একের পর এক ফ্লাইট বাতিলের পর অবশেষে সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে উড়াল দিল রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রথম বিশেষ ফ্লাইট। সন্ধ্যা ছয়টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইটটি রওনা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বিমান।
বিমানের জনসংযোগ বিভাগের উপ মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার গণমাধ্যমকে জানান, ‘বিমানের ফ্লাইট নম্বর বিজি ৪০৩৫ সন্ধ্যা ৬টায় ২৬৫ জন যাত্রী নিয়ে জেদ্দায় উড়াল দিয়েছে।’
এদিকে সকালে সৌদি আরবের আরেক শহর রিয়াদে অবতরণের অনুমতি না পাওয়া ফ্লাইটটিকেও সৌদিতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ফ্লাইটটি রাত ৩টায় রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও প্রবাসী কর্মীদের জন্য বিশেষ ফ্লাইট চালুর সরকারের উদ্যোগ শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে।
শনিবার ভোর সাড়ে ছয়টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সৌদি আরবের রিয়াদের জন্য নির্ধারিত বিশেষ ফ্লাইটটি যাত্রীদের নিয়ে ছেড়ে যেতে পারেনি। এ ছাড়া পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ার কারণে বিমান কর্তৃপক্ষ বাতিল করে সৌদি আরবের দাম্মামের একটি ও দুবাইয়ের দুটি ফ্লাইট।
বিভিন্ন এয়ারলাইনসের দিনের নির্ধারিত ১৪টি বিশেষ ফ্লাইটের মধ্যে সাতটিই নানা কারণে বাতিল হয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের উপ মহাপরিচালক তাহেরা খন্দকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভোর সাড়ে ছয়টায় রিয়াদগামী ফ্লাইটটির সৌদি আরবে ল্যান্ডিং অনুমতি না পাওয়ায় এটি ঢাকা ছাড়তে পারেনি। সৌদি আরবের নিয়মে প্রতিটি বিশেষ ফ্লাইটের জন্য আলাদা ল্যান্ডিং অনুমতি প্রয়োজন হয়।’
ভোর পর্যন্ত এই ফ্লাইটে চেক ইন করা ২০১ জন যাত্রী প্রত্যেককে হোটেলে রাখা হয়।
এদিকে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক তৌহিদ উল আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সারা দিনে ১২ টি এয়ারলাইন্সের পাঁচটি দেশে ১৪টি বিশেষ ফ্লাইটের স্লট নির্ধারিত ছিল। কিন্তু নানা কারণে সাতটি ফ্লাইটই বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে বিমানের পাঁচটি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাজেট এয়ারলাইনসের ফ্লাই দুবাইয়ের দুটি ফ্লাইট রয়েছে।’
এদিকে সন্ধ্যা ৬টা ১২ মিনিটে ১০৩ জন যাত্রী নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট।
ইউএস বাংলার জনসংযোগ ও বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল পৌনে ১০টায় ওমানের মাস্কাটের উদ্দেশ্যে একটি ফ্লাইট যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এতে যাত্রী হয়েছিল মাত্র ২৩ জন। এ কারণে আমরা ফ্লাইটটি বাতিল করেছি। আগামীকাল বিকেলের ফ্লাইটে তারা মাস্কাট যাবেন।’
ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আটকে পড়া প্রবাসী কর্মীদের কর্মস্থলে ফেরাতে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারে শনিবার থেকে শতাধিক বিশেষ ফ্লাইট অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এই পাঁচ দেশ হলো- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুর।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমানসহ মোট ১২টি দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসের যাত্রী পরিবহনের সুযোগ পাচ্ছে। এগুলো হলো- ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস, ওমান এয়ার, সালাম এয়ার, কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস, ইতিহাদ, এয়ার অ্যারাবিয়া, এয়ার অ্যারাবিয়া আবুধাবি ও ফ্লাই দুবাই।
এরই মধ্যে দেশি এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে এই পাঁচ দেশের আট গন্তব্যে বিমান ও চার দেশের চার গন্তব্যে ফ্লাইট ঘোষণা করেছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার প্রথমে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরে এ নিষেধাজ্ঞা আরও দুই দিন বাড়িয়ে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। তবে সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্পকারখানা, গণপরিবহন চালু থাকায় তা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে খুব একটা কাজে আসেনি।
এর মধ্যে কঠোর বিধিনিষেধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বুধবার সকাল থেকে শুরু হয় এই বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন। প্রাথমিকভাবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত এই অবস্থা চলবে।
কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে ১৪ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সব অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। তবে চিকিৎসা, পণ্যবাহী ও বিশেষ ফ্লাইটকে নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। হঠাৎ ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্তত ২০ হাজার প্রবাসী কর্মীর কর্মস্থলে পৌঁছানো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বেশি দামে টিকিট কিনেও তারা কাজে যোগ দিতে পারছেন না।
আরও পড়ুন:জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনে রাজস্ব আদায় কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আপনারা আমরা সবাই দেশের জন্য কাজ করব। আমাদের সবার আগে দেশের স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করা উচিত। যেকোনো ধরনের সংস্কার করি, আইন করি বা আন্দোলন ও সংগ্রাম করি, সবই যেন আমাদের নিজেদের জন্য না হয়ে দেশের জন্য হয়।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক আয়োজিত ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা ও ভ্যাট’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
সেমিনারে ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা। এ সময় ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্কের গবেষণাপ্রধান ইমরুল হাসান তার উপস্থাপনায় বলেন, ‘আমরা দেশের ১৫টি স্থানে ১ হাজার ২২ জন নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর গবেষণা পরিচালনা করেছি। গবেষণায় আমরা দেখতে পেয়েছি, তাদের মধ্য ৮৮ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ এক বেলা বিস্কুট ও পাউরুটি খান। তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশেরই প্রত্যাশ্য ছিল, এই বাজেটে এসব পণ্যর ওপর ট্যাক্স নিয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ আসবে। তবে এ নিয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।’
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআরের চেয়ারম্যান আরও বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম বাজেটের আকার কমেছে। লক্ষ্য ছিল, মানুষের ওপর যেন চাপ না পড়ে। বাজেটের আকার যতটা ছোট হয়েছে—ধরে নিতে হবে, রাষ্ট্র ততটা সঞ্চয় করেছে, ততটা ঋণের চাপ কমেছে।
চেয়ারম্যান আরও জানান, চলতি অর্থবছরে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমার সংখ্যা ১৭ লাখ ছাড়িয়েছে। যেখানে গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৫ লাখ। গতবার অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া সেপ্টেম্বরে শুরু হলেও এবার জুলাই থেকেই অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের লাইসেন্সসহ অন্যান্য সুবিধার জন্য চালু হচ্ছে ‘ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো’। এর ফলে ১৯টি সংস্থার ১১০ ধরনের লাইসেন্স, অনুমোদন ও সনদ অনলাইনে জমা ও গ্রহণ করা যাবে।
করনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় একসঙ্গে বিবেচনা করতে হয়। একদিকে যেমন রাজস্ব আয়ের নির্ধারিত লক্ষ্যে থাকে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার শর্ত পূরণের চাহিদাও মাথায় রাখতে হয়। আগামী বছর উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যুক্ত হওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে দেশের বেশ কিছু কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। এর মধ্যে শুল্ক হার কমিয়ে আনা অন্যতম। বর্তমানে দেশের কিছু পণ্যে সর্বোচ্চ ৮০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হয়। এই শুল্ক কমাতে হবে ধাপে ধাপে। তা না হলে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের ধাক্কা সামলানো কঠিন হবে।
আবদুর রহমান খান আরও বলেন, পাউরুটি ও বিস্কুটে ভ্যাট বাড়ানো হলেও এই বাড়তি ভ্যাট ব্যবসায়ীরা নিজেরা বহন না করে পুরো বোঝা ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন কি না, সে বিষয়েও আমাদেরে খেয়াল রাখতে হবে। সরকারের কর যেখান থেকে নেওয়ার কথা, সেখান থেকে নিতে পারলে সহজেই করছাড় দেওয়া যেত। অনেক সময় আবার কর বাড়ানোর যে সুবিধার কথা বলা হয়, তা ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছায় না। এর ফলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় সরকারের ঋণ নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
বয়স ষাট পেরিয়েছে। সংসার উন্নতির আশায় রাস্তার পাশে ছোট্ট একটি দোকানে ডিম, সিঙ্গাড়া, পাপড় ও পরোটা বিক্রি করে জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় পার করেছেন। পরিশ্রম করলেও ভাগ্য তার এখনো সহায় হয়নি। অভাব ঘোচানোর আশায় যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন তা এখন রূপ নিয়েছে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে।
প্রায় বছর ৩৫ আগে শ্রবণ প্রতিবন্ধী ঝর্ণার বিয়ে হয় একই এলাকার হরিচাঁদ বিশ্বাসের সঙ্গে। বিয়ের পর সহায়সম্বলহীন স্বামীর সঙ্গে থাকতেন সদর উপজেলার শেখহাপি ইউনিয়নের মালিয়াট বাজারের একটি ঝুপড়ি ঘরে। সে সময় স্বামীর অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ঘরের সামনে ছোট একটি দোকান দেন ঝর্ণা। সেখানে ডিম, সিঙ্গাড়া, পাপড়, পরোটা বিক্রি শুরু করেন। স্বামীও খেত-খামারে কাজ করে আয়-রোজগার করতেন তখন। তবে বিয়ের দীর্ঘদিন পার হলেও তাদের কোনো সন্তানাদি না হওয়ায় ঝর্ণার সম্মতিতে স্বামী হরিচান দ্বিতীয় বিয়ে করেন।
সেই ঘরে এক সন্তানের জন্ম হয়। দুজনের সংসার হয় চারজনের। ঝুপড়ি ঘরে জায়গা না হওয়ায় পাশে সরকারি জমিতে একটি দোচালা ঘর উঠিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন ৷ গাদাগাদি করে এখনো সেখানেই বসবাস করছেন তারা। একই সঙ্গে ৩০ বছর ধরে রাস্তার পাশে ডিম-সিঙাড়া বিক্রি করে যাচ্ছেন ঝর্ণা ৷ তবে এসব বিক্রি করে এখন আর তেমন আয় নেই। স্বামীর রোজগারও ভাল না। কোনোমতে চলছে তাদের সংসার। সচ্ছলতা ফেরানোর সংগ্রামে জয়ী না হতে পেরে এখন কেবল বেঁচে থাকার লড়াই চালাচ্ছেন ঝর্ণা ও তার পরিবার।
মালিয়াট এলাকার বাসিন্দা শংকর বিশ্বাস ও নিউটন গোস্বামী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ঝর্ণা বিশ্বাস এখানে দোকানদারি করছেন। এই দোকান থেকে যে আয় হয় তাতে তাদের সংসার চলে না। তাদের কোন জায়গা-জমি নেই, সরকারি জমিতে থাকে। তারা যদি একটু সরকারি সাহায্য পায় তাহলে ভাল লাগবে।’
ঝর্ণার স্বামী হরিচাণ বিশ্বাস বলেন, ‘দোকান চালাতে ঝর্ণাকে সবসময় সহযোগিতা করি। তবে এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আর বাঁচা যাচ্ছে না। কোন রকমে চলছে সংসার। খুব কষ্টে দিন যায়। ঝর্ণা বিশ্বাস বলেন, এই দোকান ঘরেই এক সময় স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতাম। এখন পাশের একটা সরকারি জায়গায় কোনোমতে থাকি। প্রায় ২৫-৩০ বছর ধরে এই দোকানদারি করছি। এই ব্যবসায় এখন আর সংসার চলে না। তারপরও বাঁচতে তো হবে। তাই দুচার টাকা আয়ের আশায় দোকানদারি করি। সরকারি একটু সাহায্য-সহযোগিতা পেলে একটু ভালোভাবে বসবাস করতে পারতাম।
শেখহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুরঞ্জন গুপ্ত বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মালিয়াট বাজারে সিঙ্গারা, ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালায়। সে একজন অসহায় প্রতিবন্ধী। ইতোমধ্যে তাকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামীতে ঝর্ণাকে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানান। সরকারের সহযোগিতা পেলে তাদের উপকার হবে।
শেখহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অশোক বিশ্বাস বলেন, সরকারি সহায়তা বরাদ্দ পেলে অসহায় দরিদ্র শ্রেণির মানুষকে ভাল রাখার চেষ্টা করি। ঝর্ণা রানীকে সাধ্যমত সহায়তা করা হয়েছে। আগামিতেও করা হবে।
উজান থেকে নেমে আশা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে হু-হু করে বাড়ছে পানি। এতে জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে।
ফলে জেলা সদর, কাজীপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার চরাঞ্চলের অনেক গ্রামের ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ অংশে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৬ দিনে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্ট এলাকায় ১০৭ ও কাজিপুর মেঘাইঘাট পয়েন্টে ১১২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রুত পানি বৃদ্ধির কারণে নদী তীরবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে চরের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় ফসলি জমিতে পানি ওঠায় ফসলের ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে।
সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বর্ণি গ্রামের কৃষক মতিন মোল্লা জানান, গত কয়েকদিন ধরে যমুনা নদীতে দ্রুতগতিতে পানি বাড়ছে। এতে চরাঞ্চলের বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে প্লাবিত হচ্ছে। এতে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
বাড়াবাড়ি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল জানান, উজানে বৃষ্টিপাত বেড়েছে এবং মেঘের অবস্থান দেশের উত্তরের দিকে রয়েছে, ফলে পানি বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে যমুনায় পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘন্টায় শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ৪৮ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পানি বাড়লেও সিরাজগঞ্জে বিপৎসীমার ১৯৯ সেন্টিমিটার ও কাজীপুরে ২১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়লেও বন্যার কোন আশঙ্কা নেই।
নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকার দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্য দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জরাজীর্ণ ও ভাঙা ভবনের কারণে শিক্ষার্থীরা যখন তখন প্রাণ হারানোর আশঙ্কা নিয়ে স্কুলে আসে। শ্রেণিকক্ষ সংকট চরমে পৌঁছানোয় পাশের একটি মন্দিরে চলছে পাঠদান। এতে করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি মানসিকভাবে তারাও রয়েছে আতঙ্কে।
দুটি ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল হলো ২৬নং লক্ষীনারায়ণ বালক ও ২৭ নং লক্ষীনারায়ণ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৩৭ সালে স্থাপিত এই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে একটি পুরোনো দুতলা ভবনে চলছিল। ভবনটিতে ৭টি শ্রেণিকক্ষ থাকলেও বর্তমানে ৪টি কক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে দুই শিফটে ১৪ জন শিক্ষক প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থীকে পাঠদান করে যাচ্ছেন। দুই দফা ভূমিকম্পে ফাটল ও পলেস্তারা খসে পড়ার ভয়াবহতা- ২০১৫ সালে এক ভূমিকম্পে ভবনের দ্বিতীয় তলায় ফাটল ধরে ও পলেস্তারা খসে পড়ে। এরপর ২০১৮ সালের আরেক ভূমিকম্পে ভবনের আরও দুটি কক্ষে ফাটল দেখা দেয়। ভবনের ছাদ, দেওয়াল ও সিঁড়ির অবস্থা এতটাই নাজুক হয়ে পড়ে যে ছাদ ধসে পড়ার আশঙ্কায় বাঁশ দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। শ্রেণিকক্ষ সংকটে মন্দিরে ক্লাস- বর্তমানে স্কুলের দ্বিতীয় তলার পাঠদান কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ। বাধ্য হয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সাল থেকে পার্শ্ববর্তী লক্ষীনারায়ণ জিউর মন্দিরের দুটি কক্ষে আংশিক পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছে। পাশাপাশি নিচতলার মাত্র দুটি কক্ষে চলছে ক্লাস। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা এবং দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দুই শিফটে চলছে এই ‘জীবনের ঝুঁকি’ মিশ্রিত শিক্ষা। শিক্ষার্থীদের ভাষায়- ক্লাস নয়, আতঙ্কে কাটে দিন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী উর্মি দাস বলে, ‘স্কুলে এসে সব সময় ভয় লাগে। খেলতে পারি না, মনোযোগ দিতে পারি না। কখন যে ভবন ভেঙে পড়ে এই চিন্তায় থাকি।’ চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নিলয় চক্রবর্তী জানায়, ‘আমাদের স্কুলের ছাদ ফেটে গেছে, অনেক জায়গায় বাঁশ দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। ক্লাস করতে ভয় হয়।’ অভিভাবকদের উৎকণ্ঠা- অভিভাবক উদিতা রাণী বলেন, ‘স্কুল ভবন এতটা ভাঙা যে বাচ্চারা কখন দুর্ঘটনার শিকার হবে বলা যায় না। বাধ্য হয়ে মন্দিরে ক্লাস করতে হচ্ছে।’ রাকিব সাহা নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘সন্তানকে পাঠিয়ে সারাদিন দুশ্চিন্তায় থাকি। যদি কিছু ঘটে যায়, তার দায় কে নেবে?’
শিক্ষক-পুরোহিত সবাই চিন্তিত- শিক্ষক সুবর্ণা আক্তার বলেন, ‘ভবনের ছাদের আস্তর পড়ে যায়, বৃষ্টির সময় ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। ফলে পাঠদান ঠিকভাবে সম্ভব হচ্ছে না। আবার মন্দিরে পাঠ দিতে গিয়ে সময় ও নিরাপত্তা- দুটোই বিঘ্নিত হচ্ছে।’ লক্ষীনারায়ণ জিউর মন্দিরের পুরোহিত দীপঙ্কর চক্রবর্তী জানান, ‘স্থানীয়দের অনুরোধে মন্দিরের দুটি কক্ষ দেওয়া হয়েছে। তবে ২ বছর পার হলেও স্কুলের সংস্কার হয়নি। পূজার সময় পাঠদান চালানো কঠিন হয়ে পড়ে।’
প্রধান শিক্ষকদের আশঙ্কা ও আবেদন- ২৭নং বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুন্নাহার বলেন, ‘জেলা শিক্ষা অফিস, ডিসি, মেয়র সবাইকে জানানো হয়েছে। ৭০০ শিক্ষার্থীর জন্য এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’
২৬নং বালক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপসী সাহা বলেন, ‘ভবনের কারণে আমাদের ছাত্র সংখ্যা কমছে। অভিভাবকরা অন্য স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন।’
প্রশাসনের বক্তব্য ও আশ্বাস- জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘ভবনটি নিয়ে একটি মামলা ছিল, যা নিষ্পত্তি হয়েছে। এখন নতুন ভবনের জন্য আবেদন প্রক্রিয়াধীন।’ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা জানান, ‘স্কুলটির ঝুঁকি পর্যালোচনার জন্য এক্সপার্ট মতামত নেওয়া হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দৈনিক বাংলায় গত ২৭ মে ‘চরম বিপাকে ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও সাধারণ মানুষ, সরিষাবাড়ীতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে বাজারে জলাবদ্ধতা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচরে বসে উপজেলা এলজিইডির। অবশেষে জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনের নিমার্ণকাজ গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু করেছে এলজিইডি। উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বয়ড়া বাজারের পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের নিমার্ণ কাজের উদ্বোধন করা হয়।
বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সমস্যার কথাটি বিবেচনা করে বাজারের জলাবদ্ধতা দূর করতে উপজেলা এলজিইডির নিবার্হী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ২ লাখ টাকা ব্যায়ে একটি ড্রেনের নির্মাণ কাজের উদ্ভোধন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, পোগলদিঘা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মামুন অর রশীদ ফকির, সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রঞ্জু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন বিপ্লব, সাংগঠনিক সম্পাদক আহাম্মদ আলী সরকার, উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ, শ্রমিক দলের সভাপতি মনিরুজ্জামান আদম, পোগলদিঘা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি সাকিবুল হাসান সুমন ফকির, সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান ফরহাদ, ঠিকাদার রুকনুজ্জামান তালুকদার, যুবদল নেতা সোহেল রানা প্রমুখ।
এ বিষয়ে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিষয়টি আমরা জানতে পারি। পরে এই বাজারের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে এডিপির অর্থায়নে একটি ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশা করি এতে ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের অসুবিধা দূর হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সরকারি ক্রয় পদ্ধতি পুরোপুরি ডিজিটাল করা ও সংস্কারের লক্ষ্যে ‘সরকারি সেবার উন্নয়নে ক্রয় আধুনিকীকরণ’(পিএমআইপিএসডি) শীর্ষক পাঁচ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। ইউএনবির হাতে আসা একটি নথিতে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
এতে দেখা যায়, প্রকল্পটিতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার।
সরকারি নথি থেকে জানা যায়, এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সরকারি ই-ক্রয় (ই-জিপি) ব্যবস্থাকে দেশের সব সরকারি কেনাকাটার একমাত্র মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলা—যাতে স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়।
এদিকে, প্রকল্পটির প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবে বাংলাদেশ সরকারি ক্রয় কর্তৃপক্ষ ( বিপিপিএ) ও বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।
মোট ব্যয়ের মধ্যে ৪৩ হাজার ২৯০ কোটি টাকা ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। বাকি ১১ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে।
এই প্রকল্পের আওতায় সব সরকারি কেনাকাটা ই- জিপি (সরকারি ক্রয়) ব্যবস্থার আওতায় আনা বাধ্যতামূলক করতে চাইছে সরকার। এ ছাড়া, বিপিপিএয়ের ডেটা সেন্টারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার উন্নত করে এর কার্যকারিতা বাড়ানোর পাশাপাশি ভবিষ্যৎ রক্ষণাবেক্ষণ ও টেকসই পরিচালনার পরিকল্পনাও করছে সরকার।
তাছাড়া, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে— নিরাপদ, সময়োপযোগী ও আধুনিক তথ্য বিশ্লেষণ সক্ষমতা গড়ে তোলা; যেখানে ব্যবহার করা হবে খোলামেলা সরকারি চুক্তির তথ্য প্রকাশের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড (ওপেন কন্ট্রাক্টিং ডেটা স্ট্যান্ডার্ডস-ওসিডি’স), কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি।
পাশাপাশি, সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়নে সব স্তরের সরকারি ক্রয়-সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের জন্য চুক্তি ব্যবস্থাপনা-ভিত্তিক মধ্য-মেয়াদি সক্ষমতা উন্নয়ন কৌশল তৈরি করারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
প্রকল্পের আওতায় বহুল ব্যবহৃত পণ্যের জন্য নতুন মানদণ্ড নির্ধারণ করা হবে, যাতে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি হালনাগাদ করা সহজ হয়। এ ছাড়া, বর্তমান স্ট্যান্ডার্ড টেন্ডার ডকুমেন্টের (এসটিডি) প্রয়োজনভিত্তিক ব্যবহারযোগ্যতা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা স্বাস্থ্য সঙ্কটের সময় জরুরি সরকারি ক্রয়ের জন্যও পদ্ধতি তৈরি করা হবে। একই সঙ্গে, বিপিপিএকে একটি পূর্ণাঙ্গ কর্তৃপক্ষ হিসেবে রূপান্তরের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন করা হবে।
এই উদ্যোগটি ২০১৭ সাল থেকে বাস্তবায়িত ‘বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সরকারি ক্রয় আধুনিকীকরণ’ প্রকল্পের সফলতার ধারাবাহিকতায় নেওয়া হচ্ছে।
পিএমআইপিএসডি প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে—বিপিপিএর তথ্যকেন্দ্রকে উন্নত যন্ত্রাংশ ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, ওসিডি সংযুক্ত করে নিরাপদ ও তাৎক্ষণিক তথ্য বিশ্লেষণ সক্ষমতা গড়ে তোলা, এবং দুর্যোগের সময় জরুরি সরকারি ক্রয় পদ্ধতি তৈরি করা।
এছাড়াও, প্রকল্পের আওতায় সরকারি ক্রয়চুক্তি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিয়ে মধ্য-মেয়াদি দক্ষতা বৃদ্ধির কৌশল প্রণয়ন, বহুল ব্যবহৃত পণ্যের জন্য নতুন মান নির্ধারণ এবং বিদ্যমান এসটিডির ব্যবহারযোগ্যতা বাড়ানোও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
প্রকল্পের কাজের মধ্যে থাকবে—আধুনিক সরকারি ইলেকট্রনিক ক্রয় তথ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, চুক্তি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা, ইলেকট্রনিক পেমেন্ট ও সরকারি ই-ক্রয় ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক সই যুক্ত করা, ক্রয় সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের জন্য নতুন অনলাইন প্রশিক্ষণ প্ল্যাটফর্ম চালু করা এবং টেকসই সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া তৈরি করা।
সরকারি কর্মকর্তারা জানান, বিপিপিএ বর্তমানে দুটি তথ্যকেন্দ্র পরিচালনা করছে—একটি ঢাকার শেরেবাংলা নগরে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে এবং অন্যটি তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের জাতীয় তথ্যকেন্দ্রে। ২০১৮ সালে স্থাপিত বিপিপিএর নিজস্ব কেন্দ্রটি আরও বেশি কার্যকর, বিস্তৃত সেবা প্রদান ও উন্নত সাইবার নিরাপত্তার জন্য আধুনিকায়নের প্রয়োজন রয়েছে।
২০১১ সালে চালু হওয়া সরকারি ই-ক্রয় ব্যবস্থা সরকারি ক্রয় কার্যক্রমের ডিজিটাল রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এটি দরপত্র প্রস্তুতি ও প্রকাশ থেকে শুরু করে মূল্যায়ন, বরাদ্দ ও চুক্তি ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত ক্রয়ের পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। এই ব্যবস্থা সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা বাড়িয়েছে এবং প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাস করেছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এই ই-ক্রয় ব্যবস্থা টেকসই সরকারি ক্রয়ের অন্যতম ভিত্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে সরকার। তাছাড়া, এটি জনসেবার মানোন্নয়ন ও সরকারি সম্পদের দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে নাগরিকদের আরও উন্নত সেবা নিশ্চিত করবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন হয়েছিল বলে আদালতকে জানিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ওই নির্বাচন প্রহসনের নির্বাচন ছিল এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হওয়ার কারণেই ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে শুনানিতে তার প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন হাবিবুল আউয়াল। হাবিবুল আউয়ালের এমন উত্তরের পর তাকে আদালত প্রশ্ন করেন, তাহলে তিনি পদত্যাগ করলেন না কেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতীতে কোনো সিইসি পদত্যাগ করেননি।
হাবিবুল আউয়াল পরে শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলের নির্বাচন, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের অনিয়মের প্রসঙ্গ আদালতে তুলে ধরেন।
এদিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। অন্যায়ভাবে প্রভাব খাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন পরিচালনার অভিযোগ আনা মামলায় তার এ রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
গতকাল তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার। অপর দিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুস্তাফিজুর রহমান তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দিনের ভোট রাতে করাসহ প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় হাবিবুল আউয়ালকে গত বুধবার সকালে রাজধানীর মগবাজার থেকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
একই মামলায় গত রোববার আরেক সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন সোমবার তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে সাবেক তিন সিইসিসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে গত রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান।
মামলায় ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি কে এম নূরুল হুদা ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে আসামি করা হয়।
মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের ধারা যুক্ত করার বিষয়ে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ আবেদন করলে বুধবার তা মঞ্জুর করেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত।
মামলার আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার মো. আব্দুল মোবারক, আবু হানিফ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী, শাহ নেওয়াজ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে. এম. নুরুল হুদা, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, তৎকালীন পুলিশের আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, তৎকালীন ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার, সাবেক ডিজি র্যাব ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক এসবি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, সাবেক ডিজিএফআই প্রধান (নাম অজ্ঞাত), সাবেক এনএসআই প্রধান ও সাবেক ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল আলম, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব, আলমগীর হোসেন, আনিছুর রহমান ও তৎকালীন নির্বাচন সচিব (নাম অজ্ঞাত)।
মন্তব্য