করোনায় কমে গেছে অনেকের আয়। ফলে সঞ্চয়ও কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু সংকটেও সঞ্চয় বেড়েছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে।
মহামারির বছরেও এসব প্রতিষ্ঠানের আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণ দুটোই বেড়েছে। ২০২০ সাল শেষে আমানত বেড়েছে ১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। আর একই সময়ে ঋণ বিতরণ ৯৯০ কোটি টাকা বেড়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিডি ফিন্যান্সের কোম্পানি সচিব মুন্সি আবু নাঈম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার মধ্যে টাকা অনেকের হাতে ছিল, তারা সেটা সঞ্চয় করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু সুবিধার কারণে করোনার নেতিবাচক প্রভাব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তেমন পড়েনি। তবে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা যে ভালো, তা নয়। কিছু কিছু কোম্পানি গ্রাহকদের আস্থা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। অনেকের হাতে টাকা আছে কিন্তু ব্যবসা মন্দা থাকায় বিনিয়োগ করতে পারেনি। তারা সেই টাকা সঞ্চয় করেছে।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, করোনার বছরে ঋণ পরিশোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেক ছাড় দিয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ শোধ না করলেও কোনো গ্রাহক খেলাপি হয়নি। তবে করোনার মধ্যেও অনেক গ্রাহক ঋণ নিয়মিত শোধ করেছে। সে তুলনায় নতুন ঋণ বিতরণ হয়নি। আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন নীতি-সহায়তা দেয়া হয়েছে। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় তেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব বিশেষ সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
আমানতের সিংহভাগ রাজধানীতে
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪৩ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা, যা জুনে কমে হয় ৪৩ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। তবে সেপ্টেম্বরে আবার আমানত বেড়ে ৪৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকায় ওঠে। আর ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট আমানত আরো বেড়ে হয় ৪৪ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা।
২০১৯ সাল শেষে আমানত ছিল ৪৩ হাজার ১২১ কোটি টাকা। অর্থাৎ মহামারির বছরে আমানত বেড়েছে ১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে ৩৫টির মধ্যে ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তথ্যও যুক্ত রয়েছে। এগুলো হলো কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক। এ ছাড়া আমানত নিতে পারে না, এমন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্যও প্রতিবেদনে রয়েছে।
এই আমানতের ৯২ দশমিক ২৬ শতাংশই রাজধানী ঢাকার ভেতরের শাখাগুলোতে রয়েছে। এরপরেই চট্টগ্রামে আছে ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের বড় একটি অংশের জোগানদাতা ব্যাংক। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ব্যাংকের মতো নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে (এনবিএফ) তারল্য সহায়তা দিতে বেশ কিছু নীতি-সহায়তা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যাতে এনবিএফআই থেকে আমানত তুলে না নেয়, সে জন্যও ব্যাংকগুলোকে দফায় দফায় নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ঋণ বিতরণ ঢাকায় বেশি
আমানতের পাশাপাশি লিজিং কোম্পানিগুলোর ঋণ বিতরণও বেড়েছে।
২০২০ সালের মার্চের শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৯ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। তা জুনে কিছুটা কমে হয় ৬৯ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। আর সেপ্টেম্বরে ঋণ আরও কমে ৬৮ হাজার ৯৩১ কোটি টাকায় নামে। তবে ডিসেম্বর শেষে এনবিএফআইগুলোর বিতরণ করা ঋণ বা অগ্রিমের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৯ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত এক বছরে ৯৯০ কোটি টাকা ঋণ বেড়েছে ।
বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে বেসরকারি খাতের ঋণ ছিল ৬৯ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা। আর সরকারি ঋণ ৪ হাজার ৪৮ কোটি টাকা।
২০১৯ সালের একই সময়ে বেসরকারি ঋণ ছিল ৬৮ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। আর সরকারি ঋণ ছিল ৪ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা।
সবচেয়ে বেশি ঋণ গেছে শিল্প খাতে, প্রায় ৩৮ শতাংশ। ব্যবসা ও বাণিজ্য খাতে ২৩ শতাংশ, ভোক্তাঋণ ১৪ শতাংশ, নির্মাণ খাতে ১৪ শতাংশ, কৃষিতে ৩ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ৭ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
আমানতের মতো ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে শীর্ষ অবস্থানে আছে রাজধানী। ৮৪ দশমিক ৫২ শতাংশ ঋণই রাজধানী ঢাকার ভেতরের শাখাগুলোতে রয়েছে। এরপরেই চট্টগ্রামে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আগে অনেক ঋণের সুদের হার ১৬-১৭ শতাংশ ছিল। ব্যাংকের ঋণের সুদ ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দেয়ার পর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদও কমেছে। করোনাভাইরাসের কারণে সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের একটি বড় অংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। এ জন্য মহামারিতে এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণ বিতরণ বেড়েছে।
তহবিল ব্যয় কমেছে
তহবিল ব্যবস্থাপনায় ব্যয় কমিয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ১০০ টাকা তহবিল সংগ্রহে গড়ে ৯ টাকা ১১ পয়সা ব্যয় করেছে। অন্যান্য খরচ মিলিয়ে তাদের গড় ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ২৫ পয়সা। চলতি বছরের মার্চ শেষে তহবিল সংগ্রহে ব্যয় কমে হয়েছে ৭ টাকা ০২ পয়সা। আর খরচ মিলিয়ে তাদের গড় এই ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ২৪ পয়সা। বছরের ব্যবধানে এ ব্যয় কমেছে ২ শতাংশের বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বর্তমানে ব্যাংকবহির্ভূত এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকনির্ভরতা কমিয়ে আমানত সংগ্রহে তুলনামূলক বেশি জোর দেয়ায় তহবিল ব্যয় কমছে। এতে করে তাদের ঋণের সুদহারও কমছে। বর্তমানে প্রায় ৪০ শতাংশ তহবিল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সংগ্রহ করা হচ্ছে যা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সহায়ক।
২০১৩ সালে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক সুদহার ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তহবিল ব্যয় সূচক চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই প্রজ্ঞাপনে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের তহবিল সংগ্রহের ব্যয়, বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত নগদ জমার হার (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ সংরক্ষণের হার (এসএলআর), প্রশাসনিক ব্যয় এবং উদ্যোক্তা মূলধনের ব্যয় নির্বাহের হিসাব করে মোট ব্যয়ের হিসাব রাখতে বলা হয়। এসব ব্যয়ের পর যে সুদ নেবে তা হবে ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালন মুনাফা।
বেশির ভাগ শাখা শহরাঞ্চলে
সারা দেশে এনবিএফআইগুলোর শাখা রয়েছে ৭৯৬টি। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে ৬৮২ এবং গ্রামাঞ্চলে ১১৪ টি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে চারটি সরকারি এনবিএফআইয়ের শাখা রয়েছে ৫৮টি। বেসরকারি ৩০টি এনবিএফআইয়ের শাখা রয়েছে ২৪৪টি।
বিভাগের হিসেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঢাকাতে ৩০০টি, চট্টগ্রামে ১৪০, খুলনায় ৭২, রাজশাহীতে ৮৪, বরিশালে ৪২, সিলেটে ৫০, রংপুরে ৫৫ ও ময়মনসিংহে ৫৩টি শাখা রয়েছে।
ব্যাংকের মতো সব ধরনের লেনদেনের লাইসেন্স না থাকলেও বেশ কিছু এনবিএফআই মেয়াদি আমানত নিতে পারে। এ ধরনের এনবিএফআইগুলো নন-ব্যাংক ডিপোজিটরি করপোরেশন হিসেবে বিবেচিত হয়।
আরও পড়ুন:নেত্রকোনা জেলা সদরের মোক্তারপাড়া মাঠে আয়োজিত এক বিশাল গনসমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমীর (শায়েখে চরমোনাই) মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম প্রধান অতিথির হিসাবে উপস্থিত ছিলেন । প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশব্যাপী চাাঁদাবাজি, লুটপাট, দখলবাজি, জুলুম, অত্যাচার-নিপীড়নের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এই বাংলাদেশ দেখার জন্য আমরা রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়িনাই। এমন কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান নাই, যা দখল করা হয়নি। বিচারালয়গুলোকেও দখল করা হয়েছে। এই বাংলাদেশ দেখার জন্য মুগ্ধ জীবন দেয় নাই, আবু সাঈদ তার বুক পেতে দেয় নাই। বাংলাদেশে আমরা আর চাাঁদাবাজ, জুলমবাজ ও দখলবাজ দেখতে চাই না। যদি শেখ হাসিনার বুলেটের সামনে, ট্যাঙ্কের সামনে বুক পেতে দিতে পারি, তাহলে আজকেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেনো বুক পেতে দিতে পারবো না? যদি শেখ হাসিনার জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারি, তাহলে আজকেও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কেনো কথা বলবো না? তিনি আরও বলেন, মুসলিম লীগ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসন দেখেছেন। তাদের শাসনে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এর মূল কারণ খুঁজতে হবে। দেশ, দল ও নেতা পরিবর্তন করে শান্তি আসবে না, শান্তি তখনই আসবে, যখন আমরা নীতি আদর্শের পরিবর্তন আনতে পারবো। প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার, গণহত্যার বিচার, সারা দেশে খুন, লুণ্ঠন ও চাঁদাবাজি বন্ধ এবং পিআর পদ্ধতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ইসলাম বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর জেলা কমিটি এ সমাবেশের আয়োজন করে। মুফতি নুরুল ইসলাম হাকিমীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা ওয়ালীউল্লাহ্ এবং মুফতি ওমর ফারুক ওফার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন: জতীয় শিক্ষক ফোরামের জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা জসিম উদ্দিন পাঠান, ইসলামী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট এনামূল হক মুর্শেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবু সায়েম, সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাসুম মোস্তফা,জামায়েতে ইসলামীর জেলা সেক্রেটারী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা মামুনুর রশিদ রব্বানী, মুফতি তাজুল ইসলাম কাশেমী, মুফতি ওয়ালী উল্লাহ প্রমুখ। সমাবেশে শায়েখে চরমনোই সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম নেত্রকোনার পাঁচটি আসনের জন্য দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত প্রার্থীরা হলেন: নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) আসনে মাওলানা মামুনুর রশিদ রব্বানী, নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনে হযরত মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম, নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনে জাকির হোসেন সুলতান, নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) আসনে হাফেজ মাওলানা মুখলেছুর রহমান ও নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনে মুফতি নূরুল ইসলাম হাকিমী।
বাজিতপুর থেকে নিখোঁজের পাঁচ দিন পর ভৈরবে মেঘনা নদী থেকে রাকিব (২৭) নামের এক যুবকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ থানা পুলিশ।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) ভৈরবের লুন্দিয়া এলাকায় নদীতে মরদেহটি ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে ভৈরব নৌ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহতের স্বজনরা জানান, গত ১০ আগস্ট বিকেলে রাকিব বাড়ি থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে একই উপজেলার কুকরাই গ্রামের বন্ধু শাওনের বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হন। এরপর থেকে তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও না পাওয়ায় নিহতের ভাই রিয়াজ মিয়া বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বাজিতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরবর্তীতে ভৈরবের মেঘনায় লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে তাকে সনাক্ত করি।
এ বিষয়ে ভৈরব নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, লুন্দিয়া এলাকা থেকে রাকিবের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা নদীতে ফেলে দিয়েছে। মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে হত্যাসহ ডাকাতি মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী গোলাম হোসেন মিয়া (৩৭) কে গ্রেপ্তার করেছে সিপিসি-২, র্যাব-১৪, ভৈরব ক্যাম্প।
সে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার কালিপুর মধ্যপাড়ার আব্দুর রহিমের ছেলে।
শুক্রবার দুপুরের দিকে শহরের কালিপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জানা যায়, সিপিসি-২, র্যাব-১৪, ভৈরব ক্যাম্প এর আভিযানিক দল নরসিংদী জেলার বেলাবো থানা এলাকায় সিএনজি ডাকাতির পর সিএনজি ড্রাইভারকে হত্যা করে লাশ গুমের ঘটনায় নরসিংদীর বেলাবো থানার মামলা নং-০১(০১)১৫, ধারা-৩৯৬/২০১ এর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী গোলাম হোসেন মিয়াকে শুক্রবার শহরের কালিপুর মধ্যপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ভৈরব র্যাব ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মুহিত কবির জানান, হত্যাসহ ডাকাতি মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী গোলাম হোসেন মিয়াকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামে ১৬টি নদ-নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেলেও শুক্রবার থেকে কমতে শুরু করেছে পানি। ফলে কিছুটা স্বস্থিতে রয়েছে নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা। শুক্রবার হঠাৎ করে দুধকুমার নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কমতে শুরু করেছে তিস্তা, ব্রহ্মপূত্রনদসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি।
এদিকে পানি কমলেও তিস্তা নদী অববাহিকায় ৪টি ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে পরেছে। জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন এবং উলিপুর উপজেলার থেতরাই ও বজরা ইউনিয়নে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বজরা ইউনিয়নের কালপানি বজরা ও সাধুয়াদামারহাট গ্রামে তীব্র ভাঙন শুরু হওয়ায় লোকজন বাড়ি সড়াতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকেও জরুরী ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।
বজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাইয়ুম সর্দার জানান, ভাঙন প্রতিরোধে বজরা ইউনিয়নে ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় কাজ শুরু না করায় চলতি সপ্তাহে ৬টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। হুমকীতে রয়েছে ১০টি বাড়িসহ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।এরমধ্যে কালপানি বজরা ও সাধুয়াদামারহাট গ্রামের শাহজাদি, আশরাফুল, হান্নান, মুকুল, মজিদা ও রোসনার বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে।
ওই এলাকার সাতালষ্কার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ারা জানান, কাল যে রাস্তা দিয়ে স্কুলে গেছি, আজ সেই জায়গা নদীগর্ভে চলে গেছে। যে কোন সময় দুটি স্কুল নদীগর্ভে চলে যেতে পারে।
সাধুয়াদামারহাট গ্রামের ফুলবাবু জানান, নদী আমার ২ বিঘা জমি খেয়ে গেছে। আমার মতো মোফাজ্জল ও আশরাফুলের বসতবাড়ি নদীতে চলে গেছে। সরকারিভাবে আমরা নদী ভাঙন রোধে কাজ চাই।
এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার সাহা জানান, আমি ভাঙন কবলিত বজরা ও থেতরাই ইউনিয়ন পরিদর্শন করেছি। জনপ্রতিনিধিদের তালিকা তৈরির জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমাদের কাছে ৩২০টি শুকনা খাবার প্যাকেট রয়েছে। এছাড়াও জিআর’র চাহিদা প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে দুধকুমার নদীতে পানিবৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করা শুরু করেছে। তবে শুক্রবার থেকে কমতে শুরু করেছে পানি। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত দুধকুমার নদীর পানি বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও শুক্রবার পানি ১৬ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে পানি কমলেও জলাবদ্ধতার কারণে নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের কাস ইউনিয়নের ফান্দের চরে ৪ থেকে ৫টি নীচু বাড়িতে পানি উঠেছে বলে স্থানীয়রা জনিয়েছে। একইভাবে ওই উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের কুটি বামনডাঙ্গা চরে নীচু এলাকায় অবস্থিত দুটি বাড়িতে পানি উঠছে বলে স্থানীয় যুবক আশরাফুল ও কাদের জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিব্বির আহমেদ জানান, আমরা বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ খবর নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত বাড়ি তলিয়ে যাওয়ার কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে কিছু নিচু বাড়ি জলবন্দী রয়েছে বলে জেনেছি। তিনি আরও জানান, যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।
সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ও নদী ভাঙন বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল মতিন সরকার জানান, প্রস্তুতি হিসেবে আমাদের কাছে ২ হাজার ৫শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৪৪০ মে.টন জিআর চাল মজুদ রয়েছে। নগদ টাকা রয়েছে ১৪লাখ। তালিকা পেলেই আমরা সাথে সাথে উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ দিয়ে দিবো। তারপরও প্রতি উপজেলায় ৩২০ প্যাকেট করে শুকনো খাবার সরবরাহ করা আছে।
প্রথম থেকে চতুর্থ সাইকেল পর্যন্ত "সামগ্রিক দক্ষতা" মূল্যায়নে সারা দেশের ৬৪টি টিটিসির মধ্যে ঝালকাঠি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) শতকরা ৮৭ শতাংশ দক্ষতা অর্জন করে সারাদেশে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে।
বাংলাদেশ কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় কারিগরি শিক্ষা বিষয়ক এসেট (ASSET) প্রকল্পের ৫ম সাইকেল সমাপনী ও ৬ষ্ঠ সাইকেল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান গত ১৪ আগষ্ট অধিদপ্তরের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সচিবসহ বিএমইটি'র (BMET) সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঝালকাঠি টিটিসির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শামীম হোসাইন বলেন, 'এই প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অর্জনের জন্য এখানে কর্মরত সকল ট্রেড ইনচার্জ, প্রশিক্ষক, অতিথি প্রশিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আগামীতে আরও ভালো ফলাফল অর্জনের লক্ষ্যে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই।'
উল্লেথ্য, 'ঝালকাঠির সরকারী টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) এই জেলার একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এটি মূলত দক্ষ জনশক্তি তৈরীর জন্য বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। এখানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, সেলাই প্রশিক্ষণ, ওয়েল্ডিং সহ বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং নারীরাও বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। ঝালকাঠি টিটিসি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখছে।
কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে এলাকাবাসী।
শুক্রবার বেলা ১২ টার দিকে উপজেলার দামিহা ইউনিয়নের সিংগোয়ারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে গ্রামের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার শত শত মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, তাড়াইল উপজেলার কাজলা গ্রামটিতে কিছুদিন আগেও মাদক সেবনকারী বা মাদক ব্যবসায়ী ছিল না। কিন্তুু বর্তমানে হাত বাড়ালেই খুব সহজে মিলছে মাদকদ্রব্য। মাদক সরবরাহকারী একটি চক্র এই এলাকায় শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মাদকে ছেয়ে গেছে এখানকার বিভিন্ন অলিগলি। এসব মাদকদ্রব্যের বেশির ভাগ ক্রেতাই হচ্ছে বেকার যুবক। এতে এলাকায় বাড়ছে চুরি ও ছিনতাই। অনেকে প্রকাশ্যেই মাদক গ্রহণ করছে এবং বিক্রি করছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের যুবসমাজ ধ্বংস হতে বেশি সময় লাগবে না। মাদকের এত ছড়াছড়ি থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
দামিহা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রুহুল আমিন বলেন, কিছুদিন আগেও কাজলা গ্রামটিতে মাদকসেবী বা ব্যবসায়ী কেউ ছিল না। কিন্তুু বর্তমানে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। যেমন বেড়েছে মাদকসেবী, তেমনি বেড়েছে ব্যবসায়ীর সংখ্যাও। তিনি বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
মানবন্ধনে তাসলিমা-হাসেম ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান ও সমাজকর্মী অ্যাডভোকেট মাহফুজুল হক বলেন, শুধু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একক প্রচেষ্টায় মাদক নির্মূল করা যাবে না। পরিবার থেকে সচেতনতা শুরু করতে হবে, সন্তানদের পারিবারিক বন্ধন বাড়াতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে তরুণ সমাজ রক্ষা করতে হবে। অন্ধকার গহীন অরণ্যে হারিয়ে যাবে আগামীর ভবিষ্যৎ। মাদকসেবী একটি মারাত্মক সমস্যা তবে সম্মিলিত প্রয়াসে সমাধান সম্ভব।
মানববন্ধনে শিক্ষক হাসিবুর রহমান, ব্যাংক কর্মকর্তা সোহেল রানা, সাবেক সেনা সদস্য ইসহাক মিয়া, ইউপি সদস্য রুহুল আমিন ও সাবেক ইউপি সদস্য খোকন মিয়া, ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষ্যে দেয়া বাণীতে বলেছেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রীতির এই বন্ধনকে অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, সমাজে বিদ্যমান শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে কেউ যেন নষ্ট করতে না পারে সেজন্য সকলকে সজাগ থাকতে হবে।
শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে আজ শুক্রবার এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা এ সব কথা বলেছেন। তিনি এ সময় ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষ্যে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ধর্মাবতার শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। সমাজে সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে শ্রীকৃষ্ণ আজীবন ন্যায়, মানবপ্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখেছেন, সেখানেই অপশক্তির হাত থেকে শুভশক্তিকে রক্ষার জন্য আবির্ভূত হয়েছেন।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের সংস্কৃতির অনন্য বৈশিষ্ট্য। আবহমানকাল থেকে এ দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করবে বলে উল্লেখ করে তিনি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে ভরপুর বৈষম্যমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান।
মন্তব্য