পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৬৬টি কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম বা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর দরপতন ঠেকাতে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক দিনে শেয়ারের দাম কমতে পারবে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ। তবে দর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আগের মতোই ১০ শতাংশের সীমা থাকবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে যেসব কোম্পানির শেয়ার মূল্য ৫ টাকার নিচে নেমে গেছে, সেগুলোর দাম কার্যত কমতে পারবে না। কারণ, কোনো কোম্পানির দাম কমা বা বাড়ার সময় সর্বনিম্ন হিসাব হয় ১০ পয়সা করে। ৫ টাকার নিতে যেসব শেয়ারের দাম, সেগুলোর ২ শতাংশ ১০ পয়সার চেয়ে কম।
বিনিয়োগকারীদের দাবিদাওয়া নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন এই সিদ্ধান্তকে ‘মন্দের ভালো’ বলেছে।
২০২০ সালে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর প্রতিটি শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে লকডাউনের মধ্যেই ৬৬টি কোম্পানির এই সর্বনিম্ন দাম প্রত্যাহার কার নেয়া হয়।
এই সিদ্ধান্তের পর গত বৃহস্পতিবার এসব কোম্পানির মধ্যে বেশিরভাগের ব্যাপক দরপতন হয়। ১০ শতাংশ বা কাছাকাছি দর হারিয়ে বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ফেসবুকে পুঁজিবাজার বিষয়ক নানা ফেসবুক পেজে। তারা প্রশ্ন তুলছেন, লকডাউনের মধ্যে যখন বাজার নিয়ে আতঙ্ক, তখন কেন এই ফ্লোর প্রত্যাহার করতে হলো।
রোববার দ্বিতীয় কার্যদিবসে আরও বেশি দরপতনের শঙ্কা যখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে, তখন বিএসইসি এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে।
নিশ্চিত করে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে ফ্লোর প্রাইস থাকায় আমাদের পুঁজিবাজার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিছিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে আমরা বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশন (আইওএসসিও) সদস্য। সেখানে আমাদের ক্যাটাগরি ‘এ’। দীর্ঘ সময় ধরে ফ্লোর প্রাইসের মাধ্যমে বাজার ম্যানিপুলেট করায় আমাদের ক্যাটাগরি পরিবর্তন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
‘কিন্ত করোনা পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে আমরা দর পতন ঠেকাতে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এগুলেঅর শেয়ার দর দিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারবে, তবে কমবে ২ শতাংশ করে।’
এতে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি কিছুটা কমবে বলে মনে করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুর রাজ্জাক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার এই সময়ে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়া ঠিক হয়নি। তবে যেহেতু এই সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, সেটা মানতে হবে। আর এখন বিএসইসি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। এতেও সম্ভাব্য বেশি লোকসান থেকে রক্ষা পাবে বিনিয়োগকারীরা।
কোন কোম্পানির কত কমতে পারবে
বস্ত্র খাতের কোম্পানি আর এন স্পিনিং এর সবশেষ দাম ৩ টাকা ৭০ পয়সা। এর দুই শতাংশ হয় ৭.৪ পয়সা। কিন্তু ১০ পয়সার কমে কোনো শেয়ারের দাম কমা বা বাড়ার সুযোগ নেই। তাই ফ্লোর প্রত্যাহার করা হলেও এই কোম্পানির শেয়ার দর কমতে পারবে না।
এ ছাড়া যেসব কোম্পানির শেয়ার দর ৫ থেকে ১০ টাকার কম সেগুলোর দাম কমতে পারবে সর্বোচ্চ ১০ পয়সা। যেসব কোম্পানির শেয়ার পর ১০ থেকে ১৫ টাকার কম সেগুলোর দাম কমতে পারবে সর্বোচ্চ ২০ পয়সা, যেগুলোর দাম ১৫ থেকে ২০ টাকার কম, সেগুলো সর্বোচ্চ ৩০ পয়সা, যেগুলোর দাম ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকার কম, সেগুলো সর্বোচ্চ ৪০ পয়সা, যেগুলোর দাম ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকার কম, সেগুলো সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা, যেগুলোর দাম ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকার কম, সেগুলো সর্বোচ্চ ৬০ পয়সা, যেগুলোর দাম ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকার কম, সেগুলো সর্বোচ্চ ৭০ পয়সা, যেগুলোর দম ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকার ভেতর, সেগুলোর দর সর্বোচ্চ ৯০ পয়সা, যেগুলোর দম ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকার কম, সেগুলোর এক টাকা, যেগুলোর দর ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকার কম সেগুলোর সর্বোচ্চ এক টাকা ১০ পয়সা, যেগুলোর দর ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকার মধ্যে, সেগুলোর দর এক দিনে সর্বোচ্চ এক টাকা ২০ পয়সা কমতে পারবে।
আরও পড়ুন:বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)
রোববার রাজধানীর গুলশান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় নাসির উদ্দীন সাথীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী থানায় মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথী ও তার ছেলে কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি এবং শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। মামলাটি করেন মো. জয়নাল আবেদীন নামে এক ব্যক্তি।
এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে। আসামির তালিকায় ২ নম্বরে রয়েছেন সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং ৩ নম্বরে সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন।
মামলায় ১১ নম্বর আসামি তৌহিদ আফ্রিদি এবং ২২ নম্বর আসামি তার বাবা নাসির উদ্দিন সাথী। এ হত্যা মামলায় মোট ২৫ জনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি আবারও স্থিতিশীলতার নতুন ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে শক্তিশালী ডিজিটাল লেনদেন, বৈদেশিক খাতে ভারসাম্যের উন্নতি ও রপ্তানি বৃদ্ধি।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) প্রকাশিত সর্বশেষ অর্থনৈতিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু সূচকে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরুদ্ধারের চিত্র স্পষ্ট হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) খাতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। আগের বছরের তুলনায় লেনদেনের পরিমাণ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে ব্যবসায়ী লেনদেন ও বেতন প্রদানের মতো খাতে লেনদেন বেড়েছে।
২০২৫ সালের মার্চ মাসে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। উৎসব-সংক্রান্ত ব্যয়ের কারণে এ সময় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৩৭ হাজার ৫৭৯.৮ মিলিয়ন টাকা থেকে ১৭ লাখ ৮১ হাজার ২৭৯.২ মিলিয়ন টাকার মধ্যে। একইভাবে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ই-কমার্স লেনদেন আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৬৪ শতাংশ বেড়েছে।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে মাসিক লেনদেন ছিল ১৪ হাজার ৪৮৭.৯ মিলিয়ন টাকা, যা ২০২৫ সালের মে মাসে ২৩ হাজার ৬৫৪.২ মিলিয়ন টাকায় দাঁড়ায়। এটি ডিজিটাল বাণিজ্যে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির প্রতিফলন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের মে মাসে কৃষিঋণ বিতরণ সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬৫৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকায় পৌঁছায়, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়েও বেশি। শিল্পোৎপাদনে অস্থিরতা সত্ত্বেও স্থিতিশীলতা দেখা গেছে, যেখানে বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালের আগস্টের নিম্নগতি কাটিয়ে ওই বছরের অক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ ১১.৩৯ শতাংশে পৌঁছায়।
জিইডি জানায়, বৈদেশিক খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চলতি হিসাবের ভারসাম্য ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উদ্বৃত্ত হয়েছে, যা গত পাঁচ বছরে প্রথম ইতিবাচক অঙ্ক। সামগ্রিক ভারসাম্যেও ৩.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেকর্ড উদ্বৃত্ত হয়েছে, যা ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে চলমান ঘাটতির বিপরীত প্রবণতা। বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস, শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং সেবা খাতের স্থিতিশীল আয়ের ফলে এ পরিবর্তন এসেছে।
রপ্তানিও নতুন গতি পেয়েছে। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪,৭৭০.৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি। মে ও ডিসেম্বর মাসেও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যা প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ও বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
আমদানি খাতেও ইতিবাচক পুনরুদ্ধার হয়েছে। মূলধনী পণ্যের আমদানি স্থিতিশীল থাকায় বিনিয়োগে আগ্রহের প্রতিফলন ঘটেছে।
রেমিট্যান্স প্রবাহ অর্থনীতিতে আরেকটি বড় সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। ২০২৫ সালের জুলাইয়ে মাসিক রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ২ হাজার ৪৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৪ সালের একই মাসের তুলনায় ২৯.৫ শতাংশ বেশি। মার্চ, মে ও ডিসেম্বরে মৌসুমি প্রবাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও গৃহস্থালি আয় আরও বাড়িয়ে দেয়, যা নীতিগত প্রণোদনা এবং অর্থ প্রেরণের উন্নত চ্যানেলের কারণে সম্ভব হয়েছে।
জিইডি জানায়, এসব ইতিবাচক প্রবণতা এবং বিচক্ষণ নীতি ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনায় আস্থার বার্তা দিচ্ছে।
তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, চালের দাম খাদ্য ও সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির ওপর এখনও উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করছে। মে মাসে যেখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান ছিল ৪০ শতাংশ, জুলাই মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫১.৫৫ শতাংশে। এর মধ্যে মাঝারি ও মোটা চালের অবদান সবচেয়ে বেশি, যথাক্রমে ২৪ শতাংশ এবং ১৮.৩৯ শতাংশ। চিকন, মাঝারি ও মোটা—সব ধরনের চালেই জুলাই মাসে প্রায় ১৫ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতি হয়েছে।
সরবরাহ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ২০২৫ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১৪ লাখ মেট্রিক টন বোরো চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করে। তবে ২০২৫ সালের জুলাই মাসে চাল বিতরণ হয় ৬২ হাজার ৮৮৯ মেট্রিক টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ শতাংশ কম।
বাজার স্থিতিশীল করতে খাদ্য মন্ত্রণালয় ২৩ জুলাই বেসরকারি খাতকে চাল আমদানির আবেদন করার আহ্বান জানায়, যার সময়সীমা শেষ হয় ৭ আগস্ট। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এসব আমদানির প্রভাব বাজারে পড়তে আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
জিইডি সতর্ক করেছে, আগামী মাসগুলোতে অনিয়মিত আবহাওয়ার ধরন দেখা দিতে পারে, যা চালের দাম বাড়িয়ে তুলতে পারে। এজন্য স্বল্পমেয়াদে মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে আমদানি ত্বরান্বিত করা, সংগ্রহ কার্যক্রম বাড়ানো এবং ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) কর্মসূচির আওতায় চাল বিতরণ বিস্তৃত করার পরামর্শ দিয়েছে জিইডি।
তবে জিইডি বলেছে, সামান্য ঊর্ধ্বগতি বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ নয়। কারণ ২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় মূল্যস্ফীতি ছিল দুই অঙ্কে, তখন অনুমান করা কঠিন ছিল যে অর্থবছর শেষে তা প্রায় ৮.৫ শতাংশে নেমে আসবে।
হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে সামষ্টিক অর্থনীতির বহুমুখী চ্যালেঞ্জগুলো ‘ভারসম্যাপূর্ণ উপায়ে’ মোকাবিলা করা হয়েছে। এটি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির পর টানা দ্বিতীয় মাস সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে ছিল।
সরবরাহ-সংক্রান্ত চাপ থাকা সত্ত্বেও জিইডি জানায়, রাজস্ব ও আর্থিক নীতির সমন্বিত পদক্ষেপ কার্যকর হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে একটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, যার লক্ষ্য ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামানো এবং সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্য বহির্ভূত খাতে গত অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল ছিল। খাদ্যপণ্যের মধ্যে শাকসবজি ও কন্দজাত ফসলের অবদান যথাক্রমে ৬.৪৮ শতাংশ এবং ১০.৩৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়তা করেছে।
আরও সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইলিশ, বেগুন, টমেটো, সয়াবিন তেল ও পাঙ্গাসও মূল্যস্ফীতি কমাতে কিছুটা ভূমিকা রেখেছে। অন্যদিকে আলু ও পেঁয়াজের অবদান যথাক্রমে ১৫.৭১ শতাংশ এবং ৭.৯৩ শতাংশ কমেছে।
আগামী দিনে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কৃষি উপকরণের সময়মতো সরবরাহ এবং বাজার পরিস্থিতির নিবিড় পর্যবেক্ষণের ওপর জোর দিয়েছে জিইডি।
দেশের মৎস্যসম্পদের সম্প্রসারণ, সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং টেকসই ব্যবহারে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ‘অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশি মাছে দেশ ভরি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ১৮ থেকে ২৪ আগস্ট জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ দেশব্যাপী উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে।
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান ১৮ আগস্ট সোমবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে সভাপতিত্ব করবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মৎস্য খাতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৬ জন ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় মৎস্য পদক ২০২৫ প্রদান করা হবে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে যথাক্রমে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জের পদক বিতরণ করা হবে।
২০২৫ সালের মৎস্য সপ্তাহের কর্মসূচিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী র্যালি, সেমিনার, প্রযুক্তি প্রদর্শন, আলোচনা সভা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, মতবিনিময় সভা, সমাপনী এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে থাকছে: ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সকাল ১০টায় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ এর আনু্ষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন ও মৎস্য পদক বিতরণ অনুষ্ঠান। ১৯ আগস্ট সকাল ৮:৩০টায় মানিক মিয়া এভিনিউ-এ সড়ক র্যালি, সকাল ১০টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে প্রযুক্তি প্রদর্শন ও ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা। ২০ আগস্ট সকাল ১০টায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)-এ মৎস্য অভয়াশ্রমের গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ক সেমিনার। ২১ আগস্ট সকাল ১০টায় কারওয়ান বাজার মৎস্য আড়তে মৎস্য বিষয়ক আলোচনা সভা ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন। ২২ আগস্ট সকাল ১০টায় চট্টগ্রামে মৎস্য ও মৎস্যপন্য রপ্তানি বৃদ্ধিতে সম্ভাবনা ও করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা। ২৩ আগস্ট সকাল ১০টায় মৎস্যভবনে মৎস্যজীবী, মৎস্যচাষী, জেলে এবং আড়ৎদারদের সাথে মতবিনিময় সভা ও ভ্রাম্যমাণ প্রচার প্রচারণা। ২৪ আগস্ট বিকাল ৪টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি)-এ জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ এর মূল্যায়ন, সমাপনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ এর সমাপ্তি হবে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মসূচি হিসেবে থাকছে: প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় র্যালি, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সফল মৎস্য উদ্যোক্তাদের পুরস্কার প্রদান, পোনা অবমুক্তকরণ, মতবিনিময় সভা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, নিরাপদ মাছ চাষ ক্যাম্পেইন, তরুণদের অংশগ্রহণে কর্মশালা, কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং মৎস্যজীবীদের নিয়ে ক্রীড়া আয়োজনসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সপ্তাহের শেষ দিনে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ এর মূল্যায়ন, সমাপনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ এর সমাপ্তি হবে।
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ সফলভাবে উদ্যাপনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠন, মৎস্যজীবী, উদ্যোক্তা ও জনগণের সহযোগিতা কামনা করছে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে সংঘটিত মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার কারণে ২২ জুলাই জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানসহ সকল কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। এ ঘটনায় নিহতদের প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি কোনো বিভাজনের রাজনীতি করে না। বিএনপি সব ধর্মের মানুষ, বর্ণের মানুষকে নিয়ে সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলবে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে কোনো বিভাজন করা যাবে না।
গতকাল শনিবার জেএমসেন হলে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন ধর্ম সম্মেলন ও সাধু সন্ত ঋষি বৈষ্ণব মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান মানলে অবশ্যই অসাম্প্রদায়িক হতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধান অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা পুরোপুরি বলা আছে। সুতরাং অসাম্প্রদায়িক মুখে নয়, প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক হলে দেশে কোনো হানাহানি থাকবে না। একইভাবে সংখ্যালঘু শব্দও আমি মানি না। সংখ্যালঘু বলতে কোনো শব্দ নেই। আমরা সবাই বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশি হিসেবে সবার অধিকার নিশ্চিত করা যেকোনো সরকারের দায়িত্ব।
তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে আমরা একটা জাতি, একটা দেশ, একটা সমাজ। যারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে তারা বারবার ধ্বংস হয়েছে, আবার বারবার নতুনভাবে শুরু করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এ দেশের সাধারণ মানুষ সাম্প্রদায়িকতাকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করে। আজকের বাংলাদেশে আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছে সবাই। মানুষের মধ্যে অনেক দাবি সৃষ্টি হয়েছে, অনেক প্রত্যাশা জাগ্রত হয়েছে।
“যদি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হয় তবে কোনো বিভাজন করা যাবে না। দেশে সবার ধর্ম থাকবে, সংস্কৃতি থাকবে। সবাই তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব পালন করবে। এটার সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সংঘর্ষ থাকতে পারে না। জাতি হিসেবে, রাজনীতিবিদ হিসেবে আমাদের সহনশীল হতে হবে। ধর্ম যেমন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন হয় রাজনৈতিক মতভেদও ভিন্ন ভিন্ন হবে। কিন্তু দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে সবাইকে এক হতে হবে।
শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লায়ন আর কে দাশ রুপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বালন করেন বাঁশখালী ঋষিধামের মোহন্ত শ্রীমৎ স্বামী সচিদানন্দ পুরি মহারাজ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব দে পার্থ।
মাচার ওপরে সবুজ পাতা। নিচে ঝুলে আছে কালো রঙের তরমুজ। গাছ থেকে ছিঁড়ে না পড়ে সেজন্য প্রতিটি তরমুজে দেওয়া হয়েছে জালি। এমন দৃশ্য নওগাঁর পত্নীতলা, মহাদেবপুর, রাণীনগর ও সদর উপজেলার মাঠে মাঠে। এসব জমিতে আগে পটল ও করলা চাষ করলেও এখন বর্ষা মৌসুমে 'মার্সেলো’ জাতের তরমুজ চাষ করেছেন চাষিরা।
মাচায় ও মালচিং পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড মার্সেলো জাতের তরমুজ চাষে সফলতা পেয়েছেন নওগাঁর চাষিরা। এই পদ্ধতিতে চাষ করা তরমুজের অধিক ফলনে তারা খুশি।
জানা গেছে, এসব তরমুজ অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট হওয়ায় বাজারে চাহিদা বেশি। সঙ্গে লাভও বেশি। লম্বাটে ডিম্বাকৃতির এই তরমুজের ভেতরের অংশ গাঢ় লাল রঙের। মার্সেলো জাতের প্রতিটি তরমুজের ওজন হয়ে থাকে ৩-৫ কেজি। আর প্রতি বিঘায় দেড় থেকে দুই হাজারটি তরমুজ পাওয়া যায়।
এছাড়া মার্সেলো জাতের এই তরমুজ উচ্চমাত্রায় ভাইরাস সহনশীল। প্রতিদিনই আগ্রহী চাষিরা বর্ষাকালীন তরমুজের ক্ষেত দেখতে ভিড় করছেন জমিতে। গত জুন মাসে তরমুজের চারা রোপণ করা হয়েছে। গাছ লাগানোর ৬৫-৭০ দিনের মধ্যে ফল উঠানো যায়।
রাণীনগরের মার্সেলো তরমুজ চাষি নিরাঞ্জন চন্দ্র প্রামানিক জানান, তিনি প্রতিবছর উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে নতুন নতুন ফসল চাষ করে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় ২৫ শতক জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই বিষমুক্ত মার্সেলো তরমুজ চাষ করেছেন। বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। কম পরিশ্রমে ভালো দাম পেয়ে খুশি তিনি।
তিনি বলেন, আমরা জানি তরমুজ চাষ হয়ে থাকে গ্রীষ্মকালে। কিন্তু আমাদের এ বরেন্দ্র জেলায় বর্ষাকালে তরমুজের চাষ করা দেখে প্রতিদিন তার তরমুজের ক্ষেত দেখতে ও পরামর্শ নিতে আসছেন নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তারা। তাদের পরামর্শসহ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।
তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা কামাল মাহমুদ শিপন বলেন, নিরাঞ্জন দাদার তরমুজের ক্ষেত দেখে খুবই ভালো লাগছে। তার সঙ্গে অনেক কথা হলো এই তরমুজের বিষয়ে। খেয়ে দেখলাম খুব সুস্বাদু ও মিষ্টি। আগামী বছর দুই বিঘা জমিতে এই তরমুজ চাষ করবো আশা করি।
উপজেলার কাশিমপুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের দম্পতি আলেক বেগ ও কুলসুম বানু বলেন, আগে আমরা বাজার থেকে তরমুজ কিনে আনতাম। এখন দেখি গ্রীষ্মকালের তরমুজ বর্ষাকালে ধরেছে থোকায় থোকায়। অবাক করা বিষয়। খুব সুন্দর লাগছে দেখে। দুটি তরমুজ কিনলাম ৫০ টাকা কেজি দরে। দুটি তরমুজের ওজন ৮ কেজি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষমুক্ত তরমুজ চাষ করতে মাচায় ও মালচিং পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল মার্সেলো জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে জেলার ৪টি উপজেলায়। ভেতরে গাঢ় লাল রঙের এ তরমুজের স্বাদ খুব ভালো। কম খরচের পাশাপাশি বর্ষাকালে এই তরমুজ চাষ হওয়ায় কৃষকরা বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাই কৃষকরা বর্ষাকালীন তরমুজ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তাদের আরও উৎসাহ দিতে আমরা কাজ করছি। তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ। সূত্র: বাসস
ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে দুদিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলিতে দেশীয় পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ১০ টাকা করে। সরবরাহের এমন ধারা অব্যাহত থাকলে ও ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ বাড়লে দাম আরো কমবে বলে দাবি বিক্রেতাদের। এদিকে পেঁয়াজের দাম কমায় খুশি নিম্ন আয়ের মানুষ।
সরেজমিন হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতিটি দোকানেই আগের তুলনায় দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। সেই সঙ্গে দাম পূর্বের তুলনায় কমতির দিকে রয়েছে। দুদিন পূর্বে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে আগের তুলনায় ক্রেতা সমাগম বেশি, এছাড়া ক্রেতারা পরিমাণে বেশিও কিনছেন।
হিলি বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা হায়দায় আলী বলেন, গত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে। ৫০ টাকা কেজির পেঁয়াজ দাম বাড়তে বাড়তে ৭৫ টাকা কেজিতে উঠে যায়। পেঁয়াজ খুবই জরুরি নিত্যপ্রয়োজনীয় হওয়ায় বাধ্য হয়ে এক কেজির জায়গায় হাফ কেজি কিনছিলাম। তবে দুদিন ধরে পেঁয়াজের দাম কিছুটা নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে, বর্তমানে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় নেমেছে। হিলি বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আবুল হাসনাত বলেন, বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ থাকায় বেশ কিছুদিন ধরেই দাম স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু বর্তমানে মৌসুম শেষের দিকে হওয়ায় বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কমতে শুরু করেছে। এতে মোকামে প্রতিদিনই পেঁয়াজের দাম বাড়ছিল। আর তাই বাজারেও পণ্যটির দাম বাড়ছিল। দাম নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিতে শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার সোনা মসজিদ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। রোববার থেকে হিলিসহ দেশের অন্যান্য বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হবে। এমন খবরে মোকামে যারা দেশীয় পেয়াজ মজুদ করছিল তারা সেসব পেঁয়াজ বাজারে ছাড়তে শুরু করেছে। এতে সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। দু'দিন আগেও যেখানে মোকামে প্রতি মণ পেঁয়াজ আমাদের কিনতে হয়েছিল ৩ হাজার ২শ টাকা সেটি এখন কমে ২ হাজার ২শ টাকা হয়েছে। আমদানির খবরেই পেঁয়াজের দাম মণপ্রতি ১ হাজার টাকা করে। কমে গেছে। কম দামে কিনতে পারায় আমরাও এখন কম দামে বাজারে বিক্রি করতে পারছি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দিনাজপুরের সহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন বলেন, কেউ যাতে কোনো পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে দাম বাড়াতে না পারেন সেজন্য আমরা নিয়মিতভাবে বাজারগুলোয় অভিযান পরিচালনা করছি। তারা কী দামে পণ্য কিনছেন কী দামে বিক্রি করছেন সে সম্পর্কিত তথ্য যাচাইবাছাই করছি। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আর্থিক জরিমানা করা হচ্ছে।
দেশে প্রতিদিন প্রায় ছয় কোটি ডিম উৎপাদন হলেও তা দিয়ে চাহিদা পূরণ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
পুষ্টি নিরাপত্তা প্রসঙ্গে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমানে দেশে মাথাপিছু গড় মাংস খেতে পারে মাত্র ২০০ গ্রাম। এখনো বহু পরিবার আছে যারা সপ্তাহে বা মাসে একদিন মাংস খায়।”
গতকাল শনিবার সকালে ঢাকা সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুলে নবনির্মিত ছয় তলা একাডেমিক ভবনের উদ্বোধন ও এসএসসি-২০২৫ সালের কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে
বাংলাদেশ তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছে। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম আমাদের পুষ্টির উৎস। তাই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি পুষ্টির দিকটিও বিবেচনায় রাখতে হবে।'
তিনি বলেন, ‘চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বহু তরুণ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ শহীদ হয়েছেন। অনেকে হাত-পা-চোখ হারিয়ে আজীবন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তাদের ত্যাগকে স্মরণ রেখে এমন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে মানুষের অধিকার কখনো ক্ষুণ্ণ হবে না।'
তিনি বলেন, “বেগম রোকেয়া মুসলিম মেয়েদের জন্য স্বাধীন পরিবেশ দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন, সেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালিত হতো। কেবল বই পড়া দিয়ে সবকিছু জানা সম্ভব নয়, কারণ ইতিহাস বারবার বিকৃত হয়েছে। তাই শিক্ষকদের দায়িত্ব হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষা দিয়ে দেশ ও জাতি সম্পর্কে সচেতন করে তোলা।”
নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, 'স্কুলের ভেতরে ও বাইরে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব নিতে হবে। ইভটিজিংয়ের কারণে মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে—নতুন বাংলাদেশে এটা হতে দেওয়া যাবে না।
পরিবেশ সুরক্ষায় শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'সপ্তাহে অন্তত একদিন স্কুল ও এলাকায় পরিবেশ রক্ষায় কার্যক্রম চালাতে হবে। পাশাপাশি পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে হবে। কারণ এগুলো মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।'
নারী শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'নারী নির্যাতন আইন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে শিক্ষক, অভিভাবক ও সমাজকে একসঙ্গে সচেতন হতে হবে।
মন্তব্য