মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেই পাট রপ্তানিতে নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে বাংলাদেশ।
চলতি অর্থবছরের ১০ মাসেই (জুলাই-এপ্রিল) পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ১০৩ কোটি ৫৭ লাখ (১.০৩ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই পুরো অর্থবছরেও এই খাত থেকে এতো বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসেনি।
এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি করে ১০২ কোটি ৫৫ লাখ (১.০২ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। ওই একবারই এ খাতের রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রোববার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিভিন্ন দেশে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে ১০৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩১ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি এসেছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে সংকটে পড়া চামড়া খাতকে (৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার) পেছনে ফেলে তৈরি পোশাকের পরের স্থান দখল করে নিয়েছে পাট খাত।
মহামারির পর থেকে পাটপণ্য রপ্তানি বেড়ে যাওয়ার মধ্যে গত বছরের জুলাই মাসে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকলে উৎপাদন বন্ধ করে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী শ্রমিককে অবসরে পাঠায়।
বিজেএমসির আওতাধীন এই পাটকলগুলোতে উৎপাদিত চট, বস্তা, থলে বিদেশে রপ্তানি হতো। এরপরও এ খাতের রপ্তানি কমেনি; উল্টো বেড়েই চলেছে।
রপ্তানিকারকরা আশা করছেন, অর্থবছর শেষে এবার পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে বিদেশি মুদ্রা আয় ১৩০ কোটি (১.৩ বিলিয়ন) ডলারের মাইলফলকে পৌঁছাবে।
এই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর অভাব অনুভব করছেন এই খাত সংশ্লিষ্টরা।
ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ পাটপণ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিজেজিইএ) চেয়ারম্যান এম সাজ্জাদ হোসাইন সোহেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিজেএমসি পাটের তৈরি বস্তা, চট ও থলে রপ্তানি করত। আমরাও তাদের কাছ থেকে নিয়ে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতাম। সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ না হলে হয়তো রপ্তানি আরও বাড়ত।’
তবে বেসরকারি পাটকলগুলো ভালোভাবে চালু থাকায় এ খাতের রপ্তানির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখা গেছে বলে জানান সোহেল।
‘এখন আবার সরকার বলছে, বন্ধ মিলগুলো পিপিপির মাধ্যমে দ্রুত চালু করা হবে। সেটা যদি হয়, ভালো হবে। রপ্তানি আরও বাড়বে।’
সোহেল বলেন, ‘সার্বিকভাবে পাট খাতের জন্য ভালো সময়ই যাচ্ছে এখন। বিশ্ব বাজারে দামও বাড়ছে। সব মিলিয়ে পাট নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখছি আমরা।’
তিনি মনে করেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অন্যান্য পণ্যের চাহিদা কমলেও পাটপণ্যের চাহিদা কমবে না। খাদ্যের জন্য ফসল ফলাতেই হবে, আর সেই ফসল মোড়কজাত বা বস্তাবন্দি করতে পাটের থলে লাগবে।
‘অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বেশ ভালো অর্ডার পাচ্ছি আমরা। আমার বিশ্বাস, পরিবেশের বিষয়টি সামনে আরও জোরালোভাবে আসবে। আর তাতে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়বে।’
কৃষি অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক এম আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, এই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়া ঠিক হয়নি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পাটের রপ্তানি বাজার বরাবরই ভালো ছিল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাটকল আদমজী বন্ধসহ একটার পর একটা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আমরা সেই বাজার ধরতে পারিনি।’
‘এখন মহামারির কারণে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানির যে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, সেটা আমরা কতটা কাজে লাগাতে পারব সেটাই এখন বড় বিষয়’ বলেন আসাদুজ্জামান।
মহামারির ধাক্কা লেগেছে রপ্তানি খাতের প্রায় সব সেক্টরে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তৈরি পোশাক, চামড়া, হিমায়িত মাছসহ সব খাতেই রপ্তানি আয় যখন কমছিল, সেখানে একমাত্র ব্যতিক্রম পাট।
চলতি অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ১১৬ কোটি ৭০ লাখ আয় করার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। ১০ মাসে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ৯৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার। সেই লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।
গত অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে চামড়াকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করে নিয়েছে পাট খাত।
সামগ্রিকভাবে এই অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ মোট ৩ হাজার ২০৭ কোটি ডলার আয় করেছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।
খাতভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, এই ১০ মাসে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে পাট রপ্তানিতে।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে পাট সুতা (জুট ইয়ার্ন) রপ্তানি হয়েছে ৭১ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার ডলারের; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। কাঁচা পাট রপ্তানি হয়েছে ১২ কোটি ১০ লাখ ডলারের।
পাটের তৈরি বস্তা, চট ও থলে রপ্তানি হয়েছে ১২ কোটি ৫১ লাখ ২০ হাজার ডলারের, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩১ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। পাট ও পাট সুতা দিয়ে হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৯ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
এ ছাড়া এই ১০ মাসে পাটের তৈরি অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৭ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার ডলারের।
বস্তা বা ব্যাগের পাশাপাশি কার্পেটের জন্যও বাংলাদেশের পাটের চাহিদা বেড়েছে জানিয়ে বিজেজিইএ চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসাইন সোহেল বলেন, ‘কার্পেট তৈরিতে আমাদের জুট ইয়ার্ন ব্যবহৃত হয়। কোভিড-১৯ আতঙ্কে অনেকেই বাসা বা অফিসের কার্পেট পরিবর্তন করছেন। তাই আমাদের পাটের কদর বাড়ছে।’
বিশ্বব্যাপী পলিথিনের ব্যবহার কমায় পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বেড়েছে বলে জানান সাজ্জাদ হোসাইন।
‘ভবিষ্যতে চাহিদা আরও বাড়বে। আমরা আমাদের ‘‘সোনালি আঁশ” পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারি, যদি এ খাতের দিকে একটু নজর দিই। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ছাড়া আর মাত্র একটি-দুটি দেশে পাট উৎপন্ন হয়। বিশ্ব যত বদলাবে পাটপণ্যের চাহিদা ততই বাড়বে। পরিবেশের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশগুলো এ পথে অগ্রসর হবে।'
এ বিষয়ে বেসরকারি পাটকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান জাহিদ মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন শুধু বস্তা, চট ও থলে নয়, পাটসুতাসহ পাটের তৈরি নানা ধরনের পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মহামারির কারণে পরিবেশের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসায় বিশ্বে পাটপণ্যের চাহিদা নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে। এই সুযোগটি যদি আমরা নিতে পারি, তাহলে আমাদের এ খাতের রপ্তানি অনেক বাড়বে; এই মহামারির মধ্যেই আমরা আমাদের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হব।
‘তবে আমাদের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, কাঁচা পাটের দাম খুবই চড়া। এবার ভরা মৌসুমেও প্রতি মণ পাটের দাম আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা ছিল। এখন পাঁচ হাজার টাকার বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বেশি দামে কখনোই পাট বিক্রি হয়নি।
‘চড়া চামে পাট কিনে পাটপণ্য রপ্তানি করে বাজার ধরে রাখা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। সে কারণেই আমরা সরকারের কাছে কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু এখনও বন্ধ হয়নি।’
পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে কয়েক বছর ধরেই খারাপ সময় যাচ্ছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাত থেকে ৮১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ২০ শতাংশ কম।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি করে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বিদেশি মুদ্রা আয় করেছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে ওই একবারই এ খাতের রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৯৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। তার আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এসেছিল ৯২ কোটি ডলার।
আরও পড়ুন:শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
মন্তব্য