লকডাউনের আতঙ্ক কাটিয়ে পুঁজিবাজারে উত্থানের যে চিত্র তাতে শুরুতে কেবল বিমা খাতের শেয়ার নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়লেও পরে প্রায় সব খাতেই দেখা গেছে ইতিবাচক প্রবণতা।
তলানিতে থাকা ব্যাংক, বস্ত্র ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে অল্প অল্প করে দাম বাড়ছে, সেই সঙ্গে অনেক বেশি বেড়ে যাওয়া বিমা খাতে দর সংশোধন হয়ে কিছুটা কমেছে।
অথচ লকডাউনের ঘোষণা দেয়ার পর তা শুরু হওয়ার আগেই এক দিনে প্রায় ২০০ পয়েন্ট সূচক পড়েছিল। তবে ৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর পর বাজার ছিল ঊর্ধ্বমুখী।
পরে ৬৬ শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম বা ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার পর কয়েক দিন বাজার পতন হলেও পরে মার্জিন ঋণের হার বাড়িয়ে দেয়ার পর থেকে টানা এক মাস ধরেই বাজারে চাঙাভাব দেখা দিয়েছে।
শুরুতে সাধারণ বিমা খাতের শেয়ারগুলোর দাম ঢালাও বাড়লেও পরে খাত ধরে প্রথমে মিউচ্যুয়াল ফান্ড, পরে ব্যাংক খাত এবং সব শেষ ব্যাংকের সঙ্গে বস্ত্র খাতে দেখা দিয়েছে চাঙাভাব।
বিধিনিষেধে পতনের আশঙ্কা থাকলেও পাঁচ সপ্তাহে সূচক বেড়েছে ৫৭৩ পয়েন্ট। লেনদেন বেড়েছে বহুগুণ। আর নিয়মিত হাতবদল হচ্ছে হাজার কোটি টাকার বেশি।
৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর দিন বাজারে মূল্য সূচক ছিল ৫ হাজার ১৭৭ পয়েন্ট। আর বাজার ঈদের ছুটিতে গেছে ৫ হাজার ৭৫০ পয়েন্টে।
ব্যাংক ও বস্ত্র খাতে হতাশা দূরের আশা
এক দশক ধরেই ব্যাংক খাতে নেতিবাচক প্রবণতা চলছে। এর মধ্যে গত বছর করোনার প্রাদুর্ভাবের পর এই খাতের শেয়ারের দাম একেবারে তলানিতে নেমে আসে।
তখন কথা ছড়িয়েছিল যে, করোনায় ব্যাংকের মুনাফা কমে যাবে এবং লভ্যাংশ পাওয়া যাবে না। তবে বছর শেষে দেখা গেল করোনাকালে মুনাফা বেশি করার পর লভ্যাংশও বেশি দিয়েছে কোম্পানিগুলো।
চলতি বছর ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে এখন পর্যন্ত যে ২৭টি ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে ২৩টি কোম্পানি ২ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা কেবল নগদে বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি আছে বোনাস শেয়ার।
চলতি বছর প্রথম তিন মাসের আয়ও গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত যে ২০টি ব্যাংক প্রান্তিক ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে ১৫টিই আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি আয় করেছে। একটি ব্যাংক প্রায় তিন গুণ, একটি দেড় গুণ, একটি দ্বিগুণ এবং আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংক উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি আয় করেছে।
এই পরিস্থিতিতে এক সপ্তাহের মধ্যে হাতে গোনা এক-দুটি ছাড়া বেশির ভাগ ব্যাংকের শেয়ারদর ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
এর আগে নানা সময় ব্যাংক খাতে দুই-একদিন দাম বাড়লেও পরে আবার পতন দেখা গেছে। কিন্তু এবার বাড়তি দামে কয়েক দিন স্থিতিশীল থাকার পর আবার বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
একই পরিস্থিতি বস্ত্র খাতে। করোনার প্রাদুর্ভাবে এই খাতেও আয় ভালো হবে না ভেবে বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর অভিহিত মূল্যের আশেপাশে বা তার চেয়ে নেমে গেছে।
প্রান্তিক প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে, করোনাকালে এবার গত বছরের চেয়ে বেশি আয় করছে অনেক কোম্পানি। তবে এটাও ঠিক যে, এই খাতেই লোকসানি কোম্পানি অনেক।
ঘুমিয়ে থাকা বস্ত্র খাতও ঈদের আগে হঠাৎ একদিন লাফ দিয়ে এরপর দুই দিন স্থিতিশীল থেকে আবার লাফ দেয়।
দাম ও মূল্য সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বাড়ছে।
লকডাউনে সময় কমলেও এখন নিয়মিত প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে।
আস্থাশীল করবে বিনিয়োগকারীদের
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের আগে পুঁজিবাজারের লেনদেন যেভাবে শেষ হয়েছে তা পরবর্তীতে বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি আস্থাশীল করবে।’
ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের আগে এমন পুঁজিবাজার সচরাচর দেখা যায় না। মূলত এ সময়ে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে টাকা উত্তোলনের কারণে মন্দাবস্থা থাকে। কিন্তু এবার ছিল ভিন্ন চিত্র।
‘এতে ভালো যেটা হয়েছে, ঈদের পর যখন পুঁজিবাজার লেনদেন শুরু হবে তখন কেউ আতঙ্কে বিনিয়োগ করবেন না। তখন যেসব খাতের শেয়ারের দর এখনও কম, সেগুলোতে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেয়াই উত্তম হবে।’
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আনম আতাউল্লাহ নাঈম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের আগে যেভাবে পুঁজিবাজারের লেনদেন শেষ হয়েছে, তাতে সব খাতের বিনিয়োগকারীরা কম-বেশি মুনাফা পেয়েছেন। তবে বিমা খাত নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আরও সজাগ থাকা উচিত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যে যেভাবে লেনদেন হয়েছে তা আমরা ভাবতে পারিনি। কারণ লকডাউন শুরু হওয়ার আগে আতঙ্কে অনেকে শেয়ার বিক্রি করেছেন। কিন্তু লকডাউন শুরু হওয়ার পর পুঁজিবাজারের অবস্থা পরিবর্তন হওয়ায় অনেকেই আবার পুঁজিবাজারের প্রতি আগ্রহী হয়েছে।’
বিনিয়োগকারীদের আচরণ বিশ্লেষণে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিনিয়োগকারীরা যেকোনো সিদ্ধান্তে দ্রুতই বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। হয় শেয়ার বিক্রি করে, না হয় শেয়ার ক্রয় করে। এ সময় বিএসইসি বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিলেও তাতে বিশেষ কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। ফলে বিনিয়োগকারীরা এ সময়ে খুবই যৌক্তিক আচরণ করেছেন বলে মনে হয়।’
লকডাউনে যেভাবে বেড়েছে বাজার
লকডাউনের শুরুতে আতঙ্ক কাজ করলেও প্রায় এক মাসের লকডাউনে স্বস্তিতে ছিল পুঁজিবাজার। ৫ মে লকডাইন শুরু হওয়ার আগের দিন এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সূচকের পতন হলেও লকডাউন শুরু হওয়ার পর সূচক বেড়েছে। এদিন প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বাড়ে ৮৮ পয়েন্ট। ৬ এপ্রিল বাড়ে আরও ১০৩ পয়েন্ট।
৭ এপ্রিল বাড়ে ৫৫ পয়েন্ট।
এদিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারের ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়ার নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়।
এরপর ৮ এপ্রিল ও ৯ এপ্রিল পর্যায়ক্রমে ৮২ পয়েন্ট ও ৯০ পয়ন্টে কমে আসে সূচক।
কিন্তু কেন ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়া হয়েছে সেটি ব্যাখ্যা আসার পর অনেকটা স্থিতিশীল হয় ১১ এপ্রিল থেকে। শুক্রবার ও শনিবার সরকারি ছুটির পর লেনদেনে সূচক বাড়ে ৯০ পয়েন্ট। তারপর টানা ১০ কার্যদিবস ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উত্থান ছিল সূচকের।
দুই সপ্তাহ উত্থান শেষে ২৬ এপ্রিল এক দিন বেশ বড় দরপতনই দেখে পুঁজিবাজার। সেদিন সূচক হারায় ৬৩ পয়েন্ট।
এরপর আবার তিন কার্যদিবস যথাক্রমে ৩৯, ১৮ ও ৪১ পয়েন্ট বাড়ার পর এক দিন সূচক কমে ছয় পয়েন্ট।
এরপর দুই-এক দিন উঠানামা হলেও ঈদের আগে টানা বেড়েছে সূচক।
৪ মে থেকে চার কার্যদিবসে যথাক্রমে ২৪, ৫৩, ১৮, ৩৯, ৭৯ ও ২৬ পয়েন্ট বেড়ে ঈদের ছুটিতে যায় পুঁজিবাজার।
লকডাউনের এ সময়ে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে পাঁচ গুণ। লকডাউন শুরু হওয়ার পর ৫ এপ্রিল পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছিল ২৩৬ কোটি টাকা। ঈদে পুঁজিবাজার বন্ধ হওয়ার আগে ১২ মে লেনদেন হয় ১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। এই সময়ে টানা ৯ দিন হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে পুঁজিবাজারে।
প্রথম দিকে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কমলেও এমন উত্থানে দর ঘুরে দাঁড়ায় প্রায় প্রতিটি কোম্পানির।
নতুন সিদ্ধান্ত আলোচনায়
নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির প্রথম দুদিন যে ৫০ শতাংশ করে শেয়ারদর বাড়তে পারবে তা বাতিল করা হয় এ লকডাউনে।
প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) শেয়ার এপ্রিল মাস থেকে আনুপাতিক হারে বণ্টনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু এ সময়ে নতুন কোনো কোম্পানি না আসায় তা চলতি মে মাস থেকে কার্যকর হচ্ছে। এজন্য একজন বিও হিসাব থেকে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকলেও কেবল এ সুবিধা পাওয়া যাবে।
বিএসইসির এমন সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে এমন ধারণা করা হলেও যেদিন এ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে, সেদিনই সূচক বাড়ে ১৮ পয়েন্ট। আর লেনদেন আরও ৪ কোটি টাকা বেড়ে হয় প্রায় ১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা।
টানা ৯ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, ‘নদীভাঙন রোধে জায়গায় জায়গায় কিছু বালুর বস্তা ও ব্লক ফেলা হয়। কিন্তু এতে কোনো কার্যকর ফল পাওয়া যায় না। এখানে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। ফলে ভাঙন রোধের বদলে মানুষ আরও বিপদে পড়ে।’
তিনি অভিযোগ করেন, টঙ্গীবাড়ী, লৌহজং ও মুন্সীগঞ্জের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নদীভাঙনের শঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। অথচ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বুধবার মুন্সীগঞ্জের দিঘিরপাড় বাজারে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. রিপন বলেন, পদ্মা-মেঘনায় অবৈধ ও অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙন আরও তীব্র আকার ধারণ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে তিনি পদ্মার তীরে মেরিন ড্রাইভ নির্মাণকে বিএনপির ভবিষ্যৎ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করার আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যারা বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হারিয়েছে, তাদের সরকারি জমিতে পুনর্বাসন করা উচিত। এছাড়া বাঁধ নির্মাণ কাজের ধীরগতি, অবৈধ বালু উত্তোলন, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপের দাবি জানান তিনি।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ড. রিপন বলেন, দেশে এক বছর ধরে কোনো নির্বাচিত সরকার নেই। ফলে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, পানিসম্পদ উপদেষ্টা এখনো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে আসেননি, অথচ এটি তার দায়িত্ব ছিল। আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস বাকি। এই কয়েক মাস থাকতে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হবে। কুচক্রী মহল চায় দেশে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত না হোক। তবে বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে এবং ইউনূস সরকারের রোডম্যাপ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে। মানববন্ধনে সর্বস্তরের জনগণ ছাড়াও স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের উদ্যোগে শহীদ ও মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত এবং অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্থতা কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ দোয়া অনুষ্ঠান হয়।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসুদ্দীন খানের সভাপতিত্বে দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাহিদুল হক। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সদস্য সচিব মো. মফিজ উদ্দিনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন আহমেদ নান্নু, কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা। এ সময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন কাপাসিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জয়নাল আবেদীন মণ্ডল, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রবিউল ইসলাম, সিরাজ উদ্দিন মাস্টার, মোজাম্মেল হক, রফিকুল আলম খান, সিরাজ উদ্দিন, কাপাসিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক আফজাল হোসাইন, সদস্য সচিব সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম শাহীন, কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এফ এম কামাল হোসেন প্রমুখ। দোয়া অনুষ্ঠানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের শতাধিক সদস্য অংশগ্রহণ করেন। দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কাপাসিয়া উপজেলা মডেল মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান।
দোয়া অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিগত দিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপির শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তাদের অবদান অনস্বীকার্য। তৎকালীন কাপাসিয়ার কৃতিসন্তান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ্ মুক্তিযোদ্ধাদের ভবন নির্মাণের জন্য ইট এবং টাকার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু তখন দায়িত্বশীলরা তা লুটপাট করে খেয়েছে। তারপর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আর তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। দীর্ঘদিন পর একটি সুষ্ঠু পরিবেশে মুক্তিযোদ্ধারা একত্র হতে পেরে তারা অত্যন্ত খুশি। দীর্ঘ ৭ বছর যাবত নতুন ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। নতুন আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও সংস্কার করে ভবনটি উপজেলা ডায়াবেটিস সেন্টারকে ভাড়ার ভিত্তিতে দেওয়ার সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ১০ আগস্ট গাজীপুর জেলা কমান্ড ৭ সদস্যবিশিষ্ট কাপাসিয়া উপজেলা কমান্ড আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন।
কখনো কি শুনেছেন, প্রজার ভয়ে রাজা নিরুদ্দেশ? শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, এমন ঘটনাই ঘটেছিল নওগাঁয়।
সদর উপজেলার দুবলহাটির জমিদার রাজা হরনাথ রায় চৌধুরীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে সাধারণ কৃষকদের পক্ষ নিয়ে এক সাহসী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন আস্তান মোল্লা। তিনিই আজ নওগাঁবাসীর কাছে কৃষক বিদ্রোহের কিংবদন্তি। জমিদারের অত্যাচার ছিল সীমাহীন। অতিরিক্ত খাজনা, জোরপূর্বক ফসল ও গৃহপালিত পশু ছিনিয়ে নেওয়া, এমনকি সুন্দরী মেয়েদের অপহরণ-প্রজাদের ওপর একের পর এক নিপীড়ন চলতো। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রজারা এসব নিপীড়নের শিকার হতো। এমন এক সময়, সমাজে আবির্ভাব ঘটে আস্তান মোল্লার-যিনি প্রজাদের আশা-ভরসার প্রতীক হয়ে ওঠেন।
প্রচলিত আছে, ১৮৯৩ সালে রাজা হরনাথ রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রায় ৫০-৬০ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার কৃষককে সংগঠিত করে বিদ্রোহ গড়ে তোলেন আস্তান মোল্লা। তার নেতৃত্বে সাত বছরব্যাপী চলা এই আন্দোলনের ফলে জমিদারকে খাজনা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়। ১৯৩২ সালে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ন্যায্যতার দাবি নিয়ে নওগাঁ আদালতে ‘শান্তি মামলা’ করেন, যার রায় যায় কৃষকদের পক্ষে। তদন্তের জন্য সেটেলমেন্ট অফিস থেকে পাঠানো হয় কাজী মাহিউদ্দিন নামে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, যিনি কৃষকদের দাবি বৈধ বলে রায় দেন। ফলে জমিদারের অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। পরাজয়ের শঙ্কায় রাজা একপর্যায়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান, কখনো কলকাতা, কখনো অন্য প্রদেশে। শেষ পর্যন্ত তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে পড়েন।
জানা যায়, আস্তান মোল্লার জন্ম ১৮৫০ সালে নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের হাঁসাইগাড়ী গ্রামে এক কৃষক পরিবারে। তিনি ছিলেন চার ভাইয়ের মধ্যে বড়। পিতার নাম ছিল আসফদি মোল্লা। ১৯৪০ সালে ৯০ বছর বয়সে নওগাঁ সদর হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। তার বসতভিটা এখনো গ্রামে রয়েছে, তবে জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত অবস্থায়।
ইতিহাস বলছে, রাজা মুসলিম প্রজাদের কোরবানি, গাভী দিয়ে হালচাষ এবং ধর্মীয় অধিকারেও হস্তক্ষেপ করতেন। একবার জমিদারের আত্মীয় শশীভূষণ মাদী ঘোড়ার গাড়িতে চড়লে, আস্তান মোল্লা প্রশ্ন করেছিলেন—"প্রজাদের মাদী গরু দিয়ে হালচাষ নিষিদ্ধ, অথচ আপনি মাদী ঘোড়ার গাড়িতে ঘুরে বেড়ান কিভাবে?"—প্রশ্ন শুনে শশীভূষণ সটকে পড়েন।
১৯৩১ সালে ভয়াবহ বন্যায় জমি ডুবে গেলে কচুরিপানা ও পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি নদীর বাঁধ কেটে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। জমিদারের বাধার কারণে কেউ সাহস পাচ্ছিল না। তখন আস্তান মোল্লা নিজেই মহকুমা প্রশাসক অন্নদাশংকর রায়কে সঙ্গে নিয়ে প্রজাদের নিয়ে বাঁধ কেটে দেন। পরে সেই বাঁধ নবনির্মাণের সময় উদ্বোধন করেন প্রশাসক নিজেই। এটি ছিল একটি অনন্য উদাহরণ প্রশাসন ও কৃষকের সম্মিলিত প্রয়াসের।
চিরস্মরণীয় বীর:
১৯৯২ সালে তার নামে প্রতিষ্ঠিত হয় “আস্তান মোল্লা কলেজ”। এখানে বর্তমানে প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, রয়েছে বাংলা, ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে অনার্স কোর্স। শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন ৫৬ জন।
নওগাঁ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “তিনি ছিলেন প্রজাদের প্রকৃত বন্ধু, ৭ বছরব্যাপী আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি জমিদারের দুঃশাসনের অবসান ঘটান।”
প্রবীণ লেখক আতাউল হক সিদ্দিকী বলেন, “আস্তান মোল্লা ছিলেন সাধারণ কৃষকের প্রতিনিধি। গায়ে ফতুয়া, পরনে লুঙ্গি, মাথায় টুপি, মুখে হালকা দাঁড়ি এভাবেই খালি পায়ে চলাফেরা করতেন। তার সাহসিকতা ও নেতৃত্ব ছিল অবিস্মরণীয়।
স্মৃতিচারণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
স্থানীয় সংগঠন একুশে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এম.এম রাসেল জানান, “দুবলহাটির গোয়ালী থেকে কাঠখৈইর পর্যন্ত সড়কটিতে আস্তান মোল্লার জীবনী সংবলিত স্মৃতিফলক স্থাপন করা দরকার, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার অবদানের কথা জানতে পারে।
পরিশেষে বলতে হয়, আজ থেকে প্রায় শত বছর আগে নওগাঁয় এক কৃষক এসেছিলেন মানুষের মুক্তির বার্তা নিয়ে। রাজা পালিয়েছেন, জমিদার শাসন ভেঙেছে, কিন্তু আস্তান মোল্লা থেকে গেছেন মানুষের হৃদয়ে—একটি কৃষক বিদ্রোহের প্রতীক হিসেবে। তার সাহস, নেতৃত্ব, আইনগত লড়াই এবং মানবিক চিন্তার জন্য আজও তিনি নওগাঁবাসীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণীয় হয়ে আছেন।
রাঙামাটির কাপ্তাই লেক হতে কাপ্তাই কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ১৬ টি জলকপাট দিয়ে ৩ ফুট করে পানি ছাড়ার ফলে কর্ণফুলী নদীতে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারনে বুধবার দিবাগত রাত ৩ টা হতে চন্দ্রঘোনা-রাইখালী নৌ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে নদীর দুই পাশে যাত্রী সাধারণ চরম দূর্ভোগে পড়ে।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী( যান্ত্রিক) রনেল চাকমা বলেন, কাপ্তাই কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পীল ওয়ের ১৬ টি গেইট ছাড়ার ফলে কর্ণফুলী নদীতে প্রবল স্রোতের ফেরি চলাচল আপাতত বন্ধ রয়েছে।
এদিকে দেখা যায়, নদীর দুই পাশে কিছু যানবাহন অপেক্ষা করছে পারাপারের জন্য। চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাটে চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বাবু বলেন, এই নৌ - রুটে প্রাকৃতিক কারনে প্রায়শ ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। যার ফলে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি হয়। এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। সেতু নির্মান হলে জনদূর্ভোগ কমবে।
মোটরসাইকেল আরোহী শহীদুল ইসলাম, সরফুল আলম এবং সুকুমার বড়ুয়া বলেন, ওপারে যাবার জন্য এসে দেখি ফেরি চলাচল বন্ধ। আমাদের কষ্টের শেষ নেই। এখানে সেতু হলে আমাদের দু:খ লাগব হবে।
বাস চালক শুক্কুর, রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া হতে আসা ব্যবসায়ী পুলক চৌধুরী, সিএনজি চালক আরিফ, বিপণন কর্মী নুরনবী এবং যাত্রী ওমর ফারুকসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, সকালে এসে দেখি ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের স্পীল ওয়ে ছাড়ার ফলে কর্ণফুলী নদীতে প্রচুর জোয়ার থাকায় ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এদিকে ফেরির ইনচার্জ মো: শাহজাহান এবং ফেরির চালক মো: সিরাজ এর সাথে। তাঁরা বলেন, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হতে পানি ছাড়ার ফলে নদীতে অনেক স্রোত। তাই বুধবার দিবাগত রাত ৩ টা হতে আপাতত ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে স্রোত কমলে আমরা ফেরির চালার চেষ্টা করবো।
রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে সচেতন ছাত্র- জনতা রাঙামাটি পার্বত্য জেলার উদ্যাগে বর্তমান সরকারের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ১৯৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ১১৩, ১৪৬,১৪৭,১৪৮ পৃষ্ঠায় বিতর্কিত আদিবাসী শব্দের ব্যবহারের প্রতিবাদে ও উক্ত প্রতিবেদন থেকে আদিবাসী শব্দ বাদ দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) রাঙামাটি জেলার সভাপতি তাজুল ইসলাম তাজ এর সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ মোশাররফ হোসেন এর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পিসিএনপি'র কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান, প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন সম-অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পিসিএনপি'র রাঙামাটি জেলা সভাপতি মোহাম্মদ সোলায়মান। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, পিসিএনপি'র রাঙামাটি জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহিম, পিসিএনপি'র সহ-সভাপতি কাজী জালোয়া, পিসিসিপি'র কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আসিফ ইকবাল, সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল মাহমুদ, যুগ্ন সম্পাদক হাবীব আল মাহমুদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন, রাঙামাটি জেলা সাধারণ সম্পাদক মো: আলমগীর হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ইসমাঈল গাজী প্রমুখ।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত (৫ আগষ্ট ২০২৪) হাজার প্রাণের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার পথে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এরপর আমরা আশা করেছিলাম দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ হবে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু উপজাতীয় কুচক্রী মহল ও সমতলের বাম সংগঠনের সুশীল নামধারী ষড়যন্ত্রকারীরা দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসী ইস্যু নিয়ে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। মূলত গণমাধ্যমে আদিবাসী শব্দের ব্যবহার এরপরে সাংবিধানিক স্বীকৃতি আদায় এরপরে বাংলাদেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার এমনি ভয়ংকর পরিকল্পনা থেকে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে সুপারিশ কৃত প্রতিবেদনে আদিবাসী শব্দের ব্যবহার করেছে যা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় দেশ প্রেমিক সচেতন ছাত্র-জনতারা আশা করেন দেশের অখন্ডতা রক্ষায় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে সুপারিশকৃত প্রতিবেদন থেকে প্রধান উপদেষ্টা আদিবাসী শব্দ বাদ দিবেন।
নওগাঁয় সাংবাদিক এ কে সাজুর ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি কনক এবং ৮ নম্বর আসামি মোকাব্বের হোসেনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার দুপুরে নওগাঁর মহাদেবপুর আমলী আদালতের বিচারক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. তারেক আজিজ এই আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার প্রধান আসামি কনক ও অপর আসামি মোকাব্বের হোসেন এ দিন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক তাদের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে এই মামলায় আরও দুইজন আসামির জামিনও নামঞ্জুর করে আদালত তাদের জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক হাদিউল ইসলাম জানান, সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় মোট ১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। অভিযুক্তদের মধ্যে চারজন ইতোমধ্যে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে এবং সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ আগস্ট বিকেল ৫টার দিকে ডিবিসি নিউজের নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি এ কে সাজু মহাদেবপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে একদল সন্ত্রাসী তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক সাজু নিজেই বাদী হয়ে মহাদেবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
সাংবাদিকের ওপর এমন ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক মহলসহ সচেতন মহলে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
চারটি সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে বুধবার ভোর থেকে শুরু হওয়া ৪৮ঘন্টা সর্বাত্মক হরতাল, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের প্রথম দিনেই অচল হয়ে পড়ে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দর মোংলাসহ পুরো বাগেরহাট জেলা। বিএনপি জামায়াতসহ সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির ডাকা ৪৮ঘন্টার একটানা হরতাল ও সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের প্রথম দিন ভোর থেকে বাগেরহাট থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুরসহ ৪৮টি দূরপাল্লার ও আন্তজেলার সব রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
মোংলা বন্দরের আমদানী-রপ্তানী পন্য সড়ক পথে পরিবহনও বন্ধ রয়েছে। হরতালকারিরা সকালে জেলা, উপজেলার নির্বাচন অফিস ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়ায় কর্মকর্তা কর্মচারিরা অফিসে ঢুকতে পারেনি। জেলার সব উপজেলা ও পৌর শহরগুলোতে সর্বাত্বক হরতাল পালিত হচ্ছে। হরতালের প্রথম দিনে শহরের দোকানপাট, ব্যবসা, ব্যাংক, বীমা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি অফিসের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। হরতাল ও সড়ক অবরোধে জেলার মোরেলগঞ্জে পানগুছি ও মোংলা নদীতে সড়ক বিভাগের ফেরীসহ খেয়া চলাচলও বন্ধ রয়েছে। জেলার সড়ক-মহাসড়কের অন্তত ৩০টি পয়েন্টে পিকেটাররা টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় মোংলা বন্দরসহ পুরো বাগেরহাট সারাদেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরী, মোংলা ইপিজেডসহ শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক না আসতে পারায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। মোংলা বন্দরের পন্য সড়ক পথে আনা নেয়ার কাজও বন্ধ রয়েছে। সব শ্রেনী-পেশার মানুষের অংশ গ্রহনে মোংলা বন্দরসহ বাগেরহাট জেলাজুড়ে ব্যবসা-বানিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কার্যত থমকে দাড়িয়েছে।প্রথম দিনের হরতাল চলাকালে এখন পর্যন্ত কোন অপ্রতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে, কোন অপ্রতিকর ঘটনা এড়াতে জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুল সংখক পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
মন্তব্য