৬৬ কোম্পানির লেনদেনের চিত্র পর্যালোচনা করে পুঁজিবাজারে শেয়ারের সর্বনিম্ন শেয়ার দর বা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি এখনও।
গত বছর করোনা সংক্রমণের পর মূল্যপতন ঠেকাতে এই ফ্লোর প্রাইস ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রায় এক বছর পর গত ৭ এপ্রিল এর মধ্যে থেকে ৬৬টি কোম্পানির এই সর্বনিম্ন দর তুলে নেয়া হয়।
একটি নির্দিষ্ট অংকের নিচে নামা সম্ভব ছিল না বলে কোম্পানিগুলো শেয়ার দর ধরে রাখতে পারলেও সেগুলোর লেনদেন হচ্ছিল না বললেই চলে।
ফ্লোর প্রত্যাহারের পর প্রথম কার্যদিবসে বেশিরভাগ কোম্পানিই একদিনে সর্বোচ্চ পরিমাণ (শতকরা ১০ শতাংশ) দর হারানোর পর বিএসইসি জানায়, এই ৬৬ কোম্পানির দর দিনে কমতে পারবে সর্বোচ্চ দুই শতাংশ, কিন্তু বাড়তে পারবে ১০ শতাংশ। এর পরে দুই শতাংশ হারেই দাম কমতে থাকে বেশিরভাগ কোম্পানির।
তবে কিছু দিনের মধ্যেই দেখা যায় উল্টো চিত্র। দাম বাড়তে থাকে কোম্পানিগুলোর। এক পর্যায়ে বেশিরভাগ কোম্পানির ক্ষেত্রে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের দিন যত দাম ছিল, তার চেয়ে ছাড়িয়ে যায় দাম।
বেশ কিছু কোম্পানি দর হারলেও এদের বেশিরভাগের দাম কমেছে খুবই কম।
আর যে লাভ হয়েছে, সেটি হলো, দীর্ঘ দিন লেনদেন না হওয়ার কারণে যে টাকা আটকে ছিল, সেটি আবার বিনিয়োগ হতে থাকে।
বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক বছর আগে যে উদ্দেশ্যে পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস দেয়া হয়েছিল সেটি খুবই কার্যকর হয়েছে। এবং তখন ফ্লোর প্রাইস দেয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থাও বেড়েছিল। এক বছর পর পুঁজিবাজারে যে অবস্থায় ফিরেছে তাতে সেই আস্থার জায়গাটি অনেক শক্ত হয়েছে। ফলে এখন মনে হয় ফ্লোর প্রাইসের আর প্রয়োজন নেই।’
তাহলে কবে প্রত্যাহার হচ্ছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম পর্যায়ে ৬৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বাতিল করেছি। তিনটি ক্যাটাগরিতে তা করা হয়েছিল। প্রথম ক্যাটাগরি হিসাবে যেসব কোম্পানির শেয়ার দর ৫০ টাকার নীচে সেগুলোর বাতিল করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোরও ফ্লোর প্রাইস বাতিল করা হবে।’
ফ্লোর প্রাইস দেয়ার সময় বলা হয়েছিল, এমন সময় তা প্রত্যাহার করা হবে, যখন বিনিয়োগকারীরা এর প্রভাব বুঝবেই না। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে ফ্লোর প্রত্যাহারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
পরে বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পুঁজিবাজার বিষয়ক বৈশ্বিক জোট ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশন-আইওএসসিও এর সদস্য বাংলাদেশ। সেই জোট এই সিদ্ধান্তকে বাজারে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে। আর এ কারণে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে র্যাংকিং কমে যাবে।
নিউজবাংলার সঙ্গে এক আলোচনায় কমিশনের চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল- ইসলাম বলেন, ‘আমরা যদি মার্কেটকে প্রভাবিত করি, কারসাজি করি তাহলে আইওএসসিওর সদস্য হিসেবে আমাদের অবস্থান খারাপ হবে। একটি ফ্লোর প্রাইস থাকার পর আরেকটা ফ্লোর প্রাইস ম্যানিপুলেট করা আমাদের জন্য ভয়াবহ হবে। সে জন্য আমরা এখন বাজারকে ফ্রি ফ্লোর দিতে চাই। মার্কেটই মার্কেটের অবস্থান নিয়ে যাবে।’
কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস পুঁজিবাজারের কোনো অংশ না। ফ্লোর দিয়ে স্বল্প সময়ে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীল রাখা গেলেও দীর্ঘ সময়ের জন্য রাখা ঠিক নয়। এখন পুঁজিবাজার যে অবস্থায় আছে তাতে বিকল্প কোনো কিছু দিয়ে শেয়ার দর ধরে রাখারও প্রয়োজন হবে না।’
সেই কোম্পানিগুলোর কী চিত্র
যে ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হয়েছে তার মধ্যে পিপলস লিজিং এর লেনদেন স্থগিত আছে। বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের লেনদেন হওয়ার ইতিহাস নেই বললেই চলে।
বাকিগুলোর মধ্যে ২৪ কার্যদিবসে অন্তত ৩৭টি কোম্পানির শেয়ার দর উঠে এসেছে ফ্লোর প্রাইসের উপরে।
কমতে দেখা গেছে ২৭টির দাম।
যেসব কোম্পানির শেয়ার দর এখনও ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করতে পারেনি, তার বেশিরভাগের শেয়ার দর গত তিন চার কার্যদিবসে বেড়েছে।
যেগুলোর দাম বেড়েছে
শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মেট্রো স্পিনিং মিলস লিমিটেডের। এই কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস ছিল ৮ টাকা ৫০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা পয়সা। শতকরা হিসেবে দাম বেড়েছে ৫৩ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কাট্টালী টেক্সটাইলের দর। এর ফ্লোর প্রাইস ছিল ৯ টাকা ৩০ পয়সা। প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ১০ পয়সা।
প্রাইম টেক্সটাইলের ফ্লোর প্রাইস ছিল ১৫ টাকা ৮০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১৮ টাকা ৭০ পয়সা।
স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৪০ টাকা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৪৮ টাকা পয়সা।
রূপালী ব্যাংকের ফ্লোর প্রাইস ছিল ২৪ টাকা ৪০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ২৯ টাকা।
এসস্কয়ার নিট কম্পোটিজ লিমিটেডের ফ্লোর প্রাইস ছিল ২১ টাকা ৯০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ২৬ টাকা ৯০ পয়সা।
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৪০ টাকা ১০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৪৫ টাকা ৫০ পয়সা।
আইপিডিসি ফিন্যান্স লিমিটেডের ফ্লোর প্রাইস ছিল ২২ টাকা ৬০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ২৬ টাকা।
ফিনিক্স ফিনান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ফ্লোর প্রাইস ছিল সাত টাকা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ৭০ পয়সা।
ফিনিক্স ফিনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ফ্লোর প্রাইস ছিল ২২ টাকা ৭০ পয়সা। সোমবার এর দাম দাঁড়িয়েছে ২৪ টাকা ৮০ পয়সা।
এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ডের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৭ টাকা ৮০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ৩০ পয়সা।
বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস লিমিটেডের ফ্লোর প্রাইস ছিল ১৬ টাকা ২০ পয়সা। সোমবার লেনদেন দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা।
আর এন স্পিনিং মিলসের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৩ টাকা ৭০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৪ টাকা ৭০ পয়সা।
এডভান্ট ফার্মা লিমিটেডের ফ্লোর প্রাইস ছিল ২২ টাকা ৮০ পয়সা। দর কমে ৪ মে হয়েছিল ১৮ টাকা। সোমবার দর দাঁড়িয়েছে ২২ টাকা ৭০ পয়সা।
এএফসি এগ্রো বায়োটেক লিমিটেডের ফ্লোর প্রাইস ছিল ১৭ টাকা। সোমবার কোম্পানি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৬ টাকা ৭০ পয়সায়।
আইএফআইএল ইসলামী মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান ফ্লোর প্রাইস ছিল ৬ টাকা ২০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৩০ পয়সা।
আরগন ডেনিম স্যুয়েটারের ফ্লোর প্রাইস ছিল ১৯ টাকা ২০ পয়সা। সোমবার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৯ টাকা ৭০ পয়সা।
বেঙ্গল উন্ডশন থার্মোপ্লাস্টিস ফ্লোর প্রাইস ছিল ১৭ টাকা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১৮ টাকা পয়সা।
বিচ হ্যাচারির ফ্লোর প্রাইস ছিল ১৩ টাকা ৬০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ৭০ পয়সা।
সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যাল ফ্লোর প্রাইস ছিল ১২ টাকা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৪০ পয়সায়।
কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ফ্লোর প্রাইস ছিল ২০ টাকা ৭০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ২০ টাকা ৫০ পয়সা।
ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৬ টাকা ৯০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ৪০ পয়সা।
ডেসকোর ফ্লোর প্রাইস ছিল ৩৪ টাকা ৮০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৩৫ টাকা ৫০ পয়সা।
দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেডের ফ্লোর প্রাইস ছিল ১০ টাকা ৪০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ৫০ পয়সা।
ইভিন্স টেক্সটাইলের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৮ টাকা ২০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ৮০ পয়সা।
গ্লোবাল হ্যাভি ক্যামিকেল লিমিটেডের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৩১ টাকা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৩১ টাকা ৫০ পয়সা।
হামিদ ফেব্রিক্স লিমিটেডের ফ্লোর প্রাইস ছিল ১৫ টাকা ৭০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১৬ টাকা ৯০ পয়সা।
প্যাসিফিক ডেনিম লিমিটেডের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৮ টাকা ৫০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ২০ পয়সা।
সাফকো স্পিনিং ফ্লোর প্রাইস ছিল ১১ টাকা ২০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৩০ পয়সা।
জাহিন স্পিনিং মিলসের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৬ টাকা ৩০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ৩০ পয়সা।
রিং সাইন টেক্সটাইলের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৬ টাকা ৪০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৭০ পয়সা।
রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলসের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৭ টাকা ৮০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ৮০ পয়সায়।
সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের ফ্লোর প্রাইস ছিল ১৪ টাকা ৬০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা ৫০ পয়সা।
কুইন সাউথ টেক্সটাইলের ফ্লোর প্রাইস ছিল ২৪ টাকা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ২৫ টাকা ৭০ পয়সা।
শাসা ডেনিমের ফ্লোর প্রাইস ছিল ২১ টাকা ৬০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ২২ টাকা ৪০ পয়সা।
অলেম্পিক একসেসরিসের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৬ টাকা ৮০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ৮০ পয়সা।
নাভানা সিএনজি লিমিটেডের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৩৩ টাকা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৩৫ টাকা ২০ পয়সা।
ফ্লোর প্রাইস থেকে কমেছে
সবচেয়ে বেশি কমেছে এমএল ড্রাইং লিমিটেডের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৫০ টাকা। রোববার দাম ছিল ৩৪ টাকা ৫০ পয়সা। এই কোম্পানিটি ৩০ শতাংশের বেশি দাম হারিয়েছে।
সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের ফ্লোর প্রাইস ছিল ২১ টাকা ৭০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১৮ টাকা ১০ পয়সা।
সোনারগাঁও টেক্সটাইলও অনেক দর হারিয়েছে। এর ফ্লোর প্রাইস ছিল ২৪ টাকা ৫০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ২০ টাকা ৪০ পয়সা।
আরএসআরএম স্টিল মিলসের ফ্লোর প্রাইস ছিল ২২ টাকা ৯০ পয়সা। সোমবার দাম কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ টাকা ৮০ পয়সা।
ওয়াইমেক্স ইলেকট্রোডের ফ্লোর প্রাইস ছিল ২৪ টাকা ৩০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১৯ টাকা ৮০ পয়সা।
কেপিসিএলের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৪৫ টাকা ৩০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৩৯ টাকা ১০ পয়সা।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ফ্লোর প্রাইস ২৪ টাকা ১০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ২১ টাকা ৪০ পয়সা।
আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ফ্লোর প্রাইস ছিল ২৬ টাকা ২০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ২৪ টাকা ৬০ পয়সায়।
ফার ক্যামিকেলের প্রাইস ছিল ৯ টাকা ৮০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ৪০ পয়সা।
গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রোর ফ্লোর প্রাইস ছিল ১৬ টাকা ৭০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা ৪০ পয়সা।
ইন্দোবাংলা ফার্মাসিউটিক্যালের ফ্লোর প্রাইস ছিল ১৯ টাকা ১০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ৬০ পয়সা।
খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের ফ্লোর প্রাইস ছিল ১৭ টাকা ৬০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ৭০ পয়সা।
নাহী অ্যালুমিনিয়ামের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৪৭ টাকা ১০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৪২ টাকা ১০ পয়সা।
সায়হাম কটনের ফ্লোর প্রাইস ছিল ১৬ টাকা ১০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা ১০ পয়সা।
শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ফ্লোর প্রাইস ছিল ১৫ টাকা ১০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ৭০ পয়সা।
প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৪৮ টাকা ৯০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৪৬ টাকা ১০ পয়সা।
সায়হাম টেক্সটাইলের ফ্লোর প্রাইস ছিল ২৪ টাকা ৫০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ২০ টাকা ৯০ পয়সা।
উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৪৩ টাকা ৬০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৩৯ টাকা।
ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ফ্লোর প্রাইস ছিল ১১ টাকা ৫০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৮০ পয়সা।
উসমানিয়া গ্লাস শিটের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৪৪ টাকা ৮০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৪২ টাকা ৮০ পয়সা।
সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৪৮ টাকা ১০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৪৭ টাকা ৫০ পয়সা।
ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৩৯ টাকা ৫০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৩৩ টাকা ৬০ পয়সা।
সিলভা ফার্মার ফ্লোর প্রাইস ছিল ১৮ টাকা ৩০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ৯০ পয়সা।
দুলামিয়া কটনের ফ্লোর প্রাইস ৪৮ টাকা ১০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৪৫ টাকা ৪০ পয়সা।
ভিএফএস থ্রেড ডাইংয়ের ফ্লোর প্রাইস ছিল ২২ টাকা ৫০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ২২ টাকা ১০ পয়সা।
নূরানী ডাইংয়ের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৭ টাকা ৭০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ৬০ পয়সা।
ইয়াকিন পলিমারের ফ্লোর প্রাইস ছিল ১১ টাকা ১০ পয়সা। সোমবার দাম দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৯০ পয়সা।
আরও পড়ুন:শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
মন্তব্য