দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে বছরে ২ হাজার ২২৭ ডলার হয়েছে। এর আগে সবশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী আয় ছিল ২ হাজার ৬৪ ডলার। অর্থাৎ করোনার বছরেও আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৮ শতাংশ।
সোমবার মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে মাথাপিছু আয় বাড়ার খবর দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশিদের মাথাপিছু আয় চলতি অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৬৪ ডলার। নতুন আয় ২ হাজার ২২৭ ডলার।’
সোমবারের মুদ্রা বিনিময় হার অনুযায়ী এই অর্থ বাংলাদেশি মুদ্রায় হয় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৮ টাকা। এটি বার্ষিক হিসাবে। মাসে মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৫৮৯ টাকা।
জিডিপিও এ সময় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি।
আগে জিডিপি ছিল ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭ টাকা। যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখ ৪৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
এই অর্জনে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে মন্ত্রিসভা।
খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ‘এটা একটা গুড অ্যাচিভমেন্ট। কাকতালীয়ভাবে আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। আজকের দিনেই এ অর্জন হলো। এজন্য তাকে ধন্যবাদও জানানো হয়েছে।’
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক সম্প্রসারণ নামে ২০২০ সালে পটিয়ার ইন্দ্রপোল শিল্প এলাকার ১৪টি কারখানা ভেঙে গুড়িয়ে দেয় সওজ। ওই সময় কেউ যাতে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান ভাঙায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারেন সেজন্য লাঠিয়াল নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী প্রকাশ বিচ্ছু শামছু। এরপরও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিরোধের সামশুল হক চৌধুরী ও স্থানীয় প্রশাসন প্রতিশ্রুতি দেয় ভাঙনের কবলে পড়া ১৪ লবণ শিল্প কারখানার শ্রমিকদের ভিন্ন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। অন্যস্থানে শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য জায়গা ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে শিল্প মালিকদের। তবে স্থানীয় শিল্প মালিকদের অভিযোগ, লবণের ১৪টি কারখানা গুঁড়িয়ে দেওয়ার দীর্ঘদিন পরও লবণ শিল্পের জন্য জায়গা বা আর্থিক ক্ষতিপূরণ কিছুই পাননি ব্যবসায়িরা। বিকল্প কোনো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়নি ওই ১৪টি কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের।
পটিয়ার ইন্দ্রপোল এলাকার লবণ শিল্পের মালিকরা জানান, ‘দেশের অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের মতো লবণ শিল্পও ধ্বংস করেছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার। দেশের অষ্টম প্রধান লবণ পরিশোধন এলাকা পটিয়ার ইন্দ্রপোল। এখানে ছোট বড় ৫০টি কারখানা ছিল। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক সম্প্রসারিত সড়কের ধারে পড়ায় ১৪টি কারখানা সড়ক বিভাগ সম্পূর্ণভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
যদিও প্রথম দিকে উন্নয়ন সহযোগী জাইকা ও সওজ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল- কারখানার ভূমি, যন্ত্রপাতি, অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণ দিয়েই তারা কাজ শুরু করবে। আর শ্রমিকদের পূণর্বাসন করা হবে। মালিকদের অন্য জায়গায় ভূমি দেয়া হবে।
ব্যবসায়িদের ভাষ্য, ক্ষতিগ্রস্ত লবণশিল্প কারখানার ক্ষতিপূরণ প্রদানে গড়িমসি দেখে আদালতের শরাণাপন্ন হন শিল্প লবণ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান করিম সল্টের মালিক রেজাউল করিম। আদালত নিষেধাজ্ঞা দিলেও তা অমান্য করে স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে সামশুল হক চৌধুরী ভেঙে দেন একে একে ১৪টি কারখানা।
ব্যবসায়িদের অভিযোগ, যারা তাকে কমিশন দিয়েছে তাদেরকে কিছু ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে। আর ১০টি কারখানার মালিকদের বিএনপি-জামায়াত আখ্যা দিয়ে (ট্যাগ লাগিয়ে) রেজাউল করিম সহ অন্য মালিকদের ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত করে ফ্যাসিবাদী আ’লীগ সরকার।
পটিয়ার ইন্দ্রপোলের করিম সল্টের দুটি কারখানায় উৎপাদন হতো ডিটারজেন্ট ফ্যাক্টরির প্রধান কাঁচামাল সোডিয়াম লবণ। লিভার ব্রাদার্স, কহিনুর ক্যামিকেলসহ বড় কারখানায় প্রতি মাসে ৩০০ টন সোডিয়াম লবণের চাহিদা মেটাত এই কারখানাগুলো। ২০২০ সালে কারখানাগুলো উচ্ছেদের পর সোডিয়াম লবণে আমদানি নির্ভর হয়ে পড়ে লিভার ব্রাদার্সসহ ডিটারজেন্ট কারখানাগুলো। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় শুরু হয়।
পটিয়া লবণ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক জানান, ‘২০১৫ সালে সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু করার আগে দাতা সংস্থা জাইকা, রোডস এন্ড হাইওয়ে এবং প্রকল্প পরিচালক মিল মালিকদের সঙ্গে একাধিক মিটিং করেন। সেখানে তারা প্রতিশ্রুতি দেয় কারখানা মালিকদের ভূমি, কারখানার যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোর পৃথক-পৃথক ভাবে ক্ষতিপূরণ দিবে এবং অন্যত্র কারখানা স্থানান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমির ব্যবস্থা করবে। কিন্তু পটিয়ার তৎকালীন আ’লীগ দলীয় এমপি ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের কথা বলে জোর করেই কারখানাগুলো তার প্রশাসনকে দিয়ে ভেঙে দেয়।
এলাকার সর্ব বৃহৎ কারখানা করিম ও আমান সল্টের মালিক রেজাউল করিম অভিযোগ করে বলেন, সাবেক এমপি সামশুল হক চৌধুরী যোগসাজসে তার ২টি কারখানাসহ ১৪টি কারখানা জোরপূর্বক ভেঙে দেয়া হয়। তিনি হাইকোর্ট থেকে নিষেধাজ্ঞা আনার পরও গায়ের জোরে শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প বলে সরকারি কর্মকর্তাদের বাধ্য করেন আদালতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করতে। রেজাউল করিম বর্তমানে কারখানা হারিয়ে ও ব্যাংক ঋণে দেউলিয়া হয়ে পাগলের মতো ঘুরছেন। এক সময় পটিয়া ও চট্টগ্রামে ব্যবসায়ী জগতে নামকরা শিল্পপতি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, জাইকা, রোডস এন্ড হাইওয়ে সবাই আমাকে শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ক্ষতিপূরণ দেয়ার। তিনি ২৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরনের দাবি জানিয়ে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন। ‘আল্লাই সল্টের’ মালিক ফজলুল হক ৫ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। একদিকে ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়া ও অন্যদিকে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় মিল মালিকরা এখন দেউলিয়া।
১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান সড়কের পটিয়া ইন্দ্রপুল ব্রিজ এলাকায় দেশের বৃহৎ লবণ কারখানা গড়ে ওঠে। একসময় ছোট বড় ৫০ টির মত লবণ কারখানা থাকায় দেশের মোট লবণের চাহিদার এক তৃতীয়াংশ এখান থেকেই পূরণ হতো। উচ্ছেদের কারণে- আল্লাই সল্ট, জালালাবাদ সল্ট, মর্ডান সল্ট, করিম সল্ট, উম্মে আমান সল্ট, ফরহাদ সল্ট, শাহচান্দ অটো রাইচ মিল, মর্ডান রয়েল সল্ট, চান্দখালী সল্ট, হাজী রফিকুল ইসলামের অফিস, দ্বীন সল্টসহ ১৪টি কারখানা বন্ধ রয়েছে।
মিল মালিকরা ক্ষোভের সাথে বলেন, সাবেক এমপি হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ক্ষমতার অপব্যবহার করে উচ্ছেদের নামে ইন্দ্রপুল শিল্প এলাকাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করেছেন।
দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণের টাকা বকেয়া থাকার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ইমামরা সমাজের অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। নৈতিকতা ও আদর্শিক মূল্যবোধের বিকাশে তাদের অবদান বিশাল। জনগণের সঙ্গে তাদের সংযোগ সরাসরি। তারা সামাজিক শক্তির প্রতিভূ তাই তাদের সংগঠিত করা গেলে সমাজ পরিবর্তনের ধারাকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।
রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জাতীয় হিফজুল কোরআন ও সিরাত প্রতিযোগিতা এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামদের জাতীয় সম্মেলন ২০২৫ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
খালিদ হোসেন বলেন, ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার (২০০১) পর থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৬৩ হাজার ১৯৭ জন ইমাম ও মুয়াজ্জিনের মধ্যে সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ ও অনুদান হিসেবে ৩৭ কোটি ৯২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ কোটি টাকা উদ্যোক্তাদের ঋণ এবং ২০ কোটি ৯১ লাখ টাকা অফেরতযোগ্য এককালীন অনুদান দেওয়া হয়েছে। ২০২৪-২৫ সালে বিতরণ করা হয়েছে ৪ কোটি ১১ লাখ টাকা।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ইসলামের অপব্যাখ্যাকে রুখে দেওয়া, সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা এবং সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি ও সহনশীলতা প্রতিষ্ঠার এখন গুরুত্বপূর্ণ সময়। আমরা চাই এক শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ- যেখানে মসজিদ হবে জ্ঞানের কেন্দ্র, ইমাম হবেন নেতৃত্বের দিশারী। প্রতি বছর আমাদের প্রতিযোগিরা আন্তর্জাতিক হিফজ ও ক্বিরাত প্রতিযোগিতায় যে সাফল্য অর্জন করছে তা গোটা জাতির জন্য গর্বের বিষয়। এটি প্রমাণ করে-আমাদের সন্তানদের মধ্যে কোরআনের আলো জ্বলছে। এখন দরকার এই আলোর ব্যবস্থাপনা।
আর সেই কাজেই ইমামদের প্রশিক্ষণ, উৎসাহ ও অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক। সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান।
এছাড়া অনুষ্ঠানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি, মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হক, ড.খলিলুর রহমান মাদানী, ওলামায়ে কেরাম, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা ও প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বাইতুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।
সম্মেলনে হিফজুল কোরআন ও সিরাত প্রতিযোগিতার জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ী তিন গ্রুপের ৯ জন করে প্রতিযোগী এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামদের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে ৩ জন শ্রেষ্ঠ ইমাম, বিভাগীয় পর্যায়ে ২৪ জন, জেলা পর্যায়ে ১৯২ জন ইমাম এবং ৬৪ জন শ্রেষ্ঠ খামারি ইমামকে নগদ অর্থ, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার ২ লাখ টাকা, দ্বিতীয় দেড় লাখ, তৃতীয় ১ লাখ টাকা এবং সিরাত প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার ৫০ হাজার, দ্বিতীয় ৪৫ হাজার এবং তৃতীয় ৪০ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়। এছাড়া শ্রেষ্ঠ ইমাম ও খামারি ইমামদের ক্ষেত্রেও যথা নিয়মে নগদ অর্থ, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনে সারাদেশে অনুপস্থিত ছিলেন ২২ হাজার ৩৯১ (২২,৩৯১) জন পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার সময় নিয়মভঙ্গের দায়ে ৪১ শিক্ষার্থী ও ১ শিক্ষকসহ মোট ৪২ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
রোববার সকাল ১০টায় বাংলা (আবশ্যিক) দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার মাধ্যমে দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষা বোর্ডগুলোর পাঠানো পরীক্ষাসংক্রান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি।
রোববার সারাদেশে মোট ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৫১ হাজার। এর মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৮৭৫ (১,০৯৭,৮৭৫) জন। অর্থাৎ, অনুপস্থিতির হার প্রায় ২ শতাংশের কাছাকাছি। সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে ঢাকা বোর্ডে। সেখানে উপস্থিতির হার বেশ ভালো হলেও অনুপস্থিত ছিল ৩,৬৫৫ জন এবং বহিষ্কৃত হয়েছে ৮ জন।
কুমিল্লা বোর্ডে অনুপস্থিতির হার তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল—২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এ বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিল ৮৬ হাজার ৯৮৯ জন, যার মধ্যে ২,৬৮২ জন অনুপস্থিত ছিল এবং ২ জনকে বহিষ্কার করা হয়। দিনাজপুর, রাজশাহী, সিলেট ও কুমিল্লা বোর্ডেও অনুপস্থিতির সংখ্যা ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে চট্টগ্রাম ও যশোর বোর্ডে অনুপস্থিতির হার কিছুটা কম ছিল। এছাড়া ময়মনসিংহ বোর্ডে অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ৩ শিক্ষার্থীর সঙ্গে একজন শিক্ষককেও বহিষ্কার করা হয়েছে।
অন্যদিকে, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আরবি প্রথম পত্রের (সাধারণ ও বিজ্ঞান শাখা) পরীক্ষা হয়। এ বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৮৩ হাজার ৭৮৩ জন। অংশগ্রহণ করেন ৭৯ হাজার ২৯২ জন এবং অনুপস্থিত ছিল ৪ হাজার ৪৯১ জন। এখানে সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থী বহিষ্কৃত হয়েছেন। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫২ জন শিক্ষার্থী। অনুপস্থিত ছিল ২ হাজার ২ জন, এবং বহিষ্কৃত হয়েছেন ৮ জন শিক্ষার্থী।
শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, দেশের বাইরে ঢাকা বোর্ডের অধীনে ৮টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সারাদেশে একযোগে শুরু হয়েছে ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা। মোট ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে অংশ নিচ্ছেন প্রায় ১২ লাখ ৫১ হাজার পরীক্ষার্থী। প্রথম দিন অনুপস্থিত ছিল ১৯ হাজার ৭৫৯ জন শিক্ষার্থী। আর শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয় ৪৩ জনকে।
প্রসঙ্গত, এইচএসসি ও সমমানের লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে ১০ আগস্ট। এরপর ১১ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে ব্যবহারিক পরীক্ষা।
১৬ জুলাই ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবসের’ পরিবর্তে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া ৮ আগস্ট ঘোষিত ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ পালন করা হবে না। ৫ আগস্ট ‘গণঅভ্যুত্থান’ দিবস উদযাপন করা হবে। রোববার উপদেষ্টা কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর তিন দিন পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
এর আগে ২৫ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক পরিপত্রে বলা হয়েছিল, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন ৫ আগস্টকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দিন ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। এছাড়া গণআন্দোলন চলাকালে রংপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের নিহত হওয়ার দিন ১৬ জুলাইকে ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশে প্রচলিত কোটা প্রথার সংস্কারের দাবিতে গত বছরের জুলাইয়ে শুরু হওয়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ১৬ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রথম নিহত হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ।
৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা নিয়ে আপত্তি জানান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও আখতার হোসেন। এখন উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত নিল, ৮ আগস্ট কোনো বিশেষ দিবস পালন করা হবে না। আর ১৬ জুলাই ‘জুলাই শহীদ দিবস’ পালন করা হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা আখ্যায়িত করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। অন্যতায় সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। রবিবার (২৯ জুন) অন্তর্বর্তী সরকারের এক বিবৃতিতে এমন কথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের বাজেট ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নমুখী কার্যক্রম পরিচালনার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো দুর্বল রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ অনেক কম। এর মূল কারণ হলো আমাদের রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনার নানা দুর্বলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার সব অংশীজনের পরামর্শ অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বিবৃতি জানানো হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, সরকার গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, রাজস্ব সংস্কারের কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী নজিরবিহীনভাবে গত ২ মাস ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অন্যায় ও অনৈতিকভাবে ব্যাহত করে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে আন্দোলনের নামে চরম দুর্ভোগ তৈরি করেছে, যা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।
সরকার জানিয়েছে, সংস্কারের বিরোধিতা ছাড়াও অর্থ বছরের শেষ ২ মাসে তারা রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। এই তথাকথিত আন্দোলন পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক, যা জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক অধিকারের চরম পরিপন্থি।
‘সরকারের পক্ষ থেকে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি বিবেচনায় নেওয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়া হয় এবং আলোচনায় আসার আহ্বান জানালেও তারা তা অগ্রাহ্য করে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান না করে তারা আন্দোলনের নামে অনমনীয় অবস্থান নিয়ে ক্রমাগত দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করে চলেছে।
‘এ পরিস্থিতিতে, অতি জরুরি আমদানি-রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কার্যক্রম চলমান রাখার জাতীয় স্বার্থে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন সব কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনের সর শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, আমরা আশা করি, অনতিবিলম্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলে ফিরে যাবেন এবং আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসবেন। অন্যথায় দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে।
দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় পুলিশের ১৪ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ৩(গ) অনুসারে ‘পলায়নের অপরাধে’ অভিযুক্ত হওয়ায় বিধি ১২ উপবিধি (১) অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকালীন সময়ে তারা খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হয়েছে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
এসব কর্মকর্তার মধ্যে তিনজন পুলিশ সুপার, আটজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও দুজন সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন।
বরখাস্ত হওয়া ১৪ কর্মকর্তা হলেন, বরিশালে র্যাব-৮ এর সিপিএসসির ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমান মনির, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এস. এম. শামীম, সুনামগঞ্জের ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুবাইয়াত জামান, উখিয়ায় ৮ এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইমরুল, রাঙ্গামাটির ডিআইজি এপিবিএনের (পার্বত্য জেলাসমূহ) কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান মোল্ল্যা, নারায়ণগঞ্জের সাবেক পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, রংপুর জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান, রাজারবাগের পুলিশ টেলিকম সংস্থার টেলিকম অফিসার (এএসপি) মাহমুদুল হাসান, কক্সবাজার ১৬ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখারুল ইসলাম, ঢাকার সাবেক পুলিশ সুপার এটিইউ মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন, সিলেটের ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আখতারুল ইসলাম, টাঙ্গাইলের নৌপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস. এম জাহাঙ্গীর হাছান, জামালপুরের ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিশু বিশ্বাস ও রংপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আল ইমরান হোসেন।
আগামী ৫ আগস্ট ‘গণঅভ্যুত্থান’ দিবস উদযাপন করা হবে। এছাড়া ১৬ জুলাই ‘জুলাই শহীদ’ দিবস পালন করা হবে।
রবিবার (২৯ জুন) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এমন তথ্য দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, ৮ আগস্টের জন্য কোনো বিশেষ উদযাপন থাকবে না।
এর আগে সরকার ৫ আগস্টকে ‘জুলাই অভ্যুত্থান দিবস’ এবং ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের অপসারণের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয় ৮ আগস্ট।
মন্তব্য