সাধারণ বিমা কোম্পানির আয় ব্যাপক হারে বাড়বে এবং ভালো লভ্যাংশ পাওয়া যাবে- এমন গুজবে গত প্রায় এক বছরে পুঁজিবাজারে ৩৭টি সাধারণ বিমা কোম্পানির শেয়ারের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। তবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের যে হিসাব পাওয়া গেছে, তাতে ব্যাপক আয় বাড়ার প্রমাণ মেলেনি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের আয়ও তেমন সম্ভাবনার কথা বলছে না।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৭টি সাধারণ বিমা কোম্পানির মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৩টি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এগুলোর বার্ষিক হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোনো কোনো কোম্পানির আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে।
তবে হাতে গোনা দু-একটি কোম্পানির আয় আগের বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে।
আবার অস্বাভাবিক দর বেড়েছে, এমন কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় কমতেও দেখা গেছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেও আয় কমতে দেখা গেছে বেশ কয়েকটির।
গত বছরের জুন থেকে বিমা কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধি পুঁজিবাজারে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। ঢালাওভাবে দাম বেড়েছে সব কোম্পানির।
এমন কোম্পানিও আছে, যেগুলোর দাম ১০ গুণ হয়ে গেছে। তবে যেসব কোম্পানি প্রতিবছর ভালো আয় করে আকর্ষণীয় লভ্যাংশ দেয়, সেগুলোর তুলনায় যেগুলোর আয় ও লভ্যাংশ খুব একটা ভালো নয়, সেগুলোর দাম বেড়েছে বেশি।
বিমা কোম্পানির শেয়ারে দর বাড়ার পেছনে বেশ কিছু গুজব কাজ করছিল। এজেন্টের কমিশন কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ, গাড়ির তৃতীয় পক্ষের বিমা বাতিল করে প্রথম পক্ষের বিমা চালু হলে আয় বাড়বে, লভ্যাংশ বাড়বে- এমন কথা বলাবলি হয়।
এরপর আলোচনায় আসে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের মতো বড় বড় প্রকল্প বিমার আওতায় আসছে। এগুলোর ঝুঁকি একেবারেই কম; কোম্পানির লাভ হবে ভালো। তবে পরে জানানো হয়, মেট্রোরেল সরকারি সাধারণ বিমা করপোরেশনের আওতায় থাকবে। এটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়।
আবার ১০ বছর আগে করা একটি বিধান সামনে আনা হয়, যেখানে বলা ছিল, কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৬০ শতাংশ থাকতে হবে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। এমনটি হলে বিমা কোম্পানির শেয়ার মালিকদেরই কিনতে হবে।
কিন্তু আয় বা লভ্যাংশ বাড়ার গুজব সত্য প্রমাণ হয়নি। পরিশোধিত মূলধনের ৬০ শতাংশ নিজেদের হাতে রাখার যে আইন করা হয়েছে, সেটিও কার্যকর হয়নি। তবু আবার ঢালাও মূল্য বৃদ্ধিতে কারসাজির অভিযোগ উঠেছে।
জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেভাবে বিমা খাতের উন্নয়নের কথা বলা হয়েছিল, সেভাবে কোম্পানির উন্নয়ন হয়নি। আইডিআরএ থেকে যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সেগুলো বিমা কোম্পানির জন্য ভালো। কিন্তু পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে কিছুটা গরমিল হয়ে থাকে।
‘একসময় পুঁজিবাজারে ব্যাংকের দাপট ছিল। কারণ তখন সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ব্যাংকের উন্নয়ন, ব্যাংকে কীভাবে সুশাসন নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতো। এখন সে আলোচনা বিমা নিয়ে। এই খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের মূল কারণ এটাই।’
এখন পর্যন্ত যে ২৩টি কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তাদের মধ্যে ১৮টির আয় বেড়েছে, পাঁচটির কমেছে।
প্রথম প্রান্তিকে আয় বেড়েছে ১৪টির, কমেছে তিনটির, একটির আয় গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের সমান। লভ্যাংশ ঘোষণা করা কোম্পানির মধ্যে এখনও প্রথম প্রান্তিক ঘোষণা করেনি পাঁচটি।
আবু আহমেদের ধারণা, কারসাজি
বিমা কোম্পানির শেয়ারের এভাবে মূল্যবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হিসেবে পরিচিত আবু আহমেদ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ খাতে কারসাজি হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা না দেখে না বুঝে শেয়ার কিনেছেন। সেটি এখন বোঝা যাচ্ছে মূল্য বৃদ্ধি ভিত্তিহীন।’
তিনি বলেন, ‘বিমার শেয়ারের দর বাড়ছে বলেই শেয়ার কিনতে হবে, এমন ধারণা থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বের হয়ে আসতে হবে। তা না হলে বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হতে পারে।’
অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স
গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৭২ পয়সা। আগের বছর যা ছিল ১ টাকা ২৬ পয়সা। অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি আয় বেড়েছে ৪৬ পয়সা।
অথচ গত জুন থেকে এই কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য বেড়ে চার গুণ হয়েছে।
এই সময়ে সর্বনিম্ন মূল্য ছিল ১৭ টাকা ৬০ পয়সা। আর সর্বোচ্চ মূল্য ছিল ৭১ টাকা।
চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২৯ পয়সা, যা গত বছর ছিল ৩১ পয়সা। অর্থাৎ আয় কমেছে ২ পয়সা।
কোম্পানিটি এবার শেয়ারপ্রতি ৫ পয়সা নগদের পাশাপাশি ৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি ১০০ শেয়ারে পাঁচটি বোনাস দিয়েছে।
এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স
গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৯৭ পয়সা। আগের বছর একই সময় আয় ছিল ১ টাকা ৭৪ পয়সা।
এই কোম্পানি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আয় করেছে ১ টাকা ৭ পয়সা, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৮২ পয়সা।
কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ১ টাকা লভ্যাংশ দিয়েছে।
এই কোম্পানির আয়ও গত এক বছর চার গুণের বেশি বেড়েছে।
গত জুনে কোম্পানিটির সর্বনিম্ন মূল্য ছিল ১৯ টাকা ১০ পয়সা। আর এক বছরে সর্বোচ্চ দাম ওঠে ৯২ টাকা ৮০ পয়সা।
বিজিআইসি
গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ২৫ পয়সা। এটি গত বছরের চেয়ে কম। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১ টাকা ২৮ পয়সা।
এই কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ২০ পয়সা লভ্যাংশ দেবে।
গত বছরের জুন থেকে কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ২২ টাকা ৫০ পয়সা, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৫২ টাকা ৮০ পয়সা।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স
কোম্পানিটি গত বছর শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ২ টাকা ৩২ পয়সা। আগের বছর যা ছিল ২ টাকা ২৩ পয়সা।
কোম্পানিটি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আয় করেছে ১ টাকা ১ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৫৬ পয়সা।
২০২০ সালের জন্য তার শেয়ারধারীদের ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
এই কোম্পানির শেয়ার মূল্য গত এক বছরে বেড়েছে আট গুণের বেশি।
গত জুন থেকে কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৭ টাকা ১০ পয়সা, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ১৫৮ টাকা ৯০ পয়সা।
সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স
কোম্পানিটি ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি ২ টাকা ১৮ পয়সা আয় করেছে। আগের বছর আয় ছিল ২ টাকা ১৪ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরে আয় বেড়েছে মাত্র ৪ পয়সা। যদিও দাম বেড়েছে সাড়ে তিন গুণের বেশি।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির আয় কিছুটা বেড়েছে। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আয় হয়েছে ৭২ পয়সা। যা এক বছর আগে একই সময়ে ছিল ৫৬ পয়সা।
কোম্পানিটি এবার সাড়ে ১৩ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে। এর মধ্যে শেয়ারপ্রতি ৬০ পয়সা বা ৬ শতাংশ নগদ আর সাড়ে ৭ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ২০০ শেয়ারে ১৫টি বোনাস দেবে।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ২২ টাকা ৮০, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৭০ টাকা ৮০ পয়সা।
সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স
ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৬৯ পয়সা। আগের বছর যা ছিল ১ টাকা ১ পয়সা।
তবে এই কোম্পানিটির আয় চলতি বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে এখন পর্যন্ত। প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫০ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৭ পয়সা।
২০২০ সালের জন্য কোম্পানিটি তার শেয়ারধারীদের ১০ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ১ টাকা নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৩ টাকা ১০ পয়সা, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৪৫ টাকা ১০ পয়সা।
কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স
ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ২৯ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ১ টাকা ১৬ পয়সা। এই কোম্পানিরও আয়ে প্রবৃদ্ধি আহামরি নয়।
কোম্পানিটির প্রথম প্রান্তিকে তার শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৪৯ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৪৫ পয়সা।
কোম্পানিটির ২০২০ সালের জন্য তার শেয়ারধারীদের ৬ শতাংশ নগদ অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ৬০ পয়সা ও ৪ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৮ টাকা ৩০ পয়সা, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৬৪ টাকা ৯০ পয়সা।
ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স
এই কোম্পানির আয়ে শতকরা হিসেবে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০২০ সালে। ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ৪ টাকা ৯২ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ২ টাকা ৯২ পয়সা।
তবে কোম্পানিটির প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। এই সময়ে আয় হয়েছে ৬৩ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৭৮ পয়সা।
২০২০ সালে তার শেয়ারধারীদের জন্য কোম্পানিটি ১০ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ১ টাকা নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৫ টাকা, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৭০ টাকা ৮০ পয়সা।
ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স
ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ৩ টাকা ৩৩ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ৩ টাকা ৬৫ পয়সা। অর্থাৎ এই কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় কমেছে।
তবে বছরের প্রথম প্রান্তিকে আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৬ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৮৯ পয়সা।
কোম্পানিটি ২০২০ সালের জন্য তার শেয়ারধারীদের জন্য ২০ শতাংশ নগদ অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ২ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
এই কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য এক বছরে ১০০ টাকারও বেশি বেড়েছে। গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ২৯ টাকা ৮০, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ১৪২ টাকা ৯০ পয়সা।
ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স
ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ১২ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ১ টাকা ৩৮ পয়সা। অর্থাৎ এই কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় কমেছে।
কোম্পানিট তার শেয়ারধারীদের ২০২০ সময়ের জন্য ৭ শতাংশ নগদ অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ৭০ পয়সা ও ৩ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ২০ টাকা, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৪৩ টাকা ৮০ পয়সা।
গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স
এই কোম্পানিটি গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের পাশাপাশি চলতি বছর প্রথম প্রান্তিকেও বেশ ভালো আয় করেছে।
গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ৭ টাকা ১৬ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৩ টাকা ২৩ পয়সা।
এই কোম্পানিটিই ২০২০ সালে সর্বোচ্চ পরিমাণ আয় করেছে। তবে এর শেয়ার মূল্য অন্য কোম্পানিটির তুলনায় বেশ কম।
কোম্পানিটি তার প্রকাশিত প্রথম কোয়ার্টার (জানুয়ারি-মার্চ) সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে (ইপিএস) ১ টাকা ৭৬ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৯৮ পয়সা।
কোম্পানিটি তার শেয়ারধারীদের ২০২০ সালের জন্য সাড়ে ২৪ শতাংশ অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ২ টাকা ৪০ পয়সা নগদ ও সাড়ে ৭ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
চলতি বছর এই কোম্পানিটিই সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
তবে অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় মূল্যবৃদ্ধির হার বেশ কম। এটিই হাতে গোনা দু-একটি কোম্পানি, যার শেয়ার দর দ্বিগুণ হয়নি।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ৪৩ টাকা ৩০, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৭৩ টাকা ৪০ পয়সা।
ইসলামী ইন্স্যুরেন্স
এই কোম্পানিটি গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ২ টাকা ১৮ পয়সা। আগের বছর এই আয় ছিল ১ টাকা ৬৫ পয়সা। তবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের হিসাব এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
কোম্পানিটি তার শেয়ারধারীদের ২০২০ সালের জন্য ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ২০ টাকা ৯০, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৬৪ টাকা ৪০ পয়সা।
জনতা ইন্স্যুরেন্স
কোম্পানিটি ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ২৫ পয়সা আয় করেছে, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৮ পয়সা।
বছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৪৪ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪০ পয়সা।
কোম্পানিটি তার শেয়ারধারীদের ২০২০ সালের জন্য ৬ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৪ টাকা ৭০, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৪৬ টাকা ৩০ পয়সা।
কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স
কোম্পানিটি ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৬০ পয়সা। আগের বছর শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১ টাকা ১০ পয়সা।
শেয়ারপ্রতি ১ টাকা বা ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৯ টাকা, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৪৬ টাকা ৫০ পয়সা।
নিটল ইন্স্যুরেন্স
এই কোম্পানির আয় কমেছে ২০২০ সালে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৮৪ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩ টাকা ২২ পয়সা।
কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ১ টাকা লভ্যাংশ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ২১ টাকা ৮০, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৭৬ টাকা ৮০ পয়সা।
প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স
শতকরা হিসাবে ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে এই কোম্পানিটির।
জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি ৫ টাকা ৩৮ পয়সা আয় করে চমকে দিয়েছে তারা। এর আগে কখনও এত আয় করতে পারেনি তারা। আগের বছর আয় ছিল ১ টাকা ১৪ পয়সা।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেও আয়ে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত আছে। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ১ পয়সা, আগের বছরের একই সময়ে লোকসান ছিল ১৪ পয়সা।
এই কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি এক বছরে ১২৫ টাকা বেড়েছে।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ৩৬ টাকা ৩০, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ১৬১ টাকা ৩০ পয়সা।
গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি ২০ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি পাঁচটি শেয়ারের একটি বোনাস হিসেবে দিয়েছে।
পিপলস ইন্স্যুরেন্স
এই কোম্পানির আয়ও বেড়েছে সামান্যই। কোম্পানিটি ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ২ টাকা ২৬ পয়সা। আগের বছর আয় ছিল ১ টাকা ৮৭ পয়সা।
বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৫৪ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৩ পয়সা।
কোম্পানিটি ২০২০ সালের জন্য তার শেয়ারধারীদের ১১ শতাংশ অর্থাৎ ১ টাকা ১০ পয়সা নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৪ টাকা ১০, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৫৭ টাকা।
প্রাইম ইন্স্যুরেন্স
এই কোম্পানিটি ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৩২ পয়সা। আগের বছর আয় ছিল ৪৩ পয়সা।
কোম্পানিটি প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ৫৬ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে লোকসান ছিল ৫ পয়সা।
কোম্পানিটি ২০২০ সালের জন্য তার শেয়ারধারীদের ১০ শতাংশ অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ১ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৭ টাকা, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৫৫ টাকা ৮০ পয়সা।
প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স
এই কোম্পানিটি ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি ৩ টাকা ১০ পয়সা আয় করেছে। আগের বছর যা ছিল ২ টাকা ৩৮ পয়সা।
তবে চলতি বছর প্রথম প্রান্তিকে আয়ে চমক দেখিয়েছে কোম্পানিটি। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ২৬ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে লোকসান ছিল ৬৮ পয়সা।
কোম্পানিটি ২০২০ সালের জন্য ১৭ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ১০০ শেয়ারে ১৭টি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে।
বিমার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এই কোম্পানির দর। গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৯ টাকা ৪০, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ১৮৩ টাকা ৮০ পয়সা। এটি আবার ১৭ শতাংশ বোনাস সমন্বয়ের পর।
রূপালী ইন্স্যুরেন্স
এই কোম্পানিটি ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৯০ পয়সা আয় করেছে। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ১ টাকা ৭৫ পয়সা। অর্থাৎ আয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশের কম।
চলতি বছর প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৪৫ পয়সা। তবে এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা কম। সেই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৪৮ পয়সা।
কোম্পানিটি লভ্যাংশ হিসেবে ১০ শতাংশ নগদ বা শেয়ারপ্রতি ১ টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৫ টাকা ৮০, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৪৮ টাকা ৫০ পয়সা।
রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স
এটি দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী বিমা কোম্পানির একটি। প্রতিবছরই বেশ ভালো আয় করে আকর্ষণীয় লভ্যাংশও দিয়ে থাকে কোম্পানিটি।
তবে ২০২০ সালে এর আয় কমেছে আগের বছরের তুলনায়। গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৫ টাকা ২১ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল ৫ টাকা ৫৭ পয়সা।
তবে চলতি বছর ভালো করছে কোম্পানিটি। প্রথম প্রান্তিকে তারা শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৩৫ পয়সা, যা আগের বছর একই প্রান্তিকে ছিল ১ টাকা ২২ পয়সা।
কোম্পানিটি ২০২০ সালের জন্য তার শেয়ারধারীদের জন্য ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
বিমার মধ্যে সবচেয়ে কম বেড়েছে যে কয়টির দর, তার একটি এটি। গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ৩৫ টাকা ৯০, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৭৩ টাকা ৫০ পয়সা।
তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স
কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৬৫ পয়সা আয় করেছে ২০২০ সালে। আগের বছরের আয় ছিল প্রায় সমান। তখন আয় হয় ১ টাকা ৬৪ পয়সা।
তবে চলতি বছর প্রথম প্রান্তিকে আগের বছরের চেয়ে আয় আরেকটু বেশি বেড়েছে। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত শেয়ার প্রতি আয় প্রকাশ করেছে ৫৪ পয়সা। আগের বছরের একই সময় যা ছিল ৩৭ পয়সা।
কোম্পানিটি ২০২০ সালের জন্য তার শেয়ারধারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ১ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ২৮ টাকা ২০, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৬৫ টাকা ৬০ পয়সা।
ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স
এই কোম্পানিটির আয়েও প্রবৃদ্ধি খুবই কম। ২০২০ সালে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ২ টাকা ৪ পয়সা আয় করেছে। আগের বছর এই সময়ে আয় ছিল ১ টাকা ৯৫ পয়সা।
চলতি বছর প্রথম প্রান্তিকেও আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়নি। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আয় হয়েছে ২৪ পয়সা। আগের বছরের একই সময়েও একই পরিমাণ আয় ছিল।
কোম্পানিটি ২০২০ সালের জন্য তার শেয়ারধারীদের জন্য ১১ শতাংশ নগদ অর্থাৎ ১ টাকা ১০ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
বিমার মধ্যে সবচেয়ে কম বেড়েছে এই কোম্পানির দর। গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ৩৪ টাকা ৭০, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৬৩ টাকা ৬০ পয়সা।
যেগুলোর লভ্যাংশ এখনও ঘোষণা হয়নি
এশিয়া ইন্স্যুরেন্স
গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তৃতীয় প্রান্তিকের হিসাব অনুযায়ী এই কোম্পানিটির আয় আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১ টাকা ৩৮ পয়সা। সেটি বেড়ে ২০২০ সালের একই সময়ে হয়েছে ২ টাকা ৬৯ পয়সা।
গত বছরের জুনে কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য ছিল সর্বনিম্ন ১৭ টাকা। আর একপর্যায়ে তা ১৩৮ টাকা ৯০ পয়সায় পৌঁছে।
বিমার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে যেসব কোম্পানির দর, তার মধ্যে অন্যতম এটি।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৭ টাকা, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ১৩৮ টাকা ৯০ পয়সা।
ঢাকা ইন্স্যুরেন্স
কোম্পানিটি গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৯০ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ১ টাকা ৫৪ পয়সা।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ২৪ টাকা, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৯০ টাকা ।
ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স
কোম্পানিটি গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ৫৮ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৫৪ পয়সা।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ১০ টাকা ২০ পয়সা, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৩৪ টাকা ৯০ পয়সা।
এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স
কোম্পানিটি গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ৮৪ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৭১ পয়সা।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৫ টাকা, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৪৫ টাকা ৯০ পয়সা।
গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স
কোম্পানিটি গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৬ পয়সা পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৬২ পয়সা।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৪ টাকা ১০ পয়সা, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৬৯ টাকা ৫০ পয়সা।
মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স
কোম্পানিটি তৃতীয় কোয়ার্টারে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জানিয়েছে তার শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৭৫ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ১৩ পয়সা।
নদার্ন ইন্স্যুরেন্স
গত বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটি য়ার প্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৪২ পয়সা পয়সা। আগের বছর একই সময় এই আয় ছিল ১ টাকা ৪৭ পয়সা।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৬ টাকা ৬০, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৫৩ টাকা ৫০ পয়সা।
ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স
কোম্পানিটি তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০) শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ৬৩ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল একই, অর্থাৎ ৬৩ পয়সা।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ২১ টাকা ৪০, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৫৯ টাকা ৫০ পয়সা।
পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স
কোম্পানিটি তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০) শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৯৯ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ৯৭ পয়সা।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ২৯ টাকা ৪০, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ১১৩ টাকা।
প্রগতি ইন্স্যুরেন্স
কোম্পানিটি তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০) শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ৯৩ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ৯১ পয়সা।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ৩২ টাকা ২০, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৭৬ টাকা ৯০ পয়সা।
পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স
গত বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটি য়ার প্রতি আয় করেছে ৯২ পয়সা পয়সা। আগের বছর একই সময় এই আয় ছিল ৭৫ পয়সা।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ১২ টাকা ২০, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৩৯ টাকা ৪০ পয়সা।
রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স
গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টম্বর পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ২২ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৫৫ পয়সা।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৮ টাকা ৬০, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৬২ টাকা ১০ পয়সা।
স্ট্যান্ডার্ন্ড ইন্স্যুরেন্স
গত অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে এই কোম্পানিটিরও শেয়ারপ্রতি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে।
২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৮৫ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৯৮ পয়সা।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ৩৬ টাকা ৬০, আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৫৬ টাকা ৭০ পয়সা।
সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স
বিমা কোম্পানির মধ্যে প্রথমে দাম বাড়ে এই কোম্পানিটির। তবে আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়নি আশানুরূপ। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১ টাকা ৮৬ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৭০ পয়সা।
গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ৩০ টাকা ১০ পয়সা আর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৮৮ টাকা।
আরও পড়ুন:শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
মন্তব্য