সারা বছরই চলছে রাস্তাঘাট, স্যুয়ারেজ ও ড্রেনেজ-ব্যবস্থার উন্নয়নকাজ। এসব কাজে ঠিকাদারের বিল বাবদ কোটি কোটি টাকা ছাড় করা হয়। কিন্তু দিনমজুর-শ্রমিকরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাঙাগড়ার এসব কাজে হাড়ভাঙা শ্রম দিলেও মেলে না ন্যায্য মজুরি।
শ্রম আইনের প্রয়োগ না থাকায় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে বৈষম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। মেধা বা দক্ষতা নয়, শ্রমিকের ভাগ্যের নাটাই ঘুরছে মালিকের ইচ্ছায়।
রাজধানীর নয়াটোলায় সম্প্রতি কয়েকজন শ্রমিককে অস্থায়ী এক কাজে ঘাম ঝরানো শ্রম দিতে দেখা গেছে। যেখানে পুরুষদের মজুরি ছিল ৪০০ টাকা; নারীদের ৩৫০ টাকা।
শ্রমিক আবুল হাসেম, আনোয়ারা, বিলকিস বানু ও লাভলী বেগম জানান, তারা যে শ্রম দেন, তাতে ন্যায্য মজুরি হওয়া উচিত ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। একই দশা সারা দেশের সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারকাজেও।
কাজ অনুযায়ী মজুরি কম পাওয়ার তথ্য দেন হাতিরঝিল এলাকার ঝিলপাড়ের একটি হোটেলের শ্রমিক কুমিল্লার কাইয়ুমও। পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও এক বেলা খাবারসহ তার মাসিক বেতন দেয়া হয় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। কাকডাকা ভোরে কাজ শুরু হয় তার, সারা দিনের শ্রম শেষ হয় মধ্যরাতে।
মজুরি বাড়ানোর দাবি জানালেও মালিক নানান অজুহাতে কার্যকর করছেন না। এ চিত্র সারা দেশের অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁয়।
ওয়ার্কশপ শ্রমিক মোহাম্মদ সুজন ও রবীন্দ্র মজুমদার জানান, এই প্রকৌশল কাজে তারা যে শ্রম দিচ্ছেন, সেখানে কায়িক শ্রমের পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয়ও রয়েছে। ঝুঁকি তো আছেই। কিন্তু সে অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন সামান্যই। থাকা-খাওয়ার খরচ মালিক বহন না করে মাসিক বেতন ধরা হয়েছে যথাক্রমে ৮ হাজার ও ১০ হাজার টাকা।
ছোট শিল্পকারখানা, টেইলার্স, ইটভাটা, তাঁত, প্রিন্টিংসহ বিভিন্ন খাতে একইভাবে কাজ করছেন শ্রমিক-কর্মচারাীরা।
এভাবে স্থায়ী-অস্থায়ী এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক নানা খাতে নানাজনের শ্রমের ওপর দাঁড়িয়ে আছে দেশের অর্থনীতি, যার মূল কারিগর হচ্ছেন এসব শ্রমিক।
প্রতিবছর মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যে প্রাণের সঞ্চার, তার সর্বত্রই রয়েছে শ্রমিকের অক্লান্ত শ্রম, ঘাম ও উৎপাদনের অদম্য নেশা।
মূলত এই কারিগরদের হাড়ভাঙা শ্রমের ওপর ভর করেই স্বাধীনতা-পরবর্তী ধ্বংসস্তূপের সেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। পেয়েছে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি; দেখছে মধ্য আয়ের স্বপ্ন।
অপেক্ষা উন্নত দেশে যাত্রার। দেশে এখন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও পায়রা বন্দরের মতো ব্যয়বহুল প্রকল্পের কাজ চলছে। সারা দেশে সড়ক-মহাসড়কের নিয়মিত উন্নয়ন ও সংস্কার তো চলছেই। শিল্পায়নেও পিছিয়ে নেই। সব মিলিয়ে দেশ এগিয়েছে অনেক দূর।
কিন্তু দেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি যাদের হাত ধরে এসেছে, সেই উন্নয়ন কারিগরদের ভাগ্যের খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। কারণ, এখনও তাদের ভাগ্যের নাটাই ঘুরছে কাজে দক্ষতায় নয়, মালিকের মর্জিতে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের কর্মসংস্থানের বড় অংশই হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। মোট শ্রমশক্তির ৮৫ দশমিক ১ শতাংশই এ খাতে নিয়োজিত। আর ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে।
অন্যদিকে কৃষি ক্ষেত্রে নিয়োজিত মোট শ্রমশক্তির ৯৫ দশমিক ৪ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। শিল্প খাতের ৮৯ দশমিক ৯ শতাংশ, সেবা খাতের ৭১ দশমিক ৮ শতাংশ শ্রমিক অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত।
গ্রাম ও শহরে কৃষি, চিংড়ি-মৎস্য চাষ ও প্রক্রিয়াকরণ, নির্মাণ ও সংশ্লিষ্ট কাজ, চাতাল, ওয়েল্ডিং, বিড়ি কারখানা, হোটেল ও রেস্তোরাঁ, শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য ও সামাজিক কর্ম, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান, গৃহস্থালি কর্ম, কুলি, দিনমজুর, ছোট ম্যানুফ্যাকচারিংসহ এমন বিভিন্ন খাত হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক। প্রাতিষ্ঠানিকের তুলনায় এসব খাতে মজুরিবৈষম্য প্রকট। আছে জেন্ডার-বৈষম্যও। একই কাজে সমমানের শ্রম দেয়া সত্ত্বেও নারী শ্রমিকরা সমান মজুরি পাচ্ছে না।
সেই শ্রমিক, যে শ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে। সে অর্থে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পেশায় কর্মজীবী সবাই শ্রমিক হিসেবে গণ্য হলেও শ্রম অধিকারের সংজ্ঞায় শ্রমিক বলতে শুধু সর্বনিম্ন মজুরির প্রান্তিকজনকেই বোঝানো হয়েছে।
শ্রমিকদের দাবি, আইনগতভাবে রাষ্ট্র তাদের ন্যূনতম মজুরির নিশ্চয়তা দিলেও মিলছে না। মালিকদের অতি মুনাফা, লোভ ও শ্রমিককল্যাণে অর্থ ব্যয়ের বাড়তি দায় নেয়ার মানসিকতা না থাকায় তারা বঞ্চিতই থাকছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সুবিধা শ্রমিকরাও পাচ্ছে। তাও তারা দিতে বাধ্য হয়েছে সরকার-সুশীলদের চাপে এবং নিজেদের ব্যবসা রক্ষার তাগিদেই।
শ্রম পরিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শ্রমিকরা শ্রম দিচ্ছে দেশে এমন খাতের সংখ্যা ৬৩টি। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৫৪টি খাতে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের সুযোগ রয়েছে। বেশির ভাগ খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সব খাত তা মানছে না।
বিলসের তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকায় এক ঘণ্টা কাজ করলে একজন শ্রমিক ৭ ডলার মজুরি পান। অস্ট্রেলিয়ায় তা পান ২ ডলার। অন্যান্য দেশেও প্রতি ঘণ্টার মজুরি কম-বেশি এই হারের কাছাকাছি। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশে। দিনের পুরো কর্মঘণ্টার মজুরিই সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষেত্রে ৪-৫ ডলারে সীমাবদ্ধ।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ বিষয়ে বলেন, দেশে শ্রমিকের জীবনমান, কর্মঘণ্টা, কাজের পরিবেশসহ সবদিক এখনও অপ্রাতিষ্ঠানিক রয়ে গেছে। উৎপাদন বাড়াতে হলে সব খাতের শ্রমিকের জীবনমান উন্নতির কথা ভাবতে হবে। বাস্তবতা হলো, কর্মক্ষেত্রে নেয়ার আগে তাদের যে প্রতিশ্রতি দেয়া হয়, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন হয় না।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতই হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। কিন্তু এ খাতের শ্রমিকেরা শ্রম আইনের বাইরে থাকায় তারা কোনো ধরনের শ্রম অধিকার পাচ্ছে না।
‘যেকোনো সময় ইচ্ছে করলেই তাদের কাজ থেকে বের করে দেয়া যায়। এ প্রবণতা এখন প্রাতিষ্ঠানিক খাতেও শুরু হয়েছে। খরচ বাঁচাতে অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্লিনার ও সিকিউরিটি গার্ডও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।’
তবে শ্রম অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) আব্দুল লতিফ খান জানান, যেসব খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রধান খাতগুলোয় তা পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে। কিছু খাতে সুপারিশকৃত মজুরি পুরোপুরি বাস্তবায়ন নাও হয়ে থাকতে পারে। তবে মোটামুটি জীবনধারণের মতো একটা মজুরি কিন্তু শ্রমিকরা পাচ্ছে। সরকার শ্রমিকের স্বার্থে সে হারেই মজুরি নির্ধারণ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দেশ এগোচ্ছে। আরও এগোবে। আগামীতে শ্রমিক-কর্মচারীর স্বার্থরক্ষার প্রশ্নে মালিকদের মানসিকতাও পরিবর্তন করতে হবে।
‘পাশাপাশি দক্ষতানির্ভর কাজে শ্রমিকদেরও অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে বাস্তবায়ন তদারকি বাড়াতে শ্রম অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সক্ষমতার উন্নয়ন দরকার।’
বাংলাদেশের মুদ্রার মান দেশীয়ভাবে নির্ধারিত হবে এবং কোনো অযৌক্তিক কারণে এক পয়সাও অবমূল্যায়নের সুযোগ নেই। দুবাই থেকে আমাদের টাকার মান নির্ণয় হবে না বলে মন্তব্য করেছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে, নইলে মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ নিতে পারে। বাংলাদেশের সম্ভাবনা সীমাহীন, তবে তা নষ্ট করার সুযোগও সীমাহীন।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত গুগল পে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন গভর্নর।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যে গভর্নর জানান, ব্যাংক খাতকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে আগামী জানুয়ারি থেকে ‘রিস্ক বেজ সুপারভিশন’ চালু করা হবে। ইতোমধ্যে ২০টি ব্যাংকে সুপারভিশন পরিচালনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এখানে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব নয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাকে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করেন।
তার মতে, মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসছে, তবে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় যেতে আরো সময় লাগবে।
আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষার অংশ হিসেবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কয়েকটি ব্যাংককে একীভূত করার পরিকল্পনার কথাও জানান গভর্নর। তিনি আশ্বস্ত করেন, আমানতকারীদের কোনো ধরনের ক্ষতি হবে না। সবাই তাদের বর্তমান ব্যাংকে থেকেই সেবা নিতে পারবেন।
বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করল ‘গুগল পে’
অনুষ্ঠানে গুগলের ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা ‘গুগল পে’র আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। গুগল, মাস্টারকার্ড এবং ভিসার সহায়তায় সেবা চালু করছে ‘সিটি ব্যাংক পিএলসি’, যা দেশের প্রথম কোনো ব্যাংক হিসেবে গুগল পে-র সঙ্গে যুক্ত হলো।
প্রথম পর্যায়ে কেবল সিটি ব্যাংকের ভিসা ও মাস্টারকার্ড গ্রাহকরাই গুগল ওয়ালেটে কার্ড সংযুক্ত করে গুগল পে ব্যবহার করতে পারবেন। পরবর্তী পর্যায়ে অন্যান্য ব্যাংক যুক্ত হলে সেবাটি আরো বিস্তৃত হবে।
গ্রাহকের হাতে আধুনিক ও নিরাপদ পেমেন্ট প্রযুক্তি
গুগল পে ব্যবহারে গ্রাহকেরা দেশে ও বিদেশে যেকোনো POS টার্মিনালে স্মার্টফোন ট্যাপ করেই লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবেন, ফলে কার্ড বহনের প্রয়োজন হবে না।
গুগল পে কোনো ট্রানজেকশন ফি নেয় না। নিরাপত্তার জন্য কার্ডের পরিবর্তে ‘টোকেন’ ব্যবহার করে।
গুগল পেমেন্টসের গ্রুপ প্রোডাক্ট ম্যানেজার শাম্মী কুদ্দুস, সিটি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হোসেন খালেদ, সিইও মাসরুর আরেফিন, মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্র্যাসি জ্যাকবসন, মাস্টারকার্ড ও ভিসার দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সিটি ব্যাংকের সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, এই অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের ভবিষ্যতমুখী ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম গঠনের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। গুগল পে চালুর মাধ্যমে সিটি ব্যাংক আবারও প্রমাণ করল যে, আমরা ডিজিটাল উদ্ভাবনের অগ্রদূত।
আলু উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা জয়পুরহাট। এ জেলার আলুর গুণগত মান ভালো হওয়ায় দেশ পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়। আর এ আলু চাষ করে কৃষকরা ও আলু ব্যবসায়ীরা বছরের পর বছর লাভ করে অভ্যস্ত। তবে এবার পড়েছেন বড় ধরনের বিপাকে। আবার জেলার ২১টি হিমাগারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩টি হিমাগার অবস্থিত কালাই উপজেলায়।
একদিকে বাজারে আলুর দাম অস্থির, অন্যদিকে হিমাগারে সংরক্ষণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন তারা। সংরক্ষণ মৌসুমের শুরুতে স্থানীয় প্রশাসনের চাপে ভাড়া না বাড়াতে বাধ্য হলেও পরে কিছু হিমাগারের মালিক নানা অজুহাতে প্রতি বস্তায় ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হিমাগারগুলোতে আলু বিক্রির মৌসুম পুরোদমে শুরু না হতেই ভাড়া বাড়ানো এবং বাজার অস্থিরতায় জেলার অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ী দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। দ্রুত নীতিসহায়তা ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ না হলে সংকট আরও বেশি হবে বলে আশঙ্কা তাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি বস্তায় ৫০ পয়সা বেশি মজুরি দেওয়া হচ্ছে। যা তাদের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। অথচ বিদ্যুৎ-সংকট নেই, বিদ্যুতের ভাড়াও বাড়েনি, তা সত্ত্বেও প্রতি বস্তায় ৫০-৭০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া অযৌক্তিক
আলু ব্যবসায়ী মইনুল ইসলাম বলেন, এম ইসরাত হিমাগার, সালামিন ফুডস, আরবি স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজ ও পুনট হিমাগার থেকে প্রতিদিন তিনি ৫০০-১০০০ বস্তা আলু কেনাবেচা করেন। এসব আলু তিনি পাঠান কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে। গত দুই-তিন বছর ভালো লাভ হয়েছে। কিন্তু এবার প্রতিদিন বস্তা প্রতি গড়ে এক থেকে দেড় টাকা লোকসান গুনছি। বাজার ওঠানামা করছে। একদিন ৫০ পয়সা লাভ হলেও পরদিন ১ টাকা লোকসান হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ৬০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে ৮৮০-৯০০ টাকায়। অথচ সংরক্ষণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩০ টাকা। গত বছর একই ওজনের বস্তার ভাড়া ছিল ৩৫০-৩৬০ টাকা।
জেলার সদর উপজেলার সোটাহার ধারকী গ্রামের কৃষক তোতা মিয়া বলেন, খুব কষ্টে ৬০ বস্তা আলু সংরক্ষণ করেছি আরবি কোল্ড স্টোরে। ভাড়া নেওয়া হচ্ছে প্রতি বস্তা ৪৩০ টাকা। অথচ মৌসুমের শুরুতে প্রশাসনের চাপে ৩৫০ টাকা নির্ধারিত হয়েছিল। একদিকে বাজার দর নেই, অন্যদিকে অতিরিক্ত ভাড়া এই সংকটে কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের কাছে আবেদন আমাদের হিমাগার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট থেকে মুক্ত করুন।
কালাই পৌরসভার সড়াইল এলাকার আলু ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, জয়পুরহাটের পার্শ্ববর্তী বগুড়ার হিমাগারগুলোতে এখনো প্রতি বস্তা আলুর ভাড়া ৩৫০-৩৬০ টাকা। অথচ জয়পুরহাটে তা ৪২০-৪৩০ টাকা।
কালাই উপজেলায় অবস্থিত পুনট হিমাগারের ব্যবস্থাপক বিপ্লব ঘোষ বলেন, কিছু কৃষক ঝুঁকি নিয়ে এবার বাড়িতেই আলু রেখেছেন। সেসব আলুই এখনো বিক্রি শেষ হয়নি। তাই হিমাগার থেকে আলু কম আনলোড হচ্ছে।
এম ইশরাত হিমাগার লিমিটেডের ব্যবস্থাপক রায়হান আলম বলেন, এবার হিমাগারে ২ লাখ ৩০ হাজার বস্তা আলু রাখা হয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত মাত্র ২১০০ বস্তা আনলোড হয়েছে, যেখানে গত বছর এ সময় পর্যন্ত হয়েছিল ২০ হাজার ৯৯০ বস্তা।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান বলেন, উপজেলার ১৩টি হিমাগার মালিকদের নির্দেশনা দিয়েছি তারা যেন কৃষকের স্বার্থে কেজি নয়, বস্তা অনুযায়ী ভাড়া নেয়।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান বলেন, এবার জেলায় ২১টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। গত বছর হিমাগারের সংখ্যা ছিল ১৯টি।
উল্লেখ্য, এর আগে ৬ ফেব্রুয়ারি ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে জয়পুরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে স্থানীয় কৃষক ও ছাত্র-জনতা কালাইয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। আলুর ন্যায্যমূল্য ও হিমাগারের অতিরিক্ত ভাড়া প্রত্যাহারের দাবিতে তারা স্মারকলিপিও দেয় উপজেলা প্রশাসনকে। ফলে, গত বছরের দরেই আলু সংরক্ষণের ভাড়া নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন হিমাগার কর্তৃপক্ষ।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আহত ‘জুলাই যোদ্ধারা’ আগামী মাস থেকে মাসিক ভাতা পাবেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
তিনি বলেছেন, মাসিক ভাতার পাশাপাশি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ‘আহত যোদ্ধারা’ আজীবন সরকারি মেডিকেল হাসপাতালগুলোতে বিনা খরচে চিকিৎসা পাবেন। গতকাল সোমবার বাসসকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।
উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করতে ৫৪ বছর লেগেছে। কিন্তু আমরা (বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) মাত্র সাত-আট মাসের মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শহীদ যোদ্ধা ও আহতদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করে ফেলেছি। এটাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ। আগামীতেও আহত যোদ্ধারা যাতে নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি বা ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারেন, সেভাবে তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে।
উপদেষ্টা জানান, জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য ইতোমধ্যে আলাদা অধিদপ্তর স্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১০ম তলায় এ অধিদপ্তরের জন্য বিশ জন অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে অধিদপ্তর থেকে জুলাই যোদ্ধাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করা হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, জুলাই যোদ্ধারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। বাংলাদেশ আজীবন তাদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। এ দেশের সরকার ও জনগণ তাদের ত্যাগের মর্যাদাকে সমুন্নত রেখে সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।
ফারুক-ই-আজম আরো বলেন, শহীদদের অনেকেরই হয়তোবা খোঁজ আমরা রাখি নাই বা রাখতে পারিনি। তবে গণঅভ্যুত্থানের এতদিন পরেও যদি কেউ অধিদপ্তরে এসে অভিযোগ করে যে, তার কোন স্বজন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। তার সন্ধান তিনি চান। সেক্ষেত্রে যাদের গণকবর দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে হলেও তাদের আবেদনের বিষয়ে সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনা করবে। তাদের জন্য সরকারের আন্তরিকতার কমতি থাকবে না।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ‘জুলাই যোদ্ধারা’ ক্যাটাগরি অনুযায়ী এককালীন ও মাসিক ভাতা পাবেন। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের ‘জুলাই শহীদ’ এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আহত জুলাই যোদ্ধারা ‘এ’ ‘বি’ এবং ‘সি’ এই তিন ক্যাটাগরিতে মাসিক ভাতা পাবেন। ক্যাটাগরি ‘এ’ মাসে ২০ হাজার টাকা, ‘বি’ ক্যাটাগরি মাসে ১৫ হাজার এবং ‘ক্যাটাগরি’ ক্যাটাগরি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। সে অনুযায়ী সনদ ও পরিচয়পত্র দেয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, গেজেট আকারে ৮৩৪ জন ‘জুলাই শহীদের’ তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রত্যেক জুলাই শহীদ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা পাবেন। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। আর বাকি ২০ লাখ টাকা দেয়া হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অর্থাৎ আগামী জুলাই মাসে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। তাছাড়া শহীদ পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে ভাতা দেয়া হবে। শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা অগ্রাধিকার পাবেন সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে।
তিনি বলেন, আহত জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে যারা চিকিৎসা নেয়ার পরও অন্যের সহায়তা ছাড়া জীবন যাপন করতে পারছেন না, যেমন যার দুটি চোখই অন্ধ হয়ে গেছে। অথবা এমন অঙ্গহানি হয়েছে যার কারণে তার পক্ষে একা একা চলাফেরা করা অসম্ভব, তারা ‘এ’ ক্যাটাগরির জুলাই যোদ্ধা হিসাবে বিবেচিত হবেন। এই ক্যাটাগরিতে রয়েছেন ৪৯৩ জন। তারা এককালীন ৫ লাখ টাকাসহ মাসিক ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। যার মধ্যে ২ লাখ টাকা তারা ইতোমধ্যে পেয়েছেন। বাকী ৩ লাখ টাকা আগামী জুলাই মাসে পাচ্ছেন। তারা বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধা ও উপযুক্ত মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা, কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা, পরিচয়পত্র পাবেন। গুরুতর আহত ৭ জনকে ইতোমধ্যে তুরস্কে পাঠানো হয়েছে। অনেককে থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
‘ক্যাটাগরি- বি’ তে রয়েছেন ৯০৮ জন। যারা গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন, কিন্তু অন্যের সহায়তা ছাড়া মোটামুটি চলাফেরা করতে পারেন, যেমন যাদের এক চোখ বা এক পা নষ্ট হয়ে গেছে বা এমন অঙ্গহানি হয়েছে যে, তারা একা মোটামুটি চলতে ফিরতে পারেন। অর্থাৎ চিকিৎসার পর অন্যের আংশিক সহায়তায় জীবনযাপনে সক্ষম যোদ্ধারা আছেন ‘বি’ ক্যাটাগরিতে। তারা এককালীন ৩ লাখ টাকা পাবেন। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ১ লাখ টাকা পেয়েছেন। আর আগামী মাসে বাকি ২ লাখ টাকা পাবেন। তাছাড়া এই ‘বি’ ক্যাটাগরির যোদ্ধারা ১৫ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন। সাথে প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি ও আধা-সরকারি কর্মসংস্থানে চাকরি ও পরিচয়পত্র পাবেন।
চিকিৎসার পর বর্তমানে যারা সুস্থ তাদের ‘সি’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি বাসসকে বলেন, ১০ হাজার ৬৪২ জন ‘জুলাই যোদ্ধাকে’ এই ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তারা এককালীন ১ লাখ টাকা পেয়েছেন। এছাড়া আগামী মাস থেকে ১০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন। সাথে পাচ্ছেন পুনর্বাসন সুবিধা এবং পরিচয়পত্র।
উপদেষ্টা বলেন, এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর ৫ আগস্টকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। জাতীয় দিবস হিসাবে আগামীতে এই দিবসকে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে পালন করা হবে।
তিনি বলেন, ৮৩৪ শহীদ পরিবারের মধ্যে ১৩৪ জনের পরিবারকে ওয়ারিশ জটিলতার কারণে পাওনা পরিশোধে বিলম্ব হচ্ছে। তাও অতি দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। আহত যোদ্ধাদের তালিকায় যে সব ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে সেটারও সমাধান করা হচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণসহ ‘নিপীড়নমূলক বদলি আদেশ’ বাতিলের দাবিতে আজ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি পালন করবে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর দাবি পূরণ না হলে আগামী ২৮ জুন থেকে কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে লাগাতার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’। এর আগে দিনভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২৫ ও ২৬ জুন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থিত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট দপ্তরগুলোতে এবং ঢাকার বাইরে নিজ নিজ দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি চলবে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি কার্যক্রম এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, বর্তমান চেয়ারম্যান সরকারের বিতর্কিত আমলাদের একজন হিসেবে এনবিআর ও রাজস্ব প্রশাসনে ‘অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা’ করছেন। তার বিরুদ্ধে অসহযোগ কর্মসূচি চলবে বলেও তারা ঘোষণা দেন। ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এনবিআর চেয়ারম্যানকে আগামী ২৭ জুনের মধ্যে অপসারণ না করা হলে ২৮ জুন থেকে কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব অফিসে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি শুরু হবে। তবে এ কর্মবিরতিতেও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বর্তমান চেয়ারম্যান ও তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘অবৈধ বদলি, স্বেচ্ছাচারিতা ও নিপীড়নমূলক আচরণের’ অভিযোগ রয়েছে। এসব অপচেষ্টার প্রতিবাদে কর্মকর্তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন এবং রাজস্ব ব্যবস্থা রক্ষায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছেন। উল্লেখ্য, এর আগেও এনবিআরের অভ্যন্তরীণ সংস্কার এবং কর্মকর্তাদের স্বচ্ছভাবে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিতে একাধিকবার দাবি-দাওয়া তুলে এসেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে এবারের আন্দোলনে সরাসরি চেয়ারম্যানের অপসারণ চাওয়া এটিকে ভিন্নমাত্রা দিয়েছে।
নির্বাচনের সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকবে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, দেশের সব বাহিনীর প্রধানরা আজকে নিশ্চিত করেছেন যে নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকবে। নির্বাচন করতে যত ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দরকার হবে নির্বাচন কমিশনের, সেটা আমরা দেব। নির্বাচন কমিশন জাতিকে একটা ভালো নির্বাচন উপহার দেবে, এটাই আমরা সবাই আশা করি।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে ‘আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা’ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকাটা শুধু বাহিনীর ওপর নির্ভর করে না। যারা নির্বাচনে অংশ নেন, তাদের ওপরও কিন্তু নির্ভর করে। সেটা আপনারাও তাদের বলবেন।
দিনের ভোট যখন রাতে হয়, সেই সময়ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল, কিন্তু তারা কেন পদক্ষেপ নেয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, সে সময় তো আপনারাও মাঠে ছিলেন, কোনো কিছু বলেননি।
সামনের নির্বাচনে রাতে ভোট যেন না হয়, পুলিশ কি সেটা নিশ্চিত করবে এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এটা শুধু পুলিশ নয়, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ পোলিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার এদেরও কিন্তু একটা ভূমিকা থাকে।
তিনি বলেন, যেহেতু পুরো নির্বাচন নির্ভর করে নির্বাচন কমিশনের ওপর। দেশের সব বাহিনী কিন্তু তখন তাদের অধীনে কাজ করে। নির্বাচন কমিশন জাতিকে একটা ভালো নির্বাচন উপহার দেবে— এটাই আমরা সবাই আশা করি। নির্বাচন করতে যত ধরনের সাহায্য সহযোগিতা দরকার হবে নির্বাচন কমিশনের, সেটা আমরা দেব।
‘আজকের মিটিংয়ে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করাসহ বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কোন কোন এরিয়াগুলোতে সমস্যা হতে পারে, সে বিষয়ে মাথায় রেখে আমরা কাজ করবো,’ যোগ করেন তিনি।
আওয়ামীলীগের ব্যপারে তিনি বলেন, ‘আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তারা কোনো কার্যক্রম করতে পারেনি। দলটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে।’
তিনি সাবেক নির্বাচন কমিশনকে মব জাস্টিস বিষয়ে বলেন, ‘মবে জড়িতদের ফুটেজ দেখে আইনের আওতায় আনা হবে। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পূর্বে মবে যারা জড়িত, এমন কতজনকে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংখ্যা বলতে পারছি না, তবে অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
খুলনায় সুশান্ত দাশ নামে পুলিশের এক উপপরিদর্শককে মারধর করে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিকাল সোয়া ৪টায় নগরীর ইস্টার্ন গেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তিনি বর্তমানে খানজাহান আলী থানায় পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগ অভ্যুত্থানের পরে এসআই সুশান্তের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয়রা জানান, ইস্টার্ন গেট এলাকায় বিএনপির একটি কর্মসূচি ছিল। এ সময় সিএনজি চালিত থ্রি-হুইলারে করে যাচ্ছিলেন এস আই সুশান্ত। থ্রি-হুইলারটি ইস্টার্ন গেটের সামনে দাড়িয়ে যাত্রী ওঠানোর সময় বিএনপির কিছু নেতাকর্মী সুশান্তকে গাড়ি থেকে বের করে মারপিট করে। পরে বিএনপির সিনিয়র নেতারা তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে পুলিশের কাছে তুলে দেন।
খুলনার খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, নিরাপত্তার জন্য এস আই সুশান্তকে হেফাজতে রাখা হয়েছে। শরীরে তেমন আঘাত লাগেনি, শুধু গায়ের টি-শার্ট ছিড়ে গেছে।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিদ্যুৎপৃষ্ঠে গোপাল দাশ নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ২ টার দিকে জেটি সড়ক এলাকায় ফিসারীতে কাজ করার সময় বিদ্যুতের তারে লেগে তার মৃত্যু হয়। গোপাল দাশ শ্রীমঙ্গল শহরের ইকোনমিক ফার্মেসীর মালিক ছিলেন, পাশাপাশি জেটি সড়কে একটি ফিসারীও ছিলো তার৷
শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎপৃষ্ঠে মারা যাওয়া গোপাল দাশের লাশ উদ্বার করা হয়েছে। পরিবারের লোকজন ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। জেলা প্রশাসকের অনুমতি পেলে সেটা হবে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।
এদিকে গোপাল দাশের মর্মান্তিক মৃত্যুতে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
মন্তব্য