অন্যের কথায় প্রভাবিত হয়ে শেয়ার বিক্রি না কারার পরামর্শ দিয়েছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বলেছেন ‘ভয়ের কোনো কারণ নেই। সামনে আরও ভালো হবে বাজার।’
এখনই শেয়ার বিক্রি করতে হবে এমন মানসিকতা পরিহারের কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হলে চলবে না। এতে করে লাভবান হবে অন্যরা।
গত বছরের ১৭ মে বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর করোনার মধ্যে ঝিমিয়ে পড়া বাজার চাঙা করতে বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ নেয়ায় সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশংসিত হন তিনি।
এ ছাড়া বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি, পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের পরিকল্পনা এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে প্রবাসীদের আকৃষ্ট করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
‘মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে’ পুঁজিবাজারের প্রাণ হিসেবে অভিহিত করে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, এই ফান্ড শক্তিশালী হলে পুঁজিবাজারের চেহারা পাল্টে যাবে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ নিরাপদ করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। করোনা মহামারির মধ্যেও পুঁজিবাজার নিয়ে আশাবাদী তিনি।
নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় পুঁজিবাজারের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
বিভিন্ন কোম্পানির কাছে ২১ হাজার কোটি টাকার অবণ্টিত লভ্যাংশ নিয়ে তহবিল গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ তহবিলের অগ্রগতি সম্পর্কে কিছু বলুন।
বিষয়টি নিয়ে জরিপ হয়েছে। এখন সবার বক্তব্য নিয়ে চলতি মাসের মধ্যে নীতিমালা চূড়ান্ত হবে বলে আশা করছি। লভ্যাংশগুলো বিভিন্ন কোম্পানির কাছে এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে। তহবিলটি আইসিবির মাধ্যমে ব্যবহার হবে।
তহবিল গঠন হলে বিনিয়োগকারীরা কী ধরনের সুবিধা পাবেন?
বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেছেন, লভ্যাংশ ঠিকমতো পাচ্ছেন না। আমরা দেখলাম, কোম্পানির পক্ষ থেকে যে প্রক্রিয়ায় লভ্যাংশের চেক বা দলিল পাঠানো হয়, তা অনেক সময় পোস্ট অফিসের অবহেলার কারণে ঠিকমতো বিরতণ করা হয় না। আধুনিক প্রযুক্তির ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে সব লভ্যাংশ পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। তারপরও অভিযোগ আসছে।
এখন আমরা যেটা করব, টাকাগুলো আমাদের হেফাজতে নিয়ে নেব। লভ্যাংশের দাবিদার বা প্রাপকের উত্তরাধিকার যখনই লভ্যাংশ পাওয়ার জন্য আবেদন করবেন, তাৎক্ষণিকভাবে তা দেয়া হবে। এটা আমাদের হাতে থাকলে সহজে তদারকি করতে পারব।
কোম্পানির অবণ্টিত লভ্যাংশ কোম্পানির কাছে তিন বছর থাকবে। লভ্যাংশের টাকা কোম্পানিগুলো বণ্টন না করে কিছু কিছু কোম্পানি তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করছে। এতে বিনিয়োগকারীরা টাকা পায় না, বরং তা অপব্যবহার হয়। সে জন্য তিন বছর পর আমাদের জিম্মায় নিয়ে এসে এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
সুকুক বন্ড নিয়ে কাজ করছে কমিশন। পুঁজিবাজারের জন্য এ বন্ড কতটা কার্যকর হবে?
আমাদের দেশের যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, তা ইক্যুইটিনির্ভর অর্থনীতির মাধ্যমে খুব বেশি সহায়ক হবে না। ইক্যুইটি থেকে যে পরিমাণ টাকা অর্থনীতিতে পাওয়া যায়, সেটা পর্যাপ্ত নয়।
ফলে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আরও গতিশীল করতে হলে বন্ডে ব্যবহার লাগবেই। উন্নত বিশ্বে এভাবে এগোচ্ছে। সে জন্য আমরাও বন্ড মার্কেট উন্নয়নে জোর দিয়েছি।
বন্ডের সঙ্গে আরেকটি মার্কেট রয়েছে। সেটি হলো ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক মার্কেট। এখানে ট্রিলিয়ন ডলার পড়ে আছে। তারা যেহেতু শরিয়াহভিত্তিক জায়গা ছাড়া বিনিয়োগ করতে পারে না, সে জন্য ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক সুকুক বন্ডে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।
অল্প সময়ে দুটি প্রকল্প এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। একটি সরকারি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রকল্প। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪ হাজার কোটি টাকা ওঠাতে গিয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা চলে এসেছে। পরবর্তী সময়ে যে প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে, তা হবে বেসরকরি খাতের। আশা করা যাচ্ছে, ভালো সাড়া পাওয়া যাবে।
বন্ড মার্কেট শক্তিশালী হলে এখন ব্যাংকের ঋণের ওপর যে নির্ভরশীলতা, তা থেকে উদ্যোক্তারা বের হয়ে আসতে পারবে। ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়ে অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। এসব সমস্যার সমাধান সহজ হবে।
দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানিগুলোর বোর্ড পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে কোম্পানিগুলো চালু হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানির ঠিকভাবে চলা উচিত। কিন্ত তা হচ্ছে না। জনগণ তাদের কষ্টের টাকা কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করে, কিন্তু সে অনুযায়ী রিটার্ন পায় না।
কোনো কোম্পানি ভালোভাবে চলতে না পারলে বোর্ড পরিবর্তন করে নতুন ম্যানেজমেন্ট দিয়ে পরিচালনের চেষ্টা করা হবে। তারপরও যদি অবস্থার উন্নতি না হয়, তখন এক্সিট পলিসি প্রয়োগ করা হবে, যাতে বিনিয়োগকারী টাকা ফেরত পান।
আমরা জেড এবং ওটিসিতে চলে যাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে যেগুলো ভালো পাচ্ছি তা নিয়ে কাজ করছি।
মাঝারি মানের বা কপোরেট গভর্ন্যান্সের বিষয়ে কিছুটা গাফিলতি আছে, অনেকগুলোর রয়েছে পারিবারিক সমস্যা, আবার কিছু কোম্পানির উদ্যোক্তা মারা গেছে- এমন সব কোম্পানির বোর্ড পুনর্গঠন করা হচ্ছে, যাতে জনগণের বিনিয়োগ নিরাপদ হয়। আর সেটা করেও যদি কোম্পানির উন্নতি না হয়, তাহলে জনগণের যতটা সম্ভব টাকা ফেরত দেয়ার চেষ্টা করা হবে।
পর্ষদ পুনর্গঠনের খবরে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিপূর্ণ, দুর্বল ও ওটিসির কোম্পানির প্রতি আগ্রহী হতে দেখা গেছে। তাদের জন্য পরামর্শ কী?
বোর্ড পুনর্গঠন হওয়ার পর কোনোটিরই ফলাফল আসেনি এখনও। কাজ চলছে। দুই-একটিতে খুব ভালো কাজও হচ্ছে। এসব কোম্পানির অনেকগুলো ওটিসিতে আছে, যেখানে টাকা খাটিয়ে বিপদে আছে বিনিয়োগকারীরা।
জেড ক্যাটাগরিতে কিছু শেয়ারের দর দেড় টাকা, দুই টাকা, তিন-চার টাকায় নেমে এসেছে। যখনই কোনো কোম্পানির পুনর্গঠনের খবর আসছে, তখনই বিনিয়োগকারীরা কম দামে শেয়ার কেনার চেষ্টা করছে। তাদের আশা, হয়তো শেয়ারের দর আট-দশ টাকায় চলে যাবে। এখন যদি কেউ দুই-তিন টাকা দামে কেনে, পরবর্তী সময়ে ৫ থেকে ৭ টাকায় বেচতে পারে, তাহলে শতভাগ মুনাফা।
লোভে পড়ে অনেকেই এসব কোম্পানির শেয়ার কিনে রাখার চেষ্টা করছে। বোর্ড পুনর্গঠন করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে হয়তো দু-একটির সুখবর শিগগিরই দিতে পারব।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বর্তমান পুঁজিবাজারে ততটা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে না বলে অভিযোগ আছে। আপনার বক্তব্য কী?
এ অভিযোগ ঠিক না। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদেরও বিও অ্যাকাউন্ট আছে। আমরা ধারণা করেছিলাম, তারা বিনিয়োগ করে না। এখন দেখছি গত কয়েক দিনে করোনা ও গুজবের কারণে তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনা সংক্রমণ থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এ জন্য আমরা খুবই কষ্ট করছি বাজার নিয়ে। কারণ, পুঁজিবাজার খুবই সংবেদনশীল জায়গা। এখানে সামান্য ভুলের জন্য অনেক বড় ক্ষতি হয়। এত বড় ধাক্কা, এর বিশাল প্রভাব আছে। তারপরও আমাদের সার্ভেইল্যান্স ইউনিট সব সময়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে।
এখনও ছোট বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে শেয়ার বেশি বিক্রি করছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সেই শেয়ার কিনছে। এ জন্য ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হলে চলবে না। এতে লাভবান হবে অন্যরা।
শেয়ার দর কমে যাওয়ায় ফোর্স সেলের একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। ফোর্স সেল বন্ধে ঋণ-অনুপাত বাড়ানো হয়েছে, যাতে শেয়ার কেনার জন্য আরও কিছু ফান্ড আসে বিনিয়োগকারীদের কাছে।
বিলিয়ন ডলারের বন্ড আসছে সুইজারল্যান্ডের একটি ব্যাংকের মাধ্যমে। এর অগ্রগতি সম্পর্কে কিছু বলুন।
এটা আইসিবির জন্য করা হয়েছে। এ প্রস্তাব বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পর্যায়ে আছে। অনুমোদন পাওয়ার পরই ফান্ড আসা শুরু হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বিএসইসির সমন্বয়হীনতার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। সেখানে এক্সপোজার লিমিট নিয়ে একটি নির্দেশনার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি এখনও পরিষ্কার করেনি। আপনাদের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ আছে কি?
বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আমরা বলেছি, এক্সপোজার-লিমিট শেয়ার ক্রয়েমূল্যের ভিত্তিতে বিবেচনা করার জন্য। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছে। তারা এটা ঠিক করে দেবে। সমন্বয়হীনতা এখন অনেক কমে গেছে। গত এক মাস ধরে দুপক্ষ ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
মার্জিন ঋণের সুদহার ১২ শতাংশ করার পর লেনদেন অনেকটাই কমে এসেছে। অনেক ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি ঋণ নিয়েছে। এটি সমন্বয়ে যে সময় দেয়া হয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে অনেকে্ই মার্জিন ঋণ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আপনাদের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?
এ বিষয়ে মার্চেন্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। তারা যেহেতু ব্যাংকের পাশাপাশি অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও ঋণ নেয়, তাই সব সময় ৯ শতাংশে ঋণ পায় না। মার্চেন্ট ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরও ছয় মাস দেয়া হবে বলে চিন্তাভাবনা চলছে।
লকডাউন আবার শুরু হয়েছে। লেনদেনও দুই ঘণ্টা করা হয়েছে। এ সময়টিতে বিনিয়োগকারীরা কোন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে লেনদেন করবে। আর পুঁজিবাজারে এমনটাও আলোচনা আছে সূচকের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কী?
আমরা তো মার্কেট পিই রেশিও দেখেই বিনিয়োগ করি। পিই রেশিও এখন বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত। যারা সত্যিকার অর্থে বিনিয়োগকারী, তারা পিই রেশিও দেখে, কোম্পানি দেখে ব্যাপক বিনিয়োগ করতে পারে।
বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশন (আইওএসসিও) সদস্য। সেখানে আমাদের ক্যাটাগরি ‘এ’।
আমরা যদি মার্কেটকে প্রভাবিত করি, কারসাজি করি তাহলে আইওএসসিওর সদস্য হিসেবে আমাদের অবস্থান খারাপ হবে।
ফলে একটি ফ্লোর প্রাইস থাকার পর আরেকটা ফ্লোর প্রাইস ম্যানিপুলেট করা আমাদের জন্য ভয়াবহ হবে। সে জন্য আমরা এখন বাজারকে ফ্রি ফ্লোর দিতে চাই। মার্কেটই মার্কেটের অবস্থান নিয়ে যাবে।
বিনিয়োগকারীদের বোঝতে হবে, আতঙ্কে যখন শেয়ার বিক্রি করা হয়, তখন কেউ না কেউ সেটা কেনে। আমার শেয়ারের যেহেতু ক্রেতা আছে, সেহেতু আমি কেন লোকসানে শেয়ার বিক্রি করব? আমাদের পুঁজিবাজারে শেয়ার কিনে কেউ লসে শেয়ার বিক্রির করার কথা না।
অন্যের কথায় কিংবা একটি বিশেষ অবস্থায় কেন এখনই শেয়ার বিক্রি করতে হবে? আজকেই বিক্রি করতে হবে এমন ধারণাই সূচক পতনের বড় একটি কারণ।
কষ্ট লাগে যখন শুনি, অনেক বিনিয়োগকারী ভয়ে শেয়ার বিক্রি করে লস করছে। এখানে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মার্কেট অনেক ভালো হবে।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগাকরীদের আস্থার জায়গাটিতে খুব বেশি শক্তিশালী অবস্থানে নেই। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী লভ্যাংশ দিতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে আপনাদের কোনো উদ্যোগ আছে কি?
এটা নিয়ে কাজ চলছে। আমরা মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইন্ডাস্ট্রিকে নিরাপদ করার জন্য কাজ করছি। মিউচ্যুয়াল ফান্ড হচ্ছে পুঁজিবাজারের প্রাণ। পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখার জন্য মিউচ্যুয়াল ফান্ড ভালো ভূমিকা রাখে।
গত কিছু দিন ধরে আমরা চেষ্টা করছি মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করার। বর্তমানে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর এনএভি দেখতে পাচ্ছি। তাদের ব্যবসার যে অবস্থা, তাতে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল থাকলে সবাই লাভবান হবে।
আমাদের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এখন জনগণ ডিভিডেন্ড আশা করে। মাথাপিছু আয় ৫ হাজার ৬ হাজার ডলার হয়ে গেলে অন্য রকম হবে। তখন হয়তো আমরা ওয়ার্থ মেক্সিমাইজেশনের দিকে যাব। এখন আমাদের প্রফিট মেক্সিমাইজেশনরে দিকে যেতে হচ্ছে।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোকে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে হবে। তাহলে আরও বিনিয়োগ হবে। তখন মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো বড় হবে। তাদের পুঁজিবাজারে অংশগ্রহণ বাড়বে।
আমরা এখানে স্বস্তির জায়গায় নেয়ার চেষ্টা করছি। কিছু মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মামলা মোকদ্দমা, এটা সেটা ছিল, এগুলো শেষ করা হচ্ছে।
এখানে সুন্দর পরিবেশে কাজ করার প্রচেষ্টা চলছে। তাদের ব্যবসার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য কাজ করা হবে। শুধু জরিমানা ও বিচার করা, শাস্তি দেয়া- এ রকম দায়িত্ব পালন করতে চাই না।
মিউচ্যুয়াল ফান্ড যখন ভালো হবে, তখন পুঁজিবাজারের চেহারা পরিবর্তন হবে। এখানে তখন বিনিয়োগকারীরা নিজ উদ্যোগে বিনিয়োগ করবে।
আরও পড়ুন:
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৫তম বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। ছবি: বাসস
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে।
আজ রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৫তম বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হলে নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সহজ হবে । আর নির্বাচনের সময় সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে ।
তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আগেও ছিল, এখনও আছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশের পরিস্থিতি ও সার্বিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়া অনেক ঘটনা সত্য নয়, তবে গণমাধ্যমের তথ্য সঠিক থাকে।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে মোবাইল ফোনের সিমকার্ড নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অনেক অপরাধে সিমকার্ড ব্যবহার হয় অন্যের নামে। নির্বাচনের আগেই সিমকার্ডের সংখ্যা কমানো হবে। এক ব্যক্তির নামে ১০টা থেকে ৫টা/৭টা, পরে ২টায় নিয়ে যাওয়া হবে।
এছাড়া বৈঠকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি, সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অভিযান পরিচালনা, মাদক নিয়ন্ত্রণ এবং সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও নির্দেশনা দেয়া হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা কিভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান।
নিরাপত্তা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দল কিছু সমস্যার সমাধান করলে এবং জনগণ সচেতন থাকলে নির্বাচন সুন্দর হবে। রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান এলাকায় গণ্ডগোল বা অপরাধ প্রবণতা আগের চেয়ে কমেছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'পদায়নের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। নিয়োগের ক্ষেত্রেও সমস্যা নেই।’
নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সূত্র: বাসস
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গুম হত্যার চেয়েও নিকৃষ্টতম অপরাধ। গুম প্রতিরোধে শুধু আইনগত সংস্কার নয়, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও।
গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানের হোটেল আমারিতে অনুষ্ঠিত ‘ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ: জোরপূর্বক গুম মোকাবিলায় বিচার বিভাগের ভূমিকা’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্মশালাটি গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির উদ্যোগে এবং ঢাকাস্থ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, অনেক প্রাণ ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ একটি পরিবর্তিত পরিবেশে অবস্থান করছি। এই পরিবর্তন স্থায়ী করতে হলে গুমের বিচার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
বিচারকদের উদ্দেশে আসিফ নজরুল বলেন, গুমের বিচার বাস্তবায়নে বিচারকদের সাহসী ও ন্যায্য ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই একদিন বাংলাদেশ থেকে গুমের সংস্কৃতি নির্মূল করবে।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিচার লিখা একটি সৃজনশীল শিল্প। তাই বিচারকরা হলেন সৃজনশীল শিল্পী। তাদের শিল্পকর্মই তাদের বিচার। তাদের এই প্রস্তাবটি মনে রাখা উচিত।
তিনি বলেন, গুম প্রতিরোধে বিচার বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মানবাধিকার কাঠামোর মধ্যে সমন্বিত সহযোগিতা অপরিহার্য। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও তদন্ত সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি গুমের বিচার নিশ্চিতের মূল চাবিকাঠি।
কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী বলেন, গুম-সংক্রান্ত মামলাগুলোর কার্যকর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এখন সময়ের দাবি। তিনি জানান, কমিশন ইতোমধ্যে বিদ্যমান আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে গুম সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি, সাক্ষী সুরক্ষা ও ভুক্তভোগী পরিবারের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের প্রস্তাব প্রস্তুত করছে।
গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির জনসংযোগ কর্মকর্তা কে এম খালিদ বিন জামান জানান, কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রেখেছেন, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা এবং ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান। ওয়ার্কিং সেশন পরিচালনা করেন কমিশনের সদস্য মো. সাজ্জাদ হোসেন।
কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন কমিশনের সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রিস। এই পর্বে গুম-সংক্রান্ত মামলায় প্রমাণ সংগ্রহ, সাক্ষ্যগ্রহণ, মানবাধিকার মানদণ্ডের প্রয়োগ ও বিচার প্রক্রিয়ার জবাবদিহি নিশ্চিতের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
আলোচনায় গুম প্রতিরোধে একটি স্থায়ী গুম প্রতিরোধ কমিশন গঠন, গুম প্রতিরোধে আইন প্রণয়ন, বিচার বিভাগের আওতায় স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা প্রতিষ্ঠা, গুম সংক্রান্ত মামলার জটিলতা নিরসনে মনিটরিং সেল গঠন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বিচারকদের জন্য বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ আয়োজন, ভিক্টিমদের সাইকোলজিক্যাল ও লিগ্যাল সহযোগিতা নিশ্চিতকরণ, ভিকটিমদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনসহ অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, অনলাইন জিডি সহজীকরণ, চিহ্নিত মামলাগুলো অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিষ্পন্ন করা, বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে ভিক্টিমদের সহজে পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ, ম্যাজিস্ট্রেটদের মিথ্যা মামলা নিরসন সংক্রান্ত ক্ষমতা প্রদান এবং বিচার বিভাগ ও কমিশনের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের কাঠামো উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উঠে আসে।
দেশের বিভিন্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে কর্মরত বিচারকসহ প্রায় ৯০ জন প্রশিক্ষণার্থী এতে অংশগ্রহণ করেন।
নির্বাচন কমিশন কারও কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত (টিওটি) প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই)-এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য সিইসি এ কথা বলেন।
এ এম এম নাসির উদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের উদ্দেশে করে বলেন, ‘এই ম্যাসেজটা আপনাদের দিতে চাই যে, আপনারা কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। সম্পূর্ণভাবে আইন অনুযায়ী নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনও কারও কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। তা ছাড়া আমরাও আপনাদের অন্যায় কোনো আদেশ দেব বা হুকুম দেব না। আপনারা ধরে রাখতে পারেন, রিলেভেন্ট টু ইলেকশন (নির্বাচন সম্পর্কিত) যে আইন প্রচলিত আছে সেই আইন অনুযায়ী আমাদের নির্দেশনা যাবে বা আপনারা সেভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। একটা সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারার চেষ্টা করবেন।’
সিইসি বলেন, আমরা কামনা করি, আপনারা আইনসম্মতভাবে, নিরপেক্ষভাবে এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে (প্রফেশনালি) কাজ করবেন। আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। এই দেশের এই দুরবস্থার মূল কারণ হলো, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকা। যে জাতি আইনের প্রতি যতটা শ্রদ্ধাশীল, সেই জাতি তত সভ্য। সভ্য দুনিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। আমাদের এই কালচারটা কাল্টিভেট করতে হবে।’
সিইসি আরও বলেন, ‘আমরা চাই সর্বস্তরের মানুষ আইন মেনে চলবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে এবং সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করবে। যে গন্ডির মধ্যে আমার কাজ থাকবে সেখানেই আমি আইনকে বাস্তবায়ন করব। আমরা চাইব আপনারা আইনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন।’
সিইসি আরও বলেন, নির্বাচনের মধ্যে সমন্বয়টা একটা বড় জিনিস। আপনারা যেহেতু উপজেলা পর্যায়ে নিয়োজিত আছেন। সমন্বয়ের দায়িত্বটা মূলত আপনাদের উপরে নির্ভর করে। সুতরাং নির্বাচনের সময়ও এই সমন্বয়টা খুবই জরুরি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রিসাইডিং অফিসার ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের সাথে সমন্বয় করতে হবে। জেলার যে ইলেকশন মনিটরিং সেল থাকবে ওটার সাথে সমন্বয়। এই সার্বিক সমন্বয়টা আপনাদের খুব সিরিয়াসলি করতে হবে। এই দায়িত্বটা আপনাদের কাঁধে নিতে হবে। যেকোনো ক্রাইসিস হলে আপনারা চেষ্টা করবেন শুরুতেই যাতে এটার সমাধান করা যায়।
ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আব্দুর রহমানেল মাছউদ, নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ, নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এবং নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
বেগম তাহমিদা আহমদ বলেন, আমরা সাহসী হব, তবে অতি সাহসী না। অতীতে অতি উৎসাহী হয়ে অনেকে অনেক কিছু করেছেন। এবার এসব করা যাবে না।
তিনি বলেন, আগের প্রশিক্ষণ ভুলে গিয়ে এখন যেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সেটি নিতে হবে। আগের নির্বাচন আমরা সবাই মিলে নষ্ট করেছি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের আপনাদের প্রতি ম্যাসেজ হচ্ছে সামনের নির্বাচন নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। সঠিক কাজ করবেন, ইসি আপনাদের সঙ্গে আছে। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলক কোনো কাজ করলে সাংঘাতিক পেরেশানিতে পড়বেন। আর সঠিকভাবে কাজ করার জন্য যা যা সহায়তা লাগে তা আমরা দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাহসের সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। চাকরির মান-মর্যাদা রক্ষার জন্য এবং অস্তিত্বের প্রশ্নে আমাদের না করার কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনের একটা আবহ সৃষ্টি করতে হবে।’
মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, সুশৃঙ্খল পরিবেশ ভালো নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। মোবাইল কোর্ট আয়নার মতো স্বচ্ছ হতে হবে। পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। এখন থেকে মোবাইল কোর্ট রেগুলার করতে হবে। এই নির্বাচনে যারা ভালো দায়িত্ব পালন করবে তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচন মাঠে যারা আছেন তারা যেন তাদের আচরণবিধি মেনে চলেন। প্রশাসন কঠোরভাবে নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাবে। এবারের নির্বাচনে সমন্বিতভাবে মাঠ প্রশাসন যে, একটা দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারি তা আমরা দেখিয়ে দেব।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, তামাকমুক্ত সমাজ গঠনে জনমত ও জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও তরুণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা, ‘তরুণ চিকিৎসকদের ভূমিকা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, একজন ধূমপায়ী চিকিৎসক রোগীকে ধূমপানে বাঁধা দিলে তিনি গ্রহণ করবেন না। তাই চিকিৎসকদেরকে ধূমপান পরিহার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় ও এসেম্বলিতে তামাকের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। এছাড়া শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সময়েও এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এ সময় উপদেষ্টা তামাকমুক্ত বিদ্যালয় ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কর্মসূচি পরিচালক শেখ মোমেনা মনি, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার সরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান, সিটিএফকে, বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. ফারজানা রহমান মুনমুন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে রপ্তানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)। এই পরিস্থিতিতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের বিপরীতে বিমা দাবি দ্রুত নিষ্পত্তি ও বিমার বাইরে করা পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারি বিশেষ তহবিল গঠন করে ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান ইএবি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। সংবাদ সম্মেলনে তৈরি পোশাক, বস্ত্রকল, ওষুধ, চামড়াসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত। এর মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যাপক দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে।
তিনি বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডে স্পষ্ট যে কার্গো ভিলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর নয়। নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে কেবল ব্যবসায়িক ক্ষতি নয়, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানিকারকরা কার্গো ভিলেজে নিরাপত্তাহীনতা, গুদাম ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থাপনা ও মালামাল চুরির অভিযোগ জানিয়ে আসলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে ইএবি বলেছে, ওষুধ, তৈরি পোশাক, কৃষিপণ্য, ফলমূল, হিমায়িত খাদ্য ও অন্যান্য রপ্তানিকারক খাত এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনায় বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হতে পারেন, যা ভবিষ্যতে রপ্তানি চুক্তি ও অর্ডারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইএবি সভাপতি বলেন, আগুনের ঘটনাটি যথাযথ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে এবং দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অঘটন আর না ঘটে।
এ সময় কার্গো ভিলেজের আধুনিকায়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন, ওষুধ শিল্পের জন্য আলাদা শীততাপনিয়ন্ত্রিত গুদাম স্থাপন, নিরাপদ দূরত্বে রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ ও সম্পূর্ণ অটোমেটেড ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর গুদাম ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখ, গত শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো এলাকায় আকস্মিকভাবে আগুন লাগে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ফাইল ছবি
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে বলে পুনরায় জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। সরকারের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।”
আজ সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কোর কমিটির সভা শেষে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচনের সফল আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা, বিশেষ করে গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বডিওর্ন ক্যামেরা কেনা হবে এবং এ বিষয়ে সরকার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
তিনি আরও বলেন, বিগত তিনটি সাধারণ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের আগামী সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডসহ সাম্প্রতিক কিছু বড় অগ্নিকাণ্ডের পেছনে নাশকতা আছে কিনা- এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, এসব ঘটনা তদন্তের জন্য একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আগুন লাগার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি মিশনগুলোতে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করা হবে।
প্রবাসীদের জন্য পাসপোর্ট ফি কমানো এবং বিমান ও বিমানবন্দরে সর্বোত্তম সেবা প্রদানের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে বলেও তিনি জানান। সূত্র: বাসস
নির্বাচন কমিশনার ইসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। ফাইল ছবি
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার ইসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
তিনি বলেন, ‘আইনগতভাবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। স্থগিত দল হওয়া মানে তাদের যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত। তাই আগামী নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে না।’
তিনি আজ রোববার সকালে সিলেটে সাংবাদিকদের এই কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনার জেলা পুলিশ লাইনে নির্বাচনী দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আয়োজিত প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র প্রতীক সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতীক নির্ধারণ সংবিধান ও নির্বাচনী বিধিমালার আওতায় করা হয়। শাপলা প্রতীক সেই তালিকায় নেই।
তাই তা বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগও নেই।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে না হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে সব বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ইসি আনোয়ারুল বলেন, ‘অতীতের মতো বিতর্কিত নির্বাচন আর হবে না। সবার সহযোগিতায় একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ কোনো কর্মকর্তা যাতে নির্বাচনী দায়িত্বে না থাকেন, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’ সূত্র: বাসস
মন্তব্য