ঈদের ছুটির আগে পুঁজিবাজারের আচরণ নিয়ে বাজার বিশ্লেষকদের মধ্যে আশাবাদ দেখা দিয়েছিল, তার প্রতিফলন দেখা গেল ঈদ শেষে প্রথম কর্মদিবসে।
ব্যাংক, বস্ত্র, ওষুধ ও রসায়ন ও আরও নানা খাতে দর বৃদ্ধির প্রবণতায় সূচকে উত্থান হয়েছে। ব্রোকারেজ হাউজে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি কম থাকলেও লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি হয়েছে।
প্রতি বছর ঈদের আগে টাকা তোলার প্রবণতায় বাজারে দর পতন একটি স্বাভাবিক চিত্র। এবার লকডাউন নিয়ে ছিল আতঙ্কও। তবে এবার সেই চিত্র ছিল না বাজারে। সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনও।
ছুটির আগে ব্যাংক ও বস্ত্র খাতের সুদিনের আভাস দিয়ে ঈদের ছুটিতে গিয়েছিল পুঁজিবাজার। ছুটি শেষে প্রথম কার্যদিবস রোববারও বেশি চাঙ্গাভাব মূলত এই দুই খাতেই। বেড়েছে প্রায় সবকটি ব্যাংক ও বস্ত্র কোম্পানির শেয়ার মূল্যও। তবে লকডাউনের পর থেকে টানা বাড়তে থাকা বিমা খাতে দেখা গেছে ভাটার টান।
লেনদেনে ব্যাংক খাতে তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে রোববার দর কমেছে মাত্র একটির। পাল্টায়নি পাঁচটির। বাকি ২৫ ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে।
বস্ত্র খাতের উত্থান ছিল সবচেয়ে বেশি। এ খাতের তালিকাভুক্ত ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৪৬টির। কমেছে আটটির। দর পাল্টায়নি দুটির।
টানা দর বাড়তে থাকা বিমা খাতের শেয়ার দর কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির। এদিন লেনদেনে থাকা ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে ৩৩টির। দর পাল্টায়নি চারটির। দর বেড়েছে ১৩টি কোম্পানির।
সকাল ১০টায় লেনদেনের শুরুতে পাঁচ মিনিটে সূচক বাড়ে ৩০ পয়েন্টে। তারপর ২২ মিনিটের শেয়ার বিক্রির চাপে ধাক্কা লাগে সূচকে। কমে আসে ১৬ পয়েন্ট। তবে এরপর আর কমেনি, সূচক শুধুই বেড়েছে, যা লেনদেন শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে ৬২ পয়েন্ট। লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২৩১টির। কমেছে ৮৮টির। দর পাল্টায়নি ৪৯টির।
সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধিতে বস্ত্র খাত
দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া চারটি কোম্পানির মধ্যে দুটি ছিল বস্ত্র খাতের। একটি ছিল প্রকৌশল খাতের, আরেকটি ছিল ওষুধ ও রাসায়ন খাতের।
বস্ত্র খাতের দুটি কোম্পানির মধ্যে নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ১০ শতাংশ। এবং জেড ক্যাটাগরির কোম্পানি তুং হাই নিটিং কোম্পানির শেয়ার দরও বেড়েছে দিনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ।
জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সায়হাম টেক্সটাইল মিলসের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ। রিং সাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
ডেল্টা স্পিনিংয়ের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। হামিদ ফেব্রিকসের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ।
ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার বলেন, ‘বস্ত্র খাতের প্রতি আগ্রহের কারণ কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ দেয়ার সময় চলে এসেছে। বেশিরভাগ কোম্পানির অর্থবছর শেষে হচ্ছে জুন মাসে। এছাড়া এ খাতের অনেক কোম্পানির শেয়ার দর এখন অনেক কম।
ব্যাংকের কী চিত্র
টানা ছয় দিন দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পেয়েছে এনআরবিসি ব্যাংকের। এদিন ব্যাংকটির শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ১৯ টাকা ৬০ পয়সা নিয়ে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর প্রথম কর্মদিবসে দাম দাঁড়িয়েছে ২০ টাকা ৫০ পয়সা।
চলতি বছর প্রথম প্রান্তিতে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তিন গুণ মুনাফা করা প্রাইম ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা। মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বেড়েছে ১ টাকা ৭০ পয়সা।
এ ছাড়া আইএফআইসি ও ইউসিবির ৭০ পয়সা করে, এনবিএলের ৬০ পয়সা, ব্র্যাক, সিটি ও ডাচ বাংলার দাম বেড়েছে ৫০ পয়সা করে। বাকি সবগুলোর দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৩০ পয়সা।
ব্যাংকের মতো উত্থান দেখা গেছে আর্থিক খাতেও। এই খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৬টির। কমেছে কেবল দুটির। একটির লেনদেন স্থগিত কয়েক মাস ধরে। বাকি চারটির দর অপরিবর্তিত ছিল।
এই খাতের কোম্পানির মধ্যে টাকার অংকে সবচেয়ে বেড়েছে আইসিবির শেয়ার। ৭ টাকা ২০ পয়সা বা ৭.৪৪ শতাংশ বেড়ে এখন দাম দাঁড়িয়েছে ১০৪ টাকা।
শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ন্যাশনাল হাউজিং ফিনান্সের দর। ৮.১৩ বা তিন টাকা বেড়ে এই কোম্পানির শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৩৯ টাকা ৯০ পয়সা।
৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতেও গেল আরও একটি ভালো দিন। ৩৭টি ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৩টির। কমেছে মাত্র পাঁচটির দাম। বাকি নয়টির দাম ছিল অপরিবর্তিত।
এখন বিমার পড়তি সময়
৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর পর থেকে কেবল বিমা খাতে ভর করেই এগিয়েছে পুঁজিবাজার। শেয়ারের দাম দেড় থেকে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে এক মাসে।
তবে ঈদের আগে আগে এই খাতে দেখা দেয় পতন। মাঝে একদিন উত্থান ছাড়া বাজার পড়েছে পাঁচ দিন। ঈদ শেষেও একই প্রবণতা দেখা গেল।
সবচেয়ে বেশি দর পতন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে ছিল মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ার দর কমেছে ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
এরপরেই ছিল যথাক্রমে ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ার দর কমেছে ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
এছাড়া সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স, সন্ধানী ইন্স্যুরেন্স, প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ২ শতাংশ পর্যন্ত।
অন্যান্য খাতে যে প্রবণতা
লকডাউনের পর থেকে প্রথমে বিমা, পরে মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এরপর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আর শেষে বস্ত্র খাতে উত্থানের পরও আরও বেশ কিছু খাত ছিল ঘুমিয়েই।
ঈদের ছুটি শেষে বড় খাতগুলোর মধ্যে প্রকৌশলের কোম্পানিগুলোর প্রতিও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা গেল।
এই খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২৮টির। সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি হয়েছে যেসব কোম্পানির, তার মধ্যে আছে প্রকৌশল খাতের সুহৃদ ও বিডি ওয়েল্ডিং। দুটির দরই বেড়েছে একদিনে যত বাড়া সম্ভব ততই।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ২০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৪টির। এই বাতে শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ফাইন ফুডের দর। শেয়ার প্রতি তিন টাকা ২০ পয়সা বা ৬.৯৬ শতাংশ বেড়েছে এই কোম্পানির দর।
তথ্য প্রযুক্তি খাতের ১১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে নয়টির। সবচেয়ে বেশি দুই টাকা বেড়েছে আমার নেটের দর।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৬টির। কমেছে পাঁচটির। আর পাল্টায়নি একদিন দর।
ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২০টির। কমেছে পাঁচটির। আর পাল্টায়নি বাকি ছয়টির দর।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬২ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮১৩ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৮২ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক বেড়েছে ৫ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৯২ পয়েন্টে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৯৯ দশমিক ২০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৮৫৭ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৮৬টির, কমেছে ৭১টির। পাল্টায়নি ৩২টির। মোট লেনদেন হয়েছে ৬৩ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের উদ্যোগে শহীদ ও মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত এবং অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্থতা কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ দোয়া অনুষ্ঠান হয়।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসুদ্দীন খানের সভাপতিত্বে দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাহিদুল হক। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সদস্য সচিব মো. মফিজ উদ্দিনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন আহমেদ নান্নু, কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা। এ সময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন কাপাসিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জয়নাল আবেদীন মণ্ডল, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রবিউল ইসলাম, সিরাজ উদ্দিন মাস্টার, মোজাম্মেল হক, রফিকুল আলম খান, সিরাজ উদ্দিন, কাপাসিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক আফজাল হোসাইন, সদস্য সচিব সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম শাহীন, কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এফ এম কামাল হোসেন প্রমুখ। দোয়া অনুষ্ঠানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের শতাধিক সদস্য অংশগ্রহণ করেন। দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কাপাসিয়া উপজেলা মডেল মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান।
দোয়া অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিগত দিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপির শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তাদের অবদান অনস্বীকার্য। তৎকালীন কাপাসিয়ার কৃতিসন্তান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ্ মুক্তিযোদ্ধাদের ভবন নির্মাণের জন্য ইট এবং টাকার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু তখন দায়িত্বশীলরা তা লুটপাট করে খেয়েছে। তারপর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আর তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। দীর্ঘদিন পর একটি সুষ্ঠু পরিবেশে মুক্তিযোদ্ধারা একত্র হতে পেরে তারা অত্যন্ত খুশি। দীর্ঘ ৭ বছর যাবত নতুন ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। নতুন আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও সংস্কার করে ভবনটি উপজেলা ডায়াবেটিস সেন্টারকে ভাড়ার ভিত্তিতে দেওয়ার সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ১০ আগস্ট গাজীপুর জেলা কমান্ড ৭ সদস্যবিশিষ্ট কাপাসিয়া উপজেলা কমান্ড আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন।
কখনো কি শুনেছেন, প্রজার ভয়ে রাজা নিরুদ্দেশ? শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, এমন ঘটনাই ঘটেছিল নওগাঁয়।
সদর উপজেলার দুবলহাটির জমিদার রাজা হরনাথ রায় চৌধুরীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে সাধারণ কৃষকদের পক্ষ নিয়ে এক সাহসী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন আস্তান মোল্লা। তিনিই আজ নওগাঁবাসীর কাছে কৃষক বিদ্রোহের কিংবদন্তি। জমিদারের অত্যাচার ছিল সীমাহীন। অতিরিক্ত খাজনা, জোরপূর্বক ফসল ও গৃহপালিত পশু ছিনিয়ে নেওয়া, এমনকি সুন্দরী মেয়েদের অপহরণ-প্রজাদের ওপর একের পর এক নিপীড়ন চলতো। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রজারা এসব নিপীড়নের শিকার হতো। এমন এক সময়, সমাজে আবির্ভাব ঘটে আস্তান মোল্লার-যিনি প্রজাদের আশা-ভরসার প্রতীক হয়ে ওঠেন।
প্রচলিত আছে, ১৮৯৩ সালে রাজা হরনাথ রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রায় ৫০-৬০ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার কৃষককে সংগঠিত করে বিদ্রোহ গড়ে তোলেন আস্তান মোল্লা। তার নেতৃত্বে সাত বছরব্যাপী চলা এই আন্দোলনের ফলে জমিদারকে খাজনা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়। ১৯৩২ সালে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ন্যায্যতার দাবি নিয়ে নওগাঁ আদালতে ‘শান্তি মামলা’ করেন, যার রায় যায় কৃষকদের পক্ষে। তদন্তের জন্য সেটেলমেন্ট অফিস থেকে পাঠানো হয় কাজী মাহিউদ্দিন নামে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, যিনি কৃষকদের দাবি বৈধ বলে রায় দেন। ফলে জমিদারের অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। পরাজয়ের শঙ্কায় রাজা একপর্যায়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান, কখনো কলকাতা, কখনো অন্য প্রদেশে। শেষ পর্যন্ত তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে পড়েন।
জানা যায়, আস্তান মোল্লার জন্ম ১৮৫০ সালে নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের হাঁসাইগাড়ী গ্রামে এক কৃষক পরিবারে। তিনি ছিলেন চার ভাইয়ের মধ্যে বড়। পিতার নাম ছিল আসফদি মোল্লা। ১৯৪০ সালে ৯০ বছর বয়সে নওগাঁ সদর হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। তার বসতভিটা এখনো গ্রামে রয়েছে, তবে জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত অবস্থায়।
ইতিহাস বলছে, রাজা মুসলিম প্রজাদের কোরবানি, গাভী দিয়ে হালচাষ এবং ধর্মীয় অধিকারেও হস্তক্ষেপ করতেন। একবার জমিদারের আত্মীয় শশীভূষণ মাদী ঘোড়ার গাড়িতে চড়লে, আস্তান মোল্লা প্রশ্ন করেছিলেন—"প্রজাদের মাদী গরু দিয়ে হালচাষ নিষিদ্ধ, অথচ আপনি মাদী ঘোড়ার গাড়িতে ঘুরে বেড়ান কিভাবে?"—প্রশ্ন শুনে শশীভূষণ সটকে পড়েন।
১৯৩১ সালে ভয়াবহ বন্যায় জমি ডুবে গেলে কচুরিপানা ও পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি নদীর বাঁধ কেটে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। জমিদারের বাধার কারণে কেউ সাহস পাচ্ছিল না। তখন আস্তান মোল্লা নিজেই মহকুমা প্রশাসক অন্নদাশংকর রায়কে সঙ্গে নিয়ে প্রজাদের নিয়ে বাঁধ কেটে দেন। পরে সেই বাঁধ নবনির্মাণের সময় উদ্বোধন করেন প্রশাসক নিজেই। এটি ছিল একটি অনন্য উদাহরণ প্রশাসন ও কৃষকের সম্মিলিত প্রয়াসের।
চিরস্মরণীয় বীর:
১৯৯২ সালে তার নামে প্রতিষ্ঠিত হয় “আস্তান মোল্লা কলেজ”। এখানে বর্তমানে প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, রয়েছে বাংলা, ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে অনার্স কোর্স। শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন ৫৬ জন।
নওগাঁ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “তিনি ছিলেন প্রজাদের প্রকৃত বন্ধু, ৭ বছরব্যাপী আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি জমিদারের দুঃশাসনের অবসান ঘটান।”
প্রবীণ লেখক আতাউল হক সিদ্দিকী বলেন, “আস্তান মোল্লা ছিলেন সাধারণ কৃষকের প্রতিনিধি। গায়ে ফতুয়া, পরনে লুঙ্গি, মাথায় টুপি, মুখে হালকা দাঁড়ি এভাবেই খালি পায়ে চলাফেরা করতেন। তার সাহসিকতা ও নেতৃত্ব ছিল অবিস্মরণীয়।
স্মৃতিচারণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
স্থানীয় সংগঠন একুশে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এম.এম রাসেল জানান, “দুবলহাটির গোয়ালী থেকে কাঠখৈইর পর্যন্ত সড়কটিতে আস্তান মোল্লার জীবনী সংবলিত স্মৃতিফলক স্থাপন করা দরকার, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার অবদানের কথা জানতে পারে।
পরিশেষে বলতে হয়, আজ থেকে প্রায় শত বছর আগে নওগাঁয় এক কৃষক এসেছিলেন মানুষের মুক্তির বার্তা নিয়ে। রাজা পালিয়েছেন, জমিদার শাসন ভেঙেছে, কিন্তু আস্তান মোল্লা থেকে গেছেন মানুষের হৃদয়ে—একটি কৃষক বিদ্রোহের প্রতীক হিসেবে। তার সাহস, নেতৃত্ব, আইনগত লড়াই এবং মানবিক চিন্তার জন্য আজও তিনি নওগাঁবাসীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণীয় হয়ে আছেন।
রাঙামাটির কাপ্তাই লেক হতে কাপ্তাই কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ১৬ টি জলকপাট দিয়ে ৩ ফুট করে পানি ছাড়ার ফলে কর্ণফুলী নদীতে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারনে বুধবার দিবাগত রাত ৩ টা হতে চন্দ্রঘোনা-রাইখালী নৌ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে নদীর দুই পাশে যাত্রী সাধারণ চরম দূর্ভোগে পড়ে।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী( যান্ত্রিক) রনেল চাকমা বলেন, কাপ্তাই কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পীল ওয়ের ১৬ টি গেইট ছাড়ার ফলে কর্ণফুলী নদীতে প্রবল স্রোতের ফেরি চলাচল আপাতত বন্ধ রয়েছে।
এদিকে দেখা যায়, নদীর দুই পাশে কিছু যানবাহন অপেক্ষা করছে পারাপারের জন্য। চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাটে চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বাবু বলেন, এই নৌ - রুটে প্রাকৃতিক কারনে প্রায়শ ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। যার ফলে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি হয়। এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। সেতু নির্মান হলে জনদূর্ভোগ কমবে।
মোটরসাইকেল আরোহী শহীদুল ইসলাম, সরফুল আলম এবং সুকুমার বড়ুয়া বলেন, ওপারে যাবার জন্য এসে দেখি ফেরি চলাচল বন্ধ। আমাদের কষ্টের শেষ নেই। এখানে সেতু হলে আমাদের দু:খ লাগব হবে।
বাস চালক শুক্কুর, রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া হতে আসা ব্যবসায়ী পুলক চৌধুরী, সিএনজি চালক আরিফ, বিপণন কর্মী নুরনবী এবং যাত্রী ওমর ফারুকসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, সকালে এসে দেখি ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের স্পীল ওয়ে ছাড়ার ফলে কর্ণফুলী নদীতে প্রচুর জোয়ার থাকায় ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এদিকে ফেরির ইনচার্জ মো: শাহজাহান এবং ফেরির চালক মো: সিরাজ এর সাথে। তাঁরা বলেন, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হতে পানি ছাড়ার ফলে নদীতে অনেক স্রোত। তাই বুধবার দিবাগত রাত ৩ টা হতে আপাতত ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে স্রোত কমলে আমরা ফেরির চালার চেষ্টা করবো।
রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে সচেতন ছাত্র- জনতা রাঙামাটি পার্বত্য জেলার উদ্যাগে বর্তমান সরকারের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ১৯৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ১১৩, ১৪৬,১৪৭,১৪৮ পৃষ্ঠায় বিতর্কিত আদিবাসী শব্দের ব্যবহারের প্রতিবাদে ও উক্ত প্রতিবেদন থেকে আদিবাসী শব্দ বাদ দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) রাঙামাটি জেলার সভাপতি তাজুল ইসলাম তাজ এর সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ মোশাররফ হোসেন এর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পিসিএনপি'র কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান, প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন সম-অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পিসিএনপি'র রাঙামাটি জেলা সভাপতি মোহাম্মদ সোলায়মান। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, পিসিএনপি'র রাঙামাটি জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহিম, পিসিএনপি'র সহ-সভাপতি কাজী জালোয়া, পিসিসিপি'র কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আসিফ ইকবাল, সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল মাহমুদ, যুগ্ন সম্পাদক হাবীব আল মাহমুদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন, রাঙামাটি জেলা সাধারণ সম্পাদক মো: আলমগীর হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ইসমাঈল গাজী প্রমুখ।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত (৫ আগষ্ট ২০২৪) হাজার প্রাণের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার পথে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এরপর আমরা আশা করেছিলাম দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ হবে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু উপজাতীয় কুচক্রী মহল ও সমতলের বাম সংগঠনের সুশীল নামধারী ষড়যন্ত্রকারীরা দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসী ইস্যু নিয়ে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। মূলত গণমাধ্যমে আদিবাসী শব্দের ব্যবহার এরপরে সাংবিধানিক স্বীকৃতি আদায় এরপরে বাংলাদেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার এমনি ভয়ংকর পরিকল্পনা থেকে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে সুপারিশ কৃত প্রতিবেদনে আদিবাসী শব্দের ব্যবহার করেছে যা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় দেশ প্রেমিক সচেতন ছাত্র-জনতারা আশা করেন দেশের অখন্ডতা রক্ষায় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে সুপারিশকৃত প্রতিবেদন থেকে প্রধান উপদেষ্টা আদিবাসী শব্দ বাদ দিবেন।
নওগাঁয় সাংবাদিক এ কে সাজুর ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি কনক এবং ৮ নম্বর আসামি মোকাব্বের হোসেনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার দুপুরে নওগাঁর মহাদেবপুর আমলী আদালতের বিচারক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. তারেক আজিজ এই আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার প্রধান আসামি কনক ও অপর আসামি মোকাব্বের হোসেন এ দিন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক তাদের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে এই মামলায় আরও দুইজন আসামির জামিনও নামঞ্জুর করে আদালত তাদের জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক হাদিউল ইসলাম জানান, সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় মোট ১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। অভিযুক্তদের মধ্যে চারজন ইতোমধ্যে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে এবং সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ আগস্ট বিকেল ৫টার দিকে ডিবিসি নিউজের নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি এ কে সাজু মহাদেবপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে একদল সন্ত্রাসী তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক সাজু নিজেই বাদী হয়ে মহাদেবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
সাংবাদিকের ওপর এমন ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক মহলসহ সচেতন মহলে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
চারটি সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে বুধবার ভোর থেকে শুরু হওয়া ৪৮ঘন্টা সর্বাত্মক হরতাল, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের প্রথম দিনেই অচল হয়ে পড়ে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দর মোংলাসহ পুরো বাগেরহাট জেলা। বিএনপি জামায়াতসহ সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির ডাকা ৪৮ঘন্টার একটানা হরতাল ও সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের প্রথম দিন ভোর থেকে বাগেরহাট থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুরসহ ৪৮টি দূরপাল্লার ও আন্তজেলার সব রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
মোংলা বন্দরের আমদানী-রপ্তানী পন্য সড়ক পথে পরিবহনও বন্ধ রয়েছে। হরতালকারিরা সকালে জেলা, উপজেলার নির্বাচন অফিস ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়ায় কর্মকর্তা কর্মচারিরা অফিসে ঢুকতে পারেনি। জেলার সব উপজেলা ও পৌর শহরগুলোতে সর্বাত্বক হরতাল পালিত হচ্ছে। হরতালের প্রথম দিনে শহরের দোকানপাট, ব্যবসা, ব্যাংক, বীমা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি অফিসের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। হরতাল ও সড়ক অবরোধে জেলার মোরেলগঞ্জে পানগুছি ও মোংলা নদীতে সড়ক বিভাগের ফেরীসহ খেয়া চলাচলও বন্ধ রয়েছে। জেলার সড়ক-মহাসড়কের অন্তত ৩০টি পয়েন্টে পিকেটাররা টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় মোংলা বন্দরসহ পুরো বাগেরহাট সারাদেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরী, মোংলা ইপিজেডসহ শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক না আসতে পারায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। মোংলা বন্দরের পন্য সড়ক পথে আনা নেয়ার কাজও বন্ধ রয়েছে। সব শ্রেনী-পেশার মানুষের অংশ গ্রহনে মোংলা বন্দরসহ বাগেরহাট জেলাজুড়ে ব্যবসা-বানিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কার্যত থমকে দাড়িয়েছে।প্রথম দিনের হরতাল চলাকালে এখন পর্যন্ত কোন অপ্রতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে, কোন অপ্রতিকর ঘটনা এড়াতে জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুল সংখক পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
চট্টগ্রামে অভিযানেও থামছে না ভেজাল খাদ্যদ্রব্য তৈরি ও বিক্রি। এমনকি মানুষের মরণব্যাধি রোগ প্রতিরোধকারী মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধও বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। মুনাফালোভী কিছু অসাধু চক্র ও খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসব ভেজাল খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করে বাজারজাত করছে। মানহীন এসব খাবার তৈরিতে তারা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ও সোডাসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করে, যা ওই খাদ্যের সাথে মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে লিভার ও কিডনি নষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। এছাড়া ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও থাকছে। জরিমানার পরও এসব চক্রের সদস্যরা ফের যুক্ত হচ্ছে এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সকলকে এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অভিযানের পরে শাস্তি পাওয়া ওই ব্যবসায়িকে ফলোআপে রাখতে হবে। এছাড়া এসব অপরাধের জন্য শাস্তির পরিমানও বাড়াতে হবে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাবর) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের দৈনিক বাংলাকে বলেন, অতি মুনাফালাভের কারণে ব্যবসায়ীরা বারবার একই অপরাধ করে থাকেন। তাই অভিযানের পর জরিমানা বা শাস্তি পাওয়া প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়িকে ফলোআপে রাখতে হবে। এছাড়া ভোগ্যপণ্যেও পাইকারি ও খুচরা মার্কেটগুলোতে তদারকি বা অভিযান বাড়তে হবে।
তিনি বলেন, অভিযানে কোনো প্রতিষ্ঠানের অপরাধ নজরে আসার পর যে পরিমাণ শাস্তি বা জরিমানা হওয়ার কথা সে পরিমাণ হয় না। যা হয় তা অতি নগণ্য। তাই এসব অতি মুনাফালোভীদের আবারও একই অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। তাই শাস্তি বা জরিমানার পরিমাণও বাড়াতে হবে।
চট্টগ্রাম বিভাগের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ দৈনিক বাংলাকে বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। তবে নতুন নতুন কারখানা হলে সেগুলোর সঠিক তথ্য আমরা পাই না। যার কারণে তারা এ অবৈধ ব্যবসা করার সুযোগ নেয়।
জরিমানার পরও এসব চক্রের সদস্যরা ফের যুক্ত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা এই অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে তারা সুযোগ নেন। তাই প্রশাসনের সকল স্তর থেকে এদেও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে সাধারাণ ভোক্তারা উপকৃত হবেন।
অন্যদিকে অনুমোদনহীন মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করছে নগরের বড় বড় ফার্মেসিগুলো। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিয়মিত অভিযানে জরিমানা করেও থামানো যাচ্ছে না এদের ভেজাল খাদ্য তৈরি ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির অপচেষ্টা।
গত সোমবার নগরীর বহদ্দারহাট খাজা রোড, মাইজপাড়া এলাকায় সততা প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটার নামে এক প্রতিষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার অভিযান চালায়। অভিযানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি বিশুদ্ধ পানি উৎপাদনের আড়ালে নকল স্টারিং পাওয়ার অয়ের তৈরি করছে। ওই প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ টাকা জরিমানা ও প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। একই অভিযানে ওই এলাকায় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির অপরাধে জয়নাব মেডিকেল হল ও জননী মেডিসিন হলকে পাঁচ হাজার টাকা কওে জরিমানা করা হয়। এছাড়া আল হাসান নামে এক বেকারি প্রতিষ্ঠানে মেয়াদবিহীন মিষ্টান্ন বিক্রির অপরাধে জরিমানা করা হয়।
এর আগে গত ২৯ আগস্ট নগরীর বায়েজিদ থানার চন্দ্রনগর এলাকায় সাদিয়াস কিচেনের কারখানায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন অভিযান চালায়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য সংরক্ষণ তৈরি, ফ্রিজে কাচা ও রান্নাকৃত খাদ্য একত্রে রাখা, লেবেলবিহীন খাদ্য সংরক্ষণ, রান্নাঘরের পাশে মুরগি পালন, খাদ্যকর্মীদের ইউনিফর্ম না থাকা ও বিভিন্ন লাইসেন্স সনদ দেখাতে না পারায় সাদিয়াস কিচেনকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। গত ৯ জুলাই বুধবার নগরের কোতোয়ালি থানাধীন স্টেশন রোড এলাকায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় গুলিস্তান হোটেল ও আজাদী হোটেল অ্যান্ড বিরিয়ানি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালায়। এ সময় তেলাপোকার উপদ্রব ও অস্বাস্থ্যকর রান্নাঘরের পরিবেশ, খাদ্যেপচা ডিম ব্যবহার করার দায়ে এ দুই প্রতিষ্ঠানকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই দিনে ওই এলাকার দুই ফার্মেসিকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির দায়ে জরিমানা করা হয়। তবে ভোক্তার অভিযোগ, অভিযান চালালেও থামাতে পারছে না এসব চক্রকে।
মন্তব্য