পুঁজিবাজারে ১০ বছরের রেকর্ড ছুঁইছুঁই লেনদেন হওয়ার দুই দিন পর আরও আশার বাণী শোনালেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান।
গত বছর সংকটকালীন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেয়া শিবলী-রুবাইয়াত-ইসলাম বলেছেন, তারা এমন কিছু ব্যবস্থা নিয়েছেন, যে কারণে লেনদেন আরও বাড়বে।
তিনি জানিয়েছেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আগামী অর্থবছরের বাজেটে একগুচ্ছ উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে বিএসইসি। এর প্রভাবে সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন অনেক বাড়বে।
শনিবার ‘বিনিয়োগ ভাবনা, আসছে বাজেটে পুঁজিবাজার কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে‘ বিষয়ক এক অনলাইন ডায়লগে তিনি এসব কথা জানান।
এর দুই দিন আগে পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা, যা গত দশ বছরে রেকর্ড লেনদেনের কাছাকাছি। এদিন লেনদেনের পাশাপাশি সূচকেও হয়েছে উত্থান। বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে সূচক ছিল ৩৯ মাসের সর্বোচ্চ। দীর্ঘদিন পর বাজারের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত ব্যাংকি খাতেও দেখা গেছে তেজীভাব। এর আগে চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি লেনদেন হয় ২ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব ধরনের বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে আগামী বাজেটে। মিউচুয়াল ফান্ডের আয়ের ওপর কর সুবিধা, জিরো কুপন বন্ড, সুকুক বন্ড, এসএমই বোর্ডে আসা কোম্পানিগুলোর জন্যও কর সুবিধা চাওয়া হয়েছে আগামী বাজেটে।’
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রায় ২ লাখ কোাটি টাকার ট্রেজারি বন্ডও আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে লেনদেনে নিয়ে আসা হবে। আমরা আশা করি, এসব কারণে পুঁজিবাজারে সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন অনেক বাড়বে। পুঁজিবাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট থাকলে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের জায়গাও বাড়বে।’
২০১০ সালের মহাধসের পর চলতি বছরের আগে দুই হাজার কোটি টাকা লেনদেন হাতে গোনা কয়েক দিন। এর মধ্যে চলতি বছরই চার দিন লেনদেন হয়েছে এই পরিমাণ। ২০২০ সালের ২৮ জুন ২ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদলের ইতিহাস আছে, যদিও সেটি একটি বিশেষ কারণে। সেদিন ব্লক মার্কেটে জেএসকের শেয়ার ইউনিলিভারের কাছে হস্তান্তরের কারণে স্ফীত দেখিয়েছিল লেনদেনের চিত্র। এটা বাদ দিলে প্রকৃত লেনদেন ছিল কম।
পুঁজিবাজারে লেনদেন বাড়লে প্রকৃতপক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেরও (এনবিআর) এর সুফল পাবে।
বিষয়টি সম্পর্কে এনবিআরকেও অবগত করা হয়েছে উল্লেখ করে বিএসইসি চেয়াম্যান বলেন, ‘এনবিআরকে আমরা এ তথ্যগুলো দিচ্ছি যে, পুঁজিবাজারকে কোনোভাবে সাহায্য করলে, পুঁজিবাজারের লেনদেন বাড়লে, পুঁজিবাজারের গতি আসলে এর প্রকৃত সুবিধা এনবিআরের কাছেই যায়।
‘পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই), সিডিবিএল, এবং বিএসইসি থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রাজস্ব আদায় করেছে ২৬৩ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ ৩৫০ টাকা অতিক্রম করবে। বন্ড থেকে এনবিআর কী পরিমাণ রেভিনিউ পায় সেটিও আমরা বের করার চেষ্টা করছি। আশা করি সে তথ্যও এনবিআরকে দেয়া সম্ভব হবে।’
চেয়ারম্যান বলেন, ‘জিরো কুপন বন্ডে যে কর সুবিধা আছে অন্যান্য বন্ডের ক্ষেত্রেও যেন সেটি বহাল থাকে, সে বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথাবার্তা বলছি। আমরা আশা করি, বন্ডকে জনপ্রিয় করতে সরকার ও এনবিআর আমাদের সহায়তা করবে।’
শিবলী রুবাইয়াত উল-ইসলাম বলেন, ‘ক্ষুদ্র মূলধনি কোম্পানি বা এসএমই বোর্ড আমরা শুরু করেছি। এটি চালু করার উদ্দেশ্য হচ্ছে পুঁজিবাজারে আগে শুধু একটি বোর্ড ছিল। সেখানে সব কোম্পানি চলে আসতো। এমনকি নানাভাবে কোম্পানিগুলো তাদের মূলধন ৫০ কোটি টাকা দেখিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতো।
‘আমরা এসএমই বোর্ডে যাদের কম মূলধন তাদের সেখানে দিচ্ছি। তারা দুই চার বছর ভালো করলে মূল বোর্ডে নিয়ে আসা হবে। এসএমই বোর্ডে যেসব কোম্পানি আসবে আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে সেসব কোম্পনিকে যেন কিছুটা কর রেয়াত সুবিধা দেয়া হয়।’
শিবলী রুবাইয়াত উল-ইসলাম বলেন, ‘নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে এবার আমরা খুবই সচেতন। ভালো কোম্পানি, শক্তিশালী কোম্পানি, যাদের কাছে বিনিয়োগ নিরাপদ তাদেরকেই আমরা পুঁজিবাজারে নিয়ে আসব। আগে যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারের কিছু কিছু জায়গায় ডাবল ট্যাক্সেশন আছে। সে বিষয়গুলোতেও আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করেছি।
‘মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে জনপ্রিয় করতে আমরা অনেক কাজ করছি। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের যে সিলিং আছে সেটি বৃদ্ধি করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ইনকামকে ট্যাক্স ইনসেনটিভ করার অনুরোধ করেছি। জানিনা এখানে কি হবে। তবে আমরা আশাবাদী।’
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ব্যাংকের মতো না। কিন্ত এখানে ট্যাক্সের রেট অনেক বেশি। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে নরমাল ব্যাংকের মতো না ধরে তাদের কে একটু ছোট হিসাবে ছাড় দেয়া যায়, তাদের ক্ষেত্রেও কর কমানোর প্রস্তাব করেছি।
‘দেশে জনপ্রিয় হতে যাচ্ছে সুকুক বন্ড। এখানেও নানা ধরনের কর প্রদান করতে হয়। আমরা এ বিষয়টিও সরকারের কাছে, এনবিআরের কাছে বলেছি, তারা যেন এ বিষয়গুলো নজর দেন। আমরা যেন সুকুক জনপ্রিয় করতে পারি। যা দেশের অবকাঠামো খাতে বড় ধরনের অবদান রাখতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা খেয়াল করেছি, আমাদের দেশে ব্যবসা করে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত কিন্ত আমাদের এখানে নেই। কিছু ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিও আছে, যা বলেন এগুলো তাদের শাখা অফিস, কিন্ত তারাও আমাদের লিস্টিংয়ে আসছে না।
‘কিন্ত দেখা যায়, তারা প্রতিবছর কয়েক শ কোটি টাকা মুনাফা নিয়ে যাচ্ছে। আমরা এমন কোম্পানিগুলোকে ডেকেছি। আমরা তাদের মোটিভেট করার চেষ্টা করব। মনে হয় তাদের মোটিভেট করলে তারা আমাদের স্টক মার্কেটে আসতে পারে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছে। দেখা যাক কতজনকে আমরা নিয়ে আসতে পারি।’
অনলাইন ডায়লগে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. হাসান এইচ মনসুর, শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান ও এমএমএইচ অ্যান্ড কো. ম্যানেজিং পার্টনার মুহাম্মদ হোসেন, এফসিএ।
ডায়লগটি সঞ্চালনা করেন দ্যা লয়ার অ্যান্ড জাস্টিসের অ্যাসোসিয়েট নাজমুস সাকিব।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী প্রশংসা করেন, অথচ বিএনপি দেশের উন্নয়ন দেখতে পায় না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল উন্নয়ন দেখতে পায় না। তারা দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে। দেশের উন্নয়ন নিয়ে এতটা হীন মনোবৃত্তির পরিচয় তারা দিচ্ছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে তাদের বাস্তবতা বোঝা উচিত।’
শুক্রবার দুপুরে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। খবর বাসসের
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বক্তব্য থেকে বিএনপি নেতাদের প্রকৃত সত্য শিক্ষা নেয়ার আহবান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের যে উন্নতি ও উচ্চতা, এটা দেখে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ লজ্জিত। তখন পূর্ব পাকিস্তানকে তাদের কাছে মনে হতো বোঝা। এখন সে বোঝাই অনেক উন্নয়নে এগিয়ে গেছে। সে উন্নয়ন দেখে তিনি লজ্জিত হন। বিএনপি যতটা অপপ্রচার করে তাদের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে প্রকৃত সত্য শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু আছে।
বৃহস্পতিবার করাচিতে সিন্ধু প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বাসায় ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দেয়া বক্তব্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে তাকালে এখন তাদের লজ্জা হয়। সে সময় ‘পূর্ব পাকিস্তানকে’ দেশের বোঝা মনে করা হতো। কিন্তু তারা শিল্পায়নের প্রবৃদ্ধিতে বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জন করেছে।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্ব যুদ্ধ-সংঘাতে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েছে। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন-হামাস পৃথিবীকে উত্তপ্ত করে রেখেছে। বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আগ্রাসী অভিযান শুরু করেছেন। এই পরিস্থিতিতে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে চলেছেন। সব প্রকার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ও এ যুদ্ধকে না বলার জন্য বিশ্বের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন ও সুজিত রায় নন্দী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কুড়িগ্রামে শতাধিক দুস্থ অসহায় বাবা মায়ের জন্য ভ্রাম্যমাণ শাড়ি লুঙ্গির হাটের আয়োজন করেছে ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
ভ্রাম্যমাণ এ হাটে আট টাকা দরে একটি শাড়ি, একটি লুঙ্গি এবং দুই টাকায় একটি ব্লাউজের পিস বিক্রি করা হয়।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙা ইউনিয়নের কুমোরপুর দাখিল উলুম মাদ্রাসা মাঠে শুক্রবার দুপুরে এসব শাড়ি, লুঙ্গি বিক্রি করা হয়েছে।
আট টাকায় শাড়ি পেয়ে বৃদ্ধ আমেনা বেওয়া বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে একটা শাড়ির দাম নিম্নে ৩০০ টাকা। সেই শাড়ি আট টাকায় পেয়ে খুব উপকার হলো।’
লুঙ্গি পেয়ে হামিদ মিয়া বলেন, ‘৬৫ বছর বয়সে কোন দিন দেহি নাই আট টাহায় এহান (একটা) লুঙ্গি পাওয়া যায়। আইজ সেই আট টাহায় লুঙ্গি কিনলাম। খুব খুশি নাগছে।’
ভোগডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, “‘ফুল’ দীর্ঘদিন ধরে জেলায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অসহায় বাবা মাকে নিয়ে কাজ করে আসছে। তাদের আজকের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।”
ফাইট আনটিল লাইটের নির্বাহী পরিচালক আবদুল কাদের বলেন, ‘কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সামাজিক সংগঠন ফুল শহর গ্রাম ও প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের মানুষ মাঝে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নে এক যুগের বেশি সময় ধরে কাজ করে আসছে।
‘আমরা ত্রাণে নয়, বিনিময়ে উপহার দিয়ে মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে চাই। তাই অসহায় বাবা-মায়ের কাছে মাত্র আট টাকার বিনিময়ে শাড়ি লুঙ্গি বিক্রি করার ব্যবস্থা করছি।’
আরও পড়ুন:অতি তীব্র দাবদাহের মধ্যে মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়।
সীমান্তবর্তী জেলাটিতে শুক্রবার বেলা তিনটায় ৪২ দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
জেলায় অতি তীব্র দাবদাহে ওষ্ঠাগত জনজীবন। গরমে একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ পান করছেন ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর পানীয়।
তীব্র গরমে চুয়াডাঙ্গার হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে গরমজনিত রোগী। এতে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ।
পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম। তা ছাড়া অতি গরমে নষ্ট হচ্ছে ধান, আম, লিচু ও কলাসহ মাঠের অন্যান্য ফসল।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তালতলা গ্রামের কৃষক আবু তালেব বলেন, ‘এই তাপে মাঠে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। ভ্যাপসা গরমে কৃষিকাজ করা যাচ্ছে না।
‘ধানের জমি শুকিয়ে যাচ্ছে। ধানে বেশি সেচ লাগছে, কিন্তু সেচ পাম্পে ঠিকমতো পানিও উঠছে না।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের চুয়াডাঙ্গা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র দাবদাহ অব্যাহত রয়েছে। আগামী তিন দিন এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে।’
দেশের কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে ধরা হয়।
তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তীব্র দাবদাহ ধরা হয়। অন্যদিকে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে বলা হয় অতি তীব্র দাবদাহ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানায়, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:থাইল্যান্ডে রাষ্ট্রীয় সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির গভর্নর হাউসে শুক্রবার থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে তিনি এ মন্তব্য করেন বলে বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, খাদ্য নিরাপত্তা, পর্যটন, জনস্বাস্থ্য, জ্বালানি ও আইসিটি খাতে সহযোগিতা জোরদারের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে অনুভব করি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, খাদ্য নিরাপত্তা, পর্যটন, জনস্বাস্থ্য, জ্বালানি, আইসিটি, জনগণ থেকে জনগণে যোগাযোগ ও সংযোগের ক্ষেত্রে এবং বিমসটেকের অধীনে আমাদের সহযোগিতা জোরদার করার সুযোগ রয়েছে।’
এর আগে দুই নেতা গভর্নর হাউসে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেয়ার আগে ১৫ মিনিটের জন্য একান্ত বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি—একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও একটি লেটার অফ ইনটেন্ট (এলওআই) সই করা হয়।
মধ্যাহ্নভোজে শেখ হাসিনা বলেন, নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বন্ধুত্ব আমাদের ঐতিহাসিক, ভাষাগত ও অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন, জনগণ থেকে জনগণে যোগাযোগ ও সংযোগসহ সহযোগিতার বহুমুখী ক্ষেত্রে আমাদের দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী থাভিসিন ও তিনি পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা করতে এবং দুই দেশের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে আরও আলাপ-আলোচনাকে উৎসাহিত করতে সম্মত হয়েছি। একইভাবে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগের প্রসার ও সুবিধার্থে আমাদের সব রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার ঢাকা ও ব্যাংকক যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছে, তা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি দৃঢ় কাঠামো প্রদান করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, সফরটি ‘প্রতিবেশী’ নীতির বৃহত্তর ফোকাসের অংশ, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতি আরও নবায়নের জন্য দুই দেশকে চমৎকার সুযোগ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, এই সফর আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করতে সাহায্য করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, এই সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গতি সঞ্চার করবে।
তিনি বলেন, ‘এই সরকারি সফর আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে, যা আমাদের দুই দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ অংশীদারত্বের এক নতুন যুগের সূচনা করেছে।
‘আগামী দিনগুলোয় আমাদের জনগণ ও দেশের পারস্পরিক সুবিধার জন্য আমাদের সম্পর্কের নতুন গতি বজায় রাখতে হবে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারের আশুলিয়ায় একটি নির্জন বাঁশবাগানের ভেতর থেকে এক নারী পোশাকশ্রমিকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আশুলিয়ার কাঠগড়া নয়াপাড়া এলাকার বাঁশবাগান থেকে শুক্রবার সকালে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
প্রাণ হারানো আনজু খাতুন আশুলিয়ার নরসিংহপুরের হা-মীম গ্রুপের একটি তৈরি পোশাক কারখানার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি গাইবান্ধা সদর থানার ঘাগুয়া ইউনিয়নে।
পুলিশের ভাষ্য, বাঁশবাগানের ভেতর নারী পোশাকশ্রমিকের মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। এর পরিপ্রেক্ষিতে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ আরও জানায়, ওই নারীর গলায় ঝোলানো পরিচয়পত্রে দেখা যায়, তিনি হা-মীম গ্রুপের একটি পোশাক কারখানার অপারেটর।
হা-মীম গ্রুপের টিআইএসডব্লিএল-১ কারখানার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আনজু খাতুন নামে এক নারী শ্রমিক গতকাল রাত ৯টা ১৫ মিনিটের পরে কারখানা থেকে বাসায় যায়, কিন্তু আজ সকালে তিনি আর কারখানায় আসেননি।
‘পরে লাইনের সুপারভাইজার আনজুকে কল দিলেও সে রিসিভ করেনি।’
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ভজন চন্দ্র বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে কেউ তাকে (পোশাকশ্রমিক) হত্যা করে ফেলে রেখে যেতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।’
আরও পড়ুন:লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তের ওপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে আবুল কালাম ডাকু (২২) নামের বাংলাদেশি রাখাল নিহত হয়েছেন।
উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ঝালাংগী বিজিবি ক্যাম্পের ৮৪৮ নম্বর মেইন পিলারের ৯ নম্বর সাব পিলার এলাকায় শুক্রবার ভোররাতে এ ঘটনা ঘটে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও যুবকের পরিবারের কাছ থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে কয়েকজন রাখালসহ শ্রীরামপুর ইউনিয়ন সীমান্তের ৮৪৮ নম্বর মেইন পিলারের ৯ নম্বর সাব পিলারের ওপারে ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় গরু আনতে যান আবুল কালাম ডাকু। গরু নিয়ে ফেরার পথে শুক্রবার ভোররাতে বিএসএফের ডোরাডাবরী ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ডাকু গুরুতর আহত হলে সঙ্গীরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে বাংলাদেশ সীমান্তে। পরে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ঝালাংগী ক্যাম্পের ইনচার্জ নায়েক সুবেদার নুরুল আমিন বলেন, ‘বিএসএফের গুলিতে আবুল কালাম ডাকু নামে একজন যুবক নিহত হয়েছেন। পাটগ্রাম থানা পুলিশ পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিহতের মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদপত্র পাঠিয়ে বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে।’
নিহত যুবকের মা মমতা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের বিয়ে ঠিক হয়েছে। কী অপরাধের জন্য বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করল জানি না। আমি এই হত্যার বিচার চাই।’
পাটগ্রাম থানার ওসি আবু সাইদ বলেন, ‘বিএসএফের গুলিতে আহত যুবক আবুল কালাম ডাকুকে পরিবারের সদস্যরা পাটগ্রাম হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যান। সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় একটি ইউডি (অপমৃত্যুর) মামলা করা হবে।’
আরও পড়ুন:মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় তিন চাকার ভ্যানের সঙ্গে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় দুই সবজি ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।
উপজেলার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গোলড়া বাসস্ট্যান্ডে শুক্রবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো আবদুস সালাম (৫০) ও ছানোয়ার হোসেন (৪৫) মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কাটিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। তারা স্থানীয় কাটিগ্রাম বাজারে সবজির ব্যবসা করতেন।
গোলড়া হাইওয়ে থানার ওসি সুখেন্দু বসু বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সকালে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর বন্দর আড়ত থেকে চাষীদের কাছ থেকে সবজি কিনে তিন চাকার ভ্যানের মাধ্যমে কাটিগ্রাম যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী আবদুস সালাম ও ছানোয়ার হোসেন, কিন্তু ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গোলড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছালে পাটুরিয়াগামী একটি কাভার্ড ভ্যান ওভারটেক করতে গিয়ে ওই তিন চাকার ভ্যানকে ধাক্কা দেয়।
এতে ঘটনাস্থলেই আবদুস সালাম নিহত হন এবং গুরুত্ব অবস্থায় ছানোয়ার হোসেনকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি জানান, নিহতদের একজনের মরদেহ সদর হাসপাতালে এবং অপরজনের মরদেহ গোলড়া থানায় রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর কাভার্ড ভ্যানের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেলেও কাভার্ড ভ্যানটি জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় গোলড়া থানায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য