আম রপ্তানির জন্য ভ্যাপর হিট প্ল্যান্ট বা ভিএইচটি স্থাপনের প্রকল্পে ১০ কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণে পাঠাতে চায় কৃষি মন্ত্রণালয়।
সংরক্ষণ সময় কম হওয়ায় দেশে উৎপাদিত আমের ৩০ শতাংশই নষ্ট হয়। এজন্য বিদেশে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত হারে রাপ্তানি করা যাচ্ছে না। তাই গরম পানিতে শোধনের মাধ্যমে আমের সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়িয়ে তা রাপ্তানি উপযোগী করার প্রকল্প নিচ্ছে সরকার।
আম রপ্তানিতে ভিএইচটি স্থাপনের এই প্রকল্পে ১০ কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণে পাঠাতে চায় কৃষি মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে যে প্ল্যান্ট স্থাপন হবে, তার জন্য আমবাগান কাটা হবে।
প্রকল্পটির বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আপত্তি রয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের। এ নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। তারা বলছে, এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। শিগগির এ নিয়ে পিইসি কমিটির সভা হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৮০০ জন কৃষক, উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী ও প্রকিয়াজাতকারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। জনপ্রতি খরচ ২ হাজার ৬৬৬ টাকা হিসাবে এতে খরচ হবে ৪৮ লাখ টাকা। ২২০ জন কর্মকর্তাও প্রশিক্ষণ নেবেন দেশে। এতে খরচ হবে ১০ লাখ টাকা, প্রতি জনের জন্য খরচ হবে ৪৫৫০ টাকা। আর বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য যাবেন যে ১০ কর্মকর্তা, তাদের জন্য খরচ হবে ৬০ লাখ টাকা। জনপ্রতি খরচ প্রস্তাব করা হয়েছে ৬ লাখ টাকা করে।
তবে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, সরকারি টাকার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার স্বার্থে বিদেশে প্রশিক্ষণ বাবদ ৬০ লাখ টাকা দেয়া যেতে পারে। এছাড়া প্রকল্পের অন্যান্য অঙ্গে প্রস্তাবিত পরিমাণ ও ব্যয় বাড়তি বলে প্রতীয়মান হয়েছে, তা যুক্তিযুক্তভাবে নির্ধারণ করা যেতে পারে।
জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, আম রপ্তানি উপযোগী করার মতো খাদ্য প্রক্রিয়ারজাতকরণে তেমন জটিল কোনো মেশিন থাকার কথা নয়। তবু, সাধারণত দেখা যায় কোনো জটিল মেশিনারিজ থাকলেও সেগুলো সংশ্লিষ্ট উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানই ঠিক করে দিয়ে যায়।
‘অপারেটরদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও তারাই দিয়ে যায়। তাই বিদেশ সফরের তেমন প্রয়োজনীয়তা দেখি না। তবে খুব প্রয়োজন হলে টেকনিক্যাল লোকজন বা যারা এসব মেশিন অপারেট করেন তাদেরই প্রশিক্ষণ নেয়ার কথা।’
তিনি বলেন, ‘দেখা যাবে, হয়তো সরকারি প্রতিনিধি বা উচ্চ পর্যায়ের লোকজন, ওই দেশ ঘুরে কেনাকাটা করে চলে আসবে। অধিকাংশ সময়ই এমনটি দেখা যায়। এ প্রশিক্ষণ কোনো কাজেই লাগে না।’
কৃষি সার্ভিসের তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে বছরে ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে ৯ লাখ টন আম উৎপাদন হয়। কিন্তু তা থেকে রপ্তানি হয় অতি সামান্য, এক হাজার টনের মতো। রপ্তানির প্রধান সমস্যা হচ্ছে আম পাকানো ও সংরক্ষণকাল বৃদ্ধিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক বস্তুর ব্যবহার, সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা যেমন-সন্তোষজনক প্যাকেজিং ও পরিবহন ব্যবস্থা না থাকা, কৃষকদের রপ্তানি মান সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা ইত্যাদি।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশে যথেষ্ট আম উৎপাদন হলেও, উপযুক্ত প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে প্রচুর আম নষ্ট হয়, যা মোট উৎপাদনের প্রায় ৩০ শতাংশ। আবার সংগ্রহ মৌসুমে আদ্রতা ও তাপমাত্রার কারণে আমের সংরক্ষণ সময় কম থাকে, দ্রুত পচে যায়। কারণ আমের মৌসুমের সময় কম, শোধন ব্যবস্থাও অপ্রতুল।
তবে গরম পানিতে শোধন করলে আমের সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়বে এবং আমে থাকা রোগ-বালাই ও জীবাণুও নষ্ট হবে। একই সঙ্গে সংরক্ষণ ব্যবস্থাও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের হবে, যা আমের রপ্তানি উপযোগিতা বাড়বে।
চলতি মাসের শুরুতে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ‘আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের’ সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বলেছিলেন, ‘আমাদের বিজ্ঞানীরা অনেক উন্নতজাতের আম ও উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। ফলে আমের বাণিজ্যিক উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘এখন সরকার আমের রপ্তানি বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে। এ লক্ষ্যে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ আম উৎপাদন এলাকায় ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে আমের সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি পাবে, রপ্তানি সহজতর হবে এবং প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।’
‘ভ্যাপর হিট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে আমের রপ্তানি বাজার সম্পসারণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর (ডিএএম) চাপাইনবাবগঞ্জে একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করবে। এতে ব্যয় হবে ৩১ কোটি ৫০ টাকা। এর মাধ্যমে আধুনিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমের সংগ্রহোত্তর অপচয় ১০ শাতংশ হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে গুণগত মান নিশ্চিতকরণ ও বিপণন দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমের রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ হবে।
তবে এ নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ ধররেন প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ বেসরকারি উদ্যোগে হওয়া উচিত। সরকার এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে পারে। আবার এ ধরনের প্ল্যান্ট স্থাপনের পর তা পরিচালন সক্ষমতা, প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল রয়েছে কি না তা বিবেচনায় নিতে হবে। প্রকল্প শেষ হওয়ার পর প্ল্যান্ট কীভাবে পরিচালিত হবে তাও প্রস্তাবে উল্লেখ নেই।
‘অর্থ বিভাগের জনবল কমিটির প্রকল্পটির জন্য প্রকল্প পরিচালকসহ তিনজন প্রেষণে এবং ৬টি সেবার জন্য আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোকবল নিয়োগের সুাপারিশ করেছে। এসব লোক প্রকল্প শেষ হওয়ার পর থাকবে না, তখন এটি কীভাবে চলবে সে বিষয়েও জানতে চেয়েছে কমিশন।’
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ ধরনের ভিএইচটি স্থাপন করতে চায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ), বিএডিসি, ডিএইসহ কয়েকটি সংস্থা। তাই গত এপ্রিলে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগে অনুষ্ঠিত প্রোগ্রামিং কমিটির সভায় একই মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের পৃথক প্রকল্প না নিয়ে সমন্বিত প্রকল্প নেয়ায় তাগিদ দেয়া হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, এ প্রকল্পে সাড়ে তিন কোটি টাকায় ৬০ শতাংশ জমিও অধিগ্রহণ করা হবে। এতে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এ জমি আমবাগান শ্রেণির জমি। এ জমিতে এখনই আমবাগান রয়েছে বাগানের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ধরা হয়েছে।
এ বিষয়েও আপত্তি তুলে কমিশন বলেছে, জমি অধিগ্রহণ বিষয়ে প্রধামমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নিদেশনা হচ্ছে, কৃষিজমি অধিগ্রহণ না কর হয়। এ বিবেচনায় একটি গড়ে তোলা আমবাগান জমি অধিগ্রহণ সমীচীন হবে না। অন্য জায়গায় ভূমি অধিগ্রহণ নিশ্চিত হওয়ার পরই প্রকল্প নেয়া উচিত হবে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানে খেলতে গিয়ে একটি ভবনের ছাদ থেকে পড়ে এক শিশু নিহত হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে পাঁচ তলা ভবনটির ছাদ থেকে পড়ে নিহত হয় সে।
নিহত শিশুর নাম খাদিজা আক্তার (৫)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুটির ফুফা মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া (২০ বছর)।
খাদিজার বাবা মোহাম্মদ ফয়সাল আহমাদ জানান, দুপুরে পাঁচ তলার ছাদে খাদিজা খেলাধুলা করার সময় ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়। এ সময় খাদিজার ফুফা দৌড়ে ধরতে গেলে তিনিও নিচে পড়ে যান।
তিনি জানান, পরে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খাদিজা রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারা যায় এবং ফারিয়ার ফুফাকে ভর্তি রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া থানা এলাকায়। খিলগাঁওয়ের গোড়ান নবাবীর মোড় বতর্মানে১৪৮ /১ রায়হান সাহেবের বাড়ির ভাড়াটিয়া আমরা।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মহম্মদ বাচ্চু মিয়া বলেন, শিশুটির মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত ছাড়া স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে খিলগাঁও থানার সাথে কথা হয়েছে।
তীব্র থেকে অতি তীব্র মাত্রায় পাবনা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। অসহনীয় দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত তিন-চার দিন তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও শুক্রবার চলতি মৌসুমে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
এদিন পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যা জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত রবিবার (২১ এপ্রিল) ঈশ্বরদীতে প্রথমবার ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, জেলার তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অতি তীব্র তাপদাহে পাবনার মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ইটভাটার শ্রমিকসহ দিনমজুরদের জন্য অসহ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও তীব্র গরমে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ।
গাইবান্ধায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন আশরাফ আলী নামের এক রিকশাচালক। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার সুন্দরগঞ্জ-কুপতলা সড়কের ৭৫ নম্বর রেলগেট নামক এলাকায় এ ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ড ঘটে। পরে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সাদেকুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।
৫০ বছর বয়সী রিকশাচালক আশরাফ আলী সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের সাহার ভিটার গ্রামের মৃত ফয়জার রহমানের ছেলে। অন্যদিকে ছিনতাই ও হত্যায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলাম কুপতলা ইউনিয়নের রামপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা।
ওসি জানান, প্রতিদিনের মতোই বৃহস্পতিবার রাতে রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন আশরাফ আলী। তিনি কুপতলা এলাকার ৭৫ নম্বর রেলগেটে পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সাদেকুল ইসলাম তার পথ রোধ করে ছুরি ধরে রিকশা এবং চাবি কেড়ে নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। আশরাফ আলী এতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রথমে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত সাদেকুল আশরাফ আলীর পেটে ছুরিকাঘাত করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে রিকশাটিও উদ্ধার করা হয়। পরে আজ (শুক্রবার) দুপুরে সাদেকুলকে একমাত্র আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরেই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে। এর মধ্যে কোথাও কোথাও বৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এতে বলা হয়, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, বগুড়া, বাগেরহাট, যশোর, কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। আগামী পাঁচ দিনেও আবহাওয়াও প্রায় একই থাকতে পারে।
শুক্রবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়া ২০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও বৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ ও থাই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক থেকে বেরিয়ে ব্যাংককে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি শুক্রবার এ কথা জানান। খবর বাসসের
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং থাই প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এক সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’
দুপুরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে গভর্নমেন্ট হাউজে উভয় নেতার মধ্যে অনুষ্ঠিত একান্ত বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এসব তথ্য জানান। সন্ধ্যায় ঢাকায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়েছে।
ড. হাছান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিনের মধ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমে তারা একান্তে কথা বলেন, এরপর দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বহু বিষয়ে সবিস্তারে আলোচনা করেছেন।
থাইল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের যে ভ্রাতৃপ্রতিম ও বন্ধুপ্রতিম সম্পর্ক, সেটা আরও জোরদার, বহুমাত্রিক ও বিস্তৃত করার ব্যাপারে দুই প্রধানমন্ত্রী গভীর আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন, বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ সময় অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তি, জ্বালানি, পর্যটন ও শুল্ক সংক্রান্ত পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং মুক্ত বণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরুর জন্য একটি লেটার অভ ইন্টেন্ট স্বাক্ষরিত হয়।
দেশের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ব্যাংককে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবদুল হাই এবং থাইল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. প্রাণপ্রী বাহিদ্ধা নুকারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বর্ণনা করার পাশাপাশি বাংলাদেশের ১০০টি ইকোনমিক জোন ও আইটি ভিলেজে থাই বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা চাইলে প্রয়োজনে বাংলাদেশে তাদের জন্য বিশেষ ইকোনমিক জোন করার কথাও বলেছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে আসা প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। তাদের জন্য বাংলাদেশে যেসব সমস্যা উদ্ভূত হচ্ছে বৈঠকে সে বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলেও জানান ড. হাছান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, থাইল্যান্ডেও অনেক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন, এখনো অনেকে আসছেন। থাইল্যান্ডও এই পালিয়ে আসা মানুষদের ভারে জর্জরিত। এই সমস্যা সমাধানে উভয় প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের একসাথে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।
এদিন গভর্নমেন্ট হাউজে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রদত্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অফ অনার প্রদানকালে থাই প্রধানমন্ত্রী সাথে ছিলেন। শেখ হাসিনা তার সৌজন্যে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আয়োজিত রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখেন।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার ব্যাংককে পৌঁছান। তিনি বৃহস্পতিবার ব্যাংককে জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রে জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসকাপ) ৮০তম অধিবেশনে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে দেওয়া ভাষণে সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান জানান।
সফর শেষে প্রধানমন্ত্রীর আগামী ২৯ এপ্রিল দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ ৩ কর্মকর্তাকে আটকের পর কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর। এদিন দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে সাঁথিয়া থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের জিআরও এএসআই মাহবুবুর রহমান জানান, বিকেলে সাঁথিয়া থানা থেকে এনে তাদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় কেউ তাদের জন্য জামিন আবেদন করেননি। ফলে আদালত তাদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটককৃতরা হলেন- অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর এবং ক্যাশিয়ার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট অডিট টিম কাশিনাথপুর শাখায় অডিটে আসে। দিনভর অডিট করে তারা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আর্থিক অনিয়ম পান। এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানায় ওই শাখার ম্যানেজার (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী ও সিনিয়র অফিসার আবু জাফরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দিলে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তিনজনকে আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অডিটে অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের আটক করে সাঁথিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আজ (শুক্রবার) দুপুরে জিডির ভিত্তিতে আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দুদক আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করার পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি দেশ ও জনগণের উন্নয়নে আপনাদেরকে কাজ করতে হবে।
থাইল্যান্ড আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার অবস্থানকালীন আবাসস্থলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। খবর বাসসের
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক মো. নজরুল ইসলাম সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
বঙ্গবন্ধু তার অনুপ্রেরণার উৎস উল্লেখ করে শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, জাতির পিতাকে অসময়ে হত্যা করা হলেও ‘তার আদর্শ আমাদের মধ্যে রয়ে গেছে এবং সে কারণেই আমি তার (বঙ্গবন্ধু) আদর্শ বাস্তবায়ন করতে কাজ করছি। বঙ্গবন্ধু দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন।
গত ১৫ বছরে দেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ও উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতায় থাকায় এ অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, অনেক বাংলাদেশি থাইল্যান্ডের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। তবে তারা দ্বৈত নাগরিকত্ব বজায় রাখতে চান। এই দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে থাই সরকারের সাথে কথা বলবেন।
মন্তব্য