বরিশাল সদর উপজেলার লাহারহাটের তরমুজচাষি বরকত হোসেন নিজের ক্ষেতের সবচেয়ে বড় আকারের ১৫ কেজি ওজনের প্রতি শ তরমুজ সর্বোচ্চ ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। আকারে ছোট হলে দাম আরও কম।
অর্থাৎ প্রতিটির দাম পড়েছে ১৮০ টাকা। কেজি পড়ে ১২ টাকার মতো।
কিন্তু সেই তরমুজই ঢাকাসহ সারা দেশে খুচরায় বিক্রি হচ্ছে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি দামে, ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে।
কৃষকের হাত থেকে খুচরা পর্যায়ে আসার পর তরমুজের দাম এত বাড়ে কেন, তার কারণ বের করার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। দেখা যায়, কৃষকের হাত থেকে যাওয়ার পর প্রতি ধাপে অনুমোদিত হারের চেয় বেশি দাম বাড়ে। আর সবচেয়ে বেশি বাড়ে খুচরা পর্যায়ে।
কৃষি বিপণন আইন মানলে ঢাকার ভোক্তারা ৩০ টাকা কেজি দরে ফলটি খেতে পারতেন। কিন্তু তীব্র গরম আর রোজায় চাহিদা বাড়ার সুযোগ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
শহরের বিভিন্ন এলাকায় খুচরা ব্যবসায়ীদের মোটামুটি একই দামে তরমুজ বিক্রি করতে দেখা যায়। এতে এটা বোঝা যায়, তারা দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে এককাট্টা।
তবে সম্প্রতি দেশজুড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযানের পর ফলটির দাম পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে কিছুটা কমার প্রমাণ মিলেছে।
কৃষক পর্যায়ে কত দাম, আড়তেই বা কত
চাষিদের হাত থেকে তরমুজ প্রথমে যায় পাইকারি ব্যবসায়ী বা ফড়িয়াদের হাতে। তারা এ তরমুজ বিক্রি করেন মোকাম বা আড়তে। আর আড়ত থেকে থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে শ হিসেবে কিনে খুচরা বাজারে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন কেজি হিসেবে।
বরকত হোসেনসহ বরিশালের লাহারহাটের কয়েকজন তরমুজচাষি। তারা নিউজবাংলাকে জানান, ৭ থেকে ১০ কেজি ওজনের তরমুজ প্রতি শ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। প্রতিটির দাম পড়ে ১০০ টাকা। কেজিতে দাম ১০ থেকে ১৪ টাকা পড়ে।
তিন থেকে ছয় কেজি ওজনের তরমুজের শ ৫ হাজার টাকা দেন আড়তের মহাজন। প্রতিটির দাম হয় ৫০ টাকা। কেজি হিসেবে দাম পড়ে ৮ থেকে ১৬ টাকা।
দেশের সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয় বরিশাল বিভাগে, এরপরই খুলনা।
খুলনার বটিয়াঘাটার দেবীতলার চাষি গোবিন্দ রায় বলেন, এ বছর তিনি ৯ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। বর্তমানে প্রতি বিঘায় প্রায় ১ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি হচ্ছে।
এক বিঘায় বিভিন্ন আকারের তরমুজ মিলে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ তরমুজ হয়। সবচেয়ে বড় ১৫-১৬ কেজির ওজনের ১০০ তরমুজ বিক্রি হয় ১৯ থেকে ২০ হাজার টাকায়।
একেকটির দাম পড়ে ১৯০ থেকৈ ২০০ টাকা। কেজি পড়ে ১৩ থেকে ১৪ টাকা।
দেশের বিভিন্ন চাষির কাছ থেকে পাইকারি ক্রেতারা তরমুজ এনে বিক্রি করেন ঢাকার বাদামতলীর আড়তে।
সোমবার এই আড়তে খুলনা থেকে আসা তিন-চার কেজির প্রতি শ তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকায়। অর্থাৎ একেকটি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। প্রতি কেজির দাম পড়ে ১৮ টাকার কম।
৬ থেকে ৮ কেজির তরমুজের শ বিক্রি হয়েছে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। একেকটি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। এই আকারের তরমুজের দামই সবচেয়ে বেশি। প্রতি কেজির দাম পড়ে ১৭ থেকে ২০ টাকা।
১০ থেকে ১২ কেজির তরমুজ বিক্রি হয়েছে ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকায়। একেকটির দাম পড়ে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। প্রতি কেজির দাম পড়ে ১৫ থেকে ১৭ টাকা।
১৫ কেজির কাছাকাছি ওজনের প্রতি শ তরমুজ বিক্রি হয়েছে ২২ থেকে ২৩ হাজার টাকায়। একেকটির দাম পড়ে ২২০ থেকে ২২৩ টাকা। প্রতি কেজির দাম পড়ে ১৫ টাকার কিছু বেশি।
খুচরায় দাম কত?
খুচরা ব্যবসায়ীরা যে দামে তরমুজ কেনেন, বিক্রি করেন তার আড়াই থেকে তিন গুণ দামে। সারা দিনের খরচ বাদ দিলেও তারা আইনবিরুদ্ধ মুনাফা করছেন।
বাদামতলী থেকেই এই তরজুম ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বিক্রেতারা পাইকারিতে কিনে নিয়ে খুচরায় বিক্রি করেন। গতকাল খুচরা বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হয়েছে কমপক্ষে ৫০ টাকায়।
চার থেকে পাঁচ কেজির তরমুজ কিনতে গেলে খরচ হচ্ছে কমপক্ষে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা।
ফার্মগেটের ভ্যানে করে তরমুজ বিক্রি করছিলেন আরিফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আগে বেশি দামে বেচছি, এখন একদাম ৫০ টাকা। মানুষ কিনেও কম।’
আরেক বিক্রেতা মো. রাসেল জানান, কেজি বা আস্ত, দাম প্রায় একই, যে যেমন ভালো বুঝে নেয়।
আইন অনুযায়ী দাম হওয়ার কথা ৩০ টাকার নিচে
কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ অনুযায়ী, প্রতি কেজি ফলে মুনাফা করা যায় ১০ টাকা। তবে তরমুজের ক্ষেত্রে বিশেষ নির্দেশনায় বলা আছে, তরমুজে কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকার বেশি লাভ করা যাবে না।
পাইকারি আড়তে তরমুজের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকার মধ্যে থাকায় এই বিধান অনুযায়ী কেজি দরে বিক্রি করলেও দাম পড়ত ২৫ টাকার মধ্যে। আর শহরের ভেতর পরিবহন খরচ ও অপচয় ধরলেও দাম পড়ত ৩০ টাকার ভেতর।
তবে এই বাড়তি মুনাফার বদলে আলোচনা বেশি হচ্ছে কেজিতে বিক্রি নাকি পিস হিসেবে বিক্রি।
কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ অনুযায়ী পাইকারিতে কোনো ফল পিস হিসেবে কিনলে খুচরাতেও বিক্রি করতে হবে পিসে। আর কেজিতে কিনলে বিক্রি করতে হবে কেজিতে।
অর্থাৎ তরমুজের ক্ষেত্রে আইনের লঙ্ঘন হয়েছে দুই জায়গায়।
পরিবহন খরচ কত?
চাষিদের কাছ থেকে তরমুজ এনে ঢাকার বাদামতলীতে বিক্রি করেন পাইকারি ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্ষেত থেকে তরমুজ আনলাম আর বেচলাম এমন নয়। মৌসুমের শুরুতেই ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা দিয়ে রাখছি মাঠে (চাষিদের দাদন দিয়ে)। পাকনা তরমুজ ক্ষেত থেকে ট্রাকে করে শহরে আনতে হয়, তারপর ট্রাকে করে ঢাকায় আসে। পথে অনেক তরমুজ নষ্টও হয়। ৫০ লাখ টাকা পুঁজি দিয়া যদি কিছু লাভ না করি, খামু কী?’
ব্যবসায়ীরা জানান, তরমুজ ঢাকায় আড়ত পর্যন্ত আনতে তিন স্তরে প্রতিটির পেছনে খরচ পড়ে ৬ টাকার মতো। প্রতিটি ট্রাকের ভাড়া পড়ে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
ট্রাকের চেয়ে তিন গুণ বেশি খরচ হয় ট্রলারে করে আনলে। ঘাটে বা আড়তে লোড-আনলোডে খরচ রয়েছে। আর নদ বা সড়ক দুই পথেই বিভিন্ন জায়গায় ২ থেকে ৪ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয় ট্রাক ও ট্রলারপিছু।
আড়ত থেকে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে তরমুজ নিতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে গাড়ি ভাড়া করেন। এতে তাদের খরচ কম পড়ে। কেজিপ্রতি ২ থেকে ৪ টাকার মধ্যে থাকে ভাড়া। তবে পরিবহনের সময় কয়েকটা তরমুজ নষ্ট হয়।
চাষির মুনাফা কত?
খুলনার বটিয়াঘাটার দেবীতলার চাষি দীপক মণ্ডল চলতি বছর চাষ করছেন ছয় বিঘা জমিতে। খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকার বেশি।
তিনি জানান, অন্য ফলের চেয়ে তরমুজের খাটনি খুবই বেশি। বেশ কয়েক দফায় সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। আবার বিক্রির সময় থাকে মাত্র ১৫ দিন। এর বেশি হলে ফল পচে যাবে। তাই বেপারিদের সঙ্গে দামদর সেভাবে করার সুযোগ থাকে না।
বেশির ভাগ চাষিই পাইকার বা মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে তরমুজ চাষ করেন। এতে আগে থেকেই পাইকারের কাছে তরমুজ বিক্রির চুক্তি থাকে। তারা যা দাম দেয় তাই নিতে হয়, চাইলেও অন্য কোনো পাইকারের কাছে যাওয়া যায় না। আবার মহাজনরা জোট বেঁধেও তরমুজের দাম কমিয়ে দেন।
বরিশাল সদর উপজেলার লাহারহাটের চাষি শওকত মিয়া বলেন, ‘অনেক পাইকার কয়, ক্যারিং খরচ বেশি। কিন্তু এটা পুরাই মিথ্যা। অনেক চাষিই আড়ত পর্যন্ত তরমুজ দিয়া আয়ে। আমরা চাষিরা এত দামে তরমুজ বেচি না। কেন যে এমন সিন্ডিকেট করছে এরা বুঝি না।’
মাঠপর্যায়ে দাম না পেয়ে খুলনার দাকোপের চাষি পার্থ রায় নিজেই তরমুজ নিয়ে ঢাকায় আসেন। তবে ঢাকায়ও তিনি প্রত্যাশিত দাম পাননি।
তিনি এ বছর ১৬ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে মাঠে দাম কম। তাই তরমুজ নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন।
বলেন, ‘ঢাকায়ও দাম কম। তবে সব খরচ দিয়েও মাঠের চেয়ে ৫০ হাজার টাকা বেশি দাম পাইছি। আর ঢাকায় আনন যাইব না, কুষ্টিয়ায় নিতে ওইব।’
খুলনার দেবীতলার চাষি গোবিন্দ রায় এ বছর ৯ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। ফলন কিছুটা কম হলেও দাম ভালো থাকায় ভালো লাভ হবে।
তবে আগের চেয়ে দাম কমেছে। প্রথম দিকে বিঘাপ্রতি বিক্রি হয়েছে দেড় লাখ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে এক লাখ টাকা।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ব্যাপারি দুলাল শিকদার বলেন, ‘আগে বেশি দামে কেনা হইছে, এখন দাম কমায় ব্যাপারিগো লস। এবার ক্যারিং খরচ অনেক বেশি। খ্যাতের থেকে লেবার। লেবার দিয়া পিআপ উঠাইতে হয় এর ঘাটে আইনা বোটে আনতে হয়। এর বোট থেকে আইনা এই বড় গাড়ি লোড করতে হয়। অনেক কেরিং খরচা বাড়ে যাইতেছে। আমরা এখন বর্তমানে খ্যাত কিনতাছি না।’
অভিযানে কিছুটা কমছে দাম
রোজার শুরুতে যে দাম ছিল তরমুজের তার থেকে এখন কিছুটা কমেছে। আগের চেয়ে কেজিতে অন্তত ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে পাচ্ছেন ক্রেতারা। খুচরা বাজারে যে তরমুজ গত সপ্তাহে ছিল ৬৫ টাকা কেজি। এখন তা ৫০ টাকায় নেমেছে।
আড়তদাররা জানান, আগের চেয়ে আড়তেই শতে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দাম কমেছে। এক সপ্তাহ আগেও তরমুজের শ ছিল ৮ হাজার টাকার ওপরে। এখন তা সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজারেও নেমেছে।
মাদারীপুরের ব্যাপারি গিয়াস কাজি বলেন, ‘পেপার-পত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে। ম্যাজিস্ট্রেট জরিমানা করতাছে এই সমস্যার কারণে।’
তিনি বলেন, ‘বিঘাপ্রতি তরমুজ ব্যাপারিরা যে যা বায়না দিছে তা থুয়ে চলে যাচ্ছে, মাল নিচ্ছে না। দাম কম, মোকামে অর্ধেক দাম। যেটা ছিল তিন শ সেটা এখন দেড় শ। এতে কৃষক আর ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
উৎপাদন ব্যাপক
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ বছর দেশে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি গড়ে ৫০ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন হচ্ছে। যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় বেশি।
গত কয়েক বছরে গড় বার্ষিক উৎপাদন ২১ থেকে ২২ লাখ টন।
মোট আবাদের প্রায় ৬২ শতাংশ হয়েছে বরিশাল বিভাগে। এরপরই খুলনা। এ ছাড়া পার্বত্য এলাকাসহ অন্যান্য এলকায়ও কিছু আবাদ হয়।
চলতি মৌসুমে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ২৪ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। আর খুলনায় প্রায় ৭ হাজার ৫১২ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের তরমুজের আবাদ হয়েছে।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘গত বছর তরমুজ চাষ করে লাভবান হয়েছিলেন চাষিরা। এবার তাই আবাদও বেশি করেছেন। প্রচণ্ড পরিশ্রম করে এই তরমুজ তৈরি করেন কৃষকরা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিএডিসিও ৩০ কিলোমিটার খাল খননের প্রকল্প নিয়েছে। পানি থাকলে তরমুজের ফলন বেশি হয়।’
আরও পড়ুন:আঠারো ও উনিশ শতকের ক্রান্তিকালে বাংলার সমাজে চলছিল গভীর টানাপড়েন- বহিরাগত শাসনের নিপীড়ন, অভ্যন্তরীণ শোষণের বেদনা আর নিজস্ব পরিচয় নিয়ে এক অন্তর্গত সংগ্রাম। এই সময়েই আত্মপরিচয়, সংস্কৃতি ও অধিকারবোধ নিয়ে ভাবতে শুরু করেন বিদগ্ধ সমাজচিন্তক ও রাজনৈতিক নেতারা। জাতীয় রাজনীতির কোলাহলে যখন অধিকাংশ নেতা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও সাংবিধানিক প্রশ্নে ব্যস্ত, তখন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক স্বীয় রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে একেবারে শিকড় থেকে বদল আনার কথা চিন্তা করেছেন। তিনি বাঙালি সংস্কৃতির বহুমাত্রিক ঐতিহ্যে- ভাষা, সাহিত্য, ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কৃষিনির্ভর জীবনের সংমিশ্রণে খুঁজতে চেয়েছেন এক পরিপূর্ণ জাতিসত্তা। ফলে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জাতীয় রাজনীতিতে তিনি ছিলেন জমিদারি শোষণ ও নিপীড়নের শিকার, ঋণের জালে বন্দি নিঃস্ব ও নিরন্ন, অধিকারবঞ্চিত প্রান্তিক কৃষকের কণ্ঠস্বর।
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর তৎকালীন বরিশাল জেলার রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মসূত্রে এক মধ্যম জমিদার পরিবারে বেড়ে ওঠায় ফজলুল হক শৈশব থেকেই প্রান্তিক মানুষের জীবনের কষ্ট, অবহেলা ও বঞ্চনাকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। আর এ কারণেই পরবর্তীতে কৃষক-শ্রমিকের পক্ষে দাঁড়ানো তার রাজনীতির মৌলিক ভিত্তি হয়ে ওঠে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতো অমানবিক জমি ব্যবস্থার নির্মমতা তাকে আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে। কেননা হাল টেনে, ঘাম ঝরিয়ে ফসল ফলানো কৃষকশ্রেণিই ছিল অত্যাচারের মূল শিকার। তাদেরই ওপর চাপানো হতো অযৌক্তিক হারে খাজনা। সেই খাজনা দিতে না পারলে ছিল জমি হারানোর ভয়। অন্যদিকে জমিদাররা নিজেদের আরাম-আয়েশের খরচ জোগাতে কৃষকদের রক্ত-ঘামে অর্জিত ফসলে ভাগ বসাতো। আর কৃষকদের ভাগ্যে জুটতো অনিশ্চয়তা, অনাহার আর ঋণের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে বেঁচে থাকা। ফলে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ ও মহাজনি শোষণ বন্ধ করার লক্ষ্যে শেরে বাংলার নেতৃত্বে বাংলায় শক্তিশালী প্রজা আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই প্রেক্ষাপটে ১৯২৯ সালে তিনি গড়ে তোলেন ‘নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতি’ যা পরবর্তীতে ১৯৩৬ সালে ‘কৃষক প্রজা পার্টি’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। যা ছিল কৃষকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রথম বাস্তব পদক্ষেপ। তার নেতৃত্বে দলটি কৃষকদের সমস্যাগুলো সামনে এনে শুরু করে বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ।
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের ফলে ১৯৩৭ সালে ব্রিটিশ শাসিত প্রদেশগুলোতে প্রথমবারের মতো নির্বাচনের আয়োজন হয়। বিপুল জনসমর্থনে অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন এ কে ফজলুল হক। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি একের পর এক সংস্কার শুরু করেন। বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য ১৯৩৮ সালে তিনি ‘ফ্লাউট কমিশন’ গঠন করেন। জমিদাররা যাতে বিনা কারণে ইচ্ছেমতো জমির প্রকৃত চাষি অর্থাৎ প্রজাকে উচ্ছেদ করতে না পারে, সেই জন্য তিনি ওই বছরই বঙ্গীয় প্রজাসত্ত আইন সংশোধন করে জমিদারের অধিকার হ্রাস এবং কৃষকদের অধিকার বৃদ্ধি করেন। এটি ছিল জমিদার শাসনের বিরুদ্ধে এক সাহসী পদক্ষেপ।
এরপর ১৯৩৫ সালের Bengal Agricultural Debtors Act অনুসারে ১৯৩৮ সালে তিনি গঠন করেন ঋণ-সালিশি বোর্ড, যা ছিল কৃষকের ঋণ সমস্যা সমাধানে আদালতের বিকল্প একটি মানবিক পথ। Bengal Agricultural Debtors Act অনুসারে গঠিত এই বোর্ডে স্থানীয় প্রতিনিধিরা সিদ্ধান্ত নিতেন কৃষকের ঋণের ন্যায্য পরিমাণ, অতিরিক্ত সুদ মাফ করে দিতেন, আর সহজ কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের সুযোগ তৈরি করতেন। এর ফলে বহু কৃষক ঋণের জাল থেকে মুক্ত হয়ে আবার চাষাবাদ শুরু করতে সক্ষম হন; কিন্তু সবকিছু সহজ ছিল না। জমিদার-মহাজনরা বোর্ডে যেতে কৃষকদের ভয় দেখাত, বাধা দিত। এমনকি ঊর্ধ্বতন ব্রিটিশ প্রশাসনও এই মানবিক প্রচেষ্টাকে সন্দেহের চোখে দেখত। কিন্তু শেরে বাংলার অদম্য নেতৃত্বে এই বোর্ড অনেক কৃষকের জীবনে আশার আলো জ্বালাতে সক্ষম হয়।
ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলার কৃষিতে চরম পশ্চাৎপদতা লক্ষণীয় ছিল। আধুনিক কৃষি শিক্ষা, গবেষণা বা প্রযুক্তির কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। ফলে ফসলের উৎপাদনশীলতা ছিল কম এবং কৃষকের জীবন ছিল দুর্বিষহ। তাই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় এসে শেরে বাংলা কৃষকের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেন। তার প্রত্যক্ষ উদ্যোগে ১৯৩৮ সালে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে প্রতিষ্ঠিত হয় বেঙ্গল এগ্রিকালচার ইনস্টিটিউট, যা ছিল পূর্ব বাংলার প্রথম কৃষি শিক্ষার উচ্চতর প্রতিষ্ঠান। এর মূল লক্ষ্য ছিল আধুনিক কৃষি শিক্ষা প্রদান, গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি এবং কৃষককে আধুনিক প্রযুক্তি ও জ্ঞানে সমৃদ্ধ করা। যা ছিল বাংলার কৃষকের প্রতি একটি কার্যকর দায়বদ্ধতার প্রকাশ। এই ইনস্টিটিউটই পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করে, যা আজও বাংলাদেশের কৃষি শিক্ষার অন্যতম মূল স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
১৯৪০ সালে তিনি প্রণয়ন করেন আরেকটি যুগান্তকারী আইন- Bengal Moneylenders Act। এই আইন মহাজনদের লাগাম টানার প্রথম বড় পদক্ষেপ। এতে ঋণের সর্বোচ্চ সুদের হার ৬-৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়, মৌখিক ঋণের বদলে লিখিত হিসাব বাধ্যতামূলক করা হয়, এবং অতিরিক্ত সুদের ভিত্তিতে মামলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। মহাজনদের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে তাদের শোষণক্ষমতা সীমিত করা হয়। যদিও অনেক মহাজন পরে ভুয়া হিসাব বা ‘কাঁচা খাতা’ দেখিয়ে আইনকে পাস কাটানোর চেষ্টা করে, তবুও এই আইন স্পষ্ট বার্তা দেয়- রাষ্ট্র এবার কৃষকের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর পূর্ববাংলা একটি নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। এ সময় শেরে বাংলা কৃষিনীতি এবং কৃষকের উন্নয়নকে সর্বাগ্রে বিবেচনায় নেন। তিনি পূর্ববাংলার কৃষিনির্ভর সমাজের স্বার্থরক্ষায় নতুন প্রশাসনিক কাঠামোর প্রস্তাব দেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে কৃষিকে বের করে এনে স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে নীতিনির্ধারণ করা। এই কাঠামোতে গ্রামাঞ্চলে কৃষি সম্প্রসারণ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, কৃষকদের সরাসরি অংশগ্রহণ এবং স্থানীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তার এই পদক্ষেপ পূর্ববাংলার কৃষিনীতিকে একটি স্বাধীন ও কার্যকর ভিত্তি দেয়, যা পরবর্তীতে কৃষি গবেষণা, সেচব্যবস্থা এবং খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পথে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
অন্যদিকে, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের অধীনে ভূমি সংস্কার ও কৃষি উন্নয়নকে শেরে বাংলা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেন। সেই কারণে তিনি জমির সর্বোচ্চ মালিকানা সীমা নির্ধারণ, খাজনা হ্রাস, বর্গাদারদের সুরক্ষা এবং কৃষকদের জন্য ঋণসুবিধা নিশ্চিতকরণের মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এই সংস্কার কর্মসূচি সামন্ততান্ত্রিক জমিদার প্রথাকে দুর্বল করে কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের কৃষি ও কৃষক-কেন্দ্রিক রাজনীতি ও মানবিক রাষ্ট্রচিন্তা ছিল এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত, যা আজও আমাদের জন্য দিকনির্দেশনা হয়ে ওঠে। তিনি বিশ্বাস করতেন, রাষ্ট্র তখনই শক্তিশালী হয়, যখন তার সবচেয়ে প্রান্তিক নাগরিকও ন্যায় ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারে। কৃষকদের শুধু উৎপাদক নয়, রাষ্ট্রের দায়িত্ববান ও অধিকারপ্রাপ্ত নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্য তার যে অগ্রণী ভূমিকা, তা বাংলার ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল ৮৮ বছর বয়সে এই কিংবদন্তি নেতার জীবনাবসান ঘটে; কিন্তু কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার ত্যাগ, সাহস ও দূরদর্শিতা আজও আমাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে যায়।
শেরে বাংলার যুগান্তকারী পদক্ষেপগুলোর সবই ছিল এক অর্থবহ সামাজিক চুক্তির অংশ, যেখানে কৃষকের কষ্টকে রাষ্ট্রীয় নীতিতে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। জমিদার-মহাজন ও ঔপনিবেশিক শোষণের চক্রে পিষ্ট কৃষকের পক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি যেভাবে কৃষিবান্ধব প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন, তা আজও আমাদের সামনে এক অনুকরণীয় পথ।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকের বাংলাদেশেও শেরে বাংলার স্বপ্নের সেই কৃষকবান্ধব রাষ্ট্র বাস্তবায়িত হয়নি। এখনো আমরা দেখি- কৃষক কখনো নিজের ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ক্ষোভে নিজ হাতে তা পুড়িয়ে দেন, ন্যায্যমূল্য না পেয়ে অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সর্বস্ব হারিয়ে বেছে নেন আত্মহননের পথ। ঋণের দুঃসহ ভারে ক্লিষ্ট হয়ে, সারা জীবন শ্রম দিয়ে উৎপাদন করেও তিনি পান না নিজের প্রাপ্য সম্মান বা সুরক্ষা।
তাই বর্তমান বাস্তবতাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করে আমাদের আবারও কৃষিকে জাতীয় উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে তুলে আনতে হবে। যেখানে কৃষক হবে সম্মানিত, স্বনির্ভর এবং ভবিষ্যৎ গঠনে সক্রিয় অংশীদার। এতে বাস্তবায়িত হবে একটি মানবিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কৃষকবান্ধব বাংলাদেশের স্বপ্ন।
অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ
উপাচার্য, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
দেশের অন্যতম আম উৎপাদকারী জেলা নওগাঁ। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার আমের মুকুল সবচেয়ে বেশি এসেছে জেলার আমের বাগানগুলোতে।
নওগাঁর বাতাসে এখন মুকুলের মো মো ঘ্রাণ ভেসে বেড়াচ্ছে। কয়েক দিনের বেশির ভাগ সময় আবহাওয়া আম উৎপাদনের জন্য অনুকূল রয়েছে।
এবার গাছে গাছে মুকুলের আধিক্য দেখে ব্যাপক ফলনের আশা করছেন আমচাষিরা।
কৃষিবিদরা বলছেন, এখন পর্যন্ত আবহাওয়া আম চাষের অনুকূলে রয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে। এবার গত বছরের চেয়ে ২০০ হেক্টর জমিতে বেড়েছে আমের বাগান। আশা করা হচ্ছে, গত বছরের চেয়ে এবার ২৫ হাজার টন ফলন বাড়তে পারে।
একজন কৃষিবিদের আশা, এবার জেলায় আমের বাণিজ্য হবে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার।
আমচাষিরা বলছেন, প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী এক মৌসুমে ভালো ফলন হলে পরেরবার আমের ফলন কম হয়। সে হিসেবে গত বছর নওগাঁয় আমের ফলন কম হওয়ায় এবার তারা আমের বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেঁধেছেন।
বাগানে প্রায় সব গাছেই মুকুল এসেছে। মুকুলকে ছত্রাকের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে কীটনাশক স্প্রে করছেন তারা। ক্ষেত্রবিশেষে ছিটানো হচ্ছে পানি। আমগাছের গোড়াতেও পানি দিচ্ছেন চাষিরা।
এদিকে বাগানে মুকুল আসা শুরু করতেই মৌসুমি বাগান ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা মাঠে নেমে পড়েছেন। তারা মুকুল দেখে বাগান কেনার জন্য মালিকদের কাছে যাচ্ছেন।
কয়েক দিন ধরে মুকুলে গুটি হওয়ার পর বাগান কেনাবেচার জন্য আমবাগানিদের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা বাগান কেনাবেচা নিয়ে কথা শুরু করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বাগানে আম চাষ করা হয়েছে। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর। গত বছর আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩১ হাজার টন। উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ২৫ হাজার টন। এবার ৪ লাখ ৫০ হাজার টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
নওগাঁর সাপাহার ও পোরশা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়। এ ছাড়াও নিয়ামতপুর, পত্নীতলা, ধামইরহাট, বদলগাছী উপজেলা আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নওগাঁ জেলায় নাগফজলি, ল্যাংড়া, আম্রপালি, গোপালভোগ, আশ্বিনা, কাটিমন, বারি আম-৪, বারি আম-১১, গুটি আম ও ফজলি জাতের সুস্বাদু আমের উৎপাদন বেশি।
সাপাহার উপজেলার গোডাউনপাড়া এলাকাসহ ২০০ বিঘা জমির ওপর তিনটি আম বাগান রয়েছে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার। তিনি স্থানীয় বাজারে আম বিক্রি ছাড়াও বিদেশে আম রপ্তানি করে থাকেন।
সোহেল রানা জানান, গত বছর তার বাগানে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল। এবার এখন পর্যন্ত তার বাগানে ৮০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। ফাল্গুন মাস আমের মুকুল আসার উপযুক্ত সময়।
তার ভাষ্য, আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে বাকি গাছগুলোতেও মুকুল আসবে। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত আমের জন্য অনুকূলে আছে। রোদের তাপ কম পেলে ও প্রকৃতি কুয়াশায় ঢেকে থাকলে মুকুলে ছত্রাকের আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে জন্য গাছে ছত্রাকনাশক কীটনাশক স্প্রে করছেন তিনি।
পোরশা উপজেলার বড়গ্রাম এলাকার আমাচাষি রায়হান আলম বলেন, ‘গত বছর শীতের কারণে অনেক দেরিতে মুকুল এসেছিল। গাছে মুকুল আসতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ দিন দেরি হয়েছিল। মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়েও অনেক গাছে মুকুল ধরেছিল।
‘সে তুলনায় এবার অনেক আগেই মুকুল এসেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সাধারণত ধরা হয় দীর্ঘস্থায়ীভাবে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে আমের মুকুল ধরতে চায় না। তবে এবার জানুয়ারি মাসে দুই-এক দিন করে শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও দীর্ঘস্থায়ী শৈত্যপ্রবাহ ছিল না। গড় তাপমাত্রা প্রায় ২০ ডিগ্রির কাছাকাছি ছিল। এই তাপমাত্রা আমের জন্য অনুকূল।
‘কয়েক দিন ধরে দেখা যাচ্ছে কুয়াশা থাকছে। তবে তাপমাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। কুয়াশার কারণে মুকুলে ছত্রাকের আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য আমরা আমচাষিদের ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরে কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে নওগাঁর আমের বাগান থেকে সাড়ে চার লাখ টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
‘আমের বাজার ভালো থাকলে এ বছর নওগাঁ জেলায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।’
আরও পড়ুন:বাগেরহাটে উঠতে শুরু করেছে তরমুজ। ফলের দোকানে পসরা সাজিয়ে কিংবা ভ্যানে করে বিক্রি হচ্ছে রসালো এ ফল। প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
বিভিন্ন জাত ও নানা আকারের তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে বাগেরহাটের বাজারে। ক্রেতাদের কাছে অন্যান্য ফলের চেয়ে তরমুজের চাহিদা বেশি। ইফতারে তরমুজের প্রাধান্য বেশি।
এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে আলদাভাবে তরমুজ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সাইজের তরমুজ পথচারীদের নজর কাড়ে। পথচারী থেকে শুরু করে করে অনেকে যানবাহন থামিয়ে তরমুজ কিনেছেন। তিন কেজি থেকে শুরু করে আট কেজি ওজনের তরমুজ দেখা গেছে সেখানে।
পথচারী হালিম শেখ জানান, রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা এত তরমুজ এই মৌসুমে প্রথম দেখা গেল। ৫০ টাকা কেজি দরে ৬ কেজি ওজনের একটি কেনেন তিনি।
মিল্টন, আলম, তৌহিদ, অমলসহ বেশ কয়েকজন ক্রেতা জানান, তরমুজ তাদের অনেক পছন্দ। এ কারণে দাম যাই হোক, তারা তরমুজ কিনে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন।
তবে কয়েকজন সাধারণ ক্রেতা জানান, ৫০ টাকা তরমুজের কেজি তাদের কাছে বেশি হয়ে গেছে। মৌসুমের প্রথম ফল ও তরমুজ তাদের সবার পছন্দ থাকায় প্রয়োজনের তুলনায় ছোট সাইজের তরমুজ কিনেছেন।
হাবিব হোসেন পটুয়াখালীর চাষিদের জমি থেকে প্রায় দেড় হাজার তরমুজ কিনে ট্রাকবোঝাই করে বাগেরহাট মিঠাপুকুর পাড়ে নিয়ে আসেন।
তিনি বলেন, ‘তরমুজের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যবসা করছি। মিঠাপুকুর পাড়ে বিক্রির জন্য স্তূপ করে তরমুজ রাখা হয়েছে। ট্রাক থেকে তরমুজ নামানোর পর থেকে ক্রেতারা আসছেন তরমুজ কিনতে।
‘খুচরা প্রতি কেজি তরমুজ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছে। এভাবে তরমুজ বিক্রি করতে পারলে বেশ টাকা লাভ হবে।’
এ মৌসুমে তরমুজ বাজারে প্রথম উঠছে। এ কারণে দাম একটু বেশি বলেও জানান তিনি।
কয়েক দিন পর তরমুজের দাম কমে আসবে বলেও জানান হাবিব হোসেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাগেরহাটের উপপরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, ‘সারা বছর কম-বেশি তরমুজ পাওয়া যায়। তরমুজের প্রধান মৌসুম মার্চ মাস।’
তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন এলাকায় নানা জাতের হাইব্রিড তরমুজ চাষ হচ্ছে। এ বছর তরমুজের ফলনও ভালো। তরমুজ হাট-বাজারে নতুন আসায় এর দামও বেশি।’
শঙ্কর কুমার মজুমদার আরও বলেন, ‘গ্রীষ্ম ও শীতকালে বেশি তরমুজ চাষ হয়। গ্রীষ্মকালের তরমুজের চারা নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে রোপণ করা হয়।’
ড্রাগন কিং, পাকিজা, বিগফ্যামিলি, এশিয়ান ও বাংলালিংকসহ বিভিন্ন নামে হাইব্রিড তরমুজ চাষ করা হয়েছে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:শেরপুরের সমতল অঞ্চলে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে কফির চাষ। এতে মিলছে ভালো ফল।
কৃষি বিভাগ জানায়, চাষের পরিধি বাড়লে আগ্রহী কৃষকদের বিপণনসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।
প্রথমবারের মতো কফি চাষ করা কৃষি উদ্যোক্তা কৃষিবিদ সাজ্জাদ হোসাইন তুলিপ জানান, ২০২১ সালে বান্দরবানে চাকরির সুবাদে কফি চাষের অভিজ্ঞতা নেন তিনি। এরপর শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় ২৫০টি কফির চারা নিয়ে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেন। সফলতা দেখে ২০২২ সালে রোপণ করেন ১ হাজার কফি চারা। এখন তার তিন বিঘা জমিতে রয়েছে ৮০০টি কফি গাছ।
কৃষিবিদ সাজ্জাদ হোসাইন তুলিপ আরও বলেন, ‘আমার খামারে ৬০০থেকে ৭০০ গাছ রয়েছে, যেগুলো থেকে ফল সংগ্রহ করে আমি বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করছি। পাশাপাশি আমার এ খামারে এখনও ২০ হাজারের মতো চারা আছে।
‘এ ছাড়া শেরপুরের পাঁচ উপজেলা ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি জেলার কৃষকদের মাঝে ৫০ হাজার কফি চারা বিনা মূল্যে বিতরণ করেছি।’
কফি চারা রোপণের ২ বছর পর ফল দিতে শুরু করে এবং এটি টিকে থাকে ৩০ বছর পর্যন্ত।
ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারিতে ফল সংগ্রহের পর পালপিং, রোদে শুকিয়ে পার্চমেন্ট করে বাদামের মতো অংশ বের করে এবং রোস্টিংয়ের মাধ্যমে তৈরি হয় রোস্টেড কফি বিন।
একটি পরিপক্ব গাছ থেকে বছরে পাঁচ থেকে ছয় কেজি ফল পাওয়া যায়, যা থেকে ১ কেজি রোস্টেড বিন তৈরি হয়। এর বাজার মূল্য প্রায় দুই হাজার টাকা।
বাড়ির পতিত জমি বা ছায়াযুক্ত স্থানে কফি গাছ রোপণ করা যায়। বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার কফি আমদানি করা হয়।
দেশে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ সফল হলে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে এ ফসল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শেরপুরের উপপরিচালক সাখাওয়াত হোসাইন বাসসকে বলেন, কফি চাষের উপযোগী মাটি ও আবহাওয়া এখানে রয়েছে। সে অনুযায়ী কৃষকদের কফি চাষের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি এলাকার সমতল ভূমিতেও কফি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
কফি চাষে আগ্রহী কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন জেলা কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:নড়াইল সদর উপজেলায় প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন।
উপজেলার গোপালপুর গ্রামের দীপক বিশ্বাস এ সার উৎপাদন করে এখন স্বাবলম্বী।
যেভাবে তৈরি
প্রথমে সংরক্ষণের জন্য টিনের চালায় রাখা হয় গোবর। তারপর সেই গোবর হালকা শুকিয়ে রিং বা হাউসে কয়েক দিন রাখার পরই তাতে কেঁচো দিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ দিন রাখার পর উৎপাদিত হয় ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার।
দীপক বিশ্বাস ব্যক্তিগত চাষাবাদের প্রয়োজনে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে শুরু করেন ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন। বাড়ির আঙিনায় পরিত্যক্ত জায়গায় ছোট পরিসরে শুরু করলেও বর্তমানে চাহিদা থাকায় উৎপাদন করছেন বাণিজ্যিকভাবে।
বাড়িতে প্যাকেটজাত করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন তিনি। রাসায়নিক সার বর্জন করে তার উৎপাদিত এ জৈব সার শীতকালীন সবজি চাষে ব্যবহার করছেন চাষিরা। ফলে বিষমুক্ত হচ্ছে সবজি।
দীপক বিশ্বাস বলেন, ‘কৃষি অফিসের পরামর্শে আমি কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করি। প্রথম পর্যায়ে কৃষি অফিস আমাকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। গোবর দিয়ে এ সার উৎপাদনে আমার তেমন কোনো খরচ নেই।
‘এ সার দিয়ে আমি আমার নিজের বাগানের চাহিদা পূরণ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছি। গ্রামের অধিকাংশ লোক এখান থেকে সার নিয়ে শীতকালীন সবজি উৎপাদন করছেন।’
কৃষক পলাশ শেখ বলেন, ‘আমি ২৬ শতক জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করেছি। এখানে কোনো রাসায়নিক সার দেয়া হয়নি।
‘অল্প টাকায় দীপকের বাড়ি থেকে জৈব সার কিনে এনে ব্যবহার করছি। সবজির ফলনও ভালো হয়েছে।’
সিংগিয়া গ্রামের হাসিবুর ইসলাম বলেন, ‘ফুলকপি, বাঁধাকপি ও বস্তা পদ্ধতিতে আমি শিম চাষ করেছি। সব ধরনের ফসলে আমি এ কেঁচো সার দিয়েছি। আশা করছি ভালো ফলন হবে।’
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, ‘সবজি চাষে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সারের প্রাধান্য দিলে উৎপাদিত সবজি হবে বিষমুক্ত। অপরদিকে মাটির গুণাবলী বাড়বে।
‘তার এই সার উৎপাদন দেখে স্থানীয় অনেকেই এগিয়ে আসবে এবং তার মতো স্বাবলম্বী হবে।’
আরও পড়ুন:বন্য খেজুর থেকে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ভিনেগার উৎপাদনের দাবি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফুড টেকনোলজি ও গ্রামীণ শিল্প বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনিছুর রহমান মজুমদার ও তার গবেষক দল।
বন্য খেজুর থেকে ভিনেগার তৈরি বাংলাদেশের খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের জন্য একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে বলেও মন্তব্য করেন এ অধ্যাপক।
গবেষক আনিছুর রহমান বলেন, ‘বন্য খেজুর থেকে ভিনেগার উৎপাদনে প্রক্রিয়াকরণের জন্য গাজন প্রক্রিয়াটি পরিবেশবান্ধব। স্থানীয় কৃষিসম্পদ কাজে লাগিয়ে এবং অপচয় কমিয়ে এ পদ্ধতি খাদ্য উৎপাদনের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতেও সহায়ক হতে পারে। গবেষণাটি বাংলাদেশের বৃহত্তর টেকসই উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।’
উৎপাদিত ভিনেগারটির দেশের বাজারে প্রভাব সম্পর্কে অধ্যাপক আনিছুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে এই গবেষণার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ভিনেগার উৎপাদন কেবল খাদ্য ও পানীয় হিসেবে ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি প্যাকেজিং, কসমেটিক ও ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পেও ব্যবহৃত হতে পারে।
‘বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের কাছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পুষ্টিকর ভিনেগারের চাহিদা বাড়ছে, যা বাজারে এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে।’
বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছরে খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য স্থানীয় কৃষি সম্পদের টেকসই ব্যবহারের ওপর বাড়তি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক আনিছুর বলেন, ‘বাংলাদেশে বন্য খেজুর ইদানীং ব্যাপকভাবে পাওয়া যাচ্ছে। এটি বেশ সস্তা ও স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য।
‘এই খেজুর গাছ সাধারণত গ্রামীণ এলাকায় এবং রাস্তার পাশের জমিতে পাওয়া যায়, তবে নানা পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ হওয়ার পরও এই বন্য খেজুর দেশের প্রেক্ষাপটে অনেকটাই অব্যবহৃত একটি সম্পদ।’
গবেষণা পদ্ধতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আনিছুর বলেন, ‘বন্য খেজুরের রস ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়া মাধ্যমে ভিনেগারে পরিণত করা হয়েছে। এ গবেষণায় এক ধরনের ইস্ট ব্যবহার করে ওই রসে অ্যালকোহল তৈরি করা হয় এবং পরে অ্যাসিটোব্যাক্টর প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া দিয়ে অ্যালকোহলকে অ্যাসিটিক অ্যাসিডে রূপান্তর করা হয়।’
গবেষক আরও বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে যে, রসের ঘনত্ব যত বেশি হয়, তত বেশি অ্যালকোহল ও অ্যাসিডিটি বৃদ্ধি পায়। বেশি ঘনত্বের রসটি সবচেয়ে ভালো পুষ্টিগুণ, অ্যাসিডিটি ও ম্যাক্রো মিনারেলস (পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম) সমৃদ্ধ হয়। তাই এটি স্বাস্থ্য সচেতন ভোক্তাদের জন্য একটি আকর্ষণীয় পণ্যও বটে।’
গবেষণাটি বিশ্ববিখ্যাত প্রকাশনা এলসভিয়ারের নামী সাময়িকী অ্যাপ্লায়েড ফুড রিসার্চে সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে।
ভিনেগার তৈরির এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও মাঠ পর্যায়ে সফলতা সম্পর্কে এ অধ্যাপক বলেন, ‘এই গবেষণা স্থানীয় কৃষকদের জন্য একটি নতুন আয় সৃষ্টির পথ খুলতে পারে। একদিকে খেজুর থেকে তৈরি ভিনেগারের উচ্চমান এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের স্থানীয় কৃষিপণ্যের চাহিদা বাড়াতে সাহায্য করবে।’
অধ্যাপক আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে বাকৃবি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) ও ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) আরও ছয় জন গবেষক এই প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন। বাকৃবি থেকে গবেষক দলে রয়েছেন ফুড টেকনোলজি ও গ্রামীণ শিল্প বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলিম, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. পলি কর্মকার এবং ওই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা ও আ ন ম ইফতেখার আলম।
এ ছাড়া সিকৃবির খাদ্য প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ফাহাদ জুবায়ের এবং ডুয়েটের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক লোপা আনসারী গবেষক দলে যুক্ত ছিলেন।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নিজেদের মধ্যে পলিটিকাল ইস্যু থাকতে পারে, কিন্তু নদীর পানির হিস্যা নীতি ছিল। ভারতের কোনো যুক্তিই নেই আমাদের পানি না দেয়ার। এটা নিয়ে ভারতকে চাপ দিতে হবে।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘উজানে যৌথ নদীর পানি প্রত্যাহার: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি, বাংলাদেশ।
ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভারতে যখন পানির চাপ থাকে তখন আমাদের এদিকে স্লুইস গেটগুলো খুলে দেয়। আবার ওখানে যখন পানির স্বল্পতা থাকে তখন গেটগুলো বন্ধ করে দেয়।
‘তারা ইচ্ছেমতো এটা করছে। আর সেজন্য আমরা পানি পাচ্ছি না। এতে করে আমাদের চাষাবাদে সমস্যা হচ্ছে। দিন দিন মরুভূমির মতো হয়ে হচ্ছে। গ্রাউন্ড ওয়াটার লেভেল নেমে যাচ্ছে। আমরা আর কত সহ্য করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে কাজগুলো করছি সেগুলো অনেক চ্যালেঞ্জিং। এগুলোতে জনগণের সাপোর্ট প্রয়োজন। শুধু ফারাক্কা নয়; অভিন্ন আরও যে ৫৪টি নদী আছে, সেগুলো থেকে যাতে ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পায় সেজন্য আমরা কাজ করব।’
আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির সমন্বয়ক মোস্তফা কামাল মজুমদারের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন নিউ ইয়র্কের আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ টিপু সুলতান, আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমাদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য