রপ্তানি আয়, শক্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ ও চলমান টিকাদান কর্মসূচিতে ভর করে বাংলা দেশের অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধাদের প্রাথমিক লক্ষণগুলো দৃশ্যমান। তবে অর্থনীতিতে এখনও প্রচুর অনিশ্চয়তা ও চ্যালেঞ্চ রয়েছে। বিশেষ করে দুর্বল লজিস্টিক ব্যবস্থা ও এ খাতের উচ্চ ব্যয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে।
বহুজাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছে বাংলাদেশ নিয়ে তাদের এক প্রতিবেদনে। সংস্থাটির তৈরি করা ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট - মুভিং ফরওয়ার্ড: কানেকটিভিটি অ্যান্ড লজিস্টিকস টু স্ট্রেংদেন কমপিটিটিভনেস’ শিরোনামের এ প্রতিবেদনটি সোমবার ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হওয়া টিকা কার্যক্রম অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করছে। মে মাসের শুরুতে বাংলাদেশ কোভ্যাক্স থেকেও ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাবে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ভারত থেকে ৭০ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে। আরও আড়াই কোটি ডোজ কেনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস বা সংক্ষেপে কোভ্যাক্স কোভিড টিকার সমবণ্টনের একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ, যার পেছনে আছে ইউনিসেফ, গাভি, ডব্লিউএইচও। এ উদ্যোগ কোভ্যাক্সের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকও রয়েছে। বিশ্বের সকল দেশকে তাদের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ টিকা বিনামূল্যে সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে কোভ্যাক্স। সে হিসেবে বাংলাদেশ ৬ কোটি ৮০ লাখ টিকা পাবে। এ টিকা এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে পাওয়ার কথা থাকলেও ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে শুরু করে ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় চাপের কারণে কোভ্যাক্সের টিকা মে মাসের মধ্যে পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিয়ে বৈশ্বিকভাবে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বাংলাদেশ কোভ্যাক্স থেকে ভ্যাকসিন খুব শিগগিরই পাবে। বাংলাদেশ সরকারের ভ্যাকসিন কিনতে অর্থের কোনো সমস্যা নেই। বিশ্বব্যাংকও ৫০ কোটি ডলার দিতে যাচ্ছে, যা দিয়ে দেশের তিন ভাগ মানুষের জন্য ভ্যাকসিন কেনা যাবে।
বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৬ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে এবং মূল্যস্ফীতি মাঝারি থাকতে পারে। তবে তা নির্ভর করছে চলমান টিকা কার্যক্রম কতটা কার্যকর থাকে, চলাচলের বিধিনিষেধ কতদিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে এবং বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কত দ্রুত উন্নতি হয়, তার ওপর। একই সঙ্গে করোনা নিয়ে নতুন অনিশ্চয়তা, বড় অংকের খেলাপি ঋণ এবং সরকারের রাজস্ব আহরণে দুর্বল অবস্থা অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, করোনা মহামারির কারণে প্রবৃদ্ধির গতি কমে গিয়েছিল। একই সঙ্গে দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো দেশের দারিদ্র্য হ্রাসের প্রবণতাও বিপরীত হয়েছে। তবে অর্থনীতি ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের দিকে যাচ্ছে। অর্থবছরের প্রথম দিকে কল-কারখানা আবার চালু হয়েছে, রপ্তানিও আবার শুরু হয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামে শ্রমবাজারে পুনরুদ্ধারের দিকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। আস্তে আস্তে জীবিকা নির্বাহের সঙ্গে সঙ্গে দরিদ্র ও বস্তি অঞ্চলে খাদ্য সুরক্ষা উন্নত হচ্ছে। তবে চলমান করোনা মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতিতে উচ্চঝুঁকি এখনও রয়েছে।
মার্সি টেম্বন বলেন, করোনায় অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা ইতিবাচক। তবে পুনরুদ্ধারের গতি নির্ভর করছে কত দ্রুত গণহারে টিকার ব্যবস্থা করা যায়, তার ওপর। বিশ্বব্যাংক স্থিতিশীল পুনরুদ্ধারে সমর্থন যোগাবে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, সব কিছু মিলিয়ে ঝুঁকি এখনও উচ্চ থাকছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দায় তৈরি পেশাক পণ্য চাহিদা কমে যেতে পারে। একই সঙ্গে অভিবাসী শ্রমিকদের কাজের সুযোগ সীমিত হতে পারে। চলমান মহামারি আর্থিক খাতের ঝুঁকিকে তীব্রতর করেছে। এক্ষেত্রে খেলপি ঋণ, ব্যাংক ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা অন্যতম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় (লজিস্টিক) উন্নতির মাধ্যমে পুনরুদ্ধারের গতি বাড়ানো এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। প্রতিযোগিতা সূচকে বাংলাদেশ ১৪১ দেশের মধ্যে এখনও ১০৫ তম। লজিস্টিক খাতে বেশি ব্যয় করেও অপর্যাপ্ত সুবিধা পাওয়া দেশেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। লজিস্টিক দক্ষতায়ও ১৬০ দেশের মধ্যে ১০০তম। সরবরাহ বা লজিস্টিক ব্যয় ২৫ শতাংশ কমলে দেশের ২০ শতাংশ রপ্তানি আয় বাড়বে। লজিস্টিক ব্যবস্থপনাকে আধুনিকীকরণে মান, সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়াতে নীতি ও কৌশল প্রনয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন অপরিহার্য।
প্রতিবেদনের সহ-লেখক বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ বার্নার্ড হ্যাভেন বলেন, কোভিড মহামারি বৈশ্বিক মন্দা নিয়ে এসেছে। মহামারি দ্বারা আক্রান্ত পরিবারগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া জরুরি। আবার কাঠামোগত সংস্কার পুনরুদ্ধার কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করতে পারে।
আরও পড়ুন:সরকারি মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক পিএলসি ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ব্যাংকের ব্যবসাযিক সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য পুরষ্কার প্রদান করেছে। ২৩ আগস্ট (শনিবার) মতিঝিলস্থ রূপালী ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এ পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম।
২০২৩ ও ২০২৪ সালের জন্য আলাদাভাবে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ৩ বিভাগীয় কার্যালয়, শীর্ষ ৩ আঞ্চলিক কার্যালয় ও ১০ টি শাখাকে এ পুরষ্কার প্রদান করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পারসুমা আলম, হাসান তানভীর ও মো. হারুনুর রশীদ।
এছাড়াও ২০২৩ ও ২০২৪ সালে পুরস্কারের জন্য মনোনীত বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রধান ও মহাব্যবস্থাপক, প্রধান কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক, আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও শাখা ব্যবস্থাপকগণ এবং আরবিটিএ এর প্রিন্সিপালসহ ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
ব্যাংকের সিগনেচার অনবোর্ডিং প্রোগ্রাম -- ইয়াং লিডারস প্রোগ্রাম (ওয়াইএলপি)- এর আওতায় ৫৩ জন সদ্য পাশ করা মেধাবী গ্র্যাজুয়েটকে নিয়োগ দিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।
ব্র্যাক ব্যাংকের ওয়াইএলপি প্রোগ্রামের আওতায় নিয়োগপ্রাপ্তরা এক বছর ব্যাংকের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট এবং ফাংশনে কাজ করার সুযোগ পাবেন। এই ৩৬০-ডিগ্রি লার্নিংয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যতে তাঁরা উদ্ভাবন, পরিবর্তন ও প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখার সুযোগ পাবেন।
ইয়াং লিডারদের লার্নিং পিরিয়ড সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর তাঁদের আগ্রহ ও সক্ষমতা অনুযায়ী ব্যাংকটির বিভিন্ন ডিভিশনে স্থায়ী দায়িত্বে নিযুক্ত করা হবে। এর ফলে তাঁরা ব্যাংকের ভবিষ্যতের অগ্রযাত্রায় অর্থপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন।
ওয়াইএলপি অনবোর্ডিং প্রসেসে ইয়াং লিডারদের একটি বিস্তৃত এবং সুশৃঙ্খল নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে ছিল সাইকোমেট্রিক অ্যাসেসমেন্ট, পারসোনালিটি প্রোফাইলিং এবং পেশাদার ব্যক্তি কর্তৃক পরিচালিত কম্পিটেন্সি-বেসড ইন্টারভিউ। এর ফলে নিশ্চিত হয়েছে প্রতিষ্ঠানে সেরা এবং সবচেয়ে উপযুক্ত প্রার্থীর নিয়োগ।
৭ আগস্ট ২০২৫ ঢাকায় ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যাংকটির সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের উপস্থিতিতে ইয়াং লিডারদের নতুন এই ব্যাচকে স্বাগত জানানো হয়। ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও (কারেন্ট চার্জ) তারেক রেফাত উল্লাহ খান ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে ব্যাংকিং খাতের ভবিষ্যৎ লিডারদের উন্নয়নে ব্র্যাক ব্যাংকের অবিচল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের আর্থিক খাতের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবে এমন পরবর্তী প্রজন্মের লিডারদের প্রস্তুত করতে ব্র্যাক ব্যাংক দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তরুণ মেধাবীদের বিনিয়োগ শুধু আমাদের প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে না, বরং একটি প্রাণবন্ত ও অগ্রসর চিন্তার কর্মপরিবেশ গড়ার প্রতিশ্রুতিকেও পুনর্ব্যক্ত করছে। আমরা বিশ্বাস করি, এ বছরের ইয়াং লিডারস আমাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসবে শক্তি, উদ্ভাবনী চিন্তা আর বড় লক্ষ্য অর্জনের আকাঙ্ক্ষা।”
ব্র্যাক ব্যাংকের ইয়াং লিডারস প্রোগ্রাম প্রতি বছরই দেশের ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে ক্যারিয়ার শুরুর অন্যতম আকাঙ্ক্ষিত প্রোগামে পরিণত হয়েছে। এ বছরের নিয়োগের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক আবারও প্রমাণ করেছে যে, এটি লক্ষ্য ও কর্মদক্ষতার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এক ট্যালেন্ট-চালিত প্রতিষ্ঠান।
ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি:
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অর্থায়নে অগ্রাধিকার দেয়ার ভিশন নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি. ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করে, যা এখন পর্যন্ত দেশের অন্যতম দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী একটি ব্যাংক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ‘BRACBANK’ প্রতীকে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন হয়। ১৯১টি শাখা, ৯৭টি উপশাখা, ৩৩০টি এটিএম, ৪৪৬টি এসএমই ইউনিট অফিস, ১,১২১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯ হাজারেরও বেশি মানুষের বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক কর্পোরেট ও রিটেইল সেগমেন্টেও সার্ভিস দিয়ে আসছে। ব্যাংকটি দৃঢ় ও শক্তিশালী আর্থিক পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে এখন সকল প্রধান প্রধান মাপকাঠিতেই ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষে অবস্থান করছে। বিশ লাখেরও বেশি গ্রাহক নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক বিগত ২৪ বছরেই দেশের সবচেয়ে বৃহৎ জামানতবিহীন এসএমই অর্থায়নকারী ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও নিয়মানুবর্তিতায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।
সরকারি মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক পিএলসি ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ব্যাংকের ব্যবসাযিক সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য পুরষ্কার প্রদান করেছে। ২৩ আগস্ট (শনিবার) মতিঝিলস্থ রূপালী ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এ পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম।
২০২৩ ও ২০২৪ সালের জন্য আলাদাভাবে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ৩ বিভাগীয় কার্যালয়, শীর্ষ ৩ আঞ্চলিক কার্যালয় ও ১০ টি শাখাকে এ পুরষ্কার প্রদান করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পারসুমা আলম, হাসান তানভীর ও মো. হারুনুর রশীদ।
এছাড়াও ২০২৩ ও ২০২৪ সালে পুরস্কারের জন্য মনোনীত বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রধান ও মহাব্যবস্থাপক, প্রধান কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক, আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও শাখা ব্যবস্থাপকগণ এবং আরবিটিএ এর প্রিন্সিপালসহ ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্য বাড়াতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কমিশন করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তান থেকে যাতে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে আমদানি করতে পারি সেজন্য এ কমিশন করা হবে। একই সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশকিছু সমঝোতা স্বাক্ষর হবে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা উভয় পক্ষ খুব খোলামেলা আলোচনা করেছি। আমরা দুই দেশের বাণিজ্য বাড়াতে একমত হয়েছি। খাদ্য ও কৃষি উন্নয়নে আমরা কাজ করতে চাই। কিছু কিছু মধ্যবর্তী পণ্য যৌথভাবে উৎপাদনে যেতে পারলে উভয় দেশ উপকৃত হবে। খাদ্য ও কৃষি পণ্যে জোর দেওয়া হয়েছে। আমাদের ফল আমদানি ও রপ্তানি নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা আনারস রপ্তানির কথা বলেছি। স্থানীয়ভাবে চিনি উৎপাদনে পাকিস্তানের সাহায্য চেয়েছি। তারা সব বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘এন্টি-ডাম্পিং বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর বাহিরেও আমাদের পাকিস্তান হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড আমদানির ওপর এন্টি-ডাম্পিং ট্যাক্স আরোপ করেছিল আমরা সেটা সরিয়ে নিতে অনুরোধ করেছি। তারা এটা রাখবে আশা করি। আমরা পাকিস্তান বাজারে ডিউটি ফ্রি ১ কোটি কেজি চা রপ্তানির কথা জানিয়েছি। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী আরো তিনদিন থাকবেন, এটা নিয়ে আরো আলোচনা হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের বেশকিছু সমঝোতা স্বাক্ষর হবে। এরমধ্যে জয়েন্ট ট্রেড কমিশন গঠন, কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি। এই ট্রেড কমিশন বন্ধ ছিল না। সেখানে কিছু আলোচনা হতো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দুই দেশের মধ্যে ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশন করতে চাই। আমাদের দুই দেশে ব্যবসার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।’
পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ালে ভারতের সঙ্গে আরো বৈরিতা বাড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কাজ হচ্ছে বাণিজ্যে সক্ষমতা তৈরি করা। এ বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করুন। এটা আমার কনসার্ন নয়। আমরা দেশের স্বার্থে কাজ করছি। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দেশের স্বার্থে অন্য যে যে দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো প্রয়োজন হয় আমরা সেটা করব।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই। আমার কাছে সবার আগে দেশের স্বার্থ। দেশের স্বার্থে আমাদের যা যা করণীয় সেটা আমরা করব। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের যে পাওনা-দেনা ছিল সেটা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বাণিজ্যের কোনো বিষয় না। আর এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘প্রায় দেড় দশক বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য ছিল না বললেই চলে। তারা আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরাও বাণিজ্য বাড়াতে অসুবিধা দেখি না। আমাদের উভয় দেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখে এ বাণিজ্য বাড়ানো যায়। আমাদের উপদেষ্টা ধারণা দিয়েছেন পাকিস্থানে কি কি বিষয় রপ্তানি করতে পারে। আমরা পাকিস্তান থেকে বেশি আমদানি করি কিন্তু রপ্তানি করি কম। আমরা চাই এটা পরিবর্তন হোক। আমরাও যাতে বেশি রপ্তানি করতে পারি। এতে বাংলাদেশের জন্য লাভজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’
বাংলাদেশ পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকছে কিনা এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সবার দিকে ঝুঁকছি।, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছি। ভারত থেকেও পেঁয়াজ আনছি। সর্বাগ্রে বাংলাদেশের স্বার্থ, যেখানে দেশের স্বার্থ আছে, সেখানেই ঝুঁকছি।’
বাণিজ্যসচিব মাহবুবর রহমান বলেন, ‘গত দেড় দশক পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য তেমন ছিল না বললেই চলে। খাদ্য ও পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আমরা নানা দেশ থেকে আমদানি করি, প্রতিযোগিতা দরে পাকিস্তান থেকে এসব পণ্য আনা গেলে সমস্যা নেই। একই সঙ্গে আমাদের রপ্তানি বাড়ানোর গুরুত্ব দিয়েছি। বর্তমানে পাকিস্তান থেকে ইম্পোর্ট করি বেশি, রপ্তানি কম করি। আমরা রপ্তানি বাড়াতে পারলে দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। গত অর্থবছর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৭৮৭ মিলিয়ন ডলার এবং পাকিস্তানে রপ্তানি করেছে ৭৮ মিলিয়ন ডলার।’
বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে এ বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্থানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার, বাংলাদেশে পাকিস্থানের হাইকমিশনের রাজনৈতিক কাউন্সিলর কামরান ধাংগাল, বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক প্রতিনিধি জাইন আজিজ এবং বাণিজ্য সহকারী ওয়াকাস ইয়াসিন।
বাংলাদেশে সফররত পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান আজ রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) কার্যালয়ে চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
সাক্ষাৎকালে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, সংস্কৃতি ও জীবনাচরণের দিক দিয়ে দুদেশের মানুষের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। আর পাকিস্তানের টেক্সটাইল ও বিশেষ করে জুয়েলারি পণ্য এদেশের মানুষের মাঝে বেশ চাহিদা রয়েছে।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়নে এফটিএ স্বাক্ষরের জন্য এদেশের বেসরকারি খাত সবসময়ই সরকারকে প্রস্তাব দিয়ে আসছে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের এফটিএ স্বাক্ষর হলে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে।
তিনি বলেন, দুদেশের মধ্যে সরাসরি বিমান ও কার্গো যোগাযোগ চালু হলে ব্যবসায়িক যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে।
পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয় দেশই রপ্তানির ক্ষেত্রে তৈরি পোষাক এবং টেক্সটাইল খাতের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীল। দুদেশেরই রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ইউরোপের দেশগুলোসহ কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত পোশাকের নতুন ডিজাইনের মাধ্যমে পুনঃব্যবহারের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে। যেখানে দুদেশের পোষাক খাতের উদ্যোক্তাদের মনোনিবেশ করা আবশ্যক। যার মাধ্যমে রপ্তানি বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পূর্ব আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে দুদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়াতে একযোগে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও সিমেন্ট, চিনি, পাদুকা ও চামড়া প্রভৃতি খাতে পাকিস্তান বেশ ভালো করছে এবং বাংলাদেশ চাইলে পাকিস্তান থেকে এ পণ্যগুলো আমদানি করতে পারে। পাশাপাশি ঔষধ খাতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা পাকিস্তানের জন্য বেশ কার্যকর হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, দুদেশের কৃষি কাজ এবং পণ্যের উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তি ও মূল্য সংযোজন বৃদ্ধি করা গেলে এখাতে বৈশ্বিক বিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে।
জাম কামাল খান জানান, পাকিস্তানের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে শিগগিরই বাংলাদেশে ‘সিঙ্গেল কান্ট্রি এক্সিবিশন’-এর আয়োজন করা হবে। যার মাধ্যমে দুদেশের বেসরকারি খাতের সম্পর্ক আরও জোরাদারের সুযোগ তৈরি হবে।
এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার, ডিসিসিআই জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এবং পাকিস্তান হাইকমিশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নতুন করে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ২৭ আগস্ট পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এর আগে গত ১৩ আগস্টের এক সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হলেও ব্যাংকখাতের বর্তমান বাস্তবতায় কয়েকজন পরিচালক নতুন কোনো ব্যাংকের অনুমোদনের বিপক্ষে মত দেন।
২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনুমোদন পাওয়া নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি এবং কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি।
সূত্র জানায়, ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এখনো বাংলাদেশে পুরোপুরি তৈরি হয়নি। একই সময়ে কয়েকটি প্রচলিত ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এসব কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনেকেই নতুন লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন।
তবে পরিকল্পনা থেমে নেই। আগ্রহীদের কাছ থেকে নতুন ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন চাওয়া হতে পারে শিগগির। ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আবেদন আহ্বান করে। তখন ৫২টি আবেদন জমা পড়ে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে ৯টি প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিচালনা পর্ষদের সভায়।
এর মধ্যে নগদ ও কড়ি ছাড়াও স্মার্ট ডিজিটাল ব্যাংক, নর্থ ইস্ট ডিজিটাল ব্যাংক এবং জাপান-বাংলা ডিজিটাল ব্যাংককে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওএল) দেওয়া হয়। অন্যদিকে বিকাশ, ডিজি টেন এবং ডিজিটাল ব্যাংককে পৃথক লাইসেন্স না দিয়ে ডিজিটাল ব্যাংকিং উইং খোলার অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আবেদন বাতিল করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগেরবার রাজনৈতিক বিবেচনায় যে প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, এবার তার চেয়ে অনেক স্বচ্ছ ও কঠোর মানদণ্ডে নতুন আবেদনগুলো যাচাই করা হবে।
২০২৪ সালের শেষ নাগাদ দেশের ব্যাংক খাতের দুর্দশাগ্রস্ত বা ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সাল শেষে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত ‘ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট ২০২৪’-এ এসব তথ্য ওঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের শেষে এ ধরনের ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। ১ বছরে তা ৪৪.২১ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় অর্ধেক। আইএমএফের সংজ্ঞা অনুযায়ী, খেলাপি, পুনঃতফসিল এবং অবলোপনকৃত (রাইট-অফ) ঋণকে সম্মিলিতভাবে ‘দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ২০২৪ সালের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা, পুনঃতফসিলকৃত ঋণ ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা এবং রাইট-অফ করা ঋণের পরিমাণ ৬২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি ও তদবিরের মাধ্যমে দেওয়া ঋণ এখন খেলাপিতে রূপ নিচ্ছে। আগে এসব তথ্য গোপন থাকলেও এখন আইএমএফের চাপের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে এসব তথ্য প্রকাশ করছে।
প্রতিবেদনে আরও ওঠে এসেছে, ২০২৪ সালে দেশের ব্যাংক খাত চরম চাপের মুখে পড়ে, বিশেষ করে মূলধন পর্যাপ্ততার ক্ষেত্রে। সিআরএআর (ক্যাপিটাল টু রিস্ক-ওয়েইটেড অ্যাসেট রেসিও) মাত্র ৩.০৮ শতাংশে নেমে আসে, যেখানে তা কমপক্ষে ১০ শতাংশ থাকার কথা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও বেশকিছু ইসলামী ব্যাংক।
মূলধন অনুপাত ও লিভারেজ অনুপাত যথাক্রমে ০.৩০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গোটা ব্যাংক খাতের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অভাব স্পষ্ট করে।
তবে ব্যাংক খাতের তারল্য পরিস্থিতি এখনো তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। অ্যাডভান্স-ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) ৮১.৫৫ শতাংশে পৌঁছেছে, যা এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার মধ্যে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, দেশের আর্থিক খাত সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও খেলাপি ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার চাপ এবং সুশাসনের অভাব এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সময়োপযোগী নীতিমালা, কঠোর তদারকি এবং প্রযুক্তিনির্ভর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই এই খাতকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
মন্তব্য