রমজানে ভোজ্য তেলের দাম সহনীয় রাখতে আমদানিকৃত অপরিশোধিত সয়াবিন ও পামওয়েল তেলের ওপর ৪ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু এতে ভোক্তা পর্যায়ে দামে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।
রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই অগ্রিম কর প্রত্যাহার সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। বর্তমানে অগ্রিম কর দিতে হচ্ছে ৫ শতাংশ হারে।
ব্যবসার স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে কোনো পণ্যের ওপর কর প্রত্যাহার হলে তার সুফল বাজারপর্যায়ে ভোক্তার মূল্যের ওপর পড়ার কথা। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতে বাজারে তেলের দাম কমবে না।
বর্তমানে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের আমদানি পর্যায়ে বর্তমানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ছাড়াও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর রয়েছে। উৎপাদন পর্যায়েও মূল্য সংযোজনের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হচ্ছে। এছাড়া ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজনের ওপর ১৫ শতাংশ অথবা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে।
আগে এক স্তরে শুধু আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিলেই চলত। ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ৩০ জুন, ২০১৯ পর্যন্ত এ সুযোগ বহাল ছিল। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিদ্ধান্তে সেটি তুলে নেয়া হয়।
কর ছাড় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শীর্ষস্থানীয় ভোজ্যতেল উৎপাদক ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) বিশ্বজিৎ সাহা নিউজবাংলাকে জানান, অগ্রিম কর প্রত্যাহার হলেও এতে উৎপাদক ও আমদানি পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের করের ভার কমবে না। ফলে তাতে মূল্য সংশোধনেরও সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ‘অপরিশোধিত সয়াবিন ও পামতেলে উৎপাদক ও আমদানি পর্যায়ে সরকারকে অগ্রিম কর দিতে হয়। যা বছর শেষে সার্বিক করের হিসাব সমন্বয় করা হয়। এখন এই আদেশের ফলে সেই আগাম করটি এখন আগাম দিতে হবে না। কিন্তু বছর শেষে ঠিকই সমন্বয় করতে হবে।’
সিটি গ্রুপের এই কর্মকর্তার জানান, যদি এটা বাজারে অগ্রিম কর না হয়ে অন্যান্য কর প্রত্যাহার হতো তাহলে সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে দাম কমতো। এখন সেই সুযোগ আছে কি না তা নির্ভর করবে সংশোধিত সিদ্ধান্ত অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড নামে এনবিআরের সংরক্ষিত যে সফটওয়্যার আছে সেখানে কী নির্দেশনা রয়েছে তার ওপর। সেটা পরিষ্কার হতে আরও সময় লাগবে বলে।
অন্যদিকে মৌলভীবাজার ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম মাওলা নিউজবাংলাকে বলেন, কর প্রত্যাহার হলে তো দাম কিছু কিছু কমবেই। কিন্তু দেখতে হবে সেটা কোন কর। ব্যবসায় লেনদেনের স্থিতি বুঝে প্রতিবছর ব্যবসায়ীরা অগ্রিম কর সরকারকে আগাম দিয়ে আসছে। বছর শেষে সেটা কম হলে আরও দিতে হয়। আর বেশি হলে সরকার তার অন্যান্য করের সঙ্গে সমন্বয় করে অথবা নিজ অ্যাকাউন্ডে ফেরত দেয়। তাই এ কর প্রত্যাহারে বাজার ভোক্তা পর্যায়ে দাম কতটা কমবে সেটি নিয়ে সংশয় রয়েছে।
তাহলে এই কর প্রত্যাহারে লাভ কী হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘লাভ আছে অন্য জায়গায়। এতে ব্যবসায়ীদের নগদ অর্থের সংকট কিছুটা হলেও দূর করবে। আগাম কর হিসেবে সরকারকে যে টাকা আগাম দিতে হতো, এখন সেটা আগাম পরিশোধ না করে এই টাকা ব্যবসার অন্যখাতে খরচ করতে পারবেন। সুবিধা বলতে এইটুকুই।’
এর আগে রোজার মধ্যে ভোজ্য তেলের দাম সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে রাখতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একমত জানিয়ে মন্ত্রী পরিশোধের বৈঠকে আমদানিতে কর ছাড় চেয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
আর বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছিলেন বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর বিবেচনা করবে।
কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের ওই বৈঠকে কর কমানোর প্রস্তাব করে বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামটা এখন অনেক বেশি। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয়বাজারে ভোজ্যতেল আমদানিতে যে কর রয়েছে তা একটু কমানো হোক। তাহলে বাজারে দামটাও কম থাকবে।
এর আগে রোজার মধ্যে ভোজ্য তেলের দাম সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে রাখতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সহংতি জানিয়ে মন্ত্রী পরিশোধের বৈঠকে আমদানিতে কর ছাড় চেয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
আর বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছিলেন বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর বিবেচনা করবে।
কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের ওই বৈঠকে কর কমানোর প্রস্তাব করে বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামটা এখন অনেক বেশি। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয়বাজারে ভোজ্যতেল আমদানিতে যে কর রয়েছে তা একটু কমানো হোক। তাহলে বাজারে দামটাও কম থাকবে।
আরও পড়ুন:বিশ বছর পর যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) নবম বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। আগামী ২৭ অক্টোবর ঢাকায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ উদ্দেশ্যে ঢাকা আসছেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী আহাদ খান চিমা।
আসন্ন জেইসি বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। আর পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির অর্থনৈতিক বিষয়কমন্ত্রী আহাদ খান চিমা। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবে দুই দেশ। আহাদ খান চিমার ঢাকা সফরের সময় জেইসি বৈঠকে অংশ নেওয়া ছাড়াও একাধিক বৈঠকের কথা রয়েছে। সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন। দুই দেশের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের সবশেষ বৈঠকটি ২০০৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সূত্রে জানা গেছে, জেইসির বৈঠকে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী যখন ঢাকায় থাকবেন, কাছাকাছি সময়ে ইসলামাবাদ সফরের কথা রয়েছে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খানের আমন্ত্রণে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার জন্য শেখ বশিরউদ্দীনের ওই সফরের কথা রয়েছে।
গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার অংশ হিসেবে ব্যবসা-বাণিজ্যের নানা ইস্যু নিয়ে উদ্যোগ আর আলোচনা হচ্ছে। তাই এবারের জেইসি বৈঠকে দুই দেশ সরাসরি অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা করার বিষয়টি ঠিক করেছে। সে ক্ষেত্রে ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো, কৃষিতে সহায়তা, আর্থিক সেবা খাত, ব্যাংকিংসহ সংশ্লিষ্ট খাতে কীভাবে সামনের দিনে সহায়তা এগিয়ে নেওয়া যায়, তাতে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এক কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি পরিমাণে শুল্ক ও কোটামুক্তভাবে চা, পাটজাত পণ্য, মেডিসিন, তৈরি পোশাক, ইলেকট্রনিকস সামগ্রী আমদানির জন্য পাকিস্তানকে অনুরোধ করা হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আহাদ খান চিমার সফরটি হবে বাংলাদেশে পাকিস্তানি মন্ত্রী পর্যায়ের চতুর্থ সফর। সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে গত এপ্রিলে পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠকে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ। এরপর ঢাকা আসেন বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান এবং উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার।
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আহমেদ জামিল স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দ্য সিভিল অ্যাভিয়েশন রুল, ১৯৮৪ এর রুল ১৬ এর সাব রুল (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
এই বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে ২০২১ সালে কাজ শুরু করে বেবিচক। এই প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দরটিতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে আগামী ডিসেম্বরে।
তবে এরই মধ্যে বেবিচক চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন, চলতি বছর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হবে৷ তবে তা সম্ভব হয়নি এয়ারলাইন্সগুলোর মাঝ থেকে কোনো প্রকার সাড়া না পাওয়ায়।
উল্লেখ্য, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের মেয়াদে কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। এরপর ২০১৫ সালে যোগ হয় আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার নতুন ধাপ। ভৌগোলিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় কক্সবাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।
বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের পক্ষ থেকে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার দুপুরে ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।
এ সময় অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী জানান, বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শিক্ষকরা আজ ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি পালন করবেন।
আজিজী আরও বলেন, ‘আজ (সোমবার) রাতের মধ্যে যদি প্রজ্ঞাপন বা কোনো ঘোষণা না দেওয়া হয়, তাহলে লং মার্চ ও চলমান কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।’
এছাড়া আন্দোলনের অংশ হিসেবে সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গতকাল থেকে যে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করা শুরু হয়েছে, সেটিও অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে, শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চলছে।
শিক্ষকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি ও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে। আন্দোলনরত শিক্ষকরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞা জানিয়েছেন যে, সরকার যদি দ্রুত তাদের দাবির বিষয়ে পদক্ষেপ না নেয়, তবে আন্দোলন আরও বড় রূপ নেবে।
এর আগে, গত রোববার প্রেস ক্লাবের সামনের অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষকরা সোমবারের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি না হলে কর্মবিরতির আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। কিন্তু ওইদিন পুলিশের বলপ্রয়োগের ঘটনায় সেই কর্মসূচি একদিন এগিয়ে এনে তাৎক্ষণিকভাবে নতুন ঘোষণা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের ইস্যুটি আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।’
গতকাল সোমবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে খ্রিস্টান ফোরামের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হঠাৎ করে পিআর পদ্ধতির দাবি সামনে এনে আন্দোলন করার বিষয়টি যারা দ্রুত নির্বাচন চান তাদের কাছে পরিষ্কার নয়। বিষয়টি আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে পরবর্তী নির্বাচন কোনো পদ্ধতিতে হবে। এখন যদি পিআর দেওয়া হয়, জনগণ বুঝবেই না এটা কী?’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে জনগণ আরেকবার রায় দেবে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থার চেষ্টা চলছে। যদিও সেটা বিঘ্ন করার বিভিন্ন অপচেষ্টা দেখা যাচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে সংসদের উচ্চকক্ষে সব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি চার কোটি বেকারের সমস্যা সমাধানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, দেড় বছরের মধ্যে এই সংকটের সমাধান সম্ভব।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ খ্রিষ্টান ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রেসিডেন্ট ফাদার আলবার্ট রোজারিও। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ খ্রিষ্টান ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অনিল লিও কস্তা।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কারিতাস এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ড. বেনেডিক্ট আলো ডি’ রোজারিও, কোর দ্য জুট ওয়াকস্-এর পরিচালক রীতা রোজলিন কস্তা, দ্য মেট্রোপলিটন খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান প্রতাপ অগাস্টিন গোমেজ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট-এর চেয়ারম্যান ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কান্তি সরকার, বিএনপি ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট জন গোমেজ, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট-এর ট্রাস্টি ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুশীল বড়ুয়া, দ্য খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড (ঢাকা)-এর প্রেসিডেন্ট মাইকেল গোমেজ, খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট-এর ট্রাস্টি মৃগেন হাগিদক, মন্টু পিটার রোজারিও, ফনিন্দ্রনাথ কর্মকার ও জ্যাকশন পিউরিফিকেশন, হিড বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক পাস্টর আনোয়ার হোসেন, ওয়াইএমসিএ-এর প্রেসিডেন্ট বাবলু ডেভিড গোমেজ, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের পরিচালক চন্দন জাকারিয়াস গোমেজ, বাংলাদেশ খ্রিস্টান ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক লুইস গোমেজ ও শীতল রিবেরু, বাংলাদেশ খ্রিস্টান ফোরামের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মিসেস জজলিন গোমেজ, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট-এর ট্রাস্টি এভারিস রোজারিও, বাংলাদেশ খ্রিস্টান ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান স্বপন হালদার, দ্য মেট্রোপলিটন খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির লিমিটেড-এর সেক্রেটারি পেপিলন পিউরিফিকেশন, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক প্রশান্ত প্রমুখ।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বৈশ্বিক খাদ্য ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পূর্ণ সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গঠনের জন্য ছয় দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ক্ষুধা কোনো অভাবের কারণে নয়, এটি আমাদের তৈরি করা অর্থনৈতিক কাঠামোর ব্যর্থতা। আমাদের এই ব্যবস্থা বদলাতে হবে।’
গতকাল সোমবার ইতালির রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য ফোরাম (ডব্লিউএফএফ) ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বৈশ্বিক খাদ্য ও অর্থনৈতিক কাঠামো সংস্কারের ছয় দফা প্রস্তাবে অধ্যাপক ইউনূস প্রথমেই বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ করুন, সংলাপ শুরু করুন এবং সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে খাদ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন’—এর মাধ্যমে ক্ষুধা ও সংঘাতের দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অর্থায়নের অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে টিকে থাকার সক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করতে হবে।
তৃতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক গঠন করে খাদ্য সরবরাহ চেইন স্থিতিশীল রাখতে হবে।
চতুর্থ প্রস্তাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অর্থায়ন, অবকাঠামো ও বৈশ্বিক অংশীদারত্বের মাধ্যমে সহায়তা দিতে হবে।
পঞ্চম প্রস্তাবে তিনি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাণিজ্যনীতিকে খাদ্য নিরাপত্তার সহায়ক হতে হবে, বাঁধা নয়।
ষষ্ঠ প্রস্তাবে তিনি বলেন, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের তরুণ কৃষক ও উদ্যোক্তাদের জন্য।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘২০২৪ সালে ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত ছিল, অথচ আমরা যথেষ্ট খাদ্য উৎপাদন করেছি। এটি উৎপাদনের ব্যর্থতা নয়— এটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা, নৈতিক ব্যর্থতা।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষুধা দূর করতে যেখানে কয়েক বিলিয়ন ডলার জোগাড় করা যায়নি, সেখানে অস্ত্র কিনতে বিশ্ব ব্যয় করেছে ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার। একে কি আমরা অগ্রগতি বলব?’
অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা করতে হবে। পুরোনো মুনাফাভিত্তিক ব্যবসা পদ্ধতি কোটি কোটি মানুষকে পিছনে ফেলে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন এক নতুন ব্যবসা পদ্ধতি গড়ে তুলতে হবে— সামাজিক ব্যবসা, যা ব্যক্তিগত মুনাফার জন্য নয়, বরং সমাজের সমস্যা সমাধানের জন্য।’
অধ্যাপক ইউনূস তার স্বপ্নের ‘তিন-শূন্য বিশ্ব’ (শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ) ধারণা ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এটি কোনো কল্পনা নয়, এটি অপরিহার্য— বিশ্ব বাঁচানোর একমাত্র পথ।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সামাজিক ব্যবসার সাফল্য আমরা দেখেছি। গ্রামীণ ব্যাংক দেখিয়েছে, দরিদ্র নারীরাও উদ্যোক্তা হতে পারেন। গ্রামীণ দানোন শিশু অপুষ্টির বিরুদ্ধে কাজ করছে। বিশ্বজুড়ে এমন বহু সামাজিক ব্যবসা মানুষের জীবন বদলে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘তরুণ, নারী, কৃষক, কৃষিুউদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবকদের সহায়তায় সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠন করতে হবে। এই ধরনের উদ্যোগের জন্য আইনগত ও আর্থিক কাঠামো তৈরি করতে হবে, বাঁধা নয়।’
তরুণদের ভূমিকা তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আজকের তরুণ প্রজন্ম আগের তুলনায় অনেক বেশি সংযুক্ত, সৃজনশীল ও প্রযুক্তিনির্ভর। তাদের চাকরি খোঁজার কথা বলবেন না, বরং চাকরি সৃষ্টির ক্ষমতায়ন করুন।’
তিনি বলেন, ‘তরুণদের বিনিয়োগ তহবিল ও সামাজিক ব্যবসা তহবিলের মাধ্যমে মূলধনে প্রবেশাধিকার দিতে হবে। কৃষি-উদ্ভাবন কেন্দ্র, কৃষিুপ্রযুক্তি, চক্রাকার খাদ্য ব্যবস্থা ও জলবায়ু স্মার্ট উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা দিতে হবে।’
তিনি যোগ করেন, ‘যুব সমাজের ওপর বিনিয়োগ করলে শুধু বিশ্বকে খাদ্য দিতে পারব না, বিশ্বকেই বদলে দিতে পারব।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক জোটের (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার অ্যান্ড পোভার্টি) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আমরা এফএও ও জি-২০-এর সঙ্গে মিলিতভাবে প্রযুক্তিগত, আর্থিক ও নৈতিক সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তিনি আহ্বান জানান, ‘আসুন, একটি তিন-শূন্য বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করি।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এই ফোরামের তিনটি স্তম্ভ—যুব, বিজ্ঞান ও বিনিয়োগ—শুধু স্লোগান নয়, এটি আমাদের খাদ্যব্যবস্থা ও সমাজ রূপান্তরের প্রধান হাতিয়ার।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বে সম্পদ ও প্রযুক্তি রয়েছে, ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তি আসবে। এখন দরকার সৃজনশীল চিন্তা ও সঠিক ব্যবসা কাঠামো—যার মাধ্যমে আমরা নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে পারব। আমরা যদি কল্পনা করতে পারি, আমরা তা বাস্তবেও সৃষ্টি করতে পারব।’
বক্তৃতার শুরুতে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এফএও’র ৮০ বছর পূর্তি শুধু উদযাপন নয়, এটি ভবিষ্যতের প্রস্তুতির আহ্বান।’
তিনি বলেন, ‘এ বছরের প্রতিপাদ্য— ‘হাত ধরে হাতে, উন্নত খাদ্য ও উন্নত ভবিষ্যতের পথে’—আমাদের মনে করিয়ে দেয়: খাদ্য শুধু ক্যালরির ব্যাপার নয়, এটি মর্যাদার, ন্যায়ের এবং আমরা কেমন পৃথিবীতে বাস করতে চাই তার প্রতিচ্ছবি।’
তিনি এফএওর নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী খাদ্য নিরাপত্তা ও শান্তি জোটের প্রশংসা করে বলেন, এটি ভবিষ্যতেও বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ২০২৪ সালের বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ তরুণ নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘তরুণরা সাহস ও আশায় ভরপুর হয়ে গণতন্ত্র, শান্তি ও মানবাধিকারের জন্য লড়াই করেছে। তাদের দাবি ছিল ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া, ন্যায়, অন্তর্ভুক্তি ও আস্থার ভিত্তিতে সমাজ গঠন।’
তিনি যোগ করেন, ‘এ তরুণরাই এখন নতুন বাংলাদেশ গঠনে কাজ করছে—যেখানে জনগণ শাসনের কেন্দ্রে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে, যার মাধ্যমে আমরা ন্যায় ও জনগণের ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেব।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করছে এবং মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকেও আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে আছি ধান, সবজি ও স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনে। কৃষকরা ফসলের নিবিড়তা ২১৪ শতাংশে উন্নীত করেছেন এবং আমরা জলবায়ু সহনশীল ১৩৩ প্রজাতির ধান উদ্ভাবন করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ করেছি, ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দিচ্ছি, শক্তিশালী খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি, অপুষ্টি কমিয়েছি, খাদ্যাভ্যাসে বৈচিত্র্য এনেছি এবং কৃষিকে সবুজ করেছি— মাটি, পানি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কাজ করছি।’ বাসস
একে একে প্রকাশিত হচ্ছে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফোনালাপ। তাপস-ইনুর পর এবার প্রকাশ পেল উপ-সামরিক সচিব (ডিএসপিএম) কর্নেল রাজিবের সঙ্গে তৎকালীন এই প্রধানমন্ত্রীর কথোপকথন। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর সরাসরি গুলির নির্দেশনা দেওয়া হয় এই ফোনালাপেও। তাদের সেই কথোপকথনটি শোনানো হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
গতকাল সোমবার জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার শুরু হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়।
ট্রাইব্যুনাল ১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
শুরুতে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন নিয়ে নির্মিত ডেইলি স্টারের একটি প্রামাণ্যচিত্র তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর। এ ভিডিওতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার ভূমিকাসহ আওয়ামী লীগের দুর্গ ভেঙে পড়ার বিবরণ দেওয়া হয়। ওই ভিডিওতে একজন ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির এক কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার একটি ফোনালাপের কথা বলা হয়। পরে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে শোনানো হয় সেই অডিও রেকর্ড।
ফোনালাপটির শুরুতে স্যার সম্বোধন করে সালাম দেন একজন। তারপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘ওরা কিন্তু জায়গায় জায়গায় এখন জমায়েত হতে শুরু করেছে। মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং বিভিন্ন জায়গায়। শুরুতেই কিন্তু ইয়ে…করতে হবে, একদম শুরুতেই। ধাওয়া দিলে এরা গলিতে গলিতে থাকবে। এবার আর কোনো কথা নাই। এবার শুরুতেই দিবা।’
এ প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনালকে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে কথোপকথনের অপরপ্রান্তের ব্যক্তি হলেন কর্নেল রাজিব। তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি মিলিটারি সেক্রেটারি ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশে নেই। গত বছরের ২৯ জুলাই ফোনের মাধ্যমে কর্নেল রাজিবকে এ নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার শেষ কথা হচ্ছে- এবার আর কোনো কথা নাই। এবার শুরুতেই দিবা। মানে আসামাত্রই গুলি করা হবে। এটাই ছিল নির্দেশনা।
গত রোববার এ মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু হয়। বেলা পৌনে ১২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপন। এতে আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনামলের ইতিহাস তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর। একইসঙ্গে গুম-খুনসহ নারকীয় সব ঘটনার বর্ণনা দেন। এসব বিবরণ এ মামলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান তাজুল ইসলাম।
পরপর দুই দফায় সময় বাড়ানো হলেও চার বছরেও শেষ হয়নি রাঙামাটির কুতুকছড়ি সেতুর নির্মাণকাজ। কাজের ধীরগতির কারণে রাঙামাটি-মানিকছড়ি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কে যাতায়াতকারী পাহাড়ের লাখো মানুষ পড়েছে চরম দুর্ভোগে।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতায় সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে কুতুকছড়ি এলাকায়। এর মাধ্যমে উত্তর ও দক্ষিণ পার্বত্য চট্টগ্রামকে সংযুক্ত করছে গুরুত্বপূর্ণ এই আঞ্চলিক মহাসড়কটি।
২০২২ সালের ১১ আগস্ট সেতুর নির্মাণকাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তবে ২০২৪ সালের জুন মাসে প্রথম মেয়াদ শেষে কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় আরও এক বছর সময় বাড়ানো হয়। তবুও অগ্রগতি মাত্র ৩৫ শতাংশ।
সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে বর্তমানে বিকল্প সড়ক ও ঝুঁকিপূর্ণ অস্থায়ী সেতু ব্যবহার করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। চলমান বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিকল্প পথেও চলাচল বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। উপচে পড়া পানিতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে যাতায়াত, কৃষিপণ্য পরিবহন ও জরুরি চিকিৎসাসেবা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙা এই রাস্তা দিয়ে রোগী বা মেডিকেল টিম আসা-যাওয়া করা খুবই কষ্টকর। বিকল্প যে রাস্তা তৈরি হয়েছে, সেটাও এখন পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। চলাফেরায় সমস্যা হচ্ছে, দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই।
সেতুটির দৈর্ঘ্য ৮১.৩১৫ মিটার। নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ২০২১ সালে কুতুকছড়ির পুরনো বেইলি ব্রিজটি একটি পাথর বোঝাই ট্রাকসহ ভেঙে পড়ার পর নতুন সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর ‘সরদার এন্টারপ্রাইজ’ এবং ‘রাঙামাটি ট্রেডার্স’ নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে।
রাঙামাটি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী নিজাম উদ্দিন মিশু বলেন, নদীতে পানি থাকায় কাজ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছি। পানি কমে গেলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করার চেষ্টা করব।
তবে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, পর পর দুবার সময় বাড়ানো হলেও এখনো কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩৫ শতাংশ। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ইতোমধ্যে পত্র পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করা হবে।
এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। এটি পাহাড়ের কৃষিপণ্য, ফলমূল, এবং অন্যান্য পণ্য পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ পথ। সেতুর নির্মাণ দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে থাকায় স্থানীয় পর্যটন, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাও ব্যাহত হচ্ছে।
মন্তব্য