সারা বছরই চলছে রাস্তাঘাট, স্যুয়ারেজ ও ড্রেনেজ-ব্যবস্থার উন্নয়নকাজ। এসব কাজে ঠিকাদারের বিল বাবদ কোটি কোটি টাকা ছাড় করা হয়। কিন্তু দিনমজুর-শ্রমিকরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাঙাগড়ার এসব কাজে হাড়ভাঙা শ্রম দিলেও মেলে না ন্যায্য মজুরি।
শ্রম আইনের প্রয়োগ না থাকায় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে বৈষম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। মেধা বা দক্ষতা নয়, শ্রমিকের ভাগ্যের নাটাই ঘুরছে মালিকের ইচ্ছায়।
রাজধানীর নয়াটোলায় সম্প্রতি কয়েকজন শ্রমিককে অস্থায়ী এক কাজে ঘাম ঝরানো শ্রম দিতে দেখা গেছে। যেখানে পুরুষদের মজুরি ছিল ৪০০ টাকা; নারীদের ৩৫০ টাকা।
শ্রমিক আবুল হাসেম, আনোয়ারা, বিলকিস বানু ও লাভলী বেগম জানান, তারা যে শ্রম দেন, তাতে ন্যায্য মজুরি হওয়া উচিত ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। একই দশা সারা দেশের সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারকাজেও।
কাজ অনুযায়ী মজুরি কম পাওয়ার তথ্য দেন হাতিরঝিল এলাকার ঝিলপাড়ের একটি হোটেলের শ্রমিক কুমিল্লার কাইয়ুমও। পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও এক বেলা খাবারসহ তার মাসিক বেতন দেয়া হয় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। কাকডাকা ভোরে কাজ শুরু হয় তার, সারা দিনের শ্রম শেষ হয় মধ্যরাতে।
মজুরি বাড়ানোর দাবি জানালেও মালিক নানান অজুহাতে কার্যকর করছেন না। এ চিত্র সারা দেশের অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁয়।
ওয়ার্কশপ শ্রমিক মোহাম্মদ সুজন ও রবীন্দ্র মজুমদার জানান, এই প্রকৌশল কাজে তারা যে শ্রম দিচ্ছেন, সেখানে কায়িক শ্রমের পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয়ও রয়েছে। ঝুঁকি তো আছেই। কিন্তু সে অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন সামান্যই। থাকা-খাওয়ার খরচ মালিক বহন না করে মাসিক বেতন ধরা হয়েছে যথাক্রমে ৮ হাজার ও ১০ হাজার টাকা।
ছোট শিল্পকারখানা, টেইলার্স, ইটভাটা, তাঁত, প্রিন্টিংসহ বিভিন্ন খাতে একইভাবে কাজ করছেন শ্রমিক-কর্মচারাীরা।
এভাবে স্থায়ী-অস্থায়ী এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক নানা খাতে নানাজনের শ্রমের ওপর দাঁড়িয়ে আছে দেশের অর্থনীতি, যার মূল কারিগর হচ্ছেন এসব শ্রমিক।
প্রতিবছর মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যে প্রাণের সঞ্চার, তার সর্বত্রই রয়েছে শ্রমিকের অক্লান্ত শ্রম, ঘাম ও উৎপাদনের অদম্য নেশা।
মূলত এই কারিগরদের হাড়ভাঙা শ্রমের ওপর ভর করেই স্বাধীনতা-পরবর্তী ধ্বংসস্তূপের সেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। পেয়েছে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি; দেখছে মধ্য আয়ের স্বপ্ন।
অপেক্ষা উন্নত দেশে যাত্রার। দেশে এখন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও পায়রা বন্দরের মতো ব্যয়বহুল প্রকল্পের কাজ চলছে। সারা দেশে সড়ক-মহাসড়কের নিয়মিত উন্নয়ন ও সংস্কার তো চলছেই। শিল্পায়নেও পিছিয়ে নেই। সব মিলিয়ে দেশ এগিয়েছে অনেক দূর।
কিন্তু দেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি যাদের হাত ধরে এসেছে, সেই উন্নয়ন কারিগরদের ভাগ্যের খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। কারণ, এখনও তাদের ভাগ্যের নাটাই ঘুরছে কাজে দক্ষতায় নয়, মালিকের মর্জিতে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের কর্মসংস্থানের বড় অংশই হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। মোট শ্রমশক্তির ৮৫ দশমিক ১ শতাংশই এ খাতে নিয়োজিত। আর ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে।
অন্যদিকে কৃষি ক্ষেত্রে নিয়োজিত মোট শ্রমশক্তির ৯৫ দশমিক ৪ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। শিল্প খাতের ৮৯ দশমিক ৯ শতাংশ, সেবা খাতের ৭১ দশমিক ৮ শতাংশ শ্রমিক অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত।
গ্রাম ও শহরে কৃষি, চিংড়ি-মৎস্য চাষ ও প্রক্রিয়াকরণ, নির্মাণ ও সংশ্লিষ্ট কাজ, চাতাল, ওয়েল্ডিং, বিড়ি কারখানা, হোটেল ও রেস্তোরাঁ, শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য ও সামাজিক কর্ম, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান, গৃহস্থালি কর্ম, কুলি, দিনমজুর, ছোট ম্যানুফ্যাকচারিংসহ এমন বিভিন্ন খাত হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক। প্রাতিষ্ঠানিকের তুলনায় এসব খাতে মজুরিবৈষম্য প্রকট। আছে জেন্ডার-বৈষম্যও। একই কাজে সমমানের শ্রম দেয়া সত্ত্বেও নারী শ্রমিকরা সমান মজুরি পাচ্ছে না।
সেই শ্রমিক, যে শ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে। সে অর্থে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পেশায় কর্মজীবী সবাই শ্রমিক হিসেবে গণ্য হলেও শ্রম অধিকারের সংজ্ঞায় শ্রমিক বলতে শুধু সর্বনিম্ন মজুরির প্রান্তিকজনকেই বোঝানো হয়েছে।
শ্রমিকদের দাবি, আইনগতভাবে রাষ্ট্র তাদের ন্যূনতম মজুরির নিশ্চয়তা দিলেও মিলছে না। মালিকদের অতি মুনাফা, লোভ ও শ্রমিককল্যাণে অর্থ ব্যয়ের বাড়তি দায় নেয়ার মানসিকতা না থাকায় তারা বঞ্চিতই থাকছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সুবিধা শ্রমিকরাও পাচ্ছে। তাও তারা দিতে বাধ্য হয়েছে সরকার-সুশীলদের চাপে এবং নিজেদের ব্যবসা রক্ষার তাগিদেই।
শ্রম পরিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শ্রমিকরা শ্রম দিচ্ছে দেশে এমন খাতের সংখ্যা ৬৩টি। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৫৪টি খাতে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের সুযোগ রয়েছে। বেশির ভাগ খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সব খাত তা মানছে না।
বিলসের তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকায় এক ঘণ্টা কাজ করলে একজন শ্রমিক ৭ ডলার মজুরি পান। অস্ট্রেলিয়ায় তা পান ২ ডলার। অন্যান্য দেশেও প্রতি ঘণ্টার মজুরি কম-বেশি এই হারের কাছাকাছি। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশে। দিনের পুরো কর্মঘণ্টার মজুরিই সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষেত্রে ৪-৫ ডলারে সীমাবদ্ধ।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ বিষয়ে বলেন, দেশে শ্রমিকের জীবনমান, কর্মঘণ্টা, কাজের পরিবেশসহ সবদিক এখনও অপ্রাতিষ্ঠানিক রয়ে গেছে। উৎপাদন বাড়াতে হলে সব খাতের শ্রমিকের জীবনমান উন্নতির কথা ভাবতে হবে। বাস্তবতা হলো, কর্মক্ষেত্রে নেয়ার আগে তাদের যে প্রতিশ্রতি দেয়া হয়, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন হয় না।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতই হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। কিন্তু এ খাতের শ্রমিকেরা শ্রম আইনের বাইরে থাকায় তারা কোনো ধরনের শ্রম অধিকার পাচ্ছে না।
‘যেকোনো সময় ইচ্ছে করলেই তাদের কাজ থেকে বের করে দেয়া যায়। এ প্রবণতা এখন প্রাতিষ্ঠানিক খাতেও শুরু হয়েছে। খরচ বাঁচাতে অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্লিনার ও সিকিউরিটি গার্ডও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।’
তবে শ্রম অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) আব্দুল লতিফ খান জানান, যেসব খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রধান খাতগুলোয় তা পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে। কিছু খাতে সুপারিশকৃত মজুরি পুরোপুরি বাস্তবায়ন নাও হয়ে থাকতে পারে। তবে মোটামুটি জীবনধারণের মতো একটা মজুরি কিন্তু শ্রমিকরা পাচ্ছে। সরকার শ্রমিকের স্বার্থে সে হারেই মজুরি নির্ধারণ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দেশ এগোচ্ছে। আরও এগোবে। আগামীতে শ্রমিক-কর্মচারীর স্বার্থরক্ষার প্রশ্নে মালিকদের মানসিকতাও পরিবর্তন করতে হবে।
‘পাশাপাশি দক্ষতানির্ভর কাজে শ্রমিকদেরও অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে বাস্তবায়ন তদারকি বাড়াতে শ্রম অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সক্ষমতার উন্নয়ন দরকার।’
রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানে খেলতে গিয়ে একটি ভবনের ছাদ থেকে পড়ে এক শিশু নিহত হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে পাঁচ তলা ভবনটির ছাদ থেকে পড়ে নিহত হয় সে।
নিহত শিশুর নাম খাদিজা আক্তার (৫)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুটির ফুফা মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া (২০ বছর)।
খাদিজার বাবা মোহাম্মদ ফয়সাল আহমাদ জানান, দুপুরে পাঁচ তলার ছাদে খাদিজা খেলাধুলা করার সময় ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়। এ সময় খাদিজার ফুফা দৌড়ে ধরতে গেলে তিনিও নিচে পড়ে যান।
তিনি জানান, পরে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খাদিজা রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারা যায় এবং ফারিয়ার ফুফাকে ভর্তি রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া থানা এলাকায়। খিলগাঁওয়ের গোড়ান নবাবীর মোড় বতর্মানে১৪৮ /১ রায়হান সাহেবের বাড়ির ভাড়াটিয়া আমরা।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মহম্মদ বাচ্চু মিয়া বলেন, শিশুটির মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত ছাড়া স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে খিলগাঁও থানার সাথে কথা হয়েছে।
তীব্র থেকে অতি তীব্র মাত্রায় পাবনা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। অসহনীয় দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত তিন-চার দিন তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও শুক্রবার চলতি মৌসুমে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
এদিন পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যা জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত রবিবার (২১ এপ্রিল) ঈশ্বরদীতে প্রথমবার ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, জেলার তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অতি তীব্র তাপদাহে পাবনার মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ইটভাটার শ্রমিকসহ দিনমজুরদের জন্য অসহ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও তীব্র গরমে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ।
গাইবান্ধায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন আশরাফ আলী নামের এক রিকশাচালক। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার সুন্দরগঞ্জ-কুপতলা সড়কের ৭৫ নম্বর রেলগেট নামক এলাকায় এ ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ড ঘটে। পরে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সাদেকুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।
৫০ বছর বয়সী রিকশাচালক আশরাফ আলী সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের সাহার ভিটার গ্রামের মৃত ফয়জার রহমানের ছেলে। অন্যদিকে ছিনতাই ও হত্যায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলাম কুপতলা ইউনিয়নের রামপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা।
ওসি জানান, প্রতিদিনের মতোই বৃহস্পতিবার রাতে রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন আশরাফ আলী। তিনি কুপতলা এলাকার ৭৫ নম্বর রেলগেটে পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সাদেকুল ইসলাম তার পথ রোধ করে ছুরি ধরে রিকশা এবং চাবি কেড়ে নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। আশরাফ আলী এতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রথমে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত সাদেকুল আশরাফ আলীর পেটে ছুরিকাঘাত করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে রিকশাটিও উদ্ধার করা হয়। পরে আজ (শুক্রবার) দুপুরে সাদেকুলকে একমাত্র আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরেই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে। এর মধ্যে কোথাও কোথাও বৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এতে বলা হয়, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, বগুড়া, বাগেরহাট, যশোর, কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। আগামী পাঁচ দিনেও আবহাওয়াও প্রায় একই থাকতে পারে।
শুক্রবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়া ২০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও বৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ ও থাই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক থেকে বেরিয়ে ব্যাংককে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি শুক্রবার এ কথা জানান। খবর বাসসের
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং থাই প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এক সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’
দুপুরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে গভর্নমেন্ট হাউজে উভয় নেতার মধ্যে অনুষ্ঠিত একান্ত বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এসব তথ্য জানান। সন্ধ্যায় ঢাকায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়েছে।
ড. হাছান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিনের মধ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমে তারা একান্তে কথা বলেন, এরপর দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বহু বিষয়ে সবিস্তারে আলোচনা করেছেন।
থাইল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের যে ভ্রাতৃপ্রতিম ও বন্ধুপ্রতিম সম্পর্ক, সেটা আরও জোরদার, বহুমাত্রিক ও বিস্তৃত করার ব্যাপারে দুই প্রধানমন্ত্রী গভীর আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন, বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ সময় অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তি, জ্বালানি, পর্যটন ও শুল্ক সংক্রান্ত পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং মুক্ত বণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরুর জন্য একটি লেটার অভ ইন্টেন্ট স্বাক্ষরিত হয়।
দেশের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ব্যাংককে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবদুল হাই এবং থাইল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. প্রাণপ্রী বাহিদ্ধা নুকারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বর্ণনা করার পাশাপাশি বাংলাদেশের ১০০টি ইকোনমিক জোন ও আইটি ভিলেজে থাই বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা চাইলে প্রয়োজনে বাংলাদেশে তাদের জন্য বিশেষ ইকোনমিক জোন করার কথাও বলেছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে আসা প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। তাদের জন্য বাংলাদেশে যেসব সমস্যা উদ্ভূত হচ্ছে বৈঠকে সে বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলেও জানান ড. হাছান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, থাইল্যান্ডেও অনেক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন, এখনো অনেকে আসছেন। থাইল্যান্ডও এই পালিয়ে আসা মানুষদের ভারে জর্জরিত। এই সমস্যা সমাধানে উভয় প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের একসাথে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।
এদিন গভর্নমেন্ট হাউজে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রদত্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অফ অনার প্রদানকালে থাই প্রধানমন্ত্রী সাথে ছিলেন। শেখ হাসিনা তার সৌজন্যে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আয়োজিত রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখেন।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার ব্যাংককে পৌঁছান। তিনি বৃহস্পতিবার ব্যাংককে জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রে জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসকাপ) ৮০তম অধিবেশনে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে দেওয়া ভাষণে সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান জানান।
সফর শেষে প্রধানমন্ত্রীর আগামী ২৯ এপ্রিল দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ ৩ কর্মকর্তাকে আটকের পর কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর। এদিন দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে সাঁথিয়া থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের জিআরও এএসআই মাহবুবুর রহমান জানান, বিকেলে সাঁথিয়া থানা থেকে এনে তাদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় কেউ তাদের জন্য জামিন আবেদন করেননি। ফলে আদালত তাদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটককৃতরা হলেন- অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর এবং ক্যাশিয়ার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট অডিট টিম কাশিনাথপুর শাখায় অডিটে আসে। দিনভর অডিট করে তারা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আর্থিক অনিয়ম পান। এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানায় ওই শাখার ম্যানেজার (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী ও সিনিয়র অফিসার আবু জাফরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দিলে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তিনজনকে আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অডিটে অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের আটক করে সাঁথিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আজ (শুক্রবার) দুপুরে জিডির ভিত্তিতে আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দুদক আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করার পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি দেশ ও জনগণের উন্নয়নে আপনাদেরকে কাজ করতে হবে।
থাইল্যান্ড আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার অবস্থানকালীন আবাসস্থলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। খবর বাসসের
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক মো. নজরুল ইসলাম সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
বঙ্গবন্ধু তার অনুপ্রেরণার উৎস উল্লেখ করে শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, জাতির পিতাকে অসময়ে হত্যা করা হলেও ‘তার আদর্শ আমাদের মধ্যে রয়ে গেছে এবং সে কারণেই আমি তার (বঙ্গবন্ধু) আদর্শ বাস্তবায়ন করতে কাজ করছি। বঙ্গবন্ধু দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন।
গত ১৫ বছরে দেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ও উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতায় থাকায় এ অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, অনেক বাংলাদেশি থাইল্যান্ডের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। তবে তারা দ্বৈত নাগরিকত্ব বজায় রাখতে চান। এই দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে থাই সরকারের সাথে কথা বলবেন।
মন্তব্য