অন্যের কথায় প্রভাবিত হয়ে শেয়ার বিক্রি না কারার পরামর্শ দিয়েছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বলেছেন ‘ভয়ের কোনো কারণ নেই। সামনে আরও ভালো হবে বাজার।’
এখনই শেয়ার বিক্রি করতে হবে এমন মানসিকতা পরিহারের কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হলে চলবে না। এতে করে লাভবান হবে অন্যরা।
গত বছরের ১৭ মে বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর করোনার মধ্যে ঝিমিয়ে পড়া বাজার চাঙা করতে বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ নেয়ায় সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশংসিত হন তিনি।
এ ছাড়া বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি, পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের পরিকল্পনা এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে প্রবাসীদের আকৃষ্ট করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
‘মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে’ পুঁজিবাজারের প্রাণ হিসেবে অভিহিত করে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, এই ফান্ড শক্তিশালী হলে পুঁজিবাজারের চেহারা পাল্টে যাবে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ নিরাপদ করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। করোনা মহামারির মধ্যেও পুঁজিবাজার নিয়ে আশাবাদী তিনি।
নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় পুঁজিবাজারের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
বিভিন্ন কোম্পানির কাছে ২১ হাজার কোটি টাকার অবণ্টিত লভ্যাংশ নিয়ে তহবিল গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ তহবিলের অগ্রগতি সম্পর্কে কিছু বলুন।
বিষয়টি নিয়ে জরিপ হয়েছে। এখন সবার বক্তব্য নিয়ে চলতি মাসের মধ্যে নীতিমালা চূড়ান্ত হবে বলে আশা করছি। লভ্যাংশগুলো বিভিন্ন কোম্পানির কাছে এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে। তহবিলটি আইসিবির মাধ্যমে ব্যবহার হবে।
তহবিল গঠন হলে বিনিয়োগকারীরা কী ধরনের সুবিধা পাবেন?
বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেছেন, লভ্যাংশ ঠিকমতো পাচ্ছেন না। আমরা দেখলাম, কোম্পানির পক্ষ থেকে যে প্রক্রিয়ায় লভ্যাংশের চেক বা দলিল পাঠানো হয়, তা অনেক সময় পোস্ট অফিসের অবহেলার কারণে ঠিকমতো বিরতণ করা হয় না। আধুনিক প্রযুক্তির ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে সব লভ্যাংশ পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। তারপরও অভিযোগ আসছে।
এখন আমরা যেটা করব, টাকাগুলো আমাদের হেফাজতে নিয়ে নেব। লভ্যাংশের দাবিদার বা প্রাপকের উত্তরাধিকার যখনই লভ্যাংশ পাওয়ার জন্য আবেদন করবেন, তাৎক্ষণিকভাবে তা দেয়া হবে। এটা আমাদের হাতে থাকলে সহজে তদারকি করতে পারব।
কোম্পানির অবণ্টিত লভ্যাংশ কোম্পানির কাছে তিন বছর থাকবে। লভ্যাংশের টাকা কোম্পানিগুলো বণ্টন না করে কিছু কিছু কোম্পানি তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করছে। এতে বিনিয়োগকারীরা টাকা পায় না, বরং তা অপব্যবহার হয়। সে জন্য তিন বছর পর আমাদের জিম্মায় নিয়ে এসে এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
সুকুক বন্ড নিয়ে কাজ করছে কমিশন। পুঁজিবাজারের জন্য এ বন্ড কতটা কার্যকর হবে?
আমাদের দেশের যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, তা ইক্যুইটিনির্ভর অর্থনীতির মাধ্যমে খুব বেশি সহায়ক হবে না। ইক্যুইটি থেকে যে পরিমাণ টাকা অর্থনীতিতে পাওয়া যায়, সেটা পর্যাপ্ত নয়।
ফলে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আরও গতিশীল করতে হলে বন্ডে ব্যবহার লাগবেই। উন্নত বিশ্বে এভাবে এগোচ্ছে। সে জন্য আমরাও বন্ড মার্কেট উন্নয়নে জোর দিয়েছি।
বন্ডের সঙ্গে আরেকটি মার্কেট রয়েছে। সেটি হলো ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক মার্কেট। এখানে ট্রিলিয়ন ডলার পড়ে আছে। তারা যেহেতু শরিয়াহভিত্তিক জায়গা ছাড়া বিনিয়োগ করতে পারে না, সে জন্য ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক সুকুক বন্ডে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।
অল্প সময়ে দুটি প্রকল্প এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। একটি সরকারি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রকল্প। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪ হাজার কোটি টাকা ওঠাতে গিয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা চলে এসেছে। পরবর্তী সময়ে যে প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে, তা হবে বেসরকরি খাতের। আশা করা যাচ্ছে, ভালো সাড়া পাওয়া যাবে।
বন্ড মার্কেট শক্তিশালী হলে এখন ব্যাংকের ঋণের ওপর যে নির্ভরশীলতা, তা থেকে উদ্যোক্তারা বের হয়ে আসতে পারবে। ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়ে অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। এসব সমস্যার সমাধান সহজ হবে।
দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানিগুলোর বোর্ড পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে কোম্পানিগুলো চালু হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানির ঠিকভাবে চলা উচিত। কিন্ত তা হচ্ছে না। জনগণ তাদের কষ্টের টাকা কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করে, কিন্তু সে অনুযায়ী রিটার্ন পায় না।
কোনো কোম্পানি ভালোভাবে চলতে না পারলে বোর্ড পরিবর্তন করে নতুন ম্যানেজমেন্ট দিয়ে পরিচালনের চেষ্টা করা হবে। তারপরও যদি অবস্থার উন্নতি না হয়, তখন এক্সিট পলিসি প্রয়োগ করা হবে, যাতে বিনিয়োগকারী টাকা ফেরত পান।
আমরা জেড এবং ওটিসিতে চলে যাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে যেগুলো ভালো পাচ্ছি তা নিয়ে কাজ করছি।
মাঝারি মানের বা কপোরেট গভর্ন্যান্সের বিষয়ে কিছুটা গাফিলতি আছে, অনেকগুলোর রয়েছে পারিবারিক সমস্যা, আবার কিছু কোম্পানির উদ্যোক্তা মারা গেছে- এমন সব কোম্পানির বোর্ড পুনর্গঠন করা হচ্ছে, যাতে জনগণের বিনিয়োগ নিরাপদ হয়। আর সেটা করেও যদি কোম্পানির উন্নতি না হয়, তাহলে জনগণের যতটা সম্ভব টাকা ফেরত দেয়ার চেষ্টা করা হবে।
পর্ষদ পুনর্গঠনের খবরে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিপূর্ণ, দুর্বল ও ওটিসির কোম্পানির প্রতি আগ্রহী হতে দেখা গেছে। তাদের জন্য পরামর্শ কী?
বোর্ড পুনর্গঠন হওয়ার পর কোনোটিরই ফলাফল আসেনি এখনও। কাজ চলছে। দুই-একটিতে খুব ভালো কাজও হচ্ছে। এসব কোম্পানির অনেকগুলো ওটিসিতে আছে, যেখানে টাকা খাটিয়ে বিপদে আছে বিনিয়োগকারীরা।
জেড ক্যাটাগরিতে কিছু শেয়ারের দর দেড় টাকা, দুই টাকা, তিন-চার টাকায় নেমে এসেছে। যখনই কোনো কোম্পানির পুনর্গঠনের খবর আসছে, তখনই বিনিয়োগকারীরা কম দামে শেয়ার কেনার চেষ্টা করছে। তাদের আশা, হয়তো শেয়ারের দর আট-দশ টাকায় চলে যাবে। এখন যদি কেউ দুই-তিন টাকা দামে কেনে, পরবর্তী সময়ে ৫ থেকে ৭ টাকায় বেচতে পারে, তাহলে শতভাগ মুনাফা।
লোভে পড়ে অনেকেই এসব কোম্পানির শেয়ার কিনে রাখার চেষ্টা করছে। বোর্ড পুনর্গঠন করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে হয়তো দু-একটির সুখবর শিগগিরই দিতে পারব।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বর্তমান পুঁজিবাজারে ততটা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে না বলে অভিযোগ আছে। আপনার বক্তব্য কী?
এ অভিযোগ ঠিক না। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদেরও বিও অ্যাকাউন্ট আছে। আমরা ধারণা করেছিলাম, তারা বিনিয়োগ করে না। এখন দেখছি গত কয়েক দিনে করোনা ও গুজবের কারণে তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনা সংক্রমণ থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এ জন্য আমরা খুবই কষ্ট করছি বাজার নিয়ে। কারণ, পুঁজিবাজার খুবই সংবেদনশীল জায়গা। এখানে সামান্য ভুলের জন্য অনেক বড় ক্ষতি হয়। এত বড় ধাক্কা, এর বিশাল প্রভাব আছে। তারপরও আমাদের সার্ভেইল্যান্স ইউনিট সব সময়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে।
এখনও ছোট বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে শেয়ার বেশি বিক্রি করছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সেই শেয়ার কিনছে। এ জন্য ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হলে চলবে না। এতে লাভবান হবে অন্যরা।
শেয়ার দর কমে যাওয়ায় ফোর্স সেলের একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। ফোর্স সেল বন্ধে ঋণ-অনুপাত বাড়ানো হয়েছে, যাতে শেয়ার কেনার জন্য আরও কিছু ফান্ড আসে বিনিয়োগকারীদের কাছে।
বিলিয়ন ডলারের বন্ড আসছে সুইজারল্যান্ডের একটি ব্যাংকের মাধ্যমে। এর অগ্রগতি সম্পর্কে কিছু বলুন।
এটা আইসিবির জন্য করা হয়েছে। এ প্রস্তাব বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পর্যায়ে আছে। অনুমোদন পাওয়ার পরই ফান্ড আসা শুরু হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বিএসইসির সমন্বয়হীনতার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। সেখানে এক্সপোজার লিমিট নিয়ে একটি নির্দেশনার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি এখনও পরিষ্কার করেনি। আপনাদের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ আছে কি?
বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আমরা বলেছি, এক্সপোজার-লিমিট শেয়ার ক্রয়েমূল্যের ভিত্তিতে বিবেচনা করার জন্য। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছে। তারা এটা ঠিক করে দেবে। সমন্বয়হীনতা এখন অনেক কমে গেছে। গত এক মাস ধরে দুপক্ষ ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
মার্জিন ঋণের সুদহার ১২ শতাংশ করার পর লেনদেন অনেকটাই কমে এসেছে। অনেক ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি ঋণ নিয়েছে। এটি সমন্বয়ে যে সময় দেয়া হয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে অনেকে্ই মার্জিন ঋণ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আপনাদের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?
এ বিষয়ে মার্চেন্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। তারা যেহেতু ব্যাংকের পাশাপাশি অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও ঋণ নেয়, তাই সব সময় ৯ শতাংশে ঋণ পায় না। মার্চেন্ট ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরও ছয় মাস দেয়া হবে বলে চিন্তাভাবনা চলছে।
লকডাউন আবার শুরু হয়েছে। লেনদেনও দুই ঘণ্টা করা হয়েছে। এ সময়টিতে বিনিয়োগকারীরা কোন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে লেনদেন করবে। আর পুঁজিবাজারে এমনটাও আলোচনা আছে সূচকের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কী?
আমরা তো মার্কেট পিই রেশিও দেখেই বিনিয়োগ করি। পিই রেশিও এখন বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত। যারা সত্যিকার অর্থে বিনিয়োগকারী, তারা পিই রেশিও দেখে, কোম্পানি দেখে ব্যাপক বিনিয়োগ করতে পারে।
বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশন (আইওএসসিও) সদস্য। সেখানে আমাদের ক্যাটাগরি ‘এ’।
আমরা যদি মার্কেটকে প্রভাবিত করি, কারসাজি করি তাহলে আইওএসসিওর সদস্য হিসেবে আমাদের অবস্থান খারাপ হবে।
ফলে একটি ফ্লোর প্রাইস থাকার পর আরেকটা ফ্লোর প্রাইস ম্যানিপুলেট করা আমাদের জন্য ভয়াবহ হবে। সে জন্য আমরা এখন বাজারকে ফ্রি ফ্লোর দিতে চাই। মার্কেটই মার্কেটের অবস্থান নিয়ে যাবে।
বিনিয়োগকারীদের বোঝতে হবে, আতঙ্কে যখন শেয়ার বিক্রি করা হয়, তখন কেউ না কেউ সেটা কেনে। আমার শেয়ারের যেহেতু ক্রেতা আছে, সেহেতু আমি কেন লোকসানে শেয়ার বিক্রি করব? আমাদের পুঁজিবাজারে শেয়ার কিনে কেউ লসে শেয়ার বিক্রির করার কথা না।
অন্যের কথায় কিংবা একটি বিশেষ অবস্থায় কেন এখনই শেয়ার বিক্রি করতে হবে? আজকেই বিক্রি করতে হবে এমন ধারণাই সূচক পতনের বড় একটি কারণ।
কষ্ট লাগে যখন শুনি, অনেক বিনিয়োগকারী ভয়ে শেয়ার বিক্রি করে লস করছে। এখানে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মার্কেট অনেক ভালো হবে।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগাকরীদের আস্থার জায়গাটিতে খুব বেশি শক্তিশালী অবস্থানে নেই। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী লভ্যাংশ দিতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে আপনাদের কোনো উদ্যোগ আছে কি?
এটা নিয়ে কাজ চলছে। আমরা মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইন্ডাস্ট্রিকে নিরাপদ করার জন্য কাজ করছি। মিউচ্যুয়াল ফান্ড হচ্ছে পুঁজিবাজারের প্রাণ। পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখার জন্য মিউচ্যুয়াল ফান্ড ভালো ভূমিকা রাখে।
গত কিছু দিন ধরে আমরা চেষ্টা করছি মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করার। বর্তমানে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর এনএভি দেখতে পাচ্ছি। তাদের ব্যবসার যে অবস্থা, তাতে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল থাকলে সবাই লাভবান হবে।
আমাদের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এখন জনগণ ডিভিডেন্ড আশা করে। মাথাপিছু আয় ৫ হাজার ৬ হাজার ডলার হয়ে গেলে অন্য রকম হবে। তখন হয়তো আমরা ওয়ার্থ মেক্সিমাইজেশনের দিকে যাব। এখন আমাদের প্রফিট মেক্সিমাইজেশনরে দিকে যেতে হচ্ছে।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোকে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে হবে। তাহলে আরও বিনিয়োগ হবে। তখন মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো বড় হবে। তাদের পুঁজিবাজারে অংশগ্রহণ বাড়বে।
আমরা এখানে স্বস্তির জায়গায় নেয়ার চেষ্টা করছি। কিছু মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মামলা মোকদ্দমা, এটা সেটা ছিল, এগুলো শেষ করা হচ্ছে।
এখানে সুন্দর পরিবেশে কাজ করার প্রচেষ্টা চলছে। তাদের ব্যবসার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য কাজ করা হবে। শুধু জরিমানা ও বিচার করা, শাস্তি দেয়া- এ রকম দায়িত্ব পালন করতে চাই না।
মিউচ্যুয়াল ফান্ড যখন ভালো হবে, তখন পুঁজিবাজারের চেহারা পরিবর্তন হবে। এখানে তখন বিনিয়োগকারীরা নিজ উদ্যোগে বিনিয়োগ করবে।
আরও পড়ুন:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, এসব নির্বাচন নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই, ভালোভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছি। এজন্য আপনাদের (সাংবাদিক) সাহায্য ও সহযোগিতা দরকার।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে রাকসু ও চাকসু নির্বাচন-২০২৫ উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ক সভা শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি রাকসু ও চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজ তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা দেশের সবচেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, শুধু দেশেই না বিদেশেও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত । যারা ভোট দেবে তারাও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত।
তিনি বলেন, ‘তাদের অভিজ্ঞতা আজ শেয়ার করলাম। যেহেতু আমাদের একটা জাতীয় নির্বাচন আছে ফেব্রুয়ারিতে, এই নির্বাচনগুলো দেখে আমাদের কিছু অভিজ্ঞতা হচ্ছে। সেটা আমরা জাতীয় নির্বাচনে কীভাবে প্রয়োগ করতে পারবো সেজন্য আজকে বসেছিলাম।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তারা আজ ভালো ভালো সাজেশন দিয়ে গেছে। সেই সাজেশন আমরা ভবিষ্যতে কাজে লাগাবো। একইসঙ্গে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় তাদেরও উপকার হয়েছে। যেহেতু দুইটা নির্বাচন হয়েছে। সেখানে নির্বাচনে কী করতে হবে, ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি থাকলে সেগুলো কীভাবে সমাধান করা হবে, এসব নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সভায় তারা কোনো ধরনের শঙ্কার কথা জানায়নি।
আজকের সভায় কি ধরনের সাজেশন এসেছে-এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে তারা বলেছে- কতগুলো সেন্টার হওয়া দরকার, ভোট গণনা কীভাবে হবে, কালি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, এসব নিয়ে কথা হয়েছে। দ্রুত ফল ঘোষণার জন্যও কি ব্যবস্থা নেয়া যায়, আলোচনা হয়েছে। ভোটারদের ছবিযুক্ত আইডি কার্ড ও ভোটার তালিকা যেন স্বচ্ছ থাকে এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, রাকসু ও চাকসু নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ দুটি নির্বাচন থেকে অনেক কিছু শনাক্ত হয়েছে। এসব নির্বাচনে কোন বিষয়গুলো কাজ করেছে বা কোন বিষয়গুলো কাজ করেনি, তার একটি ধারণা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে আমরা এখানে এসেছি। আজকের সভায় ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এ দুটি নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে। ভালো নির্বাচন হবে বলে আশা করছি।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৪৭ তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি পেশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম।
বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ জবানবন্দি পেশ শেষ করেন নাহিদ। তিনি গতকাল জবানবন্দি পেশ শুরু করেন।
আজ বিকেলে তাকে জেরা করবেন এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
এ মামলায় প্রসিকিউসন পক্ষে আজ চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করেন। সেই সাথে অপর প্রসিকিউটররা শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এ মামলায় গ্রেফতার হয়ে পরে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
একপর্যায়ে এ মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্র্যাইব্যুনাল। পরবর্তীকালে এ মামলার ৩৬ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন রাজসাক্ষী পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এ মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, পরিবারে পুরুষের সঙ্গে নারী জেলেদেরও কার্ড থাকতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের দেওয়া জেলে কার্ডে পুরুষ জেলেদের নামই আসে, মাত্র ৪ শতাংশ সেখানে নারী। পরিবারে একজন চাকরি করলে তিনিই চাকরিজীবী হোন কিন্তু যারা মাছ ধরে তার পুরো পরিবার এ কাজে যুক্ত। এ প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ সময় নারীদের বেশি কাজ করতে হয়। তাই পুরুষ জেলেদের সঙ্গে নারীদেরও কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
উপদেষ্টা আজ বুধবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বেসরকারি গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস) আয়োজিত “টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় নীতি সংলাপ”-এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এ সেমিনার এসে দায়িত্ব বেড়ে গেছে। আমাদের জেলেদের বিশেষ করে নারী জেলেদের নিয়ে আরো বেশি কাজ করতে হবে। এখন পর্যন্ত নারীদেরকে কৃষকের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। আর নারী জেলেদের কথা তো বলাই বাহুল্য। অথচ নারী জেলেরা তার পরিবার পরিজনের জন্য নদীতে মাছ ধরে। স্বামীর অবর্তমানে সংসার চালায়।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, "এ পেশায় পুরো পরিবারকে নিয়ে কাজ করতে হয়। মান্তা সম্প্রদায়ের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনে খুব কষ্ট পেলাম।" জেলে সম্প্রদায়ের আইনগত সমস্যা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড় তুফানে অনেক জেলে মারা যায়, কেউ হারিয়ে যায়, সেসব পুরুষের হদিস না থাকায় ব্যাংকের টাকাও তুলতে পারে না তাদের স্ত্রীরা। তা ছাড়া নারীকে বিধবা ভাতাও দেওয়া যায় না। এসব আইনি জটিলতা দূর করতে হবে।
তিনি বলেন, "আমাদের আইনগুলো পুরুষদের কথা চিন্তা করে করা। সেখানে নারীদের স্থান খুব কম। আর আগের মৎস্য আইনও একই ধরনের। তাই মৎস্য আইনের খসড়া ২০২৫ -এ আমরা এসকল সমস্যার সমাধানে দৃষ্টি দিয়েছি। আর নারীদের স্বীকৃতি দিলে হলে সংখ্যার স্বীকৃতি দিতে হবে। অথচ আমাদের তালিকায় নারীজেলের সংখ্যা খুবই নগন্য, মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু সমাজে অসংখ্য নারী জেলে রয়েছে। এসব ঘাটতি পূরণে আমরা কাজ করছি। "
অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আগের তালিকা অনুসন্ধান করে দেখেছি অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়ে গেছে। এখন সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। আমরা চাই যেন প্রকৃত জেলেরা কার্ড পেতে পারে। সেইসঙ্গে যে পরিবারে পুরুষ জেলের কার্ড থাকবে সেখানে নারীদেরও থাকতে হবে।
কাঁকড়া ও ঝিনুক মানুষের খাদ্যের অংশ এটিকে বন অধিদপ্তরের সংজ্ঞা থেকে বের করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তা ছাড়া যারা কীটনাশক ব্যবহার করে মাছ ধরছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জলমহাল ইজারা সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, জলমহালের কাছের মানুষের নামে অন্যরা জলমহাল ইজারা নেয়। এক্ষেত্রে জৈবভিত্তিক ইজারা দিতে হবে, অর্থাৎ এ পেশার সঙ্গে জড়িত জেলেদের দিতে হবে। বাওড়ে ইজারা জেলেদের দেওয়ার কথা নিশ্চিত হচ্ছে, তবে হাওর নিয়েও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা চলছে। যাতে প্রকৃত জেলেরা তা পায়।
নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা সময়ে যতজনকে ভিজিএফ কার্ডের আওতায় সহযোগিতা দেওয়া দরকার তা দেওয়া সম্ভব হয় না। এর পরিমাণ ও সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে চাই।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, নারী শ্রমিকরা পুরুষের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম মজুরি পায়। তা ছাড়া আমাদের জলমহাল ইজারা রাজস্বভিত্তিক দেওয়া হয়। এটি বাতিল করে জাল যার জলা তার নীতিতে নিতে হবে। জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ড নিশ্চিত করে জেলে কার্ড দেওয়া হবে। বর্তমানে আমাদের নিবন্ধনে ১৭ লাখ জেলের মধ্যে ৪৪ হাজার রয়েছে নারী। এ সংখ্যা আমরা বৃদ্ধি করতে হবে।
এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিএনআরএস এর পরিচালক মি. এম. আনিসুল ইসলাম। এমপাওয়ারিং উমেন থ্রু সিভিল সোসাইটি অ্যাক্টর্স ইন বাংলাদেশ (ইডাব্লিউসিএসএ) প্রকল্পের পরিচিতি উপস্থাপন করেন অক্সফাম বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর শাহজাদী বেগম।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএনআরএস-এর পরিচালক ড. এম. আমিনুল ইসলাম এবং জাগো নারী টিম লিডার রিসার্চ আহমেদ আবিদুর রেজা খান।
সংলাপ শেষে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নারী মৎস্যজীবীদের ক্ষমতায়ন ও টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা জোরদারে বিভিন্ন সুপারিশ উপস্থাপিত হয়।
সংলাপে সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, সিভিল সোসাইটি, শিক্ষাবিদ এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যসম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, গত বছরের চেয়ে এবার পূজা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে করতে সরকার বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, পূজা উপলক্ষে হামলার কোনো হুমকি নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আজ বুধবার রমনা কালী মন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এ সময় রমনা কালী মন্দির কমিটির সভাপতি অপর্ণা রায়সহ কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীর বলেন, পূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠানের জন্য ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করা হবে। সে কারণে একটি নতুন অ্যাপ খোলা হয়েছে। কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি পূজা উদযাপন কমিটিকে নজরদারি করার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সে কারণে ধর্মীয় নিয়ম মেনে সবাই এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিগত সরকারের সময় ২ কোটি টাকা পূজা উপলক্ষে বরাদ্দ দেওয়া হতো। বর্তমান সরকার তা থেকে বাড়িয়ে গত বছর এ লক্ষ্যে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল; এবার সেটি থেকে বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। পূজা মণ্ডপের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো সহায়তা করা হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলম বলেছেন, যেসব শিশু জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছে, তাদের লেখা ও স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে 'নবারুণ' পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করতে হবে। এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করতে উপদেষ্টা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। বুধবার (১৭ই সেপ্টেম্বর) ঢাকার তথ্য ভবনে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর প্রকাশিত কিশোর মাসিক পত্রিক 'নবারুণ'-এর লেখকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
'নবারুণ' পত্রিকা নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এই পত্রিকায় শিশু-কিশোরদের আঁকা ছবি ও লেখা গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করতে হবে। 'নবারুণ' পত্রিকায় শিশু-কিশোরদের লেখা ও ছবি বেশি পরিমাণে প্রকাশিত হলে তারা অনুপ্রাণিত হবে। এতে তাদের সৃজনশীলতা বিকশিত হবে।
মাহফুজ আলম বলেন, "যে সরকারই দায়িত্বে আসুক না কেন, শিশু-কিশোরদের ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকা উচিত।" তিনি ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান-সহ আর্থসামাজিক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখালিখি করার জন্য লেখকদের প্রতি অনুরোধ জানান।
'নবারুণ' পত্রিকা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, প্রকাশনার শুরু থেকে (১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ) এ পর্যন্ত 'নবারুণ' পত্রিকার সকল সংখ্যা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে হবে এবং তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। এতে পাঠক অনলাইনে পুরাতন সংখ্যা পড়ে সমৃদ্ধ হতে পারবেন।
'নবারুণ' পত্রিকার কলেবর বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, 'নবারুণ' পত্রিকায় নতুন লেখকদের জন্য আলাদা বিভাগ চালু করা উচিত। পত্রিকার প্রতি সংখ্যায় কমপক্ষে পাঁচ জন নতুন লেখকের লেখা প্রকাশের জন্য তিনি কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন। তিনি শিশু-সাহিত্যিকদের নিয়ে দিনব্যাপী একটি কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, যেসব লেখক ৪০-৫০ বছর ধরে লিখছেন, তাঁদের লেখা 'নবারুণ' পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে হবে। এতে পত্রিকা আরও সমৃদ্ধ হবে। তিনি 'নবারুণ' পত্রিকার লেখক-সম্মানি বাড়াতে কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেন।
সভায় 'নবারুণ' পত্রিকার লেখকরা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। তাঁরা 'নবারুণ'-কে একটি অসাধারণ ও সাহসী পত্রিকা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাঁরা পত্রিকাটির মানোন্নয়নে বেশ কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদা বেগম। সভার শুরুতে 'নবারুণ' পত্রিকা বিষয়ে তথ্যচিত্র উপস্থাপনা করেন পত্রিকার সম্পাদক ইসরাত জাহান। মতবিনিময় সভাটি সঞ্চালন করেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সিনিয়র সম্পাদক শাহিদা সুলতানা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আজ বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য (এমইপি) মুনির সাতোরির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রতিনিধিদলকে জানান, ‘আমরা ইতোমধ্যেই নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেছি। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ফেব্রুয়ারির শুরুতে, রমজানের ঠিক আগে।’
তিনি উল্লেখ করেন, জনসাধারণ বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে নির্বাচনী উৎসাহ বাড়ছে, কারণ দীর্ঘদিন পর—কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দশকেরও বেশি সময় পর—ছাত্র সংসদ নির্বাচন আবার শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর।’ তিনি যোগ করেন, কিছু শক্তি এখনো নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে, তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, তরুণ ভোটাররা এবার রেকর্ড সংখ্যায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে, কারণ ১৫ বছরেরও বেশি সময় পর অনেকেই প্রথমবারের মতো ভোট দেবে।
তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য এক নতুন সূচনা বয়ে আনবে। এটি আমাদের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে—জাতির জন্য এক নতুন যাত্রা।’
এক ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা ও ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অব্যাহত সমর্থন এবং চলমান রোহিঙ্গা মানবিক সংকট নিয়ে মতবিনিময় করেন।
আগামী নির্বাচন বাংলাদেশে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা। একজন আইনপ্রণেতা প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সরকারের গত ১৪ মাসের ‘অসাধারণ’ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
একজন ডাচ আইনপ্রণেতা মন্তব্য করেন, বাংলাদেশ কতিপয় দেশের মধ্যে অন্যতম, যেখানে ‘ঘটনাগুলো সঠিক পথে এগোচ্ছে।’
প্রধান উপদেষ্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য বাড়তি তহবিল প্রদানের আহ্বান জানান।
বিশেষ করে সম্প্রতি অর্থাভাবের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্কুলগুলো পুনরায় চালু করতে সহায়তা প্রদানের অনুরোধ জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ শ্রম সংস্কারগুলো তুলে ধরে বলেন, এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে ওয়েস্টিন পারনাস হোটেলে আজ থেকে ০৩(তিন) দিনব্যাপী (১৬-১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) গ্লোবাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার কো-অপারেশন কনফারেন্স (জিআইসিসি)-২০২৫ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ আবদুর রউফ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন। সম্মেলনে সেতু সচিব সেতু বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের উপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। সেতু সচিব প্রেজেন্টেশনে উল্লেখ করেন সেতু বিভাগের কয়েকটি প্রকল্পে কোরিয়ান ইডিসিএফ/ইডিপিএফ (EDCF/EDPF) অর্থানয়ের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের পরিবহন খাতে দক্ষিণ কোরিয়ার কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
জিআইসিসি-২০২৫ সম্মেলনের লক্ষ্য কোরিয়ান নির্মাণ সংস্থাগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করা এবং বিভিন্ন দেশের প্রকল্প বাস্থবায়নকারীদের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন করা। এটি মূলত একটি বিজনেস-টু-বিজনেস প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যেখানে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো বিদেশী সরকার, প্রজেক্ট ডেভেলপার এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে। সম্মেলনে প্রায় ৫০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে ৩০টি দেশের মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এবং কোরিয়ান শীর্ষস্থানীয় নির্মাণ সংস্থাগুলির কর্মকর্তারা রয়েছেন।
এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো: বিভিন্ন দেশের আসন্ন অবকাঠামো প্রজেক্ট সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদান, বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, নতুন প্রজেক্টে অংশগ্রহণের জন্য চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং কোরিয়ান উন্নত প্রযুক্তি যেমন স্মার্ট সিটি, হাই-স্পিড রেল, এবং স্মার্ট পোর্ট সিস্টেমের সাথে পরিচিতি করা।
এছাড়াও সম্মেলনের বাকী অংশে বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্যানেল আলোচনা, বিভিন্ন দেশের প্রজেক্ট ব্রিফিং, ব্যক্তিগত বিজনেস মিটিং, কোরিয়ান শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো তাদের নতুন প্রযুক্তি প্রদর্শন করবে।
মন্তব্য