমিল্লার মুরাদনগরে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ফজর আলীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রবিবার (২৯ জুন) ভোর ৫টার দিকে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ফজর আলী (৩৮) কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামের পুর্বপাড়ার বাসিন্দা।
ঘটনার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন— বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামের অনিক, সুমন, রমজান ও বাবু।
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান তাদের আজ সকালে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দিবাগত রাতে মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামে এই ধর্ষণকাণ্ড ঘটে।
ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা আলোচনার জন্ম দেয়। নেটিজেনরা ব্যাপক সমালোচনা করে দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
এরপর ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের দায়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশ। পরে আজ ভোরে সায়েদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার হন ফজর আলী।
পুলিশ সুপার জানান, ঘটনার পর ভুক্তভোগী নিজে বাদী হয়ে মুরাদনগর থানায় ফজর আলীকে প্রধান আসামি করে একটি ধর্ষণ মামলা করেন করেন। তবে ঘটনাটির ভিডিও ধারণ করে যারা সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে, তাদের মধ্য থেকে আরও চারজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে, এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার জানান, বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে রামচন্দ্রপুর পাঁচকিত্তা গ্রামে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে স্থানীয়দের হাতে আটক হন ফজর আলী। পরে তাকে মারধরও করে বিক্ষুব্ধরা। তবে আহত অবস্থায় তিনি পালিয়ে যান।
ঘটনার পরপরই উপস্থিত কয়েকজন ধর্ষণের শিকার নারীর ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। খবর পেয়ে মুরাদনগর থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়। সেই সময়ই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর মূল আসামিকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত ছিল বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
ভুক্তভোগী নারী ১৫ দিন আগে বাপের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন বলে জানান পুলিশ সুপার।
মন্তব্য