মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি ও শহর জীবনে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের কারণে বাড়ছে প্রক্রিয়াজাত মাংসের চাহিদা।
গত এক দশকে প্রক্রিয়াজাত মাংসের বাজারে বেড়েছে দেশীয় কোম্পানির আধিপত্য। তবে এসব প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং জনসচেতনতার অভাবসহ বেশ কিছু কারণে খাতটির আশানুরূপ অগ্রগতি হচ্ছে না।
প্রক্রিয়াজাত মাংস থেকে তৈরি স্যাম, বেকন, সালামি, কাবাব, নাগেট, সসেজ, চপ, বার্গার, হটডগ, পেটিস, মমো, শরমা, গ্রিলের মতো ফাস্টফুড এখন ব্যাপক জনপ্রিয়। এছাড়া কাঁচা মাংসের জন্যও অনেকে নির্ভর করছেন প্রক্রিয়াজাত মাংসের প্রতিষ্ঠানের ওপর।
দেশে প্রক্রিয়াজাত মাংস ও এর থেকে তৈরি খাদ্যপণ্য বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছে বেঙ্গলমিট, আফতাব বহুমুখী ফার্মস, কাজীফার্মস, প্রভিটা, প্যারাগন, প্রাণ, ইয়ন, ব্র্যাক। এছাড়া এজি, নারিশ, সিপির মতো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মাংস থেকে প্রক্রিয়াজাত খাবার বিভিন্ন আউটলেটে বিক্রি করছে।
প্রক্রিয়াজাত মাংসের উৎপাদকেরা জানান, সাধারণ ক্রেতার পাশাপাশি অভিজাত হোটেলেও মাংসের জোগান দিচ্ছেন তারা। পাশাপাশি দুবাই, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও হচ্ছে।
তারা জানান, পশু জবাইয়ের পর ভালোভাবে রক্ত ঝরিয়ে সব বর্জ্য সরিয়ে নেয়া হয়। এরপর ঠান্ডা ও গরম পানিতে পশুটি ধুয়ে স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মাধ্যমে চামড়া এবং অতিরিক্ত মেদ আলাদা করা হয়। মাংস এরপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয় হিমঘরে। পরে সেখান থেকে বের করে মাংস টুকরা ও প্যাকেটজাত করা হয়। এই কাজে দক্ষ শ্রমিক নিয়োজিত। সবশেষে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় রেখে বিক্রি করা হয় প্রক্রিয়াজত মাংস।
খাতসংশ্লিষ্টদের দাবি, বাজারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যত্রতত্র পশু জবাই হয় বলে অনেকেই প্রক্রিয়াজাত মাংসের দিকে ঝুঁকছেন। দাম কিছুটা বেশি হলেও এ ধরনের মাংসে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নেই বলেও তাদের দাবি।
তবে এই খাতের সংশ্লিষ্টরা একইসঙ্গে জানিয়েছেন, দেশে প্রক্রিয়াজাত মাংস বা এর থেকে তৈরি ফাস্টফুড খাওয়ার প্রবণতা বাড়লেও মোট জনসংখ্যার বিচারে ভোক্তার সংখ্যা দেড় শতাংশের বেশি নয়। দেশে প্রক্রিয়াজাত মাংসের বাজার সম্প্রসারণের বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও বিভিন্ন কারণে সেটি ঘটছে না।
এক্ষেত্রে বিক্রেতাপর্যায়ে পশু জবাই আইন যথাযথভাবে কার্যকর না হওয়া এবং বিদেশ থেকে প্রক্রিয়াজাতের নামে ‘মানহীন মাংস’ আমদানিকে প্রধান সমস্যা হিসেবে দায়ী করছেন তারা।
প্রক্রিয়াজাত মাংস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে প্রতিদিন দেড় কোটির বেশি মুরগি জবাই হয়। একইভাবে গুরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া জবাই হয় গড়ে ৭০ হাজার করে। তবে ক্রেতাপর্যায়ে মাংস সরবরাহের ক্ষেত্রে এসব মাংসের ৯৮ ভাগের বেশি প্রক্রিয়াজাত করা হয় না।
২০১১ সালে প্রণীত পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইনে পশু জবাই ও সরবরাহের ক্ষেত্রে কঠোর মান অনুসরণের বিষয়টি যুক্ত হয়।
আইনের ৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্র ব্যতীত, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিক্রির জন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা জবাইখানার বাহিরে কোনো পশু জবাই করিতে পারিবে না, যথা:-
(ক) ঈদুল আজহা, ঈদুল ফিতর বা অন্য কোন ধর্মীয়, সামাজিক অনুষ্ঠান এবং সরকার কর্তৃক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা ঘোষিত অন্য কোন উৎসব বা অনুষ্ঠান;
(খ) পারিবারিক চাহিদার ভিত্তিতে পারিবারিক ভোজনের উদ্দেশ্যে।
(২) উপ-ধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উক্ত উপ-ধারার দফা (ক) বা (খ) এ বর্ণিত ক্ষেত্রে জবাইখানার বাহিরে এইরূপ স্থানে ও উপায়ে পশু জবাই করিতে হইবে যাহাতে-
(ক) পানি বা পানির উৎস, বায়ু বা পরিবেশের অন্য কোনো উপাদান দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না; এবং
(খ) বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি অনুযায়ী পশু জবাই ও বর্জ্য অপসারণ করা যায়।
তবে এ আইনের তেমন কোনো প্রয়োগ নেই বলে অভিযোগ করছেন প্রক্রিয়াজাত মাংসের প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা।
দেশে প্রক্রিয়াজাত মাংসের সরবরাহকারী অন্যতম প্রতিষ্ঠান আফতাব বহুমুখী ফার্মসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশে প্রক্রিয়াজাত মাংস ও এর থেকে তৈরি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের বাজার খুব বড় নয়। জনসংখ্যার বিচারে সেটি দেড় শতাংশের বেশি হবে না।
‘যতক্ষণ না দেশে যত্রতত্র উন্মুক্ত পরিবেশে জীবন্ত পশু জবাই এবং মাংস বিক্রি বন্ধ না হবে, ততদিন দেশে প্রক্রিয়াজাত মাংসের বাজারের আশানুরূপ সম্প্রসারণ হবে না। পশু জবাই আইন সঠিকভাবে কার্যকর না হওয়ার কারণেই দেশে প্রক্রিয়াজাত মাংসের বাজার সম্ভাবনা ধরা দিচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘বহুগুণে নিরাপদ হলেও সচেতনতার অভাবে ৯৮ ভাগ মানুষের পছন্দের তালিকায় নেই প্রক্রিয়াজাত মুরগি। অথচ খোলা মার্কেটে সকালে যে মুরগীটা প্রসেস করা হয়েছে বিকেলে সেই পানিতে আবার আরেকটা বার্ডকে প্রসেস করা হচ্ছে। সেখান থেকে বিভিন্ন রকমের রোগ-বালাই মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। উহান থেকে যে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি, তার মূলেও কিন্তু রয়েছে অস্বাস্থ্যকর উপায়ে জীবন্ত পশু জবাই ও নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে বিক্রি না করা।’
প্রক্রিয়াজাত মাংসের বাজার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মাংস প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি হয়। খুব বেশি নিয়ম-কানুনও মেনে চলতে হয়। এতে মাংসের দাম কেজিপ্রতি বেশি পড়ে। ফলে সামর্থ্যবান ছাড়া অন্যরা স্বাস্থ্যসম্মত ও প্রক্রিয়াজাত মাংস কেউ নিতে চায় না।’
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পশু জবাই আইন বাস্তবায়নের তাগিদ দেন ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার। তিনি বলেন, ‘সরকার সারা দেশে না হোক ঢাকার গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, বারিধারা, ডিওএইচএসসহ অন্তত সামর্থ্যবান এলাকায় পশু জবাই আইন কঠোরভাবে কার্যকর করতে পারে। প্রশাসন থেকে বলে দিতে পারে ওইসব এলাকায় প্রক্রিয়াজাত কারখানা ছাড়া কোনো পশু জবাই হবে না। তাহলে এর ওপর ভর করে খাতটি ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠবে।’
দেশে প্রক্রিয়াজাত মাংসের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে বেঙ্গল মিটের রপ্তানি শাখার প্রধান কর্মকর্তা মো. আলামিন ভূইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রক্রিয়াজাত মাংসের সম্ভাবনা আছে বলেই দেশে এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি উৎপাদন হচ্ছে। প্রায় দুই লাখ বাণিজ্যিক পশু উৎপাদন ও বিপণন খামার গড়ে উঠেছে। দেশে যে পরিমাণ মাংসের চাহিদা রয়েছে তার থেকে বেশি উৎপাদন হচ্ছে।’
তবে যে হারে খামার গড়ে উঠেছে, সে তুলনায় প্রক্রিয়াজাত মাংসের সরবরাহ কম বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আলামিন ভূইয়া বলেন, ‘আবার যেখানে আমরা হালাল প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত প্রক্রিয়াজাত মাংস রপ্তানি করব, সেখানে উল্টো প্রক্রিয়াজাতের নামে হালাল সার্টিফিকেট ছাড়াই মানহীন মাংস আমদানি করা হচ্ছে। যে ওয়্যারহাউজে রাখা হচ্ছে সেখানেও নির্দেষ্ট তাপমাত্রা নেই। অথচ সেই মাংস বিক্রি হয়ে ভোক্তার খাবারের প্লেটে উঠে যাচ্ছে।
‘এটাই হচ্ছে এ খাতের বড় সমস্যা। অথচ ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশেও মাংস বাজারজাতে হালাল সার্টিফিকেট লাগে। যেখানে সেখানে পশু জবাই করা যায় না। যত্রতত্র অনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বিক্রিও করা যায় না।’
আলামিন ভূইয়া বলেন, ‘দেশে সব ধরনের মাংসের উৎপাদন যেমন বহুগুণ বেড়েছে, তেমনি মাংস খাওয়ার পরিমাণও অনেক বেড়েছে। বিশেষভাবে বর্তমান প্রজন্মের পছন্দের তালিকায় মাংসের অবস্থান সবার উপরে। তবে বেশির ভাগ মানুষই প্রক্রিয়াজাত মাংস সম্পর্কে কিছু জানে না বলে যত্রতত্র অস্বাস্থ্যকর মাংস কিনছে।’
বিভিন্ন গবেষণায় প্রক্রিয়াজাত মাংসেও স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বলা হয়েছে। তবে আলামিন ভূইয়ার দাবি, ‘এটি সত্যি নয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রক্রিয়াজাত মাংসে অতিরিক্ত চর্বি ফেলে দেয়া হয। প্রসেসড মিট লেস ফ্যাট হওয়ায় তা স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে না। তাছাড়া একজন মানুষ তো প্রতিদিন ফাস্টফুড খায় না, তিন বেলাও খায় না। মাঝেমধ্যে খায়। তাই এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই।’
আরও পড়ুন:ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিগত তিন অর্থবছর ধরে রিজার্ভ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভিন্ন পথে হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ছয় দফায় মোট ৬৮ কোটি ডলারের বেশি কিনে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সবশেষ মঙ্গলবার ৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে কেনা হয়েছে ৪৭.৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণেই রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকেই ডলার কিনছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
ডলার কেনা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ (এফএক্স) নিলাম কমিটির মাধ্যমে, মাল্টিপল প্রাইস অকশন পদ্ধতিতে। এক ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা পর্যন্ত।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাঁচ দফায় ডলার কেনে। ১৩ জুলাই ১৮ ব্যাংক থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনা হয়। এরপর ১৫ জুলাই একই দরে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ২৩ জুলাই ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে এক কোটি ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ১০ আগস্ট ১১ ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে মোট ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার কেনা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের দাম হঠাৎ করে অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া বা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া- দুটোই অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। বর্তমানে দেশে খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে এবং বিদেশি দায় পরিশোধও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ফলে নিকট ভবিষ্যতে ডলারের তীব্র চাহিদা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তাদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ডলার ক্রয় রিজার্ভকে আরও শক্তিশালী করবে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এলে বিনিয়োগ বাড়বে, ফলে ডলারের চাহিদাও বাড়তে পারে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেছেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে অভিজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগের মাধ্যমে একটি ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপন করা এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
তিনি বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতায় বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও দেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি, বিনিয়োগ ও মেধাস্বত্ত্ববিষয়ক বিরোধ ক্রমাগত বাড়ার বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থার আলোকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে গতি আনতে একটি আলাদা কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপন এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘ব্যবসায় বিরোধ নিষ্পত্তি ও চুক্তি প্রয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল মিলার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ও ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আবদুর রহিম খান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, জনবহুল এদেশে আদালতে মামলার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং বিচারিক কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টিকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে। যার ফলে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে আরবিট্রেশন আইন করা হলেও, বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা যায়নি। বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধসমূহ যদি প্রথাগত আদলতের বাইরে গিয়ে মেটানো যায়, তাহলে একদিকে যেমন আদলতের উপর চাপ কমবে, সেই সঙ্গে বাণিজ্যের পরিবেশেরও উন্নয়ন হবে।
তিনি আরও বলেন, কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে এটার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বাণিজ্যবিষয়ক আদালতসমূহে বিশেষজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সংষ্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বাংলাদেশ নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইইউ নিবিড়ভাবে কাজ করছে। এ ধরনের সংস্কার দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম খান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শুধু যে এফডিআই আকর্ষন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়। বরং বিষয়টি আমাদের রপ্তানি সম্প্রসারণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং সার্বিকভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বাংলাদেশ ক্রমাগত আস্থা হারাচ্ছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার। তিনি বলেন, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিকট ব্যবসায়িক চুক্তির প্রয়োগের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক, যেখানে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আরিফুল হক, ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর উপ আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দা রত্নে, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (বিয়াক)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে এ এম মাজেদুর রহমান, সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রাজাহ অ্যান্ড থান-এর কো-হেড ভিকনা রাজা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের স্পেশাল অফিসার বিচারপতি তারেক মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড এসোসিয়েটস-এর পার্টনার ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন অংশগ্রহণ করেন।
মুক্ত আলোনায় ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সরকারের আন্ত:মন্ত্রণালয় সমন্বয়ের বেশ অভাব রয়েছে এবং এ অবস্থার উন্নয়ন না হলে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বাণিজ্যিক বিরোধগুলো সমাধানে আদালতে না গিয়ে, আরবিট্রেশন সেন্টারের মাধ্যমে নিষ্পত্তিতে বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট খাতের স্টেকহোল্ডাররা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজির এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডারের দাম কমানো হয়েছে ৩ টাকা। নতুন মূল্য অনুযায়ী, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৭০ টাকা, যা গত মাসে ছিল ১ হাজার ২৭৩ টাকা।
মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন দর ঘোষণা করেন। নতুন দাম গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হয়েছে ।
এছাড়া, গাড়িতে ব্যবহৃত অটোগ্যাসের দামও লিটারে ১৩ পয়সা কমিয়ে ৫৮ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিইআরসির ঘোষণায় বলা হয়, বেসরকারি খাতে ভ্যাটসহ প্রতি কেজি এলপিজির নতুন দাম ১০৫ টাকা ৮৭ পয়সা। সেখান থেকে বিভিন্ন ওজনের সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারিত হবে।
তবে সরকারি কোম্পানির সরবরাহকৃত সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৮২৫ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। সৌদি আরামকোর প্রপেন ও বিউটেনের আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতি মাসে এ দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এই মূল্য নির্ধারণ কার্যক্রম চালু রয়েছে।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে টমেটো আমদানি শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রামের বড় বাজারের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের নাসিক রাজ্য থেকে এসব টমেটো আমদানি করছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ভারত থেকে টমেটো বোঝাই একটি ট্রাক হিলি বন্দরে প্রবেশের মধ্য দিয়ে টমেটো আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিন ২৮ টন টমেটো আমদানি করা হয়েছে। প্রতিকেজি টমেটো আমদানি করতে শুল্কসহ খরচ গুণতে হচ্ছে ৬১ টাকা।
আমদানিকারক এনামুল হক বলেন, দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় ভারতের নাসিক রাজ্য থেকে এসব টমেটো আমদানি করা হচ্ছে। বন্দরে প্রতি কেজি টমেটো ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা থাকলে আরও বেশি পরিমাণ টমেটো আমদানি করা হবে।
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন বলেন, গতকাল মঙ্গলবার হিলি বন্দর দিয়ে এক ট্রাকে ২৮ টন টমেটো আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত এসব টমেটো ৫০০ ডলারে শুল্কায়ণ করা হচ্ছে। যেহেতু টমেটো কাঁচাপণ্য তাই দ্রুত ছাড় করণে আমদানিকারককে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধের তথ্যমতে, গত ২০২২ সালের ৬ আগস্ট সবশেষ এই বন্দর দিয়ে টমেটো আমদানি করা হয়েছিল।
বিশ্ব অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়স্থল খুঁজতে থাকায় মঙ্গলবার প্রতি আউন্স সোনার দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ ডলারের উপরে পৌঁছেছে।
এশিয়ায় প্রাথমিক লেনদেনের সময় মূল্যবান ধাতুটি প্রতি আউন্স ৩,৫০১ দশমিক ৫৯ ডলারে পৌঁছেছে, যা এপ্রিলে এর আগের রেকর্ড ৩,৫০০ দশমিক ১০ ডলারকে ছাড়িয়ে গেছে।
হংকং থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বিনিয়োগকারীরা দুর্বল মার্কিন ডলার ও ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদের হার কমানোর সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় নেওয়ায় সোনার দামের এই দরপতন ঘটেছে।
মার্কিন মুদ্রাস্ফীতির একটি মূল্য সূচক দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট রেকর্ড সর্বোচ্চ থেকে পিছিয়ে এসেছে। একই সময়ে, ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
শ্রম দিবসের জন্য সোমবার ওয়াল স্ট্রিট বন্ধ ছিল, তখন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় ডলার মিশ্র লেনদেন করেছে।
বন্ধকী জালিয়াতির অভিযোগে ফেডের গভর্নরকে তিরস্কার করার পর ট্রাম্প গত মাসে বলেছিলেন, ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর লিসা কুক পদত্যাগ না করলে, তিনি তাকে বরখাস্ত করবেন।
মার্কিন আপিল আদালত ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনেক শুল্ক, যা বিশ্ব বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সেগুলো অবৈধ বলে রায় দেওয়ার পরও এই রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে।
তবে আদালত আপাতত এই ব্যবস্থাগুলো বহাল রাখার অনুমতি দেওয়ায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করার জন্য সময় পেয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে কমিউনিটি ব্যাংকের স্টার্টআপ রিফাইন্যান্স স্কিমের অধীনে অংশীদারত্বমূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বুধবার (২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স সেন্টারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার এবং নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখার উপস্থিতিতে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে এসএমইএসপিডি বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এবং কমিউনিটি ব্যাংকের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) কিমিয়া সাআদত পারস্পরিক অংশীদারত্বমূলক এ চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন। এ সময় অনুষ্ঠানে- বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক হাফিয়া তাজরিয়ান, যুগ্ম পরিচালক মো. নুরুল কাওসার সাঈফ এবং কমিউনিটি ব্যাংকের হেড অব কর্পোরেট ব্যাংকিং ও হেড অব বিজনেস (ব্রাঞ্চ) ড. মোঃ আরিফুল ইসলাম, হেড অব এসএমই অ্যান্ড এগ্রিকালচার শরিফ হাসান মামুনসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের উর্ব্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে দেশের রপ্তানি আয় ১০.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) আজ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-আগস্ট) রপ্তানি আয় ছিল ৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।
তবে, সামগ্রিক এই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পরও ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
২০২৫ সালের আগস্ট মাসে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালের আগস্টে অর্জিত ৪ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে সামান্য কম।
স্বাভাবিকভাবেই তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৭ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মন্তব্য