শরীয়তপুরের মৃৎশিল্পের সুখ্যাতি দীর্ঘদিনের। যুগ যুগ ধরে চলে আসা শিল্পটি প্লাস্টিক, মেলামাইন আর ধাতব পণ্যের ভিড়ে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল।
ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং জীবিকার তাগিদে জেলার পাল বংশের নতুন প্রজন্ম তাই এই শিল্পে এনেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। নকশা ও পণ্যে আনা হয়েছে নান্দনিকতা। এতেই মিলেছে সাফল্য।
দেশের নামিদামি প্রতিষ্ঠানে বিক্রির পাশাপাশি নিত্যনতুন নকশায় তৈরি এসব পণ্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকা আর অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা আসায় সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতিও।
জেলার পাল বংশের মানুষরা মূলত গৃহস্থালির বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরি করত। ঘরে ব্যবহৃত মাটির থালাবাসন, কলস, হাঁড়ি, পাতিল, বদনা, মটকাজাতীয় পণ্যই তারা এত দিন তৈরি করে আসছিলেন।
তবে আধুনিক প্রজন্ম তৈরি করছে নান্দনিক শিল্পমূল্যের মাটির পণ্য। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য বিশেষ চুল্লি, চাকা আর মাটির মিশ্রণ যন্ত্র ব্যবহার করছেন তারা। শহুরে জনগোষ্ঠী আর বহির্বিশ্বের চাহিদা মাথায় রেখে করা হচ্ছে নিত্যনতুন নকশা।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদার সঙ্গে শোপিস বা ডেকোরেশনের ধরনেও আনা হয়েছে পরিবর্তন।
এ অঞ্চলের মৃৎশিল্পীদের সংগ্রহে রয়েছে হাজারও ধরনের দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্ম। ফুলদানি, মোমদানি, কলমদানি, হারিকেন, পুতুল, সাইকেল, প্যাঁচা, ঘোড়া, হাতি, পাখির বাসা, বজ্রনৌকা, খরগোশ, কচ্ছপ, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি, ফলের ট্রে, চায়ের ট্রে, ওয়াল ম্যাট, আর্কষণীয় টালিসহ বৈচিত্র্যময় পণ্য।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুর পাল পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন। সবাই ব্যস্ত নিজ নিজ কাজে।
কেউ মাটি প্রস্তুত করছেন, কেউ ব্যস্ত দৃষ্টিনন্দন নকশা তৈরিতে, কেউবা শুকাচ্ছেন তৈরি করা পণ্যগুলো। এসব পণ্য পোড়ানোর কাজেও রয়েছেন অনেকে। রংতুলিতে পণ্যগুলো আকর্ষণীয় করে তুলছেন আরেক দল কারিগর। কেউ আবার ব্যস্ত পণ্যগুলো বাছাই করে মোড়ক দিতে।
রূপক পাল নামে তাদেরই একজন বজ্রনৌকায় নকশা করছিলেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি জানান, করোনা সত্ত্বেও আমাদের পণ্যের চাহিদা খুব একটা কমেনি। কারণ তাদের মৃৎশিল্পের গুণগতমান আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পণ্য তৈরি করায় অর্ডার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘করোনার প্রভাবে মৃৎশিল্পগুলো বিলুপ্তির পথে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। কারণ, বায়ারদের অর্ডার বন্ধ ছিল না বা কমেনি। শুধু বিদেশে যাওয়ার কারণেই এই শিল্প এখন এগিয়ে যাচ্ছে। তা না হলে এত দিনে বন্ধ হয়ে যেত।’
সরকার যদি পাশে থেকে রপ্তানির ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতা করে তাহলে তারা আরও লাভবান হবেন। পাশাপাশি শিল্পে কর্মসংস্থানও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
ওই কারখানার নারী কারিগর আলো রানী মণ্ডল বলেন, ‘২০ বৎছর ধইরা কাজ করতাছি। কাজের টাকা জমাইছি। হেই টাকা অইতে ছেলেডার বিয়াতে এক লাক টাকা খরচ করছি। কাজ কইর ভালো আছি।
‘সংসারে খরচ করতে পারি, আবার জমাইতেও পারি। দিন দিন কাজ বাড়তাছে। সামনে আরও আয় বাইড়া যাইব।’
পাশের বাড়ির বিপ্লব পাল উঠানে বসে ক্যান্ডেল হাউসের কাজ করছিলেন। তার স্ত্রী সোমা রানী ঘরে বসে পলিশ করছিলেন মাটির কচ্ছপের গায়ে।
কথা হয় সোমা রানীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এগুলো পটারির কাজ। এগুলো বিদেশ যাবে। সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে অনেক যত্নসহকারে ও সাবধানে করে থাকি। যাতে কোনো সমস্যা না হয়।
‘কারণ এই জিনিসগুলো বিদেশ যাবে। নিখুঁতভাবে কাজগুলো না করলে বিদেশে যাবে না।’
শিল্পীদের মেধা ও হাতের নিপুণ কারুকার্যে তৈরি করা এসব মাটির পণ্য এরই মধ্যে দৃষ্টি কেড়েছে বর্তমান প্রজন্মের। আলাদা নান্দনিক শিল্পমূল্য থাকায় এমনিতে মাটির পণ্য পছন্দ করেন অনেকে। এর সঙ্গে পরিবেশবান্ধব এবং পণ্যের বৈচিত্র্য থাকায় প্রতিনিয়তই আগ্রহ বাড়ছে ক্রেতাদের।
ক্রেতা বাড়ায় দিন দিন বড় হচ্ছে এসব পণ্যের বাজার। যেখানে একসময় শুধু গ্রামগঞ্জে ফেরি করে মাটির পণ্য বিক্রি করা হতো। এখন রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরে আলাদা দোকানের পাশাপাশি রাস্তার পাশেও অনেকে এসব পণ্য বিক্রি করেন।
গ্রাহকের চাহিদা পূরণে আড়ং, বিবিয়ানা, হীড বাংলাদেশ, কোড় দি জুট ওয়ার্কস, উষা হ্যান্ডি ক্রাফটসের মতো দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোও মাটির তৈরি এসব পণ্য বিক্রি করছে।
নান্দনিক মূল্য থাকায় এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের অন্তত ২৫টি দেশে এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।
জয়পাল নামে এক কারিগর জানান, রাজধানীর গুলশানের একটি প্রতিষ্ঠান তার কাছ থেকে পণ্যের নমুনা নেয়। এরপর তারা বিমানে সেই নমুনা বিদেশে ক্রেতাদের কাছে পাঠায়। ক্রেতা পছন্দ করলে মোংলা বা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জাহাজের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করা হয়।
তিনি আরও জানান, এ অঞ্চলের অধিকাংশ মৃৎশিল্পীর কাছ থেকে প্রথমে পণ্য কেনে দেশি কোনো প্রতিষ্ঠান। পরে তারা বিদেশে সেই পণ্য পাঠায়।
মধ্যস্বত্বভোগী এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে বিদেশে রপ্তানি বাড়লেও তারা সেভাবে লাভবান হচ্ছেন না অভিযোগ করেন জয়পাল।
করোনা মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেটিও এ অঞ্চলের মৃৎশিল্পে প্রভাব ফেলেছে বলে জানান কারিগররা। তারা জানান, বিদেশের অর্ডার খুব একটা কমেনি, তবে ১৪ দিন ঘরে রেখে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা থাকায় আগের মতো দ্রুত পণ্য পাঠানো যাচ্ছে না।
রূপক পাল জানান, দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর দেশীয় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অর্ডার স্থগিত করেছে। অর্ডার বাতিল না করলেও লকডাউনের পর পণ্য নেবে বলে জানিয়েছে। আবার বিদেশে পণ্য পাঠানোয়ও ধীরগতি তৈরি হয়েছে। আগে যে সময়ে পাঁচবার পণ্য পাঠানো যেত, এখন দুইবার যাচ্ছে।
মধ্যস্বত্বভোগীদের অতিরিক্ত লাভের কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসানও। তিনি বলেন, ‘শরীয়তপুরের মৃৎশিল্পের পণ্যগুলো আমি দেখেছি। তাদের কাজ আমাকে মুগ্ধ করেছে। যে পণ্যগুলো তৈরি করা হচ্ছে তা সুদৃশ্য এবং আকর্ষণীয়। তবে সে অনুযায়ী মূল্য পাচ্ছেন না তারা। মধ্যস্বত্বভোগীরা ফায়দা লুটছে।’
তিনি জানান, মৃৎশিল্পীরা যাতে ন্যায্যমূল্য পান সে জন্য উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সরাসরি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ চলছে। ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে পণ্যগুলো তুলে ধরা হবে। এতে করে আন্তর্জাতিক বাজারও সম্প্রসারিত হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, ‘দেশীয় সব ধরনের শিল্পের প্রসার ও উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। মৃৎশিল্প শরীয়তপুরের একটি ঐতিহ্য। এখানকার পণ্য এখন দেশের অভিজাত এলাকার ঘরে ঘরে শোভা পাচ্ছে।
‘বিক্রি হচ্ছে বড় শোরুমগুলোতে। যাচ্ছে বিদেশেও। এ শিল্প থেকে যাতে বৈদেশিক মুদ্রা আরও বেশি পরিমাণে আয় করা যায় সেটা নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। আন্তর্জাতিকভাবে নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করতে সরকার কাজ করছে। আগামীতে মৃৎশিল্প হবে শরীয়তপুরের অন্যতম কারুশিল্প।’
সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিটিএ জেটি ঘাট থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টাগবোটে তুলে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তাদের তুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এরপর সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলি টাগবোটে তুলে দেয়া হয়। কোস্ট গার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দফায় আরো ২৮৮ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এবার তাদের ফেরত পাঠানো হলো।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ২৮৮ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ভোর রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে কক্সবজার ইনানী নৌবাহিনী জেটি ঘাটে নেয়া হয় তাদের। সেখানে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে তাদেরকে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
গত ১১ মার্চ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির জামছড়ি ও আশারতলী সীমান্তে দিয়ে প্রথম দফায় ১৭৯ জন মিয়ানমারের বিজিপির সদস্য আশ্রয় নেন। পরে কয়েক দফায় ঘুমধুম, তুমর্রু ও কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে দিয়ে মোট ২৮৮ জন মিয়ারমারের সেনা ও বিজিপির সদস্য আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিজিপি ও সেনা সদস্যদেরকে নাইক্ষ্যংছড়ি বর্ডার গার্ড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছিল। তাদের সে দেশের নৌবাহিনীর জাহাজে করে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি কর্মকর্তারা।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জন। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার উখিয়ার ইনানী নৌ-বাহিনীর জেটিঘাট দিয়ে তাদের মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছিল।
ছিয়াত্তর বছর বয়সী আবদুর রহিম স্ত্রীকে হারিয়েছেন দেড় যুগ আগে। পরিবারের সদস্য বলতে এক ছেলে, তাও থাকেন প্রবাসে। ছেলে প্রবাসে যাওয়ার পর অন্য ঘরে চলে গেছেন ছেলের বৌও। তাই রান্না-বান্না থেকে শুরু করে সব কিছুই করতে হয় নিজেকে।
জীবন যুদ্ধে তিনি কখনও দমে যাননি, তবে এবার হার মেনেছেন টিউবওয়েলের পানির কাছে। ১৫ থেকে ১৬ বার টিউবওয়েল চাপার পরেও মিলছে না এক গ্লাস পানি। তাই পানি সংকটের কারণে গোসল থেকে শুরু করে গৃহস্থালির সব কাজ হচ্ছে ব্যাহত।
তাই অধিকাংশ সময় বাড়ির পাশে থাকা মসজিদে গিয়ে পানির চাহিদা পূরণ করছেন আবদুর রহিম।
এদিকে গৃহবধূ ছানোয়ারা খাতুন গৃহস্থালির সব কাজ করেন একাই। বাড়িতে রয়েছে তিনটি গাভি ও চারটি ছাগল। এর মধ্যেই আজ সপ্তাহ দুয়েক ধরে টিউবওয়েলে উঠছে না পানি। খাওয়া থেকে ওজু, গোসল সব কিছুতেই বেগ পেতে হচ্ছে পানি সংকটের কারণে।
ছানোয়ারা খাতুন জানান, তীব্র তাপদাহের মধ্যে আজ সপ্তাহখানেক ধরে বাড়িতে থাকা গরুর গোসল করাতে পারেননি তিনি, তবে নিজে প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে গোসল করে আসেন।
মেহেরপুরের গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের হস্তচালিত টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ফলে এলাকার মানুষের মধ্যে পানির সংকট এখন চরমে পৌঁছেছে। একদিকে গৃহস্থালির কাজে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বোরো চাষে পানির সংকটের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললে তারা সুপেয় পানির সংকটের কথা জানান। বিশেষ করে মুজিবনগর উপজেলার, জয়পুর, আমদহ, তারানগর, বিশ্বনাথপুর; সদর উপজেলার শালিকা, আশরাফপুর, আমদাহ, বুড়িপোতা, আলমপুর এবং গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের আমতৈল, মানিকদিয়া, কেশবনগর, শিমুলতলা, রইয়েরকান্দি, সহড়াবাড়িয়া, মিনাপাড়া, ভোলাডাঙ্গা, কুমারীডাঙ্গা কাথুলি ইউনিয়নের গাঁড়াবাড়িয়া, ধলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় চলতি শুষ্ক মৌসুম শুরু থেকেই সুপেয় পানির সংকট প্রকট হচ্ছে।
দীর্ঘ সময় ধরে অনাবৃষ্টি, ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা, এবং পুকুর-খাল-বিল ভরাটের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সীমান্তবর্তী মেহেরপুর জেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে। আগামীতে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে বলেও জানান তারা।
গ্রামবাসীরা বলছেন, গ্রীষ্মকাল শুরু না হতেই এবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। অথচ গ্রামে সুপেয় পানির জন্য নলকূপই শেষ ভরসা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলার গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির স্তর প্রতি বছর ১০ থেকে ১১ ফুট নিচে নামছে। ১০ বছর আগেও এই এলাকায় ৬০ থেকে ৭০ ফুটের মধ্যে ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর পাওয়া যেত। অথচ এখন পানির জন্য যেতে হয় ৩০০ ফুটেরও বেশি গভীরে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক বছরে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর ১০ থেকে ১৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। ফলে অকেজো হয়ে পড়েছে হস্তচালিত অনেক টিউবওয়েল। যেখানে আগে ভূগর্ভের ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীরতা থেকেই পাওয়া যেত সুপেয় পানি। গত এক দশকে ক্রমেই পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।
জেলায় গভীর-অগভীর মিলিয়ে ৯ হাজার ৯১৩টি নলকূপ আছে। এর মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে আছে ২ হাজার ২৩৯টি।
গাংনী উপজেলার ভোলাডাঙ্গা গ্রামের পল্লি চিকিৎসক মতিন বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে গ্রামে গ্রামে চিকিৎসা দিয়ে বেড়াই। আজ ১০ দিন ধরে আমার বাড়ির নলকূপে পানি উঠছে না। রোদের মধ্যে সারা দিন গ্রাম গ্রাম ঘুরে বাড়ি এসে যদি পানি না পাই তাহলে কেমন লাগে? আমি তাই মসজিদের নলকূপে গিয়ে গোসল সেরে আসি।’
একই এলাকার দিনমজুর সিরাজ বলেন, ‘আমি সারা দিন মাঠে কাজ করি। বাড়িতে দুটি গরুও পালন করি অথচ গরু দুটি আজ কয়দিন গা ধোয়াতে পারিনি। আবার মাঠে এক বিঘা ধানের আবাদ আছে, তাতে সেচ দিতে গিয়ে বিপদে পড়তে হচ্ছে। যেখানে দুই ঘণ্টা মেশিনে পানি দিলে হয়ে যেতো। সেখানে এখন চারটা ঘণ্টা পানি দিয়েও হচ্ছে না।’
এ অঞ্চলের আবহাওয়া নির্ণয়কারী চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গাসহ এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এখানে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলে আপাতত আজকে বৃষ্টির সম্ভবনা নেই।’
মেহেরপুরের জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন জানান, সুপেয় পানির সমস্যা নিরূপণে যেসব এলাকায় সংকট সেখানে ১০টি বাড়িকে কেন্দ্র করে একটি ৯০০ ফুট গভীর নলকূপ স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এসব এলাকায় ৫০০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে, তবে অতিবৃষ্টি ও পানির অপচয় রোধ করা না গেলে পানি সংকটের সমাধান মিলবে না।
আরও পড়ুন:নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার উত্তর পাকুরীয়া গ্রামের এক নাবালিকা ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা মামলায় এক মাদ্রাসা শিক্ষককে দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে।
নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মেহেদী হাসান তালুকদার বুধবার এ রায় দেন। জরিমানার অর্থ ভুক্তভোগী ছাত্রীকে প্রদানের নির্দেশ দেন বিচারক।
দণ্ডাদেশ পাওয়া ওই শিক্ষকের নাম আবুল হাসান। ২৫ বছর বয়সী আবুল হাসান বদলগাছী উপজেলার উত্তর পাকুরীয়া গ্রামের বাসিন্দা ও একটি মাদ্রাসার আরবি বিষয়ের শিক্ষক।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৯ মে সকাল ছয়টার সময় নয় বছর বয়সী ওই মেয়েটি একই গ্রামের আরবি শিক্ষক আবুল হাসানের বাড়িতে আরবি পড়তে যায়। সে সময় অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরা না আসায় তাকে একা পেয়ে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন তিনি। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর মা বদলগাছী থানায় অভিযোগ করলে তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা মেলায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আদালত আট জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বুধবার রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।
এদিন আসামির উপস্থিতিতে তাকে দেয়া সাজার রায় পড়ে শোনানো হয় এবং শেষে তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আজিজুল হক ও আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামলা পরিচালনা করেন। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে এবং আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানায়।
রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্তিতে বুধবার প্রাণ হারানো শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন হতাহত শ্রমিক, তাদের পরিবার, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশ সদস্যরা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। পঙ্গুত্ব নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সহস্রাধিক শ্রমিক।
ট্র্যাজেডির বার্ষিকীতে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শ্রমিক ও সংগঠনগুলোর সদস্যরা।
সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বুধবার সকাল থেকে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়।
একে একে নিহত শ্রমিকের পরিবার, আহত শ্রমিক, পুলিশ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ফুলের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে ওঠে বেদি। ওই সময় নিহত শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, র্যালি ও মানববন্ধন করা হয়।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের অনেক স্বজন প্রিয়জনের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
সমাবেশে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পর এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান বক্তারা।
একই সঙ্গে ভবনের মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডেরও দাবি জানান তারা।
আরও পড়ুন:পঞ্চগড়ের বোদা-দেবীগঞ্জ জাতীয় মহাসড়কে ট্রাক ও ট্রলির (ট্রাক্টর) মুখোমুখি সংঘর্ষে এক পথচারী নারীসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চার জন।
বুধবার সকালে বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের কলাপাড়া নামক স্থানে মহাসড়কে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহতরা হলেন- বোদা পৌরসভার সদ্দারপাড়া গ্রামের সাফিরের স্ত্রী ৬০ বছর বয়সী নুরজাহান ও একই উপজেলার মাজগ্রাম এলাকার মানিক ইসলামের ছেলে ২৫ বছর বয়সী জাহিদ ইসলাম।
বোদা থানার ওসি মোজাম্মেল হক দুজনের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেবীগঞ্জ থেকে পঞ্চগড়গামী একটি দ্রুতগামী ট্রাক ও বিপরীতমুখী একটি ট্রলির সংঘর্ষ হয়। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশে থাকা এক পথচারী নারীকে গাড়িদুটি চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। দুর্ঘটনায় ট্রলির চালক জাহিদও ঘটনাস্থলে নিহত হন। এছাড়া স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। বর্তমানে তারা সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মন্তব্য