শরীয়তপুরের মৃৎশিল্পের সুখ্যাতি দীর্ঘদিনের। যুগ যুগ ধরে চলে আসা শিল্পটি প্লাস্টিক, মেলামাইন আর ধাতব পণ্যের ভিড়ে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল।
ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং জীবিকার তাগিদে জেলার পাল বংশের নতুন প্রজন্ম তাই এই শিল্পে এনেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। নকশা ও পণ্যে আনা হয়েছে নান্দনিকতা। এতেই মিলেছে সাফল্য।
দেশের নামিদামি প্রতিষ্ঠানে বিক্রির পাশাপাশি নিত্যনতুন নকশায় তৈরি এসব পণ্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকা আর অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা আসায় সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতিও।
জেলার পাল বংশের মানুষরা মূলত গৃহস্থালির বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরি করত। ঘরে ব্যবহৃত মাটির থালাবাসন, কলস, হাঁড়ি, পাতিল, বদনা, মটকাজাতীয় পণ্যই তারা এত দিন তৈরি করে আসছিলেন।
তবে আধুনিক প্রজন্ম তৈরি করছে নান্দনিক শিল্পমূল্যের মাটির পণ্য। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য বিশেষ চুল্লি, চাকা আর মাটির মিশ্রণ যন্ত্র ব্যবহার করছেন তারা। শহুরে জনগোষ্ঠী আর বহির্বিশ্বের চাহিদা মাথায় রেখে করা হচ্ছে নিত্যনতুন নকশা।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদার সঙ্গে শোপিস বা ডেকোরেশনের ধরনেও আনা হয়েছে পরিবর্তন।
এ অঞ্চলের মৃৎশিল্পীদের সংগ্রহে রয়েছে হাজারও ধরনের দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্ম। ফুলদানি, মোমদানি, কলমদানি, হারিকেন, পুতুল, সাইকেল, প্যাঁচা, ঘোড়া, হাতি, পাখির বাসা, বজ্রনৌকা, খরগোশ, কচ্ছপ, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি, ফলের ট্রে, চায়ের ট্রে, ওয়াল ম্যাট, আর্কষণীয় টালিসহ বৈচিত্র্যময় পণ্য।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুর পাল পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন। সবাই ব্যস্ত নিজ নিজ কাজে।
কেউ মাটি প্রস্তুত করছেন, কেউ ব্যস্ত দৃষ্টিনন্দন নকশা তৈরিতে, কেউবা শুকাচ্ছেন তৈরি করা পণ্যগুলো। এসব পণ্য পোড়ানোর কাজেও রয়েছেন অনেকে। রংতুলিতে পণ্যগুলো আকর্ষণীয় করে তুলছেন আরেক দল কারিগর। কেউ আবার ব্যস্ত পণ্যগুলো বাছাই করে মোড়ক দিতে।
রূপক পাল নামে তাদেরই একজন বজ্রনৌকায় নকশা করছিলেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি জানান, করোনা সত্ত্বেও আমাদের পণ্যের চাহিদা খুব একটা কমেনি। কারণ তাদের মৃৎশিল্পের গুণগতমান আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পণ্য তৈরি করায় অর্ডার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘করোনার প্রভাবে মৃৎশিল্পগুলো বিলুপ্তির পথে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। কারণ, বায়ারদের অর্ডার বন্ধ ছিল না বা কমেনি। শুধু বিদেশে যাওয়ার কারণেই এই শিল্প এখন এগিয়ে যাচ্ছে। তা না হলে এত দিনে বন্ধ হয়ে যেত।’
সরকার যদি পাশে থেকে রপ্তানির ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতা করে তাহলে তারা আরও লাভবান হবেন। পাশাপাশি শিল্পে কর্মসংস্থানও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
ওই কারখানার নারী কারিগর আলো রানী মণ্ডল বলেন, ‘২০ বৎছর ধইরা কাজ করতাছি। কাজের টাকা জমাইছি। হেই টাকা অইতে ছেলেডার বিয়াতে এক লাক টাকা খরচ করছি। কাজ কইর ভালো আছি।
‘সংসারে খরচ করতে পারি, আবার জমাইতেও পারি। দিন দিন কাজ বাড়তাছে। সামনে আরও আয় বাইড়া যাইব।’
পাশের বাড়ির বিপ্লব পাল উঠানে বসে ক্যান্ডেল হাউসের কাজ করছিলেন। তার স্ত্রী সোমা রানী ঘরে বসে পলিশ করছিলেন মাটির কচ্ছপের গায়ে।
কথা হয় সোমা রানীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এগুলো পটারির কাজ। এগুলো বিদেশ যাবে। সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে অনেক যত্নসহকারে ও সাবধানে করে থাকি। যাতে কোনো সমস্যা না হয়।
‘কারণ এই জিনিসগুলো বিদেশ যাবে। নিখুঁতভাবে কাজগুলো না করলে বিদেশে যাবে না।’
শিল্পীদের মেধা ও হাতের নিপুণ কারুকার্যে তৈরি করা এসব মাটির পণ্য এরই মধ্যে দৃষ্টি কেড়েছে বর্তমান প্রজন্মের। আলাদা নান্দনিক শিল্পমূল্য থাকায় এমনিতে মাটির পণ্য পছন্দ করেন অনেকে। এর সঙ্গে পরিবেশবান্ধব এবং পণ্যের বৈচিত্র্য থাকায় প্রতিনিয়তই আগ্রহ বাড়ছে ক্রেতাদের।
ক্রেতা বাড়ায় দিন দিন বড় হচ্ছে এসব পণ্যের বাজার। যেখানে একসময় শুধু গ্রামগঞ্জে ফেরি করে মাটির পণ্য বিক্রি করা হতো। এখন রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরে আলাদা দোকানের পাশাপাশি রাস্তার পাশেও অনেকে এসব পণ্য বিক্রি করেন।
গ্রাহকের চাহিদা পূরণে আড়ং, বিবিয়ানা, হীড বাংলাদেশ, কোড় দি জুট ওয়ার্কস, উষা হ্যান্ডি ক্রাফটসের মতো দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোও মাটির তৈরি এসব পণ্য বিক্রি করছে।
নান্দনিক মূল্য থাকায় এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের অন্তত ২৫টি দেশে এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।
জয়পাল নামে এক কারিগর জানান, রাজধানীর গুলশানের একটি প্রতিষ্ঠান তার কাছ থেকে পণ্যের নমুনা নেয়। এরপর তারা বিমানে সেই নমুনা বিদেশে ক্রেতাদের কাছে পাঠায়। ক্রেতা পছন্দ করলে মোংলা বা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জাহাজের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করা হয়।
তিনি আরও জানান, এ অঞ্চলের অধিকাংশ মৃৎশিল্পীর কাছ থেকে প্রথমে পণ্য কেনে দেশি কোনো প্রতিষ্ঠান। পরে তারা বিদেশে সেই পণ্য পাঠায়।
মধ্যস্বত্বভোগী এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে বিদেশে রপ্তানি বাড়লেও তারা সেভাবে লাভবান হচ্ছেন না অভিযোগ করেন জয়পাল।
করোনা মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেটিও এ অঞ্চলের মৃৎশিল্পে প্রভাব ফেলেছে বলে জানান কারিগররা। তারা জানান, বিদেশের অর্ডার খুব একটা কমেনি, তবে ১৪ দিন ঘরে রেখে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা থাকায় আগের মতো দ্রুত পণ্য পাঠানো যাচ্ছে না।
রূপক পাল জানান, দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর দেশীয় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অর্ডার স্থগিত করেছে। অর্ডার বাতিল না করলেও লকডাউনের পর পণ্য নেবে বলে জানিয়েছে। আবার বিদেশে পণ্য পাঠানোয়ও ধীরগতি তৈরি হয়েছে। আগে যে সময়ে পাঁচবার পণ্য পাঠানো যেত, এখন দুইবার যাচ্ছে।
মধ্যস্বত্বভোগীদের অতিরিক্ত লাভের কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসানও। তিনি বলেন, ‘শরীয়তপুরের মৃৎশিল্পের পণ্যগুলো আমি দেখেছি। তাদের কাজ আমাকে মুগ্ধ করেছে। যে পণ্যগুলো তৈরি করা হচ্ছে তা সুদৃশ্য এবং আকর্ষণীয়। তবে সে অনুযায়ী মূল্য পাচ্ছেন না তারা। মধ্যস্বত্বভোগীরা ফায়দা লুটছে।’
তিনি জানান, মৃৎশিল্পীরা যাতে ন্যায্যমূল্য পান সে জন্য উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সরাসরি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ চলছে। ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে পণ্যগুলো তুলে ধরা হবে। এতে করে আন্তর্জাতিক বাজারও সম্প্রসারিত হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, ‘দেশীয় সব ধরনের শিল্পের প্রসার ও উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। মৃৎশিল্প শরীয়তপুরের একটি ঐতিহ্য। এখানকার পণ্য এখন দেশের অভিজাত এলাকার ঘরে ঘরে শোভা পাচ্ছে।
‘বিক্রি হচ্ছে বড় শোরুমগুলোতে। যাচ্ছে বিদেশেও। এ শিল্প থেকে যাতে বৈদেশিক মুদ্রা আরও বেশি পরিমাণে আয় করা যায় সেটা নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। আন্তর্জাতিকভাবে নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করতে সরকার কাজ করছে। আগামীতে মৃৎশিল্প হবে শরীয়তপুরের অন্যতম কারুশিল্প।’
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
মন্তব্য