পুঁজিবাজারে খাত ধরে উত্থানের যে প্রবণতা দেখা দিয়েছে, তাতে এবার যোগ হয়েছে বস্ত্র খাত। এক দিনে এই খাতের প্রায় সব শেয়ারের দর বৃদ্ধির ঘটনা ঘটল।
এর আগে টানা এক মাস বিমা খাত, পরে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে একাধিক দিন এই চিত্র দেখা গেছে। মাঝে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের শেয়ারগুলোর দরও দল বেঁধে বাড়ার প্রবণতা দেখা গেছে।
রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে পাঁচ দিন দাম কমার বিপরীতে বেড়েছে ৪৩টির দর। বাকি ৮টি কোম্পানির দর ছিল অপরিবর্তিত।
২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর এক বছরের বেশি সময় ধরেই এই খাতের শেয়ারগুলো নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। বহু শেয়ার লেনদেন হচ্ছে অভিহিত মূল্যের নিচে বা আশপাশে। এই অবস্থায় এই খাতের শেয়ারগুলোর মধ্যে বেশ কিছু বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয়ও হয়ে গেছে।
আবার করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়ার যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল, বেশির ভাগ কোম্পানির ক্ষেত্রেই তা সত্য প্রমাণ হয়নি। পুঁজিবাজারে যেসব কোম্পানি প্রান্তিক প্রকাশ করেছে, তার মধ্যে অনেক কোম্পানির আয়ই কমার বদলে বেড়েছে।
বস্ত্রের মতো অত ভালো না করলেও ব্যাংক ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের বেশির ভাগ কোম্পানিই দর ধরে রাখতে পেরেছে। বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারদরও বেড়েছে।
বড় মূলধনি খাতে দর বাড়ার প্রভাবে পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে ৩৯ পয়েন্ট। শেয়ার কেনায় বিনিয়োগকারীদের যে আগ্রহ বেড়েছে, সেটি লেনদেনের চিত্রই বলে দেয়। টানা ৯ দিন এক হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে।
চাঙা বাজারে আগের দুই কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় বড় পতন দেখল বিমা খাত।
গত এক মাসে বিমা খাতের প্রায় সবকটি কোম্পানির ন্যূনতম ৫০ থেকে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত দর বেড়েছে। দর বাড়ছে দেখে যারা বিমা খাতের শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন কিংবা আরও দাম বাড়বে ভেবে ধরে রেখেছেন তারা গত দুই দিনে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৮ টাকা শেয়ারপ্রতি লোকসান করেছেন।
রোববার সবচেয়ে বেশি দরপতন হওয়া শেয়ারগুলোর মধ্যে প্রায় সবগুলোই বিমা খাতের।
সর্বাধিক দর বৃদ্ধি তালিকার প্রায় বস্ত্র খাতের আধিক্য
সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির ৫টি এবং ২০টি কোম্পানির ১১টিই ছিল বস্ত্র খাতের। গত এক বছরে এই চিত্র দেখা যায়নি।
সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে সিমটেক্সের দর। ১০ শতাংশ বেড়ে ১৪ টাকার শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা ৩০ পয়সায়।
ভিএফএস থ্রেড ডাইং কোম্পানির, যার শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ১ টাকা ৮০ পয়সা বেড়ে এখন লেনদেন হচ্ছে ২০ টাকা ৩০ পয়সা।
লোকসানি কোম্পানি তাল্লু স্পিনিং এর দামও বেড়েছে এক দিনে যত বাড়া সম্ভব ততই। ৪ টাকা ১০ পয়সার শেয়ার আজ লেনদেন শেষ করেছে ৪ টাকা ৫০ পয়সায়।
প্রাইম টেক্স স্পিনিং মিলস লিমিটেডের শেয়ারদরও বেড়েছে ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৫ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭ টাকা ২০ পয়সা।
মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলসের শেয়ারদর বেড়েছে ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। শেয়ারদর ১৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭ টাকা ৪০ পয়সা।
এইচ আর টেক্সটাইলের শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ১ টাকা ১০ পয়সা। এনভয় টেক্সটাইলের শেয়ারদর বেড়েছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ বা ১ টাকা ৭০ পয়সা। লেনদেন হয়েছে ২৩ টাকা থেকে ২৪ টাকা ৬০ পয়সায়।
বাড়তি দরে স্থিতিশীল ব্যাংক ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড
গত বুধবার এই দুই খাতের প্রায় সব কোম্পানির দর বেড়েছে। পরের কার্যদিবসে বাড়ে আরও কিছু কোম্পানির শেয়ারদর। তবে কমেও কিছু কোম্পানির।
আজ ব্যাংক খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৫টির। কমেছে ৯টির। পাল্টায়নি ৭টির।
সর্বাধিক দর বৃদ্ধির তালিকায় গত তিন কার্যদিবস ধরেই আছে নতুন তালিকাভুক্ত এনআরবিসি। ১৪ টাকা ৯০ পয়সা থেকে এক টাকা ৪০ পয়সা বেড়ে শেয়ারদর এখন দাঁড়িয়েছে ১৬ টাকা ৩০ পয়সা। এক দিনে এর চেয়ে বেশি বাড়া সম্ভব ছিল না।
টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ব্র্যাক ব্যংকের শেয়ারদর। আগের দিনের দরের সঙ্গে যোগ হয়েছে দুই টাকা। এ ছাড়া প্রাইম ব্যাংকের ৬০ পয়সা আর ইউসিবিএলের ৫০ পয়সা বেড়েছে।
সবচেয়ে বেশি কমেছে রূপালী ব্যাংকের দর। আগের দিনের চেয়ে ৫০ পয়সা কমে লেনদেন হয়েছে এই ব্যাংকের শেয়ারদর। এরপর সবচেয়ে বেশি ৩০ পয়সা দর হারিয়েছে ইবিএল। দর হারানো বাকি ব্যাংকগুলোর শেয়ারদর ১০ থেকে ২০ পয়সা কমেছে।
ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতের ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ১০টির। কমেছে ৮টির। দর পাল্টায়নি ৫টির।
মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬টির। কমেছে ১৫টির। দর পাল্টায়নি ৬টির।
বিমার দরে ধস
রোববার লেনদেন শেষে যে ১২টি কোম্পানির শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি কমেছে তার মধ্যে সবকটিই বিমার। এদিন লেনদেনে ৫০টি বিমা কোম্পানির মধ্যে মাত্র তিনটি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। দুটির দর পাল্টায়নি। বাকি ৪৫টি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে।
অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। লেনদেনে ৬৫ টাকা ৭০ পয়সা থেকে দর কমেছে হয়েছে ৫৯ টাকা ২০ পয়সা।
ইউনাইটেডে ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ। শেয়ার দর ৫৬ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৫১ টাকা ৬০ পয়সা।
তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৮ দশমিক ৭০ শতাশং। শেয়ার দর ৫৮ টাকা ৬০ পয়সা থেকে হয়েছে ৫৩ টাকা ৫০ পয়সা।
ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৬০ টাকা ৭০ পয়সা। শেয়ার দর ৬০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৫৫ টাকা ৬০ পয়সা।
পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ। লেনদেনে ২৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৪ টাকা ২০ পয়সা।
সন্ধানী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৭ দশমিক ১৬ শতাংশ। শেয়ার দর ৩১ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৯ টাকা ৮০ পয়সা।
কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ৫৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ কমে হয়েছে ৪৯ টাকা ৫০ পয়সা।
মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ৪৪ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ কমে হয়েছে ৪১ টাকা ৯০ পয়সা।
নিটল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। শেয়ার দর ৬০ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৫৬ টাকা ৩০ পয়সা।
কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। শেয়ার দর ৪২ দশমিক ৬০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৩৯ টাকা ৯০ পয়সা।
ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ কমে ৫২ টাকা ৫০ পয়সার শেয়ার দিন শেষে হয়েছে ৪৯ টাকা ৪০ পয়সা।
নর্দান জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দরও কমেছে ৫ দশমিক ৭২ শতাংশ।
বিশ্লেষকের বক্তব্য
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার বলেন, ‘বিমা খাতের শেয়ারের যে দর পতন হয়েছে সেটি প্রত্যাশিত ছিল। এরপর দর পতন বা মূল্য সংশোধন না হলে বড় ধনের ঝুকিতে পড়তে হতো বিনিয়োগকারীদের।’
তিনি বলেন, ‘এক খাতের দর পতন হলে অন্য খাতের শেয়ারের দর বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে কোনো খাতেরই অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি ও পতন পুঁজিবাজারের জন্য ভালো না। খাতওয়ারি মোটামুটি সবগুলোই বাড়ছে, এটা ভালো লক্ষণ।’
তিনি বলেন, ‘ঈদের আর কয়েক দিন বাকি আছে। এখন বিনিয়োগকারীরা লাভে থাকা শেয়ার বিক্রি করে টাকা উঠাবে।’
সূচক ও লেনদেন
এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৪৫ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৯ দশমিক ৩০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬১ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ২৮ দশমিক ৭১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৬৫ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৭৬টির, কমেছে ১২৮টির। পাল্টায়নি ৬৩টির।
লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাস স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১২২ দশমিক ২৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৩৩১ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৪১টির। কমেছে ৯৬টির। দর পাল্টায়নি ৩৭টির। লেনদেন হয়েছে মোট ৬৬ কোটি টাকার।
আরও পড়ুন:পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের সময় যশোরের শার্শা উপজেলার কায়বা সীমান্ত থেকে ৫ নারী-পুরুষকে আটক করেছে বিজিবি সদস্যরা। গত মঙ্গলবার রাতে সীমান্তের ১৭/৭ এস এর ২২ আর পিলারের নিকট থেকে তাদের আটক করা হয়।
বিজিবি জানায়, শার্শা উপজেলার কায়বা সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশি নাগরিকরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করতে পারে। ওই সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবির একটি টহল দল সীমান্ত পিলার ১৭/৭ এস এর ২২ আর পিলার থেকে আনুমানিক ৫০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের সময় ২ জন পুরুষ এবং ৩ জন নারীকে আটক করে।
আটককৃত ব্যক্তিদের বাড়ি, যশোর, বাগেরহাট, মুন্সীগঞ্জ, ঢাকা এবং সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকায়। আটককৃতদের শার্শা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান বিজিবি। খুলনা-২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ খুরশীদ আনোয়ার আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সাম্প্রতিককালে সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধকল্পে বিজিবি সীমান্তে কঠোর নজরদারি ও টহল তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে।
ক্যাডার কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছয় মাস থেকে কমিয়ে চার মাস করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন মাস প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে এবং এক মাস মাঠপর্যায়ে ওরিয়েন্টেশন ও গ্রাম সংযুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রশিক্ষণ কাউন্সিলের নবম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, কর্মকর্তাদের মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে ভর্তির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৪৭ বছর করা হবে। পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নকালে প্রতি বছর তত্ত্বাবধায়কের অগ্রগতিমূলক প্রত্যয়ন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে, অন্যথায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বেতন বন্ধ রাখা হবে।
সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি যত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে সেগুলোর ওপর মূল্যায়ন করতে হবে। কী ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, প্রশিক্ষণের ধরন-মান ইত্যাদির মানদণ্ড নির্ধারণ করে ক্যাটাগরিভিত্তিক প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে র্যাংকিং করতে হবে এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি স্বাধীন ইউনিট গঠন করতে হবে। তারা সমস্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওপর পদ্ধতিগতভাবে, স্বাধীনভাবে মূল্যায়ন করবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক দর্শন জানতে হবে। সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না দেখতে হবে। সরকারি কর্মকর্তারা যারা বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন তাদের তথ্য সেখানে থাকবে।’
সভায় সঞ্জীবনী প্রশিক্ষণের নাম পরিবর্তন করে ‘দক্ষতা নবায়ন প্রশিক্ষণ’ করার সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রশিক্ষণ হালনাগাদকৃত কারিক্যুলামে মাঠপর্যায়ে সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হবে। এছাড়া উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা আংশিক বৃত্তিপ্রাপ্ত হলেও প্রেষণ অনুমোদন করা যাবে।
কর্মচারীদের সততা ও নৈতিকতা বিকাশ এবং দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব তৈরিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে সদ্গুণ, নৈতিকতা, আচরণবিজ্ঞান ও আচরণবিধি অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক মূল্যায়ন এবং প্রশিক্ষণ বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে গবেষণা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে একটি নির্বাহী কমিটি (ইসিএনটিসি) গঠন করা হয়।
জাতীয় লেখক ফোরাম আয়োজিত সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে হওয়া এ সাহিত্য আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠেনর সভাপতি ড. দেওয়ান আযাদ রহমান, মহাসচিব কবি-কথাসাহিত্যিক জাহাঙ্গীর হোসাইন এবং উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মো. আবদুল মান্নানসহ বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখকরা। অনুষ্ঠানটি একটি সাধারণ প্রাণবন্ত আড্ডার মধ্যেই শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি ৩টি পর্বে সাজানো হয়েছে। প্রতি পর্বে চারজন কবিকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য এবং কবিতা পাঠ করেছেন। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন কবি-কথা সাহিত্যিক জাহাঙ্গীর হোসাইন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের জন্য সরকার প্রদত্ত সুদমুক্ত ঋণ যথাসময়ে ফেরত না দিলে সংশ্লিষ্ট শিল্প কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বুধবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি, বিজিএমইএ-এর সভাপতি এবং সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা কারখানার মালিকদের নিয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়।
ড. এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রম অসন্তোষ নিরসনের লক্ষ্যে সরকার বার্ডস গ্রুপ, টিএনজেড গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, ডার্ড গ্রুপ, নায়াগ্রা টেক্সটাইলস লিমিটেড, রোয়ার ফ্যাশন লিমিটেড, মাহমুদ জিন্স লিমিটেড, স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড এবং গোল্ডস্টার গার্মেন্টস লিমিটেডকে অর্থ বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় তহবিল, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ চুক্তির আওতায় উক্ত অর্থ পরিশোধ করছেন না।
তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে। তাদের পাসপোর্ট জব্দের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ইতোমধ্যে কয়েকজন পলাতক মালিকের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি পলাতক মালিক ও প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট স্থগিত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেন।
উপদেষ্টা বলেন, "এই ঋণের টাকা শ্রমিকের টাকা এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকা। এ টাকা আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।"
তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে কোনোরকম ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক ও প্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্ট লিয়েন ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিষ্ঠানের জমি, কারখানা, যন্ত্রপাতি বিক্রি করে হলেও ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ঋণের সকল টাকা পরিশোধ করতে বলেন।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-কে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বৃষ্টি নুনিয়া (২০) নামে এক তরুণী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। বুধবার উপজেলার পৌর এলাকার সিন্দুরখান রোডের নিজ বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ। বৃষ্টি ওই এলাকার হীরালাল নুনিয়ার মেয়ে।
শ্রীমঙ্গল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইদুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। গত মঙ্গলবার রাতে পরিবারের সঙ্গে খাবার খেয়ে নিজ কক্ষে ঘুমাতে যান বৃষ্টি। রাতের কোনো একসময় পরিবারের অজান্তে তিনি গলায় ওড়না পেঁচিয়ে বাসার ছাদের মন্দিরের পিলারের সাথে ফাঁস দেন। রাত আড়াইটার দিকে তার মা ডাকতে গেলে কক্ষে তাকে না পেয়ে ছাদে গিয়ে ওই অবস্থায় দেখতে পান এবং পরে পুলিশকে খবর দেন।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আমিনুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
সাতক্ষীরায় পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে আব্দুস সামাদ (৫২) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে তাকে আটকের পর ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক মাসের সাজা দেওয়া হয়। তিনি সাতক্ষীরা পৌরসভার রসুলপুর এলাকার বাসিন্দা। পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরায় পুলিশের ট্রেইনিং রিক্রুট কনস্টেবল পদের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষার পর আব্দুস সামাদ বেশ কয়েকজন প্রার্থীর কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আব্দুস সামাদকে শহরের সঙ্গীতা মোড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে সাতক্ষীরা কারাগারে পাঠানো হয়।
ফটিকছড়ি উপজেলর কাঞ্চন নগর ইউনিয়নে ধুরুং নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে দুইশত বছরের পুরোনো কবরস্থান ও বসতভিটা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ধুরুং নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে নির্বিচারে বালু উত্তোলনের ফলে নদীপাড় ভাঙনের সৃষ্টি হয়ে বসতভিটাসহ শতবর্ষী কবরস্থান বিলীন হতে চলেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কাঞ্চননগর গ্রামের আবদুল হাকিম কেরানীবাড়ী-সংলগ্ন বিশাল কবরস্থানের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা ভেঙে পার্শ্ববর্তী ধুরুং নদীতে মিশে একাকার হয়ে গেছে। এর মধ্যে স্বনামধন্য ধন্য আলেম ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব হজরত অছিউদ্দিন শাহর মাজারও রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান ধুরুং নদীর পাড়ঘেঁষা শতবর্ষী এ কবরস্থানে বছর দুয়েক আগেও শতাধিক কবর ছিল। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিরা এখানে জিয়ারত করতে আসত।
কিন্তু নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙন বৃদ্ধি পেয়ে কবরস্থানটি দিন দিন ছোট হয়ে আসছে।
এ স্থানটিতে খাল এমনভাবে ভেঙেছে, এখানে যে কিছুদিন আগেও কবরস্থান ছিল, তা বোঝার উপায় নেই। বর্তমানে অনেক কবরের স্মৃতি চিহ্ন পর্যন্ত মুছে গেছে।
এদিকে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার সাথে কথা হলে তারা নাম প্রকাশে না করার শর্তে বলেন প্রভাবশালী একটি মহল নদী থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার কারনে ভাঙন মাত্রা আগের চাইতে বেড়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপ্রকৌশলী সোহাগ তালুকদার বলেন, নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে অর্থ বরাদ্দের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে এ নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে বেড়িবাঁধ রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে।
এ নিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কাঞ্চন নগর ইউপির প্রশাসক মো. নজরুল ইসলম ড্রেজার মেশিন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়ে বলেন ভাঙনকবলিত কবরস্থানটি শীঘ্রই পরিদর্শন করা হবে।
মন্তব্য