৫০ বছর আগে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। তখনকার সময়ে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী প্রতিবেশী দেশ ছিল পাকিস্তান। আর কেবল যুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে সদ্য জন্ম নেয়া বাংলাদেশ তার স্বাধীন মানচিত্র হাতে পেয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধের সময় লাখ লাখ বাঙালি পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর নৃশংসতা থেকে বাঁচতে তখনকার পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) থেকে আশ্রয় নিয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার আরেকটি সমৃদ্ধ দেশ ভারতে।
পাকিস্তানের মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীনতা-পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলেছিল এটি ধ্বংসের পথে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এ দেশকে তুলনা করেছিলেন তলাবিহীন ঝুড়ির সঙ্গে।
এ সময় প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের সহায়তায় জর্জ হ্যারিসন ও রবি শংকর আয়োজন করেছিলেন কনসার্টের।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে, চলতি মাসে বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বেড়েছে ৯ শতাংশ হারে। এর ফলে দেশটির মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২,২২৭ ইউএস ডলারে।
অন্যদিকে, একসময় অনেক এগিয়ে থাকা পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় চলতি বছর দাঁড়িয়েছে ১,৫৪৩ ইউএস ডলারে।
যুদ্ধের সময়ে পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমানে পাকিস্তান) পূর্ব-পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি ধনী ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি ধনী দেশে পরিণত হয়েছে।
প্রেক্ষাপটের এমন পটপরিবর্তনে, পাকিস্তানের এক অর্থনীতিবিদ সম্প্রতি জানিয়েছেন, হয়তো ২০৩০ সালে বাংলাদেশের কাছে সহায়তা চাইতে হতে পারে পাকিস্তানকে।
মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গে প্রকাশিত মতামতে এমনটি জানিয়েছেন ভারতীয় অর্থনীতিবিদ ও কলামিস্ট মিহির শর্মা।
ভারতের বদ্ধমূল ধারণা ছিল অর্থনৈতিক বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ায় এগিয়ে রয়েছে দেশটি। তবে বর্তমানে এই শক্তিধর ভারতকেও মাথাপিছু আয়ের হিসাবে পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছর ভারতের মাথাপিছু আয় রেকর্ড করা হয়েছে মাত্র ১,৯৪৭ ইউএস ডলার।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২,২২৭ ইউএস ডলার।
তবে এমনটি প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না যে, এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের প্রশংসা করবে ভারত।
ডানপন্থি ভারতীয় রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশকে দরিদ্র দেশ হিসেবে দেখাতে ব্যস্ত। তারা দাবি করেন, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অবৈধ পথে অভিবাসীরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করছে।
কিন্তু বাস্তবতা তাদের দাবির পুরো উল্টো। হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভারতের সীমান্তবর্তী বঞ্চিত রাজ্যগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অনেক এগিয়ে।
রপ্তানিতে বাংলাদেশের অসামান্য সফলতার পেছনে পোশাক খাতের অবদান সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। ছবি: সাইফুল ইসলাম
যুক্তরাজ্যের পিছিয়ে পড়া অঙ্গরাজ্য মিসিসিপিতে ছুটে যাচ্ছেন কানাডার নাগরিকরা। এমন তথ্যের যেমন কোনো বাস্তব সত্যতা নেই, ঠিক তেমনটি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশিরা ছুটে যাচ্ছেন, এমন তথ্যের কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।
আর সম্ভবত এ কারণেই ভারতের জিডিপির ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সেখানকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে ভারতকে ছাড়িয়ে যাবার সংবাদ খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির ধারাবাহিক উন্নতি বাংলাদেশিদের মাঝে এমন আত্মবিশ্বাস অর্জনে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে।
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নতির ধারাবাহিকতা মূলত তিনটি মূল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। এগুলো হচ্ছে রপ্তানি, সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থ ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা।
২০১১ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত প্রতিবছর বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ হারে। যেখানে বিশ্বব্যাপী রপ্তানিতে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। রপ্তানিতে বাংলাদেশের এমন অসামান্য সফলতার পেছনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল পোশাক খাতের।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তবে ভারত ও পাকিস্তানে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। সেখানে নারীর অংশগ্রহণের হার নিচের দিকে নামছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন আরও পরিপক্ব হবে, তখন বিভিন্ন পরিবর্তনশীল অবস্থার সঙ্গে সহজে খাপ খাওয়ার সক্ষমতাও বাড়বে দেশটির। যেমনটি হয়েছে ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে। তখন পোশাক খাতের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের রপ্তানিতে আরও মনোযোগী হতে হবে দেশটিকে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখনই বাংলাদেশ সরকারকে পরবর্তী দশকগুলো সামনে রেখে কৌশলগত ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি কীভাবে আরও সহজে বিশ্বায়নের সঙ্গে মিশে গিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখা যায় তার উপায় বের করতে হবে।
বিশেষ সুবিধা জিএসপির মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার আগে থেকেই উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সই করা শুরু করতে হবে বাংলাদেশকে।
দেশটির ১৬ কোটির বেশি মানুষ উর্বর একটি ব-দ্বীপে বসবাস করছে, যেখানকার জনসংখ্যার ঘনত্ব ভ্যাটিকান সিটির চেয়েও বেশি। ধারাবাহিক উন্নতির ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ অবশ্যই হয়ে উঠবে দক্ষিণ এশিয়ায় অদম্য এক শক্তি আর জ্বলজ্বলে নক্ষত্রে।
আরও পড়ুন:আজ ৭ জুন শনিবার সারা দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। আমাদের দেশে এটি কোরবানির ঈদ নামেও পরিচিত। ঈদুল আজহা মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। যুগ যুগ ধরে এই ঈদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর হয়ে আসছে। আজ সকালে মুসল্লিরা কাছাকাছি ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। খতিব নামাজের খুতবায় তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই একত্রে নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
দেশবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্ব। পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তারা।
ঈদের নামাজের জন্য প্রস্তুত জাতীয় ঈদগাহ ময়দান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সেখানে ঈদের জামাতে নামাজ পড়বেন। সে জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যে।
এদিকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষ্যে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে। ঈদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও শিশু সদনে উন্নত বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে।
ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। ঈদুল আজহার সঙ্গে পবিত্র হজের সম্পর্ক রয়েছে। মক্কার অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায় হজ পালন করেছেন।
স্থানীয় হিজরি মাস গণনা অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজিরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্য কার্যাদি সম্পাদন করেছেন। সৌদি আরবের সঙ্গে মিলিয়ে পৃথিবীর বহু দেশ গতকাল ঈদুল আজহা উদযাপন করেছে।
ঈদুল আজহা হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইলের (আ.) সঙ্গে সম্পর্কিত। হযরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে এই আদেশ ছিল হযরত ইব্রাহিমের জন্য পরীক্ষা। তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইসলামে বর্ণিত আছে, নিজের চোখ বেঁধে পুত্র ইসমাইলকে ভেবে যখন জবাই সম্পন্ন করেন তখন চোখ খুলে দেখেন ইসমাইলের পরিবর্তে পশু কোরবানি হয়েছে, যা এসেছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে।
সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতিধারণ করেই হযরত ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামি শরিয়তে। সেই মোতাবেক প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
এদিকে ঈদুল আজহার ছুটি গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) থেকে শুরু হয়েছে। ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০ দিন ছুটি কাটাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
এর আগে গত ৬ মে সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নির্বাহী আদেশে ১১ ও ১২ জুন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া ঈদের আগে দুই শনিবার অফিস চালু রাখারও সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে অনুযায়ী দুই শনিবার (১৭ ও ২৪ মে) অফিস খোলা ছিল। নির্বাহী আদেশে দু’দিন ছুটির ফলে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে সবমিলিয়ে টানা ১০ দিনের ছুটিতে আছেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
সংবাদ মাধ্যমেও ঈদ উপলক্ষে পাঁচ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
ঈদুল আজহার যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। ঈদের ছুটিতে দেশের সব সিএনজি এবং ফিলিং স্টেশন খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যাত্রী হয়রানিসহ যে কোন ভোগান্তির খবর পেলেই সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধের যেকোনো একদিন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দেন তিনি।
ভাষণের শুরুতে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী, বয়স্ক, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাইকে সালাম জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি সবাইকে হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত দেশ গড়ার আহ্বান জানান।
পরে নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি জানি, আগামী জাতীয় নির্বাচন কখন হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানার জন্য রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে বিপুল আগ্রহ রয়েছে। আমি বারবার বলেছি, এই নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ের মধ্যে দেশে নির্বাচন উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যা যা করা দরকার, সরকার তাই করছে।
তিনি বলেন, এখানে মনে রাখা জরুরি, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে যতবার গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে তার সবগুলোরই প্রধান কারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বারবার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মধ্য দিয়ে একটি রাজনৈতিক দল বর্বর ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিল। এই ধরনের নির্বাচন যারা আয়োজন করে তারা জাতির কাছে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায়। এমন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে দল ক্ষমতায় আসে তারাও জনগণের কাছে ঘৃণিত হয়ে থাকে।
‘এ সরকারের একটি বড় দায়িত্ব হলো একটি পরিচ্ছন্ন, উৎসবমুখর, শান্তিপূর্ণ, বিপুলভাবে অংশগ্রহণের পরিবেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করা যাতে করে দেশ ভবিষ্যতে নতুন সংকটে না পড়ে। এজন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। যেই প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সেগুলোতে যদি সুশাসন নিশ্চিত করা না যায় তাহলে ছাত্র-জনতার সকল আত্মত্যাগ বিফলে যাবে।’
‘সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম। সে বিবেচনায় আগামী রোজার ঈদের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য জায়গায় পৌঁছাতে পারব বলে বিশ্বাস করি। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার—যা কিনা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি আমাদের সম্মিলিত দায়—সে বিষয়ে আমরা দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পারব। এতে আমাদের ওপর আপনাদের অর্পিত ম্যান্ডেট ন্যূনতম হলেও বাস্তবায়ন করে যেতে পারব। সে বিবেচনায় ও ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য সকল পক্ষের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। পাশাপাশি, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে আপনাদের কাছে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রদান করবে।’
তিনি বলেন, আমরা এমন নির্বাচন চাই যা দেখে অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মা তৃপ্তি পাবে, তাদের আত্মা শান্তি পাবে। আমরা চাই আগামী নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোটার, সবচেয়ে বেশি প্রার্থী ও দল অংশ নিক। এটা সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে জাতির কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকুক।
বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আজ শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক বার্তায় তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ এবং সারা বিশ্বের মুসলমানদের প্রতি আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানাই। আমি তাদের সুখ-সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করি। ঈদ মোবারক।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ঈদুল আজহা সবার জীবনে শান্তি, আনন্দ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। তিনি লেখেন, ‘এই উৎসব যেন সমাজে ঐক্য ও সম্প্রীতি জাগিয়ে তোলে। আমি এই বিষয়ে মহান আল্লাহর রহমত কামনা করি।’
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনেকের পক্ষেই এবারের ঈদ পুরোপুরি উপভোগ করা কঠিন হয়ে পড়বে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘লাগামহীন মূল্যস্ফীতি, খাদ্যদ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের তীব্র সংকট সাধারণ মানুষের জীবনকে গভীর দুর্ভোগে ফেলেছে। “সীমিত আয়ের মানুষ টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে।’
তিনি ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ভাগ করে নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘ঈদের দিনে নিশ্চিত করতে হবে যেন কেউ না খেয়ে না থাকে। ঈদের আনন্দ হোক সমষ্টিগত, যেন সবাই একই কাতারে আসতে পারে।’
ঈদুল আজহার ত্যাগের আদর্শ তুলে ধরে বিএনপি নেতা বলেন, ‘ঈদুল আজহা ত্যাগের উৎসব। এর মূল শিক্ষা হলো আত্মোৎসর্গ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে—আল্লাহর কাছে পশুর মাংস বা রক্ত পৌঁছায় না, পৌঁছে কেবল তোমাদের অন্তরের তাকওয়া।’
তিনি বলেন, মানুষ আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের আশায় পশু কোরবানি করে। ‘পবিত্র ঈদুল আজহা প্রতি বছর ফিরে আসে আত্মশুদ্ধি, আত্মতৃপ্তি ও আত্মত্যাগের মহাসন্দেশ নিয়ে।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সামাজিক বৈষম্য এবং অর্থনৈতিক সংকটের মাঝেও দেশের মুসলিম জনগণের হৃদয়ে ঈদের অফুরন্ত আনন্দ ও উদ্দীপনা বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ দেড় দশক ধরে এক কঠিন ফ্যাসিবাদী সময় পার করেছে।’
তিনি বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট চক্রের পতনের পর এবার ঈদুল আজহা কিছুটা স্বস্তির পরিবেশে উদযাপিত হচ্ছে।’
তারেক রহমান জনগণকে সমাজ গঠনে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘শান্তি, ঐক্য, সম্প্রীতি ও উচ্চ নৈতিকতার ভিত্তিতে নতুন করে সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। যাতে করে চরম বৈষম্য দূর হয় এবং দুনীতি, লুটপাট ও অর্থপাচারের মতো অপরাধ আর কোনোদিন না ঘটে।’
উল্লেখ্য, ২০০৮ সাল থেকে তারেক রহমান তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান এবং কন্যা ব্যারিস্টার জায়মা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে বসবাস করছেন।
কোরবানিঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে শসা ও কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে। শসার দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আর কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা। তবে ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা কমেছে। এছাড়া বেশিরভাগ সবজি ও মুরগির দাম অপরিবর্তত রয়েছে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বিক্রেতারা শসা বিক্রি করছেন ৬০ থেকে ৯০ টাকা প্রতি কেজি। দুদিন আগেও ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে শসা। এছাড়া কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ আজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। তবে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা ডজন বিক্রি হওয়া ডিমের দাম কমে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা হয়েছে আজ।
‘কোরবানির ঈদের সময় শসার চাহিদা বেশি থাকে, তাই দামও বেড়ে যায়। এবারও তাই হয়েছে। আড়তে গিয়ে তো আমরা শসা খুঁজেই পাচ্ছিলাম না’— শসার দাম বাড়ার কারণ হিসেবে রামপুরার এক ব্যবসায়ী এমন মন্তব্য করেন।
রামপুরার ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দুদিন আগেও আমরা শসার কেজি ৪০ টাকা বিক্রি করেছি। আজ আড়তেই দেশি শসার কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। হাইব্রিড শসার দাম একটু কম আছে। ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি কিনে তো আর ৯০ টাকার নিচে বিক্রি করা যায় না। তাই ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।’
একই বাজারের ব্যবসায়ী মো. মিলন বলেন, ‘কোরবানির ঈদের সময় সব বাড়িতেই মাংস রান্না হয়। মাংসের সঙ্গে সালাদ সবার প্রিয়। তাই কোরবানির ঈদের সময় কাঁচা মরিচ, শসা, লেবু ও টমেটোর চাহিদা বেশি থাকে। চাহিদা বেশি থাকায় এসব পণ্যের দাম বেড়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘বাজারে লেবু ও টমেটোর সরবরাহ ভালো। তাই এ দুটি পণ্যের দাম বাড়েনি। তবে কাঁচা মরিচ ও শসার সরবরাহ কম। তাই দামও বেড়েছে। গতকাল শসার কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি করেছি, আজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা কাঁচা মরিচ আজ ১২০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ, আমাদেরই কিনতে হয়েছে অনেক বেশি দামে।’
খিলগাঁওয়ে শসা কিনতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত মঙ্গলবার শসা কিনেছি ৪০ টাকা কেজি দরে, আজ এক লাফে ৯০ টাকা হয়ে গেছে। হুট করে এভাবে দাম বাড়া ঠিক না। যারা বাজার তদারকির দায়িত্বে আছেন তাদের বিষয়টা দেখা উচিত।’
এদিকে দুদিন আগে ১৩০ টাকা ডজন ডিম বিক্রি হলেও আজ ১২০ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও আলু, রসুন, পেঁয়াজ, আদা আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে দুদিনে ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা কমেছে। ডিমের চাহিদা কম থকায় এই দাম কমেছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ডিমের দাম আরও একটু কমতে পারে। কারণ শনিবার কোরবানি হওয়ার পর সবার ঘরে ঘরেই মাংস থাকবে। দুই-তিনদিন মানুষ মাংস খাবে বেশি। এ সময় অন্য খাবারের চাহিদা কম থাকবে। তবে ঈদের দুই-তিনদিন পর ডিম এবং কাঁচা সবজির দাম বেড়ে যেতে পারে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। পটল, চিচিঙ্গা ও ঝিঙা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। কাঁকরোল, বরবটি, কচুর লতি, করলা, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। এছাড়া পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মুসলিম জনগোষ্ঠীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আগামীকাল শনিবার ‘পবিত্র ঈদুল আজহা’ উপলক্ষ্যে দেয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মুসলিম জনগোষ্ঠীকে জানাই শুভেচ্ছা এবং ঈদ মোবারক।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও চরম ত্যাগের অনুপম নিদর্শন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রিয় সন্তান হযরত ইসমাইল (আঃ)-কে কোরবানি করতে উদ্যত হন। এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সারা বিশ্বের মুসলমানগণ ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ ও আত্মদানের এই সুমহান দৃষ্টান্ত কেয়ামত পর্যন্ত বিশ্ববাসীর কাছে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘ঈদুল আজহা মানুষকে শান্তি, ত্যাগ ও সাম্য শেখায়। মুসলমানগণ কোরবানিকৃত পশুর গোস্ত গরিব আত্মীয়স্বজন ও দুঃস্থদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে সবাইকে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেন। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ত্যাগ, আত্মশুদ্ধি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি ছড়িয়ে পড়ুক-এই হোক ঈদের চাওয়া।’
পবিত্র ঈদুল আজহার ত্যাগের শিক্ষা নিজেদের ভেতর ধারণ করার আহবান জানিয়ে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আসুন জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলি।’
ঈদুল আজহার এ দিনে প্রধান উপদেষ্টা মহান আল্লাহর কাছে বাংলাদেশের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও উন্নতি প্রার্থনা করেন।
চোখের চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ড থেকে আজ শুক্রবার রাতে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি ব্যাংককের রুটনিন আই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী মির্জা ফখরুলের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান শুক্রবার দুপুরে বাসস’কে জানান, দলের মহাসচিব রাতে দেশে ফিরবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘রাত ১১টায় ব্যাংকক থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন মির্জা ফখরুল। তাকে বহনকারী ফ্লাইটটি রাত ১টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
এর আগে, চোখের জটিলতাসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে গত ১৩ মে রাত ২টা ৪৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন মির্জা ফখরুল। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম।
গত কয়েকদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবারও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কিছু স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। তবে আগের দিনের চেয়ে বৃষ্টি কিছুটা কমে আসে গতকাল। আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আজহা। সেই দিন আবহাওয়া কেমন থাকবে, এমন প্রশ্ন অনেকের। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানাচ্ছে, ঈদের দিন দেশের অন্তত তিন বিভাগের কিছু স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। বাকি বিভাগগুলো একেবারে বৃষ্টিহীন না–ও হতে পারে। তবে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টির তেমন সম্ভাবনা নেই।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মৌসুমি বায়ু এখন সক্রিয়। তবে এর প্রভাব কমে এসেছে। শুক্রবার (আজ), শনিবার ঈদের দিন এবং তার পরের দিন বৃষ্টি অপেক্ষাকৃত কমে আসতে পারে।
চলতি জুন মাসের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি চলছে। আসলে গত মে মাসের শেষের দিক থেকেই এ বৃষ্টির শুরু। শেষ সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে দেখা দেয় গভীর নিম্নচাপ। এর প্রভাবে দেশজুড়ে বৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে ২৪ মে দেশে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ ঘটে। নির্ধারিত সময়ের অন্তত এক সপ্তাহ আগেই এবার আগমন ঘটে দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি ঝরানো এ বায়ুর। এর পর থেকে বৃষ্টি কমবেশি চলছে। তবে আজ শুক্রবার থেকে বৃষ্টি কমে আসতে পারে বলে আবহাওয়াবিদেরা বলছেন।
বজলুর রশীদ বলেন, ঈদের দিনও অপেক্ষাকৃত শুকনো থাকবে। তবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। তবে এর পরিমাণ খুব বেশি হবে না। রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা অনেকটাই কম। রাজধানীসহ ঢাকা বিভাগে সামান্য কিছু স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। রাজধানীতে বৃষ্টি হলেও এক পশলা হতে পারে।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে নারায়ণগঞ্জে—২৭ মিলিমিটার। আগের দিন দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি ছিল ৫৫ মিলিমিটার। এটা হয়েছিল কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। গতকাল রাজধানীতে এক মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
থেমে থেমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা কিন্তু খুব কমছে না। বরং ভ্যাপসা গরম পড়ছে বৃষ্টির পরপরই। বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় এমন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ঈদের দিনও গরম ও ভ্যাপসা ভাবটা থাকতে পারে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। তবে ঈদের পর সোমবার থেকে বৃষ্টি বাড়তে পারে।
মন্তব্য