প্রথমে বিমা, পরে ব্যাংক, এরপর বস্ত্র, আর সবশেষ মিউচ্যুয়াল ফান্ড।
পুঁজিবাজারে এপ্রিল থেকে উত্থানে একটি প্রবণতা লক্ষণীয়, সেটি হচ্ছে যেদিন যে খাত বাড়ছে, সেদিন সেই খাতের সব কোম্পানির দামই বাড়ছে।
রোববার বাজারে মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে নানা খাতে। একই খাতের কিছু শেয়ারের দাম বেড়েছে, কিছু কমেছে। তবে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের চিত্র অন্য রকম। এই খাতের একটির লেনদেন হয়নি। বাকি ৩৬টির সব কটির দামই বেড়েছে।
সর্বাধিক দর বৃদ্ধি পাওয়া ২০টি কোম্পানির মধ্যে চারটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড। আর ৩০টির মধ্যে আটটি।
জুন ক্লোজিং মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর দাম গত এক মাসে ১২ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
এক দশক ধরে অবহেলায় পড়ে থাকা এই ফান্ডে আগ্রহ একবার দেখা গেছে গত বছরের শেষে। তবে বছরের শুরুতে আবার দেখা দেয় মন্দাভাব। তবে এপ্রিলের শুরু থেকে আবার দেখা যায় চাঙাভাব।
যে ৩৭টি তালিকাভুক্ত ফান্ড আছে, তার মধ্যে সিংহভাগই জুন ক্লোজিং। আর এক মাস পরেই তাদের হিসাব বর্ষ শেষ হয়ে যাবে। আর এরই মধ্যে তৃতীয় প্রান্তিকের আয় ঘোষণা করেছে। এই হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, হাতে গোনা এক-দুইটা ছাড়া সব কটির আয় বেশ আকর্ষণীয়।
তিনটি প্রান্তিকের মধ্যে তৃতীয় প্রান্তিকে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বাজারে মন্দাভাব দেখা দিলেও মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর একটি বড় অংশ মুনাফা করতে পেরেছে। আগের দুই প্রান্তিকের মুনাফা ছিল গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বাজারে ছন্দপতন ঘটে। এই প্রান্তিকে সূচক পড়ে ৩৪০ পয়েন্ট। তবে এই প্রান্তিকে ৩৭টি ফান্ডের মধ্যে মুনাফা করেছে ২৭টি। বাকি ১০টির মধ্যে দুটি ফান্ড বড় অঙ্কের লোকসান দিয়েছে। আর আটটি ফান্ড ইউনিটপ্রতি ১ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১৪ পয়সা লোকসান করে।
তবে আগের দুই প্রান্তিকে বিপুল পরিমাণ মুনাফার কারণে তৃতীয় প্রান্তিক শেষে বেশ ভালো অঙ্কের আয় করায় এবার লোভনীয় লভ্যাংশের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
লভ্যাংশের ক্ষেত্রে আশা দেখাচ্ছে এপ্রিল থেকে বাজারে দেখা দেয়া চাঙাভাব। গত ১১ এপ্রিল থেকে ৩০ মে পর্যন্ত পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে ৭৩৮ পয়েন্ট। বাড়ছে ব্যাংকের শেয়ারের দরও।
ফলে এটা ধরাই যায় যে, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ফান্ডগুলো বেশ ভালো মুনাফা করেছে। ফলে বাকি এক মাসে বাজারে বড় পতন না হলে জুন ক্লোজিংয়ে ভালো লভ্যাংশ দেবে, এটা ধরা যায়।
এর আগে গত বছরের ২ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুঁজিবাজারে সূচক বাড়ে ৯৭৭ পয়েন্ট। সে সময় বেশির ভাগ ফান্ড ইউনিটপ্রতি ১ টাকার বেশি মুনাফা করে। কারও কারও মুনাফা দেড় টাকা, এমনকি কোনোটির দুই টাকার বেশি ছিল।
পুঁজিবাজারে ৩৭টির মধ্যে জুনে অর্থবছর গণনা করে লভ্যাংশ ঘোষণা করে- এমন ফান্ডের সংখ্যা ৩০টি। এর মধ্যে ২৮টি ফান্ডই মুনাফায় আছে। দুটি লোকসানে।
ফলে গত ১০ বছরে ভালো লভ্যাংশ দিতে না পারা ফান্ডগুলো এবার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের।
অন্য শেয়ারের সঙ্গে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ বিতরণের ক্ষেত্রে নীতিমালায় পার্থক্য আছে। যেকোনো শেয়ার যতই আয় করুক, তার কত অংশ বিনিয়োগকারীদের মুনাফা হিসেবে দিতে হবে, তার কোনো আইন নেই। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। বার্ষিক সাধারণ সভায় বিনিয়োগকারীদের মতামত দেয়ার সুযোগ থাকে। যদিও তাদের মতামতে লভ্যাংশ পাল্টেছে, এমন ঘটনা বিরল।
অন্যদিকে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুযায়ী যত আয় হবে, তার ৭০ শতাংশ লভ্যাংশ হিসেবে দিতে হবে। মাঝে লভ্যাংশ হিসেবে নগদ অর্থের পাশাপাশি রিইনভেস্টমেন্ট হিসেবে ইউনিট দেয়ার সুযোগ থাকলেও পরে তা বাতিল করা হয়েছে।
এর মধ্যে ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক ব্যালান্সড ফান্ড আয়ের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বিশেষ অনুমতি নিয়ে। এই ফান্ডটি গত বছর ব্যাপক লোকসান করেছিল এবং তাদের সেই লোকসানের সঞ্চিতি সংরক্ষণ করা হয়েছে গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের আয়ে। এতে ফান্ডের মৌলভিত্তি শক্তিশালী হয়েছে বলে মনে করে বিএসইসি।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) মিউচ্যুয়াল ফান্ডের প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছে। এরই অংশ হিসাবে বিদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের স্পন্সর হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যেন মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো ইউনিটধারীদের তাদের আয় অনুযায়ী লভ্যাংশ প্রদান করে, সেদিকেও নজর রেখেছে বিএসইসি।
কেন এমন আগ্রহ
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড যারা পরিচালনা করেন তারা পুঁজিবাজারের সবচেয়ে দক্ষ। ফলে এ খাতের বিনিয়োগ খবুই কম ঝুঁকিপূর্ণ।
তাহলে কেন বিনিয়োগকারীরা মিউচ্যুয়াল ফান্ডে আগ্রহী হন না প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখন বিনিয়োগকারীরা ডে ট্রেডিং করতে পছন্দ করে। কিন্তু মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে ডে ট্রেডিংয়ে মুনাফা পাওয়া সম্ভব নয়। আর মুনাফা না পাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা এ খাতের আগ্রহী হন না।’
এমটিবি ক্যাপিটাল লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী খায়রুল বাশার মোহাম্মদ আবু তাহের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর দর বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে এখন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই খাতের বিষয়ে আন্তরিক। তারা সময় সময় এসব ফান্ডের বিষয়ে খোঁজখবর রাখছে। আগামী বাজেটেও মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।’
মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়ে প্রত্যাশা
গত ৩ মে বিদেশি কোম্পানিকে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের স্পন্সর হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এতে পুঁজিবাজারে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে, এমন প্রত্যাশা থেকে এ সুযোগ দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া শনিবার এক অনলাইন ডায়ালগে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল-ইসলাম বলেন, ‘মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে জনপ্রিয় করতে আমরা অনেক কাজ করছি। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের যে সিলিং আছে, সেটি বৃদ্ধি করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ইনকামকে ট্যাক্স ইনসেনটিভ করার অনুরোধ করেছি। জানি না এখানে কী হবে। তবে আমরা আশাবাদী।’
জুনে ব্যাপক মুনাফার ইঙ্গিত দিচ্ছে যেগুলো
ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৬৬ পয়সা।
গত এক মাসে ৫ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৮০ পয়সা।
এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৮২ পয়সা।
গত এক মাসে ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৯০ পয়সা।
৯ মাসে এশিয়ান টাইগার মিউচ্যুয়াল ফান্ডের আয় দাঁড়িয়েছে ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৩৯ পয়সা।
গত এক মাসে ৯ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৯০ পয়সা।
সিএপিএম বিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ানের ৯ মাস শেষে ইউনিটপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ২০ পয়সা।
গত এক মাসে ৮ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৭০ পয়সা।
সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামিক মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৯ মাসে ইউনিটপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ১৯ পয়সা।
গত এক মাসে ২১ টাকা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ২৩ টাকা ৫০ পয়সা।
ইবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৯ মাসে ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৭১ পয়সা।
গত এক মাসে ৬ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ৯০ পয়সা।
ইবিএল এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড ছয় ৯ মাসে ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৮৩ পয়সা।
গত এক মাসে ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৮০ পয়সা।
এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৭০ পয়সা।
গত এক মাসে ৫ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৭ টাকা।
এফবিএফআইএফ ইনকাম ফান্ড তৃতীয় প্রান্তিকে ১ পয়সা লোকসান করেও ৯ মাস শেষে ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৭৫ পয়সা।
গত এক মাসে ৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ২০ পয়সা।
গ্রামীণ ওয়ান স্কিম টু মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৯ মাসে ইউনিটপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ৫১ পয়সা।
গত এক মাসে ১৬ টাকা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ৯০ পয়সা।
আইসিবি এএমসিএল থার্ড এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৯ মাসে ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ২৫ পয়সা।
গত এক মাসে ৫ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৮০ পয়সা।
আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট অগ্রণী ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৯ মাসে ইউনিটপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ৩০ পয়সা।
গত এক মাসে ৭ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা।
আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড সব মিলিয়ে ৯ মাসে ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ৩১ পয়সা।
গত এক মাসে ৮ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ৬০ পয়সা।
আইসিবি এমপ্লয়ি প্রভিডেন্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড-১ নয় মাসে ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ৩০ পয়সা।
গত এক মাসে ৬ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ৭০ পয়সা।
আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড তিন প্রান্তিকে ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ৪১ পয়সা।
গত এক মাসে ৮ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ৯০ পয়সা।
আইএফআইসি ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ৯ মাসে ইউনিটপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৭৬ পয়সা।
গত এক মাসে ৫ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৮০ পয়সা।
আইএফআইএল ইসলামী মিউচ্যুয়াল ফান্ড এই সময়ে ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ১১ পয়সা।
গত এক মাসে ৬ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৮০ পয়সা।
এনএলআই ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড তিন প্রান্তিকে ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ২ টাকা ৯৬ পয়সা।
গত এক মাসে ১৩ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা ৩০ পয়সা।
ফিনিক্স ফিনান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৯ মাসে ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ২৮ পয়সা।
গত এক মাসে ৭ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ৯০ পয়সা।
পিএইচপি ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৯ মাসে ইউনিটপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ১৭ পয়সা।
গত এক মাসে ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৭০ পয়সায়।
পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ইউনিটপ্রতি ৯ মাসে আয় ১ টাকা ৪৪ পয়সা।
গত এক মাসে ৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ২০ পয়সা।
প্রাইম ব্যাংক ফার্স্ট আইসিবি এএমসিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিটপ্রতি সব মিলিয়ে আয় করেছে ৪১ পয়সা।
গত এক মাসে ৬ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ৮০ পয়সায়।
রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৯ মাসে ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ২ টাকা ৬৯ পয়সা।
গত এক মাসে ১১ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৯০ টাকায়।
সাউথইস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড তিন প্রান্তিকে ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ২ টাকা ৫৮ পয়সা।
গত এক মাসে ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা।
এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ড তিন প্রান্তিক শেষে আয় করেছে ১ টাকা ৫৮ পয়সা।
গত এক মাসে ৭ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ১০ পয়সায়।
এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়াহ ফান্ড ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৮১ পয়সা।
গত এক মাসে ১০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ১০ পয়সায়।
এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ফান্ডে ইউনিটপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ১৪ পয়সা।
গত এক মাসে ৮ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ২০ পয়সায়।
ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৯ মাসে ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৮৩ পয়সা।
গত এক মাসে ৫ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৯০ পয়সা।
লোকসানে দুটি
জুনে অর্থবছর শেষ হয়, এমন দুটি ফান্ড ৯ মাসে মাসে প্রায় দেড় হাজার পয়েন্ট সূচক বাড়ার পরেও লোকসানে আছে।
এর মধ্যে গ্রিন ডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ডে প্রথম তিন প্রান্তিকে ইউনিটপ্রতি লোকসান করেছে ১ টাকা ২ পয়সা।
গত এক মাসে ৭ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ২০ পয়সা।
ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল তিন প্রান্তিকে ইউনিটপ্রতি লোকসান দিয়েছে ইউনিটপ্রতি ৯৯ পয়সা।
গত এক মাসে ৬ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে রোববার ফান্ডটির লেনদেন শেষে ইউনিটপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ৮০ পয়সা।
চলতি বছর আকর্ষণীয় লভ্যাংশ
এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি ইউনিটধারীদের ৩১ মার্চ ২০২১ সময়ের জন্য ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ নগদ বা ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৪৫ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এ সময়ে ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৮৩ পয়সা।
আগের বছর ইউনিটপ্রতি ৬২ পয়সা লোকসানের কারণে কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি ফান্ডটি।
এমবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি বোর্ড ইউনিটধারীদের ৩১ মার্চ ২০২১ সময়ের জন্য ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ বা ১ টাকা ১৫ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি আয় (ইপিইউ) হয়েছে ১ টাকা ৯৫ পয়সা।
আগের বছর ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি লোকসান দিয়েছিল ৯৭ পয়সা। ইউনিটধারীরা তখন কোনো লভ্যাংশ পায়নি।
এর আগে লভ্যাংশ ঘোষণা করা ভ্যানগার্ড এএমসিএল রূপালী ব্যাংক ব্যালেন্স ফান্ড গত ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরে মুনাফা করেছে ১ টাকা ৬৮ পয়সা। এর বিপরীতে ইউনিটপ্রতি ১৬ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। তবে নিয়মানুযায়ী আয়ের ৭০ শতাংশ বা ১ টাকা ১৭ পয়সা লভ্যাংশ আকারে দেয়ার কথা।
কম হারে লভ্যাংশ ঘোষণার অনুমতি অবশ্য বিএসইসি দিয়েছে। কারণ হিসেবে আগের বছর শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৮০ পয়সা লোকসান দেয়ার কথা জানানো হয়েছে। এবারের আয়ে আগের বছরের লোকসানের সমন্বয় করা হয়েছ।
৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবরের হিসাব পর্যালোচনা করে এনসিসি ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান ইউনিটপ্রতি ৭২ দশমিক ৫ পয়সা শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
ফান্ডটি শেয়ারপ্রতি আয় করে ১ টাকা ১২ পয়সা। অথচ আগের বছর তাদের ইউনিটপ্রতি লোকসান ছিল ৪৮ পয়সা।
আরও পড়ুন:শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
মন্তব্য