এক দিনে দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করার পর দুই ব্যাংকের বিক্রেতা নেই। দুই-একটি ছাড়া সব ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চিত্রও মোটামুটি একই রকম।
টানা বাড়তে থাকা বিমা খাতে পরপর তিন কার্যদিবস বড় ধরনের মূল্য সংশোধনের পর এই খাতেরও বেশির ভাগ শেয়ারের দর বৃদ্ধি, দামের সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করার পর বেশ কিছু শেয়ারের বিক্রেতা উধাও।
ঘুমিয়ে থাকা বস্ত্র খাতে রোববারের উত্থানের পরের কার্যদিবসেও বেশ কিছু শেয়ারের দর বৃদ্ধি পেয়েছে।
যেন ঈদ উপহার পেলেন এই চার খাতের শেয়ারধারীরা। আর প্রধান খাতগুলোতে দর বৃদ্ধির প্রভাবে পুঁজিবাজারে হলো বড় উত্থান।
গত ৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর পর থেকেই বিমা খাতে টানা উত্থান দেখে আসছিল পুঁজিবাজার। একটি খাতে এত বেশি পরিমাণ দর বৃদ্ধি নিয়ে নানা কথাবার্তার মধ্যে গত সপ্তাহ থেকে নড়চড় শুরু হয় ঘুমন্ত ব্যাংক খাতে। দাম বাড়তে থাকে মিউচ্যুয়াল ফান্ড আর আর্থিক খাতেও।
এর মধ্যে রোববার হঠাৎ করে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত প্রায় সব কটি কোম্পানির দর বৃদ্ধির পর এটা স্পষ্ট হয় যে গত জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বাজার সংশোধন শেষ হয়ে উত্থানপর্বে ফিরেছে পুঁজিবাজার।
ঈদের আগে শেষ কার্যদিবসের আগের দিন পুঁজিবাজারে সূচক বাড়ল মোট ৭৮ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট।
পুঁজিবাজারে এই দর সংশোধন শুরু হয় মূলত ১৪ জানুয়ারি মার্জিন ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ১২ শতাংশ বেঁধে দেয়ার পর থেকে।
ওই সিদ্ধান্ত আসার আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মূল্যসূচক ছিল ৫ হাজার ৯০৯ পয়েন্ট। পরে কমতে কমতে তা ৫ হাজার পয়েন্টের আশপাশ দিয়ে ঠেকে।
লকডাউনের আগে আগে বিএসইসি আরেক নির্দেশনায় মার্জিন ঋণ-বিষয়ক সিদ্ধান্ত চলতি বছর আর কার্যকর হবে না বলে জানায়। পাশাপাশি আগের চেয়ে বেশি হারে ঋণ নেয়া যাবে বলে ঘোষণা আসে। এর প্রভাবে বাজারে অর্থপ্রবাহ বাড়ে। আর ৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর পর থেকেই বাজারে উত্থানপর্ব চলতে থাকে।
শুরুতে একটি খাতনির্ভর হলেও পরে সব খাতেই ইতিবাচক প্রভাব বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার নিয়ে আরও আস্থাশীল করে তুলেছে।
হতাশ করেনি ব্যাংক খাত
ঈদের আগে ব্যাংক খাতের শেয়ারধারীদেরও হতাশ করেনি। সরকারি ছুটির একদিন আগে বেড়েছে প্রায় সবকটি ব্যাংকের শেয়ারের দর।
লেনদেন হওয়া ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে দর কমেছে মাত্র দুটির। দর পাল্টায়নি দুটির। আর বাকি ২৭টি ব্যাংকের শেয়ারের দর বেড়েছে।
ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ারের দর বেড়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের ৩ টাকা ৩০ পয়সা। শেয়ার দর ৪৭ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা ৬০ পয়সা।
২ টাকা ৪০ পয়সা শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের। ফ্লোর প্রাইস বা শেয়ার দরের প্রান্ত সীমা উঠিয়ে দেয়া এই ব্যাংকের শেয়ার মঙ্গলবার ২৪ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৬ টাকা ৭০ পয়সা।
এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ১ টাকা ৬০ পয়সা। ১ টাকা ৪০ পয়সা শেয়ার দর বেড়েছে সিটি ব্যাংকের। সদ্য লভ্যাংশ ঘোষণা করা আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ১ টাকা।
দর পাল্টায়নি ব্যাংক এশিয়া ও উত্তরা ব্যাংকের। এ ছাড়া দরপতন হওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে আছে সাউথ ইস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক।
উত্থানে ফিরল বিমা খাত
গত তিন কার্যদিবস ধরে টানা পতনের পর আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিমা খাতের কোম্পানি। ঈদের আগে এমন উত্থানে এ খাতের বিনিয়োগকারীরা আবারও আস্থা ফিরে পেয়েছে।
গত তিন কার্যদিবস বিমা খাতের পতনের ফলে শেয়ারধারীদের মধ্যে ধারণা হয়েছিল এ খাতের মূল্য সংশোধন ঈদের আগে শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
মঙ্গলবার বিমা খাতের ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে মাত্র পাঁচটির, দর অপরিবর্তিত দুটির। বাকি ৪৩টি বিমা খাতের কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে।
এ দিন বিমা খাতের বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১০ টাকা ৬০ পয়সা। শেয়ার দর ১২৭ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩৭ টাকা ৯০ পয়সা। ৯ টাকা শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের।
শেয়ার প্রতি ৭ টাকা দর বেড়েছে ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের। ৩ টাকা ৩০ পয়সা শেয়ার দর বেড়েছে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের। ৪ টাকা ৩০ পয়সা দর বেড়েছে গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের। ৪ টাকা ১০ পয়সা শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের।
২ টাকার বেশি শেয়ার দর বেড়েছে সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের।
দর পতন হওয়া বিমা খাতের কোম্পানির মধ্যে আছে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সে, প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৭৮ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭২৪ দশমিক ৩৬ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ১০ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৭১ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ২৮ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৯৪ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২১৮টির; কমেছে ৭১টির। দর পাল্টায়নি ৭৩টির। লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। বুধবার (০২ জুলাই) দুপুরে দামুড়হুদা উপজেলার ঝাঁঝাডাঙ্গা সীমান্তে ওই ঘটনা ঘটে। নিহত ইব্রাহিম বাবু (৩২) ঝাঁঝাডাঙ্গা গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে। ওই ঘটনায় পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে বিজিবি।
নিহতের পিতা নুর ইসলাম জানান, দুপুরে আমার ছেলেসহ ৪-৫ জন গরুর ঘাস কাটার জন্য সীমান্তের গালার মাঠে যায়। এ সময় অসাবধনতাবশত সীমান্তের ৭৯ নম্বর মেন পিলার পার হয়ে ভারতে ঢুকে পড়লে সেখানকার ৩২ বিএসএফ হালদারপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা ২ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এতে বিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় বাবু।
চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল নাজমুল হাসান গুলিবর্ষণের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, কয়েকজন স্বর্ণ চোরাকারবারির ওপর বিএসএফ গুলিবর্ষণ করেছে বলে জানা গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার সলিমগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার (০১ জুলাই) বিকালে শ্রীঘর বাজারের নজরুল ইসলামের দোকানের সন্মুখ থেকে ১৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে। এ সময় আক্কাছ মিয়া (৩২) ও ছিদ্দিকুর রহমান (২১) নামের দুই মাদক ব্যবসায়িকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা যায়- সলিমগঞ্জ ফাঁড়ির পুলিশ শ্রীঘর বাজারের চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন কালে সন্দেহ জনক একটি সিএনজিকে থামিয়ে তল্লাশি করে। আক্কাছ মিয়া কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাঙ্গরা বাজার এলাকার মৃত শহীদ মিয়ার ছেলে। ছিদ্দিকুর রহমান নবীনগর উপজেলার বড়াইল গ্রামের আতিকুর রহমানের ছেলে।
নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিনুর ইসলাম জানান- এ ঘটনায় নবীনগর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ফেনীর পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া সীমান্ত এলাকা থেকে কয়েকটি গরুসহ কোটি টাকার ভারতীয় মালপত্র জব্দ করেছে বিজিবি। বুধবার (০২ জুলাই) উপজেলাদ্বয়ের ভারত সীমান্ত এলাকায় এসব মালপত্র জব্দ করা হয়। বিজিবি জানায়, ছাগলনাইয়া ও পরশুরাম সীমান্ত এলাকায় টহল দিচ্ছিল বিজিবি। টহল দলকে দেখে চোরাকারবারিরা বিপুল পরিমাণ ভারতীয় মোবাইল ডিসপ্লে ভর্তি কার্টন ও কয়েকটি গরু রেখে পালিয়ে যায়। বিজিবি সদস্যরা মালপত্র ও গরুগুলো জব্দ করে। এসবের আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। জব্দকৃত মালপত্র স্থানীয় কাস্টমসে জমা দেওয়া হয়েছে ।
ফেনীর ৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোশারফ হোসেন জানান, সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধসহ অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবির অভিযানিক কর্মকাণ্ড ও গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
ঝিনাইদহে সাপ নিয়ে খেলা করতে গিয়ে সাপের কামড়ে প্রাণ গেল মাহাফুজুর রহমান (১৬) নামের এক কিশোরের। মঙ্গলবার (০১ জুলাই) রাতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের বিষয়খালীর কেশবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত কিশোর মাহাফুজুর রহমান ওই গ্রামের মত. মতিয়ার রহমান মতির একমাত্র ছেলে।
স্বজন ও বন্ধু সোহান জানায়, গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাছের একটি তালগাছ থেকে সোমবার (৩০ জুন) বিকালে মাহাফুজুর রহমান একটি সাপ ধরে টিফিন বাটিতে করে আটকে রাখে। যা পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে ওই তালগাছের কাছে গিয়ে সাপ নিয়ে খেলা করতে গিয়ে মঙ্গলবার (০১ জুলাই) তার হাতে ছোবল দিলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে ঝিনাইদহ হাসপাতালে ভর্তিরপর অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
জুয়া খেলারত অবস্থায় শিবপুর মডেল থানা পুলিশ ৭ জুয়ারিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। বুধবার (০২ জুলাই) সকালে শিবপুর উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের লাখপুর বাজারের পাশে বাবুল নাজিরের কলাবাগানের ভেতর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- দৌলত হোসেন (৩৮) সাং-চরআলিনগর, খোরশেদ আলম (২৪) সাং-চরসিন্দুর, ফারুক (৪৫) সাং-হরিনারায়নপুর, আলামিন (৩৮) সাং-মানিকদী, মুকসিন (৪৪) সাং-শিমুলিয়া, সেলিম (৩৫) সাং-লাখপুর ও সুরুজ (৫২) সাং-লাখপুর। পুলিশ তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও জুয়া খেলার সরঞ্জামাদী উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে শিবপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ধৃত: জুয়ারীদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
জেলার সীতাকুণ্ডে সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মূল্যবান বনায়ন কেটে গড়ে ওঠা বিতর্কিত সেই জাহাজভাঙা কারখানাটিতে দ্বিতীয় দফায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। বুধবার (০২ জুলাই) সকালে জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ যৌথভাবে এ অভিযান শুরু করে। এর আগে গত ২৫ জুন প্রথম দফায় উচ্ছেদ করে কারখানাটির স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। কারখানা এলাকায় গড়ে ওঠা আরও কিছু স্থাপনা এবং ভবনের অবশিষ্টাংশে বুধবার (০২ জুলাই) জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়েছে।
উচ্ছেদের পাশাপাশি সীতাকুণ্ডের ছলিমপুর এলাকার তুলাতলী মৌজার জায়গাটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃক্ষরোপণ শুরু করেছে বন বিভাগ। বিভিন্ন প্রজাতির দুই হাজার গাছ লাগানো হবে ওই স্থানটিতে। প্রথম দফায় সেখানে দুই হাজার বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করা হবে। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।
সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, অবৈধ জাহাজভাঙা কারখানাটি উচ্ছেদের পাশাপাশি সেখানে আমরা বৃক্ষরোপণ শুরু করেছি। এ জন্য চারা এনেছে বন বিভাগ। এ ছাড়া কারখানার অবশিষ্ট অংশটিতে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়।’ এই উচ্ছেদ অভিযানে সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল মামুন ও উপকূলীয় বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক আবুল কালাম আজাদ, রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রাশেদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। রেঞ্জ কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ঝাউ, করঞ্জা ও হিজল- এই তিন প্রজাতির দুই হাজার গাছের চারা এনেছি। এখানে লাগানো হচ্ছে। এর আগে এখানে প্রায় পাঁচ হাজার গাছ ধ্বংস করেন জাহাজভাঙা কারখানার লোকজন।’
জেলা প্রশাসনই বনের জায়গাটিতে জাহাজভাঙা কারখানা স্থাপনের জন্য দুবার ইজারার অনুমতি দিয়েছিল। আপত্তির পর আবার ইজারা বাতিল করা হয়। কোহিনূর স্টিল নামে এই কারখানা স্থাপন করেছিলেন আবুল কাসেম নামের এক ব্যক্তি। তিনি ‘রাজা কাসেম’ নামে পরিচিত।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, তুলাতলী মৌজায় বন বিভাগের ২০ ধারায় নোটিফিকেশনকৃত বনাঞ্চল রয়েছে। ইজারা চুক্তিতে কাগজে-কলমে সলিমপুর মৌজা দেখানো হলেও মূলত তুলাতলী মৌজায় বিতর্কিত এই ইয়ার্ড গড়ে ওঠে। বন বিভাগ বারবার এ ইজারায় আপত্তি জানিয়ে আসছিল। আপত্তি উপেক্ষা করে তখনকার জেলা প্রশাসকেরা একই ভূমি দুবার রাজা কাসেমকে ইজারা দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে প্রথম ৭ দশমিক ১০ একর ভূমি শিপইয়ার্ডের জন্য ইজারা পায় কাসেমের বিবিসি স্টিল। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আইনি পদক্ষেপ নেয় এই ইজারার বিরুদ্ধে; কিন্তু তুলাতলী মৌজাটি বনাঞ্চল হওয়ায় উচ্চ আদালত ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি ইজারা চুক্তি অবৈধ ঘোষণা করেন। পরে আর ইজারা চুক্তি নবায়ন করেনি জেলা প্রশাসন।
বিবিসির নামে ইজারা বাতিল হওয়ার পর কাসেম তার স্ত্রী কোহিনূর আকতার নতুন করে একই জায়গায় জমি ইজারার আবেদন করেন। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয় কোহিনূর স্টিল। এরপর ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কোহিনূর স্টিলের নামে সীতাকুণ্ডের উত্তর সলিমপুর মৌজা দেখিয়ে পাঁচ একর বনভূমি ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন।
এ নিয়ে ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘কৌশলে’ বন ইজারার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আবার ২০২৩ সালের ৮ জুন ‘চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদারতায় ইয়ার্ডের পেটে ৫ হাজার গাছ’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে ২০২৩ সালে জেলা প্রশাসন সীতাকুণ্ডের কোহিনূর স্টিল নামের ওই জাহাজভাঙা কারখানার ইজারা বাতিল করেছিল। উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করে হাইকোর্টে প্রতিবেদনও দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এরপর বিভাগীয় কমিশনার বরাবর ইজারা চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করেন কোহিনূর স্টিলের মালিক আবুল কাসেম। ইজারা ফিরে পেয়ে কারখানাটিতে ফের জোরেশোরে কাজ শুরু করা হয়। সীতাকুণ্ডের সলিমপুর এলাকার তুলাতলী মৌজায় কোহিনূর স্টিল নামের ইয়ার্ডটির অবস্থান। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় বাতিল হওয়া ইজারা ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেয় ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে। এরপর কাসেম আবার ওই জায়গায় কাজ শুরু করেছিলেন। পরে আদালতের নির্দেশে তা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন।
পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল থাকায় প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে মিনি কক্সবাজার খ্যাত চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্র সৈকত এলাকায় লুসাই পার্ক পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এই ভাঙন রোধে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে পর্যটন শিল্পে বিরুপ প্রভাব পড়বে।
বর্তমানে সৈকতে তীব্র ঢেউয়ের প্রভাবে বীচের আশেপাশের বেড়িবাঁধ, পুকুরপাড়, পার্ক, দোকানপাট ভেঙে যাচ্ছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে একসময় পুরো বীচটি সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা, এদিকে পারকি বীচ রক্ষায় পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বর্ণ হক।
ঘুরে দেখা যায়, বীচের দক্ষিণ পাশের প্রায় ঝাউগাছ বিলীন হয়ে গেছে। যে কয়েকটি বাকি আছে সেগুলোও বেঁকে গেছে। বীচের এইপাশের ডোবায় ডুকছে সাগরের পানি। ভেঙে গেছে লুসাই পার্কের সীমানা বেড়িবাঁধ, বিলীন হয়ে গেছে স্থানীয়দের তৈরি করা বেড়িবাঁধ। সাগর গর্ভে চলে যাচ্ছে বীচের পাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা। বীচের সামনে কোনো প্রতিবন্ধক না থাকায় সাগরে ঢেউয়ের তীব্রতা পৌঁছে যাচ্ছে বীচে গড়ে উঠা দোকানপাট-স্থাপনায়।
স্থানীয় প্রবীণ কয়েকজন ব্যক্তি জানায়, কর্ণফুলীর মোহনায় পাকিস্তানের আমলে ২টিপাথরের বাঁধ ছিলো, বন্দরের নব্যতা বাড়ানোর জন্য ফ্রি ড্রেজিং এর ফলে আনোয়ারা সাইডে দেয়ালটি ভেঙে যায় যার কারণে সাগরে ঢেউ সরাসরি বীচে আঘাত করছে।
পারকি সমুদ্র সৈকতে আসা রিফাত হোসেন নামের এক পর্যটল জানান, দিনদিন পারকি সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য কমে যাচ্ছে, এখন ঢেউয়ের কারণে বাঁধ, গাছ, দোকানপাট ভেঙে যাচ্ছে। এসব রক্ষায় সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
সৈকতের লুসাই পার্কের স্বত্বাধিকারী মো. আকবর বলেন, আমরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে পারকি সমুদ্র সৈকতে ব্যবসা করছি,আমার লুসাই পার্কের বাঁধ ভেঙে গেছে, এখানে পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণ হচ্ছে, রয়েছে সরকার-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। তাই এসব রক্ষার্থে বীচ এরিয়ায় বাঁধ দেওয়া প্রয়োজন।
পারকি বীচ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. কাশেম বলেন, শত শত ব্যবসায়ীরা পারকি বীচকে ঘিরে নিজেদের রুজিরোজগারের ব্যবস্থা করছেন, পানির স্রোত এবং ঝাউগাছ ভেঙে পড়ে আমাদের দোকানপাটের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এই বীচটা আমাদের সম্পদ এটি আমাদের রক্ষা করতে হবে।
বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং উর্ধতন কর্মকর্তাকে জানানো হবে।
পারকি বীচ রক্ষায় পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বর্ণ হক বলেন,পারকি বীচ থেকে টানেল পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণের বিষয়ে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে তবে এখনো তা কাগজেকলমে পাশ হয়নি। এটার জন্য স্থানীয়দের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য