করোনার প্রথম ধাক্কা সামলে দেশের অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ঠিক তখন সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ। গত বছরের জুনে এক কঠিন সময়ে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে হয়েছিল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে।
টিকে থাকার ওই বাজেটি ছিল অর্থমন্ত্রীর জন্য অগ্নিপরীক্ষা। গত এক বছরে নানা অভিঘাতের মধ্যে অর্থনীতিকে সঠিক পথেই এগিয়ে নিতে সক্ষম হন তিনি। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত প্রণোদনা প্যাকেজ ‘অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে’ সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। এ জন্য দেশ -বিদেশে প্রশংসিতও হন প্রধানমন্ত্রী।
অর্থনীতিবিদসহ সরকারি নীতি নির্ধারকদের ধারণা ছিল, অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তা আগের চেহারায় ফিরে যাবে। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় সেই স্বপ্ন ফিঁকে হয়ে গেছে। আশাবাদের আকাশে জমেছে কালো মেঘ। নতুন করে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এ পথের সামনে কী অপেক্ষা করছে, কেউ জানে না। তৃতীয় ঢেউ যে আসবে না, তা কি কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে?
এমন প্রতিকূল পরিবেশে নতুন বাজেট তৈরির কাজে হাত দিয়েছেনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অংশগ্রহণমূলক বাজেট প্রণয়নে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এরই মধ্যে প্রাক-বাজেট আলোচনা প্রায় শেষ করে এনেছেন তিনি। এসব আলোচনায় তিনি আগামী বাজেটে কৃষি, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৩ জুন আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করতে পারেন কুমিল্লা-৯ আসন থেকে চারবার নির্বাচিত আ হ ম মুস্তফা কামাল এফসিএ। বর্তমান সরকারের আমলে এটি হবে তার তৃতীয় বাজেট, যিনি আগের মেয়াদে পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন।
করোনা শেষ হয় নি। সহসাই চলে যাবে না বলে জনস্বাস্থ্যবিদদের অভিমত। ফলে একদিকে জনস্বাস্থ্য নিরাপদ রাখা, অন্যদিকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার – এ দুটিকে মাথায় রেখে সামনে চলতে হবে অর্থমন্ত্রীকে।
গতানুগতিক পথে না হেঁটে আগামী বাজেটে চারটি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদেরা। এক. করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে সর্বোচ্চ নজর দেয়া। দুই. কর্মহীনদের পুনর্বাসন করা। তিন. কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ক্ষুদ ও মাঝারি শিল্পে (এসএমই) ‘বাড়তি’ প্রণোদেনা দেয়া। চার. প্রণোদনার টাকা সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে নতুন করে প্রণোদনা, সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানোসহ অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে আসন্ন বাজেটে। এছাড়া কৃষি, খাদ্য ও রপ্তানিতে ভর্তুকি বাড়ানো হচ্ছে।
অর্থনীতিতে স্বস্তি এবং অস্বস্তি দুটোই আছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, প্রবাসী আয় এবং রপ্তানি আয় শক্তিশালী অবস্থানে। উদ্বেগের বিষয় রাজস্ব আয়ের গতি শ্লথ। সরকারের আয় কম, ব্যয় বেশি হ্ওয়ায় ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে ধার বেড়েছে। ফলে কঠিন চাপে অর্থনীতি। এসব কারণে অর্থমন্ত্রীর সামনে বড় ঝুঁকি। আছে চ্যালেঞ্জও।
পরিস্থিতির কারণে এবার এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চাপ কম আসছে সাংসদদের তরফ থেকে। কিন্তু করোনা-পরবর্তী স্বাস্থ্য, খাদ্য ও সামাজিক সুরক্ষাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যয় বেড়েছে। তার সঙ্গে আছে বেতন-ভাতা ভতুর্কিসহ নিয়মিত রুটিন ব্যয়। করোনাকালীন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে ‘অতিরিক্ত’ প্রণোদনার চাপ।
এসব চাপ সামলে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙা করতে আরেকটি বিশাল ব্যয়ের নতুন বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। আসন্ন বাজেটের আকার ৬ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আভাস দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ বেশি। মূল্যস্ফীতি সহনীয় রেখে বাজেট ঘাটতি ধরা হচ্ছে ছয় শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য মূল বাজেট থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ছেটে ফেলা হয়। সম্পদের সীমাবদ্ধতার প্রেক্ষিতে প্রতিবছরে মতো এবারও সংশোধন করা হয় এডিপি। ফলে সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়ায় ৫ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা।
অর্থের জোগান দেয়াই বড় চ্যালেঞ্জ
বিশাল বাজেট বাস্তবায়নে টাকার জোগান নিশ্চিত করাই সরকারের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা। কারণ, প্রতি বছর রাজস্বের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়, বাস্তবে তা তার ধারেকাছেও থাকে না।
এ বছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয় ৪০ শতাংশ। এনবিআরের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত রাজস্ব আহরণ বেড়েছে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ৬ শতাংশ।
এই সময়ে আহরণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে আছে। ফলে রাজস্বে বিশাল ঘাটতির কারণে সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাজেট বাস্তবায়ন করছে সরকার। এতে করে আর্থিক চাপ বাড়ছে।
যোগাযোগ করা হলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআইএর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, রাজস্ব বিভাগে বড় ধরনের সংস্কার করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, করোনা কোন দিকে মোড় নেয়, কেউ বলতে পারবে না। ফলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভ্যাকসিন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বছরজুড়ে ভ্যাকসিন কর্মসূচি চালাতে হবে। ফলে আসন্ন বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
শিল্প খাতের প্রণোদনা প্যাকেজ অব্যাহত রেখে শুধু এসএমই খাতে বাড়তি প্রণোদনার কথা বলেন তিনি। একই সঙ্গে কোভিডের কারণে যারা কর্মহীন হয়েছেন, তাদের কাজের সুযোগ সৃষ্টির জন্য পৃথক ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করে একটি ‘বাস্তবায়নযোগ্য’ বাজেট প্রণয়নের দাবি জানান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই অর্থনীতিবিদ।
অর্থনীতির মৌলিক কাঠামো ঠিক আছে বলে মন্তব্য করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর চেয়ে কোভিড প্রতিরোধে যেসব কর্মসূচি চলছে, সেগুলোর সঠিক বাস্তবায়নে বেশি গুরুত্ব দিতে বলেন তিনি।
ড. জায়েদ বখত মনে করেন, অর্থনীতি মোটামুটি সঠিক পথে আছে। একে আরও গতিশীল করতে হবে। এ জন্য বিদ্যমান প্রণোদনার অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। তার প্রত্যাশা, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বেশি স্থায়ী হবে না। ফলে অর্থনীতি দ্রুতই পুরোপুরি সচল হবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়া নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিং-এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘মানুষের জীবন ও জীবিকার দিক থেকে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন বেশি সংকট চলছে। আয় নেই। বেকারত্ব বাড়ছে। বাড়ছে বৈষম্য। এ সব সমস্যা প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতানুগতিক পথে না হেঁটে আসন্ন বাজেটে এসব বিষয়ে বেশি নজর দিতে হবে অর্থমন্ত্রীকে।’
আরও পড়ুন:ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিগত তিন অর্থবছর ধরে রিজার্ভ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভিন্ন পথে হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ছয় দফায় মোট ৬৮ কোটি ডলারের বেশি কিনে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সবশেষ মঙ্গলবার ৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে কেনা হয়েছে ৪৭.৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণেই রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকেই ডলার কিনছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
ডলার কেনা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ (এফএক্স) নিলাম কমিটির মাধ্যমে, মাল্টিপল প্রাইস অকশন পদ্ধতিতে। এক ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা পর্যন্ত।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাঁচ দফায় ডলার কেনে। ১৩ জুলাই ১৮ ব্যাংক থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনা হয়। এরপর ১৫ জুলাই একই দরে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ২৩ জুলাই ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে এক কোটি ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ১০ আগস্ট ১১ ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে মোট ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার কেনা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের দাম হঠাৎ করে অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া বা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া- দুটোই অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। বর্তমানে দেশে খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে এবং বিদেশি দায় পরিশোধও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ফলে নিকট ভবিষ্যতে ডলারের তীব্র চাহিদা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তাদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ডলার ক্রয় রিজার্ভকে আরও শক্তিশালী করবে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এলে বিনিয়োগ বাড়বে, ফলে ডলারের চাহিদাও বাড়তে পারে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেছেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে অভিজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগের মাধ্যমে একটি ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপন করা এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
তিনি বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতায় বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও দেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি, বিনিয়োগ ও মেধাস্বত্ত্ববিষয়ক বিরোধ ক্রমাগত বাড়ার বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থার আলোকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে গতি আনতে একটি আলাদা কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপন এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘ব্যবসায় বিরোধ নিষ্পত্তি ও চুক্তি প্রয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল মিলার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ও ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আবদুর রহিম খান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, জনবহুল এদেশে আদালতে মামলার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং বিচারিক কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টিকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে। যার ফলে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে আরবিট্রেশন আইন করা হলেও, বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা যায়নি। বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধসমূহ যদি প্রথাগত আদলতের বাইরে গিয়ে মেটানো যায়, তাহলে একদিকে যেমন আদলতের উপর চাপ কমবে, সেই সঙ্গে বাণিজ্যের পরিবেশেরও উন্নয়ন হবে।
তিনি আরও বলেন, কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে এটার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বাণিজ্যবিষয়ক আদালতসমূহে বিশেষজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সংষ্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বাংলাদেশ নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইইউ নিবিড়ভাবে কাজ করছে। এ ধরনের সংস্কার দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম খান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শুধু যে এফডিআই আকর্ষন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়। বরং বিষয়টি আমাদের রপ্তানি সম্প্রসারণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং সার্বিকভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বাংলাদেশ ক্রমাগত আস্থা হারাচ্ছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার। তিনি বলেন, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিকট ব্যবসায়িক চুক্তির প্রয়োগের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক, যেখানে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আরিফুল হক, ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর উপ আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দা রত্নে, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (বিয়াক)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে এ এম মাজেদুর রহমান, সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রাজাহ অ্যান্ড থান-এর কো-হেড ভিকনা রাজা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের স্পেশাল অফিসার বিচারপতি তারেক মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড এসোসিয়েটস-এর পার্টনার ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন অংশগ্রহণ করেন।
মুক্ত আলোনায় ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সরকারের আন্ত:মন্ত্রণালয় সমন্বয়ের বেশ অভাব রয়েছে এবং এ অবস্থার উন্নয়ন না হলে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বাণিজ্যিক বিরোধগুলো সমাধানে আদালতে না গিয়ে, আরবিট্রেশন সেন্টারের মাধ্যমে নিষ্পত্তিতে বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট খাতের স্টেকহোল্ডাররা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজির এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডারের দাম কমানো হয়েছে ৩ টাকা। নতুন মূল্য অনুযায়ী, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৭০ টাকা, যা গত মাসে ছিল ১ হাজার ২৭৩ টাকা।
মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন দর ঘোষণা করেন। নতুন দাম গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হয়েছে ।
এছাড়া, গাড়িতে ব্যবহৃত অটোগ্যাসের দামও লিটারে ১৩ পয়সা কমিয়ে ৫৮ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিইআরসির ঘোষণায় বলা হয়, বেসরকারি খাতে ভ্যাটসহ প্রতি কেজি এলপিজির নতুন দাম ১০৫ টাকা ৮৭ পয়সা। সেখান থেকে বিভিন্ন ওজনের সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারিত হবে।
তবে সরকারি কোম্পানির সরবরাহকৃত সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৮২৫ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। সৌদি আরামকোর প্রপেন ও বিউটেনের আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতি মাসে এ দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এই মূল্য নির্ধারণ কার্যক্রম চালু রয়েছে।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে টমেটো আমদানি শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রামের বড় বাজারের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের নাসিক রাজ্য থেকে এসব টমেটো আমদানি করছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ভারত থেকে টমেটো বোঝাই একটি ট্রাক হিলি বন্দরে প্রবেশের মধ্য দিয়ে টমেটো আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিন ২৮ টন টমেটো আমদানি করা হয়েছে। প্রতিকেজি টমেটো আমদানি করতে শুল্কসহ খরচ গুণতে হচ্ছে ৬১ টাকা।
আমদানিকারক এনামুল হক বলেন, দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় ভারতের নাসিক রাজ্য থেকে এসব টমেটো আমদানি করা হচ্ছে। বন্দরে প্রতি কেজি টমেটো ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা থাকলে আরও বেশি পরিমাণ টমেটো আমদানি করা হবে।
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন বলেন, গতকাল মঙ্গলবার হিলি বন্দর দিয়ে এক ট্রাকে ২৮ টন টমেটো আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত এসব টমেটো ৫০০ ডলারে শুল্কায়ণ করা হচ্ছে। যেহেতু টমেটো কাঁচাপণ্য তাই দ্রুত ছাড় করণে আমদানিকারককে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধের তথ্যমতে, গত ২০২২ সালের ৬ আগস্ট সবশেষ এই বন্দর দিয়ে টমেটো আমদানি করা হয়েছিল।
বিশ্ব অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়স্থল খুঁজতে থাকায় মঙ্গলবার প্রতি আউন্স সোনার দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ ডলারের উপরে পৌঁছেছে।
এশিয়ায় প্রাথমিক লেনদেনের সময় মূল্যবান ধাতুটি প্রতি আউন্স ৩,৫০১ দশমিক ৫৯ ডলারে পৌঁছেছে, যা এপ্রিলে এর আগের রেকর্ড ৩,৫০০ দশমিক ১০ ডলারকে ছাড়িয়ে গেছে।
হংকং থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বিনিয়োগকারীরা দুর্বল মার্কিন ডলার ও ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদের হার কমানোর সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় নেওয়ায় সোনার দামের এই দরপতন ঘটেছে।
মার্কিন মুদ্রাস্ফীতির একটি মূল্য সূচক দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট রেকর্ড সর্বোচ্চ থেকে পিছিয়ে এসেছে। একই সময়ে, ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
শ্রম দিবসের জন্য সোমবার ওয়াল স্ট্রিট বন্ধ ছিল, তখন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় ডলার মিশ্র লেনদেন করেছে।
বন্ধকী জালিয়াতির অভিযোগে ফেডের গভর্নরকে তিরস্কার করার পর ট্রাম্প গত মাসে বলেছিলেন, ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর লিসা কুক পদত্যাগ না করলে, তিনি তাকে বরখাস্ত করবেন।
মার্কিন আপিল আদালত ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনেক শুল্ক, যা বিশ্ব বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সেগুলো অবৈধ বলে রায় দেওয়ার পরও এই রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে।
তবে আদালত আপাতত এই ব্যবস্থাগুলো বহাল রাখার অনুমতি দেওয়ায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করার জন্য সময় পেয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে কমিউনিটি ব্যাংকের স্টার্টআপ রিফাইন্যান্স স্কিমের অধীনে অংশীদারত্বমূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বুধবার (২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স সেন্টারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার এবং নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখার উপস্থিতিতে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে এসএমইএসপিডি বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এবং কমিউনিটি ব্যাংকের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) কিমিয়া সাআদত পারস্পরিক অংশীদারত্বমূলক এ চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন। এ সময় অনুষ্ঠানে- বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক হাফিয়া তাজরিয়ান, যুগ্ম পরিচালক মো. নুরুল কাওসার সাঈফ এবং কমিউনিটি ব্যাংকের হেড অব কর্পোরেট ব্যাংকিং ও হেড অব বিজনেস (ব্রাঞ্চ) ড. মোঃ আরিফুল ইসলাম, হেড অব এসএমই অ্যান্ড এগ্রিকালচার শরিফ হাসান মামুনসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের উর্ব্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে দেশের রপ্তানি আয় ১০.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) আজ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-আগস্ট) রপ্তানি আয় ছিল ৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।
তবে, সামগ্রিক এই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পরও ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
২০২৫ সালের আগস্ট মাসে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালের আগস্টে অর্জিত ৪ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে সামান্য কম।
স্বাভাবিকভাবেই তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৭ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মন্তব্য